কিছুদিন পরে অভি দেখল যে ওর চোখে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। চোখের ডাক্তার দেখিয়ে চশমা নিল অভি। ওর চোখে চশমা দেখে মায়ের চিন্তা একটু বেড়ে গেল, মৃদু বকুনিও শুনতে হল ওকে, নিজের যত্ন নেয় না খালি রাত জেগে টি.ভি দেখা। প্রথম প্রথম চশমা নিয়ে একটু অসুবিধা হত, পরে ঠিক হয়ে গেল|
অনেক কিছু পরিকল্পনা করতে হবে। বাবা মাকে কি বলে বের হবে তাঁর চিন্তা, কোথায় যাবে, কি করে যাবে তাঁর চিন্তা, পরীকে কি করে ওর বান্ধবীদের কবল থেকে বার করবে তাঁর চিন্তা। ওর এক সিনিয়ার বন্ধু, সুপ্রতিমদা দিল্লীতে থাকে। নয়ডার কোন এক বড় আই.টি কম্পানিতে চাকরি করে। একদিন ওকে ফোন করল অভি, জানাল যে ও হিমাচল ঘুরতে যেতে চায়, একটা গাড়ির ব্যাবস্তা করে দিতে হবে। সুপ্রতিমদা জানাল যে অভি ওর টাটা সাফারি নিয়ে ঘুরতে যেতে পারে, আরও জিজ্ঞেস করল যে কাকে নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছে, একা একা না কেউ স্পেসাল থাকবে সাথে।
সুপ্রতিমদা জানতে চাইল যে বাবা মা জানেন কিনা ওর প্রেমের ব্যাপারে। অভি বলল যে, দেখা হলে সব জানাবে, কিন্তু গাড়ি ওর কাল্কাতে চাই। সুপ্রতিমদা বলল, যে অনেক দিন পরে ওদের দেখা হবে সুতরাং দিল্লীতে যদি ও দেখা না করে তাহলে ও গাড়ি দেবে না।
অভি হেসে ফেলল, “ঠিক আছে বাবা আমি তোর সাথে দিল্লীতে দেখা করব, কিন্তু গাড়ি ঠিক করে রাখিস।”
সুপ্রতিমদা, “তুই ব্যাটা ডুবে ডুবে কি জল খাচ্ছিস সেটা না যেনে আমি তোকে গাড়ি দেব না। গাড়ি পেতে হলে দিল্লীতে নাম তারপরে গাড়ি।”
অভি, “ঠিক আছে তাই হবে।”
বেশি দিন বাকি নেই, পরিকল্পনা টাকে বেশ ভাল করে ভাবতে হবে আবার। কাল্কা না এবারে দিল্লী যেতে হবে। একদিন রাতে খাবার টেবিলে অভি জানাল যে ও ঘুরতে যেতে চায়। একা একা আগেও ঘুরতে বেড়িয়েছে ও, তাই বাবা মার কাছ থেকে অনুমতি পেতে বিশেষ অসুবিধা হল না। বাবা জিজ্ঞেস করলেন যে কোথায় যেতে চায়। অভি জানাল যে ও হিমাচল প্রদেশে ঘুরতে যেতে চায়। বাবা প্রস্তাব দিলেন যে মানালি তে এখন বরফ পড়বে, ও যদি বরফ দেখতে চায় তাহলে মানালি, কুলু সিম্লা ঘুরতে যেতে পারে। অভি বলল যে ও এমন এক জায়গায় যেতে চায় যেখানে মানুষের যাতায়াত কম।
বাবা খুব ঘুরেত ভালবাসেন। বাবা আই.এ.এ.আই এর(দমদম এয়ারপোরট অথরিটি) উচ্চ পদস্থ অফিসার। একদিন বাবা হিমাচলের ম্যাপ নিয়ে এলেন। ম্যাপ দেখে জানালেন যে অভি সাঙলা ভ্যালি তে চিতকুল নামে এক জায়গায় ঘুরতে যেতে পারে। ওখানে মানুষের আগমন খুব কম আর শীত কালে জায়গাটা একদম খালি থাকবে। অভি এই জায়গার নাম আগে কোনদিন শোনেনি, তাও যেতে রাজি হল এই ভেবে যে জায়গাটা একদম নিরিবিলি।
ব্যাগ ঘুছাতে শুরু করে দিল অভি, শীতের জামাকাপড় আর ঘুরতে যাবার সরঞ্জাম। মা প্রথমে একটু মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন, কিন্তু অভি অনাকে শান্তনা দিয়ে বলে, ও আগেও একা একা ঘুরতে গেছে তাই যেন চিন্তা না করে। এবারে চিন্তা হচ্ছে পরীকে কি করে কাল্কা স্টেসান থেকে ওর বান্ধবীদের কবল থেকে বের করা যায়। যাবার আগে আর দাড়ি কামালো না, গাল ভর্তি গোঁফ দাড়ি, চোখে চশমা, একদিন আয়নায় নিজেকে দেখে চিনতে পারল না অভি। ছদ্মবেশ টা বেশ ভাল লাগল অভির। মা ওকে দেখে রেগে গিয়ে দাড়ি কাটার জন্য বললেন।
চিতকুলে একা অভি আর পরী থাকবে, হয়ত আর কোন লোকজনের দেখা পাবে না। রাত একসাথে এক ঘরের মধ্যে কাটাবে, অভির মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেল। কামনার আগুনে পুড়ে অভি আর পরী শুধু মাত্র যে চুম্বনে বা আলঙ্গনে থেমে থাকবে না সেটা অনুধাবন করতে অসুবিধে হল না। অভি সেই মিলন রাতের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে নিল। যত দিন এগোয় অভির বুকের ধুকপুকানি বেড়ে চলে, পরীর সাথে একা একা ঘুরতে যাওয়ার কথা ভেবে, প্রথম মিলনের রাতের কথা ভেবে, কি করে প্রেমে ভালবাসায় পরীকে ভরিয়ে তুল্বে সেই কথা ভেবে রাত আর কাটতে চায় না।
যাবার আগেও মা বললেন ওকে দাড়ি কাটতে, মাকে বলল যে দিল্লী নেমে ও সুপ্রতিমদার বাড়িতে যাবে সেখানে স্নান খাওয়া দাওয়া সেরে তবে গাড়ি নিয়ে হিমাচলের যাত্রা করবে। যাবার আগে বাবা ওর হাতে একটা খাম দিয়ে বললেন যে ওতে হাজার আটেক টাকা আছে।
অবশেষে এল ঘুরতে যাবার দিন। দুপুরের ফ্লাইটে চেপে অভি দিল্লীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করল। রবিবার ভোররাতেই পরী কাল্কা স্টেসানে পৌঁছে যাবে। অভির বিশ্বাস যে পরী ওর জন্য অপেক্ষা করবে, কিন্তু পরী যে জানেনা যে অভি প্লেনে করে দিল্লী আসছে।
দিল্লী নেমে সুপ্রতিমদার সাথে দেখা হল। সুপ্রতিমদার বাড়ি চিত্তরঞ্জন পার্কে, ওর বাড়িতে দুপুরের খাবার খেয়ে একটু বিশ্রাম করে নিল। গল্পের ছলে সুপ্রতিমদা ওর ভালবাসার কথা জানতে চাইল। পরীর কথা বলল সুপ্রতিমদা কে কিন্তু অতি সতর্কতা করে অভি পরীর আর মায়ের সম্পর্ক এড়িয়ে গেল।
সুপ্রতিমদা অবিবাহিত, অভি ওকে জিজ্ঞেস করল, “তুই আর কত দিন একা একা থাকবি? এবারে বিয়ে টা ক্করে ফেল।”
সুপ্রতিমদা, “ধুর বাবা বিয়ে করে কি হবে, টাইম পাসের জন্য ত পাওয়া যায় রে।” দুজিনেই হেসে ফেলল।
সুপ্রতিমদা, “তাহলে চিতকুল যাচ্ছিস? কোথায় সেটা?”
