আরহাম তাজওয়ার প্রথম বার্তাতেই বললেন, ‘আপনি কি আমার মাসনা হবেন?’
মাসনার কথা শ্রবণ হতেই হাফসা যেন পাথরে পরিণত হলো।মস্তিষ্ক কিছুক্ষণের জন্য কাজ করা যেনো বন্ধ করে দিলো।কোনোদিন যা কল্পনাও করেনি সেটাও সত্যি হতে পারে?কয়েক মিনিট স্থির থেকে নিজেকে সামলে কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো,
‘আপনি বিবাহিত?’
‘জ্বী।’
হাফসা আর একমুহূর্ত ও দাঁড়ালো না।কান্না আটকে গেস্টরুমের পিছনের দরজা দিয়ে সোজা রুমে চলে গেলো।
আরহাম তাজওয়ার কয়েকবার জিজ্ঞেস করেও কোনো উত্তর না পেয়ে হতাশ হলেন।বুঝতে বাকি রইলো না উনি চলে গেছেন।লম্বা শ্বাস নিয়ে ব্যথিত হৃদয়কে শান্তনা দিয়ে
ভাবলেন, ‘সত্যি টা আরো আগে জানানো উচিত ছিলো।’
বেরিয়ে পড়লেন রুম থকে।আহমাদ কে জানালেন উমায়ের হয়তো রাজি না।একটু পরই উনারা চলে যাবেন।
রুমে এসে হাফসা কান্নামাখা কন্ঠে মামুণী কে সব বলল।
‘আমি কি করব মামুণী?’
মামনি বললেন, ‘তিনি তোমার জন্য দূটো বছর ওয়েট করেছে।তোমার খোঁজ নিয়েছে।এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো তোমার প্রত্যাখানে সে কতটুকু কষ্ট পেয়েছে।আর সে বড় আলেম।দুজনের মধ্যে সমতা করতে পারবেই বলে তোমাকে প্রস্তাব দিয়েছে।’
হাফসা চুপচাপ শুনছে মামুণীর কথা।
‘আর ইসলামে সমান সমতাকারী,সামর্থ্যবান পুরুষদের চার বিবাহ বৈধ আছে।এটা তো সুন্দর নিয়ম।তুমি যদি এটাকে ঘৃণা করো তাহলে তুমি আল্লাহর বিধানকে ঘৃণা করছো।’
হাফসা অস্থির হয়ে বলল, ‘না আমি ঘৃণা করছি না।আমি বলছি উনাকে অন্য নারীর সাথে আমি কীভাবে সহ্য করবো।মেয়েরা কি তাদের স্বামীর ভাগ দিতে চায় কাউকে?’
‘সে তো দিয়েছে।উনার প্রথম স্ত্রী।’
হাফসা চোখ তুলে তাকালো।তিনি আবারো বললেন,
‘হ্যাঁ সে নিশ্চয়ই উনাকে এই অনুমতি দিয়েছে বিধায় উনি তোমাকে প্রস্তাব দিয়েছেন।’
‘এখন আমার কী করা উচিত?’
‘সেটা তোমার ইচ্ছা।তবে উনি তোমার অপেক্ষায় ছিলেন দূই-দূইটা বছর,কম নয়।আমি বলবো উনাকে কষ্ট দিয়ো না।তুমি উনাকে পছন্দ করো উনিও করেন।আল্লাহ চাইলে দূজনে ভালো থাকবে ইনশাআল্লাহ।’
হাফসা নিরুত্তর।
‘আর দেখো উনার প্রতি তোমার দূর্বলতা অনেক আগের।দূটো বছরেও উনাকে ভুলতে পারো নি।তুমি অপেক্ষায় ছিলে,উনি তো এসেছেন।তুমি তুমার জীবনে অন্যকাউকে গ্রহণ করলেও হয়তো উনার প্রতি আজীবন তোমার একটা সফট কর্ণার থেকে যাবে।এতে কী হবে?যিনাহ’র গুনাহ হবে?তুমি কি এটা চাও?’
