–এটা কি শীতকাল নাকি বর্ষাকাল কিছুই বুঝতে পারছি না আমি।এ অসময়ে তো কখনো ঝড়ো হাওয়া দেখি নি।বাইরে উথাল পাথাল বাতাস উঠেছে।জানালার পর্দা উড়ছে ভীষণ জোরে।পাল্লাগুলো বাড়ি খাচ্ছে।বাইরের ধুলো উড়ে ঘর ভরে যাচ্ছে।বারান্দার সাথে মিশে থাকা শিউলি গাছ টা দোল খাচ্ছে।বেলকনির কাপড় উড়ে নিচে পড়ে যাচ্ছে।হঠাত কেমন উল্টা পালটা বাতাস শুরু হলো।এই ভীষণ আবহাওয়ার মাঝে ডিমের কুসুম ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই এটা দেখে বিহান ভাই কি রিয়্যাক্ট করবেন তাই ভাবছি।সাদা অংশ তো সব ই খোসার সাথে চলে গিয়েছে।উনি আবার পই পই করে বলে গিয়েছেন আমি যেনো ভাল ভাবে খোসা ছড়াই।এখন কি করি আমি সেটাই ভেবে যাচ্ছি।
–কিচেনের দরজায় সটান হয়ে বুক টান টান করে এক হাতে ফোন স্ক্রল করে যাচ্ছেন বিহান ভাই।ফোন স্ক্রল করতে করতে বললেন,ডিমের খোসা ছড়ানো কি হয়েছে দিয়া?
–আমি অপরাধী মুখে চুপ আছি।আমাকে নিশ্চুপ দেখে ফোন স্ক্রল করা বন্ধ করে আমার দিকে তাকালেন।আমার দিকে তাকিয়ে উনার দৃষ্টি ডিমের দিকে নিক্ষেপ করে দুই ভ্রু বিস্ময় এর সাথে কুচকে ডিমের দিকে তাকিয়ে রইলেন।নিমিষেই ভীষণ রেগে গেলেন।রেগে ফুসে ফুসে উঠছেন ক্রমশ।অতিশয় বিরক্তি নিয়ে বললেন,হোয়াট দ্যা হেল ডিম কে সোজা জাহান্নামে পাঠিয়ে ছেড়েছিস তো দিয়া দাঁতে দাঁত চেপে বললেন।এটা কি ডিম নাকি ঘোড়ার ডিম কিছুই বুঝছি না।অতিথি আসার সময় হয়ে গিয়েছে ডিমের এটা কি অবস্হা করেছিস ষ্টুপিড।আমার আগেই বোঝা উচিত ছিলো তোর দ্বারা কিছুই হবে না।হবে না মানে না।রাজাকার বংশের মেয়ে খাটি রাজাকার হয়েছে।এই নিরীহ ডিম গুলোর সাথে এমন অত্যাচার করেছিস যে ডিম গুলোর অস্তিত্ব ই খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।
–বকছেন কেনো?উঠে গেলে আমি কি করবো?
