খাঁনবংশে জন্ম গ্রহন করা টা বোধহয় মস্তবড় অন্যায় হয়েছে আমার। বংশের মানুষ একটু রগচটা টাইপের আছে।এখনো তারা পলিটিক্স এ জড়িত।মারামারি কাটাকাটি এগুলা তাদের নিত্যদিনের স্বভাব।বংশের নাম খাঁন বলেই রাজাকারের বংশের উপাধি দিয়েছেন বিহান ভাই।তার উপর আবার পলিটিক্স এ জড়িত উভয় মিলে আমাকে এই রাজাকার কথাটা শুনতে হয়।এখন অনেকেই ভাল হয়ে গিয়েছে কেউ আর এগুলা করে না।মামাদের বাবার সাথে মেয়ে বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা ছিলো না এই মারামারির জন্য।নানা তো রিতীমতো বলেই দিছিলেন বিয়ে হলে ও থাকবে জেলে তোর আর এ জন্মে সংসার করা হবে না।বাবা বলেছিলো সে বিয়ের পর এগুলা ত্যাগ করবে তবুও নানা রাজি ছিলো না।পলিটিক্স এর জোরে ক্ষমতার জন্য আম্মুকে তুলে আনতে পেরেছিলো নানাদের টাকা থাকলেও এসব মারামারি পলিটিক্স এর দিকে আগ্রহ ছিলো না তাই বাবার বিরুদ্ধে স্টেপ নিলেও কিছু করতে পারে নি।তাছাড়া মা নিজের ইচ্ছাতে চলে এসছিলো।
মনে মনে ভাবছি ক্যানো যে এই বংশে জন্মগ্রহন করলাম।না আজ বিহান ভাই এসব বলতো না।
সন্ধ্যায় উঠানে বসে বিশাল আড্ডার আসর জমেছে।আত্মীয় রা বেশ অনেকেই চলে এসছে।তারা রান্নাঘরে রসুন পেয়াজ বাছাবাছি করছে।আমরা বসেছি আড্ডা দিতে।বিহান ভাই উনার রুমে দরজা লাগিয়ে পড়তে বসেছেন।উনার বরাবর ই আড্ডা তে এত মনোযোগ নেই।লেখাপড়ার নাকি কোনো শেষ নেই।তাই ভাগ্যক্রমে উনার মনে সায় দিলে তবেই উনি আসেন তা না হলে আসেন না।
বিভোর ভাই বলে উঠলেন,,
“দিয়া তোর ক্লাসমেট কাজিন কিন্তু দিন দিন বিলাই হয়ে যাচ্ছে এত সাদা ক্যানো বল তো।ঘন্টায় ঘন্টায় ক্রাশ খাচ্ছি দেখে।তোর ক্লাস মেট কাজিন আমাকে পাত্তা দিচ্ছে না হুয়াই।”
“রিয়া বললো,,বিভোর ভাই আমাকে ছোট মানুষ পেয়ে ফ্লার্টিং করছেন তাইতো।আপনি না মেহু আপুকে প্রপোজ করেছেন।”
“এখন মেহু নেই তাই এখন তোমাকে ভালবাসি।আলাবু বেবি।”
“আলাবু কি বিভোর ভাই।”
“বিভা আপু বলে উঠলো,,ফ্লার্টিং এর স্মার্ট ল্যাঙ্গুয়েজ হলো আলাবু বেবি।রিয়া এই ফ্লার্টবাজ কে ভুলেও বিলিভ করিস না।আমার ভাই তাতে কি আমি তো জানি এরা কেমন।তবে আমার দুই ভাই এর মাঝে বিহান কিন্তু ভাল।যদি বিহান কারো সাথে লাইন মারে এক চান্সে রাজি হয়ে যাও জিতবা।।”
“বিভোর ভাই বললেন,,বিহানের আসায় কোনো মেয়ে থাকলে বুড়ি হয়ে যাবে নির্ঘাত।ওর মনে এসব প্রেম ভালবাসা বলে কিছুই নেই।অতিরিক্ত ভদ্র ছেলে।”
“রিয়া বললো,আমি বিয়ে করলে বিহান ভাই এর মতো ছেলেকেই করবো।কিছু না করলেও অন্য মেয়ের সাথে ফ্লার্ট তো আর করবে না।”
“বিভোর ভাই বললেন,এক্সকিউজ মি আমি আর বিহান দুই ভাই।কলিজার ভাই। এক রক্ত আমাদের শরীরে বয়ে চলেছে।তাই আমাকেও বিহান টু ভেবে নিতে পারো না।চাইলে ডাক্তারি ও পড়বো। ”
“রিয়া হেসে দিয়ে বললো,কিসের ডাক্তার হবে গরুর ডাক্তার হবেন নাকি।”
“বিভোর ভাই বিভা আপুকে বললো,আপু দুলাভাই কে কি কি বলি দেখো।তোমার জন্য রাস্তায় কত ছেলে আমাকে শালা শালা উপাধি দিয়েছে।এইদিকে তুমি আমার হবু প্রেমিকার সামনে মান সম্মান শেষ করে দিচ্ছো।”