‘না চাই না।’
বাইরে গাড়ির শব্দ শোনা যাচ্ছে।উনারা চলে যাচ্ছেন।
‘উনি চলে যাচ্ছেন।আর হয়তো এখানে কখনো আসবেন না।পরে তুমি কেঁদো না।মন থেকে ভুলে যেতে পারলে প্রত্যাখ্যান করো।আর নাহলে উনাকে আটকাও।’
হাফসা চোখ বুজে কিছু একটা ভেবে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললো।
৬
হৃদান হচ্ছে আহমাদের ডান হাত।এতিম বলে কাকামণি তাকে আরও বেশী স্নেহ করেন।মাদ্রাসায় পড়ে পাশাপাশি বাড়িতে ছোট ছোট কাজে সাহায্য করে।মামুণী ওকে তাড়াতাড়ি পাঠালেন আহমাদের কাছে।
আরহাম তাজওয়ারের মন খারাপ সেটা বাহিরে প্রকাশ না করলেও আহমাদ ঠিকই বুঝতে পেরেছেন।
‘আমার কিছু করার থাকলে করতাম।যেখানে ওর মত-ই নেই,আমার আসলেই কিছু করার নেই।’
‘ঠিক আছে।সমস্যা নেই।’
উনাদের মধ্যে কথা হচ্ছিলো এমন সময় হৃদান দৌড়ে হাঁপিয়ে এসে আহমাদকে একপাশে টেনে আনে।কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই সে কানে কানে কিছু বলতে লাগলো।
আরহাম তাজওয়ার ঘড়িতে একবার সময় দেখে পুরো বাড়িতে একবার নজর বুলিয়ে নিয়েন।কষ্ট হচ্ছে।ভেতরটা ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে প্রতিমুহুর্তে। ঠিক করলেন আর কখনো এখানে আসবেন না।আসলেই উনার কথা মনে পড়বে।
সামনের দূজনের মধ্যে গোপনে কী আলাপ হলো বুঝলেন না।তবে তাড়া দেখিয়ে বিদায়ের পায়তারা করতেই আহমাদ হৃদানের কথা শুনে প্রফুল্লিত হয়ে উনার দিকে ফিরে বললেন, ‘হাফসা রাজি হয়ে গিয়েছে।’
আরহাম তাজওয়ারের কথাটি বুঝতে খানিক বেগ পেতে হলো।
‘মানে?’
আহমাদ প্রফুল্লচিত্তে বললেন, ‘হাফসা রাজি হয়ে গিয়েছে।’
‘ভেবে বলছেন তো উনি?’
‘হ্যাঁ।’
উনার মুখে আবারো হারিয়ে যাওয়া সেই অমায়িক হাসিটা ফুটে উঠলো।শোকরিয়া আদায়ে বললেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ।’
‘আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ বাড়ির ভেতরে আসো।’
******
শাওয়ার সেরে হেয়ারড্রায়ার দিয়ে খোলা লম্বা চুলগুলো শুকিয়ে হিজাব পড়ে ছাদে এলো হাফসা।আজ শুধুই ওর খুশি লাগছে।ভাবা যায় দূ বছরের অপেক্ষার ফল মিষ্টি হলো।হাফসা এটা ভেবে অবাক হয়েছে যে, উনিও ওর অপেক্ষা করছেন।এটাই ছিলো ওর জন্য সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজ।তারমানে উনিও আমাকে পছন্দ করেন
এটা ভাবতেই লজ্জায় দূহাত দিয়ে মুখ ডেকে নিলো।একটু আঙ্গুল সরিয়ে লুকিয়ে চারপাশ দেখলো কেউ কি ওর লজ্জা পাওয়া দেখছে! উল্টো ঘুরে মুচকি হাসতে হাসতে সূর্যের অস্তমিত হওয়ার দৃশ্য উপভোগ করতে লাগলো!
