রুম টা গোছাতে গোছাতেই আয়েশা ডাকলেন রান্নাঘর থেকে। শাফিনের জন্য নাস্তা বানাতে হবে, কতদিন পর আসবে ছেলেটা৷
কাজের চক্করে পড়ে রুমাইশা ফোন টা চেক করার সময় পেলো না৷ কিন্তু কাজ করতে গিয়ে ভুল করতে লাগলো শুধু। মন টা ওর এদিকে নেই৷ মাথায় অনেক অনেক চিন্তা কিলবিল করছে। কোনো কাজ ঠিক মতো হচ্ছে না। সাফওয়ান মেসেজ দিয়েছে কিনা দেখার জন্য মন টা আকুল হয়ে পড়ছে! এইভাবে ‘কিচ্ছু হয়নি’ ভাব করে থাকা ওর পক্ষে একদম সম্ভব হচ্ছে না৷
আয়েশা খানম না পেরে ধমক দিলেন,
— কি রে? মন কোথায় তোর? চিনির কৌটা দিতে বলেছি, হলুদ দিতে বলিনি! পায়েসে হলুদ দিবো নাকি আমি এখন?
মায়ের ধমকে রুমাইশা থতমত খেয়ে গেলো। দ্রুত হাতে হলুদের কৌটা টা সরিয়ে রেখে চিনির কৌটা টা এগিয়ে দিলো মায়ের দিকে৷
নাস্তা বানাতে বানাতেই শাফিন এসে পৌছালো। বাইক নিয়ে এসেছে ও।
কারো বাইকের শব্দ শুনে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে দেখতে গেলো রুমাইশা কে এসেছে!
শাফিন রুমাইশা কে দেখে দারুণ একটা হাসি দিয়ে বাইক থেকে নামলো।
‘ফুপ্পার বাইক তো এমন না! এই বাইক শাফিন কই পেলো!’
— কিরে! তুই কার বাইক চুরি করে আনছিস?
চোখ টেনে এক ভ্রু উচু করে বলল রুমাইশা।
— এটা আমার বাইক! ভাইয়া আমাকে কিনে দিয়েছে। ভাবিকে নিয়ে সেইফলি ঘুরে বেড়ানোর জন্য! কারণ ভাবির নাকি মন খারাপ!
শেষের কথা টা ভাব নিয়ে টেনে টেনে বলল শাফিন।
রুমাইশা বুঝলো না কিছু।
—মানে কি! কার ভাবি? কসের ভাবি?
শাফিন রুমাইশার দিকে সরে এসে ফিসফিস করে বলল,
— আমার উডবি ভাবি৷ ভাইয়া আমাকে সব বলে দিয়েছে। তলে তলে এতো কিছু করো! আর আমি একমাত্র দেবর আমাকে কিছুই জানাও না!
রুমাইশা কিছু বলতে নিবে তার আগেই আয়েশা এসে ডাক দিলেন,
— কি হচ্ছে রুমি! ছেলেটা এসেছে, ওরে ভেতরে নিয়ে এসে না বসিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে গল্প করছিস কেন?
— এইতো মা, আসছি,
বলে রুমাইশা শাফিন কে ভেতরে যেতে ইশারা করলো আর চোখ গরম দিয়ে বুঝিয়ে দিলো বেশি লাফালাফি না করতে। তারপর নিজেও ভেতরে চলে গেলো,
শাফিন গেলো ওর পেছন পেছন৷
শাফিন রুমাইশার রুমে ঢুকলো সোজা।
— আপু খেয়েই রেডি হবা কিন্তু। আমরা ঘুরতে যাবো।
— কোথায় যাবি এই অসময়ে?
রুমাইশা গ্লাসে পানি ঢেলে এগিয়ে দিলো শাফিন কে খাওয়ার জন্য।
শাফিন গ্লাস টা হাতে নিতে নিতে বলল,
— ভাসমান ব্রিজে চলনা! বাওড় ও দেখা হবে, ঘোরাও হবে প্রকৃতির মাঝে!
