86★
(১২৬)
অনুতাপের অনলে পুড়ে গ্রীবা বেয়ে গলিয়ে গলিয়ে অশ্রু ঝরছে।নিজের ভুল, অপরাধ আর প্রিয়তমকে প্রতিবার দেওয়া সীমাহীন আঘাত, কষ্টটুকুর কথা যখন মস্তিষ্কে কড়া নাড়লো মনে হলো এত বড় অংকের ক্ষমা কি সে পাবে!আদৌ কি কোনোদিন আরহাম ক্ষমা করবেন!সত্যি সত্যি কি কখনো নিতে আসবেন!এতটুক ভালোবাসা তো উনার হৃদয়ে জমা থাকতেই পারে।মরিচা ধরা হোক,ঘৃণামিশ্রিত হোক,অল্প পরিমানও কি নেই!
না থাকারই কথা!যখন ভাবলেন, জীবনে পাওয়া সবচেয়ে দামি গিফটটাই হারানোর জন্য নিজের কৃতকর্মই দায়ী তখন শব্দযোগে আবারো তীব্র বেগে কান্না চলে আসলো।নিজেকে সামলে,অশ্রুমাখা মোনাজাত শেষে কেবল উঠছিলেনই ড্রয়িং রুম থেকে পানি এনে মেডিসিন টা খেয়ে নিতে।সবে দরজা পেরিয়েছেন,অমনি ড্রয়িংরুমে তাকাতেই কয়েক মুহুর্তের জন্য হৃৎস্পন্দন যেনো আচমকা ব্রেক কষলো মাইমুনার!
চোখাচোখি হলো কেবল কয়েক সেকেন্ডের জন্য।আরহাম দৃষ্টি সরিয়ে নিলেন সাথে সাথে।মাইমুনা খুশিতে কাঁদবে না হাসবে বুঝতেই পারছে না।দাদূ উনার সাথে খোশালাপে ব্যস্ত ছিলেন তখন ড্রয়িংরুমে আসলেন আয়মান।মাও আসলেন।
আরহাম উঠে দাঁড়িয়ে সালাম দিলেন।মা, ইমরানা, তার হাজবেন্ড প্রথম থেকে সবকিছুর জন্য করজোড়ে ক্ষমা চাইলেন।আরহাম কেবল শুনে গেলেন।
দেয়ালের ওপাশ থেকে সবকিছু শুনলো মাইমুনা।হেঁচকি তুলে থেমে থেমে কাঁদছে এখনো সে।সবার এত এত কথার পিঠে আরহাম শুধু বললেন, ‘উনাকে রেডি হতে বলুন।আমাকে ফিরতে হবে তাড়াতাড়ি।’
******
আরহাম চুপচাপ ড্রাইভ করছেন।বাসা থেকে একটু আগেই বেরিয়েছেন তারা।আরহাম একটা কথাও বলেননি এখন পর্যন্ত।অথচ গোটা আটমাস পর তাদের দেখা।
মাইমুনা হেঁচকি তুলছে, কাঁদছে আর একটু পরপর নিকাবের কোণা দিয়ে চোখমুখ মুছতে মুছতে চেহারা লাল করে ফেলেছে।অন্যসময় হলে,আরহাম এক ফোঁটা ও চোখের পানি পড়তে দিতেন না।চোখমুখ মুছে সারামুখে ভালোবাসাময়ী স্পর্শ দিয়ে আগলে নিতেন।অথচ এতক্ষণ থেকে একমনে ড্রাইভ করছেন, একটাবার কান্না থামানোর কথাও বলছেন না।যেমন অভিমান বাড়িয়ে দেয় দূরত্ব হাজার!
আরো জোরে কাঁদতে লাগলো মাইমুনা।থেমে থেমে বলল, ‘আপনি আগের মতো আমাকে ভালোবাসেন না আর তাই না?’
‘ভালোবাসা একটুও কমেনি।যেমন ছিলো,তেমন আছে।বাকিটুকু আঘাত।আমার দূ:সময়ের সুযোগ নিয়ে আঘাত!’
