অপেক্ষা – মাহা আরাত | পর্ব – ৬

17 Min Read

8★

(১৩)
‘নিকাহ টা একটুর জন্য হলেও অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে।’
বলে এনভেলপ টা এগিয়ে দিতেই হাফসা কিছু না বুঝে সরে দাঁড়ালো।তা দেখে উনি মুচকি হেসে বললেন,

‘ডির্ভোস লেটার নয়, খুলে দেখুন।’

হাফসা কাঁপা হাতে খামটা নিলো।অতপর ভয়ে ভয়ে খুলে দেখতেই ওর চোখমুখ বিস্ময়ে ভরে যায়।তড়িৎ গতিতে উনার দিকে তাকায়।

‘অনুষ্ঠানটা একটা তোড়জোড়ের মধ্যে হয়েছে।দেনমোহরের টাকা স্বয়ং আপনার হাতে তুলে না দিয়ে আমি আপনাকে স্পর্শ করতে চাইনি।কিন্তু করতে হয়েছে।’

‘ম্ মানে?কখন?’

‘গাড়িতে আমার কাঁধে ঘুমিয়ে এসেছিলেন।আর সেন্সলেস হয়ে যাওয়ার পর আপনাকে ধরেছিলাম।’

হাফসা নিঁখুতভাবে উনার সাইনটা দেখে।ভীষণ স্পষ্ট।২৫ লাখ টাকার চেক।হাফসা টাকা চায়নি,তাও এত বড় অঙ্কের।দেনমোহর হিসেবে স্বয়ং উনাকেই চেয়েছে।কিন্তু এই মানুষটা ওকে বারেবারে চমক দিয়েই যাচ্ছেন।

‘আপনার নামে একটা এ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন অর স্বর্ণ বানিয়ে রাখতে পারেন।সেটা আপনার ইচ্ছা।তবে যেভাবেই খরচ হোক, সৎ পথে হালাল ভাবে যেন হয়।’

‘আপনার টাকা হালাল তো?’

‘ফিকহ্ জ্ঞান যতটুকু অর্জন করেছি সেই ভিত্তিতে এটাই বলবো যে আমি হালাল ভাবে উপার্জন করছি।আফটার ওল,আল্লাহ নোউজ বেটার।’

‘আমার প্রশ্ন টা কি আপনার কাছে খারাপ লাগলো?’

উনি ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘যদি বলি লেগেছে তাহলে?’

‘তাহলে বলব, এটা আমার দায়িত্ব।আপনার খারাপ লাগলেও আমার জিজ্ঞেস করা উচিত,জানা উচিত।’

উনি শুধু মুচকি হাসলেন।মানুষটা কেমন রহস্যজনক।

‘এত টাকা?কেন?আপনি একশো টাকা দেনমোহর দিলেও আমি খুশি হয়ে নিতাম।’

‘আমার সাধ্যমতো খুশি হয়ে আপনাকে দিয়েছি।’

‘আচ্ছা।’

উনি হঠাৎ’ই একটা বক্স নিয়ে আসলেন।বক্সটা খুলতেই মুক্তোর মতো কিছু একটা চিকচিক করে উঠে।ডায়মন্ড রিং টা ডান হাতে নিয়ে বাম হাতটা বাড়িয়ে দিলেন।

হাফসার মধ্যে এ মুহুর্তে প্রচুর লজ্জা ভর করলো।তবুও মনকে বুঝিয়ে কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে বাম হাতটি উনার হাতে রাখলো।সত্যি উনার হাতে হাত রাখার অনুভূতি টা দারুণ ছিলো।উনি মুচকি হেসে হাফসার অনামিকা আঙ্গুলে রিংটি পরিয়ে দিলেন।হাফসা হঠাৎ’ই ফিক করে হেসে দিলো।সত্যি জীবনের এ পর্যায়ে সেরা একটা মুহুর্ত ছিলো এটা।

আরহামের শুভ্র পশমে ভর্তি হাতের দিকে তাকালো।অনামিকা আঙ্গুলে একটা ব্ল্যাক রিং।ঠিক এই ডিজাইন টা কাকামণির কাছে নিজেই পছন্দ করে দিয়েছিলো হাফসা।

‘আমি একটু আসছি’ বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। একজোড়া প্রশ্নাত্নক চোখ ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো উনার যাওয়ার পথে।