“আমি চাই না বাচ্চা বাচ্চা মেয়েদের মন নিয়ে খেলা কর বুঝলি।তোর দুলাভাই কে কি বলবি হ্যাঁ।সে বুঝবে বউ সুন্দরী বলেই ছেলেরা উঁকি ঝুকি দিছে।এটা তে সে প্রাউড ফিল করবে।”
“আসলে মেয়ে মানেই প্যাঁচ বিশাল প্যাচ।কারো সাথেই পারবো না।”
রিয়া বলে উঠলো,এখানে বিহান ভাই নেই ভীষণ ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।এই দিয়া চল তো বিহান ভাই কে ডেকে নিয়ে আসি।আমি রিয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম তোর এত দরদ হচ্ছে তুই যা।উনি এখানে আসুক আর আমাকে এক গাঁদা বাজে কথা বলুক তাইনা।আমার সুখ তো তোর সহ্য হয় না তাইনা রিয়া।একদম ওই খাবিস টাকে ডাকবি না।
এমন সময় ফোন কানে নিয়ে বিহান ভাই বাইরে বেরিয়ে এলেন।আমাদের সামনে দিয়ে ফোনে কথা বলতে বলতে বেরিয়ে গেলেন।আমাদের দিকে একবার ঘুরেও দেখলেন না।এক হাত দিয়ে ফোন কানে আরেক হাত ট্রাউজারের পকেটে পোরা কোথায় যাচ্ছেন উনি।উঠান থেকে দেখা যাচ্ছে বিহান ভাই সামনের একটা বিকাশের দোকানে গেলেন।
বিভোর ভাই বলে উঠলেন দিয়া বিহান মনে হয় ওর ফ্রিল্যান্সিং এর পেমেন্ট পেয়েছে।
বিহান ভাই এর পেমেন্ট নাকি ব্যাংকে আসে।
ও তো একটা কাজ করে না অন লাইনের যাবতীয় কাজ করে।কিছু প্রেমেন্ট বিকাশেও আসে।দেখছিস না বিকাশের দোকানে ঢুকল নিশ্চয় ই পেমেন্ট তুলতে গেছে।চল একটু ফাউ খেয়ে আসি।
আমি তো বলেই দিলাম কিছুতেই যাবো না।কিন্তু বিভোর ভাই এর জোরাজুরিতে গেলাম।
বিহান ভাই দোকানের এক কর্নারে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছেন,
“দেখো মমো আই এম নট সিঙ্গেল। আই হ্যাভ এ গার্লফ্রেন্ড।প্লিজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড। আই লাভ হার সো মাস।”
“ফোনের ওপাশ থেকে কি বলছে শোনা যাচ্ছে না।”
“বিহান ভাই বললেন,বিলিভ না করলে আই এম ভেরি সরি।আমি রিলেশন এ আছি জাস্ট এত টুকু বললাম।সে কে নাম কি কি করে এগুলা শেয়ার করতে আগ্রহী নয় আমি।এটা পারসোন ইস্যু।আশা করবো আমাকে আর এ ধরনের প্রস্তাব দিবে না।”
আমি, বিভোর ভাই আর রিয়া থমকে গেলাম। বলে কি বিহান ভাই এর গফ আছে।রীতিমতো শকড আমরা।মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো উনি রিলেশন এ আছেন।
ফোন কেটে দিয়ে বিহান ভাই আমাদের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলেন,তোরা এখানে।
বিভোর ভাই বলেন,তুই চকবার খাওয়াবি তার জন্য এসেছি।
বিহান ভাই আয়রার হাতে একটা চকবার দিয়ে বলেন,আয়রা কাউকে দিবা না একা একা খাবা বলেই চলে গেলেন।
মুখের উপর অপমানের বিশাল এক ভান্ডার ছুড়ে দিয়ে চলে গেলেন।এইভাবে অপমান কেউ করে।
খাওয়ার চিন্তার থেকে আমরা গবেষনা শুরু করলাম বিহান ভাই এর গার্লফ্রেন্ড কে হতএ পারে।হঠাত বিভোর ভাই বলে উঠলেন,বিয়ে করলে ডাক্তার ছেলেকেই করবো তোহা স্টাটাস দিয়েছে আর বিহান লাভ রিয়্যাক্ট দিয়েছে তোহার পোস্ট এ।
