অফিডিয়ান | পর্ব – ১৩

15 Min Read

আজ জানালায় গ্লাস লাগাতে একদমই ভুলে গেছে রুমাইশা। কিন্তু কিচ্ছু করার নেই৷ এখন গ্লাস লাগাতে গিয়ে শব্দ হলেই ও পুরাই শেষ।
আপাতত গ্লাসের ভাবনা মাথা থেকে তাড়াতাড়ি সরিয়ে সামনের দিকে মনযোগ দিল ও৷ ‘হ্যা, কেউ একজন যাচ্ছে জঙ্গলের রাস্তা ধরে সামনের দিকে। তার শরীরের স্কেলি আবরণ গুলো চিকিমিকি করছে চাঁদের আলোতে।
সত্যিই কি রুমাইশা যাকে ভাবছে সে! হ্যা, সেরকমই। এই তো, তেমনই লম্বা, তেমনই পিঠ! হ্যা, এই আন্ডার শার্ট টাইতো সাফওয়ানের পরা দেখেছিলো ও! এ-এটা সাফওয়ান ভাইয়া!
ওই খোলশ! ওই বিশাল, পুরু খোলশ টা কি তাহলে সাফওয়ান ভাইয়ার! সাফওয়ান ভাইয়াও কি সাপেদের মতো খোলশ ছাড়ে! কিন্তু তখন, তখন ওখানে অতো সাপ একজায়গায় ছিলো কেন ওইভাবে গাদা মেরে? ওইখানে গিয়ে ভাইয়া করে টা কি?”
এসব ভাবতে ভাবতে আচমকা কনুয়ের আঘাত লেগে জানালার ধারের চওড়া জায়গাতে রাখা কফি মাগ টা একেবারে নিচে মাটিতে রাখা ইটের ওপির গিয়ে পড়ে, আর তাতেই ঝন ঝন শব্দে চিনা মাটির মাগ টা ভেঙে গুড়িয়ে যায়। চরম ভুল হলো রুমাইশার। সন্ধ্যায় জানালার ধারে দাঁড়িয়ে কফি খেয়ে মাগ টা এখানেই রেখে দিয়েছিলো ও! আর সেটাই ওর কাল হলো।
শব্দ হওয়া মাত্রই জঙ্গল অভিমুখী ব্যাক্তিটি তড়িত গতিতে ঘুরে তাকায় পেছনের দিকে। আর তার নিশাচরী জ্বলজ্বলে চোখ দিয়ে স্পষ্ট দেখতে পায় জানালার কাছে বিদ্যমান রুমাইশা কে । রুমাইশা ঘটনার আকস্মিকতায় জঙ্গলাভিমুকী ব্যাক্তিটার দিকে অসহায়ের চোখে তাকিয়ে সেখানেই যেন জমে যায়!
—সাফওয়ান ভাইয়া!
মনে মনে আওড়ায় রুমাইশা।
উন্মুক্ত চেহারায় সাফওয়ান ওর শকুনের মতো তীক্ষ্ণ চোখ দিয়ে দেখে নেয় রুমাইশা কে কিছুক্ষন। এতক্ষন শুধু ঘাড় ঘুরিয়েই রুমাইশা কে দেখছিলো সাফওয়ান, কিন্তু এবার পুরো শরীর ঘুরায় ও৷ তারপর চোখের পলক না ফেলে, মুখে হিংস্র অভিব্যক্তি এনে ওইভাবেই তাকিয়ে থাকে রুমাইশার দিকে৷
রুমাইশা পা ফেলে জানালা থেকে সরে যাওয়ার মতো শক্তি পায় না৷
— ‘আ-আমি দেখে ফেলেছি! দেখে ফেলেছি আমি। সাফওয়ান দেখে ফেলেছে যে আমি দেখে ফেলেছি! আমি, আমি কি করবো এখন! ও নিশ্চিত, নিশ্চিত আমাকে মেরে ফেলবে এইবার! আমাকে আর বাঁচিয়ে রাখবে না৷ মোটেই বাঁচিয়ে রাখবে না আমাকে!”