— তোর ভাই হঠাৎ বাইক কিনলো যে! কবে কিনেছে?
শাফিন এক চুমুকে পানি টা শেষ করে বলল,
— আমার ভাই, আমার ভাই করছো কেন? তোমার কিছু হয় না নাকি? বাইক ভাইয়া সকালেই কিনে এনেছে! কি মনে করে এনেছে তা জানিনা। সকালে আমাকে ফোন দিয়ে বলল বাইরে তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ রাখা আছে, রিমু দের বাড়িতে যাওয়ার সময় দেখিস। এসে দেখি ওই কালা সুন্দরী আমার জন্য অপেক্ষা করছে! আর পরে বলল তোমাকে নিয়ে যেখানেই যাই বাইক নিয়ে যাই যেন।
এমন সময় আয়েশা আসলো নাস্তার ট্রে নিয়ে। আয়েশা আসার সাথে সাথেই শাফিন চুপ করে গেলো। আয়েশা সন্দেহের চোখে বলল,
— আমাকে দেখে তোরা চুপ করে গেলি কেন? কি এমন কথা বলছিলি শুনি?
— এসব কাজিনিও বিষয় মামি, এসব বড়দের শুনতে হয় না!
বিজ্ঞের মতো করে বলল শাফিন৷ আয়েশা ওর মাথায় একটা চাটি মেরে বলল, খুব তো বেশি বুঝো, দেখবানে রেজাল্ট কি হয়!
তারপর আবার রান্নাঘরে চলে গেলেন আয়েশা।
শাফিন রুমাইশার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে বলল, —আমার রেজাল্ট কি করলো আপু?
রুমাইশা ওকে ধমক দিয়ে বলল,
— চুপ থাক, কাজের কথা বল, ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে তোর? লাইসেন্স ছাড়া বাইক নিয়ে ঘুরলে কিন্তু পুলিশ সোজা শ্বশুর বাড়ি পাঠিয়ে দেবে, আর নয়তো যৌতুক দিতে হবে।
— সব আছে আমার, তুমি একদম চিন্তা করো না৷ তুমি পুরা সেইফ এন্ড সাউণ্ড থাকবা!
রুমাইশা কে আস্বস্ত করে বলল শাফিন৷
রুমাইশা এবার শাফিনের পাশে বসে বলল,
— তোর ভাই তো করে সামান্য মাষ্টারি, এত টাকা কই পায়? সবসময় দেখি বড়োলোকি বড়োলোকি ভাব! আবার মার্সিডিজ কিনেছে! বাপরে বাপ!
— আছে আপু, জানিনা আমরা কেউ। ওর রিসার্চ ল্যাব আছে কোথায়, দাদুর একটা ছিলো না কোথায়! সেটাই। কোথায় তা এক্সাক্টলি আমি জানিনা, শুধু আমি কেন কেউই জানে না৷ আমি যতটুকু জানি, সিঙ্গাপুরেরই কিছু রিসার্চার দের সাথে ও কাজ করে। কিন্তু ওকে সিঙ্গাপুরে থাকতে দেওয়া হবে না, কেন তা জানিনা৷ ওই রিসার্চার দের সাথে মিলেই ও সম্ভবত মেডিসিন ক্রিয়েট করে। ভাইয়া যে কি পরিমাণ গাছ গাছড়া চিনে তা তোমারে বলে বুঝাতে পারবো না, ওর স্মৃতিশক্তি যে কি প্রখর তা ভাবনার ও বাইরে! তুমি অনলাইন থেকে যে কোনো গাছ বের করো না কেন, ও নিমিষেই বলে দেবে সেটা কি গাছ, তার কাজ কি, সেটা কি কি রোগ নিরাময় করতে পারে! এত গুনধর ব্যাক্তিটা যে আমার ভাই, তাতে আমি খুবই কৃতজ্ঞ!
