দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো। শামসুল বাসায় এসেছেন কিছুক্ষন আগে, খাওয়া দাওয়া করে নিজের রুমে বিশ্রাম নিচ্ছেন তিনি। রুমাইশা ঘুমাচ্ছে ওর ঘরে৷ সারাদিনের কাজের পর ক্লান্তি লাগছিলো ওর অনেক৷
আসরের ওয়াক্ত হওয়ার পর আয়েশা এলেন মেয়ের রুমে। তারপর ঘুমন্ত রুমাইশা কে ডেকে তুললেন। মায়ের ডাকে আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো রুমাইশা। আয়েশা কে এইভাবে বোরখা পরে রেডি হওয়া অবস্থায় দেখে রুমাইশা চমকালো প্রথমে। তারপর জিজ্ঞেস করলো,
— কোথায় যাচ্ছো এখন তুমি?
আয়েশা বিছানায় পা ঝুলিয়ে দিয়ে বসে বললেন,
— যশোরে যাচ্ছি, তোর খালা, আমি আর জুবায়ের। আমরা একটু কেনা কাটা করবো আর ঘুরবো।
— কিন্তু এখন গেলে তো ফিরতে রাত হয়ে যাবে, কাল সকালে যেতে পারতে তো। আর ওরা আসলোই দুপুরে আর এখনি আবার ওদের কে নিয়ে তুমি যশোর যাচ্ছো?
— কাজ আছে তাই যাচ্ছি, তুই বেশি বকিস। শোন, আমাদের ফিরতে বেশি রাত হলে ফ্রিজ থেকে তরকারি বের করে গরম করবি, তোর বাবা যদি মাংস খেতে না চায় তবে ডাল রান্না আছে ফ্রিজে, বের করে গরম করে দিস, আর একটা ডিম ভেজে দিস।
আর ভাত রান্না করা নেই কিন্তু, কুকারে ভাত চড়িয়ে দিবি সন্ধ্যার পর পরই। পাঁচ জনের হিসাব করে। ঘোলাবি না কিছু৷
রুমাইশা আবার বিছানায় শুয়ে পড়তে পড়তে বলল,
— ঠিক আছে, দিবোনে। তোমরা সকাল সকাল ফিরো।
আয়েশা বিছানা থেকে উঠে দাড়াতে দাড়াতে বললেন,
— আবার এখন ঘুমাস না, আসরের আযান পড়ে যাবে এক্ষুনি। উঠে নামাজ পড়ে রাফসানের রুম টা একটু ঠিক ঠাক কর, কাল বাড়ি আসবে ও। সকালে ৯ টায় ট্রেইন৷ উঠ এখন৷
তারপর চলে গেলেন বাইরে৷ রুমাইশা আর ও কিছুক্ষন দম মেরে শুয়ে থেকে অবশেষে উঠলো। ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে অজু করে নামাজ পড়ে নিলো, তারপর গেলো রাফসানের রুমে।
রুম টা ভালো ভাবে ঝাড়ু দিয়ে, মুছে, বেড সীট আর বালিশের কাভার গুলো বদলে, সেগুলো সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে রুমটা পরিপাটি করে রাখলো।
রাফসান খুব গোছালো মানুষ। কোথাও একটু খানি ময়লা দেখলে সাথে সাথে চিল্লানো শুরু করে।
রুমাইশা আর আয়েশা তো সারাক্ষণ রাফসানের বউয়ের কপাল নিয়ে কথা বলে, যে, যে মেয়টা আসবে তার সারাক্ষণ ঝাড়াঝুড়ি করতে করতেই দিন চলে যাবে। অন্য কাজের টাইম পাবে না।
রুম গোছানো যখন শেষের পথে তখন হঠাৎ শাফিন এলো বাইক নিয়ে। রুমাইশা বাইকের শব্দ শুনে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখলো শাফিন কে। রাফসানের আলনা টা তখন অর্ধেক গোছানো হয়েছে। বাকি টা ওভাবে রেখেই বাইরে চলে আসলো। বাইকের শব্দে শামসুল ও বের হয়ে এসেছেন, কিন্তু শাফিন এসেছে দেখে একটু বেজার হলেন তিনি। রুমাইশা একবার বাবার দিকে দেখলো। শাফিন এসেছে দেখে বাবা খুশি হননি দেখে মন খারাপ হলো ওর৷
শাফিন বাইক টা এক পাশে পার্ক করে রেখে শামসুলের কাছাকাছি এসে খুব হাসি হাসি মুখে কুশল বিনিময় করলো। কিন্তু শামসুল কোনোরকমে মাথা টা নাড়িয়ে আবার রুমে চলে গেলেন৷
শাফিনের মুখের হাসি হাসি ভাবটা হঠাৎ করেই নিভু নিভু হয়ে গেলো।
কিন্তু রুমাইশা সাথেই সাথেই ওকে ইশারা করে মন খারাপ করতে বারণ করে বলল,
— দাড়িয়ে আছিস কেন? আয় বস, আমি তোর জন্য একটু নাস্তা পানির ব্যাবস্থা করি।
তারপর ই নিচু স্বরে বলল,
— তোর মামার আচরণে কিছু মনে করিস না। ওনার বউ ওনাকে রেখে ঘুরতে গেছে তাই ওনার মন ভালো নেই।
তারপর চোখ টিপ দিয়ে চলে গেলো রান্না ঘরে।
রুমাইশার কথায় মুখে একটু হাসি এনে সোফায় বসলো শাফিন৷ কিছুক্ষণের মাথায় রুমাইশা চানাচুর, বিস্কিট, কয়েক টুকরা ফল আর চা করে নিয়ে আসলো শাফিনের জন্য। ট্রে টা টি টেবিলের ওপর রেখে জিজ্ঞেস করলো,
— হঠাৎ আমাদের বাড়িতে আসলি যে, কোনো কিছু না জানিয়ে!
