51★
৮৫
উমায়েরকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষন করে বললেন, ‘কান্না করা হচ্ছে কেন? আমি কি কিছু জিজ্ঞেস করেছি?’
‘ক্ ক্ কিছু জানতে চাইবেন না?’
‘না।’
‘ক্ কেনো?’
‘এমনিই।’
‘উহু,জিজ্ঞেস করুন আমাকে।’
‘প্রয়োজন নেই।’
‘প্লিজ।’
‘পরে শুনবো।’
‘আচ্ছা।’
আরহাম বেরিয়ে গেলে হাফসা গিয়ে মুখ ভার করে বেলকনিতে বসে রয়।খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে হাতের দাগগুলো দেখছে।সেই রবের শুকরিয়া আদায় করে শেষ হবে না,যিনি পুনরায় তাকে পরিবার ফিরিয়ে দিয়েছেন।জমানো সব কান্নার ঢেউ গুলো একেকটা দীর্ঘশ্বাস হয়ে বের হচ্ছে।
কাকামণির সাথে তৃতীয় বারের মতো কিছুক্ষণ কথা বলে আবারো সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বুজে রইলো।
প্রায় আধঘন্টা পর আরহাম ফিরলেন। হাফসাকে নিচে না পেয়ে বেলকনিতে এসে দেখলেন, অন্যমনষ্ক হয়ে বসে আছে। ভেজা গালে চিকচিক করছে পানি।
আরহাম গিয়ে চোখ মুছে দিয়ে টেনে তুলতে তুলতে বললেন, ‘চোখ থেকে আর এক ফোঁটা পানি পড়বে তো সত্যি ওই জায়গায় দিয়ে আসবো আবার।’
*****
ইশার নামাজের পর আম্মু আর হাফসা কিচেনে রেসিপি বানাচ্ছেন।বিগত ঘটনাগুলো ভাবনা থেকে দূরে রাখার জন্য আম্মু এসে তাকে কিচেনে নিয়ে গিয়েছেন।আরহাম মাইমুনার রুমে এসে দেখেন, সে সোফায় হেলান দিয়ে আরামসে ঘুমোচ্ছে।মাইমুনার মেডিসিন গুলো এক এক করে দেখলেন। এই মেডিসিনের জন্যই ঘুম বেশি উনার।
কাছে আসতে দেখলেন হাতের বই পড়ে আছে ফ্লোরে।আরহাম বই তুলে মাইমুনার গালে হাত রেখে ডাকলেন, ‘মাইমুনা উঠুন। ‘
ঘুমের মধ্যে আরহামের কন্ঠ শুনে চোখ মেলে দেখে,সত্যি আরহাম ডাকছেন।তড়িঘড়ি করে উঠতে গেলে আরহাম ওর পাশেই বসে পড়লেন।
‘চাঁদ রাতে এত কিসের ঘুম?’
‘খ্ খেয়াল ছিলো না। কখন এলেন?’
‘আপনার মেডিসিন কমেছে।ঈদের পরে ডক্টরে যেতে হবে।’
‘লাগবে না।সুস্থ আছি তো।’
‘আপনার কি কষ্ট হয় আপনার এই অসুস্থতায়?’
মাইমুনা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,তিন বছরে অনেকবার এই প্রশ্নটি করেছেন।’
‘কিন্তু কখনো উত্তর দেন নি।’
‘আপনার খারাপ লাগে না?আমি আসলে আপনাকে ডিজার্ভ করি না,আপনি আরও…
আরহাম একেবারেই শান্ত,কিন্তু উনার চোখে চেয়ে বাকি কথা বলার সাহস হলো না মাইমুনার।রেগে বম হয়ে গেলে আর কথাই বলবেন না।
‘আমি আরও…..শুনতে চাই বলুন।’
আরহামের রক্তিমচোখ জোড়ায় তাকিয়ে মাইমুনা কোনোমতে বললেন,’আ্ আমি আপনাকে ডিজার্ভ করি।’
আরহাম চুপ হয়ে আছেন।মাইমুনা অনেকদিন পর খুঁটিয়ে দেখলো আরহামকে।শেষ কবে পাশাপাশি বসে, কথা বলেছেন মনে নেই।হ্যাঁ মনে পড়েছে, ওইদিন বাগানে। উনার কথাগুলো কথা ছিল না বিষ ছিলো,যেটা এখনো পীড়া দেয় তাকে।
মাইমুনা জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমার অসুস্থতায় আপনার খারাপ লাগে না? ‘
‘মোটেও না।’
‘কেন?’
