রান্না শেষে ঘেমে-নেয়ে একাকার নামী। এমতাবস্থায় খেতে বসা সম্ভব না। তাই সকলকে বলল, খেয়ে নিতে। সে গোসল সেরে খাবে। সৌধ বাঁধ সেধে বলল,
‘ এতক্ষণ যাবৎ পরিশ্রম করলে। আর তোমায় ছাড়া আমরা খেয়ে নিব? এ তো হয় না বোন। ‘
সৌধর মুখে বোন শব্দটি শুনে আপ্লুত হলো নামী। সৌধ মৃদু হেসে বলল,
‘ নিধি নিচে আসতে পারবে না। আমরা বরং খাবার গুলো উপরে নিয়ে যাই৷ তুমি শাওয়ার নিয়ে উপরে চলে আসো কেমন? ‘
নম্র স্বরে সম্মতি দিয়ে নিজের রুমে চলে গেল নামী।
আইয়াজ তখন সৌধর কানের কাছে মুখ নিয়ে নিচু কণ্ঠে বলল,
‘ আরেব্বাস, একসময় সুহাসের প্রক্সি দিতে চাইলি। মানে বউ করতে চাইলি এখন আবার বোন করে ফেললি! তুই পারিসও দোস্ত। ‘
সৌধ চাপা স্বরে উত্তর দিল,
‘ ওটা জাস্ট ফান ছিল গাধা। বন্ধু বউকে স্বীকার করলে ভাবি করতাম। বউ স্বীকার করেনি তাই বোন করে ফেললাম। ‘
হাসল আইয়াজ। নাকের ডগায় চলে আসা চশমাটা ঠেলে দিয়ে বলল,
‘ বুঝলাম। ‘
সৌধ বাঁকা হেসে বলল,
‘ আরো একটা জিনিস বোঝার বাকি আছে। ‘
‘ কী? ‘
‘ নিধি আমার মনের কথা জেনে গেছে। সো লুকোচুরি খেলার সমাপ্তি। আজ থেকে যা হবে সব ওপেনলি। ‘
অবাক কণ্ঠে আইয়াজ জিজ্ঞেস করল,
‘ কী জেনে গেছে নিধি? ‘
‘ আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক একদিন হাজব্যন্ড ওয়াইফে পরিণত হবে, এটাই। ‘
বিস্মিত হলো আইয়াজ। অতিরিক্ত চমক পেলে তোতলাতে শুরু করে সে৷ তাই তুতলিয়েই বলল,
‘ হোয়াট! এর আগে কখনো বলিসনি তো? ‘
চোখ টিপল সৌধ বলল,
‘ সারপ্রাইজ। ‘
***
ফারাহ অপেক্ষা করছে নামীর জন্য। আইয়াজ আশপাশেই ঘুরঘুর করছে। একে অপরের সঙ্গে চোখাচোখি হয়ে যাচ্ছে মাঝে মাঝেই। আইয়াজের বোকা চোখের প্রগাঢ়তায় হৃৎস্পন্দন ক্রমশই বেড়ে চলেছে মেয়েটার৷ শ্যামলা বর্ণের সরল মুখের স্বচ্ছ
চোখজোড়ার ভাষা পড়তে পারছে সে। ড্রয়িংরুমের শোভামণ্ডিত সোফায় বসে ফারাহ। হঠাৎ আইয়াজ এসে তার সম্মুখে বসল। জীবনে প্রথমবার নিজ হৃদয়ে কারো প্রতি প্রণয়ানুভূতি টের পেয়েছে আইয়াজ। পুস্তকের বাইরে দৃষ্টি থমকেছে নিগূঢ়ভাবে। এই অনুভূতি ভীষণ মোহনীয়, খুবই প্রগাঢ়। আকস্মিক আইয়াজ সম্মুখে এসে বসায় বেশ আড়ষ্টতা কাজ করল ফারাহর। লজ্জায় রঙিন হয়ে ওঠল তার গাল দুটো। লজ্জা পাচ্ছিল আইয়াজও। অন্যান্য ছেলেদের তুলনায় সে আলাদা। কোনো দুরন্তপনা নেই তার মধ্যে। আর না আছে মেয়ে ঘটিত, প্রেম ঘটিত ব্যাপারে অভিজ্ঞতা। ফারাহ নামক এই মেয়েটার প্রতি হুট করেই এত বেশি অনুভূতি জেগে ওঠেছে যে যা অবিশ্বাস্য, যা কল্পনার অযোগ্য তাই করে বসছে৷ আইয়াজের কাণ্ড দোতলার বারান্দা থেকে দেখছিল, সৌধ, সুহাস। মিটমিটিয়ে হাসছিল ওরা৷ পাশাপাশি সুহাস ফোনে কয়েক সেকেণ্ডের ভিডিয়ো করেও নিল৷ আইয়াজ বন্ধুদের কাণ্ড সম্পর্কে অজ্ঞাত রইল৷ সে নিজের কাণ্ড করতে মগ্ন।