শাফিন প্লেট থেকে চায়ের কাপ টা তুলে নিতে নিতে বলল,
— কেশবপুরে গেছিলাম, সোনিয়া ফুপ্পির বাসায়। ফেরার সময় ভাবলাম একটু ঘুর দিয়ে তোমার সাথে দেখা করে যাই। কিন্তু তোমারে কাজের বেডি জরিনার মতো লাগছে কেন, তাই বলো আগে।
রুমাইশা নিজের কোমোরে বাধা ওড়নার গিট খুলতে খুলতে হেসে বলল,
— রাফসান ভাইয়া আসছে কাল, সকালে ট্রেইন, নয়টায়। মা, বড়ো খালা আর জুবায়েরের সাথে যশোর গিয়েছে খানিক আগে। খালা রা এসেছে দুপুরের দিকে। রাতে থাকবে। মা যাওয়ার আগে বলে গিয়েছে ভাইয়ার রুম টা একটু গোছাইতে। জানিস ই তো, ওর ওসিডি আছে। সব কিছু একদম পারফেক্ট হওয়া চাই।
শাফিন চায়ে চুমুক দিতে দিতে বলল,
— মামি হঠাৎ যশোরে গেলো! এই অসময়ে? গুরুতর কিছু নাকি? আর এই জুবায়ের তোমার সেই খালাতো ভাই না যেটা ইতালিতে থাকতো?
— হ্যা, সে-ই। মায়েরা কেন গিয়েছে আমারে ক্লিয়ার করে কিছু বলেনি কেনা কাটা আছে নাকি কিছু। আর একটু ঘোরাঘুরি করবে। তবে এই জুবায়ের শালা কে আমার মোটেও সুবিধার মনে হচ্ছে না।
শাফিন খাওয়া থামিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— কেন? কিছু করেছে নাকি ও?
— আরে আর বলিস না! কেমন তর করে যে তাকিয়ে থাকে! মনে হয় জীবনে আর মেয়ে দেখেনি। সবসময় কেমন একটা লুইচ্চা লুইচ্চা নজর৷ শয়তান টা আগে ভালো ছিলো, ইতালি থেকে ফিরে পুরো অসভ্য হয়ে গেছে।
শাফিন মাথার ভেতরে কথা গুলো কোট করে নিলো, বাড়ি গিয়ে সোজা ভাইয়ের কাছে নিউজ দিতে হবে। চা টা শেষ করে কাপ টা রেখে দিলো আবার জায়গায়।
তারপর রুমাইশার দিকে তাকিয়ে বলল,
— তুমি ওর থেকে দূরে দূরে থাইকো আপু। আর যেহেতু রাতেও থাকবে ওরা তাই সাবধানে থাইকো, এসব ছেলেরা খুব ধুরন্ধর হয়। রাফসান ভাইয়া বাড়িতে আসলে আর চিন্তা নেই। ভাইয়াই টাইট করে ফেলবে যদি দেখে এইরকম অবস্থা তাইলে।
প্রতিউত্তরে ওপর নিচে মাথা নাড়ালো রুমাইশা৷ শাফিন একটা পেয়ারার স্লাইস তুলতে তুলতে বলল,
— আমি আর বসবো না আপু, বেশি দেরি করলে ফিরতে রাত হয়ে যাবে। মা বকবে তখন। তুমি থাকো, মামির সাথে তো দেখা হলো না। নেক্সট টাইম দেখা করবোনে।
রুমাইশা ভ্রু কুচকে বলল,
—এলি কেবল, দশ মিনিট ও হয়নি। এর মাঝেই আবার যাবো যাবো করছিস, তাইলে আসলি কেন?
