‘তুমি আদওয়ার সাথে ক্লিয়ারলি কথা বলো।কোনো কারনে,সে আপসেট।বিয়ে বিষয় টা সহজ না ইমান।মেয়েদের মনের কথা আরেক মেয়ে হয়ে আমি কিছুটা হলেও বুঝতে পারি।’
মায়ের কথায় ইমান মায়ের পাশে এসে বলল, ‘মা।প্লিজ ভুল বুঝো না।ওর আর বয়স কত!আজ একটা কারনে ও কেঁদেছে,আপসেট ছিলো,তাই তোমাদের সাথে তেমন কথা বলেনি।’
‘তুমি সিওর তো ওর ব্যাপারে?’
‘হ্যাঁ,অবশ্যই।তুমরা নিশ্চিতে যেতে পারো।’
‘পরে পস্তিও না শুধু।’
বিনাবাক্যে মায়ের রুম থেকে চলে এলো ইমান।রুমে এসে আদওয়ার নাম্বারে অনবরত কল করলো।কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো সাড়া নেই।শেষ বার আন্টি কল ধরে বললেন, আদওয়া অনেক আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে।
নির্ঘূর আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে।আদওয়া কিছু একটা তো লুকাচ্ছে।আজ এতো কান্নার কারণ,আর কয়েক সপ্তাহের ওর চেইন্জ টা খুব ভাবাচ্ছে ইমানকে।যত যাই হোক,শেষ পর্যন্ত ,এই তারাটা যেনো আমার একান্তই হয়!
****
দুজনের একসাথে খাওয়া শেষে আরহাম তাকে গিয়ে ঘুমাতে বললেন।দোতলায় উঠেও পুনরায় নেমে এলো সে।পুরো দোতলা জুড়ে শুনশান নিরবতা, আরহাম নিজের রুমে থাকলেও একটু সাহস থাকতো বাট ওখানে একা থাকার সাহস না থাকায় মাইমুনার রুমেই শুয়ে পড়লো সে।
রাত প্রায় দূটোর দিকে আরহাম একবার রুমে গিয়ে দেখলেন, হাফসা নেই।নিচে এসে খুঁজ নিতে দেখলেন,দূজনে একসাথে শুয়ে আছে।আরহাম মুচকি হাসলেন। ড্রীম লাইটের আবছা আলোয় উনার প্রিয়তমা দূই অর্ধাঙ্গিনীর দিকে তাকিয়ে রইলেন অনেক্ক্ষণ!
সাহরিতে আরহাম নিজেই খাবার রেডি করে এসে ডাকলেন সবাইকে।খাবার ওভেনে গরম করে নিয়েছেন।হাফসা অবশ্য ঠিক টাইমেই উঠে যেতো,খাবার রেডি করে সবাইকে নিজেই ডাকতো,কিন্তু আরহাম ওর এলার্ম ওফ করে রেখেছেন।এমনিতেই প্রায় একটা পর্যন্ত আরহামের সাথে বাবার পাশে ছিলো মেয়েটা।একটু তো রেস্ট দরকার।
******
সকালে প্রায় আটটার দিকে যখন মাইমুনার ঘুৃম ভাঙ্গলো,তখন বুঝলো উনার পাশে কেউ আছে।পাশ ফিরে দেখলেন আরহাম।তারপর হাফসা।মাইমুনা হাফসাকে চিমটি দিতেই সে জাগলো।মস্তিষ্ক সচল হলে,সেও বুঝলো আরহামের অবস্থান।মাইমুনা হাফসা দূজনই দূজনের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো।
সেই হাসির ঝংকারে আরহাম চোখ কুঁচকালেন।আধো চোখ খুলে দূজনকে দেখে আবারো ঘুমিয়ে গেলেন।
উনার লাল চোখজোড়া দেখে বুঝা যাচ্ছে, রাতে ঘুম হয়নি উনার।সাহরির আগ পর্যন্ত বাবার রুমেই ছিলেন।কেউই আরহাম কে আর ডাকলো না।
মাইমুনা হাফসা পুনরায় মুখ চেপে হাসলো।ঘুমালেন ঠিক আছে,বাট দূজনের মাঝে এসে?মানুষটা এত ভালোবাসা কোথায় লুকিয়ে রাখেন!