–চুপ অলস মহিলা।একদম চুপ, একটা কথা বললে তোকে কড়াইতে দিয়ে সিদ্ধ করবো এইবার পোল্ট্রি কোথাকার।আমি জানি তুই ধৈর্য ধরে করিস নি কিছুই। ২ মিনিটে ডিমের সাথে যুদ্ধ করে এই অবস্থা করেছিস।এই মুহুর্তে তুই আবার ডিম সিদ্ধ করবি ফ্রিজ থেকে নিয়ে, তারপর সেই ডিমের খোসা ছড়াবি।এই কিচেন পরিস্কার করবি পুরা ঘর ঝাড়ু দিয়ে দিবি,পুরা ঘর মুছবি,আলনা ঘোছাবি,বাথরুম পরিষ্কার করবি।এগুলো তোর শাস্তি।
–আমি এসব কিছুই পারবো না। বাথরুম তো মোটেও পারবো না।আপনি আমাকে পোল্ট্রি বলেছেন, আমি কি পোল্ট্রি।
–এগুলা না করলে গ্রামের দীর্ঘদিন অপরিষ্কার বাথরুমে বেধে রাখবো একমাস।
তোর সাথে এটাই হওয়া উচিত।মন চাচ্ছে একটা থাপ্পড় মেরে ফেলে দেই।পোল্ট্রির মতো খাওয়া আর সোয়া ছাড়া কোন কাজ টা পারিস তুই।হুহ!পোল্ট্রি বলাতে উনার সম্মান গিয়েছে।
–আমি একটু রাগি দৃষ্টিতে কপাল কুচকে তাকালাম।।
–উনি বললেন,ঠিক আছে তুই পোল্ট্রি না দেশী মুর মগী হ্যাপি।নাকি তাও রেগে যাবি।ওকে ফাইন মোরগ,এটাই শুনতে চাস তো তুই মোরগ।তাও খাটি খান বংশের অত্যাচারী মোরগ।এমনি এমনি তো আর বলি নি মহিলা আক্তার পুরুষ।
–উনাকে কিছু না বলে ফ্রিজ থেকে ডিম নিয়ে আবার সিদ্ধ করতে দিলাম,রাগে রাগে ৩০ টা ডিম সিদ্ধ করতে দিলাম।সিদ্ধ প্রায় হয়ে এলে উনি এসে দেখেন ৩০ টা ডিম সিদ্ধ করছি।উনি ফোন স্ক্রল করছিলেন সাইডে দাঁড়িয়েই ত্রিশ টা ডিম দেখে চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু উচিয়ে বললেন,ডিম কয়টা?
–ত্রিশ টা।
–আমার কি বিয়ের বৌভাত হচ্ছে যে ত্রিশ টা ডিম সিদ্ধতে দিয়েছিস।
–আপনার মতো একজন বিশিষ্ট ফ্রিল্যান্সার এর বাসায় গেস্ট আসছে তারা একেক জন কম করে হলেও পাঁচটা ডিম খাবে।তা হলে কি আপনার মান সম্মান থাকবে বিহান ভাই।এত কিপ্টা আপনি ভাবাজ যাচ্ছে না।
–তোর বাপ কি আমাকে ডিমের ফ্যাক্তরী যৌতুক দিয়েছে যে এত গুলা ডিম সিদ্ধ দিয়েছিস।৪০ টা ডিম এর ফায়দা উঠাইলি।এই ডিম তোর ই খেতে হবে।
–আমি কোনো কথা না বলে,বিভোর ভাই এর দিকে খোসা ছড়ানো ডিম এগিয়ে দিয়ে বললাম বিভোর ভাই খান আপনি।মানুষ কি আপনাকে বিনা পয়সার চাকর পেয়েছে নাকি।খেতে না দিয়ে অত্যাচারী দের মতো কাজ করাচ্ছে।
–বিভোর ভাই ডিমের কুসুম খেতে লাগলেন একটা করে আর বললেন যাক দিয়া আমার খাওয়ার একটা ব্যবস্থা করে দিলি।আমি কুসুম ভালো খাই,তুই খাবি দিয়া।
বিভোর এর মুখ থেকে এক টুকরো কুসুম পড়ে যেতেই বিভোর ভাই বললেন,কার পরাণে চেয়েছে।ভাই আমার যেনো ডায়রিয়া না হয় যার পরাণে চাইছে সে খা প্লিজ।
–আমি বিহান ভাই দিকে তাকিয়ে বললাম,বিভোর ভাই কার পরাণে চাইছে সেটা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
–বিভোর ভাই বললেন,বিহান পরাণে চাইলে খেয়ে নে বলেই ডিমের কুসুম বিহান ভাই এর দিকে ধরলেন বিভোর ভাই।
–বিহান ভাই একটা কুসুম হাতে নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,ভাই বোন মিলে আমাকে ফকির বানিয়ে ছাড়বি।
উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন একটু এদিকে আয় তো দিয়া।বিছানার চাঁদর টা চেঞ্জ করতে হবে।
–আমি আপনার সাথে যাবো না কোথাও যাবো না।
–বিভোর ফোন চাই তোর?