অভি, “হিমাচলের এক কোনায়, সাঙলা ভ্যালি নামে এক ভ্যালিতে।”
সুপ্রতিমদা, “মানালি বা ডালহউসি যেতে পারতিস।”
অভি, “না পরীর বান্ধবীরা মানালি যাচ্ছে, পরীর ইচ্ছে আমরা এমন এক জায়গায় যাই যেখানে কেউ থাকবে না। অনেক ভেবে চিন্তে এই জায়গাটা বেছেছি।”
সুপ্রতিমদা বলল যে ওর ড্রাইভার বল্বিন্দার অভির সাথে যাবে। বেশ মিশুকে লোক, ভাল ড্রাইভার আর ঘুরতেও ভালবাসে। অভি বা পরীর কোন চিন্তা করার দরকার নেই। সুপ্রতিমদা আরও বলল যে দিল্লী থেকে কাল্কা প্রায় ঘন্টা আটেকের রাস্তা, বিকেল বিকেল বেড়িয়ে পড়তে পারলে মাঝ রাতের মধ্যে কাল্কা পৌঁছে যাবে। রাতের বেলা ড্রাইভ করাটা যদিও একটু মুশকিল হতে পারে, একে শীতকাল রাস্তায় রাতে কুয়াশা হতে পারে আর ট্রাক বা বাস ত আছেই। অভিকে জিজ্ঞেস করল যে পর্যাপ্ত গরমের পোশাক এনেছে কিনা।
বিকেল বেলায় অজানার পানে যাত্রা হল শুরু। দিল্লী থেকে গাড়ি ছাড়ল বিকেল ছটার মধ্যে, ঘন্টা দুয়েক পরেই গাড়ি দউরাতে শুরু করল হাইওয়ে ধরে। এক মিনিট পার হচ্ছে আর অভির ধুকপুকানি বেড়ে চলেছে, সকাল বেলায় দেখা হবে পরীর সাথে। অভি বল্বিন্দর কে বলল যে ও গাড়ি চালাবে। বল্বিন্দর ওকে সাবধান করে বলল যে রাতে কুয়াশা আর ট্রাক দেখে যেন গাড়ি চালায়। অভি বলল যে পাহাড়ে ও গাড়ি চালাতে পারবেনা কিন্তু সমতলে ওর হাত নিখুঁত।
সনেপত পেরনর পরে বল্বিন্দার ওকে গাড়ির স্টিয়ারিঙে বসতে দিল। অভি স্টিয়ারিঙে বসেই গাড়ি ছুটিয়ে দিল, কিছুক্ষণের মধ্যেই কাটা আশি ছাড়িয়ে একশো। বল্বিন্দার বলল যে ওর শুধু মাত্র দু’বোতল চাই তাহলেই ওর পারিশ্রমিক হয়ে যাবে। আম্বালাতে থেমে ওরা এলকোহল কিনে নেবে এই ঠিক হল।
বল্বিন্দার ওকে জিজ্ঞেস করল, “স্যারজি, ভাভি জি কি করেন?”
“ভাভিজি” কথাটা শুনে মনে মনে হেসে ওঠে অভি, “ভাভি জি এই সবে কলেজ থেকে পাশ করেছে।”
বল্বিন্দার, “ট্রেন কাল্কা স্টেসানে কখন পৌঁছাবে?”
অভি, “হাওড়া কাল্কা মেলে আসছে ভাভিজি। সম্ভবত সকাল চারটে কি সাড়ে চারটেতে পৌছবে।”
বল্বিন্দার, “কাল্কা মেল, তাহলে লেট করবে স্যারজি, চিন্তা নেই আপনি আস্তে চালান।”
অভির মন মানে না, যদি ট্রেন আগে এসে পৌঁছে গিয়ে থাকে, যদি পরী ট্রেন থেকে নেমে ওকে দেখতে না পায়, তাহলে কি করবে। অভি বল্বিন্দার কে বলে, “না আমি কোন ঝুঁকি নিতে চাই না। আমি আগেভাগে স্টেসানে পৌছাতে চাই, তাতে যদি আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তা আমি দাঁড়িয়ে থাকব।”
ঠাণ্ডার অন্ধকার রাত কেটে গাড়ি সো সো করে এগিয়ে চলে অচেনা গন্তব্য স্থলের পানে। জানে না অভি কোথায় যাচ্ছে, অভি কোনদিন হিমাচলে আগে আসেনি আর পরীও কোনদিন পাহাড় দেখেনি। সো সো করে ট্রাক বাস কে টপকে গাড়ি কুয়াশা আর অন্ধকার কেটে ঝড়ের গতিতে এগোচ্ছে। একটানা গাড়ি চালিয়ে অভির মাঝে একটু ঝিম ধরে গেল, রাত দশ’টা নাগাদ, মাঝখানে এক জায়গায় থেমে বল্বিন্দার আর অভি একটু চা খেয়ে নিল।
গাড়ি আবার চলতে শুরু করল। কুয়াশা দেখে বল্বিন্দার ওকে আস্তে চালাতে বলল। গাড়ি ধিরে ধিরে চালাচ্ছে অভি। বল্বিন্দার ওকে বলল যে আম্বালা পৌঁছে যেন ফ্লাই অভারে না চড়ে। ফ্লাইঅভারের নিচ দিয়ে সহরে ঢুকে ওরা দু বোতল এলকোহল কিনে নিল।
বল্বিন্দার, “স্যারজি, আমরা অনেক তাড়াতাড়ি পৌঁছে যাব’ত। আপনি পিঞ্জোর পর্যন্ত চালিয়ে নিয়ে যান তারপরে আমি চালাব খানে।”
অভি জানাল যে আগে কোনদিন এদিকে আসেনি তাই ও রাস্তা ঘাট চেনেনা। বল্বিন্দার বলল যে সিমলা পর্যন্ত রাস্তা ওর চেনা, তারপরে না হয় লোকজন কে জিজ্ঞেস করে রাস্তা যেনে নেওয়া যাবে। আম্বালা ছাড়িয়ে গাড়ি এন.এইচ.1 ছেড়ে এন.এইচ.22 ধরল। পিঞ্জোর ছাড়াতেই বল্বিন্দার গাড়ি চালাতে শুরু করল। পাসের সিটে বসে অভি চোখ বন্ধ করে মাথা পেছন দিকে হেলিয়ে দিয়ে একটু বিশ্রাম নিল।