— তোকে একবার কথা বলতে দিলে হয়! ফেনা উঠিয়ে ফেলিস পুরা। চল খেতে চল। খেয়ে দ্রুত বেরোতে হবে, তাইলে বেশিক্ষণ নেচে বেড়ানো যাবে, উঠ।
ভ্রু কুচকে বলল রুমাইশা।
শাফিন নাস্তার প্লেট থেকে একটা আপেলের স্লাইস তুলে খেতে খেতে বলল, হ্যা চল, খেয়ে দ্রুত বের হই।
রুমাইশা শাফিন কে রুম থেকে ঠেলে পাঠাতে পাঠাতে বলল,
—তুই যা আমি আসছি, গোসল দেইনি আমি এখনো। গোসল টা করে এসে খাবো।
শাফিন ঠিক আছে বলে চলে গেলো৷ শাফিন যেতেই দরজা টা ভেজিয়ে দিয়ে তড়িঘড়ি করে ফোন টা হাতে নিলো রুমাইশা, সাফওয়ান মেসেজ দিয়েছে কিনা দেখতে।
ফোন টা বাটন টিপে অন করতেই সাফওয়ানের নাম টা ভেসে উঠলো ফোনের স্ক্রিনে৷
রুমাইশা মেসেজের ভেতর ঢুকলো,
— তুমি চিন্তা করো না প্রেয়সী, আমার কিছুই হবে না। তোমার সাফওয়ান কাচা কাজ করে না। ওদের যা প্রাপ্য ওরা তা পেয়েছে। তুমি নিশ্চিন্ত থাকো।”
বড়ো করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো রুমাইশা। একদিকে পাপী দের পাপের শাস্তি অন্যদিকে নিজের প্রিয় মানুষটার করা অপরাধ, কোনটার দিকে এগোবে ও বুঝতে পারছে না। ওর প্রিয় মানুষ টার গায়ে আর কোনো আঁচ না লাগুক!
২৬. দুপুরে খাওয়ার কিছুক্ষণ পর বের হলো শাফিন আর রুমাইশা। উদ্দ্যেশ্য ওদের ঝাপার ভাসমান ব্রিজ। শাফিন পাকা হাতে ড্রাইভিং করছে। রুমাইশা বসে আছে পেছনে নিশ্চিন্তে। বসে বসে রাস্তার ধারের দৃশ্য গুলো উপভোগ করছে।
রাজগঞ্জের কলেজ পার হয়ে ওরা বাজারের ভেতর ঢুকলো তারপর মোড় নিয়ে চলে গেলো পুরানো ব্রিজে।
বেশ লাগছে রুমাইশার৷ রাফসান বাড়িতে থাকলে একটু ঘোরা হয়, কিন্তু ও যখন রাজশাহী চলে যায় তখন আর বাইকে ওঠা হয় না৷
তাই এতদিন পর শাফিনের সাথে ঘুরতে বেরিয়ে মন টা খুশি খুশি হয়ে গেলো ওর। সমস্ত দুঃশ্চিন্তা গুলো কোথায় যেন উড়ে চলে গেলো কর্পূরের মতো৷
রাস্তায় জ্যাম থাকায় ধীরে ধীরে এগোচ্ছে ওরা। ওদের পেছনেই একটা কাপল বাইকে করে আসছে। মেয়েটা শাড়ি পরে আছে, আর ছেলেটা পাঞ্জাবি, খুব সম্ভবত বিবাহিতি কাপল। দুজন বাইকের ওপর বসে খুনসুটি করছে।
রুমাইশার খুব ভালো লাগলো ওদের কে দেখে। কত্ত হ্যাপি এরা।
হঠাৎ ই ওর মনে হলো, ওর কি কখনো এরকম সুযোগ হবে? সাফওয়ানের সাথে! সাফওয়ান! সাফওয়ানকে ও বসিয়ে ফেলেছে একদম বুকের ভেতর! কখন হলো এসব? ও তো টের পেলোনা কিছু।