খুবই কোমল এবং মোহময় স্বরে সে ফারাহকে জিজ্ঞেস করল,
‘ তোমার কি বোরিং লাগছে? ‘
একপলক তাকাল ফারাহ। চোখের চশমা ঠিক করে দৃষ্টি নইয়ে ফেলল। মাথা দু’দিকে নাড়িয়ে বোঝাল বোরিং লাগছে না৷ এমন মুহুর্তে সুহাস, সৌধর উপস্থিতি ঘটল৷ হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা সুহাসের। সৌধ হালকা কেশে ওঠার ঢং করে বলল,
‘ আটজোড়া চোখ তাহলে প্রেমে পড়েই গেল! ‘
বিস্মিত হওয়ার ভাণ ও কণ্ঠে। আইয়াজ আচমকা দাঁড়িয়ে গেল। দাঁড়িয়ে গেল ফারাহ। আকস্মিক ওদের ওঠে পড়ায় সুহাস ঢং করে বলল,
‘ ও বাবা দেখেছিস কাণ্ড! ‘
সৌধ মাথা দুলিয়ে বলল,
‘ হু হু দেখলাম। খুব তাড়াতাড়ি সানাই বাজাতে হবে তাহলে। ‘
আইয়াজ বোকা চোখে একবার ফারাহর দিকে আরেকবার বন্ধুদের দিকে তাকাল। ফারাহ যেন লজ্জায় মাটিতে মিশে যাওয়ার উপক্রম। ওদের এমন অবস্থায় ওখানে উপস্থিতি ঘটল নামীর। সদ্য স্নান করে আসা সে রমণীকে দেখে চোখ আটকে গেল সকলেরই৷ হলুদ রঙের ঘাগরার সঙ্গের কালো রঙের টিশার্ট পরনে নামীর। গলায় হলুদ রঙা জর্জেট ওড়না ঝুলানো। ভেজা চুলগুলো পেছনে ছড়ানো। কানের পাশে ছোটো-ছোটো চুলগুলো থেকে এক দু’ফোঁটা জল গড়াচ্ছে। কী পবিত্র, কী স্নিগ্ধ ও মুখশ্রী! ঘন পাপড়িতে আবৃত কাজল কালো চোখ, লিপস্টিক বিহীন পাতলা মসৃণ ঠোঁটজোড়ায় যেন অদ্ভুত সৌন্দর্যে মণ্ডিত। শ্যামলা বর্ণের এই মেয়েটির মধ্যেও আছে ধারাল সৌন্দর্যের বসবাস। খুব কাছে থেকে, খুব নিগূঢ়ভাবে যে পুরুষ এ সৌন্দর্য অনুভব করতে পারবে। বিনা দ্বিধায় স্বীকার করতে বাধ্য, সে সৌভাগ্যবান পুরুষ। সকলের নির্নিমেষ দৃষ্টি হঠাৎই সুহাসের দিকে ঘুরে গেল৷ সুহাস অপলকে তাকিয়ে নামীর পানে। খেয়াল করে ইতস্তত বোধ করতে লাগল নামী। নিচু গলায় বলল,
‘ রাত হয়ে যাচ্ছে, চলুন খেয়ে নিই সকলে। ‘
সবাই ওর কথা শুনল। কিন্তু সুহাস শুনল কী? বোধহয় না। তাই তো নেই কোনো ভাবান্তর। আইয়াজ সুহাসের দিকে তাকিয়ে সৌধর কাছে এগিয়ে এলো। চাপা স্বরে বলল,
‘ দোস্ত সুহাসের চোখ দেখছিস? ‘
সৌধ ফিসফিস করে বলল,
‘ সব দেখছি আমি৷ প্ল্যানটার কথা মনে আছে? ‘
‘ হ্যাঁ দ্রুত খাওয়া শেষ করে এদের ব্যবস্থা করব, চল।’
সুহাসের রুমে মেঝেতে বসল সবাই। ফারাহ আর নামীই সকলকে খাবার পরিবেশন করে দিল৷ সুহাস বেশ অনেকটাই চুপচাপ হয়ে গেছে। না চাইতেও বার বার তার দৃষ্টি নামীতে থমকাচ্ছে। গোসল শেষে এই মেয়েটাকে অভাবনীয় স্নিগ্ধ দেখায়। সে রোজই বিষয়টা খেয়াল করে। হয় বেলকনিতে দাঁড়িয়ে না হয় ছাদে দেখা হয়ে গেলে৷ কিন্তু আজ ভেজা চুলে এতটা কাছ থেকে দেখে যেন অনেক বেশিই অপরূপা লাগছে। না চাইতেও বার বার দৃষ্টি চলে যাচ্ছে সুহাসের। কত ললনাদের সঙ্গে ওঠাবসা তার। অথচ এই নামীতে যেন অন্যরকম ঘ্রাণ মেশানো। যা তাকে খুব করে টানে। ভাগ্যিস মাঝের দেয়ালটা ছিল! নয়তো তাণ্ডব ঘটে যেত মেয়েটার সঙ্গে, ভয়াবহ তাণ্ডব৷ দীর্ঘশ্বাস ফেলল সুহাস৷ নামী খাওয়ার ফাঁকে সুহাসের দৃষ্টি খেয়াল করে মনে মনে বকল,
