ত্রিধারে তরঙ্গলীলা | পর্ব – ২৮

13 Min Read

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের জীবনের প্রথম প্রেম, প্রথম অনুভূতি জন্মায় ভুল মানুষকে কেন্দ্র করে। প্রেম কখনো ভুল হয় না, ভুল হয় না কাউকে ঘিরে হৃদয়ের তীব্র অনুভূতিতেও। ভুল হয় আসলে মানুষটা৷ তাই তো তীব্র আবেগ, দৃঢ় ভালোবাসাও ব্যর্থ হতে বাধ্য হয়।
কাল বিয়ে। সবাই ঘুমোনোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। কনে আজ ভীষণ ব্যস্ত। সারাদিনের আনুষ্ঠানিকতায় মাথা ধরেছে৷ বিছানায় হাত, পা মেলে শুয়ে পড়েছে সে৷
তাকে ঘিরে আছে কাজিন মহল। দাদুনি চুলে বিলি কে টে তেল লাগিয়ে দিচ্ছে। শারীরিক দুর্বলতা, মাথা ব্যথা, আশপাশ জুড়ে গিজগিজে মানুষ সিমরানের কথা বেমালুম ভুলিয়ে দিয়েছে স্মৃতি আপুকে। সৌধর মেয়ে বান্ধবীদের জন্য রুম গোছগাছ করা আছে। প্রাচী, আইয়াজ গেছে সুহাস, নামীর জন্য বরাদ্দ করা ঘরে৷ গল্প করছে তারা। সেই সঙ্গে অপেক্ষা করছে সৌধ নিধির ফিরে আসার৷ তারা দিব্যি জানে সৌধ, নিধি এখন নির্জন নিশীথে সময় কাটাচ্ছে। প্রাচী নিধির জন্য বরাদ্দ করা ঘরটা ফাঁকা ছিল। সিমরানেরও একটু ফাঁকা স্থানের দরকার ছিল। তাই ওই ঘরটায় ঢুকে পড়ল। বুকের বা’পাশটায় চিনচিন করছে তার। হাত, পা কেমন যেন অবশ হয়ে আসছে। মস্তিষ্ক পুরোপুরি ফাঁকা। ঘরে ঢোকার পর তড়িঘড়ি করে দরজা আঁটকে দিল৷ অনুভব করল
নিঃশ্বাসটাও বন্ধ হয়ে আসছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে খুব৷ শ্বাসরুদ্ধকর এই অনুভূতি থেকে মুক্তির আশায় শরীর ছেড়ে দিল মেয়েটা। আচমকা বসে পড়ল ফ্লোরে। থেকে থেকে দেহ কেঁপে ওঠল৷ বুকের বা’পাশের ব্যথাটা গাঢ় হচ্ছে ক্রমাগত টের পেয়ে
একহাতে চেপে ধরল ওখানটায়। অন্যহাতের তালু চেপে ধরল মুখে। কিয়ৎক্ষণ শব্দহীন বসে থাকার পর আচমকাই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠল। সৌধ তার কিশোরী বয়সের আবেগ। যুবতী বয়সের তীব্র অনুভূতি। এত বছর ধরে চেনে মানুষটিকে। অথচ একবারো টের পায়নি তার ভেতরে অন্য নারীর বাস। সেই নারীটি আর কেউ নয়, তার ভাই এবং সৌধর বেস্ট ফ্রেন্ড নিধি আপু! কান্নার দমকে থরথর করে কাঁপতে থাকল সিমরান। এ দহন কীভাবে সহ্য করবে সে? ও দৃশ্য কীভাবে ভুলবে? কীভাবেই বা মেনে নেবে সৌধর জীবনে নিধি আপুকে?
