মেসেজ টি পড়ে দ্বিধান্বিত হয়ে গেলো রুমাইশা। কি লুকাবে সাফওয়ান ওর থেকে? আবার সেটা নাকি গুরুতর কিছু! কিন্তু সাফওয়ান তো ওর খারাপ চাইবে না কখনো, তাই কিছু যদি লুকিয়েই থাকে তাহলে অবশ্যই সেটা ভালোর জন্যই। সেটাতে হয়তো ওর কোনো ক্ষতি হবে না, বরং সেটা জানলেই হয়তো ওর ক্ষতি হবে৷
কিছুক্ষণ ভেবে চিন্তে রুমাইশা উত্তর করলো,
— আপনি যদি কিছু লুকিয়েই থাকেন তাহলে সেটা অবশ্যই আমার ভালোর জন্যই, সেই বিশ্বাস আমি রাখি আপনার প্রতি। আশা করি আপনি কখনোই আমার সেই বিশ্বাস ভাঙবেন না।
মেসেজ টি দেওয়ার পর ও মনের ভেতর খুত খুত করতে লাগলো ওর৷ কিন্তু সেটাকে বেশি পাত্তা দিলো না রুমাইশা। সাফওয়ান কে ও ভালোভাবেই চেনে৷ সাফওয়ান যদি মনে করে কিছু কথা রুমাইশার না জানাই ভালো, তবে সেটা অজানাই থাক। যেটাতে ভালো হবে সেটাই হোক ওর সাথে। খারাপ কিছু না হোক।
৩৫. রাত প্রায় নয়টা বাজে৷ আয়েশা রা এখোনো ফেরেননি। রুমাইশা একবার কল করেছে কিন্তু ধরেনি আয়েশা। বড়ো খালার ফোন নম্বর টাও ওর কাছে নেই৷ শামসুল ও চিন্তিত। আয়েশা রা না আসলে খেতে বসতেও পারছেন না তিনি৷ মনের ভেতর অশান্তি হচ্ছে, আবার ক্ষিদেও পেয়েছে। উনি নিজেও একবার কল করেছেন কিন্তু আয়েশা ধরেনি।
রুমাইশা খাবার গরম করছে রান্না ঘরে। তরকারি গুলো গরম করে একটা একটা করে ডাইনিং টেবিলে এনে রাখছে৷ কুকার থেকে গরম ভাত টা নামিয়ে নিয়ে এলো ডাইনিং এ৷ শামসুল পায়চারি করে বেড়াচ্ছেন তার রুমের সামনে দিয়ে৷
রুমাইশা বাবাকে এত চিন্তিত দেখে কয়েকবার বলল চিন্তা না করতে, সহিহ সালামতেই পৌছাবে আয়েশা রা। কিন্তু শামসুল পায়চারি করেই যাচ্ছেন৷ রুমাইশা একবার খেতেও ডাকলো বাবাকে, কিন্তু শামসুল এলেন না৷ রাস্তার দিকে বার বার উকি ঝুকি মেরে হাটতে লাগলেন এদিক ওদিক।
রুমাইশা বাবার অস্থিরতা টের পেয়ে আর জোর করলো না৷ খাবার গুলো ঠিকঠাক ভাবে ঢেকে রেখে নিজের রুমে চলে গেলো৷ থার্ড ইয়ারের বুক লিস্ট দিয়েছে, কোন কোন বই গুলো কিনতে হবে সেটা হিসাব করে টাকা নিতে হবে বাবার থেকে। বিছনায় বসে হোয়াটসঅ্যাপে বান্ধবী দের সাথে সেগুলো নিয়ে আলাপ করতে বসলো ও৷
কিছুক্ষণ পর গেইটের কাছে একটা অটো এসে থামলো। খলবল করতে করতে আয়েশা, জুলেখা আর জুবায়ের নামলো গাড়ি থেকে। হাতে তাদের এক গাদা শপিং ব্যাগ৷
তাদের আসার আওয়াজ শুনে শামসুল এগিয়ে গেলেন। এত এত শপিং ব্যাগ দেখে তিনি আয়েশা কে জিজ্ঞেস করলেন,
— কি কেনা কাটা করেছো এত? দেখে তো মনে হচ্ছে যশোরের সব দোকান পাট তোমরাই লুট করে নিয়ে এসেছো।
আয়েশা হেসে বললেন,
—হ্যা, তাই-ই করেছি, রুমে এসো কথা আছে তোমার সাথে।
