২৭. রাত প্রায় চার টা। রুমাইশা ঘুমায়নি একটুও। তারপরও ফোনে এলার্ম দিয়ে রেখেছে, যদি ঘুমিয়ে যায় তাহলে যেন জেগে উঠতে পারে সময় মতো।
সাফওয়ান গভীর ঘুমে আছে, নিঃশ্বাস পড়ছে ওর ঘন ঘন।
রুমাইশা মনোযোগ দিয়ে শুনছে সাফওয়ানের নিঃশ্বাস এর শব্দ। আর ওর চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে।
এই খুব বড়সড় ব্যাক্তি টাকে নিজের বুকের ওপর রাখতে পেরে ওর যেন অন্যরকম অনুভূতি বয়ে যাচ্ছে সমস্ত শরীরে। প্রচণ্ড রকম ভালো লাগছে ওর৷
ঘুমানোর পর একদম বাচ্চাদের মতো লাগছে সাফওয়ানকে, মুখে একটি নিষ্পাপতার ছায়া ফুটে উঠেছে ওর। ভ্রু দুইটা এখন আর কুচকে নেই। মুখ টা দেখে বোঝার ই উপায় নেই যে এই ব্যাক্তি জেগে থাকলে কত টা হিংস্র থাকে!
মিনিট পনেরো পরে সাফওয়ান কে জাগানোর সিদ্ধান্ত নিলো রুমাইশা। কিন্তু সাফওয়ানের এই সুন্দর ঘুম টা ভাঙাতে ওর মন সায় দিচ্ছে না৷ মনে হচ্ছে আর ও অনেক অনেক সময় ঘুমাক ও।
কি হতো যদি আজ সাফওয়ান ওর স্বামী হতো! এই সুন্দর ঘুম টা আর ভাঙাতে হতো না। যতক্ষন ইচ্ছা ঘুমাতো সাফওয়ান। এই ভোর রাতে উঠে চলে যেতে হতো না আর৷ নিশ্চিন্ত মনে ঘুমাতো সাফওয়ান এখন ওর বুকে। কারো ভয় থাকতো না তখন!
ভাবতে ভাবতে সাফওয়ানের কপালে আলতো করে স্নেহের চুম্বন বসিয়ে দিলো রুমাইশা।
তার পর সাফওয়ানের মুখে হাত বুলিয়ে ছোট ছোট করে ডাকল সাফওয়ান কে৷ কয়েকবার ডাকার পর চোখ খুলল সাফওয়ান। ঘুম কম হওয়ার কারনে চোখ দুইটা লাল হয়ে আছে৷ ঘুম থেকে ওকে জাগিয়ে প্রচন্ড খারাপ লাগলো রুমাইশার।
সাফওয়ান ঘুম ভাঙার পর ও রুমাইশার বুকে আর ও কিছুক্ষন আয়েসি ভঙ্গিতে শুয়ে থাকলো। বুকের ওপর শুয়েই হাত পা ছুড়ে আড়ামোড়া করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর উঠলো। উঠে বসে রইলো বিছানার ওপর৷
ঘুমের ঘোর এখনো কাটেনি ওর। চোখ দুইটা ডলে বালিশে শোয়া রুমাইশার দিকে চোখ চোখা করে তাকালো একবার। রুমাইশা ওকেই দেখছিলো।
সাফওয়ানের এমন করে তাকানোয় রুমাইশা নিঃশব্দে হাসলো। তারপর বলল, কি হলো? এভাবে তাকানোর কি আছে!