‘ তেদর ছেলে কোথাকার! ‘
সুহাসও খেয়াল করল নামী তার দিকে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছে৷ নিশ্চয় মনে মনে বকছে তাকে? বুঝে নিয়ে সকলের সামনেই বলে ওঠল,
‘ প্যাঁচার মতো চোখে কী দেখছ? আফসোস হচ্ছে আমার মতো সুদর্শন ছেলে হাতছাড়া হয়ে গেছে বলে? লোভ হচ্ছে আমার সান্নিধ্য পেতে? ‘
আচমকা সুহাসের এমন কথায় সকলে ভ্যাবাচ্যাকা খেলেও নামী অপমান বোধ করল। খাওয়া থেমে গেল তার৷ মুখ কঠিন হয়ে গেল নিমিষেই। নিধি ধমক দিল সুহাসকে। বলল,
‘ সুহাস একদম বাজে কথা বলবি না৷ কখন থেকে দেখছি তুইই ওর দিকে অভুক্ত প্রানীর মতো চেয়ে আছিস৷ আর বলছিস উল্টোটা? ‘
ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ল নামী। সে নিঃশ্বাসের শব্দ পেয়ে সুহাস বলল,
‘ দেখ কীভাবে শ্বাস ফেলে স্নেকি গার্ল কোথাকার। ‘
আর চুপ থাকতে পারল না নামী। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘ মঙ্গুস বয়! এজন্যই বুঝি সহ্য করতে পারছেন না? ‘
হো হো করে হেসে ওঠল সৌধ। সুহাসকে বলল,
‘ দারুণ জব্দ। ‘
এমন সময় আইয়াজ বলল,
‘ আমার মনে হয় সুহাস বেজি না ও হলো সাপুড়ে। ‘
ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল সৌধ। সুহাসের কানে ফিসফিস করে বলল,
‘ আইয়াজ বোধ হয় ঠিকই বলছে দোস্ত। তোর মাঝে কোনো সাপুড়ে আত্মাই ভর করেছে। ‘
ওপাশ থেকে আইয়াজ নিচু কণ্ঠে বলল,
‘ আচ্ছা দোস্ত তোর কি সাপ নিয়ে খেলাধুলা করতে মন চাচ্ছে? শুনেছি সাপুড়েরা সাপ নিয়ে খেলাধুলা করতে না পারলেই উল্টাপাল্টা করে। ‘
ক্ষেপে গেল সুহাস। খাবার ছেড়ে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল সে৷ পরিস্থিতি অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে বুঝতে পেরে নিধি ধমকে ওঠল সবাইকে। বলল,
‘ কী শুরু করলি তোরা? শান্তিতে খেতে দিবি না? সুহাস বোস, বোস বলছি। তুই যদি খাবার ছেড়ে ওঠে যাস আমিও খাবার ছেড়ে এক্ষুনি তোর বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যাব। ‘
নিধির হুমকি শুনে সবাই ভয় পেল। শুরু করল যে যার মতো দ্রুত খেতে। খাওয়া শেষে ঠাণ্ডা পানীয় পান করল সবাই। এরপর নামী আর ফারাহ চলে যাবে বলে বিদায় নিতে চাইল। কিন্তু পারল না। নিধি আর আইয়াজ আটকাল৷ তারা এখন একটা গেম খেলবে। নামীর মনটা খিঁচে আছে তাই সে রাজি হলো না। সুহাসও দাপট দেখিয়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। আইয়াজ অনুরোধ করল খুব। তার অনুরোধে ফারাহ নরম হলো। করুণ চোখে তাকাল নামীর দিকে। নামী তবুও রাজি হলো। সে গটগট পায়ে রুম ছাড়তে উদ্যত হলো। দরজা পর্যন্ত যেতেই সৌধ পথ আটকাল। অমায়িক একটা হাসি দিয়ে বলল,
