ত্রিধারে তরঙ্গলীলা | পর্ব – ৩৬

13 Min Read

বাথরুম থেকে বেরিয়ে ডিভান ফাঁকা দেখল আইয়াজ। নিমেষে ভ্রূদ্বয় কুঁচকে বিছানায় তাকাল। ফারাহর অবস্থা একই৷ মেয়েটা এখনো বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। কুঁচকে যাওয়া ভ্রূদ্বয় ধীরেধীরে স্বাভাবিক করে নিল সে। নিশ্চয়ই কোনো জরুরি প্রয়োজনে সৌধ বেরিয়ে গেছে। ছোট্ট একটি নিঃশ্বাস ছেড়ে এগিয়ে গেল পোশাক বের করতে। লাগেজ খুলে ধূসর রঙা একটি টি-শার্ট বের করে উদাম শরীরটা ঢেকে ফেলল চটপট। এরপর চোখে চশমা পড়ে বিছানায় এসে ফারাহর পাশে বসল। হাত বাড়িয়ে স্পর্শ করল ওর ডান গালটায়। কিয়ৎক্ষণ উষ্ণ, নরম গালে নিজের হিম ধরানো হাতটা রেখে তাকিয়ে রইল নির্নিমেষ। বুকে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করল সেইসব দিনগুলোকে স্মরণ করে। যেদিন গুলোতে ফারাহ সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে তাদের সম্পর্কে দূরত্ব বাড়ানোর। কতবার বিচ্ছেদ হয়েছে তাদের৷ কতবার ফারাহর মুখে শুনেছে,
‘ আয়াজ বিলিভ মি, আমি তোমার যোগ্য নই। ‘
মাঝেমধ্যে সে যখন রেগে গিয়ে বলত,
‘ তাহলে কেন এসেছিলে আমার জীবনে? আমি যতই প্রেম নিবেদন করি কেন গ্রহণ করলে? তুমি গ্রহণ না করলে আমি এগুতাম না। আমি ওই ধরনের ছেলে নই। গ্রহণ যখন করেছ ফা ল তু কারণ দেখিয়ে বর্জন করতে দিব না সরি। ‘
নরম মনের অধিকারী ফারাহ। নিজেকে প্রকাশ করার ক্ষমতা একেবারেই কম। তাই তখনো ঠিকভাবে বোঝাতে পারেনি আর না আইয়াজের প্রশ্নের যোগ্য জবাব দিতে পেরেছে। সেই মুহুর্তে শুধু কান্না ছাড়া আর কোনো অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে পারেনি৷ আইয়াজও পারেনি তার জীবনে আশা প্রথম নারীকে কোনো মূল্যে হারাতে দিতে। বুকচিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো আইয়াজের। গালে রাখা হাতটা আপনাআপনিই ফারাহর মাথায় চলে গেল। ধীরেধীরে পরমাদরে সে হাতে মাথা বুলাতেও শুরু করল। এভাবে কেটে গেল অনেকটা সময়। আইয়াজের ফোন বেজে ওঠল হঠাৎ। সুহাস কল করেছে,
‘ কীরে ভাই সেই যে ঢুকেছিস আর বেরুবি না? কাহিনি কী বল তো? বিয়ের আগেই হানিমুনের ওপর দিয়ে হানিমুন করে ফেললি না তো! ‘
বিমর্ষ মুখটায় কিঞ্চিৎ দীপ্তি ফুটল আইয়াজের৷ চোখে ভেসে ওঠল খানিকটা লজ্জা। মনে ভর করল এক চিলতে দুষ্টুমি। বন্ধুর টিপ্পনীতে ক্ষীণ কণ্ঠে জবাব দিল,
‘ ওটাত তুই করেছিস। আমি তোর মতো এত ফাস্টলি এগুতে পারি না দোস্ত। আমাকে স্লোলিই এগুতে হবে। ‘
হো হো করে হেসে ওঠল সুহাস। বলল,
‘ চাপাখানা আছে। ঢাকাইয়া পোলা তো চাপা দিয়েই বাজিমাত। ‘
মৃদু হাসল আইয়াজ বলল,
‘ ফারাহ তো ওঠছে না। কী করি বল তো? ‘
