‘নো হানি।আমাকে এত বড় সিদ্ধান্তের পরামর্শ দিয়ে আপনি দূর্বল হতে পারেন না।আমি আপনাকে ভালোবাসায় একটুও কার্পণ্য করবো না।’
আরহামের এমন কথার পিঠে মাইমুনা নিজের দূর্বলতা প্রকাশ করতে চাইলেন না।তাকে কষ্ট পেতে দেখলে আরহামও কষ্ট পাবেন।তাই বারবার পলক ফেলে চোখের পানিটা আড়াল করে অন্য প্রসঙ্গ তুললো,
‘কেমন আছেন?’
‘আপনি যেমন, তেমন আছি।’
‘আমি তো ভালো আলহামদুলিল্লাহ।’
আরহাম তাকে কোলে তুলে নিলেন।গ্লাস খুলে বারান্দার সোফায় উনার উরুতে বসিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
‘ওজন কমে গেছে।খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো হয় না?’
মাইমুনা মিষ্টি হেসে বললেো, ‘কেউ যত্ন করে মুখে তুল খাইয়ে দেন প্রতিবার।এত যত্নের পরও কিভাবে ওজন কমবে?’
‘সরি মাই হানি…
(১৬)
‘সরি মাই হানি।আপনাকে সময় দিতে পারি নি এই ক’দিন।’
‘উহু আমার যতটুকু প্রাপ্য তার চেয়েও বেশী দেন আপনি।’
‘তাই?’
‘একদম।’
‘রাতে খেয়েছেন?’
‘খেয়েছি।’
‘মাইমুনা!’
‘হু?’
‘আপনি কষ্ট পাচ্ছেন তাই না?ভেতরের অনুভূতি খুব যত্ন করে লুকিয়ে রাখতে পারেন কিন্তু আমি বুঝতে পারছি।’
‘আমি খুশি আপনার খুশিতে।’
‘মাইমুনা!আমাকে ভুল বুঝবেন না।আপনি আমার প্রথম ভালোবাসা।আমার প্রিয় মানুষদের মধ্যে অন্যতম।কখনো ভুল করে ভাববেন না আমি আপনার থেকে উমায়েরকে বেশী ভালোবাসবো।দূজনই আমার কাছে খুব প্রিয়।কেউ বেশী না,কেউ কম না।’
‘আমি তো জানি।আপনাকে নিয়ে কোনো নেগেটিভ থিংক করার সাহস নেই আমার।’
‘ভালো যেমন বাসবো শাসন ও করবো।আপনি যদি উনার প্রতি জেলাস হোন আমি আপনাকে শাসন করবো।আর উনি হলে উনাকে।দূজন আপন হয়ে থাকবেন।হিংসা,ঈর্ষা এ দূটো জিনিস কখনোই যেনো আমার প্রিয়তম স্ত্রীদের মধ্যে না দেখি।’
‘ইনশাআল্লাহ আপনার মনের অবাধ্য হবো না।’
‘ভালোবাসি হানি।চলুন নিচে যাব।’
‘উহু আমি সার্ভেন্টকে দিয়ে অর্ডার করিয়ে এনে খেয়ে নিবো।আপনি হাফসাকে নিয়ে নিচে যান।প্রথম সকালের নাস্তা দূজনে একসাথে….
আরহামের রক্তবর্ণ ধারণ করা চোখগুলো দেখে কথাটুকু শেষ করা হলো না মাইমুনার।
আরহাম কোল থেকে মাইমুনাকে সোফায় নামিয়ে চলে যেতে চাইলে মাইমুনা হাত ধরে আটকায়।
আরহাম পিছন ফিরলে আকুতিমাখা কন্ঠে বলে, ‘সরি সরি শাহ।প্লিজ মাফ করে দিন,আর বলব না।’
‘আপনার থেকে এসব আশা করি না।’
‘এক্সট্রিমলি সরি।শেষবারের মতো ক্ষমা করে দিন।’
‘মনে থাকবে তো।আর কখনো যেনো এসব না শুনি।’
মাইমুনা মাথা নিচু করে ফেলে।
আরহাম কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, ‘আমি আপনাকে ভীষণ ভালোবাসি।আপনার এসব কথা আমাকে কষ্ট দেয়।আর কখনো বলবেন না।ওকে?’