অপরিজ্ঞাত যাত্রা (#02)
বন্ধ চোখের সামনে শুধু মাত্র প্রেমিকার কাজল কালো আঁখি যুগল। বহুদিন পরে পরীকে বুকের কাছে পাবে, অধির হয়ে ওঠে অভি। ওর ঠোঁটে এখন লেগে আছে পরীর ঠোঁটের মিষ্টি ছোঁয়া, নাকে লেগে আছে পরীর গায়ের সুমিষ্ট সুবাস। যখনি হাসত পরী, ওর দু’গালে টোল পড়ত আর সেই টোল খাওয়া গাল দেখে পাগল হয়ে যেত অভি, বারে বারে মনে হত যেন ওই গালে চুমু খায়। মাঝে মাঝে যখন ওর চুলের গোছা গালের ওপরে খেলে বেড়াত তখন আঙ্গুল দিয়ে পরী ওই দুষ্টু চুলের গোছাটা কানের পাশে উঠিয়ে দিত।
কত মিষ্টি দেখতে লাগত পরীকে। একবার নিজের কথা ভাবল অভি, গাল ভর্তি দাড়ি গোঁফ, চোখে চশমা, মাথায় কালো টুপি, চিনতে পারবেত পরী? হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয়ই চিনে নেবে। এত শত ভাবতে ভাবতে এক সময়ে ঘুমিয়ে পড়ল অভি।
বল্বিন্দার ওকে ধাক্কা মেরে জাগিয়ে তোলে, “স্যারজি স্যারজি, ট্রেন এসে গেছে।”
চোখ মুখ ডলে উঠে পড়ল অভি, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে যে, সকাল আটটা বাজে। মৃদু বকুনি দিল বল্বিন্দারকে, “কি যে কর বল্বিন্দার, আমাকে আগে জাগিয়ে দেবে ত।”
বল্বিন্দার, “স্যারজি আমরা ত রাত তিনটে নাগাদ কাল্কা পৌঁছে গেছিলাম। আপনি ঘুমাচ্ছেন দেখে আর আপনাকে উঠালাম না। স্টেসানে গিয়ে খোঁজ নিলাম যে ট্রেন লেট।”
অভি চোখে মুখে জল দিয়ে উঠে পড়ল। মাথায় কালো টুপি’টা পরে নিয়ে প্লাটফরমের দিকে পা বাড়াল। প্লাটফরমে ঢুকে লক্ষ্য করল যে পরী আর দু’জন মহিলার সাথে দাঁড়িয়ে। উৎসুক নয়নে অভিকে খুঁজছে, কোথায় অভি, বলেছিল যে কাল্কা স্টেসানে ওর জন্য অপেক্ষা করবে। একটা লম্বা সাদা জ্যাকেট গায়ে দিয়ে পরী, একটু মোটা লাগছে দেখেত। চোখমুখ দেখে মনে হল যেন সারা রাত ঘুমোয় নি, চোখ দুটি ফোলা ফোলা। অভি আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল পরীর দিকে। বুকের মাঝে ধুকপুকানি যেন শত গুন বেড়ে গেছে।
ধরা পরে গেলে একদম কেলেঙ্কারি অবস্থা হয়ে যাবে। একটু পরে অভির দিকে তাকাল পরী, ওর চোখের দিকে তাকাতেই অভি ওর রুমাল টা বের করে ঠোঁটের সামনে ধরল। রুমাল দেখে পরীর মুখে যেন আর হাসি ধরে না। ধিরে ধিরে এগিয়ে এল অভির দিকে আর জড়িয়ে ধরল অভির হাত। ওর বান্ধবীরা আর তাদের স্বামিরা ওদের দিকে তাকাল।
অভি দাঁড়িয়ে থাকা দুই ভদ্রলোকের দিকে হাত বাড়িয়ে নিজের পরিচয় দিল, “আমি অর্জুন, বম্বে থাকেন ইন্দ্রানি বৌদি তাঁর দেওর। আমরা হয়ত আগে মিট করিনি তাই না।”
খুব গম্ভির আওয়াজে পরীকে জিজ্ঞেস করল, “তোমার জার্নি কেমন গেল?”
দুই বান্ধবী পরীর দিকে তাকিয়ে হতবাক, কে এই মানুষ, কেনই বা এর কথা এতদিন লুকিয়ে ছিল ওদের কাছ থেকে? পরী অভির দিকে চেয়ে মিটিমিটি হাসে, ও কি জানত কে কোন অর্জুন আসবে ওকে নিতে। পরী হাসি থামাতে না পেরে একটা জোরে চিমটি কেটে দিল অভির হাতের ওপরে।
কথা বলে জানা গেল বান্ধবীদের নাম আর পরিচয়। একজনের নাম কল্যানি তার স্বামী দিপঙ্কর আরেক জনের নাম রানী তাঁর স্বামির নাম রামানুজ। দিপঙ্কর আর রামানুজ গ্রামে পারিবারিক ব্যাবসা করেন। অভি ওদের কে আসস্থ করে বলল যে পরী ওর সাথে ভাল থাকবে।
কল্যানি, “শুচিস্মিতা কাল সারা রাত ঘুময়নি। ওর মনের ভেতরে যেন খই ফুটছিল কখন তোমার সাথে দেখা হবে। যাই হক যেখানে তোমারা জাচ্ছ সেই জায়গাটার নাম কি? খুব রোম্যান্টিক তোমারা একা একা এক অজানা অচেনা জায়গায় ঘুরতে যাচ্ছ। এক কাজ কর আমাদের সাথে ঘুরতে পার ত?”
