এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা – সিজন ২ | পর্ব – ২০

এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা - সিজন ২

পড়ন্ত বিকালে সূর্য হেলে গিয়েছে পশ্চিমাকাশে।সারাদিন ই আজ সূর্যের তাপ কম।উত্তরে ছেড়েছে হীম বাতাস।শহরে যেনো আজ শীতের ঢল নেমেছে। উত্তরা বাতাসে শীতের জোয়ার বইছে।চারদিক শীতে কাঁপছে শীততাপে।আজ সন্ধ্যা হওয়ার আগেই যেনো কুয়াশাছন্ন হয়ে গিয়েছে ধরনী।চারদিকে তাকালে মনে হচ্ছে ধোঁয়া উড়ছে।সাদা মেঘের ন্যায় কুয়াশার চাঁদর আজ ছেয়ে গিয়েছে। বিহান ভাই এর সেই চাদর টা গায়ে জড়িয়ে ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছি।আনমনে তাকিয়ে আছি রাস্তার দিকে।দেখছি মানুষের আনাগোনা।এই শহরে রোজ কত মানুষের যাতায়াত কিন্তু তার দেখা নেই।যাকে দেখার জন্য ছটফট করছে এই কিশোরী মন।এই শত শত মানুষের ভীড়ে আমার দু’চোখ খুজে চলেছে সেই মানুষ টাকে।যে মানুষদের টা আমার মনের দখলদার।আজ প্রায় একশ ত্রিশ দিন তার সাথে আমার দেখা নেই।তাকে দেখার তৃষ্ণায় ভেতর শুকিয়ে যাচ্ছে,ক্লান্ত হয়ে আসছে,চারদিকে যেনো ভীষণ ক্ষরা।সে আসুক না আমাকে জালাক পোড়াক তবুও আসুক,এই মুহুর্তে আমার তাকে চাই।তাকে দেখার আকুতিতে ভেতরে জ্বলছে খুব।এই শহরের সব কিছুই তিক্ত লাগছে আমার।সে আমাকে বিরক্ত করুক, ভীষণ বিরক্ত করুক বার বার তার শ্বশুরের মেয়ের কথা বলুক কষ্ট হলেও মেনে নিবো তবুও আমার সামনে আসুক।কেনো আসে না সে।সে কি ঢাকায় তার প্রিয় মানুষ নিয়ে এতটাই ব্যাস্ত আছে যে একদিনের জন্য হলেও আসতে পারছে না।কেনো পারছে না আসতে।ভীষণ কাঁন্না পাচ্ছে তাকে ভেবে।বেহুদা চোখ দিয়ে তার নামের অশ্রু ঝরছে।

ছাদে লাগানো প্রতিটি টবে ফুটে আছে হলুদ গাদা ফুল,রক্তগাদা ফুল।ফুল মানেই প্রকৃতির সৌন্দর্যের অন্যরুপ।এই ছাদে লাগানো সমস্ত ফুল ই তার এনে দেওয়া।রোজ এই ফুল গুলো তার কথা ভাবায় আমাকে।সে জানে ফুল আমার ভীষণ প্রিয়।এতটাই প্রিয় আমার ভীষণ মন খারাপ ভাল হয়ে যায় ফুল দেখলে।হঠাত রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখলাম একজোড়া কপোত কপোয় হেঁটে যাচ্ছে।দুজনের হাতেই আইসক্রিম।ছেলেটি খুব যত্নে তার প্রেমিকার হাত ধরে রাস্তা পার করে নিয়ে যাচ্ছে।ভালবাসার মানুষের হাত দুটি মানুষ কত নিঁখুত ভাবে আগলে রাখে।ইচ্ছা করছে তার হাতটাও আমি ধরি, বা সে এভাবেই আগলে আমার হাত টা ধরুক।আকাশের পানে তাকিয়ে নিলাম একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস।

কাল যে আমার জন্মদিন সেটাও তার মনে নেই।আমি জন্মনিয়েছিলাম যে দিনে সে দিন টা কেনো এতটা স্পেশাল হতে যাবে যদি আমার স্পেশাল মানুষের সেটা মনেই না থাকে।তার মনেই বা থাকবে কেনো।তার কাছে আমি একটা বাচ্চা মেয়ে তাই আমাকে বাচ্চাদের মতো রাগালে আমি রেগে গেলেই সে তৃপ্তি পায়।সে কি আমার ভেতর কখনো বুঝতে চেয়েছে।সারাদিন তাকে ফোন দিলাম একটা বার ও রিসিভ করলো না।গত তিনদিন সে আমার ফোন ও তোলে না,আমাকে ফোন ও দেয় না।আমি কি তাকে খুব বিরক্ত করছি।ভেবেছিলাম সে ফোন তুললে বলবো একটাবার আসবেন প্লিজ,আপনি আসলে আমার আর কোনো দামী গিফট লাগবে না।আমার কোনো চাওয়া কি কখনো পূরণ হয়েছে।আমি চাইলে ই বা কি আর না চাইলেই বা কি।আবার ও এক আকাশ দীর্ঘশ্বাস।

