ইট পাটকেল | পর্ব – ৯

8 Min Read

সকাল সকাল ফর্মাল ড্রেসে অফিসের জন্য রেডি হয়ে নিচে এসেছে নূর।অফ হোয়াইট কালার লেডিস কোটের সাথে কালো প্যান্ট। চুল গুলো পোনিটেইল করে বাধা। আশমিন সেদিকে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। আমজাদ চৌধুরী নূরের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বললো,
— গুড মর্নিং মা।
রাফসান শিকদারের জন্য বরাদ্দকৃত চেয়ারে বসতে বসতে নূর ও হাসিমুখে আমজাদ চৌধুরী কে গুড মর্নিং জানালো।
— অফিসের প্রথম দিনের জন্য শুভকামনা। অনেক অনেক এগিয়ে যাও মা। আমি আছি তোমার সাথে।
নূর প্লেটে পরোটা নিতে নিতে কামিনী চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বাকা হাসলো। আমজাদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে রসিকতার স্বরে বললো,
— ধন্যবাদ আংকেল। তবে এই মুহুর্তে দোয়া মিসেস চৌধুরীর বেশি প্রয়োজন। আপনি বরং তাকেই একটু দোয়া করে দিন। বলা তো যায় না,আর কখনো এভাবে রাজকীয় ক্ষমতা নিয়ে আপনাদের সামনে বসতে পারেন কি না।
আমজাদ চৌধুরী মলিন চোখে তাকালো নূরের দিকে। আশমিন একমনে খেয়ে যাচ্ছে। তার এদিকে কোন ধ্যান নেই। আজ তার অনেক কাজ।দলীয় কিছু কর্মসূচি আছে আজ। মন্ত্রী পরিষদে আজ সারাদিন থাকতে হবে। তার আগে বাসার গুরুত্বপূর্ণ কাজটা শেষ করতে হবে।
নূর খাওয়ার মাঝেই লারা এসে হাজির হলো নূর মঞ্জিলে। আশমিনের পাশের চেয়ারে বসে আশমিনের দিকে অসহায় চোখে তাকালো। ন্যাকা কান্না করে বললো,
— বিয়ের ডেট টা কবে ফিক্সড করবে আশমিন?হঠাৎ করে বিয়ে ভেঙে যাওয়ার আমাদের অনেক হিউমিলিটেড হতে হচ্ছে। পাপা সোসাইটি তে মুখ দেখাতে পারছে না। প্লিজ আমার সাথে এমন করো না।সবাই জানে আমি তোমার বউ হবো। এভাবে বিয়ে টা ভেঙে দিলে আমার বেচে থাকা মুশকিল হয়ে যাবে।আমি তোমাকে ভালবাসি আশমিন।
আশমিন নির্লিপ্ত চোখে লারার দিকে তাকিয়ে আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।আশমিনের এমন গা ছাড়া ভাব দেখে মনে মনে রাগে ফুসে উঠলো লারা।কিন্তু চেহারায় তা প্রকাশ করলো না। মনে মনে বললো,
— একবার শুধু বিয়ে টা হয়ে যাক। তোমাকে আর তোমার পুরো পরিবার কে আমি লারা আমার পা চাটা গোলাম যদি না করিয়ে রাখি তাহলে আমার নাম ও লারা নয়।
নূর ভ্রু কুচকে সেদিকে তাকালো। লারা নূরের দিকে তাকিয়ে আশমিনের আরেকটু কাছাকাছি গিয়ে বসলো। আশমিন লারার দিকে না তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বললো,
— কোলে বসতে চাও?
আমজাদ চৌধুরী চোখ বড় বড় করে তাকালো আশমিনের দিকে। নূর সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে নিজের কফিতে মনোযোগ দিলো। লারা আশমিনের দিকে লাজুক চোখে তাকিয়ে মিনমিনে গলায় বলল,
— সবার সামনে?বেডরুমে গেলে ভালো হতো না?
