দরজা খুলতেই সারা শরীর কালো পোশাকে আবৃত কেউ একজন ঝাপিয়ে পড়লো ওর বুকে৷ থতমত খেয়ে গেলো সাফওয়ান, টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে নিলো, তাড়াতাড়ি দরজার হাতল ধরে নিজেকে পড়ে যাওয়া থেকে বাচালো ও।
কিন্তু মুহুর্তেই ওর ওপর ঝাপিয়ে পড়া মানুষ টার স্পর্শ চিনতে পারলো সাফওয়ান। সাথে সাথেই দরজা টা লক করে দিয়ে সেই মানুষ টাকে বাচ্চা দের মতো করে কোলে তুলে নিলো ও। তারপর সর্বশক্তি দিয়ে নিজের বুকের সাথে তাকে মিশিয়ে নিয়ে তার গলায় মুখ ডুবালো সাফওয়ান৷ ওর মুখ থেকে শুধু অস্ফুটস্বরে বেরোতে লাগলো,
— রিমু, আমার রিমু! আমার প্রাণের রিমু!
দুই পা দিয়ে সাফওয়ানের কোমর টা আকড়ে ধরে দুই হাতে সাফওয়ানের কাধের ওপর মুখ রেখে সমানে ফুপিয়ে কেদে চলল রুমাইশা৷ কাদতে কাদতেই ও বলে উঠলো,
— আমাকে ক্ষমা করে দিবেন, আপনাকে ভুল বুঝেছি আমি! আমি আর কখনোই আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। হাজার ভুল বোঝাবুঝি, রাগারাগি, মারামারি, কাটাকাটি যা-ই হয়ে যাক না কেন আপনাকে আর কখনোই চোখের আড়াল হতে দেবো না আমি! আ’ম সর্যি! এমন টা আর কখনোই হবে না৷ কেউ আর আপনাকে আমার থেকে এইভাবে কেড়ে নিতে পারবে না!
সাফওয়ানের হৃদয় টা যেন জুড়িয়ে গেলো রুমাইশাকে নিজের এত কাছে পেয়ে৷ নিজের দুর্বল শরীর টা নিয়েই কতক্ষণ সাফওয়ান ওর রিমু কে ওভাবেই কোলে নিয়ে জড়িয়ে ধরে ঘরময় হাটাহাটি করলো তার হিসাব নেই৷ অনেক অনেক ক্ষণ পর রিমু কে ও নিজের কোল থেকে নামিয়ে স্ট্রেচারে বসিয়ে দিলো৷ আর এরপর রুমাইশাকে আবৃত করে রাখা কালো পোশাক টা অনাবৃত করে রুমাইশার চোখ মুখ থেকে সমস্ত পর্দা সরিয়ে দিলো ও৷
প্রাণ ভরে দেখতে থাকলো ও ওর রিমু কে, ওই জ্বলজ্বলে চোখদ্বয়, ওই তীক্ষ্ণ ভ্রু জোড়া, ফুলে থাকা খয়েরী আর কালোর মিশেলের ঠোঁট জোড়া, গুলুমুলু গাল ফুইটার জায়গায় তীক্ষ্ণ চোয়াল, সব কিছু।
কিন্তু তখনি রুমাইশার চুলের দিকে নজর গেলো সাফওয়ানের। ব্যাথিত দৃষ্টিতে ও রুমাইশার দিকে ভ্রু তুলে তাকিয়ে রুমাইশার ঘাড়ের কাছে পড়া চুল গুলো নিজের ডান হাত দ্বারা স্পর্শ করে ও বলে উঠলো,
— তোর অত লম্বা চুল কই গেলো! আমার সাধের চুল গুলো কই রিমু?
তারপর রিমুর উত্তরের অপেক্ষা না করেই ওর চোয়াল দ্বয় নিজের বড়বড় থাবার ভেতরে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— আর চোখ মুখের এ কি হাল হয়েছে? এত শুকিয়ে গেছিস কিভাবে!? চোয়ালের মাংস কোথায় গেলো, এখন আমি কিভাবে চোয়াল দুটো ধরে টানবো?