‘ কী ব্যাপার আমার বোন তো এতটা অবাধ্য নয়। ‘
মুহুর্তেই শান্ত হয়ে গেল নামী। সৌধর মুখে এই নিয়ে দু’বার বোন শুনল সে। বুকের ভেতরটা বিগলিত হয়ে ওঠল। আমতা আমতা করে বলল,
‘ আসলে ভাইয়া…
বাকিটা বলতে পারল না। সৌধ বলল,
‘ আসলে, নকলে কিছুই নয়। আমরা যতক্ষণ না বলছি তুমি কোথাও যাচ্ছ না। ‘
নিশ্চুপ হয়ে গেল নামী। সৌধ ওর চোখে চোখ রেখে ভরসার সঙ্গে বলল,
‘ আদেশ নয় বন্ধু, ভাই হিসেবে ভালোবেসে সঙ্গ চাইছি। ‘
আর না করতে পারল না নামী। ওদিকে ফারাহ যে যেতে চাইছে না সেটাও টের পেল। অগত্যা ওদের সঙ্গে গেম খেলতে বসতে হলো। সৌধ গিয়ে টেনে নিয়ে এলো সুহাসকে। ওরা সবাই মেঝেতে গোল করে বসল। দু’লিটারের কোকাকলার খালি বোতল রাখল মাঝখানে। আইয়াজ খেলাটা বুঝিয়ে দিল সবাইকে,
‘ শোনো সবাই বোতলটা ঘুরানো হবে। যার দিকে মুখ করে থামবে তাকে আমরা যা বলব তাই করতে হবে।’
এরপরই খেলা শুরু হলো। নিধির দিকে বোতল থামতেই সৌধ বলল,
‘ চোখ বন্ধ করে যে কোনো একজন যুবককে কল্পনা করার চেষ্টা করবি। এরপর যার মুখটা বা যাকে দেখতে পারবি তার নামটা আমাদের বলবি। ‘
কথা অনুযায়ী চোখ বন্ধ করল নিধি। সবাই উৎসুক মুখে তার দিকে তাকিয়ে। বেশ কিছু সময় অতিক্রম হলো। কিন্তু চোখ খুলল না নিধি। যেন সে কিছু একটা অনুভব করছে। সৌধ বলল,
‘ কাকে দেখতে পাচ্ছিস? ‘
নিধি তখনকার বলা সৌধর কথা, স্পর্শ অনুভব করছিল। নিঃশ্বাস ভারি হয়ে ওঠছিল তার। এমন সময় সৌধর প্রশ্ন পেয়ে উত্তর দিতে গিয়ে থমকে গেল। এক ঢোক গিলে নিজেকে সচেতন করে নিয়ে বলল,
‘ অর্পণ স্যার! ‘
সৌধর মেজাজ খারাপ করল। কঠিন চোখে তাকাল সে। সুহাস ওর কাঁধে হাত রেখে ইশারা করল চুপ থাকতে। সৌধ দমে গেল। মনে মনে বলল,
‘ আচ্ছা খেলাটা শেষ হোক তারপর মনে করাচ্ছি তোকে। এখন আর কোনো রাখঢাক নেই আমার। ভুলে গেছিস তুই। ‘
এরপর আবার শুরু হলো বোতল ঘোরা৷ যা গিয়ে থামল সুহাসের দিকে। ঠিক এ মুহুর্তটুকুর অপেক্ষাতেই যেন ছিল সকলে। সবাই হইহই করে ওঠল। সুহাস বুঝে গেল এদের মাথায় কিছু চলছে। নিধি বলল,
‘ দোস্ত এটা কিন্তু খেলা। ‘
সুহাস ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘ হ্যাঁ আমার মাথায় আছে। তোরা মাথায় রাখলেই শান্তি। ‘
আইয়াজ মিটিমিটি হাসল। সুহাস চটে গিয়ে বলল,
‘ বদের মতো হাসবি না। ‘
সৌধ সবাইকে চুপ থাকতে বলে সুহাসকে বলল,
‘ আচ্ছা কেউ হাসবে না। এবার আমরা যা বলব তাই কর। ‘
সুহাসের মুখ থমথমে। সৌধ বলল,
‘ নামীকে হাঁটু গেড়ে প্রপোজ করবি। বলবি, আই লাভ ইউ সো মাচ। ‘
‘ অসম্ভব। ‘