শাফিন দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল,
— দেখতে এলাম আবার হবু ভাবিকে। তুমি তো শীঘ্রই আমাদের বাড়ির পারমানেন্ট পারসন হতে চলেছো, তো সেটা তাড়াতাড়ি হও, আমার বয়স হয়ে যাচ্ছে, বাড়িতে এসে চাচ্চু ডাক শোনাও তাড়াতাড়ি।
শাফিনের কথায় লাল হয়ে গেলো রুমাইশা। ওর বাচ্চা হবে! ওর আর সাফওয়ানের! হায় হায়, কি লজ্জার ব্যাপার৷ ও আর সাফওয়ান একান্তে সময় কাটাবে, এক্কেবারে হালাল ভাবে৷ ইশ, ভাবতেই গা শিউরে উঠছে!
শাফিন রুমাইশার এমন মিইয়ে যাওয়া দেখে হিহি করে হাসলো। তারপর বলল,
— পিচ্চি একটু বড়ো হলেই বাইকে নিয়ে ঘুরে বেড়াবো সারাদিন। তোমাদের কাউকে আর তখন লাগবে না৷ আমি একাই ওর জন্য যথেষ্ট।
রুমাইশা শাফিনের মাথায় একটা চাটি মেরে বলল,
— চুপ কর! আর একটা কথাও বলবি না তুই। বাড়ি যা, তোর মা বকবেনে।
শাফিন চাটি খেয়েও দমে গেলো না, উঠে দাড়াতে দাড়াতে বলল,
— ডাবল হলে বেশি ভালো হয়। একটা আমার কাছে থাকলো আর অন্যটা তোমাদের কাছে, সবাই খুশি।
রুমাইশা ওর দিকে চোখ গরম দিয়ে তাকালো। শাফিন সেটা দেখে বলল,
— ঠিক আছে, থাকেন আপনি, আমি গেলাম। আপনি দ্রুত আসেন আমাদের বাড়িতে। ওই হাতির মতো ছেলের দায়িত্ব নিয়ে আমার মা আর পেরে দিচ্ছেন না৷ আপনি এলে বড়োই উপকার হয়।
এসব বলে আবার একটু হেসে শামসুলের রুমের দিকে গেলো। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে গলা খাকারি দিয়ে বলল,
— মামা, আমি বাড়ির দিকে যাচ্ছি। আপনি যাবেন, মামি কে নিয়ে।
শামসুল এইবার কথা বললেন,
— ঠিক আছে, সাবধানে যাস, সন্ধ্যা হয়ে গেছে প্রায়। আবার আসিস তোর মা কে নিয়ে।
শাফিন আচ্ছা বলে বাইরে বেরিয়ে বাইকের কাছে গিয়ে বাইক স্টার্ট দিলো। রুমাইশা এলো ওর পেছন পেছন। গেট খুলে দিলে বাইক নিয়ে শাফিন রওনা দিলো বাড়ির দিকে।
শামসুল রুমে বসে রুমের জানালা দিয়ে শাফিনের যাওয়ার দিকে দেখছিলেন৷ তিনি আছেন মহাবিপদে৷ রুনিয়া কে অসম্ভব ভালোবাসেন তিনি। সেই সাথে সাফওয়ান আর শাফিন কেও।
ষোলো বছর আগে যেদিন রুনিয়া হাত জোর করে কান্নাকাটি করেছিলো সাফওয়ানের নাম না বলতে, সেদিন শুধু মাত্র সাফওয়ানের নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়েই তিনি আয়েশাকে বলেন ব্যাপার টা চেপে যেতে। কিন্তু বোনের ওপর অনেক অভিমান হয় ওনার।
তারপর সে ঘটনার কয়েক বছর পর থেকে বোনের সাথে আবার যোগাযোগ করেন তিনি। সাফওয়ানের জায়গায় নিজের রাফসান কে কল্পনা করতেন তিনি সবসময়। যে তিনি রুনিয়ার জায়গায় থাকলে কি করতেন? রুনিয়া যা করেছে তাই-ই করতেন৷
সাফওয়ান সিঙ্গাপুর চলে যাওয়ার খবর তিনি জানতে পারেন আর ও তিন বছর পর। সাফওয়ানের যে বিকৃত ঘটেছে সেটাও রুনিয়া জানান শামসুল কে। কিন্তু সাফওয়ানের দাদুর করা অপরাধের কথা সেদিনই জানতে পারলেন তিনি।
সাফওয়ানের বিকৃতির কথা জানার পর থেকেই সাফওয়ানের জন্য খারাপ লাগতো ওনার প্রচন্ড৷ কিন্তু মেয়ের আঘাতের কাছে বার বার হেরে যেতেন। মনের ভেতর থেকে বার বার আওয়াজ আসলেও কখনো খোজ নেননি তিনি৷
সাফওয়ান দেশে আসার পর এম এম কলেজে জব নিলে রুনিয়া ফোন করেছিলো শামসুলের কাছে। কিন্তু শামসুল অন্য কাজে ব্যাস্ত ছিলো ফোন তুলতে পারেনি। পরবর্তীতে কল দিবে সেটাও ভুলে গেছে। যার জন্য রুনিয়াও আর দ্বিতীয় বার বলেনি।
