সৌধর মা তানজিম চৌধুরী। সিমরানকে খুব ছোটো থেকে বড়ো হতে দেখেছে। সেদিনের সেই এক রত্তি মিষ্টি মেয়ে সিমরান। চোখের পলকে কতবড় হয়ে গেল৷ সচক্ষে দেখল, বাবা, মা, ভাইয়ের কাছে একরোখা, জেদি তকমা পাওয়া মেয়েটি আদর, ভালোবাসা, যত্ন পেলে কেমন মোমের মতো গলে যায়৷ মিলিয়ে যায় হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো। তানজিম চৌধুরী দু’টো পুত্র আর একটি কন্যা সন্তানের জননী। উচ্চ শিক্ষিত হলেও ভীষণ সংসারী। স্বামী, সন্তান আর বিরাট সংসারেই সুখ খুঁজে পায় সে। সেই সুখের রাজ্যে রাজ করতে করতে সুখের উৎসর্গ সম্পর্কেও খুব জ্ঞান আহরণ করে। তার নিখুঁত দৃষ্টিতে পরিবারের সকল সদস্যই এক একটা বইয়ের মতো। দীর্ঘদিন সংসার করে, তাদের যত্নআত্তি নিয়ে , দায়িত্ব, কর্তব্য পালন করার মাঝে এই বই গুলোর অনেক পৃষ্ঠাই পড়া হয়ে গেছে। তার চতুর দৃষ্টিজ্ঞান শুধু পরিবারেই সীমাবদ্ধ নয়৷ তার পরিবারের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা প্রতিটি মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। যার মধ্যে সিমরানও একজন। যে মেয়েটা ছোটোবেলা থেকে বাবা, মায়ের সঙ্গে অদৃশ্য দেয়াল দেখে বড়ো হয়েছে। শিশু থেকে কৈশোর, কৈশোর থেকে যৌবনের যাত্রাটি যার আর পাঁচ জন সাধারণ মেয়ের মতো ছিল না। বড্ড ভালোবাসার কাঙালি মেয়েটা৷ যেখানেই ভালোবাসা পায়, একাকীত্ব কাটানোর সঙ্গী পায় সেখানেই ছুটে যায় দ্বিধাহীন। তাই তো কিশোরী বয়সের দীর্ঘ সময় গুলো কেটেছে বন্ধু, বান্ধবীদের সঙ্গে অবাধে চলাফেরা করে। যৌবনে পা রাখার পর পারিপার্শ্বিক শুভাকাঙ্ক্ষীদের সান্নিধ্যে এসে অবশ্য সেই চলার পথ থেমেছে। বাঁক নিয়েছে মার্জিত, সুন্দর পথে। তাই তো সব দেখা, সব জানা, আপাদমস্তক বুঝে নেয়া, চিনে নেয়া মেয়েটিকে নিজের অতিপ্রিয় ছোটো পুত্রের জন্যে মনে মনে বাছাই করেছিলেন। দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তানজিম চৌধুরী। বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে থাকা সিমরানের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
‘ কে বলল তুমি পাত্রী হিসেবে খারাপ? কার এতবড়ো স্পর্ধা মা! ‘
সিমরানের কান্নার বেগ বাড়ল। তানজিম চৌধুরী আশপাশে তাকিয়ে কাউকে না দেখতে পেয়ে সিমরানকে বুকে আগলেই নিজের ঘরে নিয়ে গেলেন। দরজা বন্ধ করে বিছানায় গিয়ে নিজের পাশে সিমরানকেও বসালেন। এরপর দু’হাতে আদর করে গাল মুছিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে শুধালেন,
‘ কী হয়েছে সিনু মা? আমাকে খুলে বলো। না বললে তো বুঝতেছি না। ‘
কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি তুলে ফেলল মেয়েটা৷ শান্ত হতে সময় নিল অনেকক্ষণ। তানজিম চৌধুরী তার জহরি দৃষ্টি দ্বারা তাকিয়ে রইল নিষ্পলক। সিমরান শান্ত হলো কিছুটা। এরপর থেমে থেমে গা কাঁপিয়ে ফের একই প্রশ্ন বাক্য ছুড়ল,
