সকাল সকাল মেহেনুবার সাথে কলেজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেছে পরী। আগে একটা প্রাইভেট আছে তারপর কলেজ।
প্রাইভেট পড়ে বাস স্টপেজে এসে পরীর দেখা হয়ে যায় তুর্যর সাথে। হয়তো অফিসে যাওয়ার জন্যই বাসের অপেক্ষা করছে তুর্য। পরীর বারবার জানতে ইচ্ছে করছে কাল রাতে কেন তুর্য এমন ব্যবহার করল। কোনো কারণ ছাড়াই মিজবিহেভ করার তো কোনো মানেই হয় না। এখানেই কি একবার জিজ্ঞেস করা ঠিক হবে? নয়ছয় ভাবতে ভাবতেই পরী তুর্যর কিছুটা পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
পরীর দিকে তুর্যর চোখ পড়ায় যখন তুর্য কিছু বলতে যাবে তার আগেই পরী ডান হাতটা সামনে তুলে বলে,
“থামুন! থামুন! এখানে একদম বকবেন না প্লিজ। আমি শুধু জানতে চাই আপনি কাল রাতে কেন আমার সাথে এমন ব্যবহার করলেন?”
পরীকে অবাক করে দিয়ে তুর্য সামান্য কপাল কুঁচকে বলে,
“স্যরি। কালকে ওমন ব্যবহার করা আমার উচিত হয়নি।“
পরী ভেবেছিল হয়তো তুর্য আবারও বকাঝকা করবে। কিন্তু তা তো করলই না উল্টো বলল স্যরি! তবুও প্রশ্ন একটা রয়েই যায়। কেন করল এমন বিহেভ? পরীর প্রশ্নবিদ্ধ চোখ দুটোর ভাষা হয়তো বুঝতে পেরেছে তুর্য। তাই কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
“বাকি সব প্রশ্নের উত্তর রাতে দেবো। রাতে ছাদে এসো।“
এরমধ্যে বাস এসে পড়ায় পরী আর মেহেনুবা বাসে ওঠে পড়ে। সিটে বসে জানালা দিয়ে একবার তাকায় তুর্যর দিকে। তুর্য হাত তুলে টাটা দেয়। পরীর কেন জানি মনটা খুব ভালো হয়ে যায়। সময়টা স্বপ্ন স্বপ্ন লাগে। পরীও হাত তুলে টাটা দেয় বাস ছাড়ার মুহূর্তে। এরপর সিটের সাথে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে মিটিমিটি হাসে। মেহেনুবা এতক্ষণ বাসে থাকা কয়েকজন ক্লাসমেটদের সাথে কথা বলছিল। যখন পরীর দিকে তাকালো তখন ভ্রু কুঁচকে বলে,
“ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে হাসছিস নাকি?”
পরী ঘাড় কাৎ করে মেহুর দিকে তাকিয়ে বলে,
“ঘুমাইনি। কল্পনা করে হাসছি।“
“আমাকেও বল। আমিও হাসি।“
“হাসির বিষয় তো নয় এটা।“
“প্রেমে পড়েছিস নাকি তুই?”
পরী এবার সোজা হয়ে বসে মেহুর দিকে তাকিয়ে বলে,
“তোর এটা মনে হলো কেন?”
মেহু উৎসাহিত হয়ে বলে,
“আগে বল সত্যিই প্রেমে পড়েছিস?”
“কী জানি! তবে ভালো লাগে।“
মেহু অবাক হয়ে বলে,
“কাকে?”
“আছে একজন।“
“ভালোলাগা থেকেই কিন্তু ভালোবাসার সৃষ্টি।“
পরী মুখ ভেংচি দিয়ে বলে,
“হুশ! কোনো ভালোবাসা নেই। জাস্ট এমনিই ভালোলাগে।“
“হইছে। কখন যে ভালোবেসে ফেলবা টেরও পাবে না মনু!”
পরী হেসে বলে,
“মনু!”
“হাসিস না তো! ছেলেটা কে বল না?”
“তুর্য।“
“যে তোকে সাহায্য করেছিল তার প্রেমেই পড়লি? অবশ্য ভালোই মানাবে তোদের।“
“কী বারবার প্রেমে পড়েছিস প্রেমে পড়েছিস শুরু করলি বলতো! কোনো প্রেম ট্রেম নয় বললাম তো।“
মেহু চোখমুখ অন্ধকার করে বসে থাকে। এখন কিছু বলতে গেলেই পরীর বকা খেতে হবে। তারচেয়ে চুপ করে থাকাই ভালো। পরী জানালা দিয়ে আকাশের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ভাবে,
“আসলেই কি প্রেমে পড়েছি আমি?”
