অফিডিয়ান | পর্ব – ৪৮

18 Min Read

সাফওয়ানের হঠাৎ করেই চোখ গেলো ওর গাড়ির দিকে। দূর থেকে ও গাড়ির ভেতরে বসা রুমাইশা কে ভীতসন্ত্রস্ত, হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখলো ওর দিকে৷
সাফওয়ানের এতক্ষনের ক্রুর হাসি মাখা মুখ টা নিমিষেই নিভে গেলো। দূর থেকে রুমাইশার ওই ওই মায়া মাখা, ভয়ে চুপসে যাওয়া মুখ টার দিকে তাকিয়ে রইলো ও৷

আর সেই মুহুর্তেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি রূপ নিলো ঝমঝম বৃষ্টি তে৷ রাস্তার সমস্ত রক্ত পানির স্রোতের সাথে বয়ে চলে যেতে লাগলো কোনো এক অজানার উদ্দেশ্যে।
সাফওয়ান কিছুক্ষন ঠাই দাঁড়িয়ে থেকে ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো গাড়ির কাছে। তারপর গাড়ির পেছনে গিয়ে ওর খুলে ছুড়ে দেওয়া পাঞ্জাবি, মাস্ক আর গগলস টা নিয়ে এসে পাঞ্জাবি টা নিংরে গাড়ির ড্রাইভিং সিটের দরজা খুলে গাড়ির পেছনের সিটে ছুড়ে দিলো।

আর এতক্ষন বৃষ্টির মধ্যে থাকার কারণে ঠান্ডা লেগে হাচি শুরু হলো সাফওয়ানের৷ তবুও ও বৃষ্টির মাঝে দাঁড়িয়ে রইলো গাড়ির দরজার কাছে৷ দাঁড়িয়ে রুমাইশাকে দেখতে থাকলো।
ভ্রু দুইটা কিঞ্চিৎ উচু করে টলমল চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে রুমাইশা৷ ঝমঝমে বৃষ্টি তে ভিজতে ভিজতে সাফওয়ান গাড়ির ভেতরের দিকদ কিছুটা ঝুকে রুমাইশার মুখ টা ভালো ভাবে দেখে নিয়ে জড়ানো গলায় বলল,
— ভয় পেয়ো না আমাকে। এটা ওদের প্রাপ্য ছিলো, তাই পেয়েছে। এখানে তোমার কোনো হাত নেই। ওরা আমার প্রিয়তমা স্ত্রী কে জড়িয়ে আমার সাথে ঝামেলা করতে চেয়েছিলো। তার উপযুক্ত শাস্তি ওরা পেয়েছে। এর সম্পুর্ন দায়ভার আমার৷ আর এই পৃথিবীতে যদি সবচেয়ে বেশি আমি কাউকে ভালোবেসে থাকি, তবে সেটা আমার মা আর তুমি! তোমাদের ব্যাপারে আমি কাউকে বা কোনোকিছুকে ছাড় দিবো না। আর এই পৃথিবীতে যদি তোমার সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য কেউ থেকে থাকে তাহলে সেটা আমি, তাই আমাকে ভয় পেয়ো না।

তখনি আবার হাচি শুরু হলো সাফওয়ানের। তাড়াতাড়ি করে গাড়ির ভেতরে উঠে দরজা লাগিয়ে দিলো ও। রুমাইশা এতক্ষন টলমল চোখে ওকেই দেখছিলো। ওর মনের ভেতরে এক মিশ্র অনুভুতি হাহাকার করে ছুটে চলেছে। সাফওয়ান যে এতটা নৃশংস হতে পারে সেটা ও ভাবতেও পারছে না। ওর চোখের টলমল করা পানি গুলো চোখের ধারণ ক্ষমতার বাইরে এসে ঝরে পড়লো গাল বেয়ে।