‘ ডাকছিস? ‘
‘ না, ভাবছি ডাকব। ‘
‘ না ডাকলে ওঠব ক্যামনে মাম্মা। তাড়াতাড়ি ডাক আর ঝটপট চলে আয় বুফে যাব। ‘
‘ মিনিট দশেক পর নামীকে পাঠিয়ে দিস। ‘
‘ ওকে, প্যাড়া নাই। ‘
ফোন রেখে কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়ল আইয়াজ। ফারাহর ঘুম ভাঙার পর ঠিক কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে? ভাবতেই বুক ধুকপুক করে ওঠল। একই সঙ্গে কয়েকটা ধাক্কা খাবে মেয়েটা৷ নিশ্চয়ই সুখ, দুঃখ মিলেমিশে কান্না করবে খুব? নিজেকে সেই পরিস্থিতির জন্য তৈরি করে নিল আইয়াজ। ফারাহকে সামলে নেয়ার পুরো শক্তি অর্জন করে বুক টানটান করে নিঃশ্বাস ছাড়ল। এরপর ডাকতে শুরু করল। যেইডাকে মিলেমিশে রইল, একচ্ছত্র আদর, প্রগাঢ় ভালোবাসা আর সীমাহীন সম্মান।
আধোঘুমে ফারাহ শুনতে পেল অতিপরিচিত এক মানুষের হৃদয়ে গাঁথা কণ্ঠস্বর। এত দরদ মেখে একজনই ডাকে। আইয়াজ! সাতসকালে আইয়াজ কীভাবে ডাকবে তাকে? নিশ্চিত ভ্রম। ভাবতেই হঠাৎ বুক ধক করে ওঠল। আচমকা দু-চোখ খুলে বড়ো বড়ো করে তাকাল সম্মুখের মানুষটার দিকে। মস্তিষ্কে হঠাৎ চাপ অনুভব করল গতকালকের কথা স্মরণ হতেই৷ সুহাস ভাই, সৌধ ভাই এসেছিল তাদের বাসায়। তার আর আইয়াজের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। সে তার আপার সঙ্গে কথা বলে কান্না করল এরপরই শুনতে পেল সুহাস ভাইরা চলে গেছে। কলিজাটা ছিঁড়ে যাচ্ছিল তার৷ কী ভয়ানক এক যন্ত্রণায় বুক ভার হয়েছিল সারাদিন। মনের অসুখে সবকিছু বিষাদ লাগছিল। আইয়াজের সাথে শেষবারের মতো কথা বলতে ইচ্ছে করছিল খুব৷ কিন্তু কথা বলতে গেলেই ছেলেটা মাকড়সার জালের মতো প্যাঁচিয়ে ধরবে। বশ মানিয়ে ফেলবে এক মুহুর্তে। সেই ভয়ে বন্ধ ফোনটা আর খুলেওনি। সন্ধ্যাবেলায়ই আপার জোরাজোরিতে নাকে, মুখে ভাত ঢুকিয়ে শুয়ে পড়েছে। ভেবেছিল ঘুম হবে না৷ কিন্তু নাহ, ভাবনাটা ভুল। গভীর ঘুম হয়েছে। তাই তো প্রিয় মানুষটাকে স্বপ্নে দেখেছে, তার ডাক শুনেছে৷ এই তো চোখ খোলার পরও মানুষটার ভালোবাসাময় স্নিগ্ধ মুখটা দেখতে পাচ্ছে। হাত বাড়িয়ে একটুখানি ছুঁয়ে দেবে কি? না না তাহলেই ভ্রম কেটে যাবে। স্বপ্ন ভেঙে যাবে।
‘ ফারাহ? অ্যাঁই ফারাহ, ঘুম ভেঙেছে? ‘
ইশ ছেলেটা এত মধুর সুরে ডাকে কেন তাকে? চোখ দু’টো টলমল হয়ে গেল। নিঃশব্দে, মৃদু হেসে চোখ বুজে নিল সন্তর্পণে। আইয়াজের কপালে ভাঁজ পড়ল। প্রচণ্ড দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে ত্বরিত কল করল সুহাসের ফোনে। রিসিভ হতেই উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলল,
‘ দোস্ত ঘুমের ওষুধ খাওয়ানোতে কোনো সমস্যা হলো না তো? ওর মন, শরীর দু’টোই তো খুব নরম৷ বেড এফেক্ট পড়ল না তো? ‘