তিথিদের কলেজ ক্রস করে পরী আর মেহেনুবা কলেজে যাওয়ার সময় দেখা হয়ে যায় প্রান্ত আর তিথির সাথে। এবারেও প্রান্ত আগ বাড়িয়ে কথা বলার জন্য ছুটে আসে। ঝড়ের বেগে পরীর পাশে এসে হাঁটতে হাঁটতে বলে,
“হাই!”
পরী প্রথমে ভূত দেখার মতো চমকে যায়। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
“হ্যালো। আপনি এখানে?”
“তিথিকে দিতে এসেছিলাম।“
“তাই নাকি? তিথি আপনার কী হয়?”
“ফ্রেন্ড।“
“ওহ।“
কলেজ গেটের সামনে এসে পরী বলে,
“আচ্ছা এখন যাই।“
প্রান্ত হাত তুলে মিষ্টি হেসে বলে,
“বাই।“
পরী চলে যাওয়ার পর প্রান্ত বিড়বিড় করে বলে,
“তিথিকে দিতে আসলেও উদ্দেশ্য ছিল তোমাকেই দেখতে আসা।“
প্রান্ত ফিরে যায় আবার তিথির কলেজের সামনে। তিথি তখনো সেখানে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। তিথির চোখের হিংসার সেই দৃষ্টি যদি প্রান্ত খেয়াল করতো একটাবার তাহলে দেখতে পেত প্রতিহিংসার আগুন। প্রান্ত কিছু বলার আগেই তিথি ক্লাসরুমে চলে যায়। প্রান্ত কিছুক্ষণ ভ্যাবাচেকা খেয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তিথি তো কখনো এমন করে না। তবে তিথিকে নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে প্রান্ত চলে যায় আড্ডাখানায়। চেয়ারে আয়েশ করে বসে ভাবতে থাকে পরীর কথা। সেলিম বলে,
“ভাই চা দিমু?”
প্রান্ত নিরুত্তর। সেলিম আবার জিজ্ঞেস করে,
“ভাই চা দিমু?”
প্রান্ত এবার চোখ মেলে সেলিমের দিকে তাকিয়ে বিরক্ত নিয়ে বলে,
“আহা! বিরক্ত করছো কেন?”
সেলিম মাথা চুলকে বলে,
“বিরক্ত কই করলাম? জিগাইলাম চা খাইবেন নাকি?”
“তুমি খাও চা।“
সেলিম আর কথা বাড়ায় না। শুধু প্রান্তর কাণ্ডকারখানা দেখতে থাকে। মনে মনে সাহস জুগিয়ে বলেই ফেলে,
“ভাই আপনেরে কি জ্বীনে আছর করছে?”
প্রান্ত মুচকি হেসে বলে,
“ধুর! কী বলো?”
“তাইলে এমন মিটিমিটি হাসেন ক্যা?”
প্রান্ত হাত দুটো উঁচু করে আড়মোড়া ভেঙে বলে,
“আমার মনে হয় আমি প্রেমে পড়েছি।“
“কন কী ভাই? নিশ্চয়ই তিথি আপার প্রেমে?”
প্রান্ত ধমক দিয়ে বলে,
“হপ! তিথিকে আমি শুধু ফ্রেন্ডের মতোই দেখি।“
“তাইলে কোন মাইয়া?”
প্রান্ত দৃঢ়স্বরে বলে,
“পরী!”
পরীর নাম শুনে সেলিমের মুখ থেকে চা বেরিয়ে যায়। প্রান্ত সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ করে না। উপস্থিত সকলে একজন আরেকজনের দিকে চাওয়াচাওয়ি করছে। সকলের চোখে বিস্ময়! যাকে কোনোদিন তিথি ছাড়া অন্য কোনো মেয়ের দিকে তাকাতেই দেখা যায়নি সেই ছেলেই কী না প্রেমে পড়েছে? তিথির প্রেমে পড়লেও বোধ হয় কেউ এতটা অবাক হতো না। সেলিম অবাক হয়ে বলে,
“আপনি এগুলা কী কন ভাই? দুনিয়ায় কি মাইয়ার অভাব পড়ছিল?”
“পরীই আমার জন্য পার্ফেক্ট।“
“কীয়ের পার্ফেক্ট? ঐ প্রতিবাদী আপা তো জানেই আপনি কে! আর যদি জানে ঐ বেডারে যেই পোলা মারছিল ঐ পোলা আপনি! তাইলে আপনেরে ভালোবাসা তো দূরে থাক মাইরা হাসপাতালে ভর্তি করাইয়া দিব। আপনি জানেন না মাইয়া কি ডেঞ্জারাস!”
