আমার মতো আইলসার কাছে দিয়েছে কাপড় আয়রণ করতে।আমি এমনি তে ভাল একটা পারি না তার উপর কাপড় কিছু হলেই রক্ষে নেই।নিজে তাই ঘুচিমুচি কাপড় পরে ঘুরে বেড়ায়। আমার ড্রেস সব শুভ ভাইয়া আয়রন করে দেয়।কাপড় আয়রন এর ভয়ে ড্রেস ধুয়ে পানি চিপে না ফেলে পানি অবস্থায় নেড়ে দেই যাতে কাপর ঘুচিমুচি না হয়।এ নিয়ে আম্মু অনেক বার গালিগালাজ করেছে আমাকে।আম্মু আমাকে বলে এত বড় মেয়ে কাপড় ও ঠিক ভাবে শুকাতে দিতে পারিস না।পোশাক কোকড়ানো দেখলে আম্মু বকাঝকা দিয়ে নিজেই আয়রণ করে দেয়।এটা নিয়ে আম্মু কম কথা শুনায় নি।আম্মু বলে, বিহানের পা ধোয়া পানি খেতে পারিস না।এটা আম্মুর একটা জাতীয় ডায়লগ এ পরিণত হয়েছে।ছেলে মানুষ নিজের ড্রেস নিজে পরিষ্কার করে, বিহানের কাপড়ের ভাজ ভাঙে না।আর কত ব্লা ব্লা ব্লা তার ভাতিজা ইজ গ্রেট ভাতিজা।
বিহান ভাই এর পোশাক আর আমি বসে আছি উনার বিছানায়।বিহান ভাই মাল্টিপ্লাগ এনে দিলেন।এখন কিভাবে শুরু করবো সেটাই ভাবছি।চার চার টা গেঞ্জি আয়রণ এর পরে ক্লান্ত হয়ে গেলাম আমি।বিহান ভাই উনার রুমে রাখা ডিভান এর উপর বসে বসে ফোন চাপছেন আর মাঝে মধ্য ভ্রু কুচকে তাকিয়ে দেখছেন আমি কি করছি।এই নিয়ে আটটা গেঞ্জি আয়রণ করলাম।কিন্তু আট টার মাঝে চার টা পুড়ে গিয়েছে।খুব বেশী পোড়ে নি একটু পুড়ে গিয়েছে বিহান ভাই কে না বলে সুন্দর ভাবে ভাজ করে রেখে দিলাম যাতে উনি বুঝতে না পারেন।এর পরের টা আয়রণ করতে গিয়ে সেটা আরো বিদিগিস্হা ভাবে পুড়ে গেলো।চোখ বড় বড় করে টি-শার্ট এর দিকে তাকিয়ে রইলাম হঠাত খেয়াল করি উসখো খুশকো চুল নিয়ে থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট এর পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছেন উনি।উনার ভাব লক্ষণ কি এই আয়রণ দিয়ে কি আমাকে আয়রণ করে দিবেন নাকি।উনাকে ওইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললাম দেখুন,আমার কোনো দোষ না আমাকে দিয়ে জোর করিয়ে কাজ করালে তো নষ্ট হবেই তাইনা।এ কাজ আমি পারি নাকি।
বিহান ভাই কপাল এর চামড়া টান টান করে বললেন,আচ্ছা এ কাজ তাহলে পারিস না।আমাকে অত্যাচার করতে পারছিস না বলে আমার টি-শার্ট এর উপর অত্যাচার করছিস।আচ্ছা দিয়া তুই কি তোর বংশের মতো হয়েছিস নাকি।তোর কাকা তোহার বাবা এক দোকানদারের সাথে ঝামেলা হইছে দোকানদার কে না পেয়ে তার কর্মচারীকে মেরেছে।কথায় আছে না মানুষ তার জাতের মতো হয়।তোর বাপ কাকারা যা করে বেড়ায় তুই তো তাই ই করছিস।আমাকে কিছু করতে না পেরে রিতীমত আমার গেঞ্জি কে অত্যাচার তাইনা।
“আমিও উদিগ্ন হয়ে বলে উঠলাম,আপনি জানেন ওই দোকানদার কি করেছে।”
“বিহান ভাই আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ভেরি সরি আমি জানতে চাইছি না তোদের পারিবারিক কাহিনী।তোদের যে কাহিনী শুরু হলে আর শেষ হবে না।দিয়া তুই চট করে যা তো ফুপ্পি যে নাড়ু পাঠিয়েছে ওইটা রান্নাঘর থেকে নিয়ে যায়।”