তারপর জুলেখা আর জুবায়ের কে নিয়ে গেস্ট রুমের দিকে গেলেন আয়েশা।
মায়ের আসার শব্দ শুনলেও বের হলো না রুমাইশা৷ বই এর লিস্ট করতে ব্যাস্ত ও৷
আয়েশা জিনিস পত্র গুলো গেস্ট রুমে রেখে নিজের রুমে এসে বোরখা ছাড়লেন। তারপর হাত মুখ ধুয়ে শামসুল এর কাছে গিয়ে বসে ধীরে সুস্থে বললেন,
— রাফসানের বাবা, আমি তোমাকে না জানিয়েই একটা বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। আমাদের মেয়ে কে নিয়ে। আশা করি সেটাতে তোমার ও অমত হবে না৷
শামসুল ফোনে অফিসের মেসেজ চেক করছিলেন। আয়েশার কথা শুনে নড়েচড়ে বসলেন তিনি৷ ফোন টা পাশে রেখে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলেন,
— রুমি কে নিয়ে আবার কি সিদ্ধান্ত নিয়েছো? কিরকম সিদ্ধান্ত?
আয়েশা কিছুক্ষণ ইতিউতি করে গলা খাকারি দিলেন, তারপর বললেন,
— রুমির বিয়ের সিদ্ধান্ত৷ আমি জুবায়েরের সাথে রুমি কে বিয়ে দিতে চাচ্ছি৷ ও ছেলে ভালো, ইতালি থেকে পড়েছে, ওইখানে ওর জব ও হয়ে যাবে খুব শিগগিরই, আর জব হয়ে গেলে রুমি কে নিয়েই ও ইতালিতে চলে যাবে, সেখানেই থাকবে। সিটিজেনশিপের ও আবেদন করেছে ও।
শামসুল অবাক হলেন আয়েশার কথায়, পরক্ষণেই বললেন,
— এত কিছু ভেবেছো আর আমাকে একবার ও বলার প্রয়োজন মনে করলে না? তাছাড়া রুমির মতামত কি? ও কি রাজি এ বিয়েতে?
আয়েশা মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে বললেন,
— ওর রাজি কি আর অরাজি কি? আমরা যেখানে চাইবো বিয়ে ওর সেখানেই হবে৷ আর তোমাকে বলিনি, ভাবছিলাম সব কিছু গোছ গাছ করে তারপর তোমাকে বলবো।
শামসুল বিস্মিত হয়ে বললেন,
— সব কিছু গোছ গাছ করে বলতে? কি গোছ গাছ করে? আর রুমাইশার মত না নিয়ে তুমি ওকে বিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছো কিভাবে? এখন সে যুগ নেই যে তুমি জোর জবরদস্তি করে যার তার সাথে মেয়ে বিয়ে দিয়ে দিবা৷ রুমির মতামতের তো একটা মুল্য আছে, নাকি? তাছাড়া সাফওয়ান কে পছন্দ করে ও, সাফওয়ানের সাথে ওর বাগদান ও হয়ে গেছে।
আয়েশা ঝাঝিয়ে উঠেলেন, বললেন,
— যুগ নেই যুগ বানিয়ে নেবো। ও যদি ওইসব না করতো তাহলে আমি অবশ্যই ওর মতামত নিতাম। সাফওয়ান কে আমি অপছন্দ করিনা, কিন্তু পছন্দ ও করিনা৷ সেটার কারণ তুমি ভালোভাবেই জানো, আর ও যদি কিছুটা স্বাভাবিক হতো তাও মেনে নেওয়া যেতো। কিন্তু ও অস্বাভাবিক। মানুষের সামনে আমরা ওকে কিভাবে নিয়ে যাবো? মানুষ জানতে চাইবে না, দেখতে চাইবে না যে আমাদের জামাই কেমন, কি করে? তখন কি উত্তর দিবা তুমি? আমাদের জামাই জংলি? যাকে তাকে কামড়ে বেড়ায়, এই বলবা?