******
সন্ধ্যোয় হলো বিশাল বড় ঝামেলা।কাকামণি সায়িদ আনসার কে জানিয়ে দিয়েছেন যে উনার ছেলের সাথে হাফসার নিকাহ হচ্ছে না,ক্যানসেল।বিশিষ্ট আলেম আবদুল্লাহ আল আরহাম তাজওয়ারের সাথেই ওর নিকাহ হবে।তিনি প্রখ্যাত মাওলানাসহ বিভিন্ন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যেক্তা।দারুস সুন্নাহ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল্লাহ আল আহনাফ তাজওয়ার এর একমাএ ছেলে এবং এই মাদ্রাসারই প্রিন্সিপাল।এছাড়া ঢাকার স্থানীয় রিয়াদূল জান্নাহ মসজিদের ওউনার এবং বিজনেস আছে।পাশাপাশি আরো অনেক কেন্দ্রপ্রতিষ্ঠানের ওউনার।
মামা আসলেন সন্ধ্যেয়,সাথে রাদ।ভদ্র শান্তশিষ্ট ছেলেটা আজ বিক্ষিপ্ত হয়ে গেছে।সায়িদ আনসার আহমাদকে কড়াসুরে বললেন,
‘হাফসা যেমন আপনার ভাইয়ের মেয়ে তেমন আমারও বোনের মেয়ে।তাই আপনি যেমন ওর আপন আমিও তেমন।কথার খেলাফ আমি পছন্দ করি না।আর আমার ছেলে কোনো মাস্তান অভদ্র নয়।সে হাফসাকে পুরোপুরি ভাবে স্ত্রীর অধিকার দিয়েই ঘরে তুলবে।আগামী শুক্রবার আয়োজন করে হাফসাকে আমার বউমা করে নিবো।আপনার আপত্তিতে আমার যায় আসে না।আপনি তো ওয়াদা ভাঙ্গলেন।’
দরজার আড়াল থেকে হাফসা চুপচাপ দাঁড়িয়ে দূ পক্ষের কথা শুনছিলো আর কাঁপছিলো।ওর পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে।ব্যাপারটা আরো কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন করবে নিশ্চিত।অথচ আরহাম তাজওয়ার বলে গিয়েছেন উনার বড়আব্বু এসে রবিবারে নিকাহ’র ডেট ফাইনাল করে যাবেন।
রাদ এতক্ষণ রাগে ফুঁসছিলো।নূন্যতম ভদ্রতা দেখিয়ে আহমাদের মুখের ওপর কিছু না বললেও এবার নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না।আশপাশে তীক্ষ্ণচোখে চোখ বুলিয়ে বলল,
‘হাফসা কোথায়?’
আহমাদ চোয়াল শক্ত করে বললেন, ‘কেন?’
‘আমি ওকে রিং পরিয়ে যাবো।আর নিকাহ আমার সাথেই হবে।’
বলেই রাদ থামলো না।আহমাদ দ্রুতপায়ে ওর পিছু যেতে লাগলেন।হাফসা রুমে বিছানায় বসে থরথর করে কাঁপছিলো,পাশে মামুণী অস্থির হয়ে দোয়ায়ে ইউনুস পড়ছেন।রাদ পারমিশন না নিয়েই রুমে ডুকে পড়লো।আহমাদ পেছন পেছন থামাতে আসলেও রাদ পাত্তা না দিয়ে হাফসার কাছে এসে একটা রিং জোর করে ওর নরম তুলতুলে অনামিকা আঙ্গুলে পরিয়ে দিয়ে বললো, ‘তুমি শুধু আমার ওকে?শুক্রবার তোমার নিকাহ আমার সাথে।অন্য কাউকে স্বামী বানানোর চিন্তাও করবে না।নাহলে আমি কত ভয়ঙ্কর হবো সেটা তুমার কল্পনায়ও আসবে না।’
*****
কেটে গেলো বেশ কিছুক্ষণ।কাকামণি দূহাতে মাথা চেপে বসে আছেন পর্দার ওপাশে।আরহাম তাজওয়ারের সাথে কন্টাক্ট করার কোনো ওয়ে-ই নেই।নাম্বার টাও নেওয়া হয়নি।শুধু এটাই বলা হয়েছে রবিবার উনার বড়আব্বুসহ এসে নিকাহ’র দিন তারিখ ঠিক করবেন।এমতাবস্থায় কি করবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না।হাফসা পারমিশন নিয়ে এসে ঠান্ডা একগ্লাস পানি এগিয়ে দিতেই পুরো পানিটুকু শেষ করে হাফসার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
‘আরহাম তাজওয়ার কে তুমি আগে থেকেই পছন্দ করতে আমাকে জানাও নি কেনো?
