পরী বরফের ন্যায় এখনো জমে দাঁড়িয়ে আছে। এটা কি সত্যিই বাস্তব ছিল? নাকি কল্পনা? আর না ভ্রম?
মেহনুবা এসে পরীর কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে,
“স্ট্যাচু হয়ে আছিস কেন? তুর্য ভাইয়া চলে গেছে?”
“তার মানে কি তুর্য সত্যিই এসেছিল?”
“জ্যান্ত মানুষটা তোর সামনে দাঁড়িয়ে ছিল তুই বুঝিসনি?”
“তাহলে ও যা করল সব সত্যি!”
মেহু অবাক হয়ে বলে,
“কী করেছে?”
পরী এবার মেহুর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,
“কিছুনা।”
এরপর মেইন দরজার কাছে এগিয়ে যায়। পেছন পেছন মেহুও যায়। পরী দরজা লক করছে তখন মেহু বলে,
“বল সে কী করেছে? আমায় তুই বল শুধু। তার এত্ত বড় সাহস! আমি যদি তার হাত-পা ভেঙেছি দেখিস তুই।”
পরী কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,
“খুব শেরনী হয়ে গেছিস দেখছি। তাহলে আমায় একা রেখে তখন কোথায় লুকিয়ে ছিলি?”
মেহু আমতা আমতা করে,
“আরে লুকাব কেন? সাগর কল দিয়েছিল। তাই ফোন রিসিভ করে ব্যালকোনিতে চলে গেছিলাম।”
“ভালো করেছিস”, বলে পরী শোয়ার রুমে চলে যায়। সাথে মেহুও যায়। রুমে গিয়ে মেহু বলে,
“তোর খোঁপার ফুলটা তুর্য ভাইয়া দিয়েছে না?”
পরীর হঠাৎ করেই একটু আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা চোখের পলকেই ভেসে ওঠল। খোঁপায় গুঁজে রাখা ফুলটার ওপর হাত দিয়ে স্পর্শ করে বলে,
“হুম।”
মেহু খুশিতে বাক-বাকুম হয়ে বলে,
“এই বল না কী বলেছে সে?”
পরী বিছানায় বসে পা দুটো লেপের ভেতর ঢুকিয়ে বালিশে মাথা রাখে। তারপর লেপটা শরীরের ওপর টেনে নিয়ে বলে,
“বলব না।”
মেহু লেপের কর্ণারে টান দিয়ে বলে,
“বলবি না মানে? কেন বলবি না?”
“এমনি বলব না।”
“ভালো হচ্ছে না কিন্তু পরী।”
“না হলে নেই।”
মেহু এবার নিজেও লেপের ভেতর ঢুকে পরীকে জড়িয়ে ধরে আদুরে কণ্ঠে বলে,
“বল না পাখি!”
পরী মেহুর দৃষ্টি এড়িয়ে মুখ টিপে হাসছে। ভালোই লাগছে মেহুর এই তোশামদ। পরীকে চুপ থাকতে দেখে মেহু আবার বলে,
“কী হলো? চুপ করে আছিস কেন?”
পরী এবার শোয়া থেকে উঠে বসে। পরীর দেখাদেখি মেহুও বসে। পরী এবার শুরু থেকে সবটা খুলে বলে মেহনুবাকে। সব শুনে মেহনুবা হা করে তাকিয়ে থাকে। অবাক হয়ে বলে,
“আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না রে!”
“আমারই তো বিশ্বাস হচ্ছে না।”
“আচ্ছা এখন কী করবি তুই?”
“কী করব?”
“তুর্য ভাইয়া তো ভালোবাসার কথা বলে দিল। তুই বলবি না?”
“না।”
“কেন? আগের জেদ ধরে বসে আছিস?”
“উঁহু।তার ওপর আমার কোনো জেদ নেই। সে তার জায়গায় ঠিক ছিল।”
“তাহলে সমস্যা কী?”
“সমস্যা আমাদের পরিবার। মানবে না কেউ।”
“ধুর! পরে কী হবে না হবে সেটা ভেবে এখন বর্তমানকে নষ্ট করতে চাচ্ছিস।”
“কিছুই নষ্ট করতে চাচ্ছি না। সময় যেভাবে চলছে চলুক। এই ছয়টা মাস অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে রেখেছি। এখন নতুন করে আবার সবকিছুর সূচনা করতে চাই না।”
“একটা কথা বলতো সত্যি করে।”
“কী?”
“তুই তাকে ভালোবাসিস না?”
