–বিহান ভাই এর কন্ঠে গান মানে রাতের আকাশে সূর্য দেখার মতো।কাকিমনির মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে তার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে গানটা বিহান ভাই গেয়েছেন।এটা কাকিমনির জীবনের সব থেকে বড় ইতিহাস হয়ে গেলো।কাকিমনি আর বিহান ভাই ভিডিও কলে মুখোমুখি। দুজনের মুখ ই ফ্যাকাসে হয়ে আছে।বিভোর ভাই যে বিহান ভাই কে এইভাবে ফাঁসিয়ে দিবেন ভাবতেই পারিনি আমি।বিহান ভাই যে কি পরিমান অস্বস্তিতে পড়েছেন তা বলার বাইরে।ভয়ানক এক বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছেন বিভোর ভাই এর দিকে।বিহান ভাই এর লাইফে এই প্রথম এমন কোনো ঘটনা।
বিভোর ভাই যেনো কিছুই জানেন না,উনি আকাশ পানে তাকিয়ে বলছেন আকাশে কি মেঘ জমেছে বিহান নাকি কুয়াশা কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।আমি মুখে হাত দিয়ে মুখ চেপে হেসে যাচ্ছি।কাকিমণি আশ্চর্যজনক ভঙ্গির মাঝে হেসে দিয়ে বললেন বিহান তুমি?আমি ভেবেছি রিয়াকে কে গান শোনাচ্ছে।কিছু মনে করোনা বাবা। আমি আসলে বুঝতে পারিনি।তাছাড়া তুমি তো কখনো গান গাও না তাই ভাল একটা বুঝে উঠতে পারিনি।কাকিমনি রিয়াকে চোখ রাঙানি দিয়ে বললেন তা আগে বলবি না বিহান ফোন দিয়েছে।এই মেয়েকে আসলে কি খাইয়ে মানুষ করছি তাই জানিনা।সে এখন তোর দুলাভাই হয়,শালীকে গান টান শোনাতেই পারে। শালী, দুলাভাই এর মাঝে চাচী শ্বাশুড়ির বা হাত দেওয়াটা কি খুব ভাল দেখায়।নে ফোন নে কথা বল আর ওদের আসতে বল।বিহান টা সত্যি বিয়ের পর অনেক পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে।
–কাকিমনি চলে গেলে রিয়া বিহান ভাই এর রাগি মুড দেখে বললেন,বিহান ভাই দেখেছেন কি শয়*তান ছেলে। সব দোষ ওই বিভোরের।আমার কোনো দোষ নেই কিন্তু।বিহান ভাই ফোন টা কেটে দিয়ে বিভোর ভাই এর দিকে তাকালেন।বিভোর ভাই যেনো কিছুই জানেন না।না জানার ভাব ধরে বললেন আচ্ছা বিহান হঠাত রেগে গেলি কেনো?কি সমস্যা ভাই।অনামিকার জন্য পরাণ পুড়তেছে।
আমি খুব জোরে হেসে দিতেই উনি ভয়ানক দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন আমার দিকে।আমি আবার হাসি থামিয়ে দিলাম।জোর করে কি হাসি থামানো যায়।যখনি ভাবি আমি হাসবো না হাসলে বিপদ তখন ই হাসতে হাসতে মরে যায় আমি।এক মিনিট দম বন্ধ করে হাসি থামিয়ে রাখার পরেই আবার বোমা ফাটার মতো পেট ফেটে ভীষণ জোরে হাসি বেরোলো আমার।আমি হেসেই যাচ্ছি ভীষণ জোরে হাসি।ভূবন কাঁপানো হাসি।আমার হাসি দেখে বিভোর ভাই ও যোগ দিলেন হাসিতে।বার বার হাসি থামানোর চেষ্টা করছি কিন্তু কিছুতেই পারছিনা।সিরিয়াস মুহুর্তে হাসির রোগ টা বরাবর ই আমার আছে।