— দরকার নেই।তুমি এখানেই উঠতে পারো।
— ওকে।
আশমিন টেবিল থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা পালোয়ান সাইজের লোকটির দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললো,
— বাহাদুর, লারা কে কোলে নাও।আজ সারাদিন সে তোমার কোলেই থাকবে।আজ আর তোমার কোন কাজ নেই।
আশমিনের শান্ত গলা শুনে বাহাদুর নামের লোকটা ভয়ার্ত চোখে আশমিনের দিকে তাকালো। আশমিনের এই শান্ত গলা যে কতটা ভয়ংকর তা সে হাড়ে হাড়ে জানে।তাই কাল বিলম্ব না করে দ্রুত পায়ে এসে শক্ত হাতে লারা কে কাধে তুলে নিল। লারার মনে হচ্ছে কেউ লোহা দিয়ে তাকে চেপে ধরেছে।চোখের পলকে কি হয়ে গেলো বোঝার আগেই বাহাদুর নামের কালো পালোয়ান সাইজের লোকটা তাকে কোলে নিয়ে একটা চেয়ারে বসে পরলো। কামিনী চৌধুরী সেদিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। আমজাদ চৌধুরী একটু শব্দ করেই হেসে ফেললো। সানভি আর অমি এতক্ষণ সব কিছু নিরব চোখে দেখলেও এবার দুজনেই মুখ টিপে হাসতে লাগলো। নূর অমির দিকে তাকিয়ে লারার বসা চেয়ারটা দেখিয়ে শক্ত গলায় বলল,
— এটা এখনি বাইরে ফেলে দেয়ার ব্যবস্থা করো।
কামিনী চৌধুরী তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,
— চেয়ার ফেলে কি লাভ। তোমার বর কে ও অনেক বার ছুয়েছে ও।এখন তো তার সাথেই বাসর করতে চাইছো।
— আমি ফেলেছি বলেই সে ছুতে পেরেছে।নাহলে কার সাধ্যি নূরের জিনিসের দিকে হাত বাড়ানোর? নূরের টেস্ট এতটাও খারাপ না মিসেস চৌধুরী।(বাকা হেসে)
আশমিন তীক্ষ্ণ চোখে নূরের দিকে তাকিয়ে কফিতে শেষ চুমুক দিলো। নূর দাঁড়িয়েছে অফিসে যাওয়ার জন্য।
— তাড়াতাড়ি অফিসে আসবেন মিসেস চৌধুরী।আই হেইট লেইট।
আশমিন নিজের চেয়ার ছেড়ে নূরের মুখোমুখি দাড়ালো। শুভ্র পাঞ্জাবির হাতা সামান্য গুটিয়ে ঘার হালকা কাত করে নূরের দিকে বাকা হেসে তাকালো।নূরে ভ্রু কুচকে তার দিকেই তাকিয়ে। হাতা গুটানো শেষ হতেই হুট করে আশমিন নূর কে কোলে তুলে নিলো।নূর চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো আশমিনের দিকে।আশমিন ধুপধাপ পা ফেলে সিড়ি বেয়ে চলে যাচ্ছে নিজের রুমে। আমজাদ চৌধুরী মুখ কুচকে তাকিয়ে রইলো ছেলের যাওয়ার দিকে।সানভি আর অমি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বসে গেলো ব্রেকফাস্ট করতে।আজ তাদের যেতে লেইট হবে তারা বুঝে গেছে।
— ওকে এভাবে কোথায় নিয়ে গেলো তোমার স্যার?