এলোমেলো চিন্তায় রুমাইশার মাথা ভার হয়ে আসলো। মনে হলো মাথার ভারে ও পড়েই যাবে। এখনো চোখ ওর সাফওয়ানের দিকে৷
সাফওয়ান আর ও কিছুক্ষন শিকারী দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে থেকে আবার ঘুরে দুই হাত প্যান্টের পকেটে রেখে ধীর গতিতে নিজের গন্তব্যের দিকে চলল।

সাফওয়ান কে চলে যেতে দেখে তড়িত গতিতে বিছানায় এসে বসলো রুমাইশা। জোরে জোরে নিঃশ্বাস ওঠানামা করছে ওর। টেবিলের ওপর থেকে বোতল নিয়ে বোতল উচু করে পানি খেলো৷
‘সাফওয়ান, সাফওয়ান দেখে ফেলেছে আমাকে। আমি যে জেনে গেছি ওর ব্যাপারে সেটা ও বুঝে গেছে! আমি কি করবো এখন! বাড়ি চলে যাবো? কিন্তু বাড়ি গিয়েও কি হবে? ও তো আমার বাড়ি গিয়েও আমাকে মেরে ফেলে দিয়ে আসবে!”
উত্তেজনায় কান মাথা গরম হতে শুরু করলো রুমাইশার। গা ঘেমে যাচ্ছে যেন! কি হবে এখন!
হাতড়ে হাতড়ে মাথার বালিশ টা খুজে কোনো রকমে তার ওপর মাথা রেখে চিত হয়ে বিছানায় পিঠ রাখলো রুমাইশা।
কালই এই বাড়ি ছাড়তে হবে, যেভাবেই হোক। আর এইখানে থাকা যাবে না! ফুপ্পিকে বলে কালই বাড়ি চলে যাবে ও!

২০. সকাল বেলা চোখ মুখ ফুলিয়ে নিচতলায় কিচেনে রুনিয়ার কাছে এলো রুমাইশা। এসেই বলল, ‘আমি বাড়ি যাবো ফুপ্পি৷”
রুনিয়া রুটি বেলছিলেন৷ রুমাইশার কথা শুনে রুটি বেলা থামিয়ে রুমাইশার দিকে তাকালেন৷ এরকম ফোলা ফোলা চোখমুখ দেখে রুনিয়া উৎকণ্ঠিত গলায় বললেন, ‘এরকম লাগছে কেন তোকে? কান্না কাটি করেছিস নাকি?”
রুমাইশা দুদিকে মাথা নাড়িয়ে না বোঝালো। কিন্তু রুনিয়া স্পষ্ট দেখলেনন রুমাইশার মুখে বেদনার ছাপ।
রুটি বেলার বেলন টা পাশে রেখে আটা মাখা হাত দিয়েই রুমাইশার দুই গাল স্পর্শ করলেন রুনিয়া তারপর বললেন, ‘কি হয়েছে তোর কেউ কিছু বলেছে? শাফিনের সাথে ঝামেলা হয়েছে তোর?”
রুমাইশা কোনো উত্তর করছে না দেখে কিছুক্ষন রুমাইশা কে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলেন রুনিয়া, তারপর ধীরগতিতে জিজ্ঞেস করলেন, ‘সাফওয়ান কিছু বলেছে নাকি?”
