এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা | পর্ব – ৪৬

10 Min Read

মাথায় পেইন হয়েছে এমন একটা ভাব ধরে সুয়ে আছি কেননা বিহান ভাই আবার আগের রুপে অবতরণ করেছেন।এখন উনার মাঝে বর বর কোনো ভাব নেই।এখন মামাবাড়িতে যাওয়া মানেই রিস্ক বিহান ভাই সারাক্ষণ বই পড়াবেন না পারলে অনেক অপমান করবেন।এমন সময় আম্মু এসে আমার হাতে একটা ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বললো রাস্তায় অটো দাঁড়িয়ে আছে দ্রুত যা তোর মামি একস বার ফোন দিচ্ছে।কাল বিভোরের মামা বাড়ি যেতে হবে তোকেও সাথে নিয়ে যাবে।বিভোর ভাই এর মামা বাড়ি সেখানে তো যেতেই হবে।বিভোর ভাই এর আম্মু অনুরোধ করেছে না গেলে নয়।অটো নিয়ে মামাদের বাড়িতে প্রবেশ করতেই দেখি গেটের সামনে একদল ছেলেদের নিয়ে হেসে হেসে আড্ডা দিচ্ছেন বিহান ভাই।গাল ভরা শান্ত হাসি।আমি অটো থেকে নামতেই চোখে চোখ পড়ে গেলো উনার সাথে।কিছু না বলেই বিহান ভাই দের বাসায় প্রবেশ করলাম।মামি কে দেখি ঝিমুচ্ছে। বললাম এভাবে ঝিমোচ্ছো ক্যানো।মামি বললো এলাট্রল খেয়েছিলাম দিয়া এলার্জির জন্য তাতেই ঘুম হচ্ছে।মামকে বললাম আমার ও হাত পা খুব চুলকাচ্ছে একটা ওষুধ দাও তো।মামি ওষুধ দিলে দুইটা খেয়ে নিলাম।বিহান ভাই খানিক টা রাত না হলে বাসায় ফিরবেন না তাই উনি আসার আগেই ঘুমিয়ে যাবো।উনার হাত থেকে রক্ষা পেতেই ওষুধ খেয়ে নিলাম।
প্রচন্ড ঘুমে ঘুমনগরী তে গিয়ে ঘুমের রাজত্ব করছি আমি।আহা!কি আরামের সাথে পাতলা কম্বল মুড়ি দিয়ে ফ্যান আস্তে ছেড়ে ঘুমোচ্ছি।উপরে ফ্যান নিচে গায়ে সিঙ্গেল কম্বল এর মতো শান্তি অন্য কোনো কিছুতে নেই আমার কাছে।বিহান ভাই সন্ধ্যা রাতে পড়ার জন্য ডেকেছিলেন আমি বলেছিলাম মাঝ রাতে উঠে পড়বো তারপর ই ঘুম আবার।এই ঘুম প্রিয় আমিটার সব শান্তি কেয়ামতে পরিণত হয়ে গেলো,আমার কি শান্তিতে ঘুমোনোর কোনো অধিকার নেই।মধ্যরাতে রুমের বড় লাইট টা জ্বালিয়ে দেওয়ার কি খুব প্রয়োজন ছিলো।কানের কাছে এই অসভ্য এলার্ম ঘড়িটা কে রেখেছে।ক্যাচ ক্যাচ করেই যাচ্ছে ।দুই কানে হাত দিয়ে চেপে ধরে এটে সেঁটে ঘুমোনোর চেষ্টা করলাম।কেননা ভীষণ সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখছিলাম চাইছিলাম স্বপ্নের বাকিটা দেখতে।একবার ঘুম ভেঙে গেলে কি আর স্বপ্নের বাকি টুকু দেখা যায় কখনো। কানের মধ্য দিয়া দ্রুত ওঠ নামক বুলি এসেই যাচ্ছে।আমিও কম না চোখে বুজেই রইলাম।সাথে সাথে মাথায় একটা প্লান এসে গেলো যে একটু এক্টিং করবো আমি স্বপ্নের দেশে আছি সেই এক্টিং।বিহান ভাই আমার মুখের কাছে ঝুঁকে এসে আমায় ডাকাডাকি করছেন আমি উনার গলা জড়িয়ে ধরে একটু নেশা নেশা কন্ঠে বললাম,ঘুম না আসা রাতে তুমি আমার কল্পনাতে,জোসনা মাখা চাঁদে তুমি আমার বন্দনাতে।আই লাভ ইউ ইমু, মাই ইমরাণ হাশমি বেবি।চোখ হালকা খুলে তাকিয়ে দেখি উনার মেজাজ চরম পর্যায়ে।বিহান ভাই এর চোখ ক্রমশ রাগান্বিত হচ্ছে।দাঁতে দাঁত চেপে বললেন কি বললি আমি ইমরান হাশমি।তোর কি আমাকে ইমরাশ হাশমির মতো কিস খোর মনে হয়।আমাকে তাহলে তুই এইসব নজরে দেখিস। লাইজ সিরিয়াসলি আমি ইমরাশ হাশমি।