‘আমি আল্লাহর সিদ্ধান্তে খুশি।’
‘আপনার জায়গায় অন্য কেউ হলে,আমার এত বড় সিকনেস জেনেও বিয়ে করতো না। ‘
‘আপনাকে আমার জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে তাহলে অন্যকেউ কেন বিয়ে করবে?আশ্চর্য! রাগ লাগছে এখন।’
‘সরি সরি।’
‘উঠুন।ড্রয়িং রুমে যাব।’
*****
দূদিনের সব মন খারাপের ঘাটতি পূরন হলো আজ।বাবা-মেয়ে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করলো।তারপর যোগ হলেন আরহাম, মা,আর আইরাও।
একসোফায় মাইমুনা,বাবা আর হাফসা গল্পে মশগুল। অন্য সোফায় আরহাম মাকে জড়িয়ে ধরে আছেন।একটু পর পর হেসে উঠছেন দূই আহলিয়ার বোকা বোকা আবদারে!
আইরা সেখান থেকে মন খারাপ করছে,মা বাবা,পরিবার,টুকটুকে দূই ভাবি ছাড়া তাকে ওদেশে একা একা ঈদ কাটাতে হয়েছে।মাহদিনের সাথে বারে বারে গাল ফুলাচ্ছে,দেশে নিয়ে আসার জন্য।ইযহান আর মাহদিন সোফায় বসে ওর গাল ফুলানো দেখে মিটিমিটি হাসছেন।
******
জমজমাট আড্ডার পর সবার একসাথে ডিনার শেষে আরহাম দূজনকে ছাদে নিয়ে আসলেন।অনেকক্ষণ চাঁদ রাতের চাঁদ দেখার পর্ব শেষে কিছুক্ষণ গল্প-গুজব চললো।
শীতল আবহাওয়ায়,বাতাসে মুখরিত আধো আলোকিত পরিবেশে আরহাম তাঁর দূই আহলিয়াকে নিয়ে একসাথে নফল নামাজ পড়লেন।শেষ মুহুর্তে আরহাম সুরাহ আর-রাহমান তিলাওয়াত শেনালেন। হাফসার দৃষ্টি নিশ্চল,স্তব্ধ সে।এইতো সেই অমায়িক মাধুর্যের তিলাওয়াত যেটা শুনে অজান্তেই মানুষটার ওপর ওর আমৃত্যু ভালোবাসা জন্মেছিলো।বলা বাহুল্য আরহামের তিলাওয়াত খুব একটা শোনা হয়নি বিয়ের পর।উনি সবসময় নি:শব্দে তিলাওয়াত করেন।আর পুরো রোযা বিকেলবেলা বা তালিমের পর আরহাম নিজেই দূজনের তিলাওয়াত শুনতেন।
হাফসাকে একদৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরহাম হেসে ওর হাত ধরে বললেন, ‘কি হলো?’
হাফসার ধ্যান ভাঙ্গে।এতক্ষণ মনে হয়েছিল, সে অন্য কোনো জগতে আছে।আবদার করে বসলো, ‘এখন থেকে প্রতিদিন আপনার তিলাওয়াত শুনাবেন।’
‘ইন শা আল্লাহ।’
মাইমুনার চোখে ঘুমে ঢলুঢলু।আরহাম আর কথা বাড়ালেন না,হাফসাকে থাকতে ইশারা করে মাইমুনা কে কোলে করে নিচে নামালেন।বিছানায় শুইয়ে দিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বললেন, ‘মাই ফার্স্ট মুন!আ’না উহিব্বুকি ফিল্লাহ!’
আরহাম আবার ছাদে আসলেন।হাফসা তাঁর জীবনের আগের ঈদগুলোর গল্প শোনাচ্ছে আরহামকে। সকাল বেলা উঠেই কাকামণিকে নাস্তা বানিয়ে দেওয়া।কাকামণি ঈদের নমাজ থেকে আসলে দূজনে এতিমখানায় যেয়ে সময় কাটানো।নিজ হাতে এতিমদের খাবারও খাইয়ে দিয়েছে হাফসা।খুব করে মনে পড়তো মা-বাবার কথা।কিন্তু এতিমখানায় গেলে আর কোনো দূ:খ,আফসোস থাকতো না!
