–মধ্যরাতের আকাশ যেনো ভীষণ মায়াবী রূপ ধারণ ধরে আছে।নীল আকাশ এর নীলের সাথে ভেষে বেড়ানো সাদা মেঘের বুঝি ভীষণ ভাব।তা না হলে এই সাদা মেঘ ঘুলো এই শুনশান নিরবতায় রাতের আকাশে ভেষে বেড়ায় কেনো?সাথে চাঁদ ও যেনো আজ পূর্ণ তিথিতে আছে।গোলাকার রুটির আকৃতির রক্তিন বর্ণের চাঁদ বুঝি আজ উঠেছে আমাদের মধুচন্দ্রিমার সাক্ষী হতে।এই চাঁদ আজ আস্ত এক ভালবাসার সাক্ষী হিসাবে ছিলো।যা কেউ জানেনা এই চাঁদ সেটা জানে।বুকে হাত বেঁধে সবার থেকে খানিক টা দূরে গিয়ে আকাশ পানে তাকিয়ে আছি আমি।এক ভীষণ অস্হিরতা কাজ করছে আমার মাঝে।বার বার ওই সুন্দর সময় টুকু মনে পড়ছে আমার।ভাইয়ারা রান্নার পাশাপাশি ভীষণ আড্ডা দিচ্ছে।আর আমি আনমনে ভেবে চলেছি কিছুক্ষণ আগের ঘটনা।
–আমাদের সাইডেই কয়েকজন তরুণ যুবক যুবতী পিকনিকে এসেছে।ওরাও এক ফ্যামিলির মানুষ ই হবে।আমাদের মতোই ভীষণ আড্ডা দিচ্ছে ওরা।পাশেই নাচ গান হচ্ছে।সবাই আড্ডার পাশাপাশি সেটাও উপভোগ করছে।
–হঠাত কেউ বলে উঠলো সাইমন তোর নজর কোন দিকে।খেয়াল করে দেখি সাইমন নামের ছেলেটি আমার দিকে এক ভাবে তাকিয়ে আছে।দেখে মনে হচ্ছে এই প্রথম কোনো মেয়ে দেখছে সে।ছেলে মানুষ এত টা ছ্যাচড়া হয় কিভাবে বুঝিনা।
–সাইমন নামের ছেলেটি বলে উঠলো আকাশ থেকে সদ্য নেমে আসা পরীটির দিকে তাকিয়ে আছি।দেখছিস না একভাবে আকাশ পানে তাকিয়ে আছে।ওর চোখে ভীষণ মায়া।
–ছেলেটির দিকে একবার তাকালাম,দেখতে খারাপ না শ্যামবর্ণের লম্বা ছেলেটি এক নজরে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।ছেলেটির চাউনিতে অন্য কিছু বোঝা যাচ্ছে।মেয়েদের একশ গজ দূর থেকে কেউ ফলো করলেও তারা বুঝতে পারে।সেখানে আমার ও ব্যাতিক্রম হলো না।ছেলেটির কথার ধরণ বুঝতে বাকি রইলো না আমার।আমি আর এক দন্ড না দাঁড়িয়ে ভাইয়াদের কাছে চলে গেলাম।ওদের রান্না শেষ প্রায় পরিবেশন এর জন্য রেডি করছে ওয়ান টাইম প্লেট গুলা।মেহু আপু আর শুভ ভাইয়া ই সব কাজ করছে।
–হঠাত এক টুকরো আগুন ছিটকে গিয়ে মেহু আপুর হাতের উপর পড়লো।আপু আহ বলে চিৎকার দিতেই সবার নজর মেহু আপুর দিকেই গেলো।আমাদের সবার আগে শুভ ভাইয়া সবার আগে হাত ধরে ফেললো।যে যাকে ভালবাসে তার বোধহয় ভিতর আত্মা সবার আগে কেঁপে ওঠে প্রিয় জনের কিছু হলে।প্রিয় মানুষ টাই কি এমন যার কিছু হলে ভেতর থেকে কষ্ট আপনা আপনি বেরিয়ে আসে।তার কিছু হলে সবার আগে ভেতরে এক ছটফট শুরু হয়।শুভ ভাইয়ার দিকে তাকালেই বোঝা যাচ্ছে মেহু আপুর হাত ধরে কেমন একটা করছে।আপুর হাতে বার বার ফু দিয়ে দিচ্ছে।ভাইয়া হাতের আঙুল দিয়ে যত্ন করে আলতো পরশে হাত ডলে দিচ্ছে।শুভ ভাইয়া মেহু আপুকে বার বার জিজ্ঞেস করছে এই মেহু তোর কি অনেক খারাপ লাগছে অনেক কষ্ট হচ্ছে তোর।হাত কি অনেক জ্বলছে।এই মেহু এই তোকে না বার বার বললাম সাবধান সেই হাত পুড়িয়ে ফেললি।শুভ ভাইয়া বিহান ভাই কে বললো এই বিহান ওর হাতে কি অনেক প্রব্লেম হবে।বিহান ভাই একটা মলমের নাম বলে বললেন শুভ এই মলম টা মালিশ করলে ঠিক হয়ে যাবে।বিভোর ভাই বললেন শুভ মেহুর হাতের থেকে তোর হার্টে প্রব্লেম বেশী হবে।না মানে আমি এতক্ষণ যা দেখলাম ফুপ্পিকে বলে তোর বিয়ের ব্যাবস্থা না করলেই নয়।আমি চাইনা আমার একমাত্র ফুফাতো ভাই হার্ট এট্যাক এ মারা যাক।শুভ ভাইয়া হেসে দিয়ে বললেন বিভোর এই উপকার জীবনে ভুলবো না প্লিজ এই উপকার টা কর ভাই।বিহান ভাই মেহু আপুর কাছে প্রশ্ন করলেন মেহু অনেক খারাপ লাগছে নাকি তোমার।একদম ই চিন্তা করোনা ঠিক হয়ে যাবে।