46★
৮০
সকালে আরহামের কাপর ধুয়ে দিয়েছিলো হাফসা।রশ্মিতে গুণে দেখলো,সাদা রঙ্গের সাতটি শার্ট।একই মাপের,একই ডিজাইনের।আরহাম বেশীরভাগ সাদা রঙ্গের কাপর পড়েন।কারণ সাদা রঙ্গ সবচেয়ে উৎকৃষ্ট এবং পবিএ।
আজকে ২৭শে রামাদ্বান।আজ হাফসার বাড়িতে ইফতারের আয়োজন।বিকালে রওয়ানা দিবেন।কোনো এক কারণে হাফসার খারাপ লাগছে।মা-বাবার কথা মনে পড়ছে খুব।মায়ের চেহারাটা মনে নেই,বাবার মনে আছে একটু একটু।বাবা তাকে কোলে নিয়ে কোরআন তিলাওয়াত শুনাতেন।আর কখনো সেই সুন্দর সময়টা আসবে না!পেশায় তিনি একজন সাইকোলজিস্ট ছিলেন।
আরহাম আজ সবার জন্য ঈদের গিফট এনেছেন।আম্মু পছন্দ করে দিয়েছেন।আরহাম হাফসাকে বারবার বলেছেন, তাঁর পছন্দ বলতে।ওর উত্তর ছিলো, আপনার চোখে যা সুন্দর, আমার চোখেও সেটা সুন্দর।
হাফসাকে খুঁজতে খুঁজতে একেবারে হাঁপিয়ে ছাদে উঠলেন আরহাম।তাকে পিলারের এক কোণায় বসে থাকতে দেখে আরহাম এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এখানে কি করছেন?’
হাফসার মলিন দৃষ্টি তাঁর দিকে পড়তেই আরহাম পাশে বসে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি হয়েছে?মন খারাপ কেন?’
হাফসা মাথা নাড়ায়।
আরহাম আবারো জিজ্ঞেস করলেন, ‘কিছু তো হয়েছে। বলুন আমাকে।’
‘কিছু না।’
‘গিফট পছন্দ হয়নি জানি।আমার পছন্দ ভালো নয়।’
‘খুব পছন্দ হয়েছে।’
‘আপনাকে মন খারাপ দেখতে ভালো লাগে না।’
‘আমার মা-বাবা যদি বেঁচে থাকতেন!’
হাফসার আক্ষেপের সুরে আরহাম ব্যাথিত হলেন।ওর গালে হাত রেখে বললেন, ‘উনাদের দূনিয়ার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে।আমাকে আপনাকেও তো যেতে হবে তাই না।আজ হোক কাল হোক!মন খারাপ করবেন না।দোয়াহ করুন উনাদের জন্য।
‘আপনার আগে যদি আমার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়?আপনি কষ্ট পাবেন?’
আরহাম ঠোঁট কামড়ে একদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলেন হাফসার দিকে।তারপর হাফসাকে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে রইলেন।এমনভাবে ধরেছেন, যেনো কেউ একজন হাফসাকে নিতে চাইছে।ছাড়লেই তাকে হারিয়ে ফেলবেন।হাফসা হেসে ফেললো।বলল, ‘আচ্ছা, চলুন।নিচে যাই।’
*****
সময়টা দূপুরের।আজকে কিছু এতিম মিসকিনের ইফতারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।বাইরে রান্না হচ্ছে বড় বড় পাতিলে।বাবা-ই সবকিছু তদারকি করছেন।হাফসা যখন বারান্দায় আসলো,তখন চোখ গেলো,নিচে কামরাঙ্গা গাছের নিচটায়।টাইলসের ব্রেন্চে আরহাম চুপচাপ বসে আছেন।বেশ কিছুক্ষণ পর হাফসা আবার কোনো এক প্রয়োজনে বারান্দায় আসতে দেখলো,আরহাম এখনো আগের মতোই বসে আছেন।হাফসা বুঝলো না ওনার হঠাৎ এমন চুপচাপ হয়ে যাওয়ার কারন।সকালে হয়তো উনাকে ও কথা বলা উচিত হয়নি।নিচে নেমে মায়ের পাশে গিয়ে বসে রইলো সে।আম্মু তখন কুরআন পড়ছিলেন।হাফসাকে দেখে কুরআন পড়া শেষ করে ওর মাথাটা একেবারে নিজের কোলে নিয়ে এসে শুয়ালেন।তাতেও হাফসার কোনো হেলদোল নেই।অথচ অন্যসময় হলে কথার বুলি ফুটতো তার মুখে।ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার মা-বাবার কথা মনে পড়ছে?’
