এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা – সিজন ২ | পর্ব – ১৩

এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা - সিজন ২

উষ্ণ আবেশে ঠান্ডায় আর ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে উনার বুকে মাথা গুজতে হলো আশ্রয়স্হল হিসাবে আমাকে।এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে উনি ছাড়া বাঁচানোর মতো কেউ নেই আমাকে।চোখ অফ করে উনার বুকে মাথা লুকালাম আমি।প্রচন্ড ভয়ে কাঁপছি আমি এই ভয়ার্ত মুহুর্ত আর ঠান্ডায় কাঁপা আমিটা চুম্বকের মতো এটে গেলাম উনার বুকের সাথে।চুপটি করে পড়ে রইলাম কিছুক্ষণ উনার বুকে।মনে হচ্ছে খানিকটা স্বস্তি পেয়েছি।উনার বুকে মাথা দিয়ে যেনো নিশ্চিন্ত হলাম আমি।এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে উনি আমাকে আগলে ধরলে আমার ভয়টা মনে হয় কিছুটা কমে যেতো,ভয়ে চোখ ই খুলতে পারছি না আমি।অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না,শুধু চারদিক থেকে ভেষে আসছে ফুলের মিষ্টি সুবাস।ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণে মাতাল করে তুলেছে পুরা রুম।কিন্তু ভেষে আসা ফুলের ঘ্রাণ নিতে পারলেও অন্ধাকারে কোনো ফুল বা কিছুই দেখা যাচ্ছে না।তবে পিঠের নিচে যে ফুলের পাপড়ি পড়েছে সেটা বোঝায় যাচ্ছে।ফুলের বিছানায় উনাকে আকড়ে ধরে আছি আমি।আম্মু কি তাহলে ঠিক ই বলেছিলো স্বামি হলো মেয়েদের নিরাপদ আশ্রয়স্হল।উনাকেই আষ্টে পিষ্টে ধরতে হলো আমাকে।চোখ বুঝলেই মনে হচ্ছে চারদিক থেকে ভূত প্রেত ধরতে আসছে আমাকে যতবার ভূতের ভয় পাচ্ছি ততবার আরো বেশী জোরে জড়িয়ে ধরছি উনাকে।উনার ভেতরে লুকিয়ে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করছি।

এমন সময় আশ্চর্যজনক একটা ঘটনা ঘটে গেলো।সহসায় এমন একটা ঘটনা ঘটলো মেঘ গর্জন এর মতো চমকে উঠলাম আমি।উনি উনার দুই হাতে উনার বুকের সাথে আলিঙ্গন করলেন আমাকে।উনার এই স্পর্শতে অন্যরকম এর অনূভুতি সৃষ্টি হলো আমার ভেতরে।এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেলো নিজের ভেতরে।উনার এই স্পর্শ টা আমার এত ভাল লাগে কেনো?এই সেই শিহরণ যে শিহরণ আমার অনেক পরিচিত।অনেক দিন আগে বিহান ভাই কে বলেছিলাম আপনি স্পর্শ করলে আমার এমন লাগে কেনো বিহান ভাই।এই সেই অন্যরকম শিহরণ যে শিহরণে নিজের ভেতরে ভাললাগা আর ভালবাসার সৃষ্টি করে।অদ্ভুত এক আকর্ষণ আর কাছে পাওয়ার টান।যা পৃথিবীর অন্য কোনো ছেলের স্পর্শতে আজ ও হয় নি আমার।উনার স্পর্শতে কেঁপে কেঁপে উঠছি আমি।
ক্রমশ উনার ভেতরে অন্যরকম কিছু মনে হলো আমার।এই অন্ধকারময় রুমে ফুলের বাসরে উনি আমাকে চমকে দিয়ে আমার ওষ্টে উনার উনার ওষ্টের আলতো স্পর্শ দিলেন।ভীষণ ভাবে কেঁপে উঠলাম আমি।এই কম্পন সমুদ্রের ঢেউয়ের থেকে অধিক উথাল,পাথাল।উনার এই একটা চুম্বনে নিজের ভেতরে শুরু হলো অন্যরকম তোলপাড়।শরীরে বয়ে গেলো তরঙ্গের ন্যায় ঢেউ।উনি ক্রমশ আরো কাছাকাছি চলে এলেন।উনার দুই ওষ্টদ্বার ধীরে ধীরে যেনো আসক্ত হচ্ছিলো,নেশাক্ত মনে হচ্ছিলো উনাকে।নেশাক্ত ভাবে গালে, মুখে চুমু এঁকে দিচ্ছেন।এত দিনে উনার মাঝে এই অদ্ভুত আচরণ আমি দেখি নি।আমি কোনো ভাবেই দম নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছি না।আবদ্ধ আছি উনার দুই হাতের শক্ত বাঁধনে। যেখান থেকে চাইলেও নিজেকে আর সরিয়ে আনতে পারছি না।এই মুহুর্তে উনাকে আটকাতেই হবে।উনি কন্ট্রোল এর বাইরে চলে যাচ্ছেন।

“উনাকে কোনরকম দম নিয়ে বললাম,এসব কি করছেন বিহান ভাই।আমি ভাবতে পারছি না এটা আপনি?”