সাফওয়ানের নাম শুনতেই শরীরে শিহরণ বয়ে গেলো ওর। চোখ ফেটে পানি আসতে চাইলো। কিন্তু ঠোঁট চেপে কান্না টা আটকালো রুমাইশা। কিছুই স্বীকার করলো না রুনিয়ার কাছে। থেমে থেমে বলল, ‘অনেক দিন বাসায় যাওয়া হয়নি, তাই মন খারাপ লাগছে। বাবা আর মায়ের কথা মনে পড়ছে খুব৷ এক্সাম এর আগে তো এখনো চার দিন আছে। লাস্ট এক্সাম টা না হয় আমি বাড়ি থেকেই দিবো ফুপ্পি, একটার জন্য আর সমস্যা হবে না।”

রুনিয়া কিছুক্ষন ভালো ভাবে আপাদমস্তক দেখলেন রুমাইশা কে। ওনার কাছে মনে হলো কিছু ঘাপলা আছে৷ সাফওয়ান সেদিন বলেছিলো যে রুমাইশা হয়তো কিছু জেনেছে, সত্যিই কি জেনেছে? তাই জন্যই বাড়ি চলে যেতে চাইছে! মনে মনে ভাবলো রুনিয়া৷
তারপর বলল, ‘ঠিক আছে, আর তো আসতে চাচ্ছিস না, তাহলে আজকের দিন টা থেকে যা, কাল সকালে বেলা যাস৷ তোর ফুপ্পা কাল রাতে রাজহাঁসের মাংস কিনে এনেছে, তুই পছন্দ করিস তাই। খেয়ে কাল সকালে চলে যাস।”
রুমাইশা একবার বলতে চাইলো বিকেলে চলে যাওয়ার কথা, কিন্তু রুনিয়ার মুখের ওপর কিভাবে বলবে ভেবে পেলো না। অগত্যা নিজের রুমে চলে গেলো৷

সকালের খাবার খাওয়ার পর রুনিয়া শাফিন কে রান্নাঘরে ডেকে নিয়ে গেলেন৷ জিজ্ঞেস করলেন রুমাইশার ব্যাপারে। ওর এরকম অবস্থা কেন, বাড়ি চলে যেতে চাওয়ার পেছনে কোনো কারণ আছে কিনা জানতে চাইলেন।
শাফিন কালকে রাতে সাফওয়ানের ধমকাধমকির কথা বলে দিলো রুনিয়াকে৷ আর এটাও বলল রাতে সাফওয়ান প্রচুর রেগে ছিলো, তাই রুমাইশা কে ধমকেছে আর গলা ধরে ধাক্কাও দিয়েছে।
মনে মনে আস্বস্ত হলেন রুনিয়া, যে রুমাইশা জেনে যায়নি কিছু। কিন্তু সাফওয়ানের প্রতি রুষ্ট হলেন খুব। রুমাইশা কে গলা ধাক্কা দিয়েছে! ব্যাপার টা মানতেই পারলেন না তিনি। আজ রাতেই সাফওয়নের সাথে এই ব্যাপারে কথা বলবেন তিনি।
“”
সারাটা দিন রুমাইশার খুবখারাপ কাটলো৷ কোনোকিছুতেই মন বসাতে পারলো না, পড়াটাও হলো না তেমন৷ বইতে চোখ দিয়ে রাখছে ঠিকই, কিন্তু মন অন্যদিকে।
শেষ বিকেলের দিকে শাফিন এলো রুমাইশার রুমে। এসে দেখলো রুমাইশা টেবিলে কনুই ঠেকিয়ে দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে চেয়ারে বসে আছে। শাফিন ধীর গতিতে এসে বিছানায় বসল।
— রুমি আপু!