‘আই এম সরী।যা করেছি,ক্ষমার যোগ্য নয়।তবুও বলবো,ক্ষমা করে দিন শাহ।আর আপনাকে আঘাত দিবো না,কষ্ট দিবো না।আমি লজ্জিত,অনুতপ্ত।’
আরহামের নীরবতায় মাইমুনা আহত হলো।জিজ্ঞেস করলো, ‘ক্ষমা করবেন না?’
‘অনেক আগেই করেছি।’
‘আপনার ছেলের নাম কি?’
‘উমার ইবনে আব্দুল্লাহ তাজওয়ার।’
‘কে রেখেছে নামটা?’
‘আদওয়া।’
‘ওকে খুব মিস করি।’
আরহাম সাথে সাথে বলে উঠলেন, ‘উনার সম্পর্কে আপনি কোনো কথা না বললে আমি খুশি হবো।’
ভেতর ভেতর তীব্র ক্ষিপ্ত হয়ে পড়লেন আরহাম।কোর্টের দিনটার কথা মনে পড়লো…..
ফ্ল্যাশব্যাক__
মাইমুনা উত্তর দিলো, ‘আমি আমার মায়ের অনুরোধ ফেলতে পারবো না।’
‘হুয়াট এ্যা রিজন!এমন তো নয় আমি আপনাকে অবহেলা করছি।আদওয়া এতো বড় সমস্যা আমাদের সম্পর্কে?আমার শ্যামাপাখি আর মাএ অল্পদিনের মেহমান।’
শেষ কথাটা বলে আরহাম ঠোঁট কামড়ে ধরলেন কান্না আটকাতে।মাইমুনার প্রশ্নবিধক চোখদূটি আরহামের কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে স্থির হলো।
আরহাম উল্টো ঘুরলেন।হাত দিয়ে মুখ ঢেকে নি:শব্দে অজস্র অশ্রু ছাড়লেন।অনেকক্ষণ কাঁদলেন।অনেকক্ষণ!শেষ সময় চোখমুখ মুছে স্বাভাবিক হয়ে মাইমুনার দিকে ফিরে বললেন, ‘আমি আপনার কাছ থেকে কিছু একসেপ্ট করতাম।বাট আপনি আমাকে বিচ্ছেদ দিলেন।আমার ভাঙ্গা হৃদয় টা আরো দুমড়েমুচড়ে দিলেন।আপনি যে সিদ্ধান্তে খুশি,কোর্টে সেটাই বলবেন।আমি মেনে নিবো।’
বর্তমান~
‘আমার দূ:সময়ের আঘাত আমি ভুলবো না হানি!’
মাইমুনা অসহায়দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।ভেবেছিলো সম্পর্কের বরফ গলিয়ে তিনি আবারো আপন করে নিবেন কিন্তু উনার রাগ-অভিমান,উনার ভালোবাসার মতোই তীব্র!
******
বাসায় ফিরেই ছুটে আসলেন হাফসার রুমে।বাবাটাকে কতক্ষণ দেখেন নি।অথচ মা ছেলে কেউই নেই দেখে আম্মুকে জিজ্ঞেস করায় তিনি বললেন, ‘হাফসাকে তো নিয়ে গেলেন তোমার আব্বু।’
‘হুয়াট??????কখন?’
‘এতক্ষণে হয়তো পৌঁছে গিয়েছেন।’
আরহাম চুপচাপ রুমে চলে আসলেন।রাগে উনার মাথা ফেটে যাচ্ছে।ফোন বের করতে দেখলেন, উনার টেক্সট ‘বাবার বাড়ি যাচ্ছি আমি।’
ব্যস্ততায় চেক করা হয়নি তাই বলে চলে যাবেন?ওকে।আমিও আর আনবো না গিয়ে।যতবছর মন চায়,থাকুন।শখ মিটান।
কিন্তু আরহামের অস্থিরতা কমে না।ছেলেটাকে দেখার জন্য মনটা ছটফট করছে।একটু পর পর মাকে এসে একেক প্রশ্ন করছেন, ‘গাড়ির গ্লাস লাগানো ছিলো তো?উমারের ঠান্ডা লাগবে না তো?ঠিকমতো পৌঁছেছেন তো?উমার খেয়েছে তো?’