‘ আমি কি পাত্রী হিসেবে খুব খারাপ? ‘
কাঁদতে কাঁদতে ফর্সা মুখটা লাল বর্ণে পরিণত হয়েছে। মাথার চুলগুলো এলোমেলো। বিধ্বস্ত লাগছে মেয়েটাকে। তানজিম চৌধুরীর মাতৃ হৃদয় নড়ে ওঠল। হাত বাড়িয়ে দু-চোখ উপচে পড়া অশ্রুকণা গুলো মুছতে মুছতে বলল,
‘ ছিঃ ছিঃ মা এসব কী প্রশ্ন! পাত্রী হিসেবে খারাপ কেন হবা? এত সুন্দর ফুলের মতো মেয়ে তুমি। কত লক্ষ্মীমন্ত! আজকাল এমন পাত্রী পাওয়াই তো দুরাশা। কত ভালো পরিবার তোমার। কোনোদিকে এক চুল কমতি নেই। এসব প্রশ্ন কে মাথায় ঢুকিয়েছে? তোমাকে না বলছি আজেবাজে বন্ধু, বান্ধবের সাথে মিশবা না। ‘
ওড়নার কোণা দিয়ে চোখের পানি মুছে দীর্ঘশ্বাস ফেলল সিমরান। ভাঙা কণ্ঠে বলল,
‘ এখন আর মিশি না তো। ‘
বারকয়েক পলক ফেলল তানজিম। এরপর সিমরানের কাছাকাছি বসে ক্ষীণ কণ্ঠে শুধাল,
‘ কী নিয়ে কষ্ট পাচ্ছ মা? আমার কাছে শেয়ার করো। আমি তো বলেছি আমি তোমার দ্বিতীয় মা। উদয়িনী ভাবি তো সব সময় কাছে থাকে না। তাই যখন ইচ্ছে হবে এই মায়ের কাছে আসবা, মনের কথা শেয়ার করবা। সময় কাটাবা৷ ‘
বিগলিত হলো সিমরান। মাথা নিচু করে নিঃশ্বাস আঁটকে বলল,
‘ আমার মতো পাত্রী পাওয়া যদি দুরাশাই হয়। তোমার ছেলের জন্য তবে অন্য মেয়ে কেন দেখছ? ‘
দু-চোখ বেয়ে আবারো অশ্রুজল গড়িয়ে পড়ল। তানজিম চৌধুরী স্তম্ভিত! স্বাভাবিক হতে সময় নিল। সিমরান নত মস্তক একটুখানি তুলে দেখল আন্টিকে। আন্টির স্তম্ভিত মুখশ্রী দেখে হৃৎপিণ্ড ছটফটিয়ে ওঠল তার৷ চোখ দুটো টলমল হলো আবার৷ কিন্তু অশ্রুজল গড়াল না। গলায় আঁটকে থাকা কান্না গুলো গিলে নিল ভয়ে। কাঁপা কাঁপা স্বরে পুনরায় বলল,
‘ আমি তোমার ছেলেকে ভীষণ ভালোবাসি আন্টি। তুমি প্লিজ আমাকে বেহায়া ভেবো না। বিশ্বাস করো আমি নিরুপায় হয়ে তোমার কাছে এসেছি। আমাকে বোঝার মতো কেউ নেই আন্টি কেউ নেই। এই কঠিন পরিস্থিতিতে আশ্রয় নেয়ার জন্য একমাত্র তুমি ছাড়া কাউকেই খুঁজে পাইনি আমি। ‘
বাক্যের সমাপ্তি দিয়ে দু-হাত বাড়াল সিমরান। তানজিম চৌধুরীর দুগাল আলতো ছুঁয়ে ঘাড় ডানদিকে কিঞ্চিৎ বাঁকিয়ে, অসহায় কণ্ঠে বলল,
‘ ক্লাস নাইন থেকে সৌধ ভাইকে ভালোবাসি আমি। সাহস করে কখনো বলতে পারিনি। ভেবেছিলাম বলব একদিন। এরপর জানলাম সৌধ ভাই নিধি আপুকে ভালোবাসে৷ সৌধ ভাই নিধি আপুকে ভালোবাসে জানার পর আমার হৃৎপিণ্ড ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। সেই কষ্ট আমি আজো ভুলতে পারিনা। এখনো কষ্ট হয় খুব। ‘
একটু থামল মেয়েটা। এরপর আচমকা করুণ স্বরে বলল,
‘ নিধি আপুর জন্য সৌধ ভাইয়ের যে যন্ত্রণা সেই যন্ত্রণা সৌধ ভাইয়ের জন্য আমাকে পেতে দিও না আন্টি৷ ম রে যাব! বিশ্বাস করো ম রে যাব! আমি সৌধ ভাইয়ের মতো স্ট্রং না। সহ্য করতে পারব না আন্টি। সৌধ ভাইয়ের জীবনে অন্য কোনো মেয়ে, অন্য একটা মেয়ে সৌধ ভাইয়ের বউ!’