সাফওয়ান কিছু বলছে না দেখে রুমাইশা সন্দেহের চোখে তাকালো ওর দিকে৷ তারপর আবার কিছু বলতে যাবে তখনই সাফওয়ান ওর মুখ বন্ধ করে দিলো নিজের অধর জোড়ার আক্রমনে৷
অনেক অনেক ক্ষন ধরে গভীর ভাবে চুমু খেলো সাফওয়ান। রুমাইশার হাতের আঙুলের ফাকে নিজের হাতের আঙুলগুলো রেখে বিছানায় চেপে ধরলো।
সাফওয়ানের এমন আক্রমণে দিশেহারা হয়ে গেলো রুমাইশা। মনে মনে বিপুল পুলক অনুভব করলো ও। ভালো লাগায় চোখ দুইটা বন্ধ হয়ে এলো ওর। নিজের সমস্ত ইন্দ্রিয় দিয়ে যেন সাফওয়ানের এই প্রগাঢ় চুম্বন কে নিজের ভেতর ধারণ করতে থাকলো ও।
কিছুক্ষন পর সাফওয়ান ছেড়ে দিলো ওকে। ছাড়া পেয়ে হাসফাস করতে লাগলো রুমাইশা।
রুমাইশার এমন অবস্থা দেখে মুখ টিপে হাসলো সাফওয়ান৷
তারপর রুমাইশার চোয়ালের সাথে নিজের চোয়াল ঘষে মৃদু গলায় বলল,
— সামান্য একটা চুমুতে এই অবস্থা! এরপর তো বিশাল বিশাল বিশাল অত্যাচার সহ্য করতে হবে, কি করবি তখন!
কথাটা বলে সাফওয়ান রুমাইশার চোয়ালে একটা ছোট্ট করে চুমু দিয়ে বিছানা থেকে উঠে নিচে নামলো আলনা থেকে নিজের টি শার্ট টা নেওয়ার জন্য৷
পেছন থেকে রুমাইশা বলে উঠলো,
— আপনার মুখ দেখে তো বোঝা যায় না আপনি এত অসভ্য। দিনের বেলা আপনি এত গুরুগম্ভীর হয়ে থাকেন, কিন্তু রাত হলে তো দেখছি আপনার হুলিয়া পালটে যায়!
সাফওয়ান টি শার্ট টা গায়ে দিতে দিতে লুচু দৃষ্টিতে তাকিয়ে নির্বিকার গলায় বলল,
— শব্দ টা অসভ্য না, রোমান্টিক। আর মনে মনে সবাই অসভ্যই চায়, কিন্তু ওপরে ওপরে ভং ধরে। তোর মতো। আর এটা যদি অসভ্যতাই হয়, তাহলে আমি অসভ্য, তোর কাছে। আর যতদিন বেচে আছি অসভ্যই থাকবো৷
তারপর চোরা চোখে তাকিয়ে দুষ্টু গলায় বলল,
— পছন্দ না হলে ঠিকই বাধা দিতেন কিন্তু তা দেননি। কারণ আপনি ও চান, আমি অসভ্য হই৷
রুমাইশা লজ্জা পেলো প্রচুর৷ লজ্জায় মাথা নত হয়ে গেলো ওর। সাফওয়ানের কথার বিপরীতে বলার মতো আর কোনো কথা খুজে পেলো না৷ উল্টো কান গরম হতে শুরু করলো ওর।
সাফওয়ান খেয়াল করলো সেটা, তারপর ও দুষ্টুমি করে বলল,
—থাক আর লজ্জা পেতে হবে না, চুমু তো খাওয়া হয়েই গেছে। এখন অসময়ে এসে লজ্জা পেয়ে আর কি হবে?