বোন টা তার বরাবরই এমন৷ নিজের জেদ বজায় রেখে চলে সবসময়। এখন যেমন চলছে, সাফওয়ান কে রুমির সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য।
বিয়ের বিষয় টা নিয়ে আজ কয়েক দিন ধরে ভাবছেন তিনি। সাফওয়ান ছেলে হিসেবে খারাপ না। বরাবরই প্রচুর প্রটেক্টিভ ও রুমির ক্ষেত্রে৷
ছোটবেলায় সাফওয়ান রুমাইশার জন্য কি কি অপকর্ম করেছে তার অনেক কিছুই রাফসানের থেকে শুনেছেন তিনি৷
ওনার ভয় হতো কবে না জানি ছেলে টা বড়ো ধরনের কোনো বিপদে পড়ে যায়! কিন্তু এখন সে ভয় ভেঙে গেছে। এখন সাফওয়ান নিজেই অন্যদের জন্য একটা বিপদ, ভয়ঙ্কর বিপদ৷
মেয়েকে সাফওয়ানের কাছে দিতে তার অসুবিধা নেই, কিন্তু ওর যে দাঁতে বিষ! স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে ঘনিষ্ঠতার সময় যদি ভুলবসত সাফওয়ান আঘাত করে ফেলে রুমি কে! রুমির যদি আবার কিছু হয়ে যায়! সেই ভয়ে আগাতে সাহস পাচ্ছেন না তিনি।
কিন্তু সাফওয়ান কে রিজেক্ট করতেও মন সায় দিচ্ছে না। ও যথেষ্ট ভালো ছেলে। যে ছেলে কষ্ট করে বড়ো হয়েছে, জীবনে কঠিন সময় একা হাতেই সামলে নিয়েছে তার কাছে নির্দিধায় মেয়ে দেওয়া যায়, সমস্যা ওই একটা জায়গাতেই। রুমির সেফটি।
এসব ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন শামসুল। রুমাইশা শাফিন কে বিদায় দিয়ে ডাইনিং দিয়ে হেটে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছিলো। মেয়েকে দেখে ডাকলেন শামসুল।
রুমাইশা বাবার ডাক শুনে গেলো সেদিকে। রুমে ঢোকার পর শামসুল ইশারা করলেন রুমি কে তার পাশে বসতে।
রুমাইশা বসলো বাবার পাশে। শামসুল আজ কয়েক দিন ধরে ভালো ভাবে কথা বলেননি ওর সাথে, এখন নিজে থেকে ডেকেছে দেখে খুশি হলো ও অনেক৷ শামসুল রুমাইশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে নরম গলায় বললেন,
— তোকে কিছু কথা বলতে চাই।
রুমাইশা ইশারা করে বোঝালো বলতে। শামসুল বলতে শুরু করলেন,
— তুই আমার মেয়ে। অনেক আদরের বলতে গেলে। বাবা হিসেবে আমার একটা দায়িত্ব আছে তোর প্রতি৷ আমি আমার জায়গা থেকে যথাযথ চেষ্টা করবো সেই দায়িত্ব পালনে। আমি সারাজীবন ভেবেছি তোর জীবনসঙ্গী নির্বাচনের ভার টা তোর ওপরেই দিবো। কারণ সংসার টা আমি করবো না, বা তোর মা করবে না, করবি তুই। তাই বিয়ে শাদির ক্ষেত্রে তোর মতামত কেই সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া হবে।
রুমাইশা মনোযোগ দিয়ে বাবার কথা শুনছে। একটু বিরতি দিয়ে শামসুল আবার বললেন,
— সাফওয়ান কে আমি আমার ছেলের মতো করেই দেখেছি ওর ছোটবেলা থেকেই। ও সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে জন্মানোতে রুনিয়ার পরে সব চেয়ে বেশি খুশি হয়তো আমিই হয়েছি।
এমন না যে আমি ওকে এখন অপছন্দ করি। ওর ব্যাক্তিত্ব, দায়িত্ববোধ, পজেসিভনেস, সামর্থ্য, সব দিক থেকেই অনেক এগিয়ে ও অন্য অনেকের থেকে। সে হিসেবে পাত্র হিসেবে ও মোটেই খারাপ না।
ও যদি স্বাভাবিক থাকতো, অন্য দশ টা স্বাভাবিক মানুষের মতো জীবন যাপন করতো তাহলে আমার কোনো আপত্তিই থাকতো না ওর সাথে তোকে বেধে দিতে। কারণ রুনিয়া তোকে মেয়ের মতো করেই যত্ন করে।
তখন আর কোনো চিন্তা থাকতো না আমার যে, মেয়ে কোথায় কার কাছে পড়বে, সে তাকে ভালো রাখবে কিনা, শ্বশুর শাশুড়ী কেমন হবে। সব দিক থেকে চিন্তামুক্ত থাকতাম আমি। কিন্তু সাফওয়ান তো অস্বাভাবিক!