–কিছুক্ষণের মাঝে সাইমন নামের ছেলেটি সাথে করে আরেকটি মেয়েকে এনে আমাকে বলে হাই আপু।আমি চোখ তুলে একবার তাকালাম কোনো উত্তর দিলাম না।এখানেও চলে এসেছে কি আজব ব্যাপার।শুভ ভাইয়া বললো আপনাদের বাসা কোথায় ভাই?তিয়াস ভাইয়া বললো আপনার পাশের মেয়েটি কে হয় আপনার ভাইয়া।বিভোর ভাই বললেন উনি কি সিঙ্গেল। সবার প্রশ্নের শেষে বিহান ভাই বললেন উনি কি ম্যারেড।আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম।একসাথে এত প্রশ্ন করলে কিভাবে উত্তর দিবে তারা।আমার এই কাজিন এর দল বল কি জীবনে ভাল হবে না।যেখানে যায় দল বেঁধে আর মানুষ কে অতিষ্ট করে ছাড়ে।
“–মেয়েটি কৌতুহল নিয়ে বিহান ভাই কে বললো হ্যালো ব্রো আমাকে দেখে কি বিবাহিত লাগে।”
“–বিহান ভাই ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করলেন,আজকাল কি আর বিবাহিত অবিবাহিত বোঝা যায় আপু।?”
“–অবশ্যই বোঝা যায়।ম্যারেড মানুষের মাঝে কিছু না কিছু গুন অবশ্যই থাকে। যেটা দেখে সিওর হওয়া যায়।”
“–এই যে আমাকে দেখুন।আমি তো বিবাহিত আমাকে দেখে কি সেটা বোঝা যাচ্ছে আপু।”
“–মেয়েটি চোখ উলটে বললো কি বলেন আপনি বিবাহিত।দেখে বোঝায় যাচ্ছে না।”
“–ক্যানো আপনি যে বললেন,বিবাহিত হলে বোঝা যায়।কই আমাকে দেখে তো বুঝলেন না।”
“–ছেলেদের বোঝা যায় না।তবে মেয়ে হলে ঠিক ই বুঝতাম।”
“–আসলেই বুঝতেন।ওকে ওই মেয়েটিকে দেখুন ও বিবাহিত। দেখে কি বোঝা যায়।আমার দিকে আঙুল দিয়ে দেখালেন।”
“–বলেন কি?উনি হিবাহিত।ওইটুক পিচ্চি মেয়ে বিবাহিত।”
“–আসলেই কি বিবাহিত দেখে বোঝা যায়। ”
“–নাহ আপনাদের দেখে বোঝা যায় না।এনি ওয়ে উনি কি আপনার ওয়াইফ।”
কথাটা শুনে শুভ ভাইয়ার দিক তাকিয়ে পড়লাম আমি।ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেলাম।তোহা আপু একটু রাগ নিয়ে বললো এই যে আপু চোখে কি কম দেখেন।বিহান ভাই এর সাথে কি দিয়ার যায় কোনদিকে।বিহান ভাই ছয় ফিট হাইট দিয়াকে দেখুন আর বয়স দেখুন ৫ বছরের ছোট বড়।এই লম্বা ছেলের হাঁটু সমান দিয়া ৫ ফিট ২।আমার মতো ৫ ফিট ৪ হাইট এর মেয়ে বিহান ভাই এর সাথে মানায়।তোহা আপু কি ইনডিরেক্টলি আমাকে খাটো বললেন।তোহা আপু বিহান ভাই কে বললেন বিহান ভাই বলুন আমি হাইটের দিকে পারফেক্ট আছি না বলুন।বিহান ভাই বললেন হুম তোহার মতো এমন পারফেক্ট আজকাল খুজে পাওয়ায় মুশকিল।একদম পারফেক্ট আছো তুমি তোহা।।
মেয়েটি হেসে উত্তর দিলো হাইট এ কি আসে যায়।পারফেক্ট মানুষ কখনো হাইট দেখে বিচার করা যায় না।দুজনের মনের বোঝাপড়া তেই হয় এটা।৫ ইয়ার ডিফারেন্স বয়স ই পারফেক্ট লাগে।মেড ফর ইচ আদার।
“সবার কথার মোড় ঘুরাতে বিহান ভাই আগের জায়গা ফিরে গেলেন।মেয়েটিকে বলে উঠলেন,এইজন্য আমিও আপনাকে দেখে বুঝি নাই।তাই জিজ্ঞেস করছিলাম বিবাহিত কিনা?”
