তোমায় বহু বার ছুঁতে গিয়ে ছোঁয়া হয়নি,
তোমায় বহু বার বলতে গিয়ে বলা হয়নি,
তোমায় বহু বার ডাকতে চেয়েছি ;
কেনো যেনো ডাকা হয়নি।
আমি তো প্রায় স্বপ্নে তোমার সাথে বহু দূর হারায়!
সেটা কখনো তোমায় বলা হয়নি।
আমি তোমাকে আমার প্রিয় ভাবি সেটাও তুমি কখনো জানোনি,
আচ্ছা তুমি তো আমার আশেপাশে থাকো,
তাহলে আমার মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা এ অনুভূতি গুলো বুঝো না কেন?
তুমি বুঝো কেন আমার আমি শুধু তোমাকে চাই,
একান্ত করেই আমার আমি শুধু তোমাকে চাই।
দিন শেষ আমিও বলতে চাই সেও আমায় বুঝেছে-
তাই সে আমার হয়েছে।
সে
আসাদ ~
চিঠিটা পড়ে অগ্নি চোখে আমার দিকে তাকিয়ে উনি বললেন,
“এটা কি ছিলো পিচ্চি?হোয়াট ইজ দিস পিচ্চি।এই বয়সে প্রেম করছিস।তোর বয়স কত দিয়া?এখনো হামাগুড়ির বয়স ই তো শেষ হয় নি তোর।আর এই বয়সে তুই কিনা প্রেম করছিস।ফুপ্পি কে বলতেই হচ্ছে ব্যাপার টা।হাউ স্ট্রেইঞ্জ।”
“কি বলবেন আপনি বিহান ভাই?এ চিঠি কে দিয়েছে আমি জানিনা?আমি তো মাত্র ই এখানে পেয়েছি চিঠিটা।ভয়ে বুক কাঁপছে আমার।বিহান ভাই এর পক্ষে সব ই সম্ভব। আমাকে জব্দ করতে উনি সব ই পারেন।”
“উনি কপালে ভাজ ফেলে তাকিয়ে আছেন,ভয়ানক মুডে বললেন,আমার কাছে মিথ্যা বলে কোনো লাভ নেই দিয়া।ফুপ্পি কে না বললেই নয়।”
“দেখুন আপনার হাতে পায়ে ধরছি বিহান ভাই তবুও আম্মুকে বলবেন না প্লিজ।আম্মু আমাকে মেরেই ফেলবে।”
“আমার পাঞ্জাবী তে মেহেদী লাগানোর শাস্তি তো তোকে পেতেই হবে দিয়া।”
–উনি ড্যামকেয়ার ভাব নিয়ে বেরিয়ে গেলেন।আমিও উনার পিছ পিছ গেলাম।উনি আম্মুকে ডেকে নিয়ে আড়ালে চিঠিটা আম্মুর হাতে তুলে দিয়ে বললেন,ফুপ্পি মান সম্মান বাঁচাতে চাইলে তোমার মেয়েকে আজ ই বিয়ে দিয়ে দাও।এই দেখো তোমার প্রেম করছে।কি সাংঘাতিক ব্যাপার ফুপ্পি ভেবে দেখেছো দিয়ার কি এখন প্রেম করার বয়স।কোন বাজে ছেলের পাল্লায় পড়বে তার ঠিক নেই।আজ কাল রিলেশন করলে দুই দিন পরে পরে ইন্টারনেটে ভিডিও বের হয়।ছেলেরা মেয়েদের ভুলিয়ে ভালিয়ে অনেক বাজে কাজ করে।তোমার মেয়ে যে বলদ ওর সাথে কি কি হবে তার ঠিক নেই।তোমার মেয়ে ভেবে দেখো কি করা উচিত।
আম্মু আমার দিকে প্রচন্ড রাগী চোখে একবার তাকালো।আমার বুঝতে বাকি রইলো না আমার কপালে কি আছে আজ।অন্যদের আম্মু আর আমার আম্মু পর্থক্য আকাশ পাতাল সমান।