রুমির বিয়ে সাফওয়ানের সাথে মোটেই আমি দিতে রাজি না৷ আর গোছ গাছ বলতে, বিয়ের শপিং করে নিয়ে এসেছি আমরা। তুমি এখানে কোনো অমত করবানা। জুবায়ের যথেষ্ট ভালো ছেলে। ওর একটা ফিউচার আছে৷ রুমি কে ও ভালো রাখবে৷
আর এসব সাফিওয়ান টাফওয়ান ও বিয়ের কয়েক দিন পরই ভুলে যাবে জামাই এর কাছাকাছি থাকলে। তাই তুমি আর এসব নিয়ে ভেবো না। রুমি কে কিভাবে বিয়ে টা করাতে হয় তা আমি ভালো ভাবেই জানি। তুমি কোনো বাগড়া দিতে আইসো না।
শামসুল বসে রইলেন থম মেরে। আয়েশা ঠিক কথাই বলেছে। মেয়ের জামাইকে তো মানুষের সামনে নিতে হবে! তখন কি হবে? আর সাফওয়ান তো কখনোই কারো সামনে আসতে চাইবে না, মুখ খুলতে চাইবে না, তখন তো বিপদ আর ও বাড়বে৷ মানুষ তো ওকে অসামাজিক বলবে৷ আর তাছাড়া মেয়েটার ও লাইফ রিস্ক আছে। তার থেকে তো জুবায়ের ই ভালো। ভালো জায়গায় পড়াশোনা করেছে। ইতালি তে জব নিয়ে সেটেল হবে, মেয়েকেও নিয়ে যাবে; এটা তো অনেক ভালো বিষয়। এখানে অমত করার মতো কিছু নেই।
কিন্তু উনি তো মেয়েকে বলে ফেলেছেন যে সাফওয়ানের সাথে মেয়ের বিয়ে দিতে তার কোনো আপত্তি নেই৷ মেয়ে কি তাকে এখন বিশ্বাসঘাতক ভাববে? কিন্তু ভাবলেও তো কিছু করার নেই। সে বা তার স্ত্রী যা করছেন মেয়ের ভালোর জন্যই তো। হয়তো প্রথম প্রথম একটু কষ্ট হবে, তারপর ঠিকই মানিয়ে যাবে। আর একটা বাচ্চা হলে তো আর কথাই নেই।
কিন্তু তারপর ও মেয়ের মতামত না নিয়ে এতো বড়ো একটা সিদ্ধান্ত নিতে তার মন সায় দিচ্ছে না৷
শামসুলের ভাবুক চেহারার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে আয়েশা বললেন,
— অতো ভাবার কিছু নেই, সময় হলে সব ঠিক হয়ে যাবে৷ এখন যে সিদ্ধান্ত নিতে তুমি দোটানায় ভুগছো একদিন দেখবে সেই সিদ্ধান্তই তুমি সঠিক নিয়েছিলে। তুমি যদি এখন অনুমতি দাও, তাহলে আমি বিয়ের কাজ শুরু করবো। আজ রাতে তো আর সম্ভব না, কাল দুপুরের পর পর ই বিয়ে পড়িয়ে ফেলবো। তেমন কেউ জানবে না। শুধু আমরা আমরাই। বিয়ে টা বাড়িতেই হবে, আশেপাশের কেউ ও জানতে পারবে না৷ ভালোয় ভালোয় হয়ে গেলে, জুবায়ের রাফসান আসার পর পর ই রুমি কে নিয়ে চলে যাবে ওদের বাড়িতে৷ কোনো সমস্যা থাকবে না আর। আর, একবার বিয়ে হয়ে গেলে সাফওয়ান ও আর কোনো ঝামেলা করার সুযোগ পাবে না৷
শামসুল আর ভাবলেন না। যা হবে ভালোর জন্যই হবে। জুবায়ের কে ও তো উনি ভালো ভাবেই চিনেন। দেশের বাইরে যাওয়ার আগে খুব ভদ্র আর শান্ত শিষ্টই ছিলো, এখন ও তেমনই আছে নিশ্চই। রুমি খারাপ থাকবে না। তা ছাড়া মেয়ে বাইরের দেশে সেটেল হবে মানেই তো অনেক ভালো ব্যাপার৷ সেখানের পরিবেশ এখানের থেকে কত উন্নত! রুমি ভালোই থাকবে। আর কোনো কিছু না ভেবে শামসুল আয়েশার হ্যা তে হ্যা মেলালেন।