প্রান্ত হোহো করে হেসে বলে,
“ও এমন ডেঞ্জারাস বলেই হয়তো প্রেমে পড়েছি। অন্যান্য মেয়েদের মতোই যদি সাধারণ হতো তাহলে হয়তো প্রেমে পড়তাম না।“
“যাই কন না ক্যান ভাই এইডা হইব না।“
“কেন হবে না?”
“ঐ মাইয়া কোনোদিন আপনেরে ভালোবাসব?”
“বাসবে না কেন সেটা বল?”
“প্রতিবাদী মাইয়া সে। অন্যায় সহ্য করে না। আর আপনে তো করেন মাস্তানি। তাইলে তার আশা আপনে কেমনে করেন?”
“আমি কি এত মাস্তানি করি? শুধু মেজাজটাই একটু চড়া। প্রয়োজনে এসবও ছেড়ে দেবো।“
“আপনার যা ভালো মনে হয় করেন।“
“তুই খুশি না?”
“আপনের খুশিতেই আমি খুশি ভাই।“
প্রান্ত খুশিতে সেলিমকে বুকের সাথে জড়িয়ে আলিঙ্গন করে নেয়।
আজ প্রথমদিন হওয়ায় টিফিন টাইমেই কলেজ ছুটি হয়ে যায়। ঐদিকে তুর্যরও অফিসে মন বসছিল না। তাই ছুটি নিয়ে নেয়। তুর্য জানতো তিথির আজ আগে ছুটি হবে। তাই ভাবলো তিথিকে সাথে নিয়েই বাসায় যাবে। তাই অফিস থেকে বের হয়ে একটা রিক্সা ডেকে তিথির কলেজের দিকে যায়।
মেহেনুবা আর পরী দুষ্টুমি করতে করতে রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। তিথির কলেজ পার হয়ে কিছুটা দূর যাওয়ার পর পাশ থেকে তিথিসহ আরো কয়েকজন মেয়ে ওদের সামনে এসে দাঁড়ায়। তিথির চোখেমুখ রাগে লাল হয়ে আছে বোঝা যাচ্ছে। পরী স্বাভাবিকভাবেই বলে,
“কেমন আছো তিথি?”
তিথি কিছুক্ষণ চুপ থেকে পরী কাঁধে ধাক্কা দেয় রাগ নিয়ে। ফলে পরী কিছুটা পিছিয়ে যায়। মেহেনুবাও পিছিয়ে পরীকে ধরে। তিথির দিকে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বলে,
“এসব কী? গায়ে হাত দিচ্ছো কেন?”
তিথি মেহুর দিকে আঙুল তুলে শাসিয়ে বলে,
“একদম চুপ করে থাকো তুমি। এখানে কথা হবে শুধু আমার আর পরীর মধ্যে।“
মেহু কিছু বলতে যাবে তখন পরী থামিয়ে দেয়। পরীর নিজেরও রাগে শরীর জ্বলছে। রাস্তাঘাটে সিনক্রিয়েট করার কোনো মানে হয়? তাও আবার কোনো কারণ ছাড়াই! পরী চাইছে বিষয়টা ক্লিয়ার জেনে ঝামেলা মিটিয়ে নিতে। তাই রাগ দমন করে বলে,
“কথা তুমি বলছো কোথায়? তুমি তো ডিরেক্ট গায়ে হাত তুলে ফেললে।“
তিথি চিৎকার করে বলে,
“তুই আমার থেকে আমার প্রান্তকে কেন কেড়ে নিচ্ছিস?”
পরী চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে। সত্যিই অবাক না হয়ে পারল না। আশেপাশের লোকজনগুলোও কেমন করে তাকিয়ে আছে। খুব বড় নাটক যে এখানে হবে সেটা পরী শিওর হয়ে গেছে।
পরী শান্তস্বরে বলে,
“আমি তোমার থেকে তাকে কেন কেড়ে নিতে যাব?”
“তুই নিচ্ছিস। তুই আমার ভাইর সাথেও লাইন মারছিস আবার আমার প্রান্তর দিকেও হাত বাড়িয়েছিস। এত ক্যারেক্টারলেস মেয়ে কেন তুই? বস্তি একটা!”