কথাগুলো বলতে বলতে শ্বাস আঁটকে এলো সিমরানের। দু’হাতে আগলে ধরা আন্টির গাল দুটো আলগোছে ছেড়ে একহাত নিজের বুকে চেপে ধরল। অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে করুণ কণ্ঠে বলল,
‘ তোমার ছেলেটাকে বড্ড ভালোবাসি আন্টি। এই দেখো এখানটায় কত কষ্ট হচ্ছে। শ্বাস নিতে পারছি না৷ দম বন্ধ হয়ে আসছে। এসব শুধুমাত্র তোমার ছেলেকে পাগলের মতো ভালোবাসি বলেই তো হচ্ছে।
ভালোবাসা কি প্রমাণ করা যায় আন্টি? তুমি এখানটায় হাত রেখে দেখো কত্ত ছটফট করছে। ট্রাস্ট মি, আমার এই ছটফটানিটুকু বুঝলে তুমি প্রমাণ চাইবে না ঠিক বিশ্বাস করবে। ‘
সহসা তানজিম চৌধুরী হাত বাড়ালেন। বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে চেপে ধরলেন সিমরানের বুকের বা’পাশে। এবারে সিমরানের চোখের অশ্রু ঝড়ল। আঁটকে রাখা কান্না বাঁধন হারালো ফের। ভাঙা স্বরে বলল,
‘ যেদিন জানতে পারি তোমার ছেলের ভালোবাসার মানুষ অন্য কেউ। সেদিনের পর থেকে ঠিক এমনই যন্ত্রণা নিয়ে রাত কাটে, দিন হয়৷ তুমি বিশ্বাস করছো তো আমাকে? ‘
‘ চুপ! আর কিছু বলতে হবে না বিশ্বাস করেছি আমি। ‘
আকস্মিক কথাটা বলেই সিমরানকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরলেন তানজিম। নিভৃতে দু-চোখ বেয়ে দুফোঁটা অশ্রু গড়াল তার। সন্তর্পণে চোখ বুজে লম্বা একটি শ্বাস নিলেন তিনি। মনে মনে বললেন,
‘ আমার সৌধর জন্য সিনুকেই চাই। এই ভালোবাসা থেকে সৌধ মুখ ফেরাতে পারবে না৷ এই নিষ্পাপ ভালোবাসা বৃথা যাবে না৷ মা হয়ে আমি ছেলের জন্য সঠিক মানুষ চিনতে ভুল করিনি৷ একদম করিনি। কিন্তু উদয়িনী ভাবি! ‘
চমকে ওঠলেন তানজিম। সৌধর বিয়ের কথাবার্তা চলছে বেশ কয়েকমাস ধরেই। সর্বপ্রথম কথা ওঠেছিল সিমরানকে নিয়ে। কিন্তু সেই কথাবার্তা থেমে গিয়েছে। কারণ উদয়িনী চায়নি সৌধর সঙ্গে সিমরানের জুটি মিলুক। এই নিয়ে উদয়িনীর প্রতি কারো রাগ নেই। বিষয়টাকে সবাই স্বাভাবিক ভাবে নিয়েছে৷ কোন মা চাইবে জেনে-বুঝে মেয়েকে মাঝ সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলতে? যেখানে অন্য একটা মেয়েকে ভালোবেসে বিয়ে করবে না স্থির করেছে সৌধ। সেখানে এসব জেনেশুনে উদয়িনীর মতো দাম্ভিক মহিলা নিজের মেয়েকে বিয়ে দেবে? উদয়িনী প্রস্তাব নাকোচ করার পর থেকে অন্যত্র মেয়ে দেখা শুরু করে সুজা চৌধুরী। ভালো পরিবারের