ডাকলো শাফিন।
রুমাইশা মাথা তুলে তাকালো শাফিনের দিকে৷ দুই হাত দিয়ে চোখ ডলে, আড়মোড়া ভেঙে চেয়ার সামান্য ঘুরিয়ে নিলো শাফিনের দিকে।
— হ্যা বল। কোনো দরকার? মুখভঙ্গি স্বাভাবিক রেখে জিজ্ঞেস করলো রুমাইশা।
— কালকের জন্য তোমার মন খারাপ আপু? মন খারাপ করো না তুমি, আমাকেও তো বকেছে ভাইয়া। কিন্তু আমি তো ওসব মনেও রাখিনি। জানোই তো ভাইয়া এখন আর আগের মতো নেই, কেমন যেন হয়ে গেছে। ”
তারপর কিছুক্ষন বিরতি দিয়ে বলল, ‘ ভাইয়া সারাক্ষণ একা একা থাকে, যার জন্য ভাইয়ার মেজাজ সবসময় তুঙ্গে থাকে। কিছু হলেই ছ্যাত করে উঠে। ভাইয়ার একটা বিয়ে দেওয়া দরকার, কি বলো? ”
শাফিনের কথায় রুমাইশার ঠোঁটের কোণে কিঞ্চিৎ হাসি দেখা গেলো৷ রুমাইশা কে হাসতে দেখে শাফিন আবার ও বলল, ‘মন খারাপ করো না আপু! আর মা বলল তুমি নাকি চলে যাবা! কত প্লান করেছিলাম যে ঘুরতে যাবো একসাথে তোমার এক্সাম শেষ হয়ে গেলে! অথচ তুমি! আমার সমস্ত প্লেন পানি ঢেলে বলছো চলে যাবা! এইডা কিছু হলো?”
মুখ গোমড়া করে বলল শাফিন।
রুমাইশা নিঃশব্দে হাসলো, তারপর বলল, ‘এমন ভাবে বলছিস যেন আমি লন্ডন যাচ্ছি! আর কখনো ফিরবো না! ক্লাস শুরু হলে তখন তো রোজ রাজ আসবো৷ তখন না হয় একদিন ঘুরে আসবো। একদিন কেন, দৈনিক দৈনিক ঘুরবো, বুঝছোস?”
শাফিনউপর নিচে মাথা নাড়িয়ে বুঝালো যে সে বুঝেছে৷ তারপর উঠে দাড়াতে দাড়াতে বলল, ‘চলো এখন, নিচে চলো, মা কি নাস্তা তৈরি করছে চেক করে আসি। এই অসময়ে পড়লে তোমার স্মৃতিশক্তি কমে যাবে৷ তখন আর পরিক্ষায় পাশ করতে পারবা না। ফেল মেরে বসে থাকবা। আর মামা তোমারে রিকশাওয়ালার সাথে বিয়ে দিয়ে দেবে৷”
রিকশাওয়ালার সাথে বিয়ের কথা শুনে শাফিনের মাথায় একটা চাটি মারলো রুমাইশা। তারপর মুখে হাসি ফুটিয়ে শাফিনের হাত ধরে কিচেনে রুনিয়ার কাছে গেলো দুজনে৷
“”
রাতের বেলা সাফওয়ান কে খাবার দিতে গেলেন রুনিয়া। সাফওয়ান রুমের বাইরে টি টেবিলের পাশে একটা পাটি বিছিয়ে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলো। কারো পায়ের আওয়াজ পেয়েই তড়িৎ গতিতে পাশে রাখা মাস্ক আর গগলস পরে নিলো। তারপর আবার নিজের কাজে মন দিলো।
রুনিয়া এসে খাবারের ট্রে টা রাখলেন টি টেবিলের ওপর। তারপর সাফওয়ানের পাশে বসলেন৷
রুনিয়া কে পাশে বসতে দেখে সাফওয়ান জিজ্ঞেস করলো, ‘কিছু বলবে মা?”
সাফওয়ানের কণ্ঠস্বর শুনে রুনিয়া বুঝলেন সাফওয়ানের মেজাজ খুব একটা ভালো নেই। কিন্তু তিনি দমে গেলেন না৷
কিছুক্ষণ নিরব থেকে নরম সুরে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ শাফিন বলল, তুই নাকি রুমি কে গলা ধাক্কা দিয়েছিস?”