“হ্যাঁ এটাই আমি পিচ্চি।ইওর লিগ্যাল হাজবেন্ড।”

“কেনো করছেন এমন?”

“ভালবাসি তাই?”

“আমাকে ভালবাসেন আপনি।”

“ভীষণ ভালবাসি,তুই, তোর এই চোখ তোর ঠোঁট, তোর হাসি, তোর অগ্নিচোখ, তোর রাগ এগুলো না দেখে আমি থাকতে পারি না।আমাকে ভীষণ টানে তোর এই কিচির মিচির ঝগড়া তোর দিকে।তুই ছাড়া প্রতিটি নিঃশ্বাস ই দীর্ঘ নিঃশ্বাস মনে হয় আমার।গালে চুমু দিতে দিতে বললেন তুই এত ছোট কেনো?কেনো বুঝিস না এই অবাধ্য ছেলেটা তোর কাছে এতটা বাধ্য কেনো?এই জেদী ছেলেটা ক্রমশ তোর কাছে পারাজিত হচ্ছে,প্রতিনিয়ত হচ্ছে।”

“আপনি কি ভুল ভাল বলছেন বিহান ভাই।এটা আপনি হতে পারেন না।কখনোই না।”

“তোকে ভালবাসি, এক পৃথিবী সমান ভালবাসি। এই পৃথিবীতে বড় একটা নোটিস লাগাবো।যেখানে লিখে রাখবো এই পিচ্চি টা আমার মানে আমার।এই পিচ্চিকেই লাগবে আমার।এই আনম্যাচিউর, কম বোঝা পিচ্চিকেই চাই আমার।পিচ্চির শহরে অন্য কারো প্রবেশ নিষিদ্ধ। এই নিষিদ্ধ শহরে থাকবে শুধু আমার বসবাস।”

“আপনি সত্যি কি এসব বলছেন?”

“আমার সব কথা কেনো তোর বিশ্বাস হয় না। অন্ধকারে হাতড়িয়ে আমার আঙুল খুজে একটা রিং পরিয়ে আঙুলে চুম্বন দিয়ে বললেন,পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ট হাতে রিং পরিয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।”

বলেই উনি আমাকে আরো খানিক টা কাছে টেনে নিলেন।

“আমি হাতড়ে উনার ফোন পেয়ে, ফোনের আলো জ্বালাতেই সুদর্শন যুবকের মুখে আলো পড়লো।কম্বলের নিচে ইনোসেন্ট ফেস টা আমার গালে ঠোঁট ডুবিয়ে পাগলামি করছে।আমি ঠিক কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না।ঘুমের ঘরে উনি এসব কি করছেন। উনাকে না আটকে দিলে এইসব অনর্থ ঘটলে পরে আমাকেই বকা দিবেন।”

“ফোনের আলো উনার চোখে ধরলাম,ফোনের আলো পড়তেই উনি চোখে খুলে তাকালেন।কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন,”দিয়া তুই এখানে। ”

“আমি ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেলাম উনার চাহনি তে।এত সময় অসভ্যতা করে এখন ন্যাকামো করা হচ্ছে দিয়া তুই এখানে।হালকা একটু কেশে নিয়ে বললাম,কেনো আপনি মনে হচ্ছে জানেন না।”

“নাতো।তুই না সোফাতে ঘুমিয়ে ছিলি।”

যাক বাবাহ নিশ্চয়ই ঘুমের ঘরে করেছেন এসব।না হলে উনার এসব মনে থাকলে কি করতাম।

“কি করবো শীত লাগছিলো তো।এইভাবে নিজে আরাম করে ঘুমোচ্ছেন আর আমার মতো বাচ্চা মেয়েকে শীতে কষ্ট দিচ্ছেন।”

“দিয়া তোর মনে এই ছিলো তাহলে?আমি ডাকলাম ঘুমোতে না এসে আমি ঘুমোলে আমার ঘুমের ফায়দা উঠাইলি।আমি তো তাই বলি কোলবালিশ টা আজ এত সফট হলো কিভাবে?”

“দেখুন একদম বাজে কথা বলবেন না।আপনি কত অসভ্য সেসব জানতে বাকি নেই আমার।আমি কিভাবে ঘুমের ফয়দা উঠালাম।”

“এই যে লিপ কিস করে আমার লিপের ভার্জিনিটি নষ্ট করেছিস।এইভাবে জড়িয়ে ধরে কিস করা হচ্ছিলো।এইসবের মানে কি দিয়া।”

“আমার নামে মিথ্যা বললে এই মধ্যরাতে কিন্তু এই জেলার মানুষ এক জায়গা করে ফেলবো।একটু আগে কিসব করছিলেন।এইযে আমার হাতে এই রিং পরিয়ে কি কি বলছিলেন।অসভ্য লোক কোথাকার।”

