অপেক্ষা – মাহা আরাত | পর্ব – ৮

14 Min Read

11★

‘আপু আর উনার বিয়ের কতদিন হয়েছে?’

‘তিন বছরের কাছাকাছি।’

‘ওহহ।’

‘আমি আরহামের প্রশংসা করছি না তবে জেনে রাখো আরহাম একদম’ই আলাদা।’

কফিতে আরেক চুমুক দিয়ে বলতে লাগলেন, ‘মাইমুনার সাথে ওর নিকাহ আমি ঠিক করেছিলাম তিন বছর আগেই।আরহাম মিশরে ছিলো।একবছর পর সে দেশে আসলে আমি নিকাহ’র কথা বললে সে আমার মতকেই গুরুত্ব দিয়েছে অমত করেনি।আমার ও মাইমুনাকে পছন্দ সে খুবই ধার্মিক তোমার মতো।আর আরহাম সবে স্টাডি কমপ্লিট করে এসেছে।

আল্লাহর খুশি!মাইমুনা হঠাৎ এক্সিডেন্ট করে।তার দূ’পা প্যারালাইজড হয়ে যায়।সে চলতে ফিরতে অক্ষম হয়ে যায়।সিঙ্গাপুর,কেনাডা প্রাইভেট ফ্লাইটে নিয়ে কত ট্রিটমেন্ট করানো হলো।ভালো হয় নি।

বিয়ের কথাবার্তা অফ হয়ে গিয়েছিলো।আরহাম খুব আপসেট ছিলো।পরে আমি ভাবলাম,আমার ছেলের দেখাশুনা করার জন্য তো সচ্ছল কাউকে লাগবে।বিয়েটা ক্যানসেল করে দেই।কিন্তু আরহাম এমন করেনি।সে খুশিমনেই আমার অনুমতি নিয়ে মাইমুনাকে সবদিক দিয়ে একজন স্ত্রীর অধিকার দিয়ে নিকাহ করেছে।মাইমুনার দিক থেকেও কোনো আপত্তি ছিলো না।সে অনেক বেশী খুশি আরহামের মতো একজনকে তার জীবনে পেয়ে।

আর তুমার বাসায় সেই যে প্রথম গিয়েছিল এসে তুমার কথা আর এই চিঠি দেখিয়েছে আমায়।মাইমুনাকে সে দেখাতে চায় নি।মাইমুনা জোর করে দেখে তখনই তাকে অনুমতি দিয়ে দেয় তোমাকে নিকাহ করতে।তাতে তার কোনো আপত্তি নেই কারণ সেও চায় আরহামের জীবনে আরো কেউ আসুক।মাইমুনা সন্তান জন্মদানেও অক্ষম।তবে এ নিয়েও দূজনের কোনো আফসোস ছিলো না।

তখন আমিও ওকে বলেছিলাম তুমার বাসায় প্রস্তাব দিতে।কিন্তু সে দেয় নি।অনেক সময় নিয়েছে।তারপরে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।তোমার খোঁজ নিয়ে তোমাকে আমাদের ভালো লাগলো তুমি ইসলামিক দেখে।এরপরে প্রায় সময় তোমার কথা বলতো আমাকে।তোমার খোঁজ নিতো,আরহাম চাইলেও তখন নিকাহ করতে পারতো না।কারণ তোমার বয়স কম ছিল আর নিকাহনামা তে আটারো না হলে সেটা সম্ভব ছিল না।কারণ আরহাম তো আলেম।তার এুটিতে বাকিরাই আঙ্গুল তুলতে পিছপা হবে না।

তুমি তাকে ভুল বুঝো না কখনো।আমার ছেলেকে কখনো মনে আঘাত দিয়ো না কষ্ট দিও না।সে মুখ ফুটে কখনো বলবে না,কোনো অভিযোগ করবে না।মেনে নিবে।তবে ভেতরে চাঁপা কষ্ট লুকিয়েই আবার তোমার সাথে হাসিমুখেই কথা বলবে।’

‘ইনশাআল্লাহ কষ্ট দিবো না।’

‘মাইমুনাকে বোনের মতো দেখো,কখনো অবিচার করোনা।’