আইয়াজের কথা শুনে সুহাসের কপালে ভাঁজ পড়ল৷ বলল,
‘ কেন বলত? ‘
সুহাসকে উত্তরটা দিতে পারল না আইয়াজ। কারণ তার কথা শুনে ইতিমধ্যেই শোয়া থেকে তড়াক করে ওঠে বসেছে ফারাহ। দু’হাতে চোখ ডলে বিস্ময়াপন্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আইয়াজের পানে। ভেবেছিল ঘুমের ঘোরে ভ্রম কিন্তু সুহাসকে বলা কথাটা শুনতেই ভ্রম না, স্বপ্ন না টের পায় ফারাহ। ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে চোখ খুলে ফোন কানে চেপে আইয়াজকে দেখতে পেয়ে চমকে ওঠে। আইয়াজও চমকায়। ফারাহর ঘুম ভেঙেছে বুঝতে পেরে ফোন কেটে দেয়। মুখে ঈষৎ হাসি ফুটানোর চেষ্টা করে বলে,
‘ গুড মর্নিং। ‘
মাথা ঝাঁকিয়ে ওঠে ফারাহ। ড্যাবড্যাবিয়ে তাকিয়ে রয় কিয়ৎক্ষণ। এরপরই বৈদ্যুতিক স্পর্শ পাওয়ার মতো করে কেঁপে ওঠে। আইয়াজের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বিলাসবহুল কক্ষে দৃষ্টি বুলায়। এরপর তাকায় বিছানার দিকে। মুহুর্তেই ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে যায়। কাচুমাচু হয়ে বলে,
‘ আমি কোথায়? তুমি কীভাবে আমার সামনে? ‘
বুকে শিহরণ জাগে আইয়াজের। ফারাহ ঘুমকাতুরে মুখটায় তাকিয়ে স্মিত হেসে বলে,
‘ আমরা কক্সবাজারে। ‘
‘ কীহহ! ‘
ফারাহর চোখ দু’টো কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। আইয়াজের হাসি চওড়া হয়। বলে,
‘ গতরাতে তোমাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। ‘
স্তম্ভিত হয়ে যায় ফারাহর মুখ। আইয়াজ হাত বাড়িয়ে ওর গালে স্পর্শ করে। বলে,
‘ তোমার আপা সাহায্য করেছে আমাদের। ‘
তিন বন্ধু আপার সাহায্যে কীভাবে তাকে অপহরণ করল সেই গল্প শুনে ফারাহর মাথা ভনভন করতে লাগল। আপা সাহায্য করেছে মানে? গলা শুকিয়ে গেল তার। ভয় ভয় স্বরে বলল,
‘ আপা কেন সাহায্য করল? ‘
‘ আজ রাতে আমরা বিয়ে করব তাই। ‘
বুক কেঁপে ওঠল ফারাহর। দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে ওঠল মুহুর্তেই। শরীরও কাঁপতে লাগল। আইয়াজ খেয়াল করে ওকে কাছে টেনে নিল৷ বুকে টেনে বলল,
‘ আমরা বিয়ে করব ফারাহ। ‘
এক ঝটকায় আইয়াজের বুক থেকে সরে গেল ফারাহ। দু’চোখে উপচে পড়ল বাঁধ ভাঙা অশ্রুজল। বলল,
‘ এটা সম্ভব নয় আয়াজ। আমি তোমাকে ঠকাতে পারব না। ‘
আইয়াজ কাছে চলে এলো। দু-হাত বাড়িয়ে ওর অশ্রুসিক্ত দুগাল স্পর্শ করে নরম কণ্ঠে বলল,
‘ বিয়েটা না করলে অবশ্যই ঠকাবে। ‘
আচমকা আইয়াজকে জড়িয়ে ধরল ফারাহ। কান্নারত গলায় বলল,
‘ তুমি বুঝতে পারছ না আয়াজ, তুমি বুঝতে পারছ না। আমি তোমাকে ঠকাতে চাই না। বিশ্বাস করো। ‘