সাফওয়ান সিটে বসেনি। প্যান্ট টা ভিজে জবজবা হয়ে আছে। গাড়ির ভেতরেই ড্রাইভিং সিটের সাথে হাটু ঠেকিয়ে কায়দা করে ঝুকে দাঁড়িয়ে আছে ও৷ রুমাইশা কে কাদতে দেখে রুমাইশার মুখ পানে মোলায়েম দৃষ্টি ফেলে নিজের ভেজা হাত টা বাড়িয়ে বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা সে পানি টুকু মুছে দিলো সাফওয়ান৷

রুমাইশা আর ও কিছুক্ষন সাফওয়ানের দিকে আশাহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিজের কলেজ ব্যাগের সর্বশেষ কম্পার্টমেন্টের চেইন টা খুলে ওর একটা সুতির ওড়না বের করলো। সুবিধা অসুবিধার জন্য ব্যাগে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের সাথে একটা সুতির ওড়নাও রাখে ও, কখনো যদি কোনোভাবে কোথাও বোরখা খোলা লাগে তাহলে যেন ওড়না টা পরতে পারে৷

ওড়না টা বের করে সাফওয়ানের দিকে এগিয়ে দিয়ে কান্না জড়ানো গলায় বলল,
— প্যান্ট টা খুলে এটা জড়ান, নইলে আপনার ঠান্ডা লেগে যাবে৷

রুমাইশার এই সামান্য কথাতে সাফওয়ানের হৃদয় টা যেন তৃপ্ত হলো খুব৷ চোখে মুখে মুগ্ধতা নিয়ে ও তাকিয়ে রইলো রুমাইশার দিকে৷ ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা দেখা দিলো ওর৷ ও এত কিছু করেছে, সকাল বেলা ওর রিমু কে ও এত বকাবাজি করেছে, ওর ঠোট টা কেটে দিয়েছে, ওর সামনে এত গুলো মানুষ কে খুন করেছে সাফওয়ান, ওর রিমুর অভিমান ও হয়েছে ওর ওপর! তারপরও ওর রিমুর চিন্তা হচ্ছে ওর ঠান্ডা লাগা নিয়ে৷

ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি ফুটিয়ে রুমাইশার হাত থেকে কমলা জমিনের ওপর সবুজ রঙা ফুলের ছাপার ওড়না টা হাতে নিয়ে রুমাইশার দিকে ঝুকে ওর কপালে আলতো করে একটা চুমু খেলো৷
এরপর ওড়না টা নিজের কোমরে বেধে প্যান্ট খোলায় লেগে গেলো সাফওয়ান৷ রুমাইশা গাড়ির জানালার দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো।

প্যান্ট খোলা শেষে সেটা পেছনের সিটে ছুড়ে দিয়ে ড্রাইভিং সিটে এসে বসলো সাফওয়ান৷ ঝাকড়া চুল গুলো থেকে টুপ টুপ করে পানি পড়ছে৷ ওর সমস্ত শরীর ও ভেজা। থেকে থেকে হাচি হচ্ছে ওর৷

নাক টেনে গাড়ির স্টিয়ারিং এ হাত রেখে গাড়ি স্টার্ট দিতে গেলো ও। কিন্তু রুমাইশা ওর হাতের ওপর হাত রেখে ইশারায় থামতে বলল ওকে৷ চোখ দুইটা ওর এখনো টলমলে। আঙুল দিয়ে চোখের পানিটা মুছে নিয়ে সিটে বসেই ওর গায়ের কালো বোরখা টা খুলে ফেললো ও৷

সাফওয়ান এইসময়ে আবার ও হাচি দিলো। রুমাইশা বোরখা খুলে সাফওয়ানের মতো স্টাইল করে নিজের বোরখাটা পেছনের সিটে ছুড়ে মারলো৷ তা দেখে খুব মজা পেলো সাফওয়ান। ফিক করে হেসে দিলো ও। সাফওয়ান হঠাৎ হেসে ওঠায় রুমাইশা চমকে তাকালো। তারপর সাফওয়ানের হাসির কারণ টা বুঝতে পেরে নিজেও ওর কান্না চোখ নিয়ে হেসে উঠলো। ওদের ভেতর কার এতক্ষণের গুমোট আবহাওয়া যেন কেটে গেলো মুহুর্তেই।

