(১১)
আসর নামাজের পর বিকালটুকু কাটলো মায়ের সাথে গল্প করে।অল্প সময় কথা বলেই ক্লোজ হয়ে গেল হাফসা।আপন মানুষদের ছেড়ে আসার জন্য উদ্ভূত হওয়া মন খারাপ কেটে গেলো অনেকটাই।তিনি তখনো বাইরে।সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজের পর চা নাস্তা খাওয়া শেষে আম্মু ওর ছোট হয়ে যাওয়া চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার কি ঘুৃম পেয়েছে?’
হাফসা ঘুমজড়ানো চোখে বলল, ‘সমস্যা নেই।’
‘সমস্যা আছে।আমার রুমে ঘুমাবে না নিজের রুমে যাবে?’
‘রুমে যাই?’
‘যাও।’
আম্মু ওকে শুধু রুমেই দিয়ে আসলেন না।একেবারে শুইয়ে কাঁথা জড়িয়ে দিয়ে লাইট অফ করে আসলেন।হাফসা প্রশান্তির হাসি হাসলো।সৃষ্টিকর্তা তাঁর এই দোয়াটিও ফিরিয়ে দেননি।শ্বাশুড়ি নামে সত্যিই সে একজন মা পেয়েছে।
*****
বেশ কিছুক্ষণ পর আরহাম মসজিদ থেকে ফিরে এসে দেখলেন লাইট ওফ।ভ্রু কুচকে ভেতরে ডুকতেই দেখলেন একটা ঘুমন্ত ফুল!
দূপকেটে হাত গুজে এগিয়ে আসলেন।দূর থেকেই কিছুক্ষণ তাকালেন।ইসসস এত মায়া লাগে কেন আপনাকে!
চেয়েও একটা পবিএ স্পর্শ করতে পারলেন না।এখনও যে শর্ত বাকি!
******
‘আংকেল আংকেল কোথায় আপনি?বের হন।’
বাইরে থেকে রাদ’ এর চেঁচামেচি শুনে আহমাদ হন্তদন্ত হয়ে বের হলেন।উনাকে দেখে রাদ রক্তচক্ষু নিয়ে এগিয়ে এলো।সামনে এসে গলা উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘হাফসা কোথায়?কোথায় ও?আমি দেখতে চাই ওকে।এখুনি এইমুহুর্তে।’
চাচা রুক্ষস্বরে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কেন?কী দরকার?’
রাদ দাঁতে দাঁত চেপে বলল, ‘শুনেছি ওর নিকাহ হয়ে গেছে।আমি জানি এসব মিথ্যে।আমি আজই ওকে বিয়ে করব।ওকে আসতে বলুন।’
‘ঠিকই শুনেছো ওর নিকাহ হয়ে গেছে।’
সাথে সাথে রাদ’এর ভয়ঙ্কর হুংকারে আহমাদ মন্জিল কেঁপে ওঠলো।রাদ নিজের চুল চেপে রাগ সংবরন করার চেষ্টা করলো।অতপর কিছুটা শান্তসুরে বললো,
‘আমি বিশ্বাস করি না।’
‘তুমাকে বিশ্বাস করানোর কোনো ইচ্ছা ও আমার নেই।নিজের সীমা লঙ্গন করছো।হাফসার নিকাহ হয়ে গেছে এটাই ঠিক।তুমি চলে যাও।ঝামেলা করো না।’
রাদ দিশেহারা হয়ে বলতে লাগলো, ‘কেন কেন কেন?কেন ওকে বিয়ে দিলেন?হুয়াই?আপনি তো কথা দিয়েছিলেন হাফসাকে আমার সঙ্গে বিয়ে দিবেন।ওয়াদা কেন ভঙ্গ করলেন আপনি?
‘ওর হুকুম অন্য কারোর সাথেই ছিলো।আমার কিছু করার নেই।আমি দূ:খিত।’
রাদ ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘হাফসার কোথায় বিয়ে হয়েছে?কার সাথে?’
‘আরহাম তাজওয়ার।’
রাদ এবার ভ্রু কুঁচকে কিছু মনে করার চেষ্টা করে বলল,’দ্যা গ্রেট সেলিব্রিটি আব্দুল্লাহ আল আরহাম তাজওয়ার?’