রানী, “হ্যাঁ হ্যাঁ, আমাদের সাথে চল।”
পরী দেখল এযে বড় বিপদ, “না না, অর্জুন নিশ্চয় কিছু না কিছু আগে থেকে ভেবে রেখেছে।” অভির বাজুতে চিমটি কেটে বলল, “আমাদেরত আগে থেকেই হোটেল বুক করা আছে, তাই না অর্জুন? আর দেরি কেন চলো না।”
পরীর ব্যাগ হাতে নিয়ে অভি স্টেসান থেকে বেড়িয়ে পড়ল, পেছন পেছন বাকিরাও ওদের সাথে এল। পরী, দুচোখে হাজার প্রশ্ন নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে, প্রাণপণে বুকের মধ্যে জমে থাকা হাসি টিকে দাতে দাঁত পিষে চেপে ধরে আছে। কথা বার্তার মাঝে জানা গেল যে কল্যাণীদের আগে থেকেই হোটেল এবং গাড়ি ঠিক করা। দিপঙ্কর অভিকে জায়গার কথা জিজ্ঞেস করতে অভি জানাল যে ওরা চিতকুলে নামে একটা জায়গায় বেড়াতে যাবে।
সিম্লার আগেই কান্দাঘাট নামে এক জায়গা থেকে ওরা অন্য রাস্তা নেবে না হলে ওদের সাথে সিমলা যেতে পারত। অভি ওদের জিজ্ঞেস করল যে ওরা কবে ফিরবে, সেই মতন আবার পরীকে স্টেসানে পৌঁছে দিতে হবে। দিপঙ্কর জানাল যে ওরা পরের রবিবার ট্রেন ধরবে, কল্যানি বার বার করে পরীকে বলে দিল যে যেখানেই যাক না কেন রবিবারের মধ্যে যেন কাল্কা পৌঁছে যায়। অভি ওদের আসস্থ করে উত্তর দিল যে ওদের বান্ধবী ঠিক হাতেই থাকবে ওর জন্যে যেন কেউ কোন চিন্তা না করে।
বল্বিন্দার পরীর ব্যাগ নিয়ে গাড়িতে রাখে। গাড়ি দেখে ওর সবাই একটু অবাক হয়ে যায়। অভি জানায় যে ও প্লেনে করে আগের দিন দুপুরে দিল্লী পৌঁছে রাতের বেলা গাড়ি নিয়ে কাল্কা পৌঁছেছে।
রানী পরীকে একটু ধাক্কা মেরে বলে, “তুই ত মাইরি ডুবে ডুবে জল খাস। সারাটা রাস্তা আমাদের কিছুই জানালি না যে তোর অর্জুনের কাছে গাড়ি আছে।”
পরী অভির দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসে, ওই বা কি জানত কি নাম হবে, কোথায় যাবে, কি করে যাবে। কিছুই ত জানত না, তাই ত অধির ব্যাকুলতায় সারাটা রাত ঘুমায়নি, জেগে শুধু ভেবেছে অভির কথা।
বাকিদের বিদায় জানিয়ে ওরা গাড়িতে চেপে পড়ল। বল্বিন্দার পটু হাতে গাড়ি চালাচ্ছে। সিওয়ালিক পাহাড়ের সরু রাস্তা ধরে এঁকে বেকে গাড়ি চলেছে। পেছনে ওরা দুজনে বসে। গাড়িতে চেপেই পরী হাসিতে ফেটে পড়ল, যেন এতক্ষণ ওর বুকে ওর হাসি আর খুশি একসাথে জমা হয়ে একটা পাথর হয়েছিল।
পরী, “বাপরে বাপ, আমি স্বপ্নেও ভাবিনি যে তুমি এইরকম করতে পার। তোমার চশমা কবে হল? এটা কি সত্যি না মিথ্যে চশমা? এত দাড়ি গোঁফ কেন? এগুল কি আসল না নকল?”
অভি, “তুমি থামলে আমি কিছু বলতে পারি।”
পরী, “ঠিক আছে বাবা, আমি চুপ, তুমি বল।”
অভি ওকে পুর ট্রিপের পরিকল্পনা বলল, কি করে বাবা মাকে গল্প বলে বেড়ানোর ব্যাপারে রাজি করাল, কি করে সুপ্রতিমদাকে ফোন করে গাড়ির ব্যাবস্থা করল, সব কিছু। সব শুনে পরী ওকে জড়িয়ে ধরে দাড়ি ওয়ালা গালে একটা চুমু খেল।
কিছু পরে গাড়ি কান্দাঘাট ছাড়িয়ে একটা ছোটো রাস্তা ধরে পাহাড় চরতে শুরু করল। চারপাশে উঁচু উঁচু পাইন, শাল, দেবদারুর বন। রাস্তা কুয়াশায় ঢাকা, বল্বিন্দার খুব আস্তে আস্তে গাড়ি চালাচ্ছে। আকাবাঁকা পথ ধরে গাড়ি এগতে থাকে, বাইরে কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে, গাড়িতে হিটার চালান।
পরী অভির বাঁ দিকে বসে ওর হাত খানি শক্ত করে বুকের কাছে ধরে রেখেছে। একটা লম্বা সাদা জ্যাকেট গায়ে। বড় বড় চোখে জানালার বাইরে দেখছে। অভি ওর গালে আঙ্গুল ছুঁইয়ে একটু আদর করল।
পরী, “উম্মম্ম… আমি কোনদিন পাহাড় দেখিনি। আমার মনে হচ্ছে আমি যেন স্বপ্ন দেখছি। আমি এই ঘুম থেকে উঠতে চাই না, পাছে আমার স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়।”
পরী অভির কাঁধে গাল ঘষে দেয়।
অভি, “এই দেখ আমি তোমার পাশেই আছি। এটা স্বপ্ন নয়, পরী, আমি সত্যি তোমার পাশে।”
অভি ওকে আরও নিবিড় করে জড়িয়ে ধরে বুকের কাছে, গালে গাল ঘষে দেয় অভি।
পরী, “উম্মম্ম… দুষ্টু ছেলে, ছাড়ও ছাড়ো, ওইরকম ভাবে গাল ঘোসো না, তোমার দাড়িতে লাগছে।”
“ঠিক আছে বাবা, আমি দাড়ি কামিয়ে ফেলব খানে।” পরীর হাত হাতে নিয়ে ঠোঁটের কাছে এনে আঙ্গুলে চুমু খায়।
পরী, “উফফফ আমার যে কি ভালো লাগছে না… কি বলব” পরী অভির হাথ বুকের ওপরে চেপে ধরে বলে, “দেখো দেখ বুকের ভেতর টা কেমন জোরে জোরে ধুকপুক করছে।”
অভি দুষ্টুমি করে ওর বুকের ওপরে হাত বুলিয়ে দেয়। পরী মৃদু রেগে গিয়ে হাতের ওপরে একটা আলতো থাপ্পর মেরে বলে, “এই দুষ্টু ছেলে ছাড়ো।”
কিছু পরে বলে, “একটু ফ্রেস হতে পারলে ভাল হত।”
অভি, “ঠিক আছে, একটু পরে আমরা চায়েল পৌঁছে যাব সেখানে একটা রুম নিয়ে নেব। স্নান সেরে আবার বেড়িয়ে পড়ব।”
কিছু পরেই গাড়ি চায়েল পৌঁছে গেল। বল্বিন্দার গাড়ি থামিয়ে পরীকে বলল, “ভাভিজি চায়েল এসে গেছে।”
পরী বিশেষ হিন্দি বোঝেনা, তবে বল্বিন্দারের মুখে ভাভিজি কথাটা বুঝে গেল। অভিকে জিজ্ঞেস করল, “আমাকে ভাভিজি বলে ডাকছে কেন? আমার লজ্জা করছে।”
অভি, “আরে বাবা লজ্জা পেওনা। ও তোমাকে আমার সাথে দেখেছে ত ভাভি বলবে না ত কি বলবে। চিন্তা কোরও না, ও সুপ্রতিমদার অনেক দিনের ড্রাইভার, খুব বিশস্ত লোক।”