উনার মুড দেখে আমি ভয় ও পাচ্ছি আবার এক্টিং ও চালিয়ে যাচ্ছি।গলা আরো খানিক টা জোরে জড়িয়ে ধরলাম,তুমি তো ইমরাশ হাশমির থেকে উপরে বাবু।বিহান ভাই আরো রেগে গিয়ে বললেন আমার গলা ছাড় তুই,এক্ষুণি ছাড় বলছি।এইভাবে গায়ের উপর পড়ছিস ক্যানো?ঘুমের ভান ধরে পড়েই রইলাম।বিহান ভাই বললেন,আমি ইমরান হাশমি তাইনা ওকে বুঝাচ্ছি আমি কি?মনে মনে ভাবলাম কিস টিস করবেন কিনা?বেড থেকে পাজা কোল করে তুললেন ভাবলাম রোমান্টিক কিছু হতে চলেছে কিন্তু নাহ।উনি আমাকে এই ঠান্ডায় ফ্লোরে নিয়ে সুইয়ে দিলেন।দেখলাম ওয়াশরুমে গেলেন উনি ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে কাল রাতে ভরে রাখা বালতির ঠান্ডা পানি গায়ের উপর ঢেলে দিলেন আর বললেন এইবার এক্টিং করলে এক থাপ্পড় এ দাঁত ফেলে দিবো।।ঠান্ডায় লাফ দিয়ে উঠলাম চিৎকার দিয়ে।ঠান্ডায় কাঁপছি, মানুষ এত জঘন্য কিভাবে হতে পারে।কি এমন পাপ করেছিলাম আমি উনার মতো একজন রাজাকার মামাতো ভাই কপালে জুটেছিলো।মামাতো ভাই তুই মামাতো ভাই এর মতো হবি তুই প্রয়োজনে ফুফাতো বোন কে পটাবি,তার সাথে রোমান্স করবি,সারাক্ষণ প্রেমের সংলাপ বলবি তা না করে তুই ক্যানো সারাদিন থাপ্পড় মেরে দাঁত ফেলে দিতে চাইবি।কোথায় বলবি এত বই পড়ে কি হবে ঠিক ই তো আমার ঘরের ছাই খুলতে হবে তা না করে বলিস লেখাপড়া শেষ না হলে এই বিয়ের কথা কাউকে বলবো না।কোন পাপে বিয়ে করেছিলাম উনাকে আমার কি মনে কিছুই চাই না।এই যে শিত প্রিয় রাতে কোথায় উনার পাশে ঘুবোবো তা না উনার কাছে গেলে ছিটকে খানিক টা দূরে গিয়ে বলেন কি সমস্যা এত গায়ের উপর পড়ছিস ক্যানো?উনার কি বর হওয়ার কোনো অধিকার আছে।দিয়া এই করলার সাথে বাকি জীবন কিভাবে কাটাবি।আবার আমাদের মাঝে একটু দূরত্ব এলেই উনি আশ্চর্যজনক ভাবে সারপ্রাইজ দিয়ে দেন।এই সাংঘাতিক, ভয়ংকর, বিশ্রি,বাজে মানুষ টাকে চেনা সহজ নয়।
আমাকে ঠান্ডায় কাঁপতে দেখে বললেন, কি ঘুম গিয়েছে নাকি আরেক বালতি দিবো।তাতেও ঘুম না গেলে নদীতে নিয়ে যাবো।শাপলার মতো ভিজিয়ে রাখবো তোকে।
কাঁপতে কাঁপতে বললাম,মানুষ ঘুম ভাঙানোর জন্য চোখে মুখে পানির ছেটা দেয় আর আপনি।
উনি বললেন,সেটা ঘুমন্ত মানুষের জন্য নট জাগ্রত মানুষের জন্য।সময় নষ্ট করা আমি একটুও পছন্দ করি না।তোর জন্য আমি ঘুমোই নি আজ।তোকে এক ঘন্টা ধরে ডাকাডাকি করছি আমি আর তুই ইচ্ছাকরে নাটক করছিস।
আমি কি আপনাকে ঘুমোতে নিষেধ করেছি।
উনি বললেন,তোর বুদ্ধি মতো চললে আমার বউ এর ফিউচার অন্ধকার।আমি জেগে না থাকলে তোকে উঠাতাম কিভাবে।এক্ষুণি চেঞ্জ করে নে।আমি তোর পড়া রেডি করছি।
ঘুম ঘুম চোখে ওয়াশ রুমের দরজা খুলে চেঞ্জ করে নিলাম।টেবিলের সাইডে পর পর দুইটা চেয়ার একটাতে বিহান ভাই বসে আছেন অপরটা যে আমার জন্য বরাদ্দ সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।উনার পাশের চেয়ার টেনে গিয়ে বসলাম।বিহান ভাই পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে হাইয়ার ম্যাথ এর দিকে তাকিয়ে আছেন।এই নতুন বইয়ের আমদানি কোথা থেকে করলেন।এতদিন যত প্রকার বই আছে তার সব করিয়েছেন সাথে রিভিশন ও করিয়েছেন।চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললাম আবার ম্যাথ।