‘হ্যাঁ।’
আহমাদ মুসতাকিনের উত্তর শুনে রাদ কিছুক্ষণ চুপ থাকলো।অতপর আবার গরম মেজাজে বলল, ‘সে যেই হোক।আমি হাফসাকে পছন্দ করি।সেই ছোটবেলা থেকে।আপনি বিশ্বাস করুন,আমি দেশে আসার সময় ঠিক করে এসেছিলাম যে এবার এসে আমি ওকে বিয়ে করব।’
‘যা হওয়ার তো হয়ে গেছে।আমাকে ক্ষমা করো,তুমাকে আশা দেখানোর জন্য।আরহামকে ও পছন্দ করতো আগে থেকেই।তাই আমার কিছু করার ছিলো না।’
‘কিছু করতে হবে না।আমি আমার হাফসাকে চাই যেকোনো মূল্যে।আরহাম তাজওয়ারের বাসার ঠিকানা দিন।’
আহমাদ চমকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কেন?তুমি কি করবে?’
‘সেটা আপনাকে বলতো বাধ্য নই।’
‘আমিও তোমাকে ঠিকানা বলতে বাধ্য নই।’
‘আচ্ছাহ?তবে অপেক্ষা করুন ঝড়ের।আমি কাউকে ছাড় দিবো না।’
বলেই দ্রুতপায়ে সে বেরিয়ে গেল।
আহমাদ দীর্ঘনিশ্বাস ফেললেন ওর যাওয়ার পথে তাকিয়ে।কেন জানি মনে হচ্ছে আসলেই কোনো ঝড়ের!তবে সবকিছুই আল্লাহ ভরসা।
7★
বেশ লম্বা একটা ঘুম দিয়ে উঠলো হাফসা।❝আল্লাহু❞ চকচক করে ওঠা ঘড়িতে চোখ গেলে দেখলো এগারোটা বেজে আটাশ মিনিট।নিজের প্রতি নিজেরই একরাশ রাগ উঠলো।আসার পর থেকে শুধুই ঘুমুচ্ছে।চুপিচুপি উঠে লাইট অন করলো।উনি নেই তো আগের মতো।
চারিপাশে চোখ বুলিয়ে বারান্দার দিকে এগিয়ে যেতে দেখলো লাল নীল আলো জ্বলছে।চারিপাশে ফুলের ঝালের জীবন্ত টবগুলোকে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সাদা রঙ্গের বাতিতে।হাফসা চমকে গেলো যখন দেখলো পুরো মহলটা আলোয় ঝলমল করছে।বারান্দা থেকে মুখ উঁচিয়ে দেখলো, বাতিগুলো ছাদ থেকেই ঝুলছে নিচের বারান্দা পর্যন্ত। বাগানেও বড় বড় গাছগুলোতে লাইটিং করা।কিন্তু কেন?আজ উনার বিয়ে বলে!বিয়ে বলে কী এত আয়োজন!
হাফসা মুচকি হাসলো।সত্যি বলতে ওর মনের অজান্তে লুকিয়ে থাকা সব চাওয়াগুলোই কেমন পূরণ হয়ে যাচ্ছে।এত রাত হলো লোকটা ঘরে নেই।প্রশ্নটা মনে উঁকি দিতে পুনরায় ঝেড়ে ফেললো।রুম থেকে বেরিয়ে হাঁটা ধরলো আম্মুর রুমের উদ্দেশ্যে।পারমিশন নিয়ে ঢুকতে যাবে তখন আম্মু নিজেই বের হলেন।
হাফসাকে দেখতেই মুখে হাসি ঝুলিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ ঘুম কেমন হয়েছে?’
হাফসা বরং অস্বস্তিতে পড়লো।প্রথম দিনে এসেই ঘন্টার পর ঘন্টা ঘুমোচ্ছে।
আম্মুর দিকে তাকিয়ে কিছু উত্তর দিতে চাইলে উনাকে চিন্তিত দেখালো।উনার মুখে কেমন জানি সবসময়ের হাসিটা নেই।
‘কোথায় বেরোচ্ছিলে?’
‘আ্ আপনার কাছে।’
আম্মু চিন্তিত নয়নে হাফসার দিকে কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রুমে নিয়ে ওকে বসিয়ে বললেন, ‘আরহামের জন্য টেনশন হচ্ছে খুব।’
হাফসা চমকালো।মুহুর্তেই মস্তিষ্ক অনেকগুলো প্রশ্ন জড়ো হয়ে গেলো।জিজ্ঞেস করলো, ‘কেন?’