রুমাইশা কান্নার চোটে কোনো কথা বলতে পারছে না, হিচকি উঠে গেছে ওর৷ দুই চোখ ভরে শুধু সাফওয়ান কে দেখছে ও। সাফওয়ানের ওই কঙ্কালসার শরীর টার দিকে তাকানো যাচ্ছে না৷ হাড় গুলো যেন চামড়া ভেদ করে বেরিয়ে আসতে চাইছে। ওই বিশাল শরীর টা, যা রুমাইশা নিজের দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে নেওয়ার সময় অনেক চেষ্টা করেও সাফওয়ানের পিঠের মধ্য ভাগের আশে পাশেও পৌছাতে পারতো না, সে শরীর টা যেন এখন রুমাইশা জড়িয়ে নেওয়ার পর ও খালি জায়গা রেখে দেবে।
রুমাইশা হিচকি তুলতে তুলতেই কোনোরকমে সাফওয়ান কে বলল,
— আপনি একটু আমার কাছে আসুন!
রুমাইশার বলতে দেরি কিন্তু সাফওয়ানের ওর কাছে আসতে দেরি হলো না। ঝড়ের গতিতে ও রুমাইশাকে স্ট্রেচারের বালিশের ওপর শুইয়ে দিয়ে নিজেও স্ট্রেচারের ওপরে উঠে রুমাইশার বুকের ওপর মাথা রেখে দুই হাতে ওর কোমর টা জড়িয়ে নিলো৷
রুমাইশা সাফওয়ান কে দুহাতে আগলে গিয়ে নিজের সাথে শক্ত করে চেপে ধরলো। নিজের মাথা টা বালিশের ওপর থেকে উচু করে ওর বুকের ওপর থাকা সাফওয়ানের চুলের ওপর দিয়ে ওর মাথায় চুমু খেলো৷ সাফওয়ান আর ও জোরে জড়িয়ে ধরলো ওকে৷ এতগুলো দিন পর ওর রিমু কে কাছে পেয়ে ওর চোখ দুইটা আর যেন কোনো বাধা মানতে চাইলো না। নিঃশব্দে কেদে চলল ও৷ চোখ থেকে পানির নহর বয়ে যাচ্ছে ওর৷
রুমাইশার বুকের ভেতর মুখ লুকিয়েই সাফওয়ান অভিমানের সুরে ওকে জিজ্ঞেস করলো,
— কোথায় গেছিলি তুই সেদিন আমাকে ফেলে! তোকে কত খুজেছি আমি, রাত দিন, চব্বিশ টা ঘন্টা তোকে খুজেছি আমি, একটা জায়গাও বাদ দেইনি! যত জায়গা সম্ভব সবখানে খুজেছি, কিন্তু তোকে কোথাও খুজে পায়নি আমি, কোথাও না! হ্যা, আমার ভুল ছিলো যে আমি তোকে কিছুই জানায়নি, আমি চাইনি তুই এসব নিয়ে আমাদের জন্য চিন্তা করে তোর মাথায় চাপ দিস, মন খারাপ করে থাকিস! তাই বরাবরই সমস্ত ডিস্টার্বিং থিংস থেকে তোকে দূরে রাখতে চেয়েছি আমি! তাই বলে তুই আমাকে এইভাবে ছেড়ে চলে যাবি! তোর কি একবার ও মনে হলো না, যে সেই মানুষ টা কিভাবে থাকবে যে তোকে ছাড়া এক মুঠো ভাত খায় না, একটা ফোটা ঘুমাতে পারে না! এমন টা কিভাবে করতে পারলি তুই! এত পাষাণ তুই কিভাবে হইলি রিমু!
রুমাইশা ডুকরে কেদে উঠলো আবার, সাফওয়ানের চুলের ওপর আবার একটা চুমু বসিয়ে দিয়ে সাফওয়ানের ট্রিম করা, খোচাখোচা দাড়ি ওয়ালা চোয়ালের ওপর হাত বুলাতে বুলাতে ও বলল,
— ক্ষমা করে দিন আমাকে, এমন টা হবে না আর কখনো! আপনাকে ছেড়ে আর কখনোই, কোথাও যাবো না আমি! কসম করছি আপনাকে! আপনাকে বাকি টা জীবন নিজের সাথে বেধে রাখবো আমি!