রুমাইশা কটমট চোখে তাকালো সাফওয়ানের দিকে৷ সাফওয়ানের সেদিকে চোখ পড়তেই অন্য দিকে চোখ ঘুরিয়ে নিয়ে মুখ টিপে হাসলো।
রুমাইশা দাঁতে দাঁত চেপে মুখ ঝামটা মেরে বলল,
—আযান দিবে এক্ষুনি, বাড়ি যান।
সাফওয়ান শব্দ করে হাসলো, কিন্তু সেটা রুমের বাইরে যাতে না যায় সেভাবেই হাসলো৷
— এইতো যাচ্ছি। এখনি যাচ্ছি।
তারপর টেবিলের ওপর থেকে গাড়ির চাবি টা হাতে নিয়ে আবার বিছানার কাছে আসলো৷ রুমাইশার দিকে ঝুকে আর একটা চুমু খাওয়ার চেষ্টা করলো, কিন্তু মুখ ঘুরিয়ে নিলো রুমাইশা৷
— সরুন, আপনি আর জীবনে আমারে চুমু খাবেন না৷
— খাবো একশো বার৷ এইটা বিদায়ী চুম্বন।
বলে খপ করে বাম হাত টা দিয়ে রুমাইশার চোয়ালদ্বয় ধরে নিজের দিকে ঘোরালো, তারপর কষে একটা চুমু খেলো।
চুমু খাওয়া শেষে রুমাইশার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো,
— লাভ ইয়্যু, মোর দ্যান মা-লায়েফ।
আর তারপরই দ্বিতীয় বার পেছনে না তাকিয়ে দ্রুত পায়ে দরজার কাছে গিয়ে নিঃশব্দে দরজার লক খুলে চলে গেলো বাইরে৷
এদিকে সাফওয়ানের এমন ফিসফিসানি কণ্ঠে রুমাইশার গায়ের পশম দাঁড়িয়ে গেলো, বুক আর তলপেটে যেন রক্ত ছলকে উঠলো৷ লজ্জায় নত হলো মুখ। মুখে লাজুক হাসি ফুটে উঠলো ওর। অনড় হয়ে বসে রইলো বিছানায়।
খানিকক্ষণ বাদে দূর থেকে গাড়ির ইঞ্জিনের ক্ষীন শব্দ ভেসে আসলো। রুমাইশা বুঝলো সাফওয়ান ওর গাড়ি স্টার্ট দিয়েছে।
মুহুর্তেই মন টা খারাপ হয়ে গেলো ওর৷ হঠাৎ করেই যেন চারপাশ টা কেমন ফাকা ফাকা লাগতে থাকলো। নির্জনতায় ছেয়ে গেলো যেন ওর আশপাশ টা। মুখের হাসি টা মিলিয়ে গেলো নিমিষেই। বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে পড়লো রুমাইশা৷
আযান দিলো এমন সময়ে। ফজর টা পড়া হবে না সঙ্গত কারণে৷ তাই চোখ বুজে নিলো ও। সারারাত না ঘুমানোর কারণে চোখ বন্ধ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে গেলো।
২৮. ঘুম ভাঙলো আট টায়। বাড়ির অন্যরা ততক্ষণে উঠে গেছে। শামসুলের অফিস আছে নয় টায়৷ আয়েশার নাস্তা বানানো প্রায় শেষের দিকে৷
রুমাইশা উঠে এসে ফ্রেস হয়ে গেলো রান্না ঘরে৷ আয়েশা কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,
—কাজ থাকলে বল মা, করে দেই৷
আয়েশা চুপ রইলেন কিছুক্ষন। তারপর বললেন,
— শাফিন কে ঘুম থেকে তোল৷ একসাথে খেয়ে নে সবাই, নইলে পরে খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে৷
রুমাইশা ‘ঠিক আছে মা’, বলে গেলো শাফিন কে ডাকতে।
দরজায় কয়েকবার নক করার পর দরজা খুলল শাফিন।
চোখ ডলতে ডলতে বাইরে এলো৷ রুমাইশার দিকে চোখ পড়তেই কাল রাতের ঘটনা মনে পড়লো ওর৷ উত্তেজিত হয়ে বলল,
— রুমি আপু, ভাইয়া চলে গিয়েছে?
রুমাইশা চাটি মারলো ওর মাথায়,
— আস্তে বলতে পারিস না? শয়তান ছেলে। গেছে চলে ভোরবেলা, আযানের সময়ে।
— ভাইয়ার কি কিছু হয়েছে আপু?