সাফওয়ান আবার ও রুমাইশার চোখে জমে থাকা পানির রেশ টুকু মুছে দিলো ওর বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে। তারপর হাতের উল্টো পিঠ টা দিয়ে আলতো করে ছুয়ে দিলো রুমাইশার নরম চোয়াল টা৷ তারপর আবার একটা হাচি দিয়ে গাড়ির স্টিয়ারিং ধরতে গেলেই বাধা দিলো রুমাইশা।

সাফওয়ানের হাত খানা নিজের হাত দিয়ে স্টিয়ারিং থেকে সরিয়ে দিলো ও। তারপর হুট করেই নিজের সিট থেকে উঠে সাফওয়ানের কোলের ওপরে সাফওয়ানের দিকে ফিরে দুই পাশে পা দিয়ে বসলো ও৷ সাফওয়ান তব্দা খেয়ে দেখতে লাগলো রুমাইশার কার্যকলাপ। আর সেই মুহুর্তেই আবার ও হাচি দিলো ও৷ নাক লাল হয়ে চোখ দুইটা ছোট ছোট হয়ে গেলো সাফওয়ানের।

সাফওয়ানের সেই ঠান্ডায় লাল হয়ে যাওয়া নাকের ডগায় টুক করে একটা চুমু বসিয়ে দিলো রুমাইশা। আর তারপরই নিজের পরনের কটনের টি শার্ট টা খুলে ফেললো, আর তারপর সেটা হাতে নিয়ে সাফওয়ানের ভেজা চুল গুলো রগরে মুছে দিতে থাকলো ও৷

সাফওয়ান হা হয়ে তাকিয়ে রইলো রুমাইশার দিকে। গাড়ির ভেতরের মৃদু আলোয় ওর রিমু কে এখন অপ্সরার মতো দেখাচ্ছে৷
চুল গুলো মোছা শেষে সাফওয়ানের মাথা টা টেনে নিজের কাধের ওপর টেকিয়ে দিয়ে সাফওয়ানের পিঠ টা দুই হাতে মুছে দিলো রুমাইশা। সাফওয়ান পুতুলের মতো রুমাইশা ওকে যেদিকে নিচ্ছে সেদিকে সরতে লাগলো৷

সাফওয়ানের উর্ধাঙ্গের সমস্ত টুকু মুছে দিয়ে রুমাইশা আধা ভেজা টি শার্ট টাও আবার সাফওয়ানের স্টাইলে গাড়ির পেছনের সিটে ছুড়ে মারলো। আর তারপর সাফওয়ানের শরীরে সাথে লেপ্টে গিয়ে নিজের উষ্ণ শরীর টা দিয়ে সাফওয়ান কে জড়িয়ে ধরলো ও। ওম ওম ওয়ালা হাত দুইটা সাফওয়ানের শীতল পিঠ টার ওপর বুলিয়ে দিতে লাগলো রুমাইশা৷

ঠান্ডার মাঝে হঠাৎ এমন উষ্ণ আলিঙ্গলে কেপে উঠলো সাফওয়ান৷ নিজের শীতল শরীর টা রুমাইশার শরীরের ওমে ধীরে ধীরে উষ্ণ হতে শুরু করলো। আর তখনই রুমাইশা বলে উঠলো,
— চলুন এবার, ফিরে যাই আমরা। আমার আর কোনো অভিমান বাকি নেই।

সাফওয়ান চোখ দুইটা বন্ধ করে ঠোঁট কামড়ে হাসলো। আর তারপর রুমাইশার নগ্ন কাধে নিজের ঠোঁট টা ছুইয়ে দিয়ে গাড়ির স্টিয়ারিং ধরলো ও। এরপর গাড়িটা স্টার্ট করে চলল নিজের গন্তব্যে। যাওয়ার সময় রাস্তায় পড়ে থাকা লাশ গুলোকে গাড়ির তলায় পিষে দিয়ে গেলো।