সাফওয়ান রুমাইশার বুক থেকে মাথা ওঠালো, এরপর রুমাইশার সমস্ত মুখে চুমু খেয়ে খেয়ে অস্থির করে ফেললো ওকে। কিন্তু এরপর রুমাইশার ঠোটে ঠোঁট ছোয়াতে গেলে রুমাইশা কান্না জড়ানো গলাতেই বলে উঠলো,
— ইশ, দাঁত ব্রাশ করেননি কতকাল?
সাফওয়ান বেকুব বনে গিয়ে গোমড়া মুখে বলল,
— পাঁচ দিন!
রুমাইশা সাফওয়ানের মুখ খানা নিজের ডান হাত টা দিয়ে নিজের দিক থেকে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে আগের মতো করেই বলে উঠলো,
— ছি, ছি! সরুন, আপনাকে আমি চুমু খাবো না৷
সাফওয়ানের মুখটা যেভাবে রিমু সরিয়ে দিয়েছিলো ঠিক সেই অ্যাঙ্গেলেই সাথে সাথেই সাফওয়ান আবার নিজের মুখ খানা রুমাইশার দিকে ঘুরিয়ে বলল,
— আমি দাঁত ব্রাশ করিনি বলে তুই আমাকে চুমু খাবিনা! এই তোর স্বামী ভক্তি?
রুমাইশা কান্না বাদ দিয়ে তেতে উঠে বলল,
— মোটেও আমার স্বামীভক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন না, আপনার জন্য আমি বাংলাদেশ থেকে আম…….
নিজের কথা টা শেষ করতে পারলো না রুমাইশা। তার আগেই সাফওয়ান ওর মুখ বন্ধ করে দিলো।
আর তারপর এতদিনের বিচ্ছেদের কারণে তাদের ভাটা পড়া সম্পর্ক টা ঠিক করে নিয়ে, সমস্ত ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে রুমাইশাকে আদরে আদরে ভরিয়ে দিলো সাফওয়ান৷
মরুভূমির বুকে হেটে চলা ক্লান্ত, তৃষ্ণার্ত পথিক যেভাবে হঠাৎ পাওয়া ঠান্ডা, শীতল পানি আকণ্ঠ ভরে পান করে ঠিক সেভাবেই রুমাইশার থেকে ওর সমস্ত মিষ্টত্ব টুকু শুষে নিলো সাফওয়ান।
৬৮. রাতের প্রায় দুইটা। সাফওয়ানের নগ্ন বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে রুমাইশা। আর ডান হাত টা ভাজ করে নিজের মাথার নিচে দিয়ে বাম হাতে রুমাইশা কে জড়িয়ে শুয়ে আছে সাফওয়ান৷ এতক্ষণ ধরে অনেক অনেক গল্প করেছে ওরা৷ দুজনে মিলে সেই থেকে হাসাহাসি, খুনশুটি, হাতাহাতি করে রুম টাকে মাতিয়ে ফেলেছে। পিলো ফাইট করে বালিশ গুলো সব ছিড়ে ছুটে ফেলেছে, বালিশের ভেতরে থাকা পালক গুলো ঘর ময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে৷ বিছানার চাদর টা অবহেলায় পড়ে আছে মেঝের এককোণায়। স্ট্রেচার টে নিজের জায়গা থেকে সরে গেছে প্রায় হাফ ফিট৷ ফকফকা রুম টা এখন যেন পাগল খানায় পরিণত হয়েছে।
সেই থেকে ওরা ওদের বিচ্ছেদের সময় টাতে কি কি করেছে সব একে একে শেয়ার করেছে একে অপরের সাথে৷ রুমাইশা সেদিন পালিয়ে কোথায় কোথায় গিয়েছে, সাফওয়ান ওকে কিভাবে খুজেছে, রুমাইশা কিভাবে লুকাসের ব্যাপারে জেনে সাফওয়ান কে খবর দিতে এসেছিলো, সাফওয়ান কে লুকাস কিভাবে কিভাবে এখানে নিয়ে এলো, ওর সাথে কি করলো, কিভাবে সাফওয়ান জোনাসের সাথে যোগাযোগ করলো!