চায়েল পৌঁছে ওরা একটা হোটেল নিয়ে নিল। হোটেলের কামরায় ঢুকে অভি দুষ্টুমি করে পরীকে জিজ্ঞেস করে, “পরী, আতে সময় খুব কম। চলো না একসাথে দু’জনে বাথরুমে ঢুকে স্নান সেরে নেই।”
লজ্জায় লাল হয়ে উঠল পরী, মৃদু ধমক দিল অভিকে, “না… বদমাশ কি শখ এক লাত্থি মারব।”
স্নান সেরে একটু বিশ্রাম নিয়ে ওরা বেড়িয়ে পড়ল। পরীকে দেখতে একদম সদ্য ফোটা তাজা গোলাপের মতন দেখাচ্ছে। সাদা একটা আটো সালোয়ার পড়েছে, তাঁর ওপরে ওর সাদা জ্যাকেট, ঠিক যেন সাদা গোলাপ ফুল। দু’কানে দুটি মুক্তোর দুল, টলটল করে দুলছে। চায়েল ছাড়িয়ে আবার যাত্রা শুরু। কুয়াশা কেটে হাল্কা রোদের আভাস দেখা দিল। শীতকালের সূর্য যেন চাঁদের আলো ছড়াচ্ছে। অভি দাড়ি গোঁফ কামিয়ে নিয়েছে যাতে পরীর চুম্বনে কোন কষ্ট না হয়। বল্বিন্দার নিপুন হাতে গাড়ি চালাচ্ছে, আঁকা বাঁকা পথ ধরে গাড়ি পাহাড়ে উঠছে।
পরী জিজ্ঞেস করল যে কতক্ষণ লাগবে চিতকুল পৌঁছতে, অভি মাথা নাড়াল, ঠিক জানে না। বল্বিন্দার ওদের কথা শুনে উত্তর দিল যে, হোটেলের ম্যানেজার কে ও জিজ্ঞেস করে রাস্তা যেনে নিয়েছে, আরও ঘন্টা দশেক লাগবে চিতকুল পৌঁছতে। গাড়ি কিছুক্ষণের মধ্যে ফাগু ছাড়িয়ে আবার এন.এইচ.22 ধরল।
পরী অভির কাঁধে মাথা রেখে জানালার বাইরে অবাক হয়ে তাকিয়ে পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখে চলেছে। বাম হাতে অভি ওকে জড়িয়ে ধরে, পরী ওর হাতের আঙ্গুল নিয়ে খেলা করছে।
কারুর মুখে কোন কথা নেই, দু’জনেই চুপ করে বসে একে ওপরের আদর খেয়ে চলেছে। কিছু পরে নারকান্ডা এল, তারপরে গাড়ি নিচে নামতে শুরু করল। কিছু দূর যাবার পরে গাড়ি একটা নদীর পাশ দিয়ে চলতে শুরু করল। পরী পাহাড়ি নদী দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকল।
“উম্ম… কি সুন্দর ছোট্ট নদী। কি নাম নদীটার” পরী অভি’কে জিজ্ঞেস করল।
অভি, “সম্ভবত সাটলুজ নদী।”
পরী, “মানে বাঙ্গালয় শতদ্রু তাই ত?”
অভি, “তাই হবে।”
পরী বল্বিন্দার কে গাড়ি দাঁড় করাতে বলল, নদীর পাড়ে গিয়ে নদীর জল ছুঁতে চায়। অভি বলল যে বাইরে খুব ঠাণ্ডা আর নদীর জল হিমের মতন হবে। পরী ওর কথায় কান দিলনা। জোর করে বল্বিন্দার কে গাড়ি থামাতে বলল। গাড়ি থামা মাত্রই গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে এক দৌড়ে নদীর পাড়ে।
পরী ওর দিকে চিৎকার করে জিজ্ঞেস করল, “তুমি আসছ না আমি নদীতে ঝাপ দেব?”
অপরিজ্ঞাত যাত্রা (#03)
অগত্যা অভিকে ওর পেছন পেছন গাড়ি থেকে নেমে যেতে হল। ততক্ষণে পরী, রাস্তার পাশ থেকে নদীর দিকে নেমে গেছে। বেশ পটীয়সীর মতন টাল সামলে পাথরের ওপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে তীরে চলে গেছে। ঝুঁকে পরে নদীর জল ছিটিয়ে দিল অভির দিকে।
হিম শীতল জল ওর হাতের আঙ্গুল যেন জমিয়ে দিল, “বাপরে কি ঠাণ্ডা, আঙ্গুল গুলো যেন কেটে বেড়িয়ে গেল।”
অভি, “আমি আগেই তোমাকে সাবধান করে দিয়েছিলাম, তুমি ত আমার কোন কথা শুনবে না।”
পরী, “ধুর তুমি একদন রোম্যান্টিক নও।”
অভি, “পরী গাড়িতে ওঠো, চিতকুলে ও একটা নদী আছে।”
পরী খুশিতে নেচে উঠে বলল, “তাই নাকি? আমাকে আগে বলনি কেন। চলো তাহলে।”
অভি, “কিছু জিনিস ধিরে ধিরে প্রকাশ পাওয়া ভাল।”
পরী, “ঠিক আছে তুমি যদি সত্যি কথা বলছ তাহলে রাগ করব না। কি নাম বললে যেন জায়গাটার?”
অভি মৃদু বকুনি দেয় পরীকে, “বোকা মেয়ে, চিতকুল।”
গাড়ি আবার ওদের নিয়ে ছেড়ে দিল। রাস্তার পাশ দিয়ে পাহাড়ি নদী ওদের সাথে সাথে চলতে থাকে। আকাশ নীল, মাঝে মাঝে তুলোর মতন পোজা পোজা সাদা মেঘের ভেলা। দু’পাসে সবুজে ঢাকা ছোটো বড় পাহাড়। কোথাও কোথাও আপেলের বাগান। কিছুক্ষণের মধ্যে ওরা রামপুর পৌঁছে গেল। ওখানে ওরা দুপুরের খাবার সেরে নিয়ে আবার যাত্রা শুরু করল। খাবারের পরে অভির খুব ইচ্ছে করছিল একটা সিগারেট খায়, একবার পরীর দিকে তাকাল অভি, দেখতে পারলে মাথা খেয়ে ফেলবে তাও একটা সিগারেট জ্বালাল।
পরী ওর দিকে কটমট ক্রে তাকিয়ে বলল, “আবার সিগারেট ধরেছ।”
অভি কাতর চোখে অনুমতি চাইল, এই ঠান্ডায় একটা সিগারেট। পরী কিছু না বলে, মুখ ভার করে গাড়িতে উঠে গেল। অভি দেখল যে, সিগারেটের চেয়ে ওর মুখের হাসি অনেক বেশি মুল্যবান। আধা খাওয়া সিগারেটটা ফেলে দিয়ে গাড়িতে চেপে বসল।
অভি, “দেখো আমি সিগারেট ফেলে দিয়েছি, এবারে হাসো একটু।”
গাড়ি রামপুর ছাড়িয়ে এগতে শুরি করে। পরীর ঘুম ঘুম পাচ্ছিল। অভি সিটের এক কোনায় সরে গিয়ে ওকে শুতে বলল, অভির কোলে মাথা রেখে পরী ঘুমিয়ে পড়ল। অভি নিস্পলক চোখে ওর ঘুমন্ত মুখের দিকে চেয়ে রইল। রাস্তার অবস্থা বদলে গেছে, বল্বিন্দার নিপুন হাতে খুব মন দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। অভি একবার সামনে দেখে, নিচে ঝুঁকে পরীর গালে আলতো করে একটা চুমু খেল।
গালের ওপরে অভির ঠোঁটের পরশ পেয়ে আরও গুটিশুটি মেরে ওর হাথ খানি বুকের ওপরে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিশ্চিন্ত হয়ে শুয়ে পড়ল। অভি পরীর গায়ের উষ্ণতা হাতের ওপরে অনুভব করল। কিছুপরে জিওরিতে বল্বিন্দার গাড়ি থামিয়ে পেট্রল ভরে নিল।
গাড়ি থামতেই পরী জেগে গেল, “আমরা দাঁড়িয়ে কেন?”
