১২. এক্সাম শুরু হতে আর ১ দিন আছে, ধুমছে পড়াশোনা করছে রুমাইশা। সাথে শাফিন ও। সেই দিনের পর থেকে সাফওয়ান এর সাথে রুমির আর দেখা হয়নি। শেষ রাতের সেই অদ্ভুত শব্দটাও আর হয়নি। সেটাকে নিছকই মনের ভুল ভেবে নিয়েছে রুমাইশা, হয়তো মস্তিষ্কের ওপর চাপ পড়ছিলো অনেক তাই ভুলভাল দেখেছে৷ ওসব নিয়ে আর মাথা ঘামায়নি ও৷
পড়াশোনা শেষ করে একটার দিকে ঘুমাতে গেলো রুমাইশা। কিন্তু ঘুম ধরা দিলোনা ওর চোখে, এক ঘন্টা ধরে এপাশ ওপাশ করেও ঘুম আসলোনা। রুমাইশার মনে পড়লো, সন্ধ্যা বেলায় এক কাপ কড়া কফি খেয়েছে ও। আজ আর ঘুম হবে না। কফিটা সকালে খাওয়া উচিত ছিলো। ঘুম না আসায় অগত্যা ফোন চাপাচাপি করতে লাগলো ও।
কিছুক্ষণ পর হঠাৎই কারো পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলো রুমাইশা। খালি পায়ে কেউ ছাদের সিড়ি বেয়ে নামছে। শব্দ টা তীক্ষ্ণ না হলেও চারদিক নিস্তব্ধ থাকায় শব্দটা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে রুমাইশা।
‘নিশ্চই সাফওয়ান ভাইয়া। আজ হয়তো আবার ঠান্ডা পানি আর আইসক্রিমের ক্রেভিং জেগেছে ওনার৷’ এসব ভেবে নিয়ে আবার ও ফোন চাপায় মনোযোগ দিলো রুমাইশা।
পরক্ষনেই মাথায় চাপলো অন্য বুদ্ধি। সাফওয়ান ভাইয়ার চেহারা দেখেনি ও। ইভেন ফুপ্পি বা শাফিন ও না। কারোর সামনেই আসেন না তিনি। রুমাইশা তড়াক করে শোয়া থেকে উঠে বসলো বিছানায়। আজ ও সাফওয়ানের চেহারা দেখবে, যেভাবেই হোক৷
হলরুম থেকে সিড়ি বেয়ে উঠে একটুখানি বাদিকে রুমাইশার রুম, তাই দেখতে সুবিধাই হবে। বিছানা ছেড়ে উঠলো রুমাইশা। তারপর ধীর পায়ে, নিঃশব্দে রুমের দরজার কাছে গিয়ে দরজা টা আস্তে করে অল্প একটু খানি খুলে কোনো রকমে এক চোখে দেখতে পাবে এমন ভাবে দাড়ালো দরজার পেছনে৷ কিন্তু সেখান থেকে শুধু সিড়ি আর সিড়ির সামনের হলরুমের কিছু অংশই দেখা যাচ্ছে৷ তার ওপাশে আর নজর যাচ্ছে না।
হলরুমে আলো বেশি নেই। একটা হলুদ রঙের টিমটিমে ডিম লাইট জ্বালানো রুনিয়া আর ইশতিয়াক আহমেদের রুমের দরজার কিছুটা ওপরে। যদিও সেই আলো রান্নাঘর অব্দি খুব কম পরিমানেই পৌছাচ্ছে৷ সাফওয়ান ততক্ষনে সিড়িবেয়ে নেমে কিচেনের দিকে এগোলো। পেছন থেকে কিছুই দেখা যাচ্ছে না।
রুমাইশা ওখানেই দাড়িয়ে থাকলো সাফওয়ানের আবার রান্নাঘর থেকে ব্যাক করার অপেক্ষায়। মিনিট পাঁচেক পরেই রান্নাঘরের দিক থেকে টুকটাক শব্দ হয়ে এরপর সাফওয়ান এর পায়ের শব্দ শোনা গেলো আবার। সাফওয়ান আবার এদিকেই আসছে৷
এক্সাইটমেন্টে রুমাইশার বুকের ভেতর দিড়িম দিড়িম শব্দ হচ্ছে! আশ্চর্য লাগলো তার, সে কিনা একটা ছেলের চেহারা দেখার জন্য রাতের তিনটা বাজে দরজার পেছনে লুকিয়ে আছে, খুবই অদ্ভুত কর্মকাণ্ড! যাইহোক, সাফওয়ান যতই সিড়ির দিকে এগিয়ে আসছে ততই উত্তেজনায় রুমাইশার বুকের ধুকপুকানি বাড়ছে।
বা হাতে আইসক্রিমের বক্স আর ডান হাতে স্পুন নিয়ে হলরুম পার হয়ে সিড়িতে ওঠার জন্য অগ্রসর হয়ে সোজা উপরে দোতলার দিকে তাকালো সাফওয়ান। আর তখনি সাফওয়ান কে দেখে নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলো রুমাইশার!