“কেনো বলুন তো ভাইয়া বিবাহিত কিনা জিজ্ঞেস করলেন। ”
“এই যে একদল ছেলে দেখছেন।এরা অলওয়েজ বিবাহিত মহিলাদের প্রেমে পড়ে।এখন ই প্রেমে পড়ে যাচ্ছিলো।পড়ার আগে জেনে নিচ্ছি বিবাহিত কিনা।দেখা গেলো আপনার প্রেমে পড়ে এখানে হাত পা ভেঙে গেলো।তিয়াস ভাই আর বিভোর ভাই খিটখিটে ভঙ্গিতে তাকালো বিহান ভাই এর দিকে।তাদের চোখে মুখে ভয়ানক রাগ।বিভোর ভাই বলে উঠলেন একটা অপরিচিত মেয়ের সামনে ইজ্জত নষ্ট করার কি প্রয়োজন ছিলো।ভাগ্য ভালো তোর বউ আমার বোন।না হলে তোর কপালে যে কি ছিলো বিহান। বিহান ভাই শার্টের কলার খানিক টা ঝাঁকি দিয়ে বললেন আহা আকাশ টা কি সুন্দর তাইনা?তা ভাইয়া আপনার নাম হলো সাইমন এই বিবাহিত আপুকে কিছু বলবেন।আমি উনার চোখের দিকে তাকিয়ে পড়লাম উনি কি এক্ষুণি সবাই কে বলে দিবেন যে আমরা বিবাহিত।”
রিয়া,মেহু আপু হেসে গড়াগড়ি যাচ্ছে ওরা ভাবছে বিহান ভাই আমাকে রাগানোর জন্য বিবাহিত বলছেন।
সাইমন বললো দিল টুট গ্যায়া ভাইয়া।মেয়েটা বিবাহিত হলো কেনো?মেয়েটিকে খুব ভাল লেগেছিলো দেখতে।একদম রাতের পরী।
বিহান ভাই বললেন মেয়ে পটানোর পূর্ব অভিজ্ঞতা ভালোই আছে।পেত্নির মতো দেখতে একটি মেয়েকে রাতের পরি বানিয়ে দিলন।এগুলা আজ আজকাল কেউ খায় না।আপনাদের খাবার রেডি গো প্লিজ।
সাইমন নামের ছেলেটি হতাস হয়ে ফিরে গেলো।বিহাম ভাই এর যে ভীষণ রাগ হচ্ছে সেটা দেখে বোঝা যাচ্ছে।
ওখান থেকে আসার দুইদিন কেটে গিয়েছে আমি বিহান ভাই এর সাথে কোনো যোগাযোগ করছি না।কোনো এক বিশাল কারণে আমার অভিমান হয়েছে।কারণ টা বিহান ভাই কে বলি নি।উনার সাথে কথা না বলার ভীষণ পণ করলাম।নেট অন করিনা।ফোন ও অফ রেখেছি।রিয়া আর আমি কোচিং যাচ্ছি রাস্তায় ডাক পিওন এর সাথে দেখা।উনি আমাকে দেখে একতা চিঠি দিয়ে বললেন তোমার মামাতো ভাই এর নামে এসছে।চিঠি টা দেখে আমি আর রিতীমতো অবাক।চিঠী টা খুলে আরো অবাক।এটা একটা প্রেমপত্র ভাবতেই অবাক লাগছে।
Leave a comment