“স্বপ্নতে শ্বশুরের মেয়ে এসছিলো তার সাথে সেই রোমান্টিক মুডে ছিলাম।আমি কিভাবে জানবো ঘুমের মাঝে তুই এসে সঙ্গ দিবি।তুই যে আমার সাথে রোমান্স করবি আমি কি জানতাম।এইসব তো তোর পূর্বপরিকল্পনা ছিলো যে আমাকে একা পেয়ে রোমান্টিকতার সাগরে পাড়ি জমাবি।শুধু শুধু মুখে মুখে আপনার সাথে ঘুমোবো না, বিয়ে মানি না এসব করার কি প্রয়োজন ছিলো।আমি তো জানি তুই কত ধুরন্ধর মহিলা।তার উপর এখন আবার বিবাহিত মহিলা তুই।ভয়ানক রকমের ঝগরুটে বিবাহিত ফাজিল মহিলা তুই।”

“আজে বাজে কাজ আপনি আমার সাথে করে আমার ই দোষ দিচ্ছেন।আপনি যেসব করেছেন আপনি বলতেই পারছি না লজ্জায়।”

“লিসেন দিয়া!আমি যা করার শ্বশুরের মেয়ের সাথেই করেছি।আমি ভেবেছি শ্বশুরের মেয়েই পাশে ঘুমোচ্ছে।সেখানে তোর মতো ভয়ানক দুম্বার মতো বিবাহিত মহিলা আসবে আমি কিভাবে জানবো।”

“আপনার রিং…..”

“সাট আপ দিয়া।জাস্ট সাট আপ।ফোনের লাইট অফ কর।হাউ ডেয়ার ইউ দিয়া।আমার ফোন তোর হাতে কেনো?এই ফোন ই যত সমস্যার মূলে।এখানে ঘুমোলে চুপচাপ ঘুমো।আর একটা কথা বললে বুঝবি বিহান কত ভয়ানক।”

আমাদের মাঝে কোল বালিস দিয়ে উনি পাশ ঘুরে সুয়ে পড়লেন।আর কোনো কথা বলার সাহস ই পেলাম না।বলতেই পারলাম না আপনার রিং টা নিন।যাক গে সকালে বলবো।সুয়ে পড়ে ভাবছি মানুষ টা কি অসভ্য।ছিঃছি নিজের প্রেমিকাকে নিয়ে এসব ভাবেন উনি।আমার সাথে এসব কি করলেন উনি।ভাবতেই কেমন একটা লাগছে আমার।উনাকে দেখে কেউ বিলিভ করবে এই রষ কষ হীন গুরুগম্ভীর মানুষ এইভাবে চুমু ও দিতে পারে।

পরের দিন সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখি উনি বিছানায় নেই।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সকাল ছয়টা বাজে।মারুফা খালার ডাকাডাকিতে ঘুম ভেঙে গেলো আমার।খালা অনেক ক্ষণ ডাকাডাকির পর ও বিছানা ছাড়তে মন চাইছে না আমার।বাইরে থেকে বিহান ভাই রাগি মুডে বলছেন খালা এমনিতে না উঠলে ওয়াশরুম থেকে ঠান্ডা পানি এনে ওর গায়ে ঢেলে দাও।দেখবে ঠিক ই উঠবে।খালা আমি বাইরে অপেক্ষা করছি ও যেনো দশ মিনিটে নিচে চলে আসে।চোখ পিট পিট করে তাকিয়ে বললাম খালা এত সকালে ডাকছো কেনো?এ টাইমে এ বাড়ির কেউ এখনো ওঠে নি।তারপর আবার শীতকাল এখন।

মারুফা খালা বললো বিহান বাবা উঠতে বলেছে।

বাইরে শোনা যাচ্ছে মামি বলছে,বিহান আজ ওর প্রাইভেট এ না গেলে হয় না।

উনি রেগেই বলছেন,কেনো আম্মু আজ ওর কি?আজ কি চাঁদে অবতরণ করবে দিয়া।প্লিজ আম্মু এই পর্বটা যেনো অফ হয় এক গাদা মানুষ এসে দিয়ার সামনে বসবে আর এক গাদা প্রশ্ন করবে।কাল রাতে একবার প্রচন্ড ফেড আপ হয়েছি আমি।দিয়ার আনইজি লাগছে এই বিষয় গুলো।ইন্টারে প্রিপারেশণ ভাল না হলে ভাল কোথাও চান্স হবে না ওর।ওর এখন লেখাপড়ার সময়।এইসব আজেবাজে মহিলাদের যেনো বাড়িতে আর না দেখি যারা এসে উচ্চতা,গায়ের রং,যোগ্যতার বিচার করে।

পাঁচ মিনিট পরে দেখি বাইকে বসে বার বার হর্ন দিচ্ছেন উনি।

(নিরব পাঠক পাঠিকাদের বলছি,কমেন্ট না করলেও রিয়্যাক্ট দিবেন।যারা নিয়মিত লাইক কমেন্ট করেন তাদের তো বলা লাগবে না,এমনিতেই রেসপন্স করবে।ভালবাসা সবাইকে।)

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।