খানিক পর আরহামের দিকে তাকাতেই কিছু একটা মনে পড়তে মিইয়ে গেলো সে।
আরহাম জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি হলো?’
‘এখন বলি?’
উমায়ের এক ঢুক গিলে, আরহাম ওকে তীক্ষ্ণ চোখে পর্যবেক্ষন করে দ্বিমত করে বললেন,
‘বাদ দিন না উমায়ের।খারাপ লাগবে আমার।’
সে মলিন মুখে বলল, ‘আমি যে না বলে শান্তি পাবো না।’
আরহাম ওর গালের দাগটায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলেন,’আচ্ছা বলুন।’
যতটুকু মনে ছিলো হাফসা এক দমে সব বলে গেলো,আরহাম মনোযোগ দিয়ে শুনলেন।
‘কি দিয়ে আঘাত দিয়েছিলো?বেশী ব্যাথা পেয়েছেন মাথায়?’
হাফসা অবাক হলো।ওর এত কথার মাঝে, আরহাম শুধু ব্যাথা পাওয়ার কথাই নোটিশ করলেন।জিজ্ঞেস করলো,
‘আপনার খারাপ লেগেছে এসব শুনে?
আরহাম এ প্রশ্ন সম্পূর্ণ এড়িয়ে বললেন,’আমি বলেছি এসব ভুলে যেতে।’
‘আচ্ছা।’
‘কালকে কি কি খাওয়াবেন? কি কি বানিয়েছেন? ‘
হাফসা অন্যমনষ্ক হয়ে আবার বলতে লাগলো,এটা সেটা বানিয়েছে।অন্যগুলো বানানো বাকি।হাফসার কথা বলার ফাঁকে আরহাম পকেট থেকে ছোট্ট একটা বক্স বের করে তা থেকে একটা রিং ওর হাতে পরিয়ে দিতেই হুষ ফিরলো ওর।এতক্ষণে নিজের প্রলাপে এতই মত্ত ছিলো যে আরহাম কখন রিং পড়ালেন বুঝতে পারে নি।চকচক করা রিংটার দিকে কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই আরহাম ওর হাতের পিঠে চুমু দিয়ে বললেন, ‘আপনার সাথে আমার প্রথম ঈদ।’
‘আমি কিছু দেই না তো আপনাকে’
‘দিতে হবে।আমি যা চাইব।’
‘বলুন কি?’
আরহাম হাফসার মুখটা দুহাতের আজলায় নিয়ে বললেন, ‘ঘটে যাওয়া এই অশুভ ইন্সিডেন্ট ভুলে যেতে হবে। প্রমিস করতে হবে,এই বিষয় নিয়ে কখনো কান্না,গিলটিফিল ওর মুড অফ করবেন না।আমার অজান্তেও না।একা থাকলেও না।’
‘প্রমিস করে যদি কথা রাখতে না পারি?’
‘চেষ্টা করবেন। প্রথম প্রথম কষ্ট হলেও একটাসময় তো ভুলতে পারবেন রাইট?’
‘ইন শা আল্লাহ।’
আরহাম হাফসার হাত জোরে ধরে বুকের সাথে লাগিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলেন নির্নিমেষ!আর হাফসা আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাতে ব্যস্ত,দূনিয়ার সবচেয়ে দামি গিফট পাওয়ার জন্য!
৮৬
নামাজ পড়ে ঘুম লেগে আসছিলো,যখন উঠলেন তখন বাইরে রোদের ঝলকানি স্পষ্ট!
মেসওয়াক শেষে ফ্রেশ হয়ে নিচে যেতে দেখলেন সবাই বাবার রুমে।এসেই দেখেন চা’য়ের আড্ডা চলছে।কী একটা অবস্থা!
আরহাম আব্বু আম্মুকে সালাম করে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে আম্মুকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘চা খাওয়া হচ্ছে।আমাকে রেখে?’