4★
(৭)
‘আরহাম তাজওয়ার কে তুমি আগে থেকেই পছন্দ করতে আমাকে জানাও নি কেনো?’
হাফসা মাথানিচু করে নিলো ভয়ে।কাকামণি ওর ভয়ার্ত অবস্থা বুঝতে পেরে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, ‘আল্লাহর ওপর ছেড়ে দাও সব। ইনশাআল্লাহ ভালো কিছু হবে।’
*****
কালো শার্টে টুপি মাথায় কালো ম্যাজিন কার থেকে নামলেন কেউ একজন।উমায়ের এর বাড়ির গেট।বেরোতেই চোখ পড়লো দোতলা বারান্দায় এখনো লাইট জ্বলছে।ঘড়িতে দেখলেন সময় রাত ৩ বেজে ২৫ মিনিট।এত রাতে জেগে আছেন উনি?বারান্দায় একটা টুলে বসে উল্টোপাশ হয়ে বসে আছেন।
বাড়িটা কেমন নীরব।চোখ নামিয়ে দারোয়ান কে বললেন আহমাদ মুসতাকিনকে গিয়ে বলতে উনার সাথে একজন দেখা করতে এসছে।
দারোয়ান উনাকে চিনে।তাই সাথে সাথে চলে গেলো।গাড়িতে হেলান দিয়ে অপেক্ষায় রইলেন ভদ্রলোকের।
আহমাদ জেগেই ছিলেন।সারারাত দূ চোখের পাতা এক করতে পারেন নি।নামাজের চকিতে বসে ছিলেন।হঠাৎ দারোয়ান এসে জানাতে তিনি বেশ অবাক হলেন।এত রাতে কে আসতে পারে!
রুম থেকে বেরিয়ে দ্রুতপায়ে গেটের বাইরে যেতেই আরহাম প্রথমেই সালাম দিলেন।
‘ওয়ালাইকুমুস সালাম।তুমি?আচ্ছা ভেতরে এসো।’
‘সমস্যা নেই।আমি এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম একটা কাজ শেষে।আপনার নাম্বার টা নেওয়া হয়নি।দূঃখিত এত রাতে….
আহমাদ উনার অর্ধেক কথাতেই থামিয়ে বললেন, ‘আগে বাসার ভিতর আসো।অনেক ঝামেলা হয়ে গেছে।’
আরহাম তাজওয়ার বেশ বিচলিত হয়ে বললেন, ‘ঝামেলা?কি হয়েছে?’
‘ভেতরে এসো।বসে কথা বলি।’
তিনি ঝুকে গাড়ির চাবি পকেটে ডুকিয়ে বাড়ির ভেতর ডুকলেন।
হঠাৎ হাফসার দৃষ্টি উঠানের ওদিকে যেতেই আরহাম তাজওয়ারও ওর দিকে তাকালেন।দূজনের চোখাচোখি হয়ে গেলো।হাফসা এতরাতে উনাকে এখানে দেখে চরম অবাক হলেও দ্রুতপায়ে ভেতরে চলে গেল।
ড্রয়িং এ বসেই আহমাদ নিজেকে শান্ত করার চেষ্টায় কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন।আরহাম তাজওয়ার নিজেই জগ থেকে পানি ঢেলে এগিয়ে দিলেন।আহমাদের শান্ত দৃষ্টি অথচ অস্থিরতা সারা চেহারায়।
‘কি ঝামেলা হয়েছে?’