মাইমুনা হেসে মাথা নাড়ালো।আরহাম তাকে কোলে নিয়ে স্ট্রেচারে বসিয়ে ড্রয়িং এ নিয়ে এলেন।এসে দেখেন হাফসা অলরেডি নিচে বসে মায়ের সাথে গল্প করছেন।
আরহাম নিজেই সালাম দিলেন তাকে।হাফসা নির্বাক, চমকিত বিস্ময়াভূত!স্ট্রেচারে বসা সুদর্শিনী নারীকে দেখে হাফসা সালামের উত্তর দিতে ভুলে গেলো।শুভ্র হিজাবে আবৃত কমলা রঙ্গের আবায়ায় তাকে যেনো রুপের ঔশ্বরী লাগছে।ধুয়েমুছে সকল সৌন্দর্য ঢেলে দেওয়া হয়েছে তার কোমল চেহারায়।এত নিঁখুত সৌন্দর্য!।যার এত সুন্দর চোখ!
মাইমুনা হেসে ফেললেন ওর চাহনি দেখে।তিনি হাসিমুখে সালাম দিলে হাফসা আবার শকড।ইসসস হাসিটা!কিছুক্ষণের জন্য মনে হলো আরহাম এমন চক্ষুশীতলকারী হুর রেখে হাফসাকে কীভাবে পছন্দ করলেন।আরহামের হাসির শব্দে হাফসার ধ্যান ভাঙ্গে।কিছুক্ষণের জন্য লজ্জা পেয়ে যায় সে।
হাফসা সালামের উত্তর দিতেই তিনি বললেন,
‘কাছে আসো।তুমাকে একটু জড়িয়ে ধরি পিচ্চি।’
হাফসা হাসিমুখে উনাকে জড়িয়ে ধরলো।শুধু উনার সৌন্দর্যই নয় উনার অমায়িক ব্যবহারও হাফসাকে মুগ্ধ করলো।
আরহাম মাইমুনাকে ধরে উনার পাশের চেয়ারে যত্ন করে বসালেন।ঠিক এই সময়টায় হাফসার খুব কষ্ট লাগলো।সত্যি!মেয়েরা মরে যাবে।তবুও স্বামীর ভাগ কাউকে দেবে না।এ দৃশ্য টা খুব কষ্টদায়ক ছিলো ওর জন্য।
আরহাম তাকেও পাশে বসতে বললেন।উনার দূপাশে ওয়াহিদা-মাসনাকে নিয়ে বিসমিল্লাহ বলে।প্রথমে নিজ হাতে মাকে খাইয়ে দিলেন।তারপর হাফসা,তারপর মাইমুনাকে।
খাওয়াতে খাওয়াতে বললেন, ‘উমায়ের।ইনশাআল্লাহ আমরা প্রতিদিন একসাথে নাস্তা করবো।কিন্তু আমি সবসময় মাইমুনাকে প্রথমে খাবার তুলে দিব।এতে আপনি কষ্ট পাবেন না।’
হাফসার ভেতরটা ক্ষত-বিক্ষত হলো।তবুও হাসিমুখে মাথা নাড়ালো।
কিন্তু আরহামের এমন প্রস্তাবে মাইমুনা বাঁধা দিয়ে বললেন,
‘এসব নিয়ম আমার পছন্দ নয়।আপনি একদিন হাফসার মুখে প্রথমে খাবার তুলে দিবেন।তারপর একদিন আমার মুখে।সমতা এভাবে করতে হয়।বুঝলেন?
‘জ্বী মিস।আপনার কথা ফেলতে পারি কি করে।’
‘তুমাকে নাম ধরে ডাকছি রাগ করছো?’
মাইমুনা হাফসার উদ্দেশ্যে কথাটি বলতেই সে তৎক্ষণাৎ মাথা নেড়ে বলে, ‘মোটেই না।’
হাফসা খাবার মুখে তুলছে আর আড়চোখে বিমোহিত হয়ে দেখছে তাদের।দূজনকে একসাথে কত সুন্দর মানায়!