‘বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে।যদি কোনো ক্ষতি হয়?’
হাফসা কিছুই বুঝতে পারছে না।আম্মু ওর প্রশ্নাত্নক দৃষ্টি পড়ে ফেললেন।বললেন, ‘আরহাম বাসায়ই ছিলো।হঠাৎ তোমার কাকামণির ফোন আসলো।তোমার মামাতো ভাই মনে হয় কে যেনো নাম…
হাফসা কিছু একটা আন্দাজ করতে পেরে ঢক গিলে বলল, ‘র্ র্ রাদ ভাই?’
‘হ্যাঁ হ্যাঁ ওই রাদ ঝামেলা করছে তোমার কাকামণির সাথে। সে যেকেনো মুল্যে নাকি তোমাকে বিয়ে করতে চায়।’
হাফসা আম্মুর কথা শুনে কেঁপে কেঁপে উঠলো।রাদ ভাই যে কতটা ভয়ঙ্কর তা একটু হলেও জানা আছে ওর।
‘ক্ কখন বেরিয়েছেন?’
‘অনেক আগে।এতক্ষণে পৌঁছে গিয়েছে হয়তো।’
হাফসা চুপ রইলো।মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে লাগলো।সবকিছুর যেন সুন্দর সমাধান হয়ে যায়।কোনো ঝামেলা যেন না হয়।
******
পরক্ষণেই মনে হলো ও তো ইশার নামাজই পড়েনি।আম্মুকে ভরসার বাণী দিয়ে আশ্বস্ত করে অযু পড়ে নামাজে দাঁড়িয়ে গেলো।
রাদ ড্রয়িং রুমে বসে রয়েছে ওর দলবল নিয়ে।একপাশে সায়িদ আনসার,আরেকপাশে আহমাদ।এরই মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়ে গেছে অনেক।বাইরে গাড়ির হর্ণ বাজতেই আহমাদ বুঝলেন আরহাম এসেছে।হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে গেলেন সেইদিকে।
কিছুক্ষণ পর…
রাদ রাগী মেজাজ নিয়ে দরজার পানে তাকাতেই চমকে যায়।সাদা শার্টে কালো প্যান্টে,মুখভর্তি দাঁড়িতে শুভ্র মায়াময়ী একজন পুরুষ।হঠাৎ করেই কি যেনো হয়ে গেলো ওর।কিছুক্ষণ নির্নিমেষ তাকিয়ে রয় একদৃষ্টিতে।রাদ নিজেই বুঝতে পারছে না,নিজে একটা পুরুষ হয়ে আরেকটা পুরুষের ওপর কীভাবে এত আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে।
আরহাম তাজওয়ার নিজে সালাম দিতেই রাদ আরো হকচকিয়ে যায়।আমতা আমতা করে সালামের রিপ্লাই দেয়।আহমাদ আরহামকে বসতে বললেন।
পরিবেশ কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর আরহাম নিজেই বললেন, ‘প্রথমেই বলি।আমার কথা যদি আপনাদের কাছে কঠিন মনে হয় দ্যান সরি।কিন্তু বলতে হবে।অতঃপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ‘উমায়ের, উনার সাথে আমার হুটহাট নিকাহ হয়নি।এখানেই প্রোগ্রাম শেষে প্রথমবার যখন আসছিলাম উনাকে প্রথম দেখি।উনার চাচার কাছ থেকে জানি উনার বিষয়ে। উনাকে আমার পছন্দ হয়।বাট উনার এইজ কম।পুরো দূই বছর ওয়েট করি আমি এইটিন হওয়ার জন্য।আনফরচুনেটলি মাঝে একটা মাস আমি বাবার সাথে যোগাযোগ রাখিনি।আর এর মধ্যেই আপনাকে নিয়ে কথা হয়।আই মিন আপনাদের নিকাহ নিয়ে।কিন্তু পরে আমি আসি।জানতে পারি আপনাদের বিষয়।আমি উনাকে হারাতে চাই নি।আমার মতেই নিকাহ সুন হয়েছে।’