সাফওয়ান আজ আর চোখে কোনো গগলস পরেনি। আর সেই গগলসের আড়ালে থাকা চোখ জোড়া দেখেই আঁতকে উঠলো রুমাইশা! নিজের অজান্তেই বিড়বিড় করে শুধু বলল, সাফওয়ানের চোখ! সাফওয়ান ভাইয়ার চোখ এমন কেন?
শিকারি চোখের কোটরে ঈষৎ সবুজ ঈষৎ ধুসর রঙা মণি দুইটা নিশাচরী হিংস্র মাংসাশী প্রাণীদের মতো জ্বলজ্বল করে অন্ধকারের ভেতর দ্যুতি ছড়াচ্ছে! মুখের অভিব্যক্তিতে মনে হচ্ছে এক্ষুনি হিংস্র জানোয়ারের মতো নিজের ক্ষুধা মেটাতে কারো ওপর ঝাপিয়ে পড়ে তার গলায় এক কামড় বসিয়ে গলার নল খুলে ফেলবে ও৷
ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো রুমাইশার! বুকের যে ঢিপ ঢিপ এতক্ষন এক্সাইটমেন্টের কারনে হচ্ছিলো তা এখন রুপ নিলো ভয়ে।
কিন্তু এরপর সাফওয়ানের গলা, ঘাড় ও বুকের চামড়ার দিকে চোখ গেলো রুমাইশার। আৎকে উঠলো ও আবারও!
‘সাফওয়ান-সাফওয়ান ভাইয়ের চামড়ার সাথে লেগে থাকা ও-ওগুলো কি!’
ধীর পায়ে ওপরে উঠছে সাফওয়ান৷ গায়ে ওর শুধু মাত্র একটা আন্ডার শার্ট! শরীরের বেশ কিছু নির্দিষ্ট অংশে ওর মানব শরীরের চামড়ার পরিবর্তে সাপের শরীরের স্কেলি আবরণের মতো, ধুসর সবুজ বর্ণের চকচকা স্কিন, যার ওপর ডিম লাইটের মৃদু আলো পড়ে ঝিকিমিকি করছে।
কথা বলতেই যেন ভুলে গেলো রুমাইশা! সাফওয়ানের শরীরের ওপর পড়া আলো প্রতিফলিত হয়ে এসে ওর চোখে পড়লো কয়েক সেকেন্ডের জন্য। রুমাইশা বুঝে উঠতে পারছেনা যে সাফওয়ানের সাথে আসলে কি হয়েছে! ওর এ অবস্তজা কেন!
কিন্তু পরক্ষণে সাফওয়ান সিড়িবিয়ে আর একটু কাছাকাছি আসতেই রুমাইশা যা দেখলো তাতে ওর শীড়দাড়া ঠান্ডা হয়ে গেলো!