এক গ্রাম মানুষের সামনে আম্মু আমার দুই গালে দুইটা থাপ্পড় মেরে দিলো স্ব জোরে।আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম আম্মু না হয় আমাকে আড়ালে নিয়ে মারতো,এইভাবে মানুষজনের সামনেই মারবে ভাবতে পারিনি।লজ্জা আর অপমানে আমার মরে যেতে ইচ্ছা করছে।চারদিকে মানুষ কানাকানি করছে কি না কি ঘটিয়েছি আমি।সবার দৃষ্টি এই মুহুর্তে আমার দিকেই আছে।আত্মীয়রা সবাই জিজ্ঞেস করছে ভাবি দিয়াকে মারলেন কেনো?কি করেছে দিয়া।সব কিছু তো ঠিক ঠাক ই ছিলো হঠাত মেয়েকে মারলেন কেনো?এত বড় অপমান আমার বয়সে কোনদিন হয় নি আমি।আমার কয়েক জন বান্ধবী ও এসছে বিয়েতে।তাদের সামনে মায়ের হাতের চড় খাওয়ার থেকে মরে যাওয়া অনেক বেশী ভালো।বান্ধবীরা হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
এই মুহূর্ত থেকে ওই মানুষ টাকে আমি সব থেকে বেশী ঘৃনা করি।যতদিন বেঁচে থাকবো এই অপমান আমি ভুলবো না।একটা মানুষ কতটা খারাপ হতে পারে তা উনাকে না দেখলে বুঝতাম ই না।সামান্য পাঞ্জাবীর জন্য এত বড় সিনক্রিয়েট না করলেই তো পারতেন উনি।
সব মানুষ জড় হয়ে গেলো ধীরে ধীরে চারদিকে।আমাকে মারার কারণ হিসাবে যার যেটা মন চাইছে সে সেটা বলছে।আম্মু রাগে ফুঁশছে।দুঃখে কষ্টে আমি কাঁন্না আটকাতে পারছি না।চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে আমার।
বাবা,ভাইয়া,মামি, কাকি সবাই এগিয়ে এলো।বাবা আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,তুমি কি পাগল এত বড় মেয়ের গায়ে হাত দেয় কেউ।
আম্মু ফুঁশে উঠে বললেন,তুমি একদম ই কথা বলবে না, তোমাদের প্রশ্রয় পেয়ে মেয়েটার এই হাল হয়েছে এখন।তোমার মেয়ে আস্ত একটা বেয়াদব এ পরিণত হয়েছে।আম্মু রাগ দেখিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো।আমিও নিজের ঘরে চলে গেলাম।বিছানায় উপুড় হয়ে সুয়ে কাঁদছি।কাঁদতে কাঁদতে হেচকি উঠে গিয়েছে আমার।
পাশের রুমে আম্মু বাবা কে বলছে তোমার মেয়ে কার সাথে পালিয়ে যাওয়ার প্লান করছে।তোমার মেয়ে প্রেম করা শিখেছে।ছিঃছি আমি ভাবতেই পারছি না।ভাইয়া আর ভাবি বলেছিলো বিহানের ডাক্তারি শেষ হলে দিয়ার সাথে বিয়ে দিবে।আমরাও তো কথা দিয়েছিলাম তাইনা?কিন্তু এখন কি ভাবি কে বলতে পারবো সেই বিয়ের কথা।তাছাড়া বিহান কি আর দিয়াকে বিয়ে করতে রাজি হবে।বিহান তো আর জানেনা বিহান মেডিকেল এ পড়ার সময় ওর আর দিয়ার বিয়ের কথা হয়েছিলো।বিহান এখন জানে দিয়া প্রেম করে বেড়াচ্ছে দিয়াকে নিয়ে ওর মনে এখন কোনো ভাল চিন্তা ভাবনা নেই।বিহান এখন দিয়াকে বিয়ে ও করবে না।তুমি আজকের মাঝেই ছেলে দেখবা।কাল রুশার বিয়ে মিটে গেলেই তোমার মেয়ের বিয়ে দিবো।আমি জানিনা ছেলে কোথায় পাবা।