‘আজকে সন্ধ্যায় রাদ এসেছিলো ওর বাবাকে নিয়ে।অনেক বাড়াবাড়ি করেছে ওরা।’
‘কি করেছেন?বিস্তারিত বলুন।’
আহমাদ সব কাহিনী বলতেই আরহাম তাজওয়ার এর চেহারা কঠিন হয়ে এলো।চেহারা শান্ত অথচ দৃষ্টি কঠিন।
‘রাদ উমায়েরকে টাচ করেছেন?’
‘হ্যাঁ জোর করে রিং পড়িয়ে দিয়েছে।’
‘আমি কি করব এখন আপনি বলুন।আপনারা কি চান রাদ’এর সাথে ওনার নিকাহ হয়ে যাক?’
‘হাফসা তোমাকে পছন্দ করে তাই আমি চাই তুমি ওকে বিয়ে করো।’
আরহাম তাজওয়ার কিছুক্ষন চুপ থেকে অনুৃমতি নিয়ে বাইরে উনার মায়ের সাথে কথা বলে এলেন।অতঃপর শান্তসুরেই বললেন,
‘আপনাদের আপত্তি না থাকলে আমি কাল-ই উনাকে বিয়ে করতে চাই ইন শা আল্লাহ।’
‘কাল?’
‘জ্বী কাল বৃহস্পতিবার।উনারা তো শুক্রবার আসবে বলেছেন।এখন উমায়ের এর ওপর আমার কোনো অধিকার নেই।নিকাহ হয়ে গেলে বাকিটা সমাধান করা যাবে।’
‘এত তাড়াতাড়ি কীভাবে কি হবে?’
আরহাম তাজওয়ার ফোনে সময় দেখে বললেন, ‘এখন চারটের কাছাকাছি বাজে।ন’টায় নিকাহ’র সব কিছু পৌঁছে যাবে এখানে।কিছুদিন পর নিকাহ হলে যেমন সবকিছু সুষ্ঠুমতো হতো কালও সব সুষ্ঠু মতোই হবে।আমার পক্ষ থেকে কোনো এুটি হবে না ইনশাআল্লাহ। আর দেনমোহর আপনাদের ইচ্ছা।বড়আব্বু,আব্বুর সাথে ফোনে আপনি কনফারেন্স করে নিন।
‘কিন্তু আমাদের পক্ষে এতো তাড়াতাড়ি?’
‘আপনাদের কিছুই করতে হবে না।উনি রাজি থাকলেই হলো।’
‘ঠিকাছে, আশা করি ও পরিস্থিতি বুঝে রাজি হবে।’
‘তবুও জিজ্ঞেস করা উচিত।’
‘অবশ্যই জিজ্ঞেস করবো।’
‘নিকাহ টা পুরোপুরি ইসলামি শরীয়তে হবে ইনশাআল্লাহ।আপনার কাছে অনুরোধ,বাইরের কেউ যেন না আসে সেইফটির জন্য বলছি।আমার ফ্যমিলি থেকে আমার বড়আব্বুসহ কয়েকজন আর আপনাদের ফ্যামিলি।আমার মনে হয় তারা ঝামেলা করবে।তাই নিকাহ টা হয়ে যাক সুষ্ঠু ভাবে।তারা যেন কোনোভাবেই না জানে,আপনি গোপনীয়তা রক্ষা করবেন।পরে এই বিষয়ের সমাধান করা যাবে।’
‘ওরা ভয়ঙ্কর।রাদ ওয়ার্ন করে গেছে।তুমি এত বড় রিক্স নিতে চাও?’
‘জ্বী।টেনশন করবেন না।আল্লাহ ভরসা।’
‘আচ্ছা।’
‘আমি চলে যাব তার আগে উনার মতামত যদি জানাতেন?’