‘আমি এমন কখনো চিন্তা ও করবো না ইনশাআল্লাহ।’

‘মাশাআল্লাহ।আমার বিশ্বাস বিশ্বাস আছে তুমার ওপর।’

‘দোয়া করবেন।’

‘ইনশাআল্লাহ।’

অতপর আম্মু কথার সমাপ্তি টেনে বললেন, ‘রুমে যাও আরহাম চলে আসছে।তোমার অপেক্ষায় আছে মনে হয়।’
হাফসা সম্মতি নিয়ে রুমের দিকে এগোলো।

(১৮)
হাফসা রুমে আসতে দেখলো ইযহান আরহামের গলায় ঝুলে আছে। দূজনের মধ্যে ইংলিশ কথোপকথন হচ্ছে আর ইযহান হেসে উঠছে বারবার।হাফসাকে দেখতেই আরহাম ইযহানকে নিচে নিয়ে গেলেন।একটু পর রুমে এসে আরহাম আলতো করে হাফসার কপালের হিজাব একটু সরিয়ে সামনের চুলে হাত রাখলেন।আরহামের স্পর্শে হাফসা কেঁপে উঠে কিছুটা।দোয়া পড়া শেষে আরহাম জিজ্ঞেস করলেন, ‘অযু আছে আপনার?’

‘হুমম।’

‘দূ রাকাআত নামজ পড়বো একসাথে।’

‘কেনো?’

‘অজানা উদ্দেশ্যে পড়ে নিন।পরে বুঝবেন।’

হাফসা আর প্রশ্ন করলো না।তবে মনজুড়ে আলাদা একটা শিহরণ বয়ে গেলো।নামাজ শেষে খানিকক্ষণ বসে আরহাম নিজেই মোনাজাত করলেন।আজ আর উনার মোনাজাত বোঝার উপায় নেই।একটা লাইনও বাংলাতে বলেন নি।সব আরবিতে ছিলো।হাফসা কিছুই বুঝলো না।শুধু হাত তুলল,আর আমিন বলল।কি জানি লুকিয়ে লুকিয়ে কি দোয়া করে ফেলেছেন উনি।

নামাজ শেষে আরহাম হাফসার কপালে গাঢ় একটা চুমু দিয়ে ওর দিকে তাকিয়েই হাসলেন কিছুক্ষণ।যেন উনি হাফসাকে বোকা বানিয়ে দিয়েছেন।হাফসা হাসার কারণ জিজ্ঞেস করলেও কিছু বললেন না।বরং হাত ধরে আরেকটা রুমে নিয়ে গেলেন।

হাফসা রুমে ঢুকতেই নাকে সুন্দর একটা আতঁরের সুঘ্রান ভেসে ওঠলো।রুমটায় চোখ বুলিয়ে নিতে দেখলো বিছানার চাদর,কাবার্ডের চাদর,কার্পেট সবকিছু সাদা,শুধু ফার্ণিচার আর টাইলস কালো।

রুমের একপাশে ফ্রিজ।আরেকপাশের বড় একটা হ্যাঙ্গার জুড়ে শুধু জুব্বা।কালার ফুল নয় শুধু সাদা, কালো, নেভিব্লু, আর আ্যাঁশ।আরেকপাশে ছোট্ট হ্যাঙ্গারে শুধু পাগড়ির কাপড়।আরেকপাশে ছোট ছোট প্রিন্টের হাতকাটা কোট।

রুমটা বিশাল বড়।রুমের মধ্যে এপাশ থেকে ওপাশ একটা বড় গ্লাস।উনি গ্লাসটা ঠেলতেই একটা লাইব্রেরী আবিষ্কার হলো।সেটায় ইসলামিক বই,কিতাবসমূহ,সহ অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজের বইয়ের সমাহার।প্রতিটা বিষয় নিয়ে আলাদা আলাদা করে শেলফ সাজানো।আরেকটা বই হাফসার নজর কাড়লো, “পুরুষের পর্দা”।উনি ওর হাত ধরে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পুরো লাইব্রেরী দেখালেন।

অতপর তাকে সোফায় বসিয়ে ফ্রিজ থেকে ডালিম নিয়ে আসলেন।ওর সামনে বসেই নিজহাতে ছুলে ওকে মুখে তুলে খাইয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলেন,

‘ডালিম কেমন লাগে আপনার?’