কি রাগ হয় নিজের ইচ্ছামতো খানিক টা বলে জাত গুষ্টির অপমান করে দিলেন আর আমি বলতে গেলেই থামিয়ে দেন।আমিও খানিক টা উত্তেজিত হয়ে বললাম,”আপনাকে শুনতেই হবে।”
“বিহান ভাই বিরক্তি ভাব নিয়ে বললেন যেতে বলেছি আমি।”
“রান্নাঘর থেকে নাড়ুর বাটি টা নিয়ে উনার দিকে এগিয়ে দিলাম।”
“বিহান ভাই এমন ভাবে তাকালেন উনার কপালে কয়েক টা ভাজ পড়ে গেলো।উনার এই বিশ্রি তাকানো দেখে বুঝলাম না কাহিনী কি?মিনিট খানিক তাকিয়ে থেকে বললেন,এভাবে দিলে কি বাটি সহ গিলে ফেলবো।আমি কি তোর মতো খান বংশের পেটুক নাকি।তোরা তো খেতে খেতে নড়াইল জেলার অর্ধেক ই খেয়ে ফেললি।ভাজ্ঞিস মানুষ খাওয়ার নিয়ম নেই তাহলে এ জেলায় একটা মানুষ ও জীবীত থাকতো না তোরা ছাড়া।সব তোদের পেটে যেতো”
“রাগে ফুঁশতে ফুঁশতে বললাম,সমস্যা কি আপনার।আর একবার যদি বাজে কথা বলেন আমি কিন্তু এক্ষুণি চলে যাবো এখান থেকে।”
“সাহস থাকলে যা পা কেটে রেখে দিবো।টিফিন বাটির মুখ খুলে দে না হলে খেতে পারছি না।উফফ গড শ্বশুর এর মেয়ে দিন দিন কি তার জামাই এর আদর সোহাগ এর অভাবে খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে।তার এই রাগি জামাই কেই উলটা রাগ দেখায়।ভাবা যায় এগুলা।অবশ্য হওয়াটা স্বাভাবিক কারণ সে সানি লিওনির মস্ত বড় ফ্যান।এমন রোমান্টক গান দেখলে এমন তো হবেই।আই ফিল ইওর পেইন দিয়া।”
“আপনি এই কথা গুলো কাকে বলছেন বিহান ভাই।”
“ওই যে প্রেয়সী, প্রেয়সী কে বলছি বলেই একটা নাড়ু মুখে দিয়ে খেতে খেতে বললেন আহা ফুপ্পির হাতের নাড়ু কি স্বাদ।”
“মনে মনে বললাম, কিভাবে কথাটা ঘুরিয়ে দিলেন বিহান ভাই।ইনডিরেক্ট আমাকে শ্বশুরের মেয়ে বলেন আমি কি সেটা বুঝি না শ্বশুরের ছেলে।”
“বিহান ভাই কে বললাম এবার আমি আসি বিহান ভাই দাঁতে দাঁত চেপে বললাম।”
“বিহান ভাই বললেন,আম্মু বাসায় নেই
দিয়া একটা দুধ চা বানিয়ে নিয়ে আয় তো।”
“উনার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে রান্নাঘরে গেলাম দশ মিনিটের মাঝে দুধ চা বানিয়ে এনে উনার সামনে ধরলাম।”
“বিহান ভাই চা একটু মুখে দিয়ে বললেন,
নাহ এটার টেস্ট ভালো হয় নি।তুই এক কাজ কর একটা লাল চা বানিয়ে নিয়ে আয়।”
“রাগে ফুঁশতে ফুঁশতে আবার ও গেলাম।আবার লাল চা বানিয়ে নিয়ে এলাম।”
“নাহ দিয়া এ টাইমে আমি চা খাই না।এক মিনিট আগে আমার চা খাওয়ার টাইম শেষ হয়ে গিয়েছে।যা একটা কোল্ড কফি নিয়ে আয় তো।আমি আবার সব খাদ্য খাবার মেইন টেইন করে চলি তো।”
“ধৈর্য ধরে আবার ও গেলাম কোল্ড কফি বানিয়ে নিয়ে এলাম আর উনার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম এই নিন আপনার কফি।”
“তুই কি গাধী আমি কোল্ড কফি খাই এ টাইমে। দ্রুত গিয়ে ব্লাক কফি বানিয়ে নিয়ে আয়।কিরে আবার রেগে যাচ্ছিস নাতো।শোন স্বামির সেবা যত্ন করা ফরজ। কর কর জান্নাত পাবি।”
“আপনি কি আমার স্বামি ?”