৪৯. লুকাস আর ওর দলবল সমস্ত জেলা শহর টা চষে বেড়াচ্ছে। রাত গভীর হতে চলেছে তবুও তাদের থামার নাম নেই৷ একটা জঙ্গলও বাদ দিচ্ছে না, সমস্ত এলাকা তন্ন তন্ন করে খুজছে ওরা। এরই মাঝে লুকাস খবর পেয়েছে আর ও কয়েক টা দল এই দেশে নেমেছে সাফওয়ান কে খুজতে। যেই সাফওয়ান কে পাবে মিলিয়ন ডলার টা তার পকেটেই যাবে৷ বিশ্ব বাজারে যেন প্রতিযোগিতা চলছে সাফওয়ান কে নিয়ে৷

ওপর মহল সাফওয়ান কে নিয়ে আসলেই কি করবে তা ওরা জানে না। ওরা শুধু জানে সাফওয়ান কে ধরে ওদের হাতে তুলে দিতে পারলেই মোটা অংকের টাকা পাওয়া যাবে৷ তবে ওদের সবাইকেই বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। আর তাতেই লুকাস বুঝেছে সাফওয়ান সাধারণ কেউ নয়৷ অসাধারণের থেকেও হয়তো এক কাঠি ওপরে। আর এত স্বল্প লোক নিয়ে কাজ করাও ওর পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তাই নিজের দেশ থেকে আর ও লোকবল আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ও৷

দিয়েগো লোকটা বসের এমন চিন্তিত মুখ দেখে বুঝেছে কিছু একটা গন্ডগোল হচ্ছে৷ কিন্তু গিয়ে জিজ্ঞেস করতে সাহস পাচ্ছে না।

থমথমে মুখে যশোর শহরের প্রতিটা অলিগলি তে সাফওয়ান নামক সেই সর্বজন আকাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তি টাকে কিভাবে খুজবে আর তার ভেতরে এমন কি আছে যার জন্য সবাই হন্যে হয়ে তাকে খুজছে সেটাই বসে বসে ভাবছে ও৷
সাফওয়ানের একটা ফটোগ্রাফ আছে ওর কাছে। কিন্তু তাতে সাফওয়ানের মুখ ঢাকা, চোখ ও ঢাকা। দিয়েগোর মাথায় আসলো না, যে যার চেহারা দেখা যাচ্ছে না তাকে ওরা কিভাবে খুজবে! হতাশ হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো ও৷

৫০. মাঝরাতের পর হাড় কাপানো জ্বর এলো রুমাইশার৷ চিলেকোঠার রুমে বিছানায় শুয়ে জ্বরের ঘোরে মুখ থেকে অস্ফুট শব্দ করতে থাকলো ও৷
সাফওয়ান ওর পাশেই ঘুমিয়ে ছিলো। ঘুমের ঘোরে পাশ ফিরে রুমাইশাকে জড়িয়ে নিলো ও৷ কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই রুমাইশার শরীরের অস্বাভাবিক উষ্ণতায় ঘুম ভেঙে গেলো ওর৷ হকচকিয়ে উঠে বসলো সাফওয়ান বিছানায়৷

এরপর নিজের হাতের উল্টোপিঠ টা দিয়ে রুমাইশার শরীরের তাপমাত্রা টা আরও একবার পরখ করে নিলো। জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে ওর রিমুর৷ ঘুমের ঘোরেই ককিয়ে উঠছে ও। অস্ফুটস্বরে কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে যেন৷

সাফওয়ানের ঘুম ছুটে গেলো। তাড়াতাড়ি করে বিছানা থেকে নেমে একটা রুমাল ভিজিয়ে এনে রুমাইশার কপালে রাখলো ও৷ কিন্তু রুমাইশার কপালের উষ্ণতার কাছে হার মেনে কয়েক মিনিটের ভেতরেই ভেজানো রুমাল টা পানি শূন্য হয়ে গেলো।