“জানি না। খিদে পেয়েছে। চল খাব।”
“উত্তর দে পরী।”
“কী ঘ্যানঘ্যান শুরু করলি? কোনো উত্তর নেই।”
পরী ডাইনিং টেবিলে বসে দুজনের জন্য খাবার বাড়ছে। এদিকে এক কথা বলে বলে কানের পোকা নাড়িয়ে দিচ্ছে মেহনুবা। কিন্তু পরী যেন পণ করে বসেছে এই বিষয়ে কোনো কথা শুনবেই না। একসময় বিরক্ত হয়ে মেহনুবাও থেমে যায়। চুপচাপ খাচ্ছে। পরী জিজ্ঞেস করে,
“বিয়ে কবে করবি তোরা?”
মেহু রাগ দেখিয়ে বলে,
“আমার বিয়ে নিয়ে মরছিস কেন?”
পরী মিটিমিটি হেসে বলে,
“মরলাম কইরে বাবা!”
মেহু চামচ দেখিয়ে বলে,
“কথা বলবি না তুই আমার সাথে।”
পরী এবার শব্দ করে হাসে। এতে আরো রেগে যায় মেহনুবা। মেহনুবার মেকি রাগে দারুণ মজা পায় পরী। খাওয়া শেষ করে পরী টিভি দেখতে বসে যায়। পাশেই মেহনুবা চ্যাটিং করছে সাগরের সাথে। এরমধ্যেই প্রিয়ম একবার ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে ওদের আসতে দেরি হবে। তাই দুজনে যেন ঘুমিয়ে পড়ে। পরী আর বেশিক্ষণ অপেক্ষা না করে শুয়ে পড়েছে। মেহনুবাও শুয়ে পড়েছে। তবে ও ফিসফিস করে সাগরের সাথে কথা বলছে। পরীর চোখে এখন ঘুম নেই। সন্ধ্যায় ঘুমিয়েছে বলেই কি এখন ঘুম আসছে না নাকি অন্য কারণে ঘুম উধাও সেটাও বুঝতে পারছে না। একবার এপাশ করছে তো আরেকবার ওপাশ। বালিশের পাশেই তুর্যর দেওয়া গোলাপটা। ফুলটা হাতে নিয়ে ঘ্রাণ নেয় পরী। অজানা অনুভূতি মনের মধ্যে কড়া নাড়ছে। কিন্তু এই অনুভূতিকে প্রশ্রয় দেওয়া কতটুকু ঠিক হবে?
———————–
প্রচণ্ড শীতে কাঁপুনি ধরে গেছে পরীর। মেহনুবা গুটিসুটি হয়ে জাপটে ধরে আছে পরীকে। গায়ের ওপর দুজনেরই কম্বল, লেপ আছে। তবুও শীতটা যেন আজ বেশিই। পরী একটু উঁচু হয়ে বিছানার পাশে থাকা জানালার কাঁচটা খু্লে দেয়। হুহু করে বাতাস প্রবেশ করে রুমে। ঠান্ডা বাতাসে শরীর শিরশির করে ওঠে। গায়ের লোমও দাঁড়িয়ে গেছে। জানালার কার্ণিশ, কাঁচ ভেজা। তার মানে বৃষ্টি হয়েছিল। এই শীতের মধ্যেও বৃষ্টি! এজন্যই তো এত বেশি শীত করছে।
পরী আলসেমি ছাড়িয়ে গরম বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে। কেউই এখনো ঘুম থেকে উঠেনি। বেলা তো আট’টা পার হয়ে গেছে। তাহলে এখনো সবাই ঘুমে যে! পরক্ষণেই মনে হলো আজ তো শুক্রবার। পরী ব্রাশে টুথপেস্ট মিশিয়ে ছাদে চলে যায়। বৃষ্টি হওয়ার কারণে ছাদের ফ্লোর ভেজা। কর্ণারে, কর্ণারে এখনো পানি জমে আছে। গাছগুলোর পাতা ভিজে আছে। শালটা ভালোমত শরীরের সাথে পেঁচিয়ে নেয়। শীতের জন্য দাঁড়িয়ে থাকাই যাচ্ছে না। হাত-পা কাঁপছে সমানে। ঘুমে ঢুলুঢুলু হয়ে হেলতেদুলতে ছাদে আসে মেহনুবা। বিরক্ত নিয়ে বলে,
“বাল! তোদের জ্বালায় শান্তিতে একটু ঘুমানোও যায় না।”
পরী ভ্রু কুঁচকে বলে,
“তোদের মানে?”
“আবার মানে কী? তোর আর তোর তুর্যর।”
“কেন কী হয়েছে?”