— পরে বলবানে তোরে মেসেজে৷ এখন অফ যা৷ ফ্রেস হয়ে আয়, খাবি দ্রুত। নইলে খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে, মা বলেছে।
তাড়াতাড়ি আয়৷
শাফিন কে এক প্রকার ঠেলে পাঠিয়ে দিলো ওয়াশরুমে। তারপর আবার রান্না ঘরে এলো। মায়ের সাথে নাস্তা গুছিয়ে দিলো৷ কাজের ফাকে আয়েশার দিকে চোখ পড়লো ওর৷ থমথমে লাগছে মায়ের মুখ টা৷
কাজের প্রেশারে হয়তো এমন লাগছে ভেবে আবার নিজের কাজে মন দিলো রুমাইশা।
“””
সাফওয়ান বাড়ি ফিরে আর ঘুমায়নি৷ পুরো ভোর বেলাটা উত্তরের জঙ্গলের ভেতর কাটিয়ে দিয়েছে।
এখানে আসলে ওর অদ্ভুত রকমের শান্তি লাগে৷ এখানের সাপ গুলো ওর গায়ের সঙ্গে লেগে থাকতে পছন্দ করে খুব৷
খুব তাড়াতাড়িই ও খোলস ছাড়বে৷ গায়ের চামড়া টা খসখসে হতে শুরু করেছে। এই লেয়ার টা উঠে যাবে৷ পরণে ওর গত রাতের টি শার্ট। হাতের খসখসে ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া চামড়া গুলো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
রুমে গিয়েই লং স্লিভ পরতে হবে ওর৷ নইলে যে কেউ দেখে বুঝতে পারবে ওর শরীরের অবস্থা৷ একটু বেলা হলে নিজের রুমে গেলো সাফওয়ান৷
ওয়াশরুমে ঢুকে লম্বা একটা শাওয়ার নিলো। তারপর বের হয়ে কালো রঙা ট্রাউজার আর সাদা রঙের লং স্লিভ টি শার্ট পরে নিলো। নিজেকে ঠিক ঠাক ভাবে গুছিয়ে নিয়ে বসে রইলো মায়ের অপেক্ষায়।
রুনিয়া খাবার নিয়ে উপরে আসলেন। টি টেবিলের ওপর খাবার রেখে তিনি গেলেন চিলেকোঠার রুমের দরজার কাছে সাফওয়ান রুমে আছে কিনা চেক করতে।
দরজা লক করা নাই, সাফওয়ান ভেতরেই আছে৷ রুনিয়া দরজায় নক করতে যাবেন এমন সময় সাফওয়ান ও দরজা খুলে বের হয়ে এলো৷ সাফওয়ান কে দেখেই রুনিয়া বললেন,
— কাল রাতে না খেয়েই চলে গেছিলি কেন! বলে তো যাবি যে খাবো না, আমি খাবার নিয়ে এসে দেখি তুই নেই। দুপুরেও খাসনি। তোর কাজের এত চাপ যে খাওয়ার সময় হচ্ছে না তোর৷
মায়ের এই ছোট্ট কিউট শাসনে সাফওয়ান হাসলো, তারপর বলল,
—রাতে আমি খেয়েছি মা, তুমি চিন্তা করো না।
তোমার সাথে আমার অনেক কথা বলার আছে। বসো এখানে এসে।
টি টেবিলের পাশের রাখা চেয়ার গুলোর দিকে নির্দেশ করে বলল সাফওয়ান৷
রুনিয়া চেয়ারে বসতে বসতে বললেন,
— কোথায় খেয়েছিস? তুই তো বাইরে খাস না কখনো। আর নিচে যে খাবার রেখেছিলাম তা তো সেভাবেই আছে।
সাফওয়ান নিজেও চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলল,
— ভেতরেই খেয়েছি, তবে অন্য জায়গায়। ও নিয়ে তুমি আর চিন্তা করো না। এখন আমি যা বলি মনোযোগ দিয়ে শোনো।
রুনিয়া মনোযোগ দিলেন।
সাফওয়ান গম্ভীর হয়ে গেলো হঠাৎ করেই। তারপর কিছুক্ষন সময় নিয়ে চোখ থেকে গগলস টা খুলে ফেললো৷
সাফওয়ানের চোখ দেখে আতঙ্কিত হয়ে গেলেন রুনিয়া।
— তোর চোখের রঙ এমন দেখাচ্ছে কেন? আর কেমন যেন জ্বলজ্বল করছে চোখ দুইটা!