রুমাইশার শরীরের তাপমাত্রা প্রশমিত হওয়ার কোনো লক্ষন দেখলো না সাফওয়ান৷ কপালে চিন্তার ভাজ পড়লো ওর। এত রাতে মাকে ও জাগিয়ে তুলতে ইচ্ছা করছে না।

কিছুক্ষণ ভেবে রুমাইশার কপালে রাখা রুমাল টা আর ও একবার ভিজিয়ে এনে আবার রিমুর কপালের ওপর রাখলো সাফওয়ান৷ তারপর ফোন টা হাতে নিয়ে ইন্টারনেটে কল লাগালো সিঙ্গাপুরে৷

কয়েক বার রিং হতেই কল রিসিভ করে ওপাশ থেকে কেউ একজন খুবই এক্সাইটেড হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— সাফওয়ান, ব্রো! হোয়াটস আপ! হাউ ইউ ডুইন? লং টাইম নো সি!

সাফওয়ান ফোস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
— আ’ল টক অ্যাবাউট দ্যাট ল্যেইটার, জোনাস। ন্যাও টেল মি হোয়াট শ্যুড আই ড্যু ইফ সামওয়্যান হ্যাজ এ সেভার ফ্যিবার।

জোনাস লোকটা অনেক টা অবাকের সুরেই বলল,
— ওহো হো! সাফওয়ান আহমেড ডু কেয়ার ফর সামওয়ান! হু ইজ দিস? অ্যা ল্যাড অর অ্যা ল্যেইডি?

সাফওয়ান নিজের কপাল টা বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে চুলকে বলল,
— অ্যাম নট গে জোনাস, অফকোর্স শি’জ অ্যা ল্যেইডি!

জোনাস লোকটা উচ্চস্বরে হেসে বলে উঠলো,
— আই উইস ইয়্যু ওয়ার গে! বাট হু ইজ দিস লাকি ল্যেইডি? ইয়োর সুগার বেবি?

সাফওয়ানের এবার খুব বিরক্ত লাগলো। জোনাস টা বরাবর ই বেশি বকে। শুধু মাত্র ভালো বন্ধু আর ডাক্তার হওয়ার কারণে জোনাসের সাথে সখ্যতা বজায় রেখেছে ও। কিন্তু অসভ্য টা যা শুরু করেছে!
সাফওয়ান মুখ দিয়ে চ’ জাতীয় শব্দ উচ্চারণ করে বিরক্তির সুরে বলে উঠলো,
— শি’জ মাই ওয়াইফ, ন্যাও স্টপ টকিং ননসেন্স অ্যান্ড টেল মি হোয়াট শ্যুড আই ডু! শি’জ বার্নিং!

জোনাস এবার গুরুত্ব দিলো। বলল,
— টেইক হার ট্যু দ্যা ব্যাথরুম, এন্ড গিভ হার অ্যা কোল্ড শাওয়ার৷ হার বডি টেম্পারেচার উইল ব্যি নরমাল দেন। অ্যান্ড ইফ ইট রাইজেস এগেন, দেন আ’ম প্রেসক্রাইবিং সাম মেডিসিন, গিভ হার দ্যাট টাইমলি। অ্যান্ড, টেইক সাম গ্যুড কেয়ার অফ হার।

এরপর জোনাস কিছু মেডিসিনের কথা বললে সাফওয়ান সেগুলো লিখে নিলো৷ আর তারপর জোনাসের সাথে অল্প একটু কথা বলেই ফোন টা রেখে দিয়ে ও গেলো বিছানায়, জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বকা রুমাইশার কাছে৷