এডুকেটেড মেয়ে দেখেছে। সাধারণ পরিবারের সুন্দরী মেয়েও বাদ রাখেনি। মনের মতো কাউকেই পাচ্ছে না। যাও দু একটা পাচ্ছে ভয়ে এগুচ্ছে না৷ সম্পূর্ণ অচেনা একটি মেয়ে কি সৌধর সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে? যেই মানসিক সমর্থনটা প্রয়োজন তা দিতে পারবে তো? সবচেয়ে বড়ো কথা আজকালকার যুগে কোন মেয়ে এমন সম্পর্কে এগুবে? ভালোবাসার মানুষ হারিয়ে ছন্নছাড়া জীবন বেছে নেয়া ছেলের হাত ধরার সাহস কি সব মেয়ের হয়? হয়তো একদম সাধারণ পরিবারের মেয়ে বিয়েতে রাজি হবে। বিপুল সম্পদ, ক্ষমতা, সুদর্শন পুরুষ, চমৎকার ভবিষ্যত পাওয়ার লোভে। কিন্তু দিনশেষে কি সৌধকে ভালো রাখতে পারবে? হয়ে ওঠতে পারবে মনের মতো জীবন সঙ্গী? হয়তো পারবে, নয়তো না। এই নিয়ে প্রচণ্ড শঙ্কিত তানজিম চৌধুরী। তার বিশ্বাস ছিল সিমরানের বিষয়টা পুরোপুরি ভিন্ন। আজকে সৌধর প্রতি সিমরানের ভালোবাসার স্বীকারোক্তি পেয়ে সেই বিশ্বাসের জায়গাটা মজবুত হলো। সিমরানকে আলাদা করে সৌধর ব্যাপারে না কিছু জানানোর আছে আর না কিছু বোঝানোর। সৌধরও ঠিক তাই। সবচেয়ে বড়ো কথা আলাদা পরিবারের আলাদা মেয়ের সঙ্গে সৌধ মানিয়ে নিত কিনা, সৌধ তাকে গ্রহণ করতে পারত কিনা এই নিয়ে বিরাট সংশয় ছিল৷ কিন্তু সিমরানের বেলাতে এই সংশয় নেই৷ কারণ সিমরানের প্রতি সৌধ যথেষ্ট সংবেদনশীল। সেটা ভালোবাসা নামক অনুভূতি থেকে না হলেও বন্ধুর বোন হিসেবে। সিমরানকে সৌধ অপছন্দ করে না৷ বরং মেয়েটার প্রতি যথেষ্ট যত্নশীল পূর্ব থেকেই। বন্ধুর বোনের প্রতি সেই দায়বদ্ধতা, যত্নশীলতাই কি পারে না আগামী দিনে তাদের মধ্যে আদর্শ স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে তুলতে। যে ভালোবাসা সিমরানের বুকে লালিত আছে সেই ভালোবাসা কি সৌধর ভগ্ন হৃদয় জোড়া লাগিয়ে পূর্বের থেকেও শতগুণ মজবুত করে দিতে পারে না? অবশ্যই পারে। উদ্দেশ্য যদি সৎ এবং পবিত্র হয় মানবকূলের পক্ষে সবই সম্ভব। আর যে নারীর হৃদয়ে ভালোবাসা নামক বীজ রোপিত আছে সে নারীর পক্ষে সে বীজ থেকে বৃক্ষ তৈরি অস্বাভাবিক কিছু না৷
দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তানজিম চৌধুরী। ধীরেসুস্থে সিমরানকে সামলে নিয়ে বললেন,
‘ দেখি মাথা তুলো। আমার কথা শোনো মন দিয়ে। এতক্ষণ আমি শুনেছি, এখন তুমি শোনো। শোনার পর যত পারো কাঁদো। এই আজকেই শেষ। এরপর তোমার জন্য আমার বাড়ি কান্না হারাম। ‘