‘আচ্ছা তুমি বসো।আমি জিজ্ঞেস করে আসি।’
আহমাদ একজন ছেলে সার্ভেন্টকে খাবারের আদেশ দিতেই তিনি বাধা দিয়ে বললেন,সম্মতি শুনেই তিনি চলে যাবেন।এসবের কোনো প্রয়োজন নেই।
******
‘তুমি কি রাজি?কাল বিয়ে।সে তোমার সেফটির জন্য-ই বলছে।তার বাসায় তুমি সেইফ থাকবে,আমারও টেনশন থাকবে না।এখানে রাদ-দের ঝামেলার কবলে পড়ো আমি চাই না।’
হাফসা জানে পরিস্থিতি অনেকদূর গড়াবে।তাই নীরবে মাথা নত করে সম্মতি দিলো।কাকামণি চলে যেতেই ও মামুণীকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো।এত তাড়াতাড়ি যে বিদায় নিতে হবে ও ভাবেই নি।একদিকে যেমন আনন্দ হচ্ছে কাঙ্খিত মানুষটাকে পাওয়ার, অন্যদিকে কষ্ট হচ্ছে আপন পরিবেশ,আপন মানুষগুলোকে ছেড়ে দূরে যাওয়ার।তবে সে সবসময়ই শুকরিয়া আদায় করে।এটা বিশ্বাস রাখে আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।আর সবশেষে এমন একজন মানুষকে লাইফ পার্টনার হিসেবে পাওয়া ওর সৌভাগ্য।যেখানে সে তাঁর দ্বীনে অটল থাকবে।পরিপূর্ণ ভাবে পর্দা করতে পারবে।দ্বীনদারিতা আরো মজবুত হবে!
(৮)
আহমাদ এসে জানালেন হাফসা সম্মতি দিয়েছে।আরহাম তাজওয়ার বিদায় নিতে নিতে বললেন,
‘আসি।কোনো ঝামেলা হলে সাথে সাথে জানাবেন।’
‘ইনশাআল্লাহ হবে না।’
অতপর সালাম বিনিময় শেষে মুসাফাহা শেষে বেরিয়ে গেলেন তিনি।যাওয়ার আগে আব্বু, বড়আব্বুর সাথে কনফারেন্সে কনটাক্ট করে দিয়ে গেলেন যেনো দেনমোহর এর কথাবার্তা উনারা মুরব্বিদের মধ্যেই হয়ে যায়।
কনফারেন্স শেষে আহমাদ নীরবে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানিয়ে দূ রাকাত নামাজ আদায় করলেন।
*****
সময় সকাল ১০:৪০!
দূটো গাড়ি আহমাদ মন্জিলের উঠোনে এসে থামলো।বরবেশে নামলেন আরহাম তাজওয়ার।গলডেন কালার শেরওয়ানির সাথে কালো পাগড়ি।।অসম্ভব রকমের সুন্দর লাগছে।
কনের সাজে অন্দরমহলে বসে আছে হাফসা।মামুণিসহ আরেকজন তুহফা তাকে সাজিয়ে দিয়েছে।খয়েরী রঙ্গের ল্যাহেঙা সাথে সব ধরনের বৈধপ্রসাধনী(আ্যলকোহলমুক্ত),অলংকার পরিয়ে ওপরে কালো ঢিলেঢালা বোরকা- নিকাব।
কিছুক্ষণ পর হাফসাকে নিয়ে মামুণী বের হলেন।কালো জুব্বার ওপর সোনালি ওরনা দিয়ে আপাদমস্তক ঢেকে দেওয়া হয়েছে।একটু দূরে সাজবিহীন বরের গাড়ি।হাফসা চোখতুলে একবার তাকালো উনার দিকে।মানুষটা এত সুন্দর কেন!
পরক্ষণেই চোখ নামিয়ে নিলো।মুখ হয়ে ওঠলো লাজরাঙা!
দূজনের আলাদা আলাদা গাড়ি যাএা শুরু করলো পাশের মসজিদের উদ্দেশ্যে!