বাথরুমে ঢুকে চোখে, মুখে ঠাণ্ডা পানির ছিটা দিচ্ছিল নিধি৷ হঠাৎ দরজা বন্ধ করার শব্দ পায়। এরপরই কারো চাপা কান্নার আওয়াজ। বুক ধক করে ওঠে নিমিষেই! কে কাঁদছে এভাবে? এমন যন্ত্রণাময় কান্না কার? তীব্র কৌতূহল নিয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসে নিধি৷ অমনি দু-চোখ বিস্ফোরিত হয়ে যায় তার। সিমরান কাঁদছে! মুহুর্তেই শক্ত হয়ে যায় নিধি। সৌধর সঙ্গে রাগারাগি করে যখন ছাদ থেকে নেমে এলো তখন আবছা আলোয় সিমরানকে দেখতে পেয়েছিল সে৷ কিন্তু অতিরিক্ত রাগান্বিত থাকায় থামেনি। ইচ্ছে করেনি সিমরানকে প্রশ্ন করতে, সে এখানে কেন? কোনোভাবে কি তাকে আর সৌধকে ফলো করছিল? না প্রশ্ন করেছে আর না বুঝতে দিয়েছে সে সিমরানকে দেখেছে। কিন্তু সিমরান যে তার আর সৌধর মধ্যেকার সমস্ত ঘটনা দেখেছে তা নিখুঁতভাবেই টের পেল এই মুহুর্তের এই দৃশ্য দেখে। তবে কি সিমরান কোনোভাবে সৌধর প্রতি উইক?
মাথাটা ঝিমঝিমিয়ে ওঠল নিধির। আকস্মিক চোখ দু’টো বন্ধ করে নিল। ভাবতে শুরু করল গভীর কিছু ভাবনা৷ নিধি চমৎকার বুদ্ধিমতী এবং জ্ঞানী নারী৷ তাই খুব বেশি ভাবতে হলো না। যা বোঝার বুঝে ফেলল এক নিমিষে। ঠোঁটদ্বয়ে হাসি ফুটল তার৷ শুধু বুকের খুব গভীরে সুক্ষ্ম এক ব্যথার আঁচ পেল। যাকে পাত্তা দিল না খুব একটা। বিড়বিড় করে বলে,
‘ আমি যা ভাবছি তাই যেন সত্যি হয় খোদা। ‘
কথাটা বলেই ধীর পদক্ষেপে এগিয়ে গেল সিমরানের কাছে। সম্মুখে দাঁড়িয়ে ক্ষীণ কণ্ঠে আদর মিশিয়ে ডাকল,
‘ সিনুমনি ? ‘
হাঁটু নাড়িয়ে কেঁপে ওঠল সিমরান। আকস্মিক ভীতিকর কিছু দেখেছে এমন ভঙ্গিমায় তাকিয়ে রইল পলকহীন। নিধি ঈষৎ হেসে ধীরে ধীরে ওর সামনে বসল। হাত বাড়িয়ে স্পর্শ করল ওর অশ্রুসিক্ত গাল। বলল,
‘ কী হয়েছে আমার বনুটার? এত কষ্ট পাচ্ছে কেন হুম? ‘
চোখ দু’টি করুণ করে তাকিয়ে সিমরান। নিধির ভীষণ মায়া হলো। দু’হাতে ওর গালের নোনাপানির ধারা মুছে দিতে দিতে বলল,
‘ আমাদের ওভাবে দেখে কষ্ট পাচ্ছিস? তুই জানতি না অনেক বছর ধরেই সৌধ আমার প্রতি উইক? ‘
সিমরানের বুকের ভেতর সুঁচ ফুটল যেন। সে জানত না, সত্যি জানত না। জানলে আজ এভাবে আঘাত পেত না৷ হাত, পা থরথর করে কেঁপে ওঠল ওর৷ নিধির সুক্ষ্ম নজর এড়াল না সিমরানের কাঁপাকাঁপি। নিধি ওর মাথায় হাত বুলালো। আদর করল কিছুক্ষণ পুনরায় বলল,
‘ সৌধকে ভালোবাসিস? ‘