মাথা তুলল সিমরান। ভয় হচ্ছে ভীষণ। এখন পর্যন্ত আন্টির রিয়াকশন পায়নি কোনো। তাই এবার নিজেকে তৈরি করল কঠোর প্রতিক্রিয়া সহ্য করার জন্য। কিন্তু তানজিম চৌধুরী যা বললেন তা শুনে গায়ে কাঁ টা দিয়ে ওঠল তার।
‘ সৌধর জন্য অনেক আগে থেকেই তোমাকে পছন্দ আমার। আমরা যেদিন থেকে সৌধর জন্য পাত্রী খুঁজছি। সৌধর বিয়ের ব্যাপারে চিন্তা করছি। সেদিন তোমার কথাই আগে মাথায় এসেছে। তোমার আংকেলকেও জানিয়েছিলাম বিষয়টা। তোমার আংকেল তোমার বাবা,মাকে প্রস্তাব দিয়েছিল। তোমার বাবা রাজিও ছিলেন কিন্তু বাঁধা এলো তোমার মায়ের থেকে। সে শঙ্কিত তোমার ভবিষ্যত নিয়ে। আসলে সে তার জায়গায় সঠিক। আজ যদি তার জায়গায় আমি আর তোমার জায়গায় স্মৃতি থাকত আমিও বাঁধা দিতাম। ‘
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে একটুক্ষণ থামল। এরপর আবার বলতে শুরু করল,
‘ তার রাজি না হওয়াতেই আমরা অন্যত্র মেয়ে দেখা শুরু করি৷ কিন্তু ঐ যে নিয়তির লেখা বলেও কিছু থাকে তাই তো যোগ্য পাত্রী খুঁজে পাইনি। আজ তুমি যা বললা এটা যদি আগে জানতাম অন্য কোথাও মন দেওয়ার কথা ভাবতাম না। যেখানে তুমি সৌধকে ভালোবাসো সেখানে আর অন্য কোথাও মন দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস চৌধুরী বাড়ির ছোটো পুত্রবধূ তুমি ছাড়া কেউ হবে না৷ কারো সাহস নেই এ বাড়ির ছোটো ছেলের বউ হবার। কারণ কেউ তোমার মতো করে সৌধকে ভালোবাসতে পারবে না। সবটা জেনে-বুঝে কেউ এমন কঠিন আবদার করতেও পারবে না৷ এই ক্ষমতা, এই সাহস এক সিমরান খন্দকারেরই আছে। ‘
‘ আমি নিজেকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছি আন্টি কিন্তু পারিনি৷ অনেক বুঝিয়েছি মনকে, সৌধ ভাই আমাকে ভালোবাসে না। তবু মানাতে পারিনি। বুকটা হুহু করে আমার। মন বুঝ দেয় একদিন বাসবে। কোনোকিছুর বিনিময়ে আমি আমার প্রথম প্রেমকে হারাতে চাই না। আমি সেদিন ওই এক মুহুর্তের জন্যই সৌধ ভাইকে ত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিলাম। নিধি আপুর কাছে কারণ সৌধ ভাই নিধি আপুকে ভালোবাসে। এরপর আর কারো কাছে কোনোকিছুর বিনিময়ে ত্যাগ স্বীকার করতে পারব না। ট্রাস্ট মি আন্টি, সৌধ ভাইকে ছাড়া অন্য কারো প্রতি আমার রুচি আসে না। তুমি প্লিজ ক্ষমা করো আমাকে। আমি জানি তুমি সৌধ ভাইয়ের মা। তোমাকে এভাবে বলা নির্লজ্জতা হচ্ছে। কিন্তু কী করব বলো? ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে নিঃশেষ হওয়ার চেয়ে নির্লজ্জ হওয়া ঢেড় ভালো। ‘