ওই ভয়ঙ্করদর্শন, সর্বদা ভ্রু কুচকে থাকা ধমক দেওয়া লোকটা কে কখন যে ও হৃদয়ের সব টুকু জায়গা সপে দিয়েছে তা ও ঘূর্ণাক্ষরেও টের পায়নি! অথচ ও এখন স্বপ্ন দেখছে তার সাথে বাইকে করে ঘুরে বেড়ানোর, একটা সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপনের, যেখানে কোনো বাধা থাকবে না, সাফওয়ানের মুখে মাস্ক লাগানো থাকবে না। ওই শ্যামবরণ জ্বলজ্বল চোখের ব্যাক্তিটা সাদা রঙা পাঞ্জাবি পরে দিনের আলোয় স্বাধীন ভাবে ওকে নিয়ে ভ্রমণ শুরু করবে কোনো এক অজানার উদ্দেশ্যে।
চোখের কোণায় পানি জমল ওর। চোখ দুইটা বন্ধ করে মহান শক্তিধর আল্লাহর কাছে দুয়া করলো মনে মনে, যেন একদিন এমন দিন আসে যখন সাফওয়ান খুব সুন্দর করে বাচবে, ওর সাথে৷
কিছুক্ষণ পর গন্তব্যে পৌছে গেলো শাফিন আর রুমাইশা। গাড়ি নিয়ে ব্রিজ পার হয়ে বাওড়ের ওপারে গিয়ে গাড়ি পার্ক করে ঘুরলো অনেক ক্ষন।
খিলখিল করে হাসছে আজ রুমাইশা। শাফিনের সাথে বকবক করছে প্রচুর। শাফিন ও ওর সাথে তাল মিলিয়ে ওকে হাসাচ্ছে।
রুমাইশা কে এত খুশি দেখে শাফিন নিজের ফোন টা বের করলো, তারপর মেসেজ অপশনে গিয়ে সাফওয়ানের উদ্দ্যেশ্যে লিখলো,
— মিশন সাকসেসফুল। তিনি এখন খিলখিল করে হাসছেন।
ওপাশ থেকে উত্তর এলো, — গুড জব, তোকে বাইক কিনে দেওয়া স্বার্থক হয়েছে।
শাফিন মেসেজ টা পড়ে হাসলো। ভালোবাসলে মানুষ তার প্রিয় মানুষের খুশির জন্য কতকিছুই না করে! তার রুমি আপু ভাগ্যবতী। তার ভাই যে এত কেয়ারিং হবে তা ও কখনো ভাবেইনি!
রুমাইশার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে এগুলোই ভাবলো শাফিন৷
ঘোরাঘুরি শেষে সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে বাড়ি ফিরলো শাফিন আর রুমাইশা। রুমাইশা আজ অনেক খুশি। ঘুরে আসার পর মন টা অনেক ফুরফুরে লাগছে।
মেয়েকে এমন হাসিখুশি দেখে আয়েশা ও খুশি হলেন অনেক, জ্বর হওয়ার পর থেকে কেমন জানি মিইয়ে গেছিলো ও। এখন আবার আগের মতো করে হাসছে দেখে বুকের ভেতর থেকে একটা ভার নেমে গেলো যেন আয়েশার।
“””
রাতের বেলা খাওয়া দাওয়া শেষ করে রুমাইশার রুমে গল্প করছিলো ওরা দুজন।
— আপু বললে না তো, তোমাদের মাঝে কখন কি হলো!
শাফিন একটা বালিশ টেনে নিয়ে কোলের ওপর রেখে কৌতূহল নিয়ে বলল,
— বলা নিষেধ আছে। এসব সিক্রেট বিষয় তোকে জানানো যাবে না। তুই ছোট, ছোটদের মতো থাকবি। বুঝেছিস?