“মুখ সামলে কথা বলো তিথি। না জেনে বুঝে এসব কী বলছ তুমি? আর কী নাটক শুরু করেছ পাবলিক প্লেসে? তোমার যদি কোনো কনফিউশন থেকে থাকে তাহলে একান্তই সেটা আমায় একা ডেকে বলতে পারতে।“
“একা কেন বলব তোকে? মানুষ জানুক তুই কেমন মেয়ে!”
“মানুষের জানা-অজানায় আমার কিচ্ছু যায় আসে না। ছোটবেলা থেকেই আমি একগুঁয়ে টাইপ। কে কী বলবে এসবের ধার খুব কমই ধারি। তবে কেউ মিথ্যে অপবাদ দেবে আর আমি সেটা চুপচাপ মেনে নেবো এটা ভেবো না। এসব বিষয়ে দমে যাওয়ার পাত্রী আমি নই।“
“কোনটা মিথ্যা অপবাদ? আমি নিজের চোখে যা দেখি সেটা মিথ্যা?”
“কী দেখেছ তুমি? তোমার ভাইয়ের সাথেও আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আর না আছে প্রান্তর সাথে। এরপরও যদি তোমার আর কিছু বলার থাকে তাহলে সেটা আমি বাসায় গিয়ে শুনব।“
পরী চলে যাওয়া ধরলে তিথি পরীর হাত টেনে ধরে। বলে,
“কোথায় পালাবি তুই? আজ তো একটা হেস্তনেস্ত করবই।“
“তোমার নাটক দেখার মতো সময় আমার নেই। তুমি তোমার কলেজের বদনাম করার জন্য মুখিয়ে থাকতে পারো কিন্তু আমি নই।“
তিথি বেশ কয়েকটা বিচ্ছিরি গালি দেয় পরীকে। পরী দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে নিয়ে বলে,
“তোমার ভাগ্য ভালো আমার গায়ে কলেজের ইউনিফর্ম পরা। নয়তো থাপ্রে থাপ্রে গাল তো ফাঁটাতামই। এমনকি এখানেই পুঁতে ফেলতাম।“
তিথি এবার পুরো ক্ষেপে পরীর দিকে এগিয়ে আসতেই পেছন থেকে তুর্য দৌঁড়ে এসে তিথিকে ধরে। এমন দৃশ্য দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না তুর্য। এতটা নিচে নেমে গেছে তিথি! তিথি তুর্যর সাথেও জোড়াজুড়ি করছে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য। তুর্য আর নিজের রাগকে কন্ট্রোলে রাখতে পারে না। ঠাঁটিয়ে থাপ্পড় বসায় তিথির গালে। তিথি গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। তুর্য ধমক দিয়ে বলে,
“এখন চুপচাপ আমার সাথে বাসায় যাবি। তোর খবর আমি বাসায় গিয়ে করব।“
এরপর তুর্য তিথিকে টেনে নিয়ে রিক্সায় ওঠে। পরী চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। কী থেকে কী হয়ে গেল! মেহেনুবা পরীর কাঁধে হাত রেখে বলে,
“চল।“
পরী ছোট করে উত্তর দেয়,
“হু।“
.
.
রাত ৯:২০ মিনিট
রুমের বারান্দায় বসে আকাশ দেখতে দেখতে দুপুরের ঘটনাটা ভাবছে পরী। তিথি কেন সব না জেনেশুনে এমন করল? প্রান্তকে তো পরী চেনেই না ভালো করে। অন্যদিকে তুর্যর প্রতি ভালোবাসা যেন বেড়েই চলেছে। পরী ফিল করছে আসলেই সে ধীরে ধীরে তুর্যকে ভালোবেসে ফেলেছে। কিন্তু কখনো কি প্রকাশ পাবে এই ভালোবাসা?
দিশান বারান্দায় এসে দেখে পরী অন্য মনস্ক হয়ে বসে আছে। তাই,
“ভাওও” বলে চিৎকার করতেই পরী লাফিয়ে ওঠে। দিশান খিলখিল করে হাসছে। পরী চোখমুখ ছোট করে বলে,
“ফাজিল! ভয় পেলাম না?”
“ভয় পাওয়ার জন্যই তো এমন করলাম।“
পরী দিশানকে টেনে সামনে দাঁড় করিয়ে বলে,
“দিশান বাসায় কি আজ কোনো ঝামেলা হয়েছে?”
“হুম। তিথি আপু নাকি তোমাকে গালাগালি করছে? এজন্য ভাইয়া তিথি আপুকে দুইটা থাপ্পড় দিছে। আর অনেক বকছে।“
দিশান থেমে আবার বলে,
“ভাইয়া তোমাকে এখনই ছাদে যেতে বলল।“
“আচ্ছা চলো।“
“আমি বাসায় যাব। তুমি যাও।“
“ঠিকাছে।“
পরী ছাদে গিয়ে বলে,
“ডেকেছেন?”