যত হাসি থামানোর চেষ্টা করছি ততই হাসি আরো জোরে বাইরে বেরিয়ে আসছে।আর বিহান ভাই তত বেশী আগুন হচ্ছেন রাগে।কপালের চামড়া ভাজ করে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।অতঃপর কি ভাবছেন রাগে জানিনা।বিভোর ভাইকে বললেন ফোন পাবিনা সাতদিন।দেখ আমি কি কি করি ফোন দিয়ে বলেই ফোন নিয়ে রাস্তার দিকে চলে গেলেন। বিভোর ভাই ও আমার ফোন দে, ফোন দে করতে করতে পেছন পেছন ছুটলো।
–সন্ধ্যার খানিক টা আগেই বিভা আপু আমাকে বললো এই দিয়া সন্ধ্যার পর আমার সাথে একটু কুরিয়ার অফিসে যেতে হবে। আম্মুকে বলেছি আম্মু বললো বিভোর কে বলতে কিন্তু দেখ বিভোর ফোন ই তুলছে না।আমি হাসতে হাসতে বললাম জানো বিভা আপু কি হয়েছে বলেই তখনকার সব ঘটনা খুলে বললাম।বিভা আপুও ভীষণ হাসলো।আসলে এটা হাসির ই ঘটনা ছিলো।বিভা আপু বললো দিয়া রেডি হয়ে নে কিছুক্ষণ পরেই বেরোবো কিন্তু।আপুকে কে বললাম আচ্ছা ঠিক আছে আপু।
–মামিকে দেখলাম, পায়রা গুলোকে খেতে দিচ্ছে।ইয়া বড় পায়রার খোপ রাখা।৫০ টার মতো পায়রা হবে।মামি শখ করেই পায়রা পেলেছে।আমি মামির হাত থেকে এক মুঠো গম নিয়ে পায়রার খোপের ভিতরে ছুড়ে মারলাম।পায়রা গুলো খাবার পেয়ে বাক বাকুম করছে আর খাচ্ছে।মা পায়রা গুলো খাবার নিয়ে বাচ্চাকে খাওয়াচ্ছে।মা সন্তানের এই ভালবাসা সব জায়গা ই সুন্দর দেখতে।মামিকে বললাম মামি বিভা আপু তো বাইরে যেতে বলছে আপুর সাথে।মামি বললেন,এই অসময়ে গেলে বিহান রাগ করবে।ও রাস্তায় ই আছে যাওয়ার সময় দেখা হবে তারপর ভীষণ বকাঝকা না শুরু করে।এর ই মাঝে বিভা আপু এসে বললো, এই দিয়া থাক যাওয়া লাগবে না বিহান কে ফোন দিয়ে বলেছিলাম আমি আর দিয়া একটু বাজারে আসছি।বিহান বললো,আপু আমি তোমার জিনিস এনে দিচ্ছি তোমাকে কষ্ট করে যাওয়া লাগবে না।রাস্তা থেকে এসে আমার ফোন নিয়ে গিয়েছে। মনে মনে ভাবলাম আমি যাবো এটা শুনেই কি উনি বিভা আপুর জিনিস আনতে গেলেন।কি একটা অবস্থা বিভা আপু টের ও পেলো না।
–মারুফা খালা অনেক দিন ধরে ধরেছে গ্রামে তার মেয়ের বিয়েতে আমাদের যেতেই হবে। যেতে হবে মানে যেতেই হবে।বিহান ভাই গ্রামে যাবেন না তার একটাই কারণ বিয়ে বাড়ি।বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার জন্য আমার মন কত উতালা অথচ উনি আমাকে যেতেই দিবেন না নিজেও যাবেন না।কেননা বিয়ে বাড়িতে অনেক মানুষ হয় সেটা উনার একটুও পছন্দ না।মারুফা খালার অনুরোধ বিহান ভাই ফেলতেও পারেন নি উনি আছেন খুব অসস্তিতে।তাও বলে দিয়েছেন বিয়ের দিন যাবেন জাস্ট খেয়ে চলে আসবেন।মারুফা খালা এ বাড়ি নিজের মতো সামলে রাখেন তাই উনার মেয়ের বিয়েতে মামা মামি কেউ না গিয়ে পারেন নি।