–রাগে মনে হচ্ছে এ দুনিয়ার সব কিছু ভেঙে ফেলি আমি।মনে চাচ্ছে ওই বিশ্রি জিলেপির প্যাচের মতো মনের মানুষ কে মেরে আলমারি তে ঢুকিয়ে রাখি,না হলে বাথররুমে বন্ধ করে রাখি।কেনো বর বরের মতো হবে,রাত হলে বউ এর সাথে রোমান্স করবে,তিন বেলা বউকে খাইয়ে দিবে আরো অনেক কিছুই করবে।তা না বর হয়েছে গিগিটির মতো।আচ্ছা উনি কি কখনো সিনেমা,বা রোমান্টিক কিছুই পড়েন নি।তা পড়বেন কেনো পড়লে যে সময় নষ্ট হবে উনার।আমরা পড়ি, তোমার নামে সন্ধ্যা নামে আর উনি পড়েন কিসব ইংলিশ বই।এইজন্য ইংরেজ দের মতো শাসক হচ্ছেন উনি।সাত দিন আগে আমার জন্মদিন ছিলো সে রাতে কি ভয়ানক সারপ্রাইজ টায় না উনি দিলেন।আচ্ছা উনি কি ভুলে গিয়েছেন আমাকে কি কি রোমান্টিক কথা বলেছিলেন।আমার তো মনে হয় ভূতে চেপেছিলো বলে অমন করেছিলো।না হলে ইতিমধ্য সব ভুলে যায় কিভাবে হাউ অদ্ভুত। কি ভয়ংকর ইংলিশ টায় না বললাম আমি।আমি সেদিন থেকে বার বার উনার কাছে জানতে চেয়েছি অথচ উনি বার বার আমাকে ইগনোর করছেন।সেদিন রাতের কোনো টপিক্সে আর যেতেই চাইছেন না উনি।সেদিন রাতে ঘুমোনোর পরে ভেবেছিলাম প্রতিটা দিন এমন রোমান্টিক ই হবে।ঘুম থেকে দেখলাম ভীষণ মুড নিয়ে উঠে আগের রুপে ফিরে গিয়েছেন।কড়া ভাষায় বলে দিয়েছেন আমার ফাইনাল ইয়ারের এক্সাম দশ দিন বাড়িতে থাকবো এক মিনিট ও কানের কাছে চ্যা চ্যা করবি না।আমাকে মনোযোগী হতে পড়ায়।সেই থেকে বই ই পড়ছেন শুধু।
উনি চেয়ার টেবিলে মনোযোগ সহকারে বই পড়ছেন।আর আমি কিভাবে উনাকে বশ করা যায় বসে বসে সেটাই ভাবছি।না হলে এই মানুষ জীবনে সুধরাবে না।এমন বশ করতে হবে সারাদিন আমার পিছনে ঘুরবে আর আমি পাত্তা দিবো না।আহা!কি শান্তি ভেবেই।কিন্ত কি উপায়ে, বিহান ভাই কে বশ করবো।বিহান ভাই তো সব কিছু গুগলে সার্চ করেন।দেখি আমিও করে দেখি।
–দ্রুত ফোন হাতে নিয়ে গুগল এ সার্চ করলাম কিভাবে মামাতো ভাই কে বশ করতে হয়। মনে মনে ভাবছি এইবার কই যাইবা চান্দু তোমারে এমন বশিকরণ করমু সারাজীবন শুধু দিয়া দিয়া করবা।আহা কি শান্তি ভেবে নাগিন ডান্স করছি মনে মনে।বিহান ভাই এর দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছি আর হাসছি আমি।
আমার এই সকল আনন্দের পিন্ডি চটকিয়ে আমার হাত থেকে মোবাইল টা কেড়ে নিলেন যমরাজ দ্যা আধ্যাতিকবিদ বিহান ভাই।
আম দুঃখি দুঃখি মনে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।উনি ফোনটা নিলেন কেনো?এখনি তো দেখে ফেলবেন কি সার্চ করেছি আমি।
চোখ মুখ চুপসে উনার দিকে তাকালাম আমি।
ভ্রু কুচকে প্যান্টের বাম পকেটে হাত গুজে এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন উনি।পরণে এ্যাশ কালারের ট্রাউজার, গায়ে সাদা কলার দেওয়া গেঞ্জি।উনার সম্পূর্ণ দৃষ্টি আমার দিকে।উনার কি বেগুনে লস হয়েছে বুঝলাম না।মুখশ্রী এমন ভাব করে দাঁড়িয়ে আছে উনার সুন্দর চেহারার সব মাধুর্য এই গোমড়া মুখের আড়ালে ঢাকা পড়েছে।আমার দিক থেকে চোখ সরিয়ে এবার উনার মনোযোগ ফোনের দিকে দিলেন।ফোনের দিক থেকে চোখ সরিয়ে এবার আমার দিকে তাকিয়ে দুই ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছেন।
আমি একটা শুকনো কাশি দিয়ে বললাম কি ব্যাপার কি আমার ফোন নিয়েছেন কেনো গুন্ডাদের মতো।দিন আমার দিন বলছি।অন্যর জিনিস এইভাবে না বলে নেওয়া উচিত না।তাছাড়া এটা আমার ব্যাক্তিগত ফোন।