‘তুমি ঘুমে ছিলে।’
‘ডাকলে তো উঠতাম।’
‘গল্প করার জন্য আমার মেয়েরা আছে,তাই আর তুমাকে ডাকার প্রয়োজন মনে করি নি আমরা।'(আব্বু)
আরহাম গোমড়ামুখে বললেন, ‘এটা ঠিক না!অন্যায়।’
আব্বু হেসে ফেললেন।
‘তোমার দাদার কবর জিয়ারতে যাবো।রেডি হয়ে নাও।তোমার উঠার অপেক্ষায় ছিলাম।’
বাবা টুপি নিয়ে বাইরে বেরোলেন,আম্মুও কিচেনে গেলেন।
এরই মধ্যে হুট করেই হাফসা মাইমুনা দূজনেই একসাথে বলে উঠলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।’
আরহাম কিছু সময় নিয়ে ব্যাপারটা বুঝে উঠতেই বেশ শব্দ করেই হেসে দিলেন।কার আগে কে সালাম দেওয়ার প্রতিযোগিতাই দূজনই সমান।সালামের উত্তর দিয়ে দূজনের কপালে উষ্ণ স্পর্শ দিতেই দূজনে হাত পেতে বলে বসলো, ‘এবার সালামি দিন।’
‘কিসের সালামি?’
‘ঈদের।’
‘দিতে হয় না কি?আমি তো এসব নিয়ম জানি না।’
‘উঁহু,এটা আমাদের হক।'(মাইমুনা)
আরহাম প্রসঙ্গ এড়াতে মুচকি হেসে উঠতে উঠতে বললেন, ‘রেডি হবো।আব্বু অপেক্ষা করছেন।’
******
ঈদের জামাআতের সময় ৮ টা।এরই মধ্যে ফিরতে লেট হয়ে গেলো।আরহাম দ্রুত এসে ওয়াশরুমে ডুকতে ডুকতে হাফসাকে ডেকে বললেন, ‘উমায়ের আমার কাপর রেডি করুন।লেট হয়ে গেছে তো।’
মাইমুনা পায়েস রেডি করছে,আর ফোনে কথা বলছে।
আরহাম শাওয়ার নিয়ে বেরুতেই হাফসা টাওয়াল এগিয়ে দিলো।তাড়াহুড়োয় অর্ধেক চুল মুছে জুব্বা গায়ে জড়াতেই হাফসা দেখলো,চুল থেকে পানি পড়ে কপাল ভিজছে।
‘চুলগুলো মুছুন ভালো করে।’
‘সময় নেই।’
হাফসা এগিয়ে এসে আরহামের চুলগুলো মুছে দিতে আরহাম মুচকি হাসলেন।ঘড়ি পড়া শেষ হতে বললেন, ‘সময় ছিলো।চাইছিলামই আপনি মুছে দিন।’
*****
আব্বু আসছেন পান্জাবির হাতা গুটাতে গুটাতে।মাইমুনা নিজে পায়েস সার্ভ করে দিলেন।আরহাম প্রথমে মায়ের মুখে,অতঃপর মাইমুনা হাফসার মুখে খেজুর তুলে দিয়ে খেতে লাগলেন।আব্বুসহ সবাই পায়েসের স্বাদে প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
বের হওয়ার সময় আম্মু পেছন থেকে আব্বুর ঘড়ি এগিয়ে দিচ্ছেন, আর হাফসা আরহামের জায়নামাজ।আরহাম মুচকি হেসে আওড়ালেন,’দূই প্রজন্ম’।কিন্তু পাশে আম্মু কখন এসে দাঁড়িয়েছেন,সেদিকে কোনো খেয়ালই ছিলো না আরহামের।আম্মু আরহামের কান মলে বললেন, ‘তিন নম্বর প্রজন্ম কবে আসবে!’
আরহাম ‘উফফ’ শব্দ করেই চুপিচুপি বাইরে বেরিয়ে গেলেন।কোনো এক অজান্তিক সাইনেস থেকে আম্মুর দিকে ফিরে তাকানোর সাহস হলো না।
ম্যাচ করা পান্জাবি।একসাথে দাঁড় করালে বুঝা দায়,বাবা-ছেলে।মনে হয় যেনো,সিনিয়র-জুনিয়র।
একই হাইটের,একই গায়ের রং।একই হাসি!