বিয়ের দুই দিন আগে বড় মামা বড় মামি ছোট মামা ছোট মামি আর বিভা আপু চলে গিয়েছে। বিভোর ভাই যেতে পারেন নি তার ফোন আটকে আছে বিহান ভাই এর কাছে।এখনের মানুষ একদিন না খেয়ে থাকতে পারলেও ফোন ছাড়া থাকতে পারে না তাই বিহান ভাই বিভোর ভাইকে এই ভয়ানক শাস্তি টায় দিলেন।বিহান ভাই এর মন গলানো একটুও সোজা নয় উনি ফোন দিবেন না মানে দিবেন ই না।ফাঁকা বাড়িটায় ওই রাক্ষস মানবের সাথে একা একা বসবাস করতে হবে ভাবতেই কেমন লাগছে আমার।কি হবে এখন আমার।
–মামিরা মারুফা খালার বাড়িতে যাওয়ার দু’ঘন্টা পর ই বিহান কে তার এক ফ্রিলান্সার ক্লাইন্ট ফোন দিয়েছে।তারা নড়াইল ই এসছে কয়েক জন এস. এম. সুলতানের বাড়ি পরিদর্শনের জন্য।ইন্ডিয়া থেকে এসছে নড়াইল তাদের এক আত্মীয়ের বাসায়।তাদের খুব শখ বিহান ভাই এর বড়ি দেখার।বিহান ভাই বেশ চিন্তায় পড়ে গেলেন এখন রান্না হবে কিভাবে।বিভোর ভাই বেশ ভালোই রান্না পারেন।বিহান ভাই বিভোর ভাই বলে দিয়েছেন যদি রান্নায় হেল্প করে তবেই ফোন পাবে তার আগে নয়।বিহান ভাই আর বিভোর ভাই রান্নায় মনোযোগ দিয়েছেন।
–বিহান ভাই আমাকে বললেন,নামেই বিবাহিত মহিলা। আসলে মহিলা নয় তুই হচ্ছিস মহিলা আক্তার পুরুষ। একটা কাজ ও তো ঠিক ভাবে পারিস না তুই।ভাগ্য ভালো আম্মুর এই নিষ্পাপ ছেলের বউ তুই তা হলে তোর কপালে দুঃখ ছিলো।বাই এনি চান্স তোর দাদা,কাকা, বাপ এদের কোয়ালিটির অত্যাচারী জামাই জুটতো তাহলে দেখা যেতো দিয়া আর দিয়া নেই রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো পাগল দের মতো অবস্থা।
–আপনার সমস্যা টা কোথায় বিহান ভাই?আপনি আমার বংশের মানুষ টেনে এনে কি শান্তি পান।ওরা আপনার কি করেছে।আমি যেনো আর কোনদিন দেখি না আপনি আমার বংশের মানুষের টান এনেছেন।
–সত্য কথা বললে এত গায়ে লাগে কেনো?
–আপনার ছেলে মেয়ে হলে আমি কিভাবে তাদের বলি শুধু একবার দেইখেন।বলবো তোর জাতের মতো হইছোস।
–আলহামদুলিল্লাহ তাই যেনো হয়।আমার জাতের মতো হলে ছেলে মেয়ে হবে হীরার ক্ষনি।যেনো ওর মায়ের জাতের মতো না হয়।তাহলে আর মান সম্মান থাকবে না।
–ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কি আমাকেই অপমান করলেন?উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,মহিলা আক্তার পুরুষ বললেন কেনো?
–উনি ডিমের কড়াই আমার সামনে দিয়ে বললেন,খোসা ছড়িয়ে দে একটুও যেনো না ওঠে।প্রায় প্রায় দেখি গেঞ্জি পরিস।মানুষ মহিলা পরিস পুরুষের গেঞ্জি তাহলে তো তাই হলো তাইনা?
–ফ্লোরে টুল নিয়ে বসে ডিমের খোসা ছড়াচ্ছি উনি গিয়েছেন বাইরে,বিভোর ভাই গান গাইছেন আর খুন্তি চালাচ্ছেন।আমি পড়েছি মহা বিপদে বিভোর ভাই এর সাথে গল্প করতে করতে ডিমের সাদা অংশ সব খোসার সাথে উঠে গিয়েছে শুধু কুসুম অবশিষ্ট আছে।কি হবে এখন আমার।