“ফোন দিয়ে দিয়ে বিরক্ত করে ফেলছে। কতটা অতিষ্ঠ হয়ে এমন নরম গরম বিছানা ছেড়ে ছাদে ছুটে এসেছি বুঝতে পারছিস?”
“তোর নাম্বার পেল কোথায়?”
“তোর ফোনেই দিছে।”
মেহনুবা পরীর ফোনটা এগিয়ে দেয়। ফোন হাতে নিতে না নিতেই আবার তুর্যর কল আসে। সেই পরিচিত নাম্বারটা থেকে। যেই নাম্বার থেকে ছয় মাস আগে কথা হয়েছিল। আর এই ছয় মাসে কমবার ট্রাই করেনি পরী। মায়ের নাম্বার থেকে বহুবার কল দিত। প্রতিবারই বন্ধ পেত। একটা সময় ফোন দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। তুর্যকে ওর মতো করেই ভালো থাকতে দিয়েছিল। তাহলে এখন কেন নতুন করে এমন হচ্ছে?
পরী ভাবনাগ্রস্ত হয়ে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে আছে। মেহনুবা হাই তুলতে তুলতে বলে,
“ফোনটা রিসিভ কর।”
পরী মেহনুবার দিকে একবার তাকিয়ে ফোন রিসিভ করে। মেহনুবা চুপিসারে বলে,
“তুই কথা বল। আমি ব্রাশ আর আমার ফোনটা নিয়ে আসি।”
পরী মাথা নাড়ায়। ফোনের ওপাশ থেকে তুর্য বলে,
“তোমায় ফোন চালাতে বলেছে কে? কোন প্রয়োজনে তুমি ফোন চালাও?”
“এটা আবার কেমন প্রশ্ন?”
“প্রশ্ন যেমনই হোক। আমার উত্তর চাই।”
“আজগুবি কোনো প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই।”
“আজগুবি কীভাবে হলো? মানুষ ফেসবুক চালালে অন্তত ম্যাসেজ রিকোয়েস্টটা চেক করে? আর তাছাড়া তোমাকে তো ফোন দিয়েও পাওয়া যায় না।”
“ছাদে ছিলাম।”
“তাও ভালো। আমি তো ভেবেছিলাম মঙ্গলগ্রহে ছিলে।”
“শাট আপ!”
পরীর ধমক শুনে তুর্য হাসতে থাকে। মেহনুবা ব্যতিব্যস্ত হয়ে ছাদে এসে বলে,
“পরী, সাগর বলেছে বাড়ির বাইরে আসতে। পাশেই যে একটা নদী আছে না? ওখানে যেতে বলেছে।”
পরী ফোনটা কান থেকে নামিয়ে বলে,
“তাহলে যা।”
“আমি একা যাব নাকি? তুইও চল।”
“তুই তোর বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করবি। মাঝখানে আমি কাবাব মে হাড্ডি হব কেন?”
“আজকের ওয়েদারটা কত সুন্দর দেখেছিস? চল না প্লিজ। কাল তোকে আমি ফুসকা খাওয়াব।”
“ঘুষ লাগবে না আমার। যাব।”
মেহু খুশি হয়ে পরীকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“চল তাহলে।”
“এখনই?”
“হ্যাঁ। নরমালভাবেই যাব।”
“আচ্ছা।”
পরী এবার ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে তুর্য কল কেটে দিয়েছে। ভালোই হয়েছে কল কেটেছে।
রুমে গিয়ে মুখটা ধুয়ে নেয় পরী। পাঞ্চ ক্লিপ দিয়ে চুল বেঁধে গায়ে শাল জড়িয়ে নিয়ে বলে,
“চল।”
দু বান্ধবী হাড়কাঁপা শীতে হাত ধরাধরি করে কাঁপতে কাঁপতে নদীর পাড়ে যায়। কিছুদূর এগিয়ে যেতেই সাগর ছুটে আসে সামনে। সাগরকে দেখে মেহনুবা লজ্জাবতী গাছের মতো যেন লতিয়ে যায় লজ্জায়। পরী ওদের স্পেস দেওয়ার জন্য বলে,
“তোমরা সামনে আগাও। আমি আসছি।”
মেহনুবা আর সাগর সামনে সামনে হাঁটছে। পরী পিছনে চুপচাপ হাঁটছে। এখন রাস্তাঘাটে কোনো মানুষজন নেই। এত শীতের মধ্যে কেই বা উঠবে ঘুম থেকে। আশেপাশে কোনো দোকান থাকলে অবশ্য দোকানীরা আসতো। কিন্তু এইখানে তাও নেই। হাতে গোনা কয়েকটা টিনশেডের বাড়ি। আর মাঝখানে বিশাল এই নদী। সচারচর বিকেলের দিকে এখানে বেশি মানুষ দেখা যায়। তবে এখন নয়। গরমের সময়। বাচ্চারা তখন লাফিয়ে, ঝাঁপিয়ে গোসল করে। কেউ কেউ মাছ ধরে। কেউ বা একটু সময় কাঁটাতে হাঁটতে আসে। শহুরে জীবনেও যে এমন একটা প্রাণবন্ত জায়গা আছে তা এখানে না আসলে বোঝাই যাবে না। এখন তো শীতের সময়।খোলা নদীর আশেপাশে প্রচুর বাতাস। হুট করেই কেউ একজন পরীর হাতের আঙুলের ফাঁকে আঙুল ঢুকিয়ে হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে। পরী চমকে গিয়ে ফিরে তাকায় পাশে। সেই মুগ্ধকর হাসিটা দেখিয়ে তুর্য ভ্রু নাচিয়ে বলে,
“সারপ্রাইজটা কেমন দিলাম বলো?”