নেট অন করলাম তাকে মেসেঞ্জারে একটা মেসেজ করার জন্য।নেট অন করে ফেসবুকে ঢুকতেই,বিহান ভাই কে ট্যাগ করা একটা পোস্ট আমার সামনে এলো।নিঃশ্বাস যেনো আরো ভারী হয়ে আসলো আমার।কষ্ট টা আরো তীব্র রূপ ধারণ করলো।নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আমার।শাহরিয়া শাকিল নামের একটা আইডি বিহান ভাই এবং প্রেয়সী কে ট্যাগ করে একটা পার্টির পিকচার শেয়ার করেছেন।দেখেই বোঝা যাচ্ছে কারো জন্মদিনের পার্টি।সেখানে ক্যাপশনে লিখেছেন,বিহান দোয়া করি তোর শ্বশুরের মেয়ে আমাদের ভাবিজান অনেক বড় হোক জীবনে।এই শাহরিয়া শাকিল কেনো বিহান ভাই আর প্রেয়সী কে একসাথে ট্যাগ করলো।তার মানে কি?এই প্রেয়সী ই বিহান ভাই এর সেই শ্বশুরের মেয়ে। হ্যাঁ এই মেয়েই তো সেদিন কল আর মেসেজ দিচ্ছিলো।আজ বহুদিন পর খুজে পেয়েছি তাকে।প্রেয়সী রহমান এর আইডি তে গিয়ে চোখ আরো ঝাপসা হয়ে গেলো আমার।তার দেওয়া সব পোস্ট ই বিহান ভাই কে ট্যাগ করা,আর বিভিন্ন ধরনের রোমান্টিক কিছু লেখা।বাহ বিহান ভাই নিজের প্রেয়সীর জন্মদিন সেলিব্রেশন করে বেড়াচ্ছেন আর আমার ফোন ধরার সময় ই হয় না।আমি কি কিছুই না আপনার।জানি আমাকে ভালবাসেন না আপনি,কিন্তু আমি যে ভীষণ ভালবাসি আপনাকে।কেনো আমাকে ভালবাসলেন না বিহান ভাই।ছাদের রেলিং ধরেই নিচে বসে পড়লাম আমি।ভালবাসা এতটা পোড়ায় কেনো?কেনো এত যন্ত্রণা দেয় এক তরফা ভালবাসা।চোখ ভিজে গিয়েছে আমার।ভীষণ কাঁন্নায় ভেঙে পড়লাম আমি।

এর ই মাঝে বিহান ভাই এর নাম্বার থেকে ফোন এসছে।

চোখ মুছে একটু স্বাভাবিক হয়ে ফোন টা রিসিভ করতেই ওপাস থেকে গড় গড় করে বললেন,’কি সমস্যা কি দিয়া এত বার কল দিচ্ছিস কেনো?’

‘আপনি কল রিসিভ করছিলেন না কেনো?.’

‘গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ করছিলাম।’

‘কাজটা কি?শ্বশুরের মেয়ের জন্মদিন সেলিব্রেশন।’

‘তুই কিভাবে জানলি আমার শ্বশুরের মেয়ের জন্মদিন।’

‘জেনেছি।’

‘হুম ওর জন্মদিন আর তুই বারবার ডিস্টার্ব করছিলি কেনো?আমি অন লাইনে ওর জন্যই কিছু জিনিস অর্ডার করছিলাম।এই দিকে তোর ফোনে ঠিক ভাবে জিনিস পত্র চয়েজ করতে পারছিলাম না।’

‘জন্মদিন তো আরো অনেকের ই আছে বিহান ভাই সেটা কি ভুলে গিয়েছেন।’

‘ও বাদে আমি আমার জন্মদিন তাই ভুলে যায়।এত মানুষের জন্মদিন মনে রেখে লাভ কি বুঝলাম না।’

‘ওহ আচ্ছা রাখছি তাহলে।’

‘আর কিছু বলবি?’

‘আমি কিছু না বলেই ফোন টা রেখে দিলাম।’

রাস্তায় রিয়া আর বিভোর ভাই কথা বলছে।আজ অনেকদিন পর দেখছি দুজনে ঝগড়া ছাড়া চুপচাপ কথা বলছে।কি কথা বলছে জানিনা তবে দুজনের মুখেই বেশ হাসি।দুজনে আবার কথা বলতে বলতে খানিক টা সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।রিয়া আর বিভোর ভাই কে সত্যি খুব মানায়।মেহু আপুর হাত ধরে আয়রা ও রাস্তার দিকে যাচ্ছে।বুঝলাম না সবাই রাস্তার দিকে কোথায় যাচ্ছে।কেউ তো আমাকে কিছুই বলছে না আমাকে না নিয়েই সবাই ঘুরে বেড়াচ্ছে।ভাইয়া বাজার নিয়ে এসছে টার্মিনাল থেকে।আম্মুকে বলছে আম্মু বিরিয়ানি রান্না করো আর চিংড়ি ও রান্না করো।আম্মু ব্যাগ চেক করে বললো শষা কই আবির?শষা আর গাজর নিয়ে আয়।ভাইয়া আবার ও বাজারের দিকে বেরিয়ে গেলো।রাস্তায় গিয়ে মেহু আপুর চুল ধরে একটা টান দিয়ে আবার বেরিয়ে গেলো।