সাফওয়ান নিজের কাজ অব্যাহত রেখেই বলল, ‘ হ্যা দিয়েছি। কেন দিয়েছি সেটা জিজ্ঞেস করো না। গলা ধাক্কা দেওয়ার মতো কাজ করেছে তাই গলা ধাক্কা খেয়েছে৷”
রুনিয়া ফোস করে নিঃশ্বাস ছাড়লেন। তারপর সাফওয়ানকে বোঝানোর জন্য বললেন, ‘এত বড়ো একটা মেয়ের গায়ে হাত তুললি, সেটাও আবার গলা ধাক্কা! শামসুল যদি জানতে পারে যে ওর মেয়েকে আমরা এখানে এনে গলা ধাক্কা খাওয়াচ্ছি তাহলে সেটা কেমন হবে? ভালো হবে?”
সাফওয়ান এবার ল্যাপটপ টা কোলের ওপর থেকে নামিয়ে রেখে রুনিয়ার দিকে ঘুরে বসলো। তারপর বলল, ‘ওর যেটা প্রাপ্য ও সেটাই পেয়েছে মা, আর তা ছাড়া আমি তো শুধু একা ওকে বকিনি, শাফিনকেও বকেছি, কিন্তু দোষ টা যেহেতু ওর বেশি তাই শাস্তি ও পেয়েছে বেশি৷ যে কাজ করতে বারন করা হবে সেই কাজ করলে শাস্তি তো পেতেই হবে! তুমি আর এসব নিয়ে চিন্তা করো না। আর রিমু ও বাড়িতে কিছু বলবে না, তুমি নিশ্চিত থাকো৷”
কথা শেষ করে আবার ও ঘুরে ল্যাপটপ টা কোলে নিলো সাফওয়ান। রুনিয়া কিছুক্ষন ওখানে বসার পর উঠে দোতলায় রুমাইশার রুমের দিকে গেলেন।

নিজের রুমে বসে রুমাইশা গতকাল জঙ্গলে কুড়িয়ে পাওয়া বস্তুটা হাতে নিয়ে উল্টিয়ে পালটিয়ে দেখছিলো। জিনিস টা সাফওয়ানের৷ নোটস আনতে যেদিন সাফওয়ানের সাথে কলেজে গেছিলো সেদিন এইরকমই দেখতে একটা বস্তু দেখে ছিলো সাফওয়ানের কাছে। কিন্তু কুড়িয়ে পাওয়া জিনিস টা সাফওয়ানের কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ থাকলেও গতরাতের ঘটনার পর রুমাইশা পুরোপুরি নিশ্চিত যে এটা সাফওয়ানেরই৷
এমন সময় রুনিয়া ঢুকলেন রুমাইশার ঘরে৷ আচমকা কাউকে ভেতরে আসতে দেখে দ্রুততার সাথে হাতের বস্তু টাকে নিজের বুকের মাঝে অন্তর্বাসের ভেতর রেখে দিলো রুমাইশা।
রুনিয়া এসে রুমাইশার সামনে চেয়ার টেনে বসলেন৷ এই সময়ে রুনিয়াকে নিজের রুমে দেখে রুমাইশা একটু অবাকই হলো, সংযত হয়ে বসতে বসতে বলল, কি ব্যাপার ফুপ্পি, তুমি এইসময়ে আসলে যে? কিছু বলবে?”
রুনিয়া রুমাইশার হাত টা নিজের হাতের মধ্যে নিতে বললেন, ‘রুমি, তোকে আমি নিজের মেয়ের মতো করে দেখেছি সবসময়। শাফিন, সাফওয়ানের মতো করে তোকেও যত্ন করেছি। তুই কাল চলে যাবি, আর কবে আমার বাড়িতে আসবি জানিনা!”
তারপর একটু চুপ থেকে বললেন, শাফিন আমাকে বলেছে সব, সাফওয়ান তোর সাথে কিরকম ব্যাবহার করেছে কাল সেই ব্যাপারে! আমি সাফওয়ানকে বলে এসেছি যে এইরকম কাজ যেন ও আর কখনো না করে। জানিসই তো ও একটু কেমন যেন হয়ে গেছে৷ তোর বাবা আমার ওপর বিশ্বাস করে তোকে এখানে রেখে গিয়েছে, এখন যদি শোনে সাফওয়ান তোর সাথে এমন ব্যাবহার করেছে তাহলে আমার আর শাসুলের সামনে দাড়ানোর মতো মুখ থাকবে না!