এরপর জোনাস কিভাবে রুমাইসার সাথে যোগাযোগ করে সাফওয়ান এর ব্যাপারে টু দ্যা পয়েন্টে সব খবর জানালো, রিমু কে, এতদিন ধরে জোনাসের পরামর্শ অনুযায়ী কিভাবে রিমু হারবার্টের হাত থেকে সাফওয়ান কে ছাড়ানোর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করলো, ফ্লুইডের প্রভাবে ওর শরীরের সমস্ত হিডেন ক্যারেক্টারিস্টিক্স গুলো ও কিভাবে আস্তে আস্তে আবিষ্কার করলো, কিভাবে নিজেকে এতদিন ট্রেইন করলো, চুল গুলো কেন কেটে ফেললো, একে একে সবই বিস্তারিত বলল রুমাইশা সাফওয়ান কে, আর সাফওয়ান বলল রুমাইশা কে৷
অদ্ভুত ভাবে সাফওয়ানের শরীর টা অনেক খানি ঠিক হয়ে গেছে এই অল্প সময়ের ভেতরেই৷ ওর স্বাস্থ্য অনেক অনেক খানি ভালো দেখাচ্ছে আগের থেকে। বুকের পাজরের সেই হাড় লিকলিকে অবস্থা টা অনেকাংশে ঢেকে গেছে। মুখের সেই বেরিয়ে যাওয়া চোয়ালের হাড় গুলোও এখন মাংসে ঢেকে গিয়ে অসম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছে ওকে৷ শরীরের সমস্ত পেশী গুলো আবার আগের মতো ফুলতে শুরু করেছে। এত অল্প সময়ের ভেতর এত বিশাল পরিবর্তন দেখে দুজনেই অবাক হয়েছে ওরা৷
রুমাইশা এখন সাফওয়ান কে বুড়ি দাদির গল্প বলছে। বুড়ি কিভাবে ওর ঘাড়ে জ্বীন লেগেছে ভেবে রাত দিন চব্বিশ ঘন্টা হায় হায় করতো আর ওকে ঝাড়ফুক করতো। বলত
‘ সেয়ানা মেয়ে, বনে বাদাড়ে ঘুইরে বেড়াস, লম্বা চুল দেইখে কোন লুইচ্চা জ্বীন বেডায় পেছন লাগেছে, এইবার রাতের বেলা একা পেইয়ে বাচ্চা দিয়ে যাবে’
ইভেন জ্বীন কিভাবে ওর সাথে কি কি করবে সব সবিস্তারে বর্ণনা করতেন তিনি। রুমাইশা শেষমেশ অতিষ্ঠ হয়ে একদিন জিজ্ঞেস করেছিলো,
‘ দাদি, তোমার সাথেও কি জ্বীন বেডাউ রাতের বেলা এই সমস্ত করতে আসে? তুমি এত গভীর বিষয় কিভাবে জানলে?’
তখন বুড়ি বলেছিলো, জ্বীনে নাকি তার কোন বান্ধবীরে ভর করছিলো, সেই বান্ধবীর সাথে জ্বীন কি কি করে সেসব নাকি দাদি সহ তার আর ও কিছু বান্ধবী লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে যেত, জানালার ফাক দিয়ে। ইভেন জ্বীনের ইয়ে টাও নাকি দাদি দেখেছে!
সব শুনে রুমাইশা বলে,
— ছি ছি দাদি, তুমি তো লোক ভালো না! লোকের ঘরে উকি দিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে এসব দেখেছো!”
বুড়ি দাদির গল্প শুনে সাফওয়ান হেসে কুটিকুটি হলো। রুমাইশা ও খিলখিল করে হাসলো ওর সাথে৷ দুজনে শোয়া থেকে উঠে বসলো। হাসাহাসির এক পর্যায়ে রুমাইশা হঠাৎ বলে উঠলো,
— আপনার রোদ্দুর রায়ের গাওয়া রবি দাদুর গানের কথা মনে আছে? শুনেছেন?