অভি, “তেল ভরার জন্য।”
পরী, “আমি কতক্ষণ ঘুমিয়েছি।”
অভি, “বেশিক্ষণ ঘুময় নি তুমি আবার ঘুম লাগাতে পার।”
পরী, “আর কতক্ষণ লাগবে চিতকুল পৌঁছতে?”
অভি পেট্রোল পাম্পের লোকটাকে জিজ্ঞেস করে যেনে নিল যে চিতকুল পৌঁছতে এখন ঘন্টা চারেক লাগবে। লোকটা আরও জানিয়ে দিল যে, সামনে কারছাম ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তা মটামুটি তারপরে রাস্তার অবস্থা খারাপ। বল্বিন্দার ওর কথা শুনে উত্তর দিল, “স্যারজি চিন্তা করবেন না একদম। আমি ঠিক আপনাদের নিয়ে যাব।”
পরী বিশেষ হিন্দি বোঝে না তাই অভিকে জিজ্ঞেস করল যে বল্বিন্দার কি বলল ওকে। অভি জানাল যে রাস্তার অবস্থা হয়ত ভাল না কিন্তু বল্বিন্দার ভরসা দিয়েছে যে গাড়ি চালাতে ওর কোন কষ্ট হবে না। ঘড়ি দেখল অভি, আরাইটে বাজে, মানে চিতকুল পৌঁছতে পৌঁছতে সন্ধ্যে হয়ে যাবে।
জিওরি ছারতেই পরী বলল আর ঘুমাবে না, জেগে থেকে এখন শুধু পাহাড় দেখবে। কারছাম পৌঁছতেই সূর্যি ডুবে গেল। পাহাড়ে তাড়াতাড়ি সন্ধ্যে নেমে এল। কারছামে ওরা লক্ষ্য করল যে দুটি নদী এসে মিশেছে। একটার জলের রঙ একটু ঘোলাটে একটা একদম পরিষ্কার তুঁতে রঙের।
পরী তুঁতে রঙের জলের নদী আগে কোনদিন দেখেনি। ওরা নদী দেখে বিস্ময়ান্বিত। অভিকে জিজ্ঞেস করল, “এই নদীর নাম কি?”
অভিও কোনদিন তুঁতে রঙের জল দেখেনি, ও বল্বিন্দার কে গাড়ি থামাতে বলল। গাড়ি থামতেই ওরা নেমে নদীর পাড়ে গেল। পরী ওকে জিজ্ঞেস করল, “এই নদীর নাম কি? এই নদী কি আমরা চিতকুলে পাব?”
অভি মাথা নাড়ল, “হ্যাঁ এই নদী তুমি চিতকুলে দেখতে পাবে। সম্ভবত এই নদীর নাম বিয়াস, চিন থেকে আসছে এই নদী।”
কারছাম ব্রিজ পার করে, এন.এইচ.22 ছেড়ে ওরা চিতকুলের রাস্তা ধরল। রাস্তায় বড় বড় পাথর আর রাস্তাটা খুব নির্জন। আসেপাসে লোকজনের দেখা নেই নেই কোন গাড়ি ঘোড়া। বাইরে কনকনে ঠান্ডা হাওয়া বইছে। অভি পরীকে জড়িয়ে ধরে বসে। বাইরের আলো কমে এসেছে আগেই তাই বল্বিন্দার গাড়ির লাইট জ্বালিয়ে দিল। পরী অভির দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকাল।
অভি ওকে আসস্থ করে বলল, “অযথা ভয় পেওনা।”
পরী ওর গালে আলতো করে চুমু খেয়ে বলল, “তুমি আছো ত তাহলে আর ভয় কিসের। আমি শুধু এটা ভেবে অবাক হচ্ছি যে তুমি এই রকম জন বিরল জায়গার খোঁজ পেলে কি করে?”
অভি ওকে আদর করে উত্তর দেয়, “তুমি আমার পাশে থাকলে আমি ত বিশ্ব জয় করে নেব, সোনা।”
ওর গালে একটা চুমু খেয়ে বলল পরী, “আমার সোনার ছোট্ট রাজকুমার।”
সাঙলা পার হতেই ঘন অন্ধকার ওদের ঢেকে নিল। এবড় খাবড় রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালাতে বল্বিন্দারের একটু অসুবিধে হচ্ছিল। অভি জিজ্ঞেস করাতে উত্তর দিল যে ঠিক আছে সব। পরী অভির দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকাল। বাইরে কোন আলো দেখা যায় না, ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঢাকা দু’পাস। কোথায় পাহাড় আর কোথায় রাস্তা কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। অভি পরীকে ভয় পেতে বারন করল।
কিছু পরে অভিকে মৃদু বকুনি দিয়ে বলল, “আমাদের যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে কেউ জানতেও পারবে না।”
অভি ওকে আসস্থ করে, “উল্ট পালটা কিছু বোলো না, আমাদের কিছু হবে না পরী।”
পরী রেগে সিটের এককোণে সরে গিয়ে বসল। উতকন্ঠায় পরী চুপ করে বসে, জানালা দিয়ে বাইরের অন্ধকার দেখতে থাকে। অভি পরিস্থিতি হাল্কা করার জন্য ওকে জিজ্ঞেস করল, “বাইরে অন্ধকারে কি দেখছ?”