*****
ড্রিম লাইটের আবছা আলোয় রুমটা হালকা আলোকিত।
আরহাম দরজায় নক করেও কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে আস্তে আস্তে দরজা ঠেলে ভেতরে ডুকলেন।শেলফের পাশে হুইল চেয়ারে মাথা লাগিয়ে ঘুমিয়ে আছেন মাইমুনা।

আরহাম কাছে এগিয়ে কয়েকবার ডাকার পরও সাড়া না পেয়ে বুঝলেন তিনি ঘুমে।আরেকটু কাছে আসতে দেখলেন চোখের নিচ বেয়ে গড়িয়ে যাওয়া শুকনো পানি।গালে লেপ্টে আছে হিজাবের নিচ থেকে বের হওয়া ছোট চুল।

আরহাম আহত হলেন।মাইমুনাকে তিনি কষ্ট দিয়ে ফেলেছেন।নিচু হয়ে ঝুঁকে মাইমুনার গালের শুকনো পানি শুষে নিলেন ঠোঁট দিয়ে।অতপর সন্তোর্পনে তুলে কোলে নিয়ে বিছানায় আস্তে করে শুইয়ে দিলেন।কিছুক্ষণ পলকহীন তাকিয়ে ঝুঁকে সারা মুখে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিলেন।

কাঁথা এনে গায়ে জড়িয়ে দিয়ে হিজাবের বাঁধন টা ঢিলা করে অবশেষে কপালে একটা গাঢ় চুমু এঁকে বেরিয়ে এলেন রুম থেকে।

রুমে এসে হাতঘড়িতে সময় দেখছেন।হাফসা বসে আছে বিছানায়।উনি ঠোঁট কামড়ে হেসে বললেন, ‘ঘুমাবেন?না আমার সাথে দূ রাকাআত নামাজ আদায়ের সাহস আছে আপনার?’

হাফসা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।ভয়াবহ লজ্জায় ডুবতে ডুবতে বলে, ‘জ্ জ্বি না ঘুমাবো।আমি ঘুমাবো।ঘুম পেয়েছে আমার।’

বলে আর দেরি নেই।তাড়াতাড়ি বিছানায় গিয়ে কাঁথা দিয়ে মুখ ঢেকে শুয়ে পড়ে।

ওর অবস্থা দেখে আরহাম এবার বেশ শব্দ করেই হেসে দেন।উনার সুন্দর হাসির রিনরিনে শব্দে ছড়িয়ে গেলো চারপাশের দেয়ালে।

আরহাম ওয়াশরুমে থেকে অযু পড়ে বিছানায় আসেন।বিছানায় উনার উপস্থিতি টের পেয়ে হাফসা বিছানার শেষ পার্শ্বে একেবারে কর্ণারে গিয়ে জড়োসড়ো হয়ে ঘুমালো।

উনি আস্তে আস্তে বললেন, ‘ও মাই আল্লাহ।এত সাইনেস আপনার।বি কোল।আমি পাশে আসবো না।’

হাফসা শুধু চোখ খোলা রাখলো।উঁকি মেরে উনার দিকে তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে যায়।উনি কেন এখনো তাকিয়েই আছেন?উনার ভাবমূর্তি দেখে বুঝা যাচ্ছে, হাফসার অতিরিক্ত লজ্জা পাওয়ার বিষয়টা উনি খুব উপভোগ করছেন।
হাফসা তৎক্ষনাৎ বামপাশ হয়ে শুয়ে পড়লো।

‘ডানপাশ হয়ে ঘুমান।’

হাফসা চোখ খিঁচে ধরে।সে ডানপাশ হয়ে কীভাবে ঘুমাবে।ডানপাশ হলেই যে উনার মুখোমুখি হতে হবে।পরে কী হবে।উনি তাকিয়েই থাকবেন।এই লজ্জায় হাফসার আর ঘুম হবে না।

নিজের মনকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ডানপাশ হয়ে ঘুমাতেই উনি পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলেন।তখুনি নাকে ভেসে এলো উনার শরীরের একট মিষ্টি সুগন্ধ।উনার লম্বা দাঁড়ি খোঁচা দিচ্ছে হাফসার গালে।হাফসা চোখ বন্ধ করে ফ্রিজড হয়ে আছে।উনি হাফসার শরীরের অস্বাভাবিক কাঁপুনি বুঝে মুচকি হাসলেন কেবল।

আরহাম আরেক অবাক কান্ড করে ফেললেন যার জন্য হাফসা মোটেও প্রস্তুত ছিলো না….