আমি জানিনা তোদের ভেতর সম্পর্ক কেমন, কত খানি গভীর, আমি আর জানতেও চাইনা। আর সেদিন যা বলেছি সেগুলো রাগের মাথায়। মন থেকে বলিনি।
এখন তুই আমার পার্সপেক্টিভ থেকে আর ও একবার ভেবে দ্যাখ, নিজের দিক থেকেও ভেবে দ্যাখ, যে তুই ওর সাথে ভালো থাকতে পারবি কিনা।
তোর যদি কোনো সমস্যা না হয়, তুই যদি মানিয়ে নিতে পারিস ওর সাথে, যদি ওর সাথে ভালো থাকিস তাহলে আমার আর কোনো আপত্তি নেই। তোর মাকেও আমি বুঝিয়ে বলবো। কিন্তু তুই আগে ভেবে দ্যাখ ভালোভাবে৷ ভেবে আমাকে জানা।
রুনিয়া কেও আমি কম বেশি কথা শুনিয়েছি সেদিন, ওর সাথেও কথা বলা দরকার, কিন্তু সেটা তুই তোর সিদ্ধান্ত জানানোর পর বলবো।
শামসুল থামলেন কথা গুলো বলে। রুমাইশার চোখে মুখে আনন্দ ঝিলিক দিয়ে উঠলো, ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো ওর। শামসুল সেটা দেখলেন, তার পর বললেন,
— ভেবে দ্যাখ আর ও একবার৷ সময় নে। সকালে জানাস আমাকে। তোর ফুপ্পি রাগ করে আছে আমার ওপর, ওকে অত কথা বলায়৷ ওর সাথে কথা বলে মিটমাট করতে হবে সব৷
বাবার এমন সুন্দর মন মানসিকতায় রুমাইশার মন ছুয়ে গেলো। ও বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে শামসুলের উদ্দ্যেশ্যে ‘আচ্ছা বাবা, বলে নিজের রুমের উদ্দ্যেশ্যে পা বাড়ালো।
রুমে গিয়ে দরজা টা লক করে আনন্দে লাফাতে লাগলো ও। আর কোনো অসুবিধা রইলো না ওর জীবনে। বাবা রাজী মানে মা ও রাজী। আর বাবা মা দুজনেই রাজী মানে রাফসান ভাইয়া ও রাজী। এর থেকে খুশির খবর আর কি হতে পারে।
সাফওয়ান কে এখনি খবর টা দেওয়ার দরকার, যে বাবা প্রায় রাজী। ওকে ভাবার সময় দিয়েছে বারো ঘন্টা।
ফোন টা তুলে সাফওয়ান কে মেসেজ দেওয়ার জন্য ফোনের সুইচ টিপলো।
ফোনের স্ক্রিনে আগে থেকেই সাফওয়ানের মেসেজের নোটিফিকেশন এসে বসে আছে দেখে আর ও খুশি হলো। কিন্তু মেসেজ টি ওপেন করতেই খুশির বদলে দ্বিধা এসে ভর করলো ওর মনে।
সাফওয়ান লিখে পাঠিয়েছে,
— তুই যদি কখনো জানতে পারিস যে আমি তোর থেকে কিছু লুকিয়েছি, আর সেটা যদি গুরুতর কিছু হয়, তাহলে কি তুই আমাকে ছেড়ে চলে যাবি?”