চোখ দুটো বন্ধ করে হুহু করে কেঁদে ফেলল সিমরান৷ ওর কান্না দেখে নিধির চোখ দু’টোও টলমল করছে। সে আবারো প্রশ্ন করল,
‘ ভালোবাসিস ওকে? ‘
যে প্রশ্নের উত্তর অনায়াসে দিয়ে দিতে পারত সিমরান। সে প্রশ্নের উত্তর আজ একেবারেই দিতে পারল না। সৌধকে সে ভালোবাসে কিনা এই উত্তর দেয়ার আগে হৃৎস্পন্দন থেমে গেল। চোখের পাতায় ফুটে ওঠল ছাদের সেই দৃশ্য। সৌধ ভাই নিধিকে ভালোবাসে। ব্যস, আর কী থাকে বলার? ঐ মানুষটার দৃঢ়তা সম্পর্কে কারোরি অজানা নয়৷ আজ যদি সে মরেও যায় সৌধর অনুভূতি, সিদ্ধান্ত কোনোটাকেই টলানো যাবে না। সে হয়তো আর পাঁচ জনের মতো ম্যাচিওর নয়৷ তাই বলে ভালোবাসার যে অনুভূতি বুকের ভেতর পুষে রেখেছে সে অনুভূতির প্রগাঢ়তা নিয়ে কোনো অবুঝতা নেই৷ সে সৌধকে ভালোবাসে বলেই জীবনে দ্বিতীয় কোনো পুরুষকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেনি৷ দ্বিতীয় কোনো পুরুষকে কাছ ঘেঁষতে দেয়নি। সে যে অনুভূতিতে সৌধ ভাইকে ভালোবাসে। সৌধ ভাইও নিশ্চয়ই একই অনুভূতিকে নিধি আপুকে ভালোবাসে? বুকটা হুহু করে কাঁদতে লাগল তার। কান্না মিশ্রিত অসহায় চোখ দু’টি স্থির করল নিধির ভেজা মুখে। বুকে পাথর চাপল যেন নিধির মুখটা দেখে। মন বার বার ডুকরে ওঠল একটা কথাই বলে,
‘ তুমি কত ভাগ্যবতী নিধি আপু, তুমি কত ভাগ্যবতী!’
সহসা কাঁধ ঝাঁকিয়ে নিধি প্রশ্ন করল,
‘ কীরে ভালোবাসিস সৌধকে? ‘
অসহায় ভঙ্গিতে মাথা দু’দিকে নাড়িয়ে না বোঝাল সিমরান৷ নিধি বিশ্বাস করল না। তাই কড়া গলায় বলল,
‘ তাহলে কাঁদছিস কেন? ‘
ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে সিমরান বলল,
‘ তুমি সৌধ ভাইকে কেন মারলে নিধি আপু? ভাইয়া তো তোমাকে ভালোবাসে। ‘
বিস্ময়ে কিংকর্তব্য বিমূঢ় নিধি! সন্দিহান চিত্তে ভাবে সিমরান এজন্য কাঁদছে? তার ধারণা সম্পূর্ণ ভুল? তৎক্ষনাৎ ক্ষীণ কণ্ঠে শুধায়,
‘ এজন্য কাঁদছিস? পিছু নিয়েছিলি কেন আমাদের? ‘
‘ সৌধ ভাই ছাদে যাচ্ছে দেখে ভাবলাম ভাইয়া, নামী আপু, তোমরা সবাই আছ৷ গল্প, আড্ডা হবে এসব ভেবেই পিছু নিয়েছিলাম। ‘
হেঁচকি তুলতে তুলতে বলল সিমরান৷ নিধি ভ্রু বাঁকিয়ে তাকিয়ে রইল। মেয়েটা কেমন ডাহা মিথ্যা বলল তাকে। আর কত অবাক করবে সুহাসের আহ্লাদী বোনটা? দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে। বলল,
‘ শোন এই পৃথিবীতে ছিয়ানব্বই পার্সেন্ট মানুষের প্রথম প্রেম হয় ভুল মানুষের প্রতি। আর চার পার্সেন্ট হয় সঠিক মানুষের প্রতি। সৌধ হচ্ছে ছিয়ানব্বই পার্সেন্টের মধ্যে একজন৷ আর তুই হলি চার পার্সেন্টের মধ্যে একজন। ‘