সাফওয়ান কিছুক্ষণ চোখ মুখ কুচকে মাথা চুলকে মনে করার চেষ্টা করলো, তারপর ওর মনে পড়তেই ও গেয়ে উঠলো,
— যেতে যেতে পথে পূর্ণিমা রাতে চাঁদ উঠেছিলো গগনে,
সাফওয়ানের কে গেয়ে উঠতে দেখে রুমাইশা হেসে উঠে নিজেও সাফওয়ানের সাথে গলা মিলিয়ে বলে উঠলো,
— হেই হেই, যেতে যেতে পথে পূর্ণিমা রাতে চাঁদ উঠেছিলো গগনে!
সাফওয়ান এবার অদ্ভুত, হাস্যকর অঙ্গভঙ্গি করে চোখ মুখ কুচকে রুমাইশার দিকে তাকিয়ে গেয়ে উঠলো
— দেখা হয়েচ্ছিলো, তোমাতে আমাতে, কি জানি কি মহালগনে, শালা চাঁদ উঠেছিলো গগনে, ব……
রুমাইশা ওর মুখ চেপে ধরে গান বন্ধ করে গিয়ে বলল,
— থাক থাক, হয়েছে৷ আর গাইতে হবে না।
সাফওয়ান ওর দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে গানের বাকি লাইন টা ঠোঁট বন্ধ করে গুনগুনিয়ে শেষ করলো।
রুমাইশা দাঁত কেলিয়ে খিল খিল করে হেসে উঠলো।
ওর হাসি শুনে সাফওয়ান রিমুর ঘাড় ছোয়া বব হেয়ার কাট দেওয়া চুল গুলো হাতের মুঠোয় নিয়ে টান দিয়ে ওর মাথা টা টেনে নিজের দিকে আনতে আনতে বলল,
— খচ্চর ছেমড়ি! দাঁত কেলানো হচ্ছে!
বলেই ওর কান কামড়ে দিলো।
রুমাইশা ‘ উরি মা, বলে উচ্চস্বরে হেসে উঠলো।
সাফওয়ান ওর চুল ছেড়ে দিয়ে বলল,
— নেহাত রুম টা সাউন্ড প্রুফ, নইলে তোর এই পেত্নি হাসি শুনে এখানের গার্ড গুলো সব লেজ গুটিয়ে পালাতো।
রুমাইশা তেতে উঠে কিছু একটা বলতে নিবে তখনি দরজায় নক পড়লো। থতমত খেলো ওরা দুজনেই। পালানোর তেমন কোনো জায়গা না থাকায় সাফওয়ান দ্রুত পায়ে স্ট্রেচার থেকে নেমে দাড়িয়ে মেঝে থেকে সাদা রঙা পাতলা বিছানার চাদর টা উঠিয়ে রুমাইশাকে ইশারা করলো গুটিসুটি মেরে শোয়ার জন্য৷ তারপর বিছানার চাদর টা দিয়ে রুমাইশা কে ঢেকে দিলো ও।
ইতোমধ্যে আর ও একবার দরজায় নক পড়লো। সাফওয়ান নিজেকে স্বাভাবিক করে এগিয়ে গিয়ে দরজা টা খুললো, অ্যাশলি মেয়ে টা এসেছে আবার ও। খোলা চুলে, কালো রঙা শর্ট স্কার্টস এর সাথে গাঢ় খয়েরী রঙা একটা শেমিজ পরে আছে সে৷ অন্তর্বাসের বালাই নেই। শেমিজের ওপর দিয়ে শরীরের ভাজ গুলো দৃশ্যমান হয়ে আছে। হাতে ওর খাবারের ট্রে৷
সাফওয়ান ওর থেকে দ্রুত চোখ ফিরিয়ে নিয়ে দরজা থেকে দ্রুত পায়ে সরে গিয়ে আবার স্ট্রেচারে উঠে বসলো।
কিন্তু অ্যাশলি মেয়েটা হতবাক হয়ে গেলো সাফওয়ান কে দেখে। কয়েক ঘন্টা আগেও যে কঙ্কালসার ছিলো সে হঠাৎ করে এমন মাসকিউলার কিভাবে হয়ে গেলো মাথায় এলো না ওর, নাকি তখন ওর চোখের ভুল ছিলো!