আমজাদ চৌধুরীর প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেলো সানভি। ও কিভাবে জানবে কোথায় নিয়ে গেলো?তবুও সন্দিহান কন্ঠে বললো,
— কাল রাতের ক্লাস টা মনে হয় এখন করাবে।রাতে তো ম্যাম যায়নি স্যারের রুমে।
আমজাদ চৌধুরী কটমট গলায় বলল,
— চুপ করো বেয়াদব ছেলে। যেমন স্যার তার তেমন পি.এ।সব কয়টা অসভ্য হচ্ছো দিন দিন।
সানভি কাদো কাদো চোখে তাকিয়ে পরোটা খাওয়ায় মনোযোগ দিল।অমি মনে মনে হেসে লুটপুটি খাচ্ছে। কামিনী চৌধুরী গটগট করে বেড়িয়ে গেলো বাসা থেকে। লারার বাবার সাথে কথা বলতে হবে।এতো বছরের সাজানো প্ল্যান কিছুতেই এই দুই দিনের মেয়ের জন্য সে নষ্ট হতে দিবে না।
অমি কাউকে ম্যাসেজ করে আবার খাওয়ায় ধ্যান দিলো।
আশমিন নূর কে নিজের রুমে নামিয়ে সাথে সাথে দরজা লক করে দিলো।এখন এই দরজা আশমিনের ইচ্ছে ছাড়া আর খুলবে না।খুলতে হলে পাসওয়ার্ড লাগবে।নূর সেদিকে আগুন চোখে তাকালো। আশমিন সেদিকে পাত্তা না দিয়ে নূর কে শক্ত করে নিজের সাথে চেপে ধরলো।এক হাতে কোমড় পেচিয়ে ধরে হালকা উচু করে নিজের মুখ বরাবর করলো নূর কে। নূরের পা ফ্লোর থেকে তিন ইঞ্চি উপরে।
— ছাড়ুন।
নূরের শান্ত গলায় ছাড়ুন বলায় ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো আশমিন। নূরের ঠোঁটের ঠিক বা পাশে গাঢ় চুমু খেয়ে ফিসফিস করে বললো,
— রাতে আসতে বকেছিলাম।আসো নি কেন?ছাত্রী হিসেবে তুমি ফাকিবাজ হতেই পারো।কিন্তু স্যার হিসেবে আমি মোটেও ফাকিবাজ নই।তুমি ফাকি দিবে, আর আমি তোমাকে যেখানে পাবো সেখানেই ক্লাস করাবো।হোক সেটা রাস্তা,ড্রয়িং রুম,অফিস বা বেডরুম। এখন তোমার ইচ্ছা তুমি কোথায় ক্লাস করতে চাও।
আশমিনের কথা শুনে ক্রুর হাসলো নূর। আশমিনের চোখের দিকে তাকিয়ে সে ও ফিসফিস করে বললো,
— অনেক বড় টিচার হয়ে গেছেন মনে হচ্ছে? তা কয়জনের সাথে ইন্টিমেন্ট হয়ে এই অভিজ্ঞতা অর্জন করলেন? প্রোটেকশন নিয়েছিলেন তো?দেখা গেলো এইচ আই ভি পজেটিভ হয়ে বসে আছেন।আমি আবার নিজেকে নিয়ে খুব প্রোটেকটিভ।আগে মেডিকেল চেকাপ করিয়ে আসুন মন্ত্রী সাহেব।ক্লাসের কথা নাহয় আমরা পরে ভাববো।
আশমিন শান্ত চোখে তাকালো নূরের দিকে। মলিন হেসে ক্লান্ত গলায় বলল,
— সেটা তো তুমি চার বছর আগেই দেখে গিয়েছো নূর।আমার চরিত্র সসম্পর্কে সার্টিফিকেট তো সেদিন ই দেয়া শেষ। তবে আজ এতো প্রশ্ন কেন?স্ত্রী হিসেবে আমার অর্ধাঙ্গিনী তুমি।আমার সবকিছু অর্ধেক তোমার।হোক সেটা এইচ আই ভি।
নূরের ঠোঁটে কয়েক মিনিটের লম্বা চুমু খেয়ে গলায় মুখ গুজে দিলো আশমিন। নূর চোখ বন্ধ করে শক্ত করে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে আছে।চোখের কোন বেয়ে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে আশমিনের কপালে পরলো।আশমিন নূরের গলায় ছোট ছোট চুমু দিয়ে সেদিন নূর আশমিনের যেখানে কামড় দিয়ে ছিল ঠিক সে জায়গায় আশমিন ও দাত বসিয়ে দিল।নূর হালকা আর্তনাদ করে উঠলেও সাথে সাথে ছাড়লো না আশমিন।কয়েক সেকেন্ড দাত দিয়ে কামড়ে ধরে রেখে আস্তে করে ছেড়ে দিলো।নূর কে নিচে নামিয়ে কামড়ের স্থানে আলতো করে চুমু দিয়ে মন্থর গলায় বলল,
— উইস ইউ ভেরি গুড লাক ফর ইউর ফার্স্ট ডে ইন অফিস।

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।