‘ভালো লাগে।’

‘ভালো লাগার কারণ কী?এর টেস্ট সুইট বলে না কালার কিউট বলে?’

‘রাসূল (ﷺ) এর পছন্দের ফল বলে।’

আরহাম মিষ্টি করে হাসলেন।যেনো উনি সন্তুষ্ট হাফসার উত্তরে।

চোখে চোখ পড়ে গেলেই লজ্জায় লাল হয়ে যায় মুখ।উনি নিচের দিকে তাকিয়ে ডালিম খুলছিলেন।হাফসা আড়চোখে তাকাতে দেখলো টুপির নিচ দিয়ে আঁচড়ে পড়া চুল আর শুভ্র গালের খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে আরো মোহনীয় লাগছে উনাকে।সত্যি পুরুষ মানুষের আসল সৌন্দর্য দাঁড়িতে!

মুচকি হাসলে ঠোঁট জোড়া আরো মোহনীয় লাগে।মাঝে মাঝে যখন শব্দ করে হাসেন তখন ভেতরে থাকা সাদা উজ্জ্বল ছোট দাঁতগুলোও মুক্তোর মতো ঝলঝল করে উঠে।

পশমালা হাতে কালো বেল্টের ঘড়িতে চুম্বকের মতো দৃষ্টি স্থির করতেই হুট করে চোখ তুলে তাকান।আরেক বার মুখে ডালিম তুলে দিলেন।

‘আপনিও খান।’

আরহাম ওর চোখে চোখ রেখে বললেন, ‘আমি কিন্তু আপনার থেকে সওয়াবে অনেক এগিয়ে আছি।’

‘কীভাবে?’

‘এই যে খাইয়ে দিচ্ছি, ফেরেশতা সওয়াব লিখছেন।’

হাফসা ঠোঁট উল্টে রয়।ও আসলেই পিছিয়ে।কিন্তু কীভাবে খাইয়ে দিবে।ওর তো লজ্জা করে।

তিনি আবারো বললেন, ‘আরো একভাবে সওয়াব পেয়েছি আমি।’

‘কীভাবে?’

উনি কিছুক্ষণ স্থির হয়ে তাকিয়ে আচমকা কপালে টুস করে চুমু খেয়ে বললেন, ‘এভাবে।’

হাফসা ঠোঁট কামড়ে হেসে মাথা নিচু করে নিলো।উনি আরো কিছুক্ষণ এমন দূষ্টুমি করতে করতে হাফসাকে চার পাঁচটা চুমু দিয়েই দিলেন।

আরহামের সাথে গাল ফুলিয়ে নিচে নেমে আসে হাফসা।এসেই কিচেনে যায় সোজাসুজি।আম্মু মানা করা সত্ত্বেও একাজ-ওকাজে হেল্প করে।আরহামের ছোট আন্টি থেকে গেছেন।উনাদের সাথেও মিট হলো কিছুক্ষণ।এরই ফাঁকে একবার দেখলো আরহাম নিচে নেমে মাইমুনার ঘরে ডুকছেন।

হাফসা চোখ সরিয়ে নিলো।সুঁচ ফোঁটার মতো সুক্ষ এক ব্যাথা অনুভূত হলো ছোট্ট হৃদয়ে।চোখের কণায় পানি জমে গাল বেয়ে টুপ করে পড়তেই হাফসা তড়িঘড়ি করে মুছে নিলো।আরহাম যতই ওকে ভালোবাসেন,তবুও মাইমুনার সাথে উনাকে দেখলে বুকটা ছ্যাঁত করে ওঠে।আরহাম ওকে যেমন সবসময়ই খুশি রাখেন হাসা’ন ,মাইমুনাকেও হয়তো এমনই ভালোবাসেন।উনাকে তো আরো বেশী ভালোবাসবেন কারণ তাদের বন্ডিং স্ট্রং।একজন আরেকজনের অনুভূতি, ভালোবাসা খুব সহজেই হয়তো বুঝে যায়।অযথাই হাফসার মনে মনে রাগ হলো।রুমে যেতে চেয়েও গেলো না।মায়ের সাথেই থাকলো কিচেনে।

******
‘হোয়ার আর ইউ মাই হানি?’

মাইমুনা ফিকে হেসে ঘুরে বললেন, ‘শাহ!অবশেষে আপনি আসলেন।আমি তো ভাবলাম আসবেন না।’

‘কেনো ভাবলেন এমনটা?’