আম্মু উনার প্রশ্নের স্বস্তিমূলক জবাব দিয়েই যাচ্ছেন, অথচ তবুও উনার অস্থিরতা কমে না।আম্মু না পারতে বললেন, ‘এত যখন মিস করছো, তাহলে তুমি চলে যাও।দেখে আসো গিয়ে।’
উত্তরে তিনি বললেন, ‘আমি যাবো না।উনাকে আনতেও যাবো না, কথাও বলবো না।’
‘আমি মানা করায় একদম কান্না করে বসছিলো হাফসা,তাই পরে আর না করতে পারি নি।’
‘আমি আসা পর্যন্ত আটকে রাখতেন।’
‘অপেক্ষা করেছি,তুমি আসতে লেট করছো..
‘উফফ আম্মু একটা ফোন দেওয়া যেতো আমাকে।’
‘ক্ষমা করে দাও ওকে।অনেকদিন তো যায়নি তাই হয়তো…’
‘উনার কথা বলবেন না।আমি শুনতে চাই না।’
*****
বছর তো দূর,গোটা দেড়দিন রাগ নিয়ে থাকলেও তাদের না দেখতে পেরে মনটা ছটফট করছে।ছেলের জন্য বুকটা হাহাকার করছে।তাই রাগ কে বস্তাবন্দি করে বিকেলের দিকে উমারের নানুবাড়ির উদ্দেশ্যে যাএা শুরু করলেন।ছেলের মায়ের প্রতি ভালোবাসা রাগের নিচে চাপা পড়লেও,ছেলের জন্য ভেতরের অস্থিরতা কমছেই না।একমাএ তাঁর সাক্ষাৎ ই আরহামের অশান্ত হৃদয়ের ঝড় শান্ত করতে পারে।
*******
ড্রয়িংরুমে মামুনীর কোলে ছিলো উমার।চিৎকার করে করে কাঁদছিলো।আরহাম বাবার সাথের আলাপ শেষে ড্রয়িং রুমে পা রাখতেই তাঁর কান্নার শব্দে বুকটা ছ্যাত করে উঠলো।এগিয়ে এসে চট করে কোলে তুলে নিলেন।একমিনিটের মাথায় উমারের কান্না বন্ধ।বরং ছোট ছোট চোখজোড়া দিয়ে পিটপিট করে আরহামের দিকে তাকিয়ে আছে।
হাফসা বেশ তাড়া নিয়েই আসছিলো উমারের উদ্দেশ্যে।কিন্তু ড্রয়িং রুমে আরহামকে দেখে একেবারেই চোখ বড়বড় করে তাকালো।সত্যি এসছেন!বিশ্বাস হতে চাইলো না।এত এত কল, টেক্সট এভোয়েড করে কীভাবে আসলেন!
হাফসা পাশে এসে সালাম দিলো।অথচ আরহাম উত্তর দিলেন না।দিলেন হয়তোবা,মনে মনে।চোখ ফেরাচ্ছেনই না হাফসার দিকে।হাফসা ভয়ে ঢোক গিললো।খবর আছে।রেগে বোম হয়ে আছেন।
তাই গলা খাদে নামিয়ে নরম গলায় বলল, ‘আই এম সরী।আমি আপনাকে জানিয়ে….
‘ডোন্ট সে এ ওয়ার্ড ইন ফ্রন্ট অব মি।’
হাফসা আহত হলো আরহামের শান্ত সুরের অশান্ত কথাবার্তায়।মিনমিনিয়ে বলল, ‘আ্ আপনি এতো কঠিন হয়ে গেলেন?’