রাদ এবার রাগে ফেটে পড়ে বলল, ‘কেন?হাফসা আমার ছিলো।আমার কল্পনায় একটা নিষ্পাপ ফুল ছিলো।কই আমি চাইলে তো হারাম রিলেশনে জড়াতে পারতাম ওকে জোর করে হলেও।আমি তো বড় হওয়ার পর ওকে দেখিনি পর্যন্ত।প্রতিটা দিন একটু একটু করে ভালোবেসেছি।কেন আপনি ওকে বিয়ে করলেন? আপনি তো অনেক ভালো কেউ পেতে পারতেন।আমার কলিজার দিকে কেন হাত দিলেন।দেখুন আমি অনুরোধ করে বলছি,আপনাদের নিকাহ এখনও একদিন হয়নি।আমি ওকে চাই, হাফসাকে চাই আমি।সে আপনাকে মৌখিক তালাক দিবে।ডির্ভোস হবে আপনাদের।ওকে আমাকে ফিরিয়ে দিন।’
আরহাম তাজওয়ার একবার আহমাদের দিকে তাকালেন। অতপর রাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘নেভার এভার।নাউ সি ইজ মাই ওয়াইফ।আমার অনুমতি ব্যতীত আপনি তাকে পাওয়া তো দূরের কথা উনার ছায়াটুকুও দেখতে পারবেন না।ঝামেলা আমার মোটেও পছন্দ নয়।আই রিকুয়েস্ট ইউ আপনি উনাকে ভুলে যান।উনি আপনাকে চান না।উনি খুশি থেকেই স্বইচ্ছায় আমাকে বিয়ে করেছেন।’
কিছু সময়ের জন্য আরহাম দৃষ্টি অন্যমনষ্ক ছিলেন।রাদ রাগে দূহাত মুষ্টিবদ্ধ করলো।আরহামের বলা, ‘নাউ সি ইজ মাই ওয়াইফ’ কথাটা যন্ত্রের মতো রাদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।রাদ রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে কাঁপতে কাঁপতে কাচের ফুলের ভেইজ সামনের ব্যক্তিটার উদ্দেশ্যে ছুঁড়ে মারলো।আচমকা এক যন্ত্রণায় তিনি মাথা চেপে ধরলেন।
(১২)
রাদ শুধু ভেইজ ছুঁড়েই শান্ত হলো না।আক্রমণ করতে বসলো হিংস্র জন্তুর ন্যায়।মামা আর রাদের বন্ধু তাকে আটকে নিলেন।
আরহাম চোখে খিঁচে কাঁচের টুকরোটা টান মেরে খুলে আনতেই হাত রক্তাক্ত হয়ে যায়।আহমাদ ব্যস্ত হয়ে পড়লেন উনাকে নিয়ে।চোখতুলে রাদ এর দিকে নীরব দৃষ্টিতে তাকালেন।
আহমাদ তড়িঘড়ি করে রুমাল বের করে আরহামের মাথায় পট্টি বেধে দিলেন।
রাদ অবাক হয়ে গেছে।একদম শকে চলে যাওয়ার মতো অবাক হওয়া বলে যাকে।মাথা ঠান্ডা হতেই গায়ের লোমকূপ পর্যন্ত আচমকা কেঁপে উঠলো।একটা মানুষকে সে আঘাত করলো।রাগ দেখালো।উচ্চ আওয়াজে কথা বললো কিন্তু তিনি কোনো কঠিন কথা বা রাগ দেখানো তো দূর কোনো অভিযোগ পর্যন্ত করলেন না।উনার চোখের দৃষ্টিও শান্ত।কোনো রাগ নেই,ক্রোধ নেই,ক্ষোভ নেই।
রাদের অসুস্থ মস্তিষ্ক আবার বিগড়ে গেলো।চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলতে লাগলো, ‘হাফসা আমার,হাফসা আমার।আমি ওকে নিয়ে আসবো।আমি ওকে বিয়ে করব।আমার ওকেই চাই।’
আহমাদ আরহামকে ইশারায় কোনো প্রটেকশন নেওয়ার কথা বুঝালে আরহাম এমন প্রস্তাব নাকোচ করে রাদের দিকে ফিরে শান্তকন্ঠে বললেন..
‘আপনি শান্ত হোন।নাহলে আমি কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবো।’
রাদ চেঁচিয়ে বলল, ‘কেনো?কেনো?কী করবেন আপনি?’