মাইমুনা হেসে হেসে একটু খোঁচা মেরেই বললেন, ‘এখন তো আরেকজনকেও সময় দিতে হয়।’

আরহাম বোধ হয় মাইমুনার এমন কথা একসেপ্ট করেননি।খানিক সময় চুপ থেকে বললেন, ‘দূজনই তো সমান।দূজনকে সমান সময় দিই তো।’

‘উহু।’

‘রুমে যাওয়ার পর এতক্ষণ উনার সাথে ছিলাম ঘন্টাখানিক হবে।এখন আপনার কাছে আসছি।’

‘আমার এখন ঘুমানোর টাইম শাহ।আপনি ভুলে গিয়েছেন মনে হয়।’

আরহাম কথাগুলো বেশ সময় নিয়ে হজম করলেন। বলা বাহুল্য মাইমুনার কথাগুলো আজ রূঢ় লাগছে।

‘উহু এটা আপনার ভুল ধারণা আমাকে নিয়ে।বাড়িতে এসে রুমে না গিয়ে আমি প্রথমে আপনার রুমেই আসছিলাম।তখন আপনি ঘুমে ছিলেন।তারপর আমি রুমে গিয়েছি।’

আরহামের এমন কথার পিঠে মাইমুনার মুখখানা চুপসে গেলো।সৌজন্যমূলক হাসি হেসে বললেন,

‘ডাজ’ন্ট মেটার.আপনি ভাবতে পারেন আমি হয়তো জেলাস হচ্ছি।উহু আমি মোটেই জেলাস না।আমি ভাবছিলাম, আপনাকে এসব বললে কেমন রিয়্যাকশন করেন।বাট, ইউ আর ডিফরেন্ট।আমার ভুল ধারণা ভেঙে দিলেন।’

আরহাম আর এসব বিষয়ে কথা না বাড়িয়ে সোজা এসে মাইমুনার কোলে মাথা রেখে চোখ বুজে নিলেন।
মাইমুনা বিলি কেটে দিতে লাগলো আরহামের গোছালো চুলে।

(১৯)
বিলি কাটার সময় আরহাম হঠাৎ তিনি ব্যাথাতুর শব্দ করে উঠলে
মাইমুনা ব্যস্ত হয়ে বললেন, ‘কি হলো?’

‘কিছু না আস্তে দিন।’

‘মাথায় কি ব্যাথা পেয়েছেন?’

‘একটু।’

‘দেখি কোথায়?’

মাইমুনা নিজ থেকেই খুঁজে সেই ক্ষতটি বের করে অবাক হয়ে বলল, ‘এটা কেমন করে হলো শাহ?গাঢ় ক্ষত দেখছি।’

‘নাথিং সিরিয়াস।ঠিক হয়ে যাবে।’

‘ইনশাআল্লাহ।কিন্তু কাটলো কেমন করে?’

‘এক্সিডেন্ট ছিলো।বাবা কেমন আছেন?উনার কি অবস্থা এখন?’

মাইমুনা কন্ঠে দূর্বলতা এনে বললেন, ‘খুব একটা ভালো না।এখন হাঁটতে পারেন না।ভাইয়া ওয়াকিং স্ক্যাচ ধরে হাঁটায়।প্রেসার লো হয়ে যায় ঘন ঘন।’

উনি মাইমুনার হাতের ভাজে হাত রেখে নরম সুরে বললেন, ‘ডোন্ট বি সেড মাই হানি।ইনশাআল্লাহ সুস্থ হবেন।

‘দোয়া করছেন তো?’

‘ইন শা আল্লাহ।’

আরো কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর,

‘শাহ!’

‘উমম।’

‘একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?’

‘অবশ্যই।’

‘আচ্ছা আমি যদি আপনাকে অনুমতি না দিতাম হাফসাকে মাসনা করার তাহলে কি আপনি হাফসাকে মাসনা করতেন?’