‘আমি কঠিন?রোড বিহ্যাভ করি?করতে তো বাধ্য করেন আপনি।’
‘ভুল হয়ে গেছে।’
আরহাম হাফসার দিকে ঘুরে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললেন, ‘আপনার সাহস তো কম না।এমন কেন করলেন?গত একদিন আমার যন্ত্রণা আর ছটফটানি দেখেছিলেন?আপনার মনে কি মায়া বলতে কিছু নেই?এখন যদি কিছু হয়ে যেত?সবসময় খামখেয়ালি করেন।ইউ নো হুয়াট আপনার জন্য যতটুক চিন্তা আমি করি,সেটা নিজের জন্য, বা মাইমুনার জন্য বা আমার ফ্যামিলির জন্য ও করি না।খুব দূঃখ দিয়েছেন আপনি আমাকে।’
অতিরিক্ত রাগে কথাগুলো বলে উমারকে দিয়ে রাগে চলে গেলেন আরহাম। হাফসা সেখানেই বসে পড়লো।চাপের মাথায় যে এতোবড়ো ভুল করে ফেলেছে সেটা এখন বুঝতে পারছে।
ড্রয়িং রুমে দূজন মুখোমুখি চুপচাপ বসে আছে। আরহাম কে জোর করে আটকে রেখেছেন কাকামণি।কারন প্রবল ঝড়ের পূর্বাভাস।পরিবেশ অশান্ত। এ অবস্থায় ড্রাইভ করা মোটেও ঠিকনা।শুধু মাএ বাবার কথা রাখতে থাকতে রাজি হয়েছেন আরহাম। নাহলে এখানে থাকার কোনো ইচ্ছেই নেই উনার।
হাফসা চারপাশ চেয়ে পাশে বসলো এসে।ঢক গিলে বলল, ‘রুমে আসুন।’
আরহাম উত্তরই দিলেন না।এই লোকটা কখন সাইলেন্ট থেকে ভায়োলেন্ট হয়ে যান,হাফসা বুঝতেই পারে না। হাফসা আরো কিছু বলতে গেলে আরহাম মুখ ফিরিয়ে নিলেন। হাফসা ব্যাথিত হলো।কোনোভাবে কান্না আটকে নিজের রুমে চলে গেলো।
*****
সন্ধ্যার পর থেকে এখন পর্যন্ত উনার আর কাকামণির বাসায় ফেরার কোনো নাম নেই।রাগ করে সেই যে বেরিয়ে গিয়েছেন,আর কোনো কথা হয় নি।ডিনারের সময় হয়েছে।হাফসা টেক্সট দিলো,উত্তর দিলেন না।না পারতে কল দিলো।দূইবার রিং তোলার পর তিনবারের সময় তিনি কল তুলেই জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি হয়েছে?’
হাফসা আহত হলো উনার রুঢ়স্বরে।জিজ্ঞেস করলো,আপনি কোথায়?কখন আসবেন?কাকামণি কোথায়?’
‘আমার সাথেই।উনাকে এগিয়ে দিয়ে আমি চলে যাবো।’
‘না না প্লিজ যাবেন না।’
ওপাশের নীরবতা শুনে হাফসা উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলল, ‘উমারকে না দেখে চলে যাবেন?’
এই কথার প্যাঁচে আরহাম আটকে গেলেন।’আসছি’ বলে ফোন রেখে দিলেন।
বাসায় ফিরতেই খাবার রেডি ততক্ষণে।হাফসা এসে এটা সেটা এগিয়ে দিচ্ছিলো।আরহাম চুপচাপ খেয়েই যাচ্ছেন।তাকাচ্ছেনও না।হাফসার ধৈর্যের বাঁধ একটু একটু করে ভাঙ্গছে।এত দীর্ঘস্থায়ী রাগ উনার!নিজের প্রতিই নিজের আকাশসম রাগ হলো।কী মাথায় চড়ে বসছিলো,আর কেনোই যে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো!সত্যিই কি ওর মুড সুয়িং বেশী বেশী হচ্ছে!নিজের চাওয়াগুলো একটু দমিয়ে রাখা যায় না!
রুমে আসার পর উনি হাতঘড়ি খুলতে নিলে ও এসে ঘড়িটা নিয়ে ড্রেসিং এ রাখলো।
উনি ভ্রু কুঁচকে তাকালেন অতপর ব্লেজারটা খুলতেই ও হাত থেকে নিয়ে গুছিয়ে রাখলো।পকেট থেকে ফোন বের করতে ফোনটাও নিয়ে বিছানার পাশে কাবার্ডে রাখলো।
এবার উনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘এসব কি করছেন?’