রুনিয়ার চোখে নোনা পানি জমতে শুরু করলো। নিজের দুইটা হাত দিয়ে রুমাইশার হাত টা মুঠি করে ধরে অনুরোধের সুরে বললেন, তোর কাছে অনুরোধ, শামসুল কে এসব ব্যাপারে যেন কিছু বলিস না। তাহলে ও আর তোকে কখনো আমার কাছে পাঠাবে না।
রুনিয়ার চোখ থেকে দুফোঁটা পানি থুতনি গড়িয়ে নিচে পড়লো।
রুনিয়া কে কাদতে দেখে হকচকিয়ে গেলো রুমাইশা৷ তাড়াতাড়ি নিজের অন্য হাতটা রুনিয়ার হাতের ওপর রেখে অসহায় হয়ে বলল, ‘একি ফুপ্পি, তুমি কাদছো কেন? আমি তো ওসব মনেই রাখিনি! আর দোষ টা তো আমারই ছিলো, তাই ভাইয়া বকেছে৷ ভাইয়া তো শুধু শুধু বকেনি! আর এসব কথা আমি বাড়িতে বলবই বা কেন! এসব তো সামান্য বিষয়, এসব ছোট খাটো ঝামেলা হয়েই থাকে! তুমি কেদোনা ফুপ্পি!”
রুনিয়ার কান্না তবুও থামছে না দেখে রুমাইশা অভিমানের সুরে বলল, ‘তুমি এরকম করলে কিন্তু আমিও এইবার কান্না শুরু করবো, মোটেই কেদো না তুমি!”
হাত দিয়ে রুনিয়ার চোখ থেকে গড়িয়ে পিড়া পানি মুছে দিলো রুমাইশা।
‘একদম কাদবেনা, কিছুই হয়নি! এসব ছোট খাটো বিষয় নিয়ে পড়ে থাকলে হয় বলো?”
নিজের মেয়ের মতো করে রুনিয়াকে বোঝাতে লাগলো রুমাইশা।
ততক্ষণে শাফিন ও চলে এসেছে ওর রুম থেকে, রুমাইশার রুমে রুনিয়ার কণ্ঠস্বর শুনে৷
শাফিন মা কে কাদতে দেখে রুনিয়ার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। রুমাইশা রুনিয়ার আড়ালে শাফিন কে চোখ গরম দিয়ে বুঝালো, সব তোর জন্য হয়েছে।
শাফিন এসে রুমাইশার পাশে বসে বলল, ‘কি হয়েছে মা, তুমি এরকম করে কাদছো কেন?”
উত্তরের অপেক্ষায় না থেকে রুমাইশা কে জিজ্ঞেস করলো আবার। রুমাইশা ওকে বলল কি কারণে রুনিয়া কাদছেন!
শাফিন রুনিয়ার বাহুতে স্পর্শ করে বলল, ‘আরে মা, তুমি রুমি আপুকে চিনলে না! আপু কি এমন মেয়ে যে গিয়ে মামা কে বলে দেবে সাফওয়ান ভাইয়া ওকে ধাক্কা দিয়েছে! তুমি চিন্তা করো না। আপু কিছুই বলবে না কাউকে।”
তারপর বলে কয়ে, বুঝিয়ে সুঝিয়ে রুনিয়া কে ঘুমাতে পাঠিয়ে দিলো রুমাইশা আর শাফিন। রুনিয়া রুমে যাওয়ার পর রুমাইশার দিকে তাকিয়ে বিজয়ীর হাসি দিলো শাফিন, তারপর নিজের রুমে চলে গেলো। রুমাইশা নিজেও রুমে এসে হাফ ছেড়ে বাচলো।
কিন্তু সেই স্বস্তির নিঃশ্বাস বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না…….

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।