তুর্য দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে,
“হুম। তোমাকে না ছাদে আসতে বলেছিলাম?”
পরী মিথ্যে করে বলে,
“ভুলে গিয়েছিলাম।“
“ওহ। আচ্ছা না আসলে হয়তো ডাকতাম না। কিন্তু তিথি যেটা করেছে এরপর আর তোমায় না ডেকে পারলাম না।“
“আপনি বাসায় এসে আবার কেন মারতে গেলেন তিথিকে?”
“দিশান বলেছে?”
“হু। আর মারার প্রয়োজন ছিল কী?”
“ছিল। বাড়ি থেকে তো ওকে কখনো এমন শিক্ষা দেওয়া হয়নি।“
“ওর মাথা ঠিক ছিল না।“
“তাই বলে এমন সিনক্রিয়েট করবে?”
“বিষয়টা সেনসিটিভ ছিল। কিন্তু প্রান্তর সাথে আমার সত্যিই কোনো সম্পর্ক নেই। আমি চিনিও না তাকে তেমন।“
“হুম। আমি প্রান্তর সাথে কথা বলেছিলাম। প্রান্ত তিথিকে ফ্রেন্ড ছাড়া কিছুই ভাবে না। এদিকে তিথি প্রান্তর জন্য পাগল। তাই তো তোমার সাথে প্রান্ত সামান্য কথা বলেছে বলে কী করল দেখলে না?”
পরী নিশ্চুপ। তুর্য রেলিং এর সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,
“ওর আজকের ব্যবহার আর আমার কালকের ব্যবহারের জন্য আমি সত্যিই খুব দুঃখিত। তুমি চাইলে আমায় শাস্তিও দিতে পারো।“
পরী মৃদু হেসে বলে,
“তিথির দিকটা আমি বুঝতে পেরেছি। কিন্তু কালকে আপনার ব্যবহারের কারণটা খুব জানতে ইচ্ছে করে।“
তুর্য আবারও লম্বা শ্বাস নিয়ে বলে,
“আমার গার্লফ্রেন্ড রিনিকে আমাদের ডাকাতে ধরার বিষয়টি শেয়ার করেছিলাম। তোমার আর আমার কথাও। কারণ আমি ওর থেকে কিছু লুকাই না।এটা নিয়ে যা নয় তা কথা শুনিয়েছে। এমনিতে পাত্তাই দেয় না আমায়। আর তখন কতগুলো কথা শোনালো।“
‘আমার গার্লফ্রেন্ড রিনি’ এতটুকু কথা যেন বিষের তীরের মতো পরীর বুকে ঢুকল। তার মানে সত্যিই মেয়েটা ওর গার্লফ্রেন্ড। এতদিন এটা সন্দেহ করলেও তো এতটা খারাপ লাগেনি। যতটা খারাপ লাগছে আজ তুর্যর মুখে শুনে। তুর্য আবার বলে,
“কী না করি ওর জন্য? তবুও নাকি ওর মন যুগিয়ে চলতে পারি না। আমার ভালোবাসা বোঝাতেই পারি না ওকে। কেন যে বোঝে না।নাকি বুঝতে চায় না আল্লাহ্ মালুম!”
পরীর কষ্ট লাগলেও নিজেকে সামলিয়ে বলে,
“ওহ এই ব্যাপার! আমার জন্য তো তাহলে ঝামেলা হয়ে গেল তাহলে।“
“ধুর! বিপদে পড়লে কাউকে সাহায্য করব না?”
“যাই হোক, দোয়া করি সব যেন ঠিক হয়ে যায়। আমি এখন যাই। মা খুঁজবে না হলে!”
“আচ্ছা যাও।“
পরী সিঁড়িতে পা রাখতেই চোখ উপচে পানি আসে। কান্না কেন পাচ্ছে এর কোনো উত্তর নেই। মানুষ এত অদ্ভুত প্রাণী কেন? নিজের কাছে থাকা মানুষটির ভালোবাসা বোঝে না। অথচ যে পাত্তা দেয় না, ভালোবাসে না, অবহেলা করে, যে বুঝতে চায় না মানুষ তার পেছনেই ছোটে ভালোবাসার জন্য। পৃথিবীর এই কঠিন নিয়মে কেন জড়াতে যায় কেউ ভালোবাসায়?