মায়ের এমন আতঙ্কিত চেহারা দেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো সাফওয়ান। তারপর মৃদু গলায়
— এটা অনেক দিন আগেই হয়েছে মা, তোমাদের কে আমি দেখাইনি৷ তোমরা কষ্ট পাবে তাই, কিন্তু এখন আর উপায় নেই আমার কাছে কোনো।
রুনিয়া ছেলের কথা কিছু বুঝলেন না, অবুঝের মতো করে তাকিয়ে রইলেন৷
— তোমাকে আর ও কিছু দেখানোর আছে মা, কিন্তু তুমি হয়ত ভয় পাবে। তুমি আমাকে ভয় পেয়ো না মা, আমি তো তোমার ই ছেলে। আমাকে তুমি যেন ভয় পেয়ো না।
রুনিয়া কি বলবেন বুঝতে পারলেন না৷ ভয় কেন পাবেন সেটা ভাবতে ভাবতে চেয়ে রইলেন শুধু।
সাফওয়ান ধীরে ধীরে নিজের মুখের মাস্ক টা সরালো। তারপর অসহায় চোখে তাকালো মায়ের দিকে।
রুনিয়া চোখ বড় করে তাকিয়ে রইলেন,
— তোর ঠোঁট এত কাল কিভাবে হলো।
আঙুল দিয়ে তিনি ছুয়ে দেখলেন সাফওয়ানের ঠোঁট জোড়া।
— এমন কিভাবে হয়েছে!
চোখে মুখে অবাকতার ছাপ ফুটে উঠল রুনিয়ার৷
সাফওয়ান কিছু বলল না, চোখের কোণা চিকচিক করে উঠলো ওর৷
মায়ের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে নিজের হাতের স্লিভ গোটালো ও৷ গুটিয়ে কনুই পর্যন্ত উঠিয়ে রাখলো।
নিজের শরীরে স্কিনের অবস্থাটা দেখালো রুনিয়া কে৷
রুনিয়া চোখ বড়ো বড় করে তাকিয়ে রইলেন সাফওয়ানের শীরা ভেসে ওঠা হাত টার দিকে। নিজের হাত দিয়ে স্পর্শ করলেন সাফওয়ানের হাত খানা।
খসখসে সর্পচামড়ার ওপর দিয়ে নিজের হাত টা বুলিয়ে নিয়ে গেলেন।
চোখ ফেটে পানি বেরিয়ে এলো রুনিয়ার৷
— এ-এসব কখন হলো! এরকম তো ছিলো না আগে। এগুলো তো অনেক কম ছিলো! এত-এত বেড়ে গেলো কিভাবে! আমাকে কখনো বলিসনি কেন? বলিসনি কেন আমাকে?
সাফওয়ান নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে। রুনিয়া কান্না চোখে উলটে পালটে দেখছেন সাফওয়ানের হাত খানা, আর বিলাপ করছেন নিজে নিজে৷
সাফওয়ান নিজের মায়ের মুখটা দুই হাত দিয়ে দিয়ে ধরে নিজের দিকে ফেরোলো, তার পর নিজের অধর জোড়া আলগা করলো মায়ের সামনে, রুনিয়া তাকালেন সাফওয়ানের মুখের দিকে৷
সাফওয়ান ঠোঁট আলগা করলেই দেখা গেলো ওর ঝকঝকে তীক্ষ্ণ দাঁত দুইটা।
সেই জংলি পশুদের মতো লম্বা ধারালো দাঁত দুইটার দিকে রুনিয়ার চোখ পড়তেই চমকে উঠলেন তিনি। ভালো করে সেদিকে দেখেই ডুকরে কেদে উঠলেন রুনিয়া,
—এ কি হাল হয়েছে আমার ছেলের! এ কি হলো!