সাদা পান্জাবি আর কালো পাগড়িতে অমায়িক সুন্দর লাগছে দূজনকে।হাসিমুখে বিদায় নিয়ে দূজনে চললেন ঈদগাহের উদ্দেশ্যে!
*****
ঘর গুছিয়ে,হাতের কাজ সেরে মাএ শাওয়ার নিয়ে আরহামের উপহারের সাদা রঙ্গের ড্রেসটা পড়েছে হাফসা।আয়নায় নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলো,একেবারে খারাপ লাগছে না দেখতে।তখুনি আইরা ফোন দিলেন।ফোনে কথা বলতে বলতে আম্মুর কাছে যেতে নিচে নামছিলো সে।
নিচে নামতেই আব্বু আরহাম মাএ ডুকলেন।ফোনে কথা বলায় ব্যস্ত হাফসার দিকে আরহামের চোখ পড়তেই স্থির হয়ে যায়।সাদা রঙ্গের ড্রেসে সবুজ পাথরের কাজ করা।একদম হুরপরী লাগছে দেখতে,চোখাচোখি হতেই হাফসা চোখ সরিয়ে নেয়।
*****
আম্মুর দূপাশে দূজনে বসে আছে।
আইরা তখনো লাইনে।
কথা বলার একপর্যায়ে আইরা জিজ্ঞেস করলেন, ‘ভাইয়া কি সালামি দিলেন?’
‘কিছুই না।’
‘সত্যি দেন নি?আদায় করে নিবা।সালামিতে ছাড় দিও না ভাবি।’
‘আচ্ছা। আপনি ছাড় দিয়েছেন?’
‘মোটেই না।গুণে গুণে প্রাপ্য টা নিয়েছি।’
*****
খাবার টেবিলে নাস্তার বাহার।সবাই বসছেন একসাথে।
আরহামের চোখজোড়া একবার ডানে যায়,একবার বামে।দূপাশেই উনার দূই আহলিয়া।সাদা রঙ্গে চোখ আটকে যাচ্ছে বারবার।
খাওয়া শেষে সবাই যখন ড্রয়িংরুমে আড্ডা দিচ্ছিলেন, ‘মাইমুনা আব্বুকে নালিশ দেওয়ার ভঙ্গিতে বললেন, ‘আব্বু আমরা সালামি পাইনি।’
আব্বু আরহামের দিকে সরু চোখে তাকাতেই আরহাম কেশে উঠলেন।উপর থেকে এসে দূজনকে দূটো বক্স দিলেন।বললেন, ‘পরে একসময় খুলতে।’
এবার নিজেই বাবার কাছে আবদার করে বসলেন, ‘আব্বু এবার আমার সালামি দিন।’
‘তুমি বড় হয়ে গেছো।ছোট হলে দিতাম।’
আম্মু ঘোর আপত্তি জানিয়ে বললেন, ‘উঁহু, এগুলো বলে পার পাওয়া যাবে না।এগুলো কি বলে দেওয়া লাগে?আরহাম, হাফসা মাইমুনা সবারই প্রাপ্য আছে।’
আব্বু হাসিমুখে সবার প্রাপ্য বুঝিয়ে দিলেন। আরও কিছুসময় গল্প গুজব করে আরহাম মাইমুনার রুমে গেলেন।
মাইমুনা বক্স খুলে চুপচাপ বসে আছে।রুমে আসার পর বক্স খুলতেই দেখেন ভেতরে আরেকটা লাভ সেপের বক্স।কিন্তু সেটা তালা দেওয়া।চাবি তো নেই।
আরহাম রুমে প্রবেশ করতেই জিজ্ঞেস করলেন, ‘চাবি কোথায়?লক কেনো?’
‘আমার কাছে।’
‘দিন।’
‘শর্ত আছে।’
‘কি?’
‘আপনারা তো আদায় করে নিলেন।আমি কিছু ডিজার্ভ করি না?
52★
‘আপনারা তো আদায় করে নিলেন।আমি কিছু ডিজার্ভ করি না?
‘এসব তো নিয়ম নেই।’
‘আচ্ছা।তাহলে চাবি থাকুক আমার কাছে।’
‘আচ্ছা বলুন কি শর্ত?’