স্বামীর সম্মতিতে আয়েশা সন্তুষ্টির হাসি দিলেন। তারপর চলে গেলেন সোজা রুমাইশার রুমে। রুমাইশা বিছানায় আধা শোয়া অবস্থায় বসে গুগল থেকে একটা বই এর পিডিএফ নামাচ্ছিলো। আয়েশা ঘরে ঢুকে রুমাইশার কাছে গেলেন। রুমাইশা কিছু বুঝে ওঠার আগেই খপ করে ওর হাত থেকে ফোন টা নিয়ে নিলেন৷ রুমাইশা মায়ের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই আয়েশা বললেন,
— বাইরে আয়, সবাই বসে আছে বাইরে তোর জন্য।
রুমাইশা অপ্রস্তুত হয়ে বলল,
— হ্যা, যাচ্ছি, কিন্তু তুমি আমার ফোন নিয়ে নিলে কেন? আমি তো ফোন এমনিতেও রেখেই দিতাম। আর আমি একটা ফাইল ডাউনলোড করছি এখনো হয়নি। তুমি ফোন টা দাও, ওটা ডাউনলোড করে একটু চেক দিয়ে আমি আসছি এখনি।
আয়েশা তীর্যক কণ্ঠে বললেন,
—ফোন পাবি না। তোর ফোন আমার কাছেই থাকবে আগামি কিছুদিন। এখন বাইরে যা, সবাই অপেক্ষা করছে।
রুমাইশার মনে ভয় ঢুকে গেলো। মায়ের মনে কি চলছে সেটা বুঝতে চেষ্টা করলো, কম্পিত গলায় বলল,
— আমার ফোন তোমার কাছে কেন থাকবে? ফোনে কি সমস্যা?
আয়েশা এবার ধমক দিয়ে বললেন,
—এত বেশি কথা বলিস কেন তুই? তোকে বাইরে যেতে বলা হয়েছে ব্যাস, তুই বাইরে যাবি। এত প্রশ্ন করিস কেন? দ্রুত যা, তোর বাবা, খালা সবাই বসে আছে৷
রুমাইশার মাথার ভেতরে রেড সিগন্যাল দিলো। মা কোনো একটা গন্ডগোল পাকাতে চলেছে, কিন্তু সেটা ঠিক কি, সেটা বুঝতে গেলে ওর বাইরে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। সাফওয়ান কে ও তো কিছুই জানানোর সুযোগ নেই আর! ফোন তো মা নিয়েই নিলো।
মাএর দিকে কিছুক্ষণ অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বিছানা থেকে নামলো রুমাইশা। তারপর দরজা টেনে ডাইনিং এর দিকে এগোলো। আয়েশা এলেন পেছন পেছন৷
ডাইনিং এ সোফায় বসে আছে শামসুল, তার বিপরীতে বসে আছে জুলেখা আর জুবায়ের৷ জুবায়েরের মুখে মিটিমিটি হাসি। জুলেখার ও তাই। শুধু মাত্র শামসুল মুখ ভার করে আছেন। ওনার মুখের অভিব্যক্তি দেখে বোঝার উপায় নেই যে উনি আসলে কেমন মুডে আছেন৷ রুমাইশা এসে দাড়ালো বাবার পাশে৷
জুলেখা হাসিমুখে রুমাইশার হাত ধরে বললেন,
— আয় মা, আমার পাশে বস।
তারপর ওকে হাত ধরে নিজের পাশে নিয়ে বসালেন৷ রুমাইশা খালার পাশে বসে বাবার দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো একবার। শামসুলের চোখ পড়তেই তিনি চোখ ফিরিয়ে নিলেন। মেয়ে কে একরকম কথা দিয়ে আবার অন্য রকম করায় অপরাধবোধে ভুগছেন তিনি। বোনের সামনে কিভাবে গিয়ে দাড়াবেন সেটাও মাথার ভেতর ঘুরছে।
জুলেখার থেকে তিনি যে রুনিয়াকে বেশি বিশ্বাস করেন আর সেই বিশ্বাসের মাত্রা যে কতটা বেশি সেটা শুধু তিনি জানেন। কিন্তু জুলেখাও হয়তো তার মেয়েকে অযত্নে রাখবে না!