একটু থেমে পুনরায় হেঁচকি তুলতে তুলতে বলল,
‘ আমি ভুল করে তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি। তোমার মতো শুদ্ধ পুরুষের ভালোবাসা গ্রহণ করেছি ভুল করে। আমি ভুলে গিয়েছিলাম আমার মতো অশুদ্ধ নারী তোমার যোগ্য না। ‘
ফারাহর কাঁধ চেপে সোজা করল আইয়াজ৷ চোয়ালদ্বয় শক্ত করলেও তার দৃষ্টি ঝাপসা। বলল,
‘ তুমি অশুদ্ধ না ফারাহ। ‘
লজ্জায় মূর্ছা গেল ফারাহ। আইয়াজ এখন শক্ত গলায় তার প্রতি পূর্ণ বিশ্বাসে যা বলছে তা সে ভাঙতে চায় না৷ কিন্তু না ভাঙলে যদি তাকে জীবনে জড়ায়? আর পরবর্তীতে আফসোস করে? ঠোঁট কামড়ে কান্না আঁটকাল ফারাহ। কাঁপা স্বরে বলল,
‘ আমি একজন ধ…’
সহসা মুখ চেপে ধরল আইয়াজ। চোখ বন্ধ করে, শ্বাস রুদ্ধ করে বলল,
‘ চুপ! আমি সবটা জানি। গতকাল ফারজানা আপা সমস্ত কিছু জানিয়েছে সৌধকে। আর সৌধ জানিয়েছে আমাকে। দ্বিতীয়বার আর ও সম্পর্কে জানতে চাই না আমি। একেবারেই না। ‘
‘ আইয়াজ! ‘
অবিশ্বাস্য কণ্ঠ ফারাহর! আইয়াজ চোখ খুলল। সহসা তার দুগাল বেয়ে পড়ল দু’ফোটা অশ্রু। ফারাহ হুমড়ি খেয়ে ওর বুকে পড়ল। মৃদুস্বরে আর্তনাদ করল,
‘ কী বলছ তুমি আইয়াজ! ‘
ফের বাঁধ ভাঙা কান্না। ফারাহ কোনোদিনও আইয়াজের চোখে তার জন্য ঘৃণা দেখতে পারবে না। তাই ভয় কাঁপতে থাকল। প্রচণ্ড শক্ত করে জড়িয়েও রইল আইয়াজকে। আইয়াজ বুঝতে পারল তার যন্ত্রণা। এতগুলো বছর দেখছে মেয়েটাকে। মনের কথা বুঝতে পারবে না? তাই মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
‘ তোমাকে আমার আগে কে স্পর্শ করেছে এটা ইম্পর্ট্যান্ট নয় ফারাহ। ইম্পর্ট্যান্ট আমার পর কেউ তোমাকে স্পর্শ করতে পারবে না। ‘
ফারাহ ফুপাচ্ছে। বুক ফাটছে আইয়াজেরও। তবু মুখে বলল,
‘ কে নোংরা ভাবে তোমার শরীর ছঁয়েছিল এসবে আমার আগ্রহ নেই। আমার আগ্রহ তোমার ভালোবাসার প্রতি। তোমার প্রতি আমার ভালোবাসার গভীরতা কতটুকু এটাই ইম্পর্ট্যান্ট আমার কাছে। আমি চাই তোমার কাছেও জাস্ট এটুকুর ইম্পর্ট্যান্টস থাকুক ব্যস। ‘
পুরুষ জাতি কী? পুরুষ জাতি কেমন এর আর কোনো ব্যাখ্যা জানতে চায় না ফারাহ। আজ এইক্ষণে আইয়াজ, তার ভালোবাসার মানুষটির যেই রূপের সম্মুখীন হলো। এরপর আর এক মুহুর্ত এ পৃথিবীর বুকে নিঃশ্বাস নিতে না পারলেও তার আফসোস থাকবে না। এতদিন সে জানত তার প্রেমিক পুরুষটি খুব ভালো, মনের, ভদ্র, সভ্য, প্রচণ্ড মেধাবী আর স্বচ্ছ চরিত্রের অধিকারী৷ কিন্তু আজ স্বচক্ষে, হৃদয় দিয়ে অনুভব করল তার প্রিয়তম মানুষ হিসেবে কতটা শ্রেষ্ঠ। প্রেমিকার ধ র্ষিতা হওয়ার অতীত জানার পর তাকে বউ করতে বুকে দম লাগে। আইয়াজের সেই দমটা আছে৷ এই দমটুকু নিয়েই ফারাহ কাটাতে চায় তার বাকি জীবন।
.