(১৪)
রোজকার মতো শেষরাতে ঘুম ভাঙ্গলো আরহামের।ঘুম ভাঙ্গতেই চোখ বুজে থাকলেন একমিনিট।অতপর নিজেকে প্রস্তত করে উঠতে হঠাৎ’ই হাতে টান খেতে দেখলেন হাফসা উনার মুখোমুখি হয়ে বুকের মাঝে লেগে আছে।ছোট্ট হাতে আরহামের প্রশস্ত দেহ পুরোপুরি আঁকড়ে ধরতে পারে নি।

ছোটখাটো মায়াবী চেহারা দৃষ্টিতে পড়তেই অচিরেই হেসে ফেললেন।ভাবলেন উনি সজ্ঞানে থাকতে আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে থাকতে দেখলে লজ্জায় নিশ্চয়ই সেন্সলেসই হয়ে যেতেন।

আরহাম কিছুক্ষণ ওর দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন।তারপর হিজাবের পাশ কেটে আসা ছোট ছোট চুলগুলো কপাল থেকে আলতো করে সরিয়ে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলেন হাফসার শুভ্র কপালে।উনার কাছে দ্বিতীয় বারের মতো একটা সুন্দর মুহুর্ত।

আরহাম আবারো ঘড়ির দিকে তাকিয়ে হাফসার কোমল হাত আলতো করে সরিয়ে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে অযু করে আসলেন।শুভ্র পান্জাবি গায়ে জড়িয়ে নিয়ে সুগন্ধি মেখে টুপি হাতে পড়তে পড়তে লাইট অন করলেন যাতে উনি ভয় না পায়।

বিছানার সম্মুখে এসে হাফসার দিকে ঝুঁকে তাকে ডাকলেন।প্রায় পাঁচ মিনিট একনাগাড়ে ডাকার পর হাফসা ঘুম জড়ানো আধো আধো চোখ মেলে তাকালো।অস্পষ্ট চোখে কোনো পুরুষকে এত কাছাকাছি দেখে ভয়ে চিৎকার দিতে গেলে আরহাম নিজের শাহাদাত আঙ্গুল ওর ঠোঁটে চেপে ধরেন।

আস্তে করে বললেন, ‘আমি।চিনেন না আমাকে?আপনার সদ্য বিয়ে করা বর।আমাকে ভুলে গেলেন?’

হাফসা বুকে ফুঁ দিয়ে বলে, ‘ও্ ওহ আপনি।’

‘সাইনেস ফিয়ারনেস কোনোদিকে কম না।’

তারপর সোফায় গিয়ে বসে বললেন, ‘আমি চিন্তা করছি প্রতিদিন কি চিৎকার দিয়ে উঠবেন এভাবে?’

হাফসা তড়িঘড়ি করে হিজাব ভালো করে মাথায় জড়িয়ে বলল, ‘জ্ জ্বি নাহ আফওয়ান।’

‘নো নিড।অযু করে আসুন।আপনার সাথে প্রথম তাহাজ্জুদ পড়বো একসাথে।’

হাফসা অযু করে এসে লম্বা বোরকাটা পরে নামাজের জন্য প্রস্তুত হলো।কালো বোরকার ভেতরে ছোট্ট গোলগাল চেহারার মেয়েটাকে আরহাম খুব করে অনুভব করেন।কেমন যেন আলাদা একটা টান।আলাদা একটা মায়া উনাকে কাছে টানে।

******
তাহাজ্জুদ শেষে দীর্ঘ মোনাজাত শেষে তাসবিহ হাতে দূজনে অপেক্ষা করছেন সুবহে সাদিকের।

আযান হলে সুন্দরমতো আযানের জবাব দিয়ে জামাআতে সালাতে দাঁড়ালেন দূজন।আরহাম সামনে হাফসা পিছনে।উনি ইকামত দিয়ে নামাজ শুরু করলেন।উনার ইকামাতের সুমধূর কন্ঠে হাফসা যেন দ্বিতীয়বারের মতো থমকে গেলো।চমকে গেলো।যেমনটা হয়েছিলো মাহফিলে প্রথমবার উনার কন্ঠ শুনে।

নামাজ শেষে অনেকক্ষণ তাসবিহ তাহলীল পড়ে আরহাম নিজে সুরাহ ইয়াসিন তিলাওয়াত করলেন।হাফসা যেনো অন্য এক জগতে হারিয়ে গেলো অমায়িক কন্ঠের মাধূর্যে।এত নিঁখুত সুন্দর কন্ঠ কীভাবে হয় একটা মানুষের!