12★

‘আচ্ছা আমি যদি আপনাকে অনুমতি না দিতাম হাফসাকে মাসনা করার তাহলে কি আপনি হাফসাকে মাসনা করতেন?’

আরহাম মুখ তুলে মাইমুনার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন ‘হঠাৎ এমন প্রশ্ন?’

মাইমুনা যথাসম্ভব স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে বলল, ‘ন্ নাহ ম্ মানে।এমনই জানতে চাইছিলাম।’

‘জ্বি না।’

‘সত্যি করতেন না?’

‘প্রথম স্ত্রীর অনুমতি নেয়া আবশ্যক নয় ইসলামি দৃষ্টিমতে।কিন্তু আমি আপনাকে অসন্তুষ্ট করে মাসনা করতাম না।’

‘বুঝলাম।কিন্তু হাফসার প্রতি তো আপনার হৃদয়ে আগে থেকেই একটা সফট কর্ণার ছিলো।’

‘সফট কর্ণার ছিলো এখন ভালোবাসায় এক্সচেঞ্জ হয়েছে।’

মাইমুনা যেনো রাগে জ্বলে ওঠলো উনার মুখে হাফসার জন্য ভালোবাসা শুনে।নিজেকে সামলে বলল,

‘মানে বলছিলাম আমি অনুমতি না দিলে ওই অনুভূতির কি হতো?ভুলে যেতেন ওকে?’

‘কাউকে মনে গেঁথে নেওয়ার পর ভুলে যাওয়াটা কঠিন মাইমুনা।বাট আমি চেষ্টা করতাম উনাকে মনে না করার।ভুলে যেতাম।’

‘ওহহ।’

‘এমন অদ্ভুত প্রশ্ন কেন করলেন হঠাৎ?’

‘ন্ না এমনিই।’

ডিনারের টাইম হলে হাফসা মাইমুনার রুমে গেলো তাকে ডাকতে।দরজা হালকা ফাঁক ছিলো।তবুও একেবারে সামনাসামনি বেড থাকায় দেখা যাচ্ছে আরহাম মাইমুনার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছেন।হাতের ভাজে হাত রেখে হাতের পিঠে চুমু খাচ্ছেন।এটা দেখেই হাফসা আবার আহত হলো।অসহ্যকর একটা কষ্ট ছড়িয়ে গেলো শরীরের সব শিরা-উপশিরায়।

কিচেনে গিয়ে বলল, ‘আম্মু আমি সার্ভ করছি।আপনি যদি আপুকে কষ্ট করে ডেকে আসতেন।’

ততক্ষণে আরহাম মাইমুনাকে নিয়ে বের হলেন।যত্ন করে পাশে বসালেন।হাফসা কিচেনের দরজা থেকে ছলছল চোখে দৃশ্যটা দেখছিলো।আরহামের সাথে চোখাচোখি হয়ে যেতেই তড়িঘড়ি ভেতরে গিয়ে বারবার পলক ফেলে স্বাভাবিক হয়ে আসলো।উনার দিকে আর তাকালো না। আরহাম এখনো বসেননি হাফসার অপেক্ষায়।হাফসা এসে ইচ্ছে করেই অপজিট পাশে আম্মুর পাশে বসলো।

আরহাম কিছু বলতে যাবেন তখন সে আম্মুকে উদ্দেশ্যে করে বলল, ‘আম্মু আজকে আমি আপনাকে খাইয়ে দেই?’

তিনি অমায়িক হেসে বললেন, ‘আচ্ছা।’

হাফসা সবাইকে সার্ভ করে দিয়ে আম্মুকে খাইয়ে দিতে লাগলো।আম্মু তাকেও রিপিট করছেন।আরহাম খাচ্ছেন মাঝে মাঝে মাইমুনাকেও খাইয়ে দিচ্ছেন আর আড়চোখে হাফসাকে দেখছেন।তিনি হাত বাড়িয়ে হাফসার মুখের সামনে খাবার ধরতেই হাফসা মুখ ঘুরিয়ে বলল, ‘খাবো না।’

‘কেনো?’