কিন্তু সব কিছুকে ছাপিয়ে, ওর থেকে মুখ ফিরিয়ে চলে যাওয়া সাফওয়ানের পেশিবহুল পিঠের ওপর নজর গেলো ওর৷
সাফওয়ান কিভাবে শুকনা থেকে তরতাজা হয়ে উঠলো সেটা নিয়ে মাথা ঘামালো না আর অ্যাশলি। ওর চোখের ওপর শুধু সাফওয়ানের ওই চওড়া, পুরুষালি পিঠ টাই ঘুরছে। পেট আর বুকের ভেতর যেন রক্ত ছলকে উঠলো ওর৷
সাফওয়ান অ্যাশলির দৃষ্টি থেকে বাচতে বিছানার চাদরের কিছু অংশ টেনে নিজের বুক পর্যন্ত উঠিয়ে দিলো। তারপর দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে রইলো ও৷ মনে মনে অ্যাশলি মেয়েটার নির্লজ্জতা নিয়ে ও সমালোচনা করলো, ছয় ঘন্টা মতো হবে সাফওয়ান ওকে স্ট্রেচার থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে। কিন্তু অসভ্য টার মনে কোনো বিকার নেই। আবার বেহায়ার মতো চলে এসেছে, সেটাও আরও অশ্লীল ভাবে৷
অ্যাশলি ট্রে টা হাতে নিয়ে রুমের ভেতর ঢুকলো। কিন্তু রুমের এমন বেহাল দশা দেখে ও কিছুটা অবাকই হলো। কিন্তু সেসব নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে শরীর টা দুলিয়ে হেটে এসে খাবারের ট্রে টা টেবিলের ওপর রাখলো ও। টেবিল টা স্ট্রেচারের পায়ের দিকটায় হওয়ায় রুমাইশাকে ঢেকে রাখা পাতলা চাদরের নিচ থেকে রুমাইশা স্পষ্ট ভাবে দেখতে পেলো মেয়ে টাকে। আর মেয়েটার এমন ড্রেসআপ দেখে ওর মেজাজ টাই গরম হয়ে গেলো।
মেয়ে টা যে ওর সাফওয়ান কে সিডিউস করার জন্যই এই সমস্ত ড্রেস পরেছে সেটা বেশ ভালোভাবেই বুঝলো ও। কিন্তু দাঁত মুখ চেপে, চুপ চাপ পড়ে রইলো ও সাদা রঙা বিছানার চাদর টার নিচে৷
অ্যাশলি খাবারের ট্রে টা রেখে সাফওয়ানের দিকে ফিরে শরীর দুলিয়ে মোহনীয় কণ্ঠে বলল,
— আপনার রাতের খাবার টা খেয়ে নিন, মিস্টার সাফওয়ান আহমেদ৷ দেরি হওয়ার জন্য দুঃখীত।
সাফওয়ান ওর দিকে না তাকিয়েই গলা খাকারি দিয়ে বলে উঠলো,
— ধন্যবাদ, আপনি এখন আসতে পারেন।
কিন্তু অ্যাশলির ফিরে যাওয়ার কোনো মতলব নেই। তখন স্ট্রেচার থেকে পড়ে যাওয়ার পর মাথার আঘাত নিয়ে ও গেছিলো মাইকেলের কাছে। কিন্তু মাইকেল ওকে বলেছে ও যদি সাফওয়ান কে প্লেজার দিতে পারে, আর সাফওয়ান যদি ওর প্রতি সন্তুষ্ট হয়, তবে অ্যাশলি কে মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়া হবে। আর যদি সাফওয়ানের মেডিসিনের খবর টা ওর মুখ থেকে বের করে এনে দিতে পারে, তবে তো অ্যাশলি কে টাকার সাগরে ভাসিয়ে দেবে মাইকেল। টাকার আশাতেই এত রাতে ও আবার এসেছে, যদি রাত টাকে নিজের সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে পারে৷
কিন্তু এখন সাফওয়ান কে দেখার পর ওর টাকার চাইতে নিজের চাহিদাটাই বেশি জোরালো হয়ে পড়েছে।