“আমার মতো কেউ ই তো হবে নাকি।একই কথা।রেগে যাস না কফি টা নিয়ে আয়।”
“আবার গেলাম ব্লাক কফি বানিয়ে নিয়ে উনার হাতে এগিয়ে দিলাম।”
“কফি টা খানিক সময় রেখে দিয়ে বলেন এটা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে।খাওয়া যাচ্ছে না দিয়া।”
“প্রচন্ড রেগে গিয়ে উনার কলার চেপে ধরে মুখের মধ্য কফি ঢেলে দিলাম। উনার মুখ গড়িয়ে কফিতে উনার গেঞ্জি ভিজে গেলো।উনার কলার চেপে ধরাতে উনি আচমকা পড়ে গেলেন বেডের উপর সেই সাথে আমিও গিয়ে উনার বুকের উপর পড়লাম।রাগে চোখ মুখ ঝা ঝা করছে আমার।উঠার চেষ্টা করছি কিন্তু উনি কোমর চেপে ধরে রেখেছেন।কি অসভ্য মানুষ ভাবা যায় ইচ্ছা করে কোমর চেপে ধরে রেখেছেন।উনার হাতে চিমটি কেটে উঠে চলে গেলাম।আর যেতে যেতে বললাম আমাকে কি কাজের মহিলা পেয়েছেন।বিহান ভাই বললেন,ঘরের বউ বললেও তো মানবি না। ”
বাড়িতে রাগে রাগে এলাম আমাকে আধাঘন্টা ধরে একবার রান্নাঘর একবার উনার ঘর করিয়েছেন।এটা একমাত্র উনার পক্ষেই সম্ভব।পায়ে ব্যাথা হয়ে গিয়েছে আমার।আমাকে যেনো উনার বাসার কাজের মহিলা পেয়েছে।আর জীবনেও উনাদের বাড়ি যাবো না।উনি ঢাকা না গেলে আর বাড়ি থেকে বেরোবো না।
বাড়িতে এসে ফ্যানের নিচে টান টান হয়ে সুয়ে রইলাম।রাগে কি অস্হির লাগছে আমার।এমন সময় রিয়া এলো আমার রুমে।আমার মুড অফ দেখে রিয়া বললো কিরে বিহান ভাই কিছু বলেছে দিয়া।আমি রিয়ার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বললাম দয়া করে ওই রাক্ষস এর নাম বলিস না প্লিজ।রিয়া আমাকে বললো দিয়া একটা জিনিস ভাবছি কি জানিস বিহান ভাই এর প্রেমিকা কে হবে?উনি তার সাথে ঠিক কি বিহ্যাভ করবেন।উনি কি আদেও প্রেম করবেন কখনো।এত গুলো মেয়ের ক্রাশ বলে কথা।
আমি রিয়াকে বললাম,প্রেম তো বাড়ির কাছে আমি সব মেয়েদের কাছে গিয়ে পই পই করে বললো চিরকুমারী থাক বইন তোরা তবুও ওই বিশ্রি মানুষ এর সাথে কেউ রিলেশন এ যাস না।আনরোমান্টিক ঘাড় ত্যাড়া জঘন্য মানুষ একটা।
“রিয়া আবার বললো,আচ্ছা দিয়া যদি বিহান ভাই বাই এনি চান্স তোর বর হয় কি করবি।”
“এটা কক্ষনো সম্ভব নয়।সেদিন আমি কচু গাছে গলায় দড়ি দিবো।তার থেকে আলিপ যথেষ্ট ভালো আছে।”
“দিয়া আবার আলিপ এর নাম বলছিস আমি কিন্তু রেকর্ড করেছি।”
“তুই ফোন দে রিয়া।আজ তোর ফোন আমি কুচি কুচি করে ফেলবো।এটা বিহান ভাই শুনলে আবার কি থেকে কি হয়ে যাবে।”
রিয়া ফোন নিয়ে এক দৌড় দিলো।আমি ওর পেছনে ছুটবো তখন ই দেখি বিহান ভাই নিচে আয়রা কে কোলে নিয়ে রিয়ার আম্মুর সাথে কথা বলছে।উনাকে দেখেই ঘরের দরজা লক করলাম।আজ কিছুতেই আর দরজা খুলবো না।না মানে না।
“আম্মু এসে প্রচন্ড জোরে দরজা ধাক্কাধাক্কি শুরু করেছে।এই দিয়া এত সকালে দরজা লক ক্যানো?”