‘সেবা।
‘কীসের সেবা?
‘আপনার।’
‘কেনো?’
‘আমার বাড়িতে আসছেন।’
‘লাগবে না সরুন।’
হাফসা চিন্তিত হয়ে পড়ে।এখন উনার রাগ ভাঙ্গাবে কি করে!
জিজ্ঞেস করে, ‘আপনি থাকবেন তো?’
‘জ্বি না।’
‘কেনো কেনো?’
‘ভালো লাগছে না।’
‘আমাকে ক্ষমা করে দিন।আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।আর এমন হবে না।’
‘আপনার দ্বারা আরোও এমন হবে।আবারো ভুল করবেন,তারপর ভুল বুঝিয়ে দিলে তখন এসে সেইম কথাগুলো বলবেন।’
‘ তাহলে আপনি আমার সাথে কথা বলবেন না এখন থেকে?শুধু আমি কিছু জিজ্ঞেস করলে উত্তর দিবেন তাই তো?’
‘হুমম।’
‘আচ্ছা।উমারের কাছে আর আসতে দিবো না।যাবেন না বাড়িতে?যান।আমি আর আমার বাবাটা একা থাকবো।’
হাফসা চলে গেলো।আরহাম বোকার মতো তাকিয়ে রইলেন।পাজি মেয়েটা কিভাবে ফাঁসিয়ে গেলো।ছেলে কি!ছেলের মাকে ছাড়াও একমুহূর্ত থাকা সম্ভব নয় আর সে আলাদা থাকার কথা বলছে!
রুমের দিকে এগোতে চাইলে বাবা সামনে পড়লেন।উনার সাথে কুশলাদি আলাপে বসতে হলো।
কথা প্রসঙ্গে তিনি ভিন্ন কথায় চলে গেলেন।বললেন, ‘আমার একমাত্র উত্তরাধিকারী হাফসা।আর ওর গার্ডিয়ান এখন তুমি।হুট করে কবে কার মৃত্যুর সিরিয়াল আসবে বলা তো যায় না,আমি আর দায়িত্বগুলো বুঝিয়ে দিতে চাই।’
‘বুঝি নি বাবা।’
‘হাফসার বাবা ওর নামে হুইল করে গেছে।আর বাকি সবকিছু এখনও আমার নামে।আমি চাই তুমি,তুমরা সবকিছু বুঝে নাও।’
‘আমি কি বলবো।আপনার কাছেই তো সব আমানত আছে।’
‘আজ আছি কাল থাকবো তাঁর কি গ্যারান্টি।যার মাল তার কাছে পৌঁছে না দিলে,শান্তি পাচ্ছি না।তুমি সবকিছু বুঝে নিবে না?’
‘আমার কিছু চাই না।আল্লাহ আমাকে কম দেন নি।আর এসব নিয়ে উমায়ের যা বলেন….
‘ও কি বুঝে এসবের?তুমি কিছু বলো।’
‘যদি উনি মতামত আমার ওপর ছেড়ে দেন,তাহলে বলবো,এতিমখানার পাশ্ববর্তী প্রোপার্টি এতিমখানায়-ই দিয়ে দিন উমায়ের এর পক্ষ থেকে। তবুও উনি যা বলেন,উনার মতামত নিয়ে।’
‘আচ্ছা।সন্তুষ্ট হলাম।আমার মেয়েকে ভালো রেখো আরহাম।কখনো কষ্ট দিও না।ও কিন্তু এতিম।’
‘আপনি তো আছেন বাবা।’
‘জানো?পরিবার হারিয়ে আমার একমাত্র বংশধর হাফসা।যেদিন তুমার হাতে তুলে দিয়েছি,মনে হয়েছে সবচেয়ে কঠিন এক দায়িত্ব থেকে মুক্ত হয়েছি।নিশ্চিন্ত হয়েছি কারন জানি তুমি তাকে ভালো রাখার এভিলিটি রাখো।’
‘দোয়া করবেন।আমাদের জন্য,উমারের জন্য।’