তিলাওয়াত শেষে আরহাম ইশারায় হাফসাকে পাশে আসতে বললেন।হাফসা পাশে আসলে ওর দূহাত এক করে মোনাজাতের ন্যায় নিজের দূহাতের ওপর রাখলেন।অতপর দোয়াহ শুরু করলেন।আরাবিতে দোয়া পড়ে হঠাৎ চুপ করে গেলেন।হয়তো উনি দোয়া নীরবে করতে ভালোবাসেন।দোয়াহ শেষে প্রথমে হাফসার মুখ মাসাহ করে নিজের মুখ মাসাহ করলেন ওর হাতসহ।

মোনাজাতে দূ জোড়া চোখের পানি এক হয়েছে হাতে।হাফসা কেঁদেছে খুশিতে।আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানিয়েছে বারংবার।ওর জীবনের সবচেয়ে দামি চাওয়া টা পুরণ হওয়ার অপরিসীম খুশিতে।

অতপর হাফসার গাল বেয়ে পড়া পানিগুলো নিজ হাতে মুছে কোমল হাতদূটো নিজ হাতে নিয়ে চুমু খেলেন। হাফসা যেন বাকরুদ্ধ।সে কখনো ভাবেনি তার জীবনে এমনও সুন্দর কোনো মুহুর্ত আসতে পারে।

উনি হাতটা নিজের হাতে রেখেই ধীরসুরে বললেন, ‘বলুন তো?আমি কেন আপনাকে বিয়ে করেছি?’

‘জানিনা।’

‘আচ্ছা। আমি যে বিবাহিত ছিলাম তাও কেনো আপনি মত দিলেন?কেন?’

‘ইস্তিখারা করে রেজাল্ট বারবার পজিটিভ পাচ্ছিলাম।আর আমি আমার জীবনসঙ্গী হিসেবে আল্লাহর একজন প্রিয় বান্দাকে চেয়েছি।আপনার থেকে আমার মন সরাতে পারিনি আপনার দ্বীনদারিতার জন্য।তাই মত দিয়েছি। আলহামদূলিল্লাহ আমি এতেই খুশি যে আপনি আমাকে মাসনা হিসেবেও যে নিচ্ছেন।

‘খারাপ লাগে নি শুনে?’

‘লেগেছে ক্ষণিকের জন্য।’

‘সারাজীবন পারবেন তো এই সত্য মেনে নিয়ে থাকতে?না আমার ওয়াহিদার ওপর আপনি জেলাস হবেন?’

‘ইনশাআল্লাহ।কোনো নেগেটিভ থিংকিং মনে আনবো না।উনাকে বোনের মতো ভাববো।’

‘আলহামদূলিল্লাহ খুশি হলাম শুনে।’

হঠাৎ’ই উনি হাফসার দূহাত নিজের কাছে নিয়ে তাতে মুখ গুজে রইলেন।কিছুক্ষণ যাবার পর হাফসা বুঝলো ওর হাতের পিঠ ভিজে যাচ্ছে।হাফসা চমকালো।উনি কি কাঁদছেন?

তবুও চুপচাপ বসে রইলো।বেশ কিছুক্ষণ পর তিনি চোখ তুলে চোখ মুছে বলেন,

‘আম সো লাকি।’

‘কেন?’

‘আপনাকে পেয়ে।’

‘আমাকে পেয়ে আপনি লাকি?কেন কেন?’

‘আপনার মতো আলাহভীরু কাউকে আল্লাহ নিয়ামত হিসেবে আমাকে দিয়েছেন।আলেম হলেই যে হিদায়াত হারায় না এমন না।আদম (আ:) ও ধোঁকায় পড়েছিলেন।আমি জানি,আপনি আমার জন্য এমন কেউ যে,আমি নফসের ধোঁকায় পড়ে কখনো যদি আল্লাহর দ্বীন থেকে দূরেও সরে যাই আপনি আমাকে সাহায্য করবেন।আপনার উছিলায় আমি হয়তো আবারও দ্বীনে ফিরতে পারবো।আপনি আমার সেই উছিলা হওয়ার এবিলিটি আপনার আছে।’

‘আপনি যতটুকু ভাবছেন ততটুকু ইমান আমার আদৌ আছে কি।আচ্ছা আমাকে কেনো চাইলেন আপনি?’