কথাটা শুনেই মনের মাঝে জ্বলে উঠলো।বিহান ভাই তোহা আপুর সাথে। সিরিয়াসলি।না হলে বা লাভ রিয়্যাক্ট দিবে ক্যানো?একটা রিয়্যাক্ট দিতে তো অনেক সময় লাগে উনার কাছে।মানে উনি মনে করেন এটা অনেক টাইমের ব্যাপার।সেই মানুষ লাভ রিয়্যাক্ট দিছে।তাহলে কি তোহা আপুর সাথেই।আমরা তিনজন গভীর গবেষনায় লিপ্ত।মনের মাঝে চিন চিন ব্যাথা শুরু হলো আমার ক্যানো তা জানিনা।বিহান ভাই এর গফ আছে এটা আমি মেনে নিতে পারবো না।ইচ্ছা করছে কেঁদে দিতে।আবার এসে উঠানে বসলাম।
হঠাত দেখি,,বিহান ভাই মেসেজ করছেন দিয়া একটু আমার রুমে আসবি।কোনো রিপ্লে দিলাম না রাগে।কল ও দিচ্ছেন কেটে দিলাম কল।আমার কাজিনের সাথে প্রেম তাহলে আমাকে ডাকা হচ্ছে ক্যানো?যাবোই না উনার কাছে।
এরই মাঝে বিভা আপুর দুইটা ফ্রেন্ড এসছে।পাসেই তাদের বাসা।নিলয় আর আসিফ ভাইয়া।
আসিফ ভাইয়া বলে উঠলেন,,
দিয়া দিন দিন এত কিউট ছানা হচ্ছে ক্যানো?প্রেম টেম করো নাকি।
কই কিউট হচ্ছি আমি তো কালো।
এত ফর্সা শরীর নিয়ে নিজেকে কালো দাবি করলে পাপ হবে।
বিহান ভাই আবার মেসেজ দিয়েছেন,
“এক মিনিটে কফি নিয়ে উপরে আয়।”
“পারবো না।।”
“তোর সময় কিন্তু এক মিনিট নইলে কপালে কষ্ট আছে।”
“আমি আপনার রাখা কাজের বুয়া না হুকুম করলেই যেতে হবে।”
“সিন হলো কিন্তু আর রিপ্লে দিলো না।”
আবার মেসেজ দিলাম,,
“ভালোই তো ফেসবুকে মেয়েদের পোস্ট এ লাভ রিয়্যাক্ট দিচ্ছেন।”
ত্রিশ মিনিট হয়ে গেছে সিন ই করলেন না।
এইদিকে উনি মেসেজ সিন করছেন না সে নিয়ে রাগ হচ্ছে আবার উনি প্রেম করেন তা নিয়ে ও রাগ হচ্ছে।
নিজের কাজিন নিজের ক্রাশ কে প্রপোজ করেছে ভাবতেই কি একটা ফিলিংস হচ্ছে আমার।রাগে আচ্ছা মতো আয়রা কে মারলাম।আয়রা টা ভ্যা ভ্যা করে কাঁদছে।
দোতলায় তাকিয়ে দেখি ভয়ানক রাগি দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছেন বিহান ভাই।
কি নিয়ে রেগে গেলেন উনি।আমাকে ডেকেছে যায় নি তাই।আমি কি এতই ইমপরটেন্ট নাকি উনার কাছে।যে আমি না গেলে রাগ করবেন।নাকি অন্য কিছু হয়েছে।
ঘড়িতে রাত ৯ টা বাজে।সিদ্ধান্ত নিলাম কফি নিয়ে যাবো আর তোহা আপুর ব্যাপারে জানতে চাইবো।
মামির কাছ থেকে কফি নিয়ে উনার রুমে গেলাম।
টেবিলের উপর কফির মগ রাগে রাগে রাখতে গিয়ে উনার ল্যাপটপের উপর খানিকটা পড়ে গেলো।।আর ল্যাপটপের পাশে রাখা সব কাগজে লেগে গেলো।
বিহান ভাই চট করে উঠে,,
টি -টেবিলে জোরে একটা লাথি মেরে আমাকে আচ্ছা জোরে ধমক দিয়ে বললেন,একটা কাজ ঠিক ঠাক ভাবে করতে পারিস না তাহলে করতে যাস কেনো?তোর কোনো আইডিয়া আছে এই কাগজ গুলোতে ঠিক কি কি ইমপরটেন্ট জিনিস আছে।এখন আবার সারারাত বসে বসে আমাকে এগুলা করতে হবে।তুই কি এ বাড়ির কাজের মহিলা যে কফি নিয়ে এসছিস।তুই তো এ বাড়ির মেহমান মেহমান দের সাথে গল্প করতে এসেছিস।গেট আউট মাই রুম।আই সে গেট আউট মাই রুম।উনার ধমকে কেঁপে উঠে চোখের পানি ছেড়ে দিলাম আমি।
বিহান ভাই রেগে গেলেন কেনো পাঠক পাঠিকা অনুমান করুন।
Leave a comment