উনি আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললেন তো,তুই তো গাধারাম।ম্যাথ এ যে পরিমান রসগোল্লা পাস তাতে মিষ্টি কেনার কোনো প্রয়োজন নেই।
একটু অপমান বোধ হলো আমার।বললাম,দেখুন আমি এখন সব ম্যাথ ই পারি কম বেশী।
কত পারিস এই বই দেখলেই বোঝা যাবে।উনি কিছু ম্যাথ এ কালি দিয়ে দাগ দিয়ে বললেন এগুলা কর।
চিন্তিত আমি ভীষণ ভাবে চিন্তিত এই মধ্যরাতে আমার মন সায় দিচ্ছে না লেখাপড়া করতে।সেই ক্লাস নাইনে চতুর্থ সাব্জেক্ট হিসাবে নিয়ছিলাম কৃষি শিক্ষা।কারণ হাইয়ার ম্যাথ আমার মনে সায় দিচ্ছে না।কৃষি শিক্ষা সাবজেক্ট নেওয়ার পর নিশ্চিন্ত হয়েছিলাম কিন্তু হঠাত দেখি স্যার আমাকে হাইয়ার ম্যাথ ক্লাসে ডাকছেন।স্যার এর দিকে তাকিয়ে বললাম স্যার আমার তো এ সাব্জেক্ট না।স্যার বললেন বিহান তোমার সাব্জেক্ট চেঞ্জ করে দিয়ে গেছে।বিহান ভাই সব সময় আমার শান্তি নষ্ট করতে উঠে পড়ে লেগে থাকেন।
কলম গালে দিয়ে চিবোচ্ছি আর ম্যাথ নিয়ে ভাবছি কিভাবে করবো এমন সময় কলমের হুক ছুটে গেলো সাথে সাথে কালিতে হাত গাল মুখ ভরে গেলো।হঠাত কি করবো বুঝতে না পেরে কলম ছুড়ে মারলাম হাইরে বিহান ভাই এর সাদা টি-শার্ট এর গায়ে গিয়ে লাগলো।বিহান ভাই এর বুকে গিয়ে লাগতেই কালিতে লেপ্টে গেলো।বিহান ভাই ভীষণ রাগি মুডে তাকিয়ে বললেন এটা কি করলি ষ্টুপিড কোথাকার।তুই কি বাচ্চা এখনো কলম এগুলা করিস।উনি ভীষণ বিরক্ত হয়ে বললেন,একটু পরেই সকাল হবে আমি সাওয়ার নিতে যাচ্ছি এসে যেনো দেখি সব করা হয়ে গিয়েছে।
কয়েক মিনিট পরে ফিরে এসে বললেন দেখি কি কি করেছিস দেখা।উনার খালি গায়ে পানির বর্ষণ আহা কি হ্যান্ডসাম লুকিং উনার।
অল্প বয়সে কাছে বইসা আমায় প্রেম শিখিয়েছো।
পিরিতের বান মাইরা আমার মনটা কেড়ে নিয়েছো।
আমার খাতায় এমন কিছু লেখা দেখে উনার চোখ কপালে।উনিতো এসব গান শোনেন ই না জীবনে।খাতা টেবিলে জোরে৷ বাড়ি মেরে বললেন, এটা কি লিখেছিস আমি কি লিখতে দিয়েছিলাম আর এটা কি।
দেখুন আমাকে মারুন কাটুন যা ইচ্ছা করূন আমার মনের কথা লিখে দিয়েছি।
প্রেম কি আমি তোকে শিখিয়েছি না তুই আমাকে শিখিয়েছিস।
আপনি আমাকে শিখিয়েছেন।না হলে এত অল্প বয়সে আমি প্রেমে পড়তাম না।তাও আবার আপনার মতো একটা করলার প্রেমে তো মোটেও না।আপনি একটা করলা বুঝেছেন।আপনি ছোট বেলা থেকে আমার চোখের সামনে দিয়ে ঘুর ঘুর না করলে কি আমি প্রেম ট্রেম শিখতাম।
কে প্রেম শিখিয়েছে সেটা পরে বলছি তোর মাথায় এটা কি প্যাচানো।আমার ফেভারিট শার্ট দিয়ে চুল মুছতেছিস।হাউ ডেয়ার ইউ দিয়া।তোর ওই তেল চিপচিপে মাথায় আমার শার্ট।
উনার দিকে তাকিয়ে বললাম রোজ শ্যাম্পু করি বুঝেছেন তেল ফেল লাগাইনা।
উনি ক্ষিপ্ত নয়নে তাকিয়ে আছেন।
আবার বিপদে পরলাম এটা উনার শার্ট খেয়াল ই ছিলো না।এখন কি বলি ভেবে চিন্তে বললাম আমার বরের টা আমি নিবো আপনার কি।চুল মুছবো না ঘর মুছবো আমার ব্যাপার।
আমার কথা শুনে আমার ওড়না টেনে নিয়ে উনার মাথা মোছা শুরু করলেন আর বললেন ওকে আমার ও বউ এর ওড়না যা ইচ্ছা করবো।

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।