হাফসা অবাক নয়নে তড়িৎ মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘আপনি কীভাবে বুঝলেন? ‘
‘মেয়ের মনের কথা বুঝি বুঝা যায় না!সকাল থেকে খুব মন খারাপ করে আছো।’
হাফসা আর উত্তর দেয় না।আরো ঘনিষ্ঠভাবে মাকে জড়িয়ে ধরে রয়।মিনিট পাঁচেক পরে আরহাম আম্মুর রুমে আসতে দেখলেন, হাফসা আম্মুর কোলে ঘুমাচ্ছে।তিনি আর না এসে মাইমুনার রুমে গেলেন।
মাইমুনা তখন সবেমাএ শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে।আরহামকে দেখে একটু ইতস্তত বোধ করলো।উনার অস্বস্তিতে এক বালতি পানি ঢেলে আরহাম ইচ্ছে করে নিজেই ওর চুল খুলে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়ে দিতে লাগলেন।
আয়নায় চুল ড্রাই করতে করতে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এই রামাদ্বানে আপনার স্পেশাল দোয়াহ কি ছিল?’
মাইমুনা নির্লিপ্তভাবে জবাব দেন, ‘আমার আগের সুখগুলো ফিরে পাওয়া।’
আরহাম মাইমুনার কথার প্রসঙ্গ সম্পূর্ণ এড়িয়ে বললেন, ‘মা-বাবা কেমন আছেন?’
‘আলহামদুলিল্লাহ।’
‘আপনার মামা চলে গেছেন?’
‘হ্যাঁ,২৫ তারিখ ফ্লাইট হয়েছে।কথা হয়েছে বিমানে উঠার আগ পর্যন্ত….’
কথা শেষ করবার আগেই আয়নার দিকে চোখ গেলো তাঁর।আরহাম থমথমে মুডে তাকিয়ে আছেন।মাইমুনা বুঝে,মামার সাথে ওর ভালো সম্পর্ক আরহামের পছন্দ নয়।তবুও মুখ ফসকে এত কথা বের হয়ে গেলো।
‘স্ স সরি।’
‘তিনটায় বের হবো।সময় কাছাকাছি প্রায়।রেডি হয়ে নিন।’
বলে আরহাম চলে গেলেন।মাইমুনার নিজের প্রতি নিজের চরম রাগ হলো।আজকের দিনে অন্তত উনাকে অসন্তুষ্ট করা উচিত হয় নি।যতবারই আরহাম নিজ থেকে আসেন,ততবারই কোনো কোনো টপিকে মামার বিষয়টা উঠবেই!সম্পর্ক টা যখন একটু একটু করে ঠিক হবে,তখনই একটা প্রবলেম ঘটবেই!