খাবার তখনো শেষ হয়নি।হঠাৎ গাড়ির হর্ণ শোনা যায় বাইরে।তার কিছুক্ষণের মধ্যেই একজন কালো বোরকাওয়ালী এসে ঢুকেন।যিনি আরহামের অতি আপনজন!
10★
বোরকাওয়ালীর সাথে একটা বাচ্চাসহ একজন সুপুরুষ যুবক।নন মাহরাম তাই হাফসা সরে যেতে চাইলো এখান থেকে।কিন্তু তার প্রয়োজন হলো না।সে যুবক নিচুমুখেই গেস্টরুমের ভেতরে চলে গেলেন।
বোরকা পরিহিত মেয়েটি চেহারা উন্মুক্ত করতেই হাফসা আবার চমকিত হয়।পরক্ষণেই তড়িৎ বেগে আরহামের দিকে তাকায়।দূজনকেই জমজ লাগে তাঁর।একই রকমের সৌন্দর্য।একই চেহারা!
সে আম্মুকে জড়িয়ে ধরে চুমু-টুমু দিয়ে ইশারায় হাফসাকে দেখিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করলো।আম্মু ‘হ্যাঁ’ বোধক মাথা নাড়তেই সে কাছে এসে হাফসাকে জড়িয়ে ধরে ঠুকুস করে গালে চুমু বসিয়ে বলে, ‘আপনি নতুন মেহমান তাই না?’
হাফসা কিছু বলতে যাবে তাঁর আগেই হাফসার নরম গাল টেনে বলে, ‘মাশা আল্লাহ!এত কিউট আপনি!’
দূজনের মধ্যে কুশলাদি বিনিময় হতেই সে মাইমুনাকে জড়িয়ে ধরে কিস করে।তাদের একে অপরের বন্ডিং দেখে মনে হলো দূজন দূজনেরই খুব প্রিয়।
আম্মু বলতে লাগলেন, ‘আইরা আরহামের একমাএ বোন।ওর নিকাহ হয়ে গিয়েছে।এই দেখছো না পিচ্চি।ও ইযহান।আমার নানুভাই।আর ভেতরে যে ঢুকলেন সে মাহদিন।ইযহানের আব্বু।’
‘এনাফ বলেছো আমার কিউটি আম্মু।এবার আমার সম্পর্কে আমি বলি।আমি খুবই ছটফটে।যাই হোক।আমি ‘আপনি আপনি’ সম্বোধন করে মনের ভাব ঠিকমতো প্রকাশ করতে পারছি না।তুমি করে বলি আপনাকে?’
আইরার কথা বলার বাচ্চামো ধরণ দেখে হাফসা ফিক করে হেসে ফেলে।মাথা নাড়িয়ে বলে, ‘অবশ্যই।’
সে মুচকি হাসলো।আরও কুশলাদি বিনিময় শেষে আরহামের দিকে ঘুরে জিজ্ঞেস করলো,
‘কেমন আছো ভাইয়া?’
‘এতক্ষণে আমাকে নজরে পড়লো?মাই গুডনেস!’
‘হ্যাঁ তুমি খুব একটা ইম্পোর্টেন্ট কেউ নও তাদের থেকে।বাই দা ওয়ে কেমন আছো?’
‘আলহামদুলিল্লাহ।আসতে প্রবলেম হয়নি তো?’
‘হয়নি।’
আইরা উত্তর দিয়েও আরহামের কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখে কপট রাগ দেখিয়ে বলল, ‘আমি কেমন আছি জিজ্ঞেস করলে না?’
‘তুমি খুব একটা ইম্পোর্টেন্ট নও যেনো তুমাকে মাস্ট জিজ্ঞেস করতেই হবে যে কেমন আছো।’
সবাই হেসে ফেললেও আইরা নিজের কথায় নিজে ফেসে গেলো।ঠোঁট বাঁকিয়ে ভেংচি কাটতেই আরহাম হেসে গেস্ট রুমের দিকে চলে গেলেন।
****
আরহাম গেস্টরুমে গিয়ে মাহদিনের সাথে মুসাফাহাসহ মুয়ানাকা শেষে একসাথে বসলেন দূজন।
আরহাম জিজ্ঞেস করলেন, ‘কেমন আছেন?’
‘ভালো আলহামদুলিল্লাহ।আপনি?’