কিছু উত্তর দিল না পরী, ওর দিকে একবার কটমট করে তাকিয়ে আবার বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকল। ভয়ে ওর মুখ শুকিয়ে গেছে, বুকের ধুকপুকানি শত গুন বেড়ে গেছে। অভি প্রথম বার এই জায়গায় এসেছে, ওই বা কি করে জানবে যে রাস্তার অবস্তা ওই রকম খারাপ হবে। অভি ও উতকন্ঠায় বসে, কতক্ষণে গন্তব্য স্থানে পৌছবে। পরী গম্ভির মুখ করে একদম চুপ করে বসে।
আরও প্রায় ঘন্টা খানেক পরে ওরা চিতকুল পৌঁছে গেল। ঘুটঘুটে অন্ধকার চারপাশে, কিছু দুরে কিছু আলো টিমটিম করে জ্বলছে। পরীকে গাড়িতে বসিয়ে রেখে অভি নেমে গেল হোটেলের খোঁজে। বাইরে কনকনে ঠান্ডা হাওয়া যেন যুদ্ধ জুড়েছে। বেশ কিছুক্ষণ খোঁজার পরে রাস্তার একদম শেষে একটা হোটেলের সন্ধান পেল অভি। ম্যানেজার জানাল যে হোটেল একদম ফাঁকা, এই ঠাণ্ডায় কেউ এখানে ঘুরতে আসেনা। একটা রুম ভাড়া নিয়ে নিল অভি। পরী সেই যে সাঙলা থেকে গুম মেরে বসে আছে, হোটেলে ঢোকা পর্যন্ত কোন কথা বলল না।
অপ্রত্যাশিত রজনী
হোটেলের রুম টা বেশ বড়সড়, দু’দিকের দেয়ালে বড় বড় কাঁচের জানালা, তার ওপরে ভারী পর্দায় ঢাকা। হোটেলের লোক ওদের জিনিস পত্র রুমে রেখে চলে যাবার পরে অভি দরজা বন্ধ করে দিল। রুমের মধ্যে দু’খানা হিটার জ্বলছে। অভি পরীকে জিজ্ঞেস করল যে রুমটা পছন্দ হয়েছে কি না। উত্তরে পরী ওর দিকে একটু মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিল যে ঠিক আছে। গায়ের জ্যাকেট টা খুলে এক এক ব্যাগ খুলতে শুরু করল পরী। ব্যাগ থেকে জিনিস পত্র বের করে আলমারিতে সাজিয়ে রাখতে শুরু করল। অভি বিছানায় বসে পেছন থেকে পরীকে একমনে দেখে চলেছে। খোলা চুল পিঠের ওপরে নাচছে।
পেছন থেকে ওকে দেখতে ঠিক প্রাচিন বালির ঘড়ির মতন লাগছে, চওড়া কাঁধ সরু হয়ে নেমে এসেছে পাতলা কোমর, তারপরে ফুলে উঠেছে প্রসস্থ নিতম্ব। ওর মূর্তিময়ি সৌন্দর্য উপভোগ দেখতে থাকল অভি। একবার মনে হল যেন পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে পরীকে। মাঝে মাঝে চুড়ির ছনছন আওয়াজ গুঞ্জরিত হচ্ছে ঘরের মধ্যে। বারে বারে বাম পাশের চুলের এক গোছা ওর গালের ওপরে এসে পড়ছে আর বাঁ হাতের তর্জনী দিয়ে বারে বারে ওই চুলের গোছা টাকে কানের পেছনে করে দিচ্ছ
শেষ পর্যন্ত অভি আর থাকতে না পেরে চুপিচুপি পরীর পেছনে এসে দাঁড়াল। দু’হাতে পেছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরে আলতো করে ঘাড়ে একটা চুমু খেল। আচমকা অভির ঠোঁটের পরশ পেয়ে একটু কেঁপে উঠল পরী। ঘাড়ের ওপর দিয়ে শীতল চাহনি দিল অভির দিকে। অভি তাও ওকে ছেড়ে দিল না, জড়িয়ে ধরে থাকল।
পরী ওর দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ঠাণ্ডা গলায় বলল, “ছাড়ো আমাকে। আমি বাথরুম যাব।”
ওই গলার আওয়াজ শুনে অভি বুঝতে পারল যে বিশাল একটা ঝড় আসছে। পরী একটা হাল্কা গোলাপি রঙের নাইট ড্রেস আর একটা ভারী গাউন নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল। বেচারা অভি নিরুপায় হয়ে বিছানায় গিয়ে বসে পড়ল। নিজের জামা কাপড় বদলে একটা ট্রাক সুট পরে নিল। কিছু পরে পরী বাথরুম থেকে বেড়িয়ে এসে অভিকে হাত মুখ ধুয়ে নিতে বলল।
অভি ওর গম্ভির কাঁদো কাঁদো চেহারা দেখে জিজ্ঞেস করল, “কি হয়েছে তোমার? এত চুপচাপ কেন? আমার সাথে কি কথা বলতে নেই?”
পরী ওর দিকে লাল চোখে তাকিয়ে বলল, “বাথরুমে ঢোকো, তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নাও আমি ততক্ষনে খাবারের অর্ডার দিয়ে দিচ্ছি।”
অভি, “ঠিক আছে কিন্তু একটু বলবে কি কেন এত চুপচাপ তুমি?”
পরী ওকে ঠেলে বাথরুমে ঢুকিয়ে দিল। হাত মুখ ধুয়ে বাইরে বেড়িয়ে দেখে যে পরী একটা চেয়ার নিয়ে জানালার পাশে বসে বাইরের অন্ধকার দেখছে। পুর ঘরের বাতাস যেন পরীর সাথে কাঁদছে। ওর চেহারার গুমোট ভাব যেন ঘরের দেয়ালে ছড়িয়ে পড়েছে। অভির সামনে সেই হাসি খুশি পরী নেই, কোথায় যেন হারিয়ে গেছে সেই পরী। টেবিলে ওদের রাতের খাবার সাজান। চুপ করে রাতের খাওয়া সেরে নেয় ওরা। অভির মনে ভয় ঢুকে পরে। পরী যদি এইরকম ভাবে গুম মেরে বসে থাকে, থাকলে ত ঘোরার আনন্দ টা মাটি হয়ে যাবে।
খাবার পরে গায়ের ভারী গাউন টা খুলে বিছানায় উঠে পরে পরী। লেপটা বুক পর্যন্ত টেনে নিয়ে বিছানার মাথার দিকে হেলান দিয়ে কটমট চোখে তাকায় অভির দিকে।
অভি বিছানার পায়ের দিকে বসে ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছে তোমার, কিছু বলবে কি?”
পরী রেগে গিয়ে উত্তর দেয়, “কি হয়েছে আমার? বাইরে একবার দেখেছ? একবিন্দু আলো দেখা যায় না কোথাও, চারদিকে শুধু ঘুটঘুটে অন্ধকার। এখানে কিছুই নেই, না একটা রেস্টুরেন্ট আছে, না একটা দোকান আছে, না কোন বর বাড়ি আছে। এমন কি এখানে কোন লোকজন ও নেই।”
অভি, “দেখ পরী, আমি তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে চেয়েছিলাম। আমিও এই জায়গায় নতুন, প্রথম বার এসেছি।”
পরী, “এখানে একটা দোকান ও নেই।”
অভি, “দোকান দিয়ে কি করবে তুমি?”
পরী, “দোকান দিয়ে মানুষে কি করে, জানো না। শপিং করব আবার কি করব। যারাই ঘুরতে যায় তারাই শপিং করে।”
অভি, “তুমি তাহলে এখানে শপিং করার জন্য এসেছ।”
পরী, “না মানে শুধু মাত্র শপিং নয়। কিন্তু বাইরে দেখ, কোথাও কিছু দেখতে পাওয়া যায় না শুধু অন্ধকার ছাড়া। তুমি বলেছিলে যে এখানে নাকি একটা নদী আছে, কোথায় সেই নদী?”