বাবা! আপনি এ কি করে গেলেন আমার ছেলেকে! এ কি অবস্থা করে দিয়ে গেলেন আমার সাফওয়ানের!
অসহায় কণ্ঠে বিলাপ শুরু করলেন রুনিয়া।
সাফওয়ান রুনিয়াকে সামলালো,
— মা, মা জোরে বলো না মা প্লিজ! কেউ যদি শুনে ফেলে তোমার কথা, তখন অনেক বিপদ হয়ে যাবে মা! থামো মা!
তুমি এরকম করলে আমি কিভাবে ঠিক থাকবো মা। চুপ করো মা, আমার কথা শোনো!
রুনিয়া সময় নিয়ে অনেক কষ্টে নিজেকে সামলালেন৷ সাফওয়ানের হাত দুইটা নিজের দুই হাতের মুঠির ভেতরে নিয়ে চুমু খেলেন হাতে৷
সাফওয়ান মা কে বলল,
—এখনো শেষ হয়নি মা, আর ও কিছু দেখানোর আছে তোমাকে!
রুনিয়া অসহায় দৃষ্টিতে তাকালেন ছেলের দিকে! ইশারায় বুঝালেন সেগুলো দেখাতে৷
মায়ের ইশারা পেয়েই সাফওয়ান মুখ আলগা করে নিজের কালো লকলকে লম্বা সর্পজিহবা টা বের করলো রুনিয়ার সামনে৷
এই দৃশ্য দেখে রুনিয়া থমকে গেলেন যেন! উচ্চকণ্ঠে কাদতে নিলেন তিনি, কিন্তু তার আগেই নিজের মুখ টা হাত দিয়ে চেপে ধরলেন।
সাফওয়ান সেদিকে নিষ্প্রভ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
— আমি আর তোমার ছেলে নেই মা, আমি পশুতে পরিণত হয়ে গেছি! সামনে হয়তো আর ও হবো।
নিজেকে নিয়ে অনেক রিসার্চ করেছি মা আমি, কিন্তু কোনো সল্যুশন বের করতে পারিনি আমি, ব্যার্থ হয়েছি আমি মা! এখনো চেষ্টা করে যাচ্ছি, জানিনা, আদৌ সফল হবো কিনা, সে সময় পাবো কিনা! আমি যদি কোনো রেমেডি বের করতে না পারি তবে আমি খুব শিঘ্রই মারা যাবো মা! নইলে অন্য কোনো প্রাণীতে পরিণত হবো, চিরদিনের জন্য৷
ছেলের মুখে মৃত্যুর কথা শুনে রুনিয়া আর নিজেকে সামলাতে পারলেন না। উচ্চস্বরে কেদে উঠলেন তিনি, সাফওয়ান আর এবার বাধা দিলো না।
কিছুক্ষন বিরতি দিয়ে সাফওয়ান বলে উঠলো,
— আমি জানি আমি বেশিদিন বাচবো না, তবে মৃত্যুর আগে আমার একটা শেষ ইচ্ছা আছে মা। আমি খুব করে চাই আমার সেই ইচ্ছা টা পুরণ হোক! খুব খুব করে চাই৷ আর সেটা পুরণ করতে তুমি আমাকে সাহায্য করবে মা!
রুনিয়া কিছুক্ষন সময় নিয়ে নিজের কান্না থামালেন। ধরা গলায় বললেন,
— কি ইচ্ছা তোর, বল আমাকে! আমি যেভাবেই হোক তোর ইচ্ছা টা পুরণ করবো। প্রয়োজনে নিজের প্রাণ টা দিয়ে দেবো, তবুও তোর ইচ্ছা পুরণ করবো।
ফুপিয়ে কাদতে লাগলেন তিনি।
সাফওয়ান মৃদু হাসলো,
মায়ের মুখ টা দুই হাত দিয়ে আলতো করে ধরে বলল,
— প্রাণ দিতে হবে না মা! তুমি শুধু রিমু কে আমার বউ করে নিয়ে আসার ব্যাবস্থা করে দাও, আর কিচ্ছু চাই না!