চিন্তায় কিলবিল করা মাথা টা ভারী হয়ে ক্রমশ নিচের দিকে ঝুকে গেলো যেন শামসুলের।
রুমাইশা কেমন যেন সাহস হারিয়ে ফেলছে, এরা আসলে কেন এইভাবে সাজিয়ে গুজিয়ে এইখানে বসেছে তার কোনো আগা মাথা বের করতে পারছে না ও৷ আয়েশা শামসুলের পাশে বসে শামসুল কে বার বার ইশারা দিচ্ছেন রুমি কে বিয়ের কথা টা বলতে কিন্তু শামসুল অসম্মতি জানালেন প্রত্যেকবার। শেষে আয়েশা ই কথা টা তুললেন,
গলা খাকারি দিয়ে তিনি বললেন,
— রুমি, আমরা তোর ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তোর বাবা, আমি, রাফসান সবাই মিলে। আর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেটা অবশ্যই তোর ভালোর জন্যই। কারন আমরা তোর পরিবার। আমরা কখনো তোর খারাপ চাই না। আর পরিবারই একমাত্র জায়গা যেখানের মানুষ গুলো তাদের প্রিয় মানুষ দের কে সবসময় সবচেয়ে ভালোটা দেওয়ার চেষ্টা করে৷
রুমাইশা মনোযোগ দিলো মায়ের কথায় আয়েশা কিছুক্ষণ থেমে আবার ও বললেন,
— তুই তোর জুলেখা খালা কে জন্মের পর থেকেই চিনিস। তোর খালা অনেক ভালো মনের মানুষ। আর তোর জুবায়ের ভাইয়া ও অনেক ভালো একটা ছেলে। সে বাইরে থেকে পড়াশোনা করেছে, ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্ট নিয়ে। সেখানে জব ও হয়ে যাবে কিছুদিন পর। সেখানেই সেটেল হবে। আর বিয়ের পর তোকেও নিয়ে যাবে৷
সে ছেলে হিসেবে খুবই উপযুক্ত সব দিক দিয়ে। তাই আমরা চাচ্ছিলাম জুবায়েরের সাথে তোর বিয়ে টা দিতে।
মায়ের কথায় যেন রুমাইশার হৃদস্পন্দন থেমে গেলো! বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে রইলো ও মায়ের দিকে। আয়েশা কথা বলেই যাচ্ছেন, কিন্তু তার একটি কথাও কর্ণগোচর হলো না রুমাইশার। ওর কানে শুধু একটাই কথা বাজতে লাগলো, ‘আমরা চাচ্ছিলাম জুবায়েরের সাথে তোর বিয়ে টা দিতে’
রুমাইশার মাথার ভেতর টা ঘুরে উঠলো। কান দিয়ে গরম ধোয়া বের হচ্ছে যেন। অবিন্যস্ত দৃষ্টিতে বাবার দিকে একবার তাকালো ও, কিন্তু শামসুল নিচের দিকেই তাকিয়ে আছেন, মেয়ের চোখে চোখ মেলানোর সাহস পাচ্ছেন না তিনি। রুমাইশার মনে হলো যেন ওর চারপাশের পৃথিবী টা ঘুরছে।
জুবায়ের! ওই লুইচ্চা জুবায়ের কে মা ওর সাথে গছিয়ে দিতে চাচ্ছে! মা ওর সাথে এইরকম করলো? আর বাবা? বাবা যে ওকে বলল সাফওয়ানের সাথে বিয়ে দিতে বাবার কোনো আপত্তি নেই! তাহলে এখন বাবা এইভাবে মাথা নিচু করে আছে কেন?