পরী কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। কেবল মুগ্ধ নয়নে দেখছে তুর্যর মুগ্ধ করা হাসিটা। এর থেকে যতই দূরে পালানোর চেষ্টা করছে ততই যেন তুর্য আঁকড়ে ধরছে পরীকে। তুর্য ডান হাত দিয়ে তুড়ি বাজাতেই পরীর ভ্রম ভেঙে যায়। দ্রুত হাত ছাড়িয়ে নিতে গেলে তুর্য আরো শক্ত করে চেপে ধরে বলে,
“একদম নয়।”
পরীর মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। কপাল কুঁচকে বলে,
“কী করছেন? কেউ দেখে ফেললে খারাপ ভাববে।”
“এখন কেউ আসবে না আমাদের দেখতে। তাছাড়া তোমার শালের কর্ণারের জন্য দেখা যাচ্ছে না আমাদের হাত ধরাধরি।”
পরী চোখ গরম করে তাকায়। তুর্য ভয় পাওয়ার মতো করে বলে,
“ওরে বাবা! যেভাবে তাকিয়ে আছো মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই ভষ্ম করে ফেলবে।”
“পারলে তাই করতাম।”
“ভষ্ম তো তুমি আমায় করেই দিয়েছ।”
“হয়েছি কী আপনার বলেন তো? হুট করে এসেই এমন রোমান্টিক আচরণ শুরু করেছেন কেন? কালকে বাসায় গিয়ে যা করলেন! এখন আবার হাত ধরে আছেন। কী সমস্যা?”
“হুট করে ফিরে এসে লুট করে নিয়ে যাব।”
“ওরে বাবা! গানও শুরু করে দিলেন।”
“আমার এই বাজে স্বভাব কোনোদিন যাবে না।”
“সেটা আপনাকে দেখলেই বোঝা যায়।”
“আচ্ছা আর কী বোঝো আমায় দেখলে?”
“আমার মাথা।”
“বুঝেছি। রেগে গেছ। চলো হাঁটি।”
পরীর উত্তরের অপেক্ষা না করেই তুর্য হাত ধরে হাঁটতে থাকে। পিচ ঢালা রাস্তায় প্রিয় মানুষটির হাত ধরে হাঁটা কম সুখের নয়। শিশিরভেজা সবুজ ঘাস দেখে তুর্য বলে,
“জুতো খুলো।”
পরী অবাক হয়ে বলে,
“কেন?”
“আরে খুলো আগে।”
পরী ঘাড়ত্যাড়ামি করে বলে,
“না।”
তুর্য তখনই নিচু হয়ে পরীর জুতো খুলে দিতে যায়। পরী চেঁচিয়ে এক পা পিছিয়ে যায়। বলে,
“পায়ে হাত দিচ্ছেন কেন?”
“স্বেচ্ছায় তো জুতো খুলছ না।”
“খুলছি। ওয়েট।”
পরী জুতো খুলো বাম হাতে নিয়ে বলে,
“হয়েছে?”