— আরে বাবা, আমিই তো! আমি কি কাউকে বলে দিবো নাকি? তোমরা আমাকে বিশ্বাস করোনা?
অসহায় কণ্ঠে বলল শাফিন।
রুমাইশা একটু লজ্জা পেলো যেন, মৃদু গলায় বলল,
— তোর ভাইয়ের কাছে জিজ্ঞেস কর৷ আমি কিছু জানিনা।
শাফিন চটে গিয়ে বলল,
— তুমি তো মানুষ ভালো না আপু! তুমি জানো যে আমি যদি আমার মোস্ট সিনিয়র ভাইয়া কে জিজ্ঞেস করি যে কিভাবে কি হলো তাহলে আমাকে ঝেটিয়ে বের করে দেবে বাড়ি থেকে। বলবে আমি বেয়দব!
— তা ঠিকই তো, তুই একজনের পার্সোনাল বিষয়ে জিজ্ঞেস করবি কেন?
শাফিন কিছু বলতে নিবে তখনি রুমাইশার ফোনে কল আসলো, রাফসান কল করেছে।
রুমাইশা তড়িঘড়ি করে ফোন টা তুলে শাফিন কে বলল, চুপ থাক, ভাইয়া কল দিয়েছে। কি বলে শুনি।
ফোন রিসিভ করে কানে ধরলো ও৷
— আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া, কেমন আছো তুমি?
ও পাশ থেকে রাফসানের গম্ভীর কন্ঠ ভেসে এলো,
— ওয়ালাইকুমুসসালাম, ভালো আছি। তুই কেমন আছিস? শাফিন এসেছে শুনলাম।
— হ্যা ভাইয়া, ও এসেছে দুপুরের দিকে৷
— কোথায় আছে এখন ও?
— এইতো আমার পাশেই বসে আছে৷
— উঠে একটু বাইরে যা, কথা আছে তোর সাথে।
রাফসানের কথায় চকিতে একবার শাফিনের দিকে তাকালো রুমাইশা। ফোন লাউডে দেওয়ায় শাফিন শুনছে সব৷ শাফিন ইশারা করলো উঠে না যেতে। রুমাইশা কি করবে বুঝতে পারলো না৷ ওখানে বসেই ফোন টা লাউড থেকে নরমাল মোডে দিলো৷ তবুও বাইরে থেকে শোনা যাচ্ছে রাফসানের কথা৷
— হ্যা এবার বলো ভাইয়া৷
— আমি কি শুনছি এসব? মা বলেছে তুই নাকি কাল রাতে সাফওয়ানের সাথে এসেছিস? ওর গায়ে নাকি শার্ট ছিলো না! আর তুই নাকি বোরখা খুলে এসেছিস!
রাফসানের কথায় শাফিন চমকে গেলো,
‘ভাইয়া কাল আপুকে নিয়ে এসেছে যশোর থেকে! কই ভাইয়াতো কিছু বলেনি?
রাফসানের কথায় থতমত খেলো রুমাইশা। জড়ানো কন্ঠে বলল,
— তু-তুমি যা ভাবছো সেরকম কিছুই না ভাইয়া। কাল বৃষ্টি হয়েছে অনেক, মেঘ করেছিলো খুব তাই গাড়ি পাওয়া যাচ্ছিলো না খুব একটা, তাই ভাইয়া আমাকে নিয়ে এসেছে, আর ও ভিজে গেছিলো বলে শার্ট খুলেছিলো।
— ‘ও’! ‘ও’ কাকে বলছিস তুই? যাকে ভাইয়া ছাড়া ডাকতি না তাকে এইভাবে সম্বোধন করছিস কেন?
উঁচু গলায় ধমকের সুরে বলল রাফসান৷ তারপর আবার বলল,
— কি আছে তোদের ভেতরে যে এত সিনিয়র একজনকে তুই ‘ও’ বলছিস! তুই জানিস ওর সম্পর্কে কিছু?