হাফসা মিথ্যে বাহানা দিয়ে বলল, ‘ওটাতে ঝাল বেশী।’

আরহাম তীক্ষ্ণ নজরে ওর দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে যা বুঝার বুঝে গেলেন।উমায়ের এখনো রেগে আছেন।

ডিনার শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পর আরহাম রুমে আসলেন।হাফসা তখন ওয়াশরুম থেকে ওযু করে বের হয়েছে।উনি এগিয়ে যেতেই ও হাঁচি দিয়ে ওঠলো,

‘দূরে থাকুন,দূরে থাকুন।ভাইরাস।’

উনি থামলেন না।এগিয়ে গিয়ে ওর হাত ধরে বললেন, ‘চলুন।আজকে আমার রুমে থাকবো একসাথে।’

হাফসা হাত ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করলো তবে লাভ হলো না।গম্ভীরতার সাথে বলল,

‘আপনার রুমে আমি কম্ফোর্টএবলি ঘুমাতে পারবো না।এখানে থাকবো।’

উনি চোখমুখ গম্ভীর করে রেখেছেন।হঠাৎ করেই ওকে পাঁজা কোলে তুলে নিলেন।হাফসা হঠাৎ এমন ঘটনায় টাল সামলাতে আরহামের বুকের শার্ট খামচে ধরলো।উনি ঠোঁট কামড়ে হেসে বললেন, ‘আজকে আর লজ্জা পেলে হবে না হোমাপাখি,আজকে আপনি শেষ!’

হাফসা মনে মনে দূইয়ে দূইয়ে চার মিলিয়ে নিলো।উনি হাসতে হাসতেই উনার রুমের দিকে এগোলেন।রুমে নিয়ে তাকে একেবারে বিছানায় বসিয়ে দরজা লক করে আসলেন।হাফসা ভয় আর লজ্জায় তাড়াতাড়ি শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ার ভান করলো।উনিও লাইট অফ করে এগিয়ে এলেন।একটানে ওকে কাছে এনেই ফিসফিসিয়ে কিছু একটা বলতেই হাফসা লজ্জায় হাবুডুবু খেতে খেতে বরফের মতো হিম হয়ে রইলো।

উনি ধীরসুরে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনার মৌণতাই কি সম্মতির লক্ষণ হোমাপাখি?’

হাফসার কোনো উত্তর না পেয়ে উনি ওর গালে গাল ঠেকিয়ে অজস্র চুমু একে দিলেন গালে চোখে মুখে…

মুখ তুলে বললেন, ‘আই ওয়ান্ট সামথিং ফ্রম ইউ।’

আই নিড ইউর পারমিশন।ইফ ইউ এগ্রি দেন কিস মাই ফোরহেড।’

হাফসা তৎক্ষনাৎ কোনো উত্তর দিলো না।অন্ধকারে তাঁর অভিব্যক্তিও বুঝতে পারছেন না আরহাম।আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেন তিনি।হাফসার কোনো উত্তর না পেয়ে ওর বাহু ছেড়ে দিলেন।

তখনি হঠাৎ কপালে কারো উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়া পেতে হৃৎপিণ্ড ধক করে ওঠলো।বুকের ভেতরটা দ্রীম দ্রীম শব্দে বেজে উঠলো।আরহাম পরম আবেশে চোখ বুজে নিলেন।এ যেনো উমায়েরের কাছ থেকে পাওয়া সবচেয়ে দামি উপহার।হাফসা সাথে সাথে সরে গিয়ে গুটিসুটি মেরে রয়।আরহাম কিছুক্ষণ মুচকি হেসে তাকে আবারো কাছে টেনে নিলেন।

রাত যত গভীর হলো আরহামের ভালোবাসার স্পর্শ ততই বাড়তে থাকলো।উন্মাদনায় ঘিরে নিলো চারপাশ।জান্নাতের এক টুকরো সুখ এসে ধরা দিলো তাদের নিস্তব্ধ আঙ্গিনায়।এক ভিন্ন ধরনের অনুভূতি, আনন্দ এসে নবজীবন বরকতময় করে দিলো!

(📌গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক।এটাকে বাস্তবের সাথে মিলাবেন না কেউ)

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।