‘আলহামদুলিল্লাহ আ’লা কুল্লি হাল।আপনি আরো আগে আসলেন না?’
‘একটা বড় ঝামেলা ছিলো ভাই।ইযহানের পাসপোর্টে প্রবলেম।আর ভেবেছিলাম আজ আস্তে ধীরে আসবো।কিন্তু আপনার বোন আমাকে টেনে তুলে নিয়ে আসছে।ভাইয়ের বিয়ে নাকি শেষ হয়ে গেলো আমি নিয়ে আসলাম না।এটা নিয়ে শুধু ঝেড়েই যাচ্ছেন তিনদিন থেকে।’
আরহাম শব্দ করেই হেসে দিলেন।উনার বোন কেমন তা বেশ ভালোই জানা আছে উনার।শুধু সময়ের স্রোতে আগের দুষ্টমিগুলো হারিয়ে গেছে।স্মৃতি হয়ে গেছে পুরোনো দিনের মুহুর্তগুলো।যা আর কখনো ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।
******
‘তোমাদের হুট করে নিকাহ হয়ে গেলো।দেখো আমি ভাইয়ার বিয়ের দিন থাকতে পারলাম না।আজ রিসিপশনে আসলাম।ইসসস এত খারাপ লাগছে।’
আইরা মন খারাপ করে কথাগুলো বলতে হাফসা দূ:খিত হলো।কিন্তু চমকালোও।আজ রিসিপশন মানে?তার কোনো নাম গন্ধই তো দেখছে না।
‘তা বলো আমাদের বাড়ি, আমাদের, তারপর ভাইয়াকে তোমার কেমন লেগেছে?’
আইরার এমন প্রশ্নে লজ্জাস পড়ে গেলো সে।নিচুমুখে উত্তর দিলো, ‘আলহামদুলিল্লাহ।’
ছোট্ট ইযহান বলে উঠলো, ‘মম হু ইজ সী?’
‘তোমার নতুন মামণী বাবা।’
‘নুতুন মিনস?’
‘নিউ।’
হাফসা ছোট্ট কিউট বার্বিডলের মতো বাবুটার দিকে হ্যান্ডশেকের জন্য হাত বাড়ালে সে ভ্রু কুঁচকায়।এই সময় তার ভাব একদম আরহামের মতো লাগে।আরহামও এমনভাবেই ভ্রু কুঁচকান।মমের দিকে তাকিয়ে হ্যান্ডশেক করে বলল, ‘ইউ আর লাইক ফাহান’স ক্লাসমেট জুয়ি।’
হাফসা কিছু না বুঝে ভ্রু কুঁচকে তাকালে আইরা বললেন,
‘কার্টুনের কিছু একটা বলছে মনে হয় আমিও বুঝছি না।
ওর জন্ম ইংল্যান্ডেই।বাংলা বুঝে,কিন্তু বলতে পারে না।’
‘ওহহ।’
‘বাইরে গাড়ির শব্দ শোনা গেলো আবারো।আইরা নিকাব ফেলে বললেন, ‘ভেতরে ভাবিপুর রুমে আসো।লোকজন আসবে এদিক দিয়ে।’
(১৭)
আরহাম আয়নার সামনে টার্বান ঠিক করছেন।অ্যাশ কালার জুব্বার সাথে কালো টার্বান।হাফসা ভেবে পায় না আল্লাহ কত মহব্বত করে নিখুঁত হাতে উনাকে বানিয়েছেন।
হাফসা সোফায় বসে আছে চুপচাপ।মেহমান এসেছে অনেকে।বাড়ির বাইরের বড় এরিয়ায় সামিয়ানা বেঁধে খাবারের আয়োজন করা হয়েছে।মহিলাদের জন্য ঘরে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।আজ রিসিপশন।আরহামের সাথের কয়েকজন গণমান্য ব্যাক্তিসহ রিলেটিভরা।
হাফসাকে আরহাম বলে দিয়েছেন যেনো উনার অনুমতি ছাড়া বাহিরে বের না হয়।এমনকি বাড়ির মহিলাদের সামনেও না।উমায়েরকে নিয়ে কেউ ভালো-মন্দ সমালোচনা আলোচনা করুক এটা উনার পছন্দ নয়।বাইরে গিয়ে বলুক আরহামের বউ সুন্দরী বা যা’ই হোক সেটাও উনার পছন্দ নয়।এগুলো মূলত গায়রতহীনতার পরিচয়।উনার হীরে উনি সবার থেকে লুকিয়ে রাখতেই বেশী পছন্দ করেন।
আরহাম টার্বান পড়া শেষ করে হাফসার দিকে ঘুরে বললেন, ‘হয়েছে বাঁধা?’