‘ওইদিন আপনার চিঠিটা পেয়ে কি করবো বুঝিনি।আমার জীবনে অন্য কাউকে জড়ানোর কোনো ইচ্ছে ছিলো না।তাই বাবার সাথে আমি যোগাযোগ করিনি অনেকদিন।কিন্তু আপনি কেন জানি আমার প্রতি স্বপ্নে আসতেন।প্রায় দিন একই স্বপ্ন দেখে মাঝরাতে চমকে উঠতাম।আমি বুঝতে পারছিলাম না কেন এমন হচ্ছে বারবার।তারপর ইস্তেখারা করি।একবার না অনেকবার।মোস্ট অফ টাইম পজিটিভ চলে আসে।পজিটিভ কিছু স্বপ্নে দেখি নয়তো পজিটিভ সিদ্ধান্তে মন বেশী ঝুঁকে যায়।তবুও এসব চিন্তা ছেড়ে দিই।আমি জানি আমি যদি মাসনা করি,মাইমুনা কষ্ট পাবেন।আমি কখনো সেটা চাইনি।কিন্তু আমার মস্তিষ্ক থেকে একটাদিনের জন্যও আপনাকে সরাতে পারি নি।আবারও বেশ কয়েকবার ইস্তেখারা করে রেজাল্ট পজিটিভ পেয়ে আপনার খোঁজ নিই।প্রথমে চমকে উঠি।এই জেনারেশনে এসেও আপনার ঈমানদীপ্ততা আমাকে ভাবিয়েছে।তারপর আল্লাহর হুকুমে সিদ্ধান্ত নিয়েই নিই।’

উনি চুপ হয়ে গেলেন।হাফসা ছলছল নয়নে তাকিয়ে রইলো।আজ সব খুশি যেনো ওর জন্য।সারা পৃথিবীর সব সুখ যেনো একসাথে ঢেলে দেওয়া হয়েছে।কীভাবে শুকরিয়া আদায় করলে রব খুশি হবেন!সবর আর দোয়ার ফলগুলো এত্তো সুন্দর হয়!

উনি অশ্রুমাখা চোখে হাফসার দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলিয়ে বললেন, ‘এত শুকরিয়া কীভাবে আদায় করবো বলুন।আমি আল্লাহর কাছে সঠিক ফয়সালা চেয়েছি।আল্লাহ আপনাকে আমায় দিয়েছেন।’

‘আলহামদুলিল্লাহ।’

আরহাম হাফসার গালে আলতো হাত রেখে অত্যন্ত সুন্দর কন্ঠে বললেন ‘আমি আল্লাহর জন্য আপনাকে ভালোবাসতে চাই উমায়ের।’

9★
আরহাম হাফসার গালে আলতো হাত রেখে অত্যন্ত সুন্দর কন্ঠে বললেন, ‘আমি আল্লাহর জন্য আপনাকে ভালোবাসতে চাই উমায়ের।’

ব্যাসস… এতটুুকুই যথেষ্ট ছিলো হাফসার কান্নার বাঁধ ভাঙ্গার জন্য।বক্ষভেদ করে দ্রুতবেগে বেরিয়ে আসা কান্নার ঢেউ সামলাতে মুখে হাত চেপে ধরলো সে।আরহাম একটুও বাঁধা দিলেন না।তাকে কাঁদতে দিলেন।

বেশ কিছুক্ষণ নির্নিমেষ তাকিয়ে জানতে চাইলেন, ‘উমায়ের।আপনার এই কান্না কি আমার জন্য?’

হাফসা কোনো উত্তর দেওয়ার অবস্থায় নেই।কান্না যেন থামছেই না ওর।আরহাম যেনো অস্থির হয়ে গেলেন।উত্তরটা হ্যাঁ না অন্য কোনো কারন?পুনরায় একই প্রশ্ন করলে হাফসা মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি দেয়।

আরহাম হেসে দেন।উনার এ হাসি অমায়িক প্রাণবন্ত!