.
ভরদুপুরে মেকআপ বক্সের সেট ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় ছুঁড়ে মে রে আয়নাটা ভেঙে ফেলল সিমরান৷ ক্রোধে ফুঁসছে সে। শুধুমাত্র আয়না ভেঙেই ক্ষ্যান্ত হলো না৷ তীব্র জেদে ভাঙা কাঁচের টুকরো গুলোর ওপর দিয়ে হাঁটল দু’পা। ছুটতে ছুটতে দরজার সামনে এসেছে উদয়িনী৷ মেয়ের অমন অবস্থা দেখে করুণ আর্তনাদ করে ওঠেছে সে৷ সিমরানও দু’পায়ে কাঁচ ঢুকে ভয়াবহ রক্তপাত দেখে জ্ঞান হারিয়েছে মুহুর্তে। উদয়িনী চিৎকার দেয়ার পর পরই ছুটে এসেছে। প্রথমে মেয়ের রাগান্বিত হয়ে উপরে ওঠা এরপর স্ত্রীর আর্তনাদ। বুক কেঁপে ওঠে সোহান খন্দকারের। অতিথি বিদায় শেষে ড্রয়িংরুমে এসেছিল মাত্র। আর অপেক্ষা না দৌড়ে সেও উপরে চলে এলো৷ কাজের বুয়া সেলিনা আপাও ছুটে এলো। মেয়ের দু’পা থেকে কাঁচ তুলে মেয়েকে জাপ্টে ধরে হাউমাউ করে কাঁদছে উদয়িনী। ভুলে গেছে নিজের ডাক্তারি সত্তা। সোহান খন্দকার হাত মুঠ করে ঝাঁকি দিয়ে বিচলিত কণ্ঠে বলল,
‘ ওহ শীট! মস্ত বড়ো ভুল হয়ে গেল উদয়িনী। আমাদের ওর সঙ্গে আলোচনা না করে পাত্রপক্ষকে আসতে বলা উচিত হয়নি৷ ‘
বলতে বলতে মেয়েকে ত্বরিত কোলে তুলে ছুট লাগালেন৷ উদয়িনীও তার পেছন পেছন দৌড়াতে লাগল। সেলিনা আপা আরো জোরে দৌড় দিয়ে ড্রাইভারকে ডাকতে লাগল আর বলতে লাগল,
‘ আমজাদ ভাই তাড়াতাড়ি আহেন, হাসপাতালে যাওয়া লাগব। সিনু আপার পা কাটছে, অজ্ঞান হইছে! ‘
গাড়িতে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বিধ্বস্ত স্ত্রীর মুখে তাকাল সোহান। উদ্বিগ্ন গলায় বলল,
‘ সিনু কারো সাথে রিলেশনশিপে আছে?’
উদয়িনী দীর্ঘশ্বাস ফেলে হতাশ গলায় বলল,
‘ আই ডোন্ট নো। ‘
ধমকে ওঠল সোহান,
‘ সুহাসকে কল করো। আমার মেয়ের প্রতি কোনো দায়দায়িত্ব নেই তোমার। মা হয়ে মেয়ের মনের কথা জানো না। কেমন মা তুমি? ‘
কেঁপে ওঠল উদয়িনী। মেয়ের চিন্তায় মানুষটা যাই বলুক কষ্ট পাবে না সে। তাছাড়া সিনুকে এখনি বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত তার একার নয়। সোহানেরও। কথাবার্তা এগুতো সুহাস আসার পরই। আজকে শুধু প্রাথমিক ভাবে সিমরানকে দেখাতে চেয়েছিল। মেয়েটা অতিথিদের সামনে ধৈর্য্য ধরে থাকলেও অতিথিরা চলে যাওয়ার পর এমন ভয়ানক প্রতিক্রিয়া দেবে কল্পনার বাইরে ছিল। বা হাতে চোখের পানি মুছতে মুছতে ডান হাতের সাহায্যে ছেলেকে কল করল উদয়িনী। কী বিপদ ঘটেছে সেসব না বলে শুধু জিজ্ঞেস করল,
‘ বাবা সিনু কি কোনো ছেলেকে পছন্দ করে? কারো সাথে সম্পর্কে আছে সিনু মার?‘

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।