তুর্যও জুতো খুলে ডান হাতে নেয়। তারপর পরীর হাত ধরে ঘাসের ওপর হাঁটতে হাঁটতে বলে,
“তুমি ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলে। ভালোবাসার মানুষটির হাত ধরে বৃষ্টিতে ভেজা পিচঢালা রাস্তায় হাঁটতে চাও। শিশিরভেজা ঘাসের ওপর দিয়ে হেঁটে গল্প করতে চাও। আজ তোমার সেই ইচ্ছে পূরণ করে দিলাম। তাছাড়া সত্যি বলে, এইভাবে শিশিরে ভেজা ঘাসের ওপর হাঁটতে আমারও ভীষণ ভালো লাগছে। যতটা আশা করেছিলাম তারচেয়ে অনেকগুণ বেশি ভালো লাগছে। অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে যা আমি তোমায় বলে বোঝাতে পারব না।”
পরী মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনছে তুর্যর কথা। এতটা ভালোবেসেও কথা বলতে এই মানুষটা? কিন্তু পরী প্রসঙ্গ পাল্টে বলে,
“আপনি জানলেন কী করে আমার এখানে আসার কথা?”
তুর্য হেসে বলে,
“তুমি খুব চালাক। কী সুন্দর বিচক্ষণতার সাথে এত সুন্দর মুহূর্তটা এড়িয়ে গেলে।”
সত্যিটা তুর্য ধরে ফেলেছে বলে পরী ইতস্তত করতে থাকে। তুর্য হেসেই বলে,
“মুখ লুকাতে ইচ্ছে করছে? তাহলে বলব এই বুকে মুখ লুকাও। তোমার জন্য এই বুক উন্মুক্ত।”
পরী এবার ভীষণ লজ্জায় পড়ে যায়। এতদিনের ঝগড়ুটে ছেলেটা হঠাৎ করেই রোমান্টিক হয়ে গেলে যে কী অস্বস্তি লাগে তা কি সামনে থাকা তরুণটা বুঝে? তুর্য পরীকে আর লজ্জা না দিয়ে প্রসঙ্গ পাল্টে ফেলে বলে,
“তুমি যখন মেহনুবার সাথে কথা বলছিলে তখন আমি লাইনেই ছিলাম। তোমাদের সব কথাই শুনেছি। তাই লাইন কেটে দিয়েছিলাম পরে। আর এখন এখানে উপস্থিত হয়ে তোমায় সারপ্রাইজ দিলাম।”
“আমি তো সারপ্রাইজ চাইনি।”
“ধুর বোকা! সারপ্রাইজ আবার কেউ চায় নাকি? আমি তো ভালোবেসে দিয়েছি।”
“হঠাৎ করে এত ভালোবাসা যে?”
“তো ভালোবাসা কি হিসেব করে বুঝে-শুনে হয়? তুমি যখন আমায় ভালোবেসেছিলে তখন কি ভেবেচিন্তে ভালোবেসেছিলে?”
পরীর কাছে এর কোনো উত্তর নেই। তাই চুপ করে থাকে। তুর্য বলে,
“জানি ভেবেচিন্তে ভালোবাসোনি। ভেবেচিন্তে বিজনেস হয়। ভালোবাসা নয়। তাছাড়া যে ভালোবাসায় চিন্তা-ভাবনা থাকে সেখানে স্বার্থ থাকে। আমি জানি তুমি কোনো স্বার্থ দেখে আমায় ভালোবাসোনি। আর আমিও কোনো স্বার্থ দেখে তোমায় ভালোবাসিনি। ভালোবাসার জন্য ভালোবাসি। ভালোবেসে ফেলেছি আমি।”
পরী গোপনে একটা দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করে বলে,
“আমার কথা বাদ দিন। আগে ভালোবেসেছি মানে তো এই নয় যে এখনো ভালোবাসি।”
“তুমি বলতে চাইছ তুমি আমায় ভালোবাসো না আর?”
“ঠিক তাই।”
“আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলো তো।”
পরী তৎক্ষণাৎ তুর্যর চোখের দিকে তাকায়। তবে স্থির রাখতে পারেনি। চোখ নামিয়ে ফেলেছে। তুর্য মুচকি হেসে বলে,
“আমি জানি, তুমি আমায় এখনো ভালোবাসো। আমার সঙ্গ, আমার স্পর্শ তোমার ভালো লাগে। তুমি নিজেই ভেবে দেখো তুমি কতবার আমার থেকে নিজের হাত ছাড়াতে চেয়েছ?”
পরী আমতা আমতা করে বলে,
“কীসব যুক্তি দিচ্ছেন?”
“ভুল বলেছি?”
“অবশ্যই।”
“তাহলে সঠিকটা কী তুমি বলো।”
“আমি ভালোবাসি না।”
“আমি তোমাকে চাই পরী।”
“আমি চাই না। তবে দোয়া করি, আপনি আমার মতোই কাউকে পান।”
“আমার তোমার মতো কাউকে চাই না। আমার তোমাকেই চাই।”
Leave a comment