এসব কি তাহলে ওর দুর্বলতার সুযোগ নেওয়ার জন্য? বাবাকি ওর সাথে বিশ্বাসী হওয়ার অভিনয় করলো শুধু! বাবা এইরকম করতে পারলো?
আর রাফসান ভাইয়া! সেও এদের সাথে মিলে এইরকম একটা গা ঘিন ঘিন করা লুইচ্চার সাথে ওকে বিয়ে দিতে রাজি হলো! এরাই নাকি ওর আপন মানুষ! একবার জানার চেষ্টাও করলো না ওর মনের কথা টা! শুধু নিজেদের টাই ভাবলো! একটাবার ও সাফওয়ানের কথাটা এরা ভাবলো না! ও কিভাবে থাকবে সাফওয়ান কে ছাড়া! ও তো শেষ হয়ে যাবে একদম!
ও কিভাবে বাচবে কেউ কি ভেবেছে?
প্রচন্ড মনোকষ্টে চোখ থেকে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো রুমাইশার। ইচ্ছা করছে চিৎকার করে কাদতে কিন্তু ওর গলা থেকে আওয়াজ বের হচ্ছে না! নিজেকে এই জগতের সবচেয়ে অসহায় প্রাণী মনে হচ্ছে ওর। কান্না চোখে আর ও একবার অভিমানী দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকালো ও। কিন্তু শামসুল আগের মতোই মাথা নিচু করে বসে আছে।
রুমাইশার চোখে পানি দেখে জুলেখা হেসে বললেন,
— আরে পাগলি মেয়ে, এইভাবে কাদার কি আছে? তোকে কি সারাজীবনের জন্য নিয়ে যাবো নাকি? তুই তো তোর বাবার মেয়েই থাকবি। এখনো বিয়ে হয়ে পারলো না আগের থেকেই পাগলি কাদছে৷
আয়েশা ও তাল মেলালেন জুলেখার সাথে। নিজের মাকে এইভাবে হাসতে দেখে ও অসহায় চোখে তাকালো মায়ের দিকে।
মায়েরা নাকি সন্তানের মুখ দেখলেই সন্তানের মনের অবস্থা বুঝে যায়, সন্তানের দুঃখ কষ্ট বুঝে যায়, তাহলে তার মা বুঝছে না কেন? তার মা কি দেখিছে না তার চোখে ফুটে ওঠা অসহায়ত্বের পরিমাণ!
রুমাইশার গলা দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না, বুকের ভেতর কেমন চিনচিনে ব্যাথা মোচড় দিয়ে উঠছে থেকে থেকে৷ কি করবে ও! কাকে জানাবে! সাফওয়ান কে জানানোর তো আর কোনো সুযোগ নেই। তাহলে ও কি করবে এখন!