‘হুমম।’
হাফসা আবার চুপচাপ হয়ে বসে থাকে।উনি পাশে এসে জিজ্ঞেস করলেন, ‘চিন্তা করছেন কিছু নিয়ে?’
‘জ্বী না।’
‘তাহলে আপসেট কেনো?’
‘আপনার মাথায় কীভাবে ব্যাথা পেয়েছিলেন?’
‘ইট ওয়াজ এ্যা এক্সিডেন্ট।’
‘আমি জানি।’
‘তাই?’
‘জানি না বলুন না শুনি।’
‘তেমন কিছু না।’
‘প্লিজ বলুন।’
‘রাদ কাঁচের ভেইজ ছুঁড়ে মেরেছিলেন।’
হাফসা অবাক হয়ে জানতে চাইলো, ‘কাঁচের ভেইজ?ছুঁড়ে মেরেছিলেন? আপনাকে?’
‘হুমম।’
‘ব্যাথা লাগেনি?’
আরহাম হেসে ফেললেন।বললেন, ‘আমাকে নিয়ে টেনশন করা শুরু করে দিয়েছেন আপনি?’
হাফসার সব উচ্ছাসিত ভাব নিমিষেই বদলে গিয়ে লজ্জায় পরিণত হলো।আর চোখ তুলে তাকালো না।কিন্তু ফ্লোরে উনার ছায়া সরছে না।দেট মিনস্ উনি এখনও তাকিয়েই রয়েছেন।
হঠাৎ দরজায় কড়াঘাত হলো।হাফসা উঠতে গেলে আরহাম ইশারায় থামিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কে?’
‘আমি ভাইয়া।’
আরহাম দরজা খুলে দিলেন।
হফসার কাছে এসে বললেন, ‘রুম থেকে বেরোবেন না।কোনো পরপুরুষের সামনে যেনো ভুল করেও না পড়তে হয়।ওকে?’
‘আচ্ছা।’
আরহাম বেরিয়ে গেলেন।আইরা ট্রেতে করে আইসক্রিম আর ফালুদা নিয়ে আসছেন।ট্রে টা বক্সসাইড টেবিলে রেখে বললেন,
‘কি কিউটি?সাজবে না?’
‘কেনো?’
‘আজ না রিসিপশন।’
‘সেজে কী হবে?’
‘আমার ভাইয়ের জন্য সাজবে।’
হাফসা লজ্জাবতী গাছের ন্যায় নেতিয়ে পড়লো।ইসস এত লজ্জা লাগছে কেন!
আইরা হেসে বলল, ‘তুমি লজ্জাও পাও,আমি তো মজা করছিলাম।’
কিছুক্ষণ কথা বলতে আইরা মন খারাপ করে বলল,’ইসস আর মাএ কয়েকটা দিন তারপর তোমাদের ছেড়ে চলে যেতে হবে।খুব ইচ্ছে হচ্ছে থাকতে।সবার সাথে একসাথে।’
‘কবে যাচ্ছেন?’
‘কয়েকদিন পর।’
‘জানো আমি চাইছিলাম তোমাদের নিকাহ টা আগে হোক।বাট ভাইয়া না করেছেন।’
‘কেনো?’