সায়িদ আনসার প্রথম থেকেই চুপচাপ।আরহাম আসার আগ পর্যন্ত উনার গলা উচুঁ ছিলো।কিন্তু আরহামকে দেখে থমকে গিয়েছিলেন উনি।এরকম একটা মানুষের সাথে উনি কখনোই উচ্চ আওয়াজে কথা বলতে পারবেন না।
আরহাম আগের মতোই শান্তকন্ঠে বললেন, ‘বাইরে পুলিশ আছে।’
আহমাদ এবার কড়ামেজাজে বললেন, ‘আরহাম তুমি তাকে এখনো কেন সুযোগ দিচ্ছো?তোমাকে আঘাতও করেছে।সে তাঁর সীমা সেই কবেই ক্রস করে ফেলেছে। আমি এখুনি তাদের ভেতরে নিয়ে আসছি’ বলেই হনহন করে চলে গেলেন বাইরের দিকে।
আরহাম উনাকে বাঁধা দিলেন কিন্তু তিনি থামলেন না।
রাদ আবার বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো।গর্জে উঠে বলল, ‘পুলিশ কী করবে আমার?আপনি আমাকে ক্ষমতার পাওয়ার দেখাচ্ছেন?ভালোয় ভালোয় এখনো বলছি হাফসাকে আপনি তালাক দিন।আমি ওকে বিয়ে করবো।’
রাদ এর কড়া কন্ঠ আরহামের চেহারার কোনোই পরিবর্তন ঘটাতে পারলো না।বরং তিনি কারো কথার কোনো প্রতিউত্তর না করে শান্ত হয়ে গেলেন।
আহমাদ আসলেন পুলিশ নিয়ে।আহমাদ সংক্ষেপে সব ঘটনাসহ আরহামকে আঘাতের দৃশ্য বর্ণনা করলে পুলিশ এগিয়ে যায় রাদকে হ্যান্ডকাফ পরাতে।আরহাম পুলিশদের থামিয়ে রাদ কে লাস্টবারের ওয়ার্ন করলেন,
‘শেষবারের মতো বলছি রাগ কমান আপনার।নিজেকে সামলান।নিজের কাজেই নিজের ক্ষতি ডেকে আনছেন।’
সায়িদ আনসার এবার ছেলেকে বুঝিয়ে বলতে লাগলেন, ‘ হয়েছে মেনে নাও রাদ।আমার মান প্রেস্টিজ নষ্ঠ করো না।পুলিশ চলে আসছে।ঝামেলা হবে।ট্রাই টু বি কোল।’
বাবার কথাকে বিন্দুমাত্র পাত্তা না দিয়ে রাদ আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলো।রাগে কাঁচের গ্লাসটা তৎক্ষণাৎ আবার হাতে নিয়ে আরহামের দিকে ছুঁড়তেই তিনি মাথা নিচু করে নেন।
পুলিশকে অভিযোগের স্বরে বলল, ‘অফিসার এই লোকটা আমার ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করে নিয়েছেন।আমি হাফসাকে আমার কাছে আনতে চাই।আই লাভ হার।’
আরহামের দৃষ্টি তখনো নিচে ভেঙ্গেপড়া গ্লাসের টুকরো টুকরো অংশের দিকে।পুলিশ রাদকে জোর করে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে নিয়ে গেলে আহমাদ ব্যস্ত হয়ে পড়লেন আরহামের মাথার আঘাত নিয়ে।
আরহাম উনাকে শান্ত করে বললেন, ‘ঠিক আছি আমি।উমায়ের একবার সেন্সলেস হয়েছিলেন,উঠার পর আপনাকে আর উনার মামুণীকে দেখার জন্য কান্না করছিলেন।আপনি চলে আসুন আমার সাথে বাড়িতে।’
আহমাদ ভয়ার্তদৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, ‘হাফসা কেন সেন্সলেস হয়েছিলো?’