রুমাইশা বিড়বিড় করছে। রুমাইশার যে ভয় পেয়ে জ্বর এসেছে সেটা স্পষ্ট বুঝলো সাফওয়ান। বিছানার কাছ থেকে এসে কাবার্ড থেকে রুমাইশার একটা ট্রাউজার আর টি শার্ট নিলো ও, এরপর নিজের জন্যও একটা ট্রাউজার নিয়ে নিলো। তারপর একটা তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে রেখে আসলো।

এরপর বিছানার কাছে গিয়ে রুমাইশা কে বিছানা থেকে উঠিয়ে বাচ্চাদের মতো করে কোলে নিয়ে ওকে বুকের ওপর রাখলো সাফওয়ান৷ রুমাইশার কোনো হুস নেই। সাফওয়ানের গায়ের ওপর এলিয়ে পড়লো ওর উষ্ণ শরীর টা৷

রুমাইশার মাথা টা আলতো করে নিজের কাধের ওপর রাখলো সাফওয়ান, যেন ওর মাথাটা এদিক ওদিক ঝুকে গিয়ে ও ব্যাথা না পায়৷ তারপর হেটে হেটে সোজা চলে গেলো ওয়াশরুমে৷

ঝর্ণার নিচে নিয়ে গিয়ে রুমাইশা কে কোল থেকে নামিয়ে ওর পা দুইটা মেঝেতে ঠেকিয়ে মাথা টা নিজের বুকের সাথে লাগিয়ে, এক হাত দিয়ে ওর কোমর টা পেচিয়ে ধরে, অন্য হাত দিয়ে ওর মাথা টা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে দাড়ালো সাফওয়ান৷ তারপর মাথার ওপরের শাওয়ার ছেড়ে দিলো।

উষ্ণ শরীরে ঠান্ডা পানির আকস্মিক স্পর্শে শরীর টা কেপে উঠলো রুমাইশার। জ্বরের ঘোরে বেহুস হয়ে সামনে থাকা মানুষ টার বুকে গা এলিয়ে দিয়ে ঝর্ণার পানিতে নিজের উষ্ণতা গুলোকে ঝেড়ে ফেলতে লাগলো ও৷
আর রুমাইশার সাথে সাথে সাফওয়ান ও ভিজতে থাকলো বৃষ্টির স্পর্শে শীতল হয়ে যাওয়া পানির আলিঙ্গনে।

রুমাইশার সমস্ত শরীরে পুরোপুরিভাবে পানি পৌছানোর পর রুমাইশার শরীর টা তোয়ালে দিয়ে ভালোভাবে মুছে ওকে ট্রাউজার আর টি শার্ট পরিয়ে দিলো সাফওয়ান। তারপর নিজের ভেজা কাপড় চেঞ্জ না করেই রিমুকে নিয়ে রুমের ভেতর এসে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে গায়ে কাথা টেনে দিলো ওর গায়ের ওপর। তারপর আবার ওয়াশরুমে গিয়ে নিজের ভেজা কাপড় বদলে রুমে আসলো সাফওয়ান৷

সেই রাত টা আর ঘুমালো না ও৷ সারারাত রুমাইশার মাথার কাছে বসে চুলে হাত বুলিয়ে, বিলি কেটে দিলো। রুমাইশার দেহের তাপমাত্রা কমে এলো ধীরে ধীরে৷ ওর অস্ফুটস্বরে প্রলাপ বকাও থেমে গেলো এক সময়৷ বাকি রাত টা সাফওয়ানের উরু জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে রইলো ও৷

৫১. ভোরের দিকে হালকা চোখ লেগে এলো সাফওয়ানের৷ কিন্তু সেটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না৷ বিছানার পাশের সাইড টেবিলে রাখা ফোন টা ভাইব্রেশনে কেপে উঠে অদ্ভুত এক শব্দ করতে লাগলো। আর তাতেই তন্দ্রা ছুটে গেলো সাফওয়ানের।

ঘুম ঘুম চোখে সাইড টেবিল হাতড়ে ফোন টা হাতে নিয়ে রিসিভ করে কানে ধরলো সাফওয়ান৷ আর তখনি ওপাশ থেকে রাফসানের উত্তেজিত কন্ঠ ভেসে এলো।
— সাফওয়ান ভাই, কোথায় তুমি? রুমি কোথায়?