না, এই বিয়ে ও কিছুতেই হতে দেবে না৷ সাফওয়ান কে ছাড়া ও আর কাউকেই বিয়ে করবে না৷ তাতে যদি ওর প্রাণ টাও চলে যায়, তবে তাই যাক৷
দাত মুখ শক্ত হয়ে গেলো রুমাইশার। হাত দিয়ে চোখের পানি টা মুছে নিলো ও৷ জুলেখা পাশে বসে রুমাইশার উদ্দেশ্যে বললেন,
— বিয়ে তো কালকেই, তোর বিয়ের শাড়ি গয়না সব কেনা হয়ে গেছে৷ রাতের বেলা একবার দেখে নিস, পছন্দ অপছন্দের ও তো একটা ব্যাপার আছে, কোনো কিছু পছন্দ না হলে কালকেই জুবায়ের বদলে নিয়ে আসবে৷ আর যেগুলো গায়ে দিতে হবে ওগুলো তোর মা যেমন মাপে বলেছে তেমন মাপেই এনেছি সব৷ জুবায়ের নিজে পছন্দ করে কিনেছে সব। একবার ট্রাই করে দেখিস, হচ্ছে কিনা গায়ে।
জুবায়ের মায়ের পাশ থেকে একপ্রকার উকি দিয়েই দেখে যাচ্ছে রুমাইশা কে। ওই নরম দেহকে নিজের আলিঙ্গনে ধারণ করতে ওর আর তর সইছে না৷ লোলুপ দৃষ্টিতে রুমাইশাকে পরখ করছে ও পা থেকে মাথা পর্যন্ত। বিয়ে টা ওর এখন হলেই ভালো হয়।
রুমাইশা নিজের জায়গায় যেন জমে গেছে। ওর জীবনের সাথে এইরকম কিছু হবে! ও তা কখনোই মেনে নেবে না৷ কোনোদিন ও না। দরকার হলে পালাবে ও। কিন্তু কিভাবে পালাবে! কিভাবে? কোনো রাস্তা তো দেখছে না।
ব্লেড গুলো কোথায় আছে? বাবার টেবিলের ড্রয়ারে আছে কয়েকটা, কিন্তু কিভাবে নেবে ও? পালাতে না পারলে আত্ম*হত্যা ছাড়া ওর আর উপায় নেই। এই বিয়ে ও জীবনেও করবে না৷
ভাবনার এক পর্যায়ে জুলেখা হঠাৎ বলে উঠলেন,
— কাল যেহেতু তোদের বিয়ে, তোরা দুজন একটু কথা বল নিজেদের মধ্যে। তোরা তো একে অপরকে চিনিস অনেক আগে থেকেই, কিন্তু তোরা যেহেতু এখন স্বামী স্ত্রী হতে চলেছিস, তোদের তো সেইভাবে প্রস্তুত করতে হবে নিজেদের কে, তাই না? নিজেদের ভেতরে কথা বলে ঠিক ঠাক করেনে৷
আয়েশা ভড়কালেন, রুমাইশা যদি জুবায়ের কে বলে দেয় যে ও সাফওয়ানকে ভালোবাসে, বা সাফওয়ানের সাথে একসাথে থেকেছে ও রাতে! তাহলে কি হবে?
না , এটা হতে দেওয়া যাবে না। তাড়াতাড়ি করে তিনি জুলেখা কে বাধা দিয়ে বললেন,
— আরে আপা, কি দরকার! ওরা তো চেনেই একে অপরকে, আর একবার বিয়ে হয়ে গেলে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক এমনিতে ওরা নিজেরাই ঠিক করে নেবে, তার জন্য আগাম প্রস্তুতির দরকার হবে না তুমি ও নিয়ে কোনো চিন্তা করো না৷
কিন্তু জুলেখা মানলেন না আয়েশার কথা৷ তিনি রুমাইশা কে উদ্দ্যশ্যে করে বললেন,
— তুই জুবায়ের কে নিয়ে তোর রুমে যা, গিয়ে তোরা কথা বল। ভাই বোন থেকে হাজবেন্ড ওয়াইফ হতে গেলে একটু প্রস্তুতির তো দরকার ই হয়। তোরা গিয়ে কথা বল।
রুমাইশার পিঠে হাত দিয়ে ইশারা করলেন উঠে যেতে, আর জুবায়ের কেও বললেন। জুবায়ের যেন এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলো।
রুমাইশা মায়ের দিকে একবার তীর্যক চোখে তাকিয়ে উঠে চলে গেলো নিজের রুমে, জুবায়ের গেলো ওর পেছন পেছন। রুমে ঢুকে দরজা টা ভেজিয়ে দিলো জুবায়ের, আর তারপরেই পেছন থেকে খপ করে রুমাইশার হাত ধরে নিলো ও।
(আগামী কাল গল্প দিবোনা, পড়া বাকি আছে কিছু সেগুলো কমপ্লিট করতে হবে 🫤)