‘জানিনা মনে হয় ভয়ে।’
আহমাদের চেহারায় রাজ্যের দূ:খ জমা হতে থাকলো।আফসোসের সুরে বললেন, ‘আমার বাড়িটা কেমন খালি খালি হয়ে গেছে।বিষন্নতা কাটছে না।বাড়ির প্রাণ টা যেন চলে গেছে।আর হাঁটতে ফিরতে ওর দেখা পাই না।’
*****
১টা বেজে ১৩ মিনিট।
রাত গভীর হলেও বাড়ির পরিবেশ ঝলমলে।সন্ধ্যার পর থেকে বেশ সময় ঘুমানোয় চোখে তেমন তন্দ্রা নেই।চোখ বন্ধ করে বিছানায় আধশোয়া হয়ে শুয়ে আছে হাফসা।হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে হাফসার ধ্যান ভাঙ্গে।অন্ধকারে একজন বলিষ্ঠ দেহী সুন্দর কাঠামোর অবয়ব দেখতেই হাফসা বুঝতে পারলো আরহাম এসেছেন।
হাফসা ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো।
উনি তৎক্ষনাৎ লাইট জ্বালালেন।ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি এখনো ঘুমাননি?’
‘ঘুৃমিয়েছি তো আসার পর থেকেই।’
‘খেয়েছেন?’
‘জ্বী।আপনি?’
‘আম্মু কোথায়?আম্মু খেয়েছেন?’
‘খাননি আপনাকে রেখে।’
‘শীইইট।আম্মু..
‘আমি খাইয়েছি জোর করে।’
‘গুড।’
তারপর রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন নিচে মায়ের রুমের উদ্দেশ্যে।
কিছুক্ষণ পর রুমে এসে হাফসাকে এখনো আগের ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ঘুমাবেন না?’
‘ঘুম আসছে না।’
কথা বলতে বলতে উনি আনমনা হয়ে হঠাৎ টুপিটা সরাতেই হাফসা চিৎকার দিতে গেলেই উনি এসে মুখ চেপে ধরেন ওর।
অদ্ভুত দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে অতপর জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি হলো?’
‘ব্য্ ব্যা্ ব্যান্ডোজ কেন আপনার মাথায়?’
উনি তৎক্ষনাৎ ব্যান্ডেজ ঢেকে বললেন, ‘তেমন কিছু না।’
‘ত্ তাহলে ব্যান্ডেড লাগানো কেন?’
‘অল্প একটু কেটেছে।’
হাফসার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ওর ভাবমূর্তি পরখ করে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এক্সিডেন্ট ভয় পান আপনি?’
‘ভীষণ।’
‘তেমন কিছু হয়নি।ভয় পাবেন না।’
নীরবতা ঘিরে ধরলো পরিবেশ।নীরবতা ভেঙে তিনি বললেন, ‘বারান্দায় যাবেন যদি না ঘুমান?’
উনার কথা হাফসার ছোট্ট মস্তিষ্কে ডুকতে একটু সময় লাগলো বটে।তবে বুঝে উঠতেই মাথা নাড়ালো।
দূজনে বারান্দায় গিয়ে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে।উনি ফোন বের করে কিছু একটা দেখে আবার পকেটে ঢুকিয়ে
জিজ্ঞেস করলেন,
‘আপনি কি খুশি এই বিয়েতে?’
হাফসা চমকে তাকালো।উনি উত্তর পাওয়ার আশায় ওর দিকে তাকিয়ে আছেন এখনো।
কাঙ্খিত উত্তর না পেয়ে আবারো জিজ্ঞেস করলেন, ‘খুশি আপনি?না চাপে পড়ে বিয়ে করেছেন?’
হাফসা নিচুমুখে বলল, ‘আলহামদুলিল্লাহ খুশি।’
তিনি কিছুক্ষণের জন্য রুমে ফিরে গেলেন।একটু পর আসলেন হাতে একটা এনভেলাপ নিয়ে।
‘নিকাহ টা একটুর জন্য হলেও অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে।’
বলে এনভেলপ টা এগিয়ে দিতেই হাফসা কিছু না বুঝে সরে দাঁড়ালো।তা দেখে উনি মুচকি হেসে বললেন, ‘ডির্ভোস লেটার….
(এখন রমজান মাস।দয়া করে এই দামী সময়টা যাচ্ছেতায় ব্যয় করবেন না।পড়তে হলে রোযার পর না হয় গল্পটা পড়ুন।তবু দিন রাত এক করে পড়বেন না।বেশি বেশী আমল করুন,সময়টুকু কাজে লাগান।আবারও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, রমজান মাস চলছে…)
(📌গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক।এটাকে বাস্তবের সাথে মেলাবেন না কেউ)