–প্লিজ ভাই ফোন টা দে।
–আমার রুমে টেবিলের ডয়ার টা খুলে দেখ আছে।
বিভোর ভাই খুশি মনে ফোনের সন্ধানে গেলেন।
–উনি ভ্রু উচিয়ে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।
–আমি দুই ভ্রু কুচকে তাকিয়ে ভাবছি কি করতে চাইছেন কি উনি।
–আমার দিকে এক’পা দু’পা করে এগিয়ে আসছেন প্যান্টের পকেটে দুই হাত গুজে।এগোতে এগোতে বললেন,আমি ডাকলে যাওয়া হলো না কেনো?..
–আমি কাঁপতে কাঁপতে বললাম ভ,,ভয়ে।
–ভয় করে তাইনা দিয়া?খুব ভয়!
–হুম!মাথা নেড়ে ইশারা করলাম।
–এখন ভয় করছে না দিয়া।
চোখে মুখে ভয় আমার,উনি কিছুতো করতে চলেছেন কিন্তু কি করতে চলেছেন।কি করতে চান উনি।
আমি কিচেনের ওয়ালে পিঠ ঠেসে দাঁড়িয়ে আছি।উনি এসে কিচেনের ওয়ালে দুই হাত দিয়ে আমাকে উনার দুই হাতের মাঝে রেখে ঝুকে দাঁড়ালেন আমার দিকে।উনার মতলব টা ঠিক ভাবে বুঝে উঠতে পারলাম না।আমি ড্যাব ড্যাব করে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
মুহুর্তের মাঝেই এমন ঘটনা ঘটে গেলো যার জন্য আমি এতটুকুও প্রস্তুত ছিলাম না।উনি আমার মাথার পিছনে হাত দিয়ে আরেক হাত দিয়ে আমার হাত ধরে উনার মুখের ডিমের কুসুম সম্পূর্ণ ওষ্ট আমার মুখে দিয়ে ডিমের কুসুম আমার মুখে দিয়ে দিলেন।অতঃপর বললেন,আমার পরাণে চাইছিলো তাইনা?আমার সাথে জিদ করে এত্ত গুলা ডিম নষ্ট করার শাস্তি দিলাম।যদিও আমি জানি এমন মিষ্টি শাস্তি পেতে সবার ই ভালো লাগে।তোর ও ভাল লেগেছে তাইনা দিয়া।
আমি রান্না ঘর থেকে দৌড়ে বাইরে এসে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ওয়াক ওয়াক করছি।চোখে পানি টলমল করছে।কি যে ঘেন্না লাগছে বলার বাইরে।এক্ষুণি মনে চাইছে ঠোঁট গাল সব কেটে ফেলি।ইয়াক থু,ইয়াক থু।বার বার ওয়াক ওয়াক করেই যাচ্ছি।পানি দিয়ে কুলি করেই যাচ্ছি।উনি আমার পাশে ঝুঁকে দাঁড়ালেন বেলকনিতে।
–আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,”ওহে বালিকা আপনি কি বাবুর আম্মু হতে চলেছেন।বাট হাউ”
–আমি ক্ষীপ্ত নয়নে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম অসভ্য লোক একটা,আমাকে থু থু খাইয়ে দিয়েছেন।
–এই টুকুতেই যদি প্রেগন্যান্ট হয়ে যান,বাকি টুকুতে কি হতো আই ডোন্ট নো।এই মুহুর্তে শ্বশুরের মেয়ে যদি প্রেগন্যান্ট হয় মানুষ ভাববে দিয়ার আম্মুর জামাই নিশ্চিত কিছু করেছে।আম্মুর এই নিষ্পাপ ছেলেটার হবে যত দোষ।
–আমি রেগে মেগে তাকিয়ে বললাম,আর একটা কথা ও বললে আপনার গায়ে বমি করবো।যদি মামিকে না বলেছি তো কি বলেছি দেইখেন আপনি।
–উনি আমার দিকে টিস্যু এগিয়ে দিয়ে বললেন, ওহে বিবাহিত অসভ্য বেয়াদপ প্রেগন্যান্ট মহিলা এই নিন টিস্যু। আপনার নাকের পানি চোখের পানি মুছে ফেলুন।না হলে প্লাবিত হবে এ ভুবন।
আমি টিস্যু নিয়ে উনার বুকে ধাক্কা মেরে রুমের মাঝে চলে গেলাম।