তানজিম চৌধুরীর চিত্ত বিগলিত হলো। হাসল কিঞ্চিৎ। আদর পেল খুব। মেয়েটা জেদি, একরোখা ছাপিয়ে ভীষণ মিষ্টি আর প্রচণ্ড সৎ। সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করল ওর সাহসীকতা। ক’টা মেয়ে পারে এভাবে ছেলের মা’কে এসে বলতে, ‘ তোমার ছেলেটাকে বড্ড ভালোবাসি আন্টি? ‘ সৌধর মতো শক্ত ব্যক্তিত্বের পুরুষের জীবনে এমন সাহসী নারীই তো প্রয়োজন। যে মনের কথা মুখে প্রকাশ করতে ভীরু হয় না, কুণ্ঠা বোধ করে না। সিমরানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন তানজিম। দৃঢ় গলায় বললেন,
‘ আমি আজই তোমার আংকেলের সাথে কথা বলব। তার মত নিয়ে কথা বলব সৌধর সঙ্গে। কিন্তু মা তোমার মা আর ভাইকে নিয়েই চিন্তা। ‘
‘ আম্মু, ভাইয়াকে বোঝানোর দায়িত্ব আমার আন্টি। ‘
তীব্র আত্মবিশ্বাসী স্বর শুনে হাসলেন তানজিম। সে জানেন উদয়িনী সহজে মানবে না। না মানলেও এখন আর কিছু করার নেই৷ যেখানে সিমরান রাজি, তারা রাজি। সেখানে বিয়েতে বড়ো কোনো বাঁধা নেই বললেই চলে। একটুখানি চিন্তিত হলেন অবশ্য ছেলেকে নিয়ে। পরোক্ষণেই মাতৃহৃদয় বলল, তার ছেলেটা অমানুষ বা অজ্ঞ নয়। ক্ষণিকের যন্ত্রণা তাকে হয়তো ছন্দহীন করে তুলেছে। এটাকে দীর্ঘস্থায়ী হওয়া থেকে আটকাতে সিমরানকে প্রয়োজন। ভীষণ প্রয়োজন। মেয়েটাকে সে নিজ হাতে গড়ে তুলবে। একদম সৌধর জন্য যোগ্য নারী হিসেবে তৈরি করবে। যাকে দেখে একদিন সৌধ স্বীকার করতে বাধ্য হবে নিধি নয় সিমরানই তার যোগ্য নারী৷ যোগ্য ভালোবাসার মানুষ।
“প্রথমা হয় যদি ভুল দোষ কি দ্বিতীয়ায়?
প্রথমায় ভুল ফুল হয়ে ফুটুক দ্বিতীয়ায়। যে’জন যায় তার বিরহে মন না মরুক। যে’জন আসে তার প্রণয়ে মন ভরুক। দ্বিতীয়বারো প্রেম হয়, পরিপূর্ণতা পায় ভালোবাসা। শর্ত কেবল একটাই, মানুষটা সঠিক হতে হবে। ”
®জান্নাতুল নাঈমা
খুব লিখতে ইচ্ছে করে৷ কিন্তু পরীক্ষা নামক যমটা আমাকে বারবার আঁটকে দেয়। সামনে পরীক্ষা অথচ ত্রিধারে তরঙ্গলীলা লিখতে মনটা আকুপাকু করে সব সময়। আমাকে হয়তো আবার বিরতি নিতে হবে পরীক্ষার জন্য। চেষ্টা করব অল্পদিন বিরতি নেয়ার৷ সবাই দোয়া করবেন আমার জন্য৷