রাফসানের কল করার কারণ টা সাথে সাথেই বুঝে গেলো সাফওয়ান৷ তারপরও উত্তর দিলো,
— বাড়িতেই আছি, রিমু ঘুমাচ্ছে আমার পাশে। কেন? কি হয়েছে?

রাফসান আবার আগের মতো করেই বলল,
— লুকাস দলবল নিয়ে যশোরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, সে খবর পেয়েছো? আরও কয়েক টা দল নাকি কাল রাতে দেশে ঢুকেছে তোমাকে খুজতে! ওরা তো বলতে গেলে তোমার বাড়ির ওপর চলে এসেছে ভাইয়া! এখন কি করার?

সাফওয়ান বালিশে হেলান দেওয়া থেকে সোজা হয়ে বসলো। তারপর বলল,
— হ্যা, জানি, কাল রাতেই খবর পেয়েছি আমি, ওরা আসার সাথে সাথেই।

রাফসান উদ্বেগের সুরে বলল,
— গতকাল রুমি কে এ বাড়িতে দিয়ে যেতে চেয়েছিলে, কিন্তু আসোনি। এখন তুমি বের হলে ওরা যদি কোনোভাবে বুঝতে পারে? আর যদি রুমির দিকে হাত বাড়ায় তাহলে কি হবে? ওরা এখন আশেপাশেই আছে৷ উত্তরের জঙ্গল টা যেহেতু তোমার বাড়ির ই পাশে সেহেতু ওরা ওইটা খুব বেশি গুরুত্ব দিয়ে খুজবে না, কারণ ওদের কাছে মনে হবে তুমি নিজের বাড়ির কাছে কখনোই ঘাটি গাড়বেনা। কিন্তু তুমি কোনো ব্যাবস্থা নেওয়ার আগেই যদি ওরা যদি তোমার বাড়িতে হানা দেয়! আর রুমি কে পেয়ে যায়! আর রুমি কে পেলে ওরা রুমির সাথে কি কি করবে সে সম্পর্কে তোমারই সবচেয়ে বেশি ধারণা আছে৷

সাফওয়ান একবার রুমাইশার দিকে তাকালো। তারপর বিছানা ছেড়ে উঠে রুমের দরজা খুলে বাইরে চলে এলো। তারপর বলল,
— হ্যা, ওকে দিয়ে আসতে চেয়েছিলাম, কিন্তু কিছু ঝামেলার কারণে হয়ে ওঠেনি। আর রুমির রাত থেকে জ্বর৷ এখন যদিও উত্তাপ কিছু টা কম, কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ না। ওকে এই অবস্থায় আমি কোথায় নিতে চাচ্ছি না।
যদি দেখি ও আরও খানিক টা সুস্থ হয়েছে, তবে তোকে জানাবো। তুই এসে নিয়ে যাস ওকে৷ আমি এখানেই থাকবো। রিমুর ভিসা আসতে এখনো তিন দিন। ওর ভিসা এলেই আমি তোকে ইনফর্ম করবো। এর মাঝে আমাদের আর খুব বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কথা হবে না৷ রিমুর সাথে ও না৷ বিকালে তোকে ফোন দিবো, তখন আসিস। আপাতত আমি রিমু কে নিয়ে ল্যাব এ যাচ্ছি৷ সেখানেই থাকবো।

রাফসান সাফওয়ানের কথায় সম্মতি জানিয়ে কল কেটে দিলো। আর সাফওয়ান তখনি ওর আর রুমাইশার কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র আর জামা কাপড় নিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নিলো। তারপর ঘুমন্ত, জ্বর তপ্ত রুমাইশা কে কোলে তুলে নিজের সাথে বেধে নিয়ে,দুই হাতে দুই টা ব্যাগ নিয়ে হেটে হেটে চলল জঙ্গলের দিকে।

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।