‘ইন শা আল্লাহ।’
*****
আরহাম ফিরে এলেন রুমে।হাফসা চুপচাপ শুয়ে আছে উমারের পাশে।আরহাম কাছে যেতে দেখলেন, তাঁর চোখ ভিজা।আরহাম আহত হলেন।তিনিও পাশে শুয়ে পড়লেন চুপচাপ।
বেশ কিছুক্ষণ থেকে আরহাম উঠে পড়লেন।বেলকনিতে গিয়ে মাইমুনাকে বার্তা পাঠালেন।পিছু ঘুরতে দেখলেন, হাফসা দাঁড়িয়ে আছে।ঠুকা দিলেই টাপুরটুপুর করে বর্ষন ছুঁয়ে যাবে গালে।আরহাম এগিয়ে এসেই তাকে জড়িয়ে ধরলেন।
হাফসার অথৈ অশ্রুর বাঁধ ভাঙ্গলো।আরহাম কপালে উষ্ণ স্পর্শ এঁকে বললেন, ‘কাঁদবেন না।আমি রেগে নেই।’
হাফসা হেঁচকি তুলতে তুলতে বলল, ‘আই এম সরী।আর আপনার পারমিশন না নিয়ে কোথাও যাবো না।কোনো দিন না।’
‘ওকে ওকে।কান্না বন্ধ করুন।’
‘আপনি এভাবে রাগ করে থাকবেন না।আমার অশান্তি শুরু হয়ে যায়।’
‘আচ্ছা, আ’ম ট্রাই সোনাপাখি।’
*****
অ্যাঁশ কালার জুব্বা চেইন্জ করে আরহাম সাদা পান্জাবি পায়জামা পড়েছেন।সাদা রঙ্গে উনার সৌন্দর্য আরো বেড়ে গেছে স্নিগ্ধ লাগছে।উনার পানি খাওয়া শেষ হতেই হাফসা চোখ সরিয়ে নেয়।উনি শালটুকু ভালো মতো গায়ে জড়াতে জড়াতে উমারের পাশে গেলেন।ঝুঁকে ওর কোমল হাতটুকুতে আলতো চুমু খেয়ে বললেন, ‘কমলা রঙ্গের শাড়ি পড়বেন প্লিজ?’
‘শাড়ি?এই ঠান্ডার মধ্যে?এই ইয়াবড় সুইটার টা নিয়ে আমি ঘুমোই পর্যন্ত।সেখানে আরামদায়ক কাপর রেখে শাড়ি পড়বো?’
‘প্লিজ দেখতে ইচ্ছে করছে।’
হাফসার অবাধ্যতা আরহামের আবদার মাখানো কন্ঠে এসেই থেমে যায়।গাল ফুলিয়ে কাবার্ডে পছন্দসই শাড়ি খুঁজতে থাকে।আরহাম হেসে ফেললেন।হাফসা যখন হঠাৎ হঠাৎ গাল ফুলায়,মাঝে মাঝে আদওয়ার মতো দেখায়!কিছু কষ্ট লুকাতে,হাসি-ই মনে হয় সবচেয়ে সুন্দর উপায়!
*****
হাফসাকে চোখভরে পরখ করে চমৎকার কন্ঠে বললেন, ‘আমরা কমলাসুন্দরী বউ।’
হাফসা ফিক করে হেসে উঠে।আরহাম ফুঁ দিয়ে ওর কপালের গোঁছালো চুলগুলো এলোমেলো করে দিলেন।তারপর হাত ধরে বেলকনিতে নিয়ে গেলেন।মুখ বাড়িয়ে কিছু একটা খুঁজলেন আকাশে।কাঙ্খিত বস্তু পেয়ে গর্বসুরে বললেন, ‘লুক।আজকে চাঁদ হেরে গেছে আপনার রুপে।তাই না?’
‘কই চাঁদ আর কই আমি?’
‘ইসস উমায়ের আপনি যদি আমার চোখ দিয়ে আপনার সৌন্দর্য দেখতে পারতেন, তাহলে….
(বেশি ওয়ার্ড হওয়ায় দূই পর্ব করে দিচ্ছি।এই পর্বটা সবচেয়ে বেশি অগোছালো হয়েছে, এক্সামের জন্য তাড়াহুড়ো করে শেষ করতে গিয়ে।)