নিধির কথার মর্মার্থ এই মুহুর্তে বোঝা সম্ভব না সিমরানের। সে কাঁদো কাঁদো মুখে তাকিয়ে রইল। নিধি বুঝল মেয়েটা ভেতরে ভেতরে ডুকরে ম রছে। তাই আরো কাছাকাছি বসে জড়িয়ে ধরল মেয়েটাকে। পিঠে হাত বুলিয়ে নিচু গলায় বলল,
‘ সৌধকে ভালোবাসিস বোন? ‘
সিমরান চোখ বন্ধ করে নিঃশব্দে কাঁদতে লাগল। ঠোঁট কামড়ে উত্তর দিল,
‘ না আপু। সৌধ ভাই তোমাকে ভালোবাসে। ‘
‘ কিন্তু আমি ওকে ভালোবাসি না সিনু। ‘
আঁতকে ওঠল সিমরান। এমন একজন পুরুষের ভালোবাসা কোনো মেয়ে প্রত্যাখ্যান করতে পারে? মুখে বলল,
‘ সৌধ ভাইকে ভলো না বেসে থাকতে পারবে না আপু৷ দেখে নিও। ‘
‘ আর সম্ভব নয়। ‘
সহসা ওঠে দাঁড়াল নিধি। বলল,
‘ যদি তুই সৌধকে ভালোবাসিস বিনা দ্বিধায় বলতে পারিস। আর যদি না বাসিস তাহলে আমার বোঝার ভুল, চোখের ভুল দুঃখিত। ‘
কথাটা বলেই চলে যেতে উদ্যত হয় নিধি। সিমরান ত্বরিত তার দু’পা আঁকড়ে ধরে। বলে,
‘ আমি সৌধ ভাইকে ভালোবাসি না আপু। তুমি প্লিইজ সৌধ ভাইকে ফিরিয়ে দিও না। ‘
হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে কথাটা বলল সিমরান। নিধি হতভম্ভ হয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল। তার বুঝতে বাকি রইল না এই বাচ্চা মেয়েটা ভয়াবহ ভাবে সৌধতে আসক্ত। খাঁটি ভালোবাসার নিদারুণ উদাহরণ। সুহাসের ইমম্যাচিওর, রগচটা, জেদি, খামখেয়ালি বোনটা কবে এত বড়ো হয়ে গেল? কবেই বা বুকের ভেতর তার সৌধর জন্য এতখানি ভালোবাসার জন্ম দিল? আঁতকে ওঠল নিধি। একহাতে মুখ চেপে ধরে মনে মনে বলল,
‘ ছিঃ ছিঃ আমার সৌধ কেন হবে? আজ থেকে সৌধ তো শুধুই সিমরানের। ‘
.
.
গতরাতে সৌধ একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে আর নিধির কাছে ভালোবাসার আবেদন রাখবে না। আর না তার প্রণয় আহ্বানে সাড়া দিতে অনুরোধ করবে। অনেক হয়েছে ভদ্রভাবে, নরম সুরে ভালোবাসার ডাক। অনেক হয়েছে সোজা আঙুলে ঘি তোলার প্রচেষ্টা। এবার আঙুল বাঁকাবে। বাঁকাতেই হবে। সরাসরি নিধির পরিবারের সামনে দাঁড়াবে সে। হয় শান্তশিষ্ট ভাবে তার মনের মানুষকে চেয়ে নেবে নয়তো তীব্র অশান্ত রূপে ছিনিয়ে আনবে। সৌধর এই মনোবাসনাকে শুধু কঠিন সিদ্ধান্ত বললে ভুল হবে। এটা সৌধ চৌধুরীর এক কঠিন জেদও বলা যায়। যে জেদ নিধিকে তার বউ করেই ছাড়বে।
.
.