আরহাম মুচকি হেসে গাল এগিয়ে দিলে মাইমুনা সরে যায়।
আরহাম মাথা নাড়িয়ে বললেন, ‘ওকে।লক থাকুক।’
মাইমুনা ঢুক গিলে বলে, ‘আচ্ছা আগে চোখ বন্ধ করুন।’
আরহাম সম্মতি দিয়ে চোখ বন্ধ করে প্রাপ্যটা পাওয়া মাএই মুচকি হেসে চাবি দিলেন।
বক্স খুলতেই মাইমুনা সারপ্রাইজড।মাইমুনার সাথে কিছু সময় কাটিয়ে যখন উপরে আসলেন, দেখলেন হাফসা উবু হয়ে পায়ে কিছু একটা করছে।
আরহাম এগিয়ে যেতে দেখলেন,পায়ে আঘাত লেগে কেটে গেছে।জিজ্ঞেস করতে বললো, ‘আসার সময় হোঁচট খেয়ে আঘাত লেগেছে।’
আরহাম যত্ন করে ব্যান্ডেড লাগিয়ে দেওয়ার পর হাফসা বক্সটা আরহামের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, ‘আপনি খুলুন।’
‘উহু।’
নিজেই খুলতে বসে ভেতরের লাভ সেপের বক্সে তালা দেখতে পেলো,চাবি চাইলে আরহাম কন্ডিশন দিয়ে বসেন, দূটো শর্ত মানলেই চাবি দিবেন।
‘কি শর্ত?’
‘আরহাম ইশারায় গাল দেখিয়ে দিতে হাফসা আরো সরে বসে।
কাঁপা স্বরে জিগ্গেস করলো, ‘আ্ আর কি শর্ত?”
‘তিন অক্ষরের ম্যাজিক ওয়ার্ড টা আপনার মুখ থেকে শুনতে চাই।’
হাফসা গাল ফুলিয়ে বলে, ‘এত কঠিন কঠিন শর্ত’
হাফসার রিয়াকশন দেখে আরহাম হেসে দিলেন।
‘আপুকেও সেইম শর্ত দিয়েছেন?’
‘উহু,উনি আমাকে এর আগে বলেছেন।আপনার মুখ থেকে শোনা হয়নি।আমি কিন্তু অনেকবার বলেছি আপনাকে।’
হাফসা বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকলো শেষপর্যায়ে গোমরা মুখে বলল, ‘শর্ত না মানলে চাবি দিবেন না?’
‘উহু।’
‘আমি আম্মুকে বলে দিব।’
আরহাম ফিক করে হেসে ফেললেন।হাসতে হাসতেই বললেন, ‘আপনি কি আম্মু কে এসব বলতে পারবেন?মোটেও না।আচ্ছা পারলে বলেন গিয়ে।’
হাফসার এবার রাগ হলো,সত্যিই ও বলতে পারবে না।তাই লোকটা সুযোগ নিচ্ছে।
আরহাম উঠতে উঠতে বললেন, ‘চিন্তা করুন,কি করবেন?আজকের মধ্যে শর্ত না মানতে পারলে,বক্সটা আমি ফেরত নিয়ে নিব।’
বলে চোখ মেরে বেরিয়ে গেলেন।
হাফসা গাল ফুলিয়ে বসে রইলো।বক্সটা হাতে নিয়ে চাবি ছাড়া অনেক রকম চেষ্টা করলো,বৃথা হয়ে মনে মনে আরহামের প্রতি রাগ নিয়ে বললো, ‘খুব চালাক লোক।এত কঠিন শর্ত না দিলেও পারতেন!আমারও লাগবে না চাবি,আপুর টা নিয়ে আসবো।’
৮৭
যোহরের নামাজ পড়ে জায়নামাজেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলো হাফসা।যখন ঘুম ভাঙ্গলো,নিজেকে বিছানায় দেখে কিছুসময় তব্দা খেয়ে রইলো।পরক্ষনেই মনে হলো, উনি হয়তো এসছিলেন।
উঠে কিছুক্ষণ হাটাহাটি করে নিচে নামলে দেখলো ড্রয়িং রুমে একটা বাচ্চা ঘুরেফিরে একুরিয়াম দেখছে,আর খিলখিল করে হাসছে।
হাফসা এগিয়ে এসে বাচ্চাটাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘কে তুমি?’
বাচ্চাটা উল্টো তাকেই প্রশ্ন করে বসলো, ‘আপনি কে?’