আমি যেন দ্বিতীয় বার না দেখি তুই ওর সাথে কোনো ধরনের কোনো কমিউনিকেশন রেখেছিস। কথা টা যেন মাথায় থাকে৷ কত টা নির্লজ্জ হলে একটা মেয়ে কোথাকার কোন ছেলের সাথে এইভাবে বোরখা খুলে আসে, তার ওপর আবার ছেলের গায়ে শার্ট নেই! বৃষ্টিতে ভিজে গেছে নাকি! ছিলো তো গাড়ির ভেতর, শার্ট কিভাবে ভিজলো?
রাফসানের মুখে এধরনের কথা শুনে চোখ ভিজে এলো রুমাইশার। একটা হাত মুখের ওপর দিয়ে কান্না আটকালো!
পাশে বসে শাফিন তাজ্জব হয়ে গেছে রাফসানের কথা শুনে!
রুমাইশাকে কোনো কথা বলতে না শুনে রাফসান আবার ও বলল,
— বেহায়া মেয়েদের মতো চলাফেরা যদি দেখি তো জানে মেরে ফেলবো একদম। ওই সাফওয়ান সম্পর্কে তোর কোনো ধারনা আছে? ছোটো বেলায় ও তোকে মেরে ফেলেছিলো বলতে গেলে, ভাগ্যের জোরে বেচে গেছিস!
এতদিন বাইরে থেকেছে, বাইরের কালচারে বড়ো হয়েছে! ও কি করতে পারে সে সম্পর্কে তোর কোনো ধারনা আছে?
রুমাইশা এবার আর চুপ থাকতে পারলো না৷ তেজী কন্ঠে বলল,
— কথা বার্তা সাবধানে বলো ভাইয়া। আমি তোমার বোন, তুমি আমাকে কিভাবে এইরকম বলো, তোমার বিবেকে বাধে না? আর সে তো কোনো খারাপ ছেলে না! সে তো আমার কোনো ক্ষতি করেনি! তার ক্ষতি করার নিয়ত থাকলে এতদিন তো করতোই! ওদের বাড়িতে যে কয়দিন আমি থেকেছি তার ভেতর কি ও আমার ক্ষতি করতে পারতো না? ও কি অচেনা কেউ?
রাফসান এবার আর ও রেগে বলল,
— আবার ‘ও’ বলছিস তুই! কতখানি গভীরে গিয়েছে সম্পর্ক? যে ‘উনি’ থেকে ‘ও’ তে নেমে এসেছে! আমাকে কি তোর বাচ্চা মনে হয়? আমি কি কিছু বুঝিনা? এই পর্যন্ত হুদাই বড় হয়েছি?
আমি যেন দ্বিতীয় বার না শুনি যে তুই সাফওয়ানের সাথে কোনো রকমের কোনো যোগাযগ করেছিস৷ তাহলে সেটা কিন্তু মোটেও ভালো হবে না৷
এরপরেই রাফসান ফোন কেটে দিলো।
সাথে সাথেই ফুপিয়ে কেদে উঠলো রুমাইশা। রাফসান তাকে এতগুলো কথা কিভাবে বলতে পারলো! ওর চরিত্রের দিকে এইভাবে আঙুল তুললো কি করে!
চোখ থেকে অনবরত পানি পড়তে লাগলো ওর।
শাফিন কি করবে ভেবে পেলো না৷ রুমাইশার দিকে কিছুক্ষন অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে চলে গেলো গেস্ট রুমে। কিছুক্ষন আগেও প্রচন্ড হাসি খুশি থাকা মেয়েটির এইরকম কান্নারত চেহারা দেখতে ওর একদমই মন সায় দিচ্ছে না।
রুমে ঢুকেই নিজের ভাইকে কল লাগালো শাফিন।