******
হাফসা চোখ মুছে স্বাভাবিক হয়ে জায়নামাজ ভাঁজ করে কাবার্ডে রাখতেই তিনি কাছে এসে দাঁড়ালেন।উনার প্রশস্ত বুকে গিয়ে হাফসার মাথা ঠেকে।উনি দূহাতের আজলায় হাফসার গাল ধরে কপালে দ্বিতীয় বারের মতো গাঢ়ভাবে ওষ্ঠ ছোঁয়ালেন।অতপর আবদ্ধ করে নিলেন উনার উষ্ণ আলিঙ্গনে।হাফসা চোখ বুজে উনার শরীরের মিষ্টি ঘ্রাণটা শুঁকতে লাগলো।উচ্চতায় যথেষ্ট লম্বা হয়েও আরহামের প্রশস্ত দেহ ও বলিষ্ঠতায় হাফসা যেন চুনোপুঁটি।আরহাম উনার ছোটসাইজের প্রেয়সীর হিজাবের ভাঁজে কয়েকটা চুমু খেয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ছোটোমটো হোমাপাখি।এত কাঁপছেন কেন?’

(১৫)
সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই দেখে হাফসা আরহাম তাজওয়ার এর মুখোমুখি।নামাজ পড়ে বিছানায় শু’তেই চোখ লেগে আসছিলো।দূজনের মধ্যে বেশ দূরত্ব নেই।উনি ঘুমিয়ে আছেন হাফসার তুলতুলে নরম হাতটা নিজের হাতে আবদ্ধ রেখে।হাফসা মুচকি হাসলো।পরক্ষণেই লজ্জায় লাল হয়ে গেলো রাতের কথা ভাবতে.উনার একটা চুমুতেই সে লজ্জায় লাল টমেটো হয়ে গিয়েছিলো!

হাফসা আস্তে আস্তে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নেয়।উনি জেগে গেলে লজ্জায় চোখতুলে তাকাতেই পারবে না।তাই জাগার আগেই চুপিচুপি নিচে কেটে পড়াই উত্তম।

হিজাব টা ঠিক করে যেই উঠতে যাবে অমনি হাতে টান পড়ে।তখুনি ভয়ে চিৎকার দিতেই চুপ হয়ে যায়।মনে পড়ে যায়, ‘উনি তো আমার বর।’
উনি হেসে ফেললেন হাফসার মুখের কাচুমাচু অবস্থা দেখে।হাফসা দৃষ্টি উনার দিকে তুলতে দেখলো হাতটা উনার হাতের মুঠোয়।আর হাসিটা!মারাত্মকভাবে মুগ্ধ করে হাফসাকে!

উনি চাদর ছেড়ে কিছুটা কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন,

‘কোথায় যাচ্ছেন?’

‘নিচে।’

‘নিচের দিকে তাকিয়ে কথা বলছেন কেন?এত সাইনেস আপনার?দেখি আমার দিকে তাকান তো!’

হাফসা পারলো না তাকাতে।উনি দেখলেন উনার হাতের মুষ্ঠিতে থাকা ছোটমটো হাতখানা কাঁপছে।মুচকি হেসে হাত ছেঁড়ে দিলেন।

স্বাভাবিক হয়ে বললেন, ‘এত কাঁপছেন কেন?আমি তো আপনাকে কিছুই করি নি।’

……….

‘প্রশ্ন করলে উত্তর দিতে হয় হোমাপাখি।বলেন কেন কাঁপছেন?’

উনার আদূরে সম্বোধনে হাফসা কিছুটা সাহস জুগিয়ে বলেই ফেলল,

‘জানিনা।আপনার কাছে থাকলে, উহু আপনাকে দূর থেকে দেখলেও আমার কাঁপুনি শুরু হয়ে যায়।’

‘কেন? আমাকে ভয় পান?আমি কি আপনাকে মারি?ঝাড়ি দেই?’

‘জ্বী না।’

‘তাহলে?’

‘জানিনা।’

‘আমার কাছে একটা ওয়ে আছে আপনার কাঁপাকাঁপি কমানোর।’

হাফসা উৎসুক হয়ে জানতে চাইলো, ‘কী?’