‘প্রথমে আম্মু অসুস্থ ছিলেন তাই বলেছিলেন তুমার বাড়ি পরে প্রস্তাব দিবেন।বাট ওইদিন রাতে এসে হুট করে বললেন কালই নিকাহ হবে।এমন তাড়াহুড়োর কারণ জিজ্ঞেস করলে কিছুই বললেন না।একপ্রকার এড়িয়ে গেলেন।’
‘ওহ।’
‘ভাইয়া আসলে আমার সাথে তেমন কিছুই শেয়ার করেন না।কিন্তু আম্মুর সাথে সব করেন।’
‘ওহ।’
‘আচ্ছা ভাবিপুর ঘরে চলো।গল্প করি।’
‘উনি না করলেন রুম থেকে বের না হতে।’
আইরা হেসে বললেন, ‘আচ্ছা।তুমি আইসক্রিম খাও বসে বসে।আমি আসছি।’
এরই মধ্যে আরহাম আরেকবার আসলেন।হাফসা আবায়া পডে উনার সাথে নিচে নামতে দেখলো কাকামণিকে।অদ্ভুত এক অনুভূতিতে দূচোখ ছাপিয়ে জল চলে এসলো ওর।আরহাম কিছুক্ষণ সঙ্গ দিয়ে বেরিয়ে গেলে অনেকক্ষণ মন খুলে কথা বলে সে।মামণির কথা জিজ্ঞেস করে, তুহফা, হৃদান সহ কবুতরের কথাও বাদ যায় নি তাঁর!
*******
মাগরিবের সময় ছুঁইছুঁই।সারাদিনের ক্লান্তি মাখা শরীর নিয়ে আরহাম রুমে এলেন।সারাদিন মাএ কয়েকবার দেখা হয়েছে।বাট শত ব্যস্ততার মাঝে আরহাম মাঝে মাইমুনা আর হাফসাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিয়েছেন।
রুমে এসে পাগড়ি খুলে নিলেন।উনার চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে উনি কতটা ক্লান্ত। দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মেহমান আসছেন আর কয়েকটা এতিমখানা প্রতিষ্ঠানের ছাএরা এসছেন।আরহাম নিজে তদারকি করে সবাইকে খাইয়ে হাদিয়া দিয়ে দিয়েছেন।
উনি জুব্বা খুলে ওয়াশরুম থেকে সাদা সুতি পান্জাবি পড়ে অতপর টুপি মাথায় দিয়ে মসজিদে চলে গেলেন।
হাফসা ও মাগরিবের নামাজ পড়ে একটু তিলাওয়াত করলো।তারপর তাসবিহ হাতে বারান্দায় বসে আছে এমন সময় দরজায় কড়াঘাত হলো।
আম্মু এসে বললেন, ‘নিচে চলো।’
আম্মু ওকে নিজের রুমে নিয়ে বসিয়ে কিছুক্ষণ পর আসলেন কফিসহ ভিন্ন রকমের নাস্তা নিয়ে।
কফির কাপ হাফসার হাতে দিতে দিতে বলতে লাগলেন, ‘ আইরা আর মাইমুনা খেয়ে ফেলেছে আমাদের রেখে বুঝলে।তাই আমি আমার আর তুমার জন্য নিয়ে আসলাম।’
হাফসা মিষ্টি হেসে বলে, ‘আপনার কষ্ট হয়ে গেলো।’
‘উহু,আমি একাই খেতাম।তুমি থাকায় ভালো হলো।দূজনে গল্প করে খেলাম।মাগরিব পর মাইমুনা ঘুমায়।ওর পাওয়ারফুল ওষুধ আছে।মাঝে মাঝে আরহামের সাথে বসা হয়।এখন তুমি থাকায় সময়টা সুন্দর কাটবে।’
হাফসা নীরবে কফির পানে চুমুক দিচ্ছে।
‘আপনি রান্না করেন?’
‘হ্যাঁ।’
‘আমি টুকটাক পারি।এখন থেকে আমি আপনাকে হেল্প করব কেমন?’
‘করবে?’
হাফসা মাথা নাড়ায়।
‘আচ্ছা কয়েকদিন যাক।তখন করবে।’
‘ইযহান কোথায় দেখছি না যে।’
‘আরহামের সাথে মসজিদে।খুব মামা ভক্ত ছেলেটা।’
একটা প্রশ্ন প্রায় সময় হাফসার মাথায় ঘুরপাক খায়।আরহামকে জিজ্ঞেসের সাহস নেই অথচ আম্মুর সাথে সে যথেষ্ট ক্লোজ।তাই আম্মুকেই প্রশ্ন করে বসলো,
‘আপু আর উনার বিয়ের কতদিন হয়েছে?’
(📌গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক।এটাকে বাস্তবের সাথে মিলাবেন না কেউ)