সৌধর কথায় নামীর প্রথমে রাগ হতে নিচ্ছিল। কিন্তু কলেজ ক্যাম্পাসে ঘটা প্রথম দিনের কথা মনে পড়তেই চুপ হয়ে গেল। আর অপেক্ষা করতে লাগল, সুহাসের মুখে আই লাভ ইউ শোনার। আর বুঝিয়ে দেয়ার ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে কাউকে প্রপোজ করার, আই লাভ ইউ বলার জ্বালাটা ঠিক কেমন।
সুহাস কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না। নামী তাই তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
‘ ছেড়ে দিন ভাইয়া৷ আপনার উচিতই হয়নি এমন মেরুদণ্ডহীন প্লেয়ারকে নিয়ে খেলতে বসার। ‘
এহেন কথা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হলো সুহাস। তড়াক করে ওঠে দাঁড়াল সে। ক্রোধে গজগজ করতে করতে বলল,
‘ ওকে ফাইন। এটা যেহেতু খেলা সেহেতু মিথ্যামিথ্যি আর গেম হিসেবে বলাই যায়। ‘
মুহুর্তেই চারপাশ উৎফুল্ল হয়ে ওঠল। সুহাসের নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে নামীর সামনে বসে পড়ল, হাঁটু গেড়ে। মনে মনে একবার ভেবে নিল, আই লাভ ইউ বলেই সরে যাবে নামীদামির সামনে থেকে। এরপর তাকাল নামীর চোখের দিকে। নামী তখন ধূসর বর্ণের দাম্ভিক পুরুষটার দিকেই তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে। সুহাস ঐ চোখে অদ্ভুত চাউনি নিক্ষেপ করল। প্রস্তুত হলো প্রপোজ করতে,
‘ আই…
সবার মধ্যে টানটান উত্তেজনা। নিধি আইয়াজের হাত শক্ত করে চেপে ধরেছে৷ ফারাহ সরল চোখে তাকিয়ে আছে নামী, সুহাসের দিকে। সৌধ পকেট থেকে ফোন বের করে দৃশ্যটাকে ক্যামেরা বন্দী করতে ব্যস্ত। সুহাস একবার ‘ আই ‘ উচ্চারণ করে চুপ হয়ে গেছে। তাই নিধি তাকে তাড়া দিল,
‘ কী হলো এত লেট করছিস কেন? বল। ‘
সুহাস পুনরায় বলল,
‘ আই…’
বাকিটুকু যেন বেরই হচ্ছিল না। সৌধ বিরক্ত হয়ে গেল৷ আইয়াজ বলল,
‘ এমন ভাব করছিস মনে হয় জীবনে কোনো মেয়ে কে আই লাভ ইউ বলিস নি? এ শব্দটা যেন আজ নতুন জানসিছ, শিখছিস, আর বলতে চাচ্ছিস। ‘
সকলের থেকে সমানতালে উৎসাহ আর বিভিন্ন মন্তব্য পেতে পেতে একসময় সুহাস এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলল,
‘ আই হেইট ইউ সো মাচ নামীদামি। ‘
তৎক্ষণাৎ আচমকা দু-চোখ গলে দু’ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল নামীর গাল বেয়ে। সে সুহাসের চোখে দেখেছে সুহাস এ কথা বলতে চায়নি৷ সে সুহাসের মধ্যে আই লাভ ইউ বলার যে উদ্যম দেখেছে তা মিথ্যে নয়৷ মিথ্যা হতে পারে না। তবুও কেন? কেন? ঘৃণার ওজন এতটাই বেশি? যে মুখ থেকে ভালোবাসি শব্দটি আসতে গিয়ে ঘৃণাটাই বেরিয়ে আসে।
আপনি অপরাধী নন। অথচ কেউ আপনাকে দাঁড় করিয়েছে কাঠগড়ায়। নিক্ষেপ করছে অজস্র ঘৃণার ফলা৷ এরচেয়ে বড়ো তিক্ততা হয় না। এরচেয়ে যন্ত্রণাময় ঘটনা এ পৃথিবীতে আর কিছু নেই।
Leave a comment