‘ওয়েট এন্ড সী’ বলেই উনি হুট করে হাফসার কাছে চলে আসলেন।ওর দিকে একপলক তাকিয়ে রাতের মতো আবারো গালে স্পর্শ দিতেই হাফসার অবস্থা কাহিল।চুমু দিয়ে ওঠে উনি তাকালেন না।দ্রুতপায়ে রুম ত্যাগ করলেন।

হাফসা গালে হাত দিয়ে বোকার মতো ওভাবেই বসে রইলো।এটা কী করলেন?আর চলেই বা গেলেন কেন?লজ্জা পেয়ে গেলেন?না আমাকে লজ্জা পাওয়া থেকে মুক্তি দিতে গেলেন?

আম্মু ড্রয়িং এ নাস্তা রেডি করছিলেন।আরহামকে আসতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন,

‘হাফসা কোথায়!’

‘রুমে।’

‘নিয়ে আসলে না?’

‘আপনি গিয়ে নিয়ে আসেন আম্মু !হুটহাট আমাকে দেখলেই চিৎকার করেন।’

আম্মু মুচকি হেসে বললেন, ‘আমার খুব পছন্দ হয়েছে ওকে।এত মিষ্টি মেয়েটা।’

আরহাম কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, ‘মাইমুনা কোথায়? আসেন নি?’

‘না আসেনি।’

‘কাল রাতে খেয়েছেন?আমার খেয়াল ছিলো না।’

‘হুমম।’

‘আইরা কখন আসবেন?’

‘ঘন্টাখানিক এর মধ্যে চলে আসবে।’

‘সায়ান কোথায়?সব ঠিকঠাক আয়োজন?’

‘বাইরে গিয়েছে।’

অ্যারাবিক টিউনের সুর তুলে ফোনে হঠাৎ কল আসতেই আরহামের অধরে হাসি ফুটে ওঠে।

আব্বুর সাথে সালাম-কুশলাদি বিনিময়ের পর জিজ্ঞেস করলেন, ‘বউমা কোথায়?’

‘ঘরে।’

আব্বু কৌতুকসুরে বললেন, ‘বউমাকে আমাকে দেখতো দিবে নাকি?নাকি লুকিয়ে রাখবে?’

আরহাম বরাবরই বাবার সাথে খুব ফ্রেন্ডলি!
বললেন, ‘দেশে আসুন।অবশ্যই দেখবেন।’

‘ইনশাআল্লাহ।মাইমুনা মামণি কোথায়?’

‘রুমে।’

‘আশা করি দূজনের মধ্যে সমতা করতে পারবে।মাইমুনা যেনো তোমার ব্যবহারে কখনো কষ্ট না পায়।’

‘পাবেন না ইনশাআল্লাহ।’

‘আইরা মামনি আসে নি?’

‘এখনো না।’

‘তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।’

‘কি?’

‘গেস..’

‘নো আইডিয়া।’

‘সারপ্রাইজ বলে দিতে নেই।সামনাসামনি দেখতে পাবে।আমি একটু বেরোব রাখি তাহলে।আসসালামু আলাইকুম।’

আরহাম সালামের উত্তর দিয়ে ফোন রেখে মাইমুনার কক্ষে গেলেন।

*******
মাইমুনা বিছানায় বসে ল্যাপটপে কিছু একটা করছিলেন।আরহামকে দেখতেই হাসিমুখে সালাম দিলেন।আরহাম সালামের জাবাব উনার দিকে এগিয়ে আসলেন।মাইমুনা কিছুক্ষণ একধ্যানে তাকিয়ে থাকলো।একরাতেই আরহামের চেহারার দ্যূতি যেন বেড়ে গেছে বহুগুণ।

তবে উনাকে এভাবে মন ভরে দেখার মানুষ যোগ হয়েছে।সব অধিকার অর্ধেক হয়ে গেছে।এসব ভাবতেই চোখ ছলছল হয়ে ওঠে ওর।আরহাম তাড়াতাড়ি এসে আগলে নিলেন তাকে।আরহাম যেনো পড়ে ফেললেন মাইমুনার ব্যথিত দৃষ্টি।গালে হাত রেখে বললেন,

‘নো হানি।আমাকে এত বড় সিদ্ধান্তের পরামর্শ দিয়ে আপনি দূর্বল হতে পারেন না।আমি আপনাকে ভালোবাসায় একটুও কার্পণ্য করবো না।’

(📌গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক।এটাকে বাস্তবের সাথে মেলাবেন না কেউ)

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।