গাঢ় খয়েরী লিপস্টিক দেওয়া ঠোঁটে মাতাল করা হাসি ফুটিয়ে হেলেদুলে ও এগিয়ে গেলো স্ট্রেচারের দিকে। সাফওয়ান অস্বস্তি তে পড়লো। এই ধরনের সিচুয়েশনে ও এর আগে কখনোই পড়েনি। মেয়েদের সাথে ওর মেশা হয়নি সেভাবে। তাই এই বিষয় গুলো কিভাবে হ্যান্ডেল করতে হয় তা ও জানে না৷ ওর কাছে সবকিছুর সমাধান হলো সমস্যা টার ভবলীলা সাঙ্গ করা। এছাড়া ওর মাথায় আর কোনো সমাধান আসে না।
সাফওয়ান একবার অ্যাশলির দিকে তাকিয়ে পরক্ষণেই বিছানার চাদরের নিচে স্থীর হয়ে পড়ে থাকা রুমাইশার দিকে তাকালো। রিমু যে ক্ষ্যাপা, ওকে আবার ভুল বুঝে কিনা সেই ভয় করতে লাগলো সাফওয়ানের৷
একবার ভাবলো নেমে গিয়ে চেয়ার টা তুলে মেয়েটার মাথায় একটা আছাড় মারবে কিনা, কারণ হাত পা ছিড়ে মারতে গেলে মেয়েটাকে স্পর্শ করা লাগবে৷ এই অসভ্য মেয়েটাকে স্পর্শ করতে ওর রুচিতে বাধছে।
তাই ও মনে প্রাণে চাইলো এই সমস্যা টার সমাধান রিমু করে দিক। চোয়াল শক্ত করে ও সাহায্য পাওয়ার আশায় তাকিয়ে রইলো রুমাইশার মুখের দিকে।
রুমাইশা তীক্ষ্ণ চোখে অ্যাশলি কে পর্যবেক্ষণ করছে। অ্যাশলি যে ঠিক কি করতে চলেছে তা বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে ও৷ কিন্তু ও ঠিক কি করে সেটা দেখার জন্য রুমাইশা ঘাপটি মেরে পড়ে রইলো। কিন্তু সাফওয়ান ক্রমে ধৈর্য হারা হয়ে যেতে লাগলো। দাঁত কিড়মিড় করে উঠলো ওর৷
আ্যাশলি এসে ধীরে ধীরে স্ট্রেচারের ওপরে উঠে বসলো। আর তারপরেই নিজের শেমজিরের বুকের মাঝের তিন টা বোতামের ওপরের টা খুলে দিলো ও। আর ঠিক সেই মুহুর্তেই রুমাইশা ঝড়ের গতিতে বিছানার চাদরের তলা থেকে বেরিয়ে এসেই শক্ত হাতে অ্যাশলির গলা টা চেপে ধরলো। ওর জ্বলজ্বলে চোখ দুটো যেন অ্যাশলি কে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিবে।
অ্যাশলি ভয় পেয়ে গেলো রুমাইশা কে দেখে, চোখ দুইটা বড় বড় হয়ে গেলো ওর৷ রুমাইসার হাতের চাপে ওর দম বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো। নিজের দুই হাত দিয়ে রুমাইশার হাত টা ছাড়ানোর চেষ্টা করলো, কিন্তু তাতে কোনো লাভ হলো না। রুমাইশা অ্যাশলির ওই অসহায় মুখ টার দিকে তাকিয়ে বাকা হাসলো।
এরপর আরও জোরে অ্যাশলির গলাটা চেপে ধরে, অন্য হাতে অ্যাশলির বুকের খোলা বোতাম টা আবার লাগিয়ে দিতে দিতে দাঁতে দাঁত চেপে ইংরেজিতে বলে উঠলো,
— ব্লাডি বিচ! আমার সাফওয়ান কে বুক দেখানোর খুব শখ না তোর? তোর শখ আমি আজ বের করে দিবো, এই জীবনের মতো।
সাফওয়ান অবাক হয়ে দেখছে রুমাইশা কে৷ বব হেয়ার কাট দেওয়া রুমাইশার পরনে সী গ্রীন কালারের প্যান্ট, আর তার সাথে ডিপ চকোলেট কালারের লং স্লিভ টি শার্ট, যা ওর শরীরে আটসাট ভাবে লেগে আছে৷ ওর স্ফীত বক্ষ সুডৌল হয়ে ফুটে আছে টি শার্টের ওপর দিয়ে৷ দক্ষ হাতে অ্যাশলির গলা চেপে ধরে আছে ও। চোখে ওর শকুনি দৃষ্টি।