বিয়ে বাড়িতে সকল অতিথি উপস্থিত হয়েছে। বাকি শুধু সৌধর মেডিকেল কলেজের কয়েকজন টিচার্স। তার মধ্যে রয়েছে অর্পণ স্যারও। অর্পণ স্যারের অপেক্ষাতেই ছিল সকলে৷ স্যার এলে সৌধ, সুহাস, নিধি, নামী, আইয়াজ, ফারাহ এবং সিমরান। সকলে একসঙ্গেই খেতে বসল। গতরাতের পর থেকে সৌধ নিধির সঙ্গে কথা বলেনি। চোখ তুলে একবারটি যে তাকাবে তাও তাকায়নি৷ নিধি অবশ্য কয়েকবার কথা বলার চেষ্টা করেছে। ছেলেটা মারাত্মক জেদি। নিজের জেদে অটল রয় সব সময়। তাই কথা বলেনি। রাত থেকে সিমরানও বেশ স্বাভাবিক। নিধির পাশেই বসেছে সে। খাওয়ার ফাঁকে বারবার অর্পণ স্যারের দিকে তাকাচ্ছে সিমরান। অভিভূত হয়ে দেখছে শ্যামবর্ণীয় ত্বকের বলিষ্ঠ দেহের অধিকারী অর্পণ স্যারকে। গতরাতে সে নিধির সঙ্গে শুয়ে ছিল। অনেক গল্প করেছে দু’জন। সে গল্পের বেশিরভাগ জুড়েই ছিল অর্পণ স্যার৷ সেই গল্পের সঙ্গে আজ সামনাসামনি দর্শনে পুরোপুরি মিলে গেল অর্পণ স্যার। সিমরানের মুগ্ধতাও বিস্তৃত হতে শুরু করল। মনে মনে বলল,
‘ইশ, কী সুন্দর! ‘
খাওয়াদাওয়া শেষে কনে বিদায়ের পালা চলে আসে। পরিবারের সকলের মুখে নামে মেঘের ঘনঘটা। স্মৃতি আপু তার বড়ো ভাই সুনীল চৌধুরী আর ছোটো ভাই সৌধকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদছে। রক্তিম বর্ণ হয়ে আছে সৌধর চোখ দুটিও। বোন বিদায় এত্ত যন্ত্রণাদায়ক হয় বুঝতে পারেনি সে। কলিজাটা ছিঁ ড়ে যাচ্ছে যেন উফফ। সুজা চৌধুরী আর তানজিম চৌধুরী এলেন সেই মুহুর্তে। ছেলেমেয়ে জড়িয়ে ধরলেন দু’জনই। এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সাক্ষী হলো পরিবার, পরিজন আর অতিথিবৃন্দরা।
একদিকে স্মৃতি আপুর বিদায় পর্ব চলছে। অন্যদিকে নিধির ফোনে সমানতালে কল করে যাচ্ছে অর্পণ স্যার। নিধি সবার থেকে কৌশলে নিজেকে আড়াল করে অর্পণ স্যারের বলা জায়গাটায় চলে এলো দ্রুত। সৌধদের বাড়ির পিছন সাইট এটা। যার একপাশে ছোট্ট একটি পুকুর আর একপাশে টিন দিয়ে নির্মিত একটি স্টোর রুম। খেয়েদেয়ে হাঁটাহাঁটি করতে করতে ঠান্ডা আবহাওয়া খুঁজে পায় বাড়ির পেছন দিকে। আর তখনি নজর পড়ে দরজা খোলা স্টোর রুমটায়। এদিকে একেবারেই নির্জন। মানুষ জন নেই। মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপল অর্পণ স্যারের। পারপেল কালার চাকচিক্যময় শাড়ি পরিহিত রমণীরত্নটি আসা মাত্রই হেঁচকা টানে নিয়ে চলে গেল ঘরের ভেতর। নিধি কিছু বুঝে ওঠার পূর্বেই অর্পণ স্যার পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে ঠোঁট চেপে ধরল। ভারিক্কি কণ্ঠে বলল,
‘ কত মিস করছিলাম জানো? ‘
চোখ দু’টি বুজে এলো নিধির। ঠোঁটে লাজুক হাসি আর বুকে তার ধুকপুকানি। অর্পণ স্যার যেন বড্ড বেপরোয়া এখন। তার মুখ, হাত বড্ড লাগাম ছাড়া। প্রথমে সায় দিল নিধি। যখন বুঝল অপর মানুষটা হুঁশে নেই তখন বাঁধা দিয়ে বলল,
‘ কী করছেন কী? পাগল হলেন নাকি! আমরা কোথায় হুঁশ আছে? ‘
‘ পাগল তো সেদিনই করেছ ডার্লিং, হুঁশ তো সেদিনই হারিয়েছি আমি যেদিন তিন…’
আর একটা শব্দও উচ্চারণ করতে পারল না অর্পণ স্যার। তিন জোড়া হাত বাঘের মতো থাবা দিয়ে তার থেকে ছিনিয়ে নিল নিধিকে। সেই তিন জোড়া হাতের মালিক আর কেউ নয় , সৌধ, সুহাস আর আইয়াজ!

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।