কিছুক্ষণের মাঝেই তোহা আপু হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বললো,এই দিয়া দেখ বিহান ভাই ফেসবুকে বিশাল বড় একটা স্টাটাস দিয়েছেন।এই জীবনে প্রথম কি আশ্চর্য তাইনা?বিহান ভাই ও ফেসবুকে প্রেমের সংলাপ লিখতে পারে।কি রোমান্টিক হয়ে গিয়েছেন বিহান ভাই দিয়া।

ফোনের দিকে তাকিয়ে স্টাটাস টা দেখে নিশ্চুপ রইলাম আমি।

শ্যামাপাখি,
জানো আল্লাহর দেওয়া প্রতিটা দিনের জন্য আমি শুকরিয়া আদায় করি।কিন্তু আল্লাহর দেওয়া সব দিন গুলোর মাঝে বিশেষ একটি দিনের কাছে আমি ভীষণভাবে কৃতজ্ঞ আর খুশি।এতটায় খুশি যে খুশি আমরণ থেকে যাবে আমার জীবনে।আমার সুখ হয়েই এ পৃথিবীতে তোমার জন্ম হয়েছিলো সত্যি বলতে আমি ভীষণ সুখের অধিকারী মানুষ এখন।বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ একটি দিনে এই পৃথিবীতে আগমণ হয়েছিলো তোমার।সেই দিনটা না এলে এ জীবন এত রঙিন,এত সুন্দর উপভোগ ই করতে পারতাম না।জীবনে ভাল থাকার এত বড় একটা কারণ আমি খুজেই পেতাম না।তুমি ভূমিষ্ট হওয়ার সাথে সাথে তোমার কাঁন্নায় এক ঝাক সুখ পাখি ডানা মেলে আমার কাছে উড়ে গিয়েছিলো আমার জীবনের চিরতম সুখের আগমনের খবর দিতে।পাখিরা কলরব করছিলো,ঝর্ণা প্রবাহিত হয়ে আমাকে জানান দিচ্ছিলো আমার জীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ টা আমার জন্য এ পৃথিবীতে চলে এসেছে।সেদিন থেকেই আমার শহরে ভীষণ ভাবে নিষিদ্ধ ছিলো অন্য কারো প্রবেশ। যদিও তখন আমি খুব ছোট তবুও সেই ছোট বয়স থেকেই আমার মন অন্য কারো দিকে ছুটে নি।কিভাবে ছুটবে সব ই যে উপর থেকে ঠিক করা ছিলো।সেই কিশোর বয়সে তোমাতে হারিয়েছিলো মন।যে বয়সে ঘন্টায় ঘন্টায় নতুন নতুন মেয়ে দেখে ক্রাশ খাওয়ার কথা সে বয়সে সেকেন্ডে সেকেন্ডে তোমাকে দেখে বার বার মুগ্ধ হয়েছি আমি।তোমার মাঝে এত মুগ্ধতা কেনো বলোতো।এই কঠিন ছেলেটাকে মনের বাঁধনে বেধেছো অনেক শক্ত ভাবে।দিন রাত যত অতিবাহিত হয়েছে ততই আকৃষ্ট হয়েছি তোমার ওই মিষ্টি হাসিতে।বাম পাজরে তৈরি তোমাকে আমি ভীষণ ভালবাসি।

স্টাটাস টা কয়েক মিনিট পরেই ওয়ানলি মি করে দিলেন উনি।এমন সুন্দর একটা উইশ তো উনি আমার জন্য ও করতে পারতেন।

সন্ধ্যায় ঘরের লাইট অফ করে বিছানায় মন খারাপ করে বসে আছি আমি।আম্মু রুমের লাইট অন করে দেখলো আমি চোখের পানি মুছছি।আম্মু আমার কাধে হাত দিয়ে বললো কি হয়েছে দিয়া।পৃথিবীতে মায়ের থেকে মমতাময়ী আর কেউ নেই।আম্মুকে দেখে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম নাহ।আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিয়ে বললাম কেনো বিয়ে দিলে আমার আম্মু।আমাকে তোমার কাছে রেখে দাও প্লিজ আম্মু।আম্মু বুঝতে পেরেছে নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে আমার।আমাকে জড়িয়ে ধরে আম্মু ঘন ঘন কয়েকটা নিঃশ্বাস নিয়ে বললো সব ঠিক হয়ে যাবে মা।আমি কেঁদে বললাম,আমি কি এতই খারাপ আম্মু কারো সত্যিকারের ভালবাসা ই জুটলো না কপালে।

(বিঃদ্রঃআজ যে আমি কি লিখেছি নিজেই জানিনা,লেখায় মন ছিলো না সারাদিনেও কোনো শব্দ মেলাতে পারিনি।আজকের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।