রাতারাতি যেন নিজের পার্সোনালিটি চেঞ্জ হয়ে গেছে ওর৷
রুমাইশার এমন রূপ সাফওয়ান কখনোই দেখেনি। আর রুমাইশা যে এমন হতে পারে, সেটা ঘূর্ণাক্ষরেও কখনো ভাবেনি সাফওয়ান।
রুমাইশা অ্যাশলির গলা ধরেই স্ট্রেচার থেকে নামলো। আর এরপরেই ওকে ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দিয়ে, নিজেও মেঝেতে বসে, অ্যাশলির মাথার সোনালি চুল গুলো মুঠি করে ধরে মেঝের সাথেই গায়ের সর্বোচ্চ জোর দিয়ে আছাড় দিলো রুমাইশা যতবার মন চাইলো ততবার।
দুই আছাড় দেওয়ার পরই অ্যাশলির মাথা ফেটে রক্তের স্রোত বয়ে গেছে তবুও থামেনি রুমাইশা।
এরপর অ্যাশলির চুল ধরেই মেঝের ওপর দিয়ে টানতে টানতে ওকে নিয়ে রুমের দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলে বাইরে টা দেখে নিলো একবার। নাহ, কেউ নেই। এবার দরজা টা পুরোপুরি খুলে রুম থেকে বেরিয়ে অ্যাশলি কে টানতে টানতে সাফওয়ানের রুমের থেকে বেশ খানিক টা দূরে নিয়ে গিয়ে থামলো রুমাইশা।
এরপর সেখানের মেঝেতে অ্যাশলি কে ফেলে আর ও কয়েক বার ওর মাথা টা মেঝের সাথে বাড়ি দিলো৷ এরপর অ্যাশলির হাই হিলের একটা খুলে নিয়ে তার হিল টা ভেঙে দিয়ে আবার ওর পায়ে পরিয়ে দিলো। তারপর নিজের টি শার্ট টা খুলে অ্যাশলির শরীরের যেখানে যেখানে রুমাইশার হাতের ছোয়া লেগেছে সে সমস্ত জায়গা নিজের টিশার্ট টা দিয়ে রগরে রগরে মুছে দিলো।
সাদা রঙা মেঝের ওপর দিয়ে অ্যাশলির মাথা থেকে পড়া রক্ত ভেসে যেতে লাগলো৷
রুমাইশা একবার অ্যাশলির পালস্ টা চেইক করে নিলো, হ্যা, কাজ শেষ। অ্যাশলির হাতের কবজি টা আবারও নিজের টি শার্টের হাতা দিয়ে মুছে দিয়ে উঠে দাড়ালো ও। তারপর সোজা চলে গেলো সাফওয়ানের রুমে। এরপর রুমের ওয়াশরুম থেকে টিস্যু পেপার এনে অ্যাশলির মাথা থেকে রুমের বাইরের মেঝেতে পড়া ফোটা ফোটা রক্ত গুলো ভালো ভাবে মুছে দিয়ে সে টিস্যু গুলো রুমের টউলেটের কমোডের ভেতর ফেলে দিয়ে ফ্ল্যাশ করে দিলো। এর মধ্যে সাফওয়ান নিজেও রুমের মেঝেতে পড়ে থাকা রক্ত গুলো মুছে মেঝেটা পুরো ক্লিন এন্ড ক্লিয়ার করে ফেললো৷
রুমাইশা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলে সাফওয়ান সদ্য পরিষ্কার করা মেঝে থেকে উঠে দাড়িয়ে রুমাইশার দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত ভাবে হাসলো। ওর ক্যানাইন দাঁতদ্বয় ঝকঝক করে উঠলো সে হাসিতে৷
ওর হাসি দেখে রুমাইশার মুখেও হাসির রেশ দেখা দেখা গেলো৷ সাফওয়ান নিজের ডান হাত টা রুমাইশার দিকে বাড়িয়ে ধরলো, তারপর বলল,
— ইয়্যু আর ওয়ার্মলি ওয়াল্কামড টু মাই ওয়ার্ল্ড, পার্টনার!