উনি আমার দিকে ঝুঁকে এসে বললেন আজকাল তোদের মতো অসভ্য মহিলাদের জন্য আমার মতো নিরীহ ছেলেগুলো সেইফ না বুঝছিস।আমাদের মতো ইয়াং জেনারেশন ভুগছে ইজ্জত হারানোর ভয়ে।
–আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,,ঠিক বুঝলাম না বিহান ভাই আপনি ঠিক বলতে চাইছেন।
–উনি একটা জোরে শ্বাস টেনে বললেন, বুঝাতে চাইছি যে তুই কি পুরণো খাঁন দের মতোই অত্যাচারী হচ্ছিস।না হওয়ার কিছুই নেই এগুলো তোর বংশে আছেই।
–দেখুন বংশ না টেনে ক্লিয়ার করে বলুন কি বলছেন।
–তুই গুগলে এটা কি সার্চ করেছিস।
–কি সার্চ করেছি।
কিভাবে রুমের মাঝে ফেলে এই নিরীহ ছেলেটাকে অত্যাচার করা যায়।
বলেই উনি আমার ফোন টা আমার দিকে ধরলেন।সেখানে লেখা কিভাবে মামাতো ভাইকে করতে হয়।নাউজুবিল্লাহ ছিঃকি বাজে বাজে জিনিস লেখা।আমার মন চাইছে এখন লজ্জায় গঙ্গায় ডুব দিয়ে মরে যায়।আমি কি সার্চ দিলাম আর এখানে এখন কি লেখা।বশ লেখা টুকু কোথায় গেলো।কিবোর্ড এ কি কোনো সমস্যা হওয়াতে বশ লেখাটুকু আসে নি।
বিহান ভাই আমার দিকে আবার ও ঝুঁকে বললেন, ছিঃদিয়া তোকে ভাল ভাবতাম।এক্কেবারেই নিরীহ পিচ্চি ভাবতাম।কিন্তু এই ছিলো তোর মনে।তোর থেকে কয়েকশ হাত দূরে থাকতে হবে।
এখন তো মন চাচ্ছে নিজের গলা নিজে টিপে ধরি।এই মানুষ টা এই নিয়ে আমাকে আরো কথা শুনাবেন তার তো ঠিক ই নেই।ফোন টা আমার হাতে দিয়ে বললেন কি সাংঘাতিক মহিলা তুই তাও আবার বিবাহিত মহিলা।
–দেখুন আপনি যা ভাবছেন তা কিন্তু নয়।আমি অন্যকিছু সার্চ করছিলাম।
–ওহ আচ্ছা তাই!তাহলে কি সার্চ করা হচ্ছিলো।
–কিভাবে মামাতো ভাই কে বশ করতে হয়।
–কিভাবে মামাতো বর কে বশ করতে হয়।ওএমজি কি মারাত্মক কথা।তোর বর কয়টা দিয়া।
–একদম ই বাজে কথা বলবেন না।মামাতো ভাই বলেছি বর কখন বললাম।
–তুই তো বর ই বললি দিয়া।তাই মামাতো বর।
–কানের ডাক্তার দেখান কুইক বিহান ভাই।।।
–বাহ শিক্ষিত মহিলা কয়েকটা কমন ইংলিশ শিখে সারাদিন সেগুলোই বলতে থাকিস।
– কমন ইংলিশ মানে।আমি ইংলিশ এ অনেক ভাল স্টুডেন্ট।
–আমি তো তোর মুখে,বাট,হোয়াট,হুয়াই এগুলা ছাড়া আর কিছুই শুনি ন।শুনেছি তোর দাদা প্রায় বিয়ে অনুষ্টানে গিয়ে এগুলা ইংরেজি ই বলতো।
–আমার দাদাকে নিয়ে কিছু বললে এখন কিন্তু ভুমিকম্পন শুরু হবে।দিন আমার ফোন দিন বলছি।
–তোর ফোন কিভাবে?..
–তাহলে কার?
–আমার বউ এর।
–আপনার বউ কে?
–আমার সাথে এ ঘরে যে ঘুমোয় সে।
–আপনার বউ বলছেন?..
–অস্বীকার করেছি কখনো।
–ওই যে বলেন কে যানি আছে শ্বশুরের মেয়ে আছে
–তোর বাবার মেয়ে যে বিয়ে করবে সে তোর বাবার কি হবে।
–এত না ঘুরিয়ে ক্লিয়ার বলেন।
–আমি ক্লিয়ার ই বলেছি এখন তুই না বুঝলে আমি আর কি করতাম।
–তাহলে বলুন ওই রাতে যা বলেছিলেন তার মানে কি?..আপনি কি আমাকেই।
–উনি খানিক ট রেগে গিয়ে বললেন,তোর স্যার ফোন দিয়েছিলো আজ সাপ্তাহিক পরীক্ষায় নাকি ইয়া বড় গোল্লা পেয়েছিস।
–আপনি কথা ঘোরাচ্ছেন কেনো?
–কথা ঘোরাচ্ছি না এত্ত বড় গোল্লা পাওয়ার কারণ কি?স্যার কিছু বলে নি।
–কি বলবে স্যার কে বলেছি আমার স্বামি আমাকে প্রচুর বিরক্ত করে তাই বই পড়তে পারি।
–উনি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,মান সম্মান সব শেষ করে এসছিস।।
–ক্যানো?..
বিরক্ত মানে স্যার কি ভাবছেন।রিয়েলি –ষ্টুপিড একটা।
(তাদের দুষ্টুমি নিয়ে লিখতে মন চাইলো হঠাত)