******
মসজিদের টাইলসে নামাজের ন্যায় বসে আছে হাফসা।পাতলা নেটের পর্দার ওপর পাশে আরহাম তাজওয়ার।বিবাহের খুতবা শেষে ইমাম নিকাহনামা পড়ে শোনালেন।আরহামের সম্মতি নিয়ে রেজিস্ট্রীপেপারে সাইন করতে বলা হলে তিনি সাইন করে দিলেন।কিন্তু হাফসার হাত স্পষ্ট কাঁপছে থরথর করে।ঠোঁট কাঁপছে,চোখ ছাপিয়ে আড়ালে জল নামছে।ভয়ে চোখ খিঁচে কেঁদে ফেললো নিঃশব্দে। বুকটা ধুকপুক করছে।তখনি একপশলা সাহস জুগাতে কাকামণি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।হাফসা শক্তি পেলো,সাহস পেলো,ভরসা পেলো।কাকামণির দিকে অশ্রুসিক্ত নয়নে একবার তাকিয়ে সাইন করে দিলো।
কবুল বলতে বললে,হাফসা দম মেরে রয়।মুখ দিয়ে শব্দ আসছে না কোনোমতোই।মনে হলো ইহজগতের সবচেয়ে ভারী শব্দটা বলতে বলা হয়েছে তাকে।বেশ কিছুসময় অতিবাহিত হয়েছে।হাফসা এখনো বলছে না।আড়ালে দেখলো আরহাম তাজওয়ার এর মুখটা মলিন হয়ে গেলো।কাকামণি এগিয়ে আসলেন ওর পাশে।উনার ঘোলাটে চোখের দিকে তাকিয়ে হাফসা ঠোঁট কামড়ে কান্না নিবারণ করার চেষ্টা করছে।
‘মামণি বলে দাও।দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমি তো আছি তোমার পাশে।’
হাফসা চোখ বন্ধ করে কাঁপা ঠোঁটে তিনবার বলেই দিলো।এত আস্তে বলল যে ইমাম শুনতেই পাননি।জিজ্ঞেস করলেন, ‘উনি কি তিনবার বলেছেন?’
চাচা ‘হ্যাঁ’ বোধক মাথা নাড়াতেই সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে ওঠলো।
চোখের পর্দার আড়াল থেকে আরহাম তাজওয়ার কে একটু অস্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।তবুও হাফসা দেখলো উনার চেহারায় আলাদা একটা মায়া নূরানী সৌন্দর্য!ইসস.. ভাবা যায় এক সাইনে সারাজীবনের জন্য উনার অর্ধাঙ্গিনী হয়ে গেলাম।
পুনরায় বাড়িতে ফিরা হলো।আসার সময় আরহামের বড়আব্বু দূজনকে এক গাড়িতে বসাতে চাইলে আরহাম নাকোচ করে বললেন, উনি উনার কাছের মানুষদের সাথেই যেন যায়।
আহমাদ মুসতাকিন সতর্কতার সাথে সব পর্যবেক্ষণ করছেন।বরপক্ষের কয়েকজন ছাড়া বাইরের কোনো লোক নেই।তাদের খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করায় আরহাম তাজওয়ার তাকে বললেন, ‘দূঃখিত অবজেকশন দেওয়ার জন্য।কিন্তু খাবারের কেন আয়োজন করলেন?আমি আপনাকে বলেছিলাম শুধু নিকাহ হবে।আক্বদের খেজুর বিলিয়ে দিতেন।এর বাইরে কিছু না।’
উত্তরে আহমাদ মলিন মুখে বললেন, ‘আমার একমাএ কলিজার টুকরা হাফসা।কিন্তু ওর নিকাহ টা ভিন্নভাবে হচ্ছে অগোচরে।আমি ভেবেছিলাম ওর নিকাহতে পুরো এলাকার মানুষ ধনী গরিব,এতিমখানার সব শিশু সবাইকে পেট ভরে খাওয়ানোর আয়োজন করব।কিন্তু সেটা তো হলো না।সামান্য কয়েকজন মানুষের খাবারের আয়োজন করা হ’য়েছে।এটা তো তেমন কিছু না।বাইরের মানুষও নেই কেউ।আমার মামণির নিকাহ তো এতটুক আয়োজন হবে না?’
নোট📌
(গল্পের স্বার্থে সৌন্দর্য অবলোকনের বিষয়টা উঠে এসেছে।গল্প থেকে কেউ ভুল শিক্ষা নিবেন না।)
(📌গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক।এটাকে বাস্তবের সাথে মিলাবেন না কেউ।)