“আম্মু আমার ঘুম পাচ্ছে খুব।রাতে খাবো না আমি”।
“তোর না কয়েক দিন পরে পরীক্ষা রাত আট টা বাজে কিসের ঘুম।চড় মেরে গাল লাল করে দিবো।দরজা খোল এক্ষুণি।”
আম্মুর জোরাজুরিতে দরজা খুলতেই দেখি আম্মুর পিছনে দাঁড়িয়ে আছেন বিহান ভাই।গায়ে অফ হোয়াইট শার্ট পরা,শার্টের হাতা গোটানো,পরণে জিন্স মাসআল্লাহ দেখতে কিউট লাগছে।আম্মু বিহান ভাই কে ডেকে এনেছেন আমার লেখাপড়ার কি অবস্থা সেটার তদন্ত করানোর জন্য।মানুষ আর পেলো না আম্মু উনাকেই ডেকে এনেছে।উনাকে দেখে না পাচ্ছে হাসি না পাচ্ছে কাঁন্না।উনি কিছু বলার আগেই বলে উঠলাম বিহান ভাই চা, না কফি খাবেন আর হ্যাঁ গায়ের জামা খুলে দিন আয়রন করে দেই।কথার বলার সঙ্গেই অদ্ভুত কথা বলে উঠলেন উনি,তোর আমার বডি দেখতে ইচ্ছা করছে ছিঃদিয়া ছিঃ।
এই যে আবার শুরু হয়েছে উনার বাজে কথা।
এবার উনি বলে উঠলেন,
“দেখি কি লেখাপড়া করছিস।শুনলাম প্রচন্ড ফাঁকি মারছিস।এই নে শীট গুলা দেখ।তোর জন্য খুজে খুজে এনেছি।এখানে কিছু ম্যাথ আছে স্টার চিহ্ন দেওয়া ওগুলো কর।”
“ম্যাথ গুলা দেখে মাথা ঘুরতে লাগলো এত কঠিন ম্যাথ।এমনি তেই ম্যাথ ভাল লাগে না।”
“বিহান ভাই আমার পাশে চেয়ার টেনে বসে রইলেন।আমি ম্যাথ করতে গিয়ে পাগল হওয়ার উপক্রম।যাও বা পারতাম উনি থাকাতে সব সূত্র ভুলে গিয়েছি।খাতায় শুধু আঁকিবুকি করছি।”
“বিহান ভাই আমাকে ধমক দিয়ে বলেন,কি ব্যাপার কিছুই তো পারছিস না পরীক্ষায় তোর জন্য বিশাল একটা রসগোল্লা অপেক্ষা করছে।এমনি তে তোরা খাওয়া ছাড়া কিছু বুঝিস না বিশাল গোল্লা টা পরিবারের সবাই মিলে ভাগ যোগ করে খেয়ে নিস।”
এমন সময় কলম টেবিলের নিচে পরতেই দুজনে নিচু হয়ে কলম তুলতে গিয়েই শরীর পশম শিউরে উঠলো আমার।
বিহান ভাই এর ঠোঁটের সাথে ঠোঁট স্পর্শ লেগে গেলো আমার।এটা শুধু স্পর্শ ছিলো সেটা নয়।এটা ডিরেক্ট একটা চুমু ছিলো।উনি কি ইচ্ছাকৃত চুমু দিলেন আমায়।
Leave a comment