পায়ের নিচের মাটি সরে যাচ্ছে আমার।এই বিয়ে বাড়ি নিয়ে কত শত স্বপ্ন ছিলো।আজ আমার জীবন টা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে আমার।বিয়েতে আনন্দ করবো বলে একমাস ধরে প্লান করেছি,শপিং করেছি আজ সেই বিয়ে কিনা আমার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ালো।রুশা আপুর বিয়ে বাদ দিয়ে সবাই আমার বিয়ে নিয়ে প্লান করছে।আম্মু যখন জিদ ধরেছে তখন আমার বিয়ে দিয়েই ছাড়বে।এই বয়সে বিয়ের কথা আমি ভাবতেই পারছি না।
আম্মুর কাছে মনে হচ্ছে আমি এমন কোনো অন্যায় করে ফেলেছি যে আম্মু আর কোথাও মুখ দেখাতে পারবে না।আম্মু দুঃচিন্তায় কেঁদেই চলেছে, বাবা ও খাটের এক কোণে মুখ ভার করে বসে আছে।বাইরের কাউকেই তারা বুঝতে দিচ্ছে না তাদের ভেতরে কি চলছে।বড় মামা, বড় মামি,ছোট মামা, ছোট মামা রুমে প্রবেশ করলো।মামা,রা আম্মুর কাঁন্না দেখে আম্মুকে একটু ধমক ও দিলো।বড় মামা বলছেন তুমি কি পাগল সানজিদা এত চিন্তার কি আছে।বাচ্চা মানুষ এই বয়সে একটু আধটু ভুল করবেই তাই বলে এইভাবে ভেঙে পড়লে হবে।আম্মু বললো,তোমরা কি বুঝতে পারছো না কারো সাথে পালিয়ে গেলে কি হবে, বাজে কারো পাল্লায় পড়লে ওর জীবন ই শেষ হয়ে যাবে।আমি কিছু শুনতে চাই না যেভাবেই পারো একটা ছেলে দেখে দিয়ার বিয়ে দিয়ে দাও তোমরা।বড় মামি বললেন,ছেলে কি বললেই পাওয়া যায়,তাছাড়া যার তার হাতে তো আর দিয়াকে তুলে দেওয়া যায় না তাইনা?ছেলে খুজতে তো সময় লাগবে?
–ছোট মামি বললেন,নতুন করে ছেলে খুজতে হবে কেনো?বলায় তো ছিলো বিহানের সাথে দিয়ার বিয়ে হবে।
–ছোট মামা বললেন আমাদের তো সে ইচ্ছায় ছিলো কিন্তু বিহানের তো লেখাপড়া ই শেষ হয় নি।এই মুহুর্তে বিয়ের কথা বললে কেমন রিয়্যাক্ট করবে সেটাই ভাবছি।বিহান এর কাছে কথাটা পাড়বে কে?
–বড় মামা বললেন,সানজিদা দিয়া কে আমরা বুঝিয়ে বলবো।বুঝালে দিয়া নিশ্চয়ই বুঝবে।বিহানের ডাক্তারি টা শেষ হলে তখন বললে বিহান না করতে পারবে না।কিন্তু এখন বিহান বিয়ে করবে বলে মনে হয় না
–বড় মামি বললেন,বিহান তো বিয়ের নাম ই শুনতে পারে না।মেয়েদের সাথে কথায় বলে না।ও আবার বিয়ে করবে এটা ভাবাই যায় না।
–ছোট মামি বললেন,ছেলের জেদ অনেক দেখেছি আর না।বিয়ে বিহান কে করতেই হবে।সব ঝামেলা সে সৃষ্টি করেছে তাই এর সমাধান তাকেই করতে হবে।বলেই মামি বেরিয়ে গেলেন রুম থেকে।
(পাঠক-পাঠিকার মতামত চাইছি।কেউ চাইছেন কাহিনী টা আলাদা হোক,কেউ চাইছেন আগের সিজনের মতোই হোক।এই সিজন টা আপনাদের ভাল লাগার জন্য ই দেওয়া।সবার মতামতের ই সমান গুরুত্ব আমার কাছে।যদি কমেন্টে জানাতেন সবার কমেন্ট দেখে আমি সেভাবেই আগাইতে পারতাম।ভালবাসা সবাইকে)