অভি, “বাইরে অন্ধকার তাই তুমি নদী দেখতে পাচ্ছ না।”
পরী, “অভি, তুমি এখান কার রাস্তা দেখেছ। রাস্তা অরে বাব, রাস্তা নেই বললেই চলে। এবর খাবর আর পাথরে ঢাকা কি সাঙ্ঘাতিক রাস্তা এখান কার। এখানে কি মানুষে আসে?”
অভি আর মাথা ঠিক রাখতে পারে না। শেষ পর্যন্ত শুরু হল ওদের ঝগড়া বা প্রেম রাগ। রেগে গিয়ে পরীকে বকে দেয়, “আমি কি করে জানব যে রাস্তা ওই রকম হবে?”
পরীও রেগে গিয়ে উত্তর দেয়, “অভি তুমি নিশ্চয় জানতে।”
অভি, “হাঁ ভগবান, পরী আমি সত্যি জানতাম না।”
পরী, “তোমার সাথে না এসে কল্যানি আর রানির সাথে মানালি ঘুরতে গেলে ভাল হত।”
অভি, “হ্যাঁ তাই করতে। কেন করনি তাহলে?”
কেঁদে ওঠে পরী, “তুমি ভাল করে জানো আমি কেন ওদের সাথে যাইনি আর কেন আমি তোমার সাথে এসেছি। আর এখন…”
অভি, “এখন কি এখন…”
পরী, “এখন কি? দেখ কোথায় এনেছ আমাকে। কোন ক্রমে একটা হোটেল খুঁজে পাওয়া গেছে তাতে আবার কোন লোক নেই। কেউ যদি রাতে আমাদের কিছু করে দেয় তাহলে বাড়ির কেউ খবরও পাবে না। কেউ জানে না আমরা এই রকম একটা সাঙ্ঘাতিক জায়গায় ঘুরতে এসেছি, যেখানে আসেপাসে দেখার কিছুই নেই।”
অভি চিৎকার করে ওঠে, “চুপ কর পরী, আমাদের কিছুই হবে না।”
কেঁদে উত্তর দেয় পরী, “আমি শুধু চেয়েছিলাম তোমার সাথে আমার প্রথম বেড়ানো টা চিরস্মরণীয় হয়ে থাক।”
বারে বারে চোখের জল মুছতে থাকে। সেই চোখের জল দেখে অভির মাথা আরও গরম হয়ে যায়।
অভি বকুনি দিয়ে বলে, “আমার সামনে কুমিরের কান্না একদম কাঁদবে না।”
চিৎকার করে ওঠে পরী, “অভি, একদম আমার সাথে ওই রকম ভাবে কথা বলবে না। কাল সকালে আমাকে সিমলা পৌঁছে দিয়ে আসবে। আমি জানি কল্যানিরা কোন হোটেলে উঠেছে, আমি কল্যাণীদের সাথে ঘুরতে যাব।”
অভি, “ঠিক আছে কাল সকালে আমি তোমাকে সিমলা পৌঁছে দিয়ে আসব।”
গলা পর্যন্ত লেপ টেনে নিয়ে উলটো দিকে ফিরে শুয়ে পড়ল পরী। বালিসে মাথা গুঁজে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করে দিল। অভি মাথা চাপড়াল, শেষ পর্যন্ত একি ঘটে গেল। এই রকম ত ও চায়নি।
যথাসম্ভব মিষ্টতা এনে পরীকে শান্তনা দেবার চেষ্টা করল অভি, “প্লিস কেঁদো না। আমি একটু বাইরে যাচ্ছি।”
ফুফিয়ে উঠে বলল, “যাও যাও, আমি জানি তুমি বাইরে কেন যাচ্ছ। তুমি সিগারেট খাবে এই ত। আমাকে লুকিয়ে তুমি ব্যাগে করে সিগারেট প্যাকেট নিয়ে এসেছ আমি দেখেছি। একে বারে সবকটা সিগারেট খেয়ে মর গিয়ে। দূর হয়ে যাও আমার সামনে থেকে।”
অভি, “দোহাই চুপ করে থাক।”
পরী, “আমার সামনে থেকে চলে যাও, আমাকে একটু একা ছেড়ে দাও।”
অভির সিগারেট টা খুব দরকার ছিল তাই সিগারেট ধরিয়ে বাইরে চলে এল। বাইরে এসে ভাবতে থাকল, কি করে জানবে যে জায়গাটা এই রকম জনবিরল স্থান হবে? অভিও প্রথম বার এসেছে এই জায়গায় পরী ও প্রথম বার।
“অভিমন্যু তোমার উচিত হয়নি শুচিস্মিতাকে কাঁদানোর। এই ভ্রমন যাত্রা বিশেষ সুখদায়ক হবে না অভিমন্যু। সব মেয়েই চায় তাঁর প্রেমিকের সাথে মিলনের প্রথম রাত চিরস্মরণীয় হয়ে থাক, কিন্তু তুমি শুচিস্মিতাকে কাঁদিয়ে ঠিক করনি, অভিমন্যু। তোমাকে এই পরিস্থিতির সামাল দিতে হবে না হলে শুচিস্মিতা তোমাকে সারা জীবন ক্ষমা করবে না।”
অভির মাথার মধ্যে থেকে কেউ ওকে এই সব কথা বলে গেল। বাইরে কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া যেন তুমুল যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে। হয়ত বা বাইরে তুষার পাত হচ্ছে।
ঘরে ঢুকে দেখল যে পরী ঘুমিয়ে পড়েছে। ট্রাক সুটের জ্যাকেট টা খুলে লেপের নিচে ঢুকে গেল অভি। পরীর দিকে সরে গিয়ে একটু ঝুঁকে পরীর ঘুমন্ত মুখখানি দেখতে চেষ্টা করল। সুন্দর মুখখানির ওর চুলের গোছার নিচে ঢেকে পড়েছে। আলতো করে আঙ্গুল দিয়ে চুলের গোছা টা সরিয়ে দিল মুখের ওপরে থেকে। একটা সরু জলের রেখা চোখের কোন থেকে বেয়ে নাকের ডগা পর্যন্ত গিয়েছে, বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে আলতো করে জলের দাগটা মুচে দিল। অভির উত্তপ্ত নিঃশ্বাস পেয়ে একটু কেঁপে উঠল পরী।
অভি আলতো করে ওর বাঁকা ভুরুর ওপর দিয়ে আঙ্গুল বুলিয়ে দিল। ঝুঁকে পরে ওই গোলাপি নরম গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল। তারপরে আদর করে ওর নরম গালের ওপরে নাকের ডগা দিয়ে ঘষে দিল। পরী গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ওর কোমরে হাত রেখে ওকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ল অভি। পেটের ওপরে অভির বলিষ্ঠ হাতের স্পর্শ পেয়ে মৃদু কেঁপে উঠল পরী, ওর হাতখানি বুকের কাছে এনে আরও জোরে শক্ত করে বুকের ওপরে চেপে ধরল। শরীরের সাথে শরীর মিলিয়ে দিয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ল ওরা।