যাওয়ার সময় মাইক্রোতে আম্মুর পাশে বসলেন আরহাম।বাবা সামনে।তারপর আম্মু,আরহাম। তারপর হাফসা মাইমুনা।
ফ্রন্ট মিররে আরহাম ঘনঘন হাফসার দিকে তাকাচ্ছেন যে কালো গ্লাসের বাইরে একমনে তাকিয়েই আছে অনেকক্ষণ যাবত।আজকে তাঁর মায়ের মৃত্যু তারিখ পড়ে আরবি মাস অনুযায়ী।এজন্য তাঁর আকাশে মেঘ।
আরহামের একটুও ভালো লাগছে না হাফসার মলিন চেহারা দেখতে।ফুটফুটে,ছটফটে হাসিখুশি মেয়েটাকে মলিন চেহারায় একদমই মানায় না।তাকে হাসলে সদ্য ফোঁটা ফুলের মতো লাগে,তবে আজ সে ফুল নির্ঝর।
যাএা যখন মধ্যপথে,তখন মাইমুনা ঘুমে কাত।সিট থেকে বারবার হেলে পড়ছেন গাড়ির কাঁচে।ব্যাথায় তাঁর কপাল কুঁজিত হচ্ছে বারবার।
আরহাম হাত বাড়িয়ে কাঁচে এলিয়ে রাখলেন।এখন মাইমুনা আরহামের হাতে হেলান দিয়ে ঘুমুচ্ছেন।
ঘুম যখন হালকা হয়ে এসছে,তখন হঠাৎ চেতন ফিরলো মাইমুনার।ঘুমের মধ্যে বুঝলো সে বেশ আরামের একটা জায়গায় শুয়ে আছে।কিন্তু গাড়িতে বিছানা কোথায় পাবে।আস্তে আস্তে যখন চোখ মেলে তাকালো,তখন বুঝলো তাঁর অবস্থান।আরহামের বুকে মাথা লাগিয়ে শুয়ে ছিলো সে।আরহামের দিকে পিঠপিঠ করে তাকালে আরহামও তাকালেন।
অন্যসময় হলে ওর কপালে সুদীর্ঘ একটা চুমু দিয়ে জিজ্ঞেস করতেন, ‘ঘুম ভালো হয়েছে?’
কিন্তু এবার আর কিছুই বললেন না।একরাশ মন খারাপ নিয়ে যখন ভালো করে চারদিক দেখলো,বুঝলো সে তো হাফসার পাশে ছিল।এখানে আসলো কেমনে?
পিছনে তাকিয়ে দেখলো, হাফসার কোলের মধ্যে আরাম করে শুয়ে আছেন আম্মু।আর হাফসা চুপচাপ।এই চঞ্চল মেয়েটাকে আজ চুপচাপ দেখতে মাইমুনারও ভালো লাগছে না।
হাফসা, আম্মু আর মাইমুনা কে নামিয়ে আরহাম ড্রাইভারকে নিয়ে যখন বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে হাফসার আম্মু আব্বুর কবর জিয়ারতে যেতে চাইলেন,তখন হাফসা খুব করে অনুরোধ করলো তাকে নিয়ে যেতে।আরহাম প্রথমে মানলেন না, কিন্তু শেষমুহুর্ত যখন হাফসার চোখে পানি দেখলেন, আর না করতে পারলেন না!
গাড়ি দাঁড় করানো রোডে।কিছু দূরেই আরহাম, আহমাদ মুসতাকিন আর আব্বু জিয়ারত করলেন।দীর্ঘ দোয়াহ শেষ করে আব্বু আর আহমাদ মুসতাকিন রোডের পাশের ক্ষেত নিয়ে আলোচনা করতে করতে হেঁটেই বাড়ির দিকে এগোলেন।আরহাম যখন গাড়ির পাশে আসলেন, তখন শুনলেন উমায়ের এর কান্না।দ্রুত গাড়িতে এসে দেখলেন হাফসা মুখ চেপে কাঁদছে।আরহাম তাকে বুকে জড়িয়ে সান্ত্বনা দিতে লাগলেন।মা-বাবার জন্য এর আগে উমায়ের কে এত কাঁদতে দেখেননি উমায়ের।
আজ সে খুব করে কাঁদলো।প্রিয় মানুষটার বুক ভিজলো তাঁর অশ্রুতে।একটাসময় নিজ থেকেই শান্ত হয়ে গেলো সে!অথচ তাকে দেখে বুঝার উপায়ই নেই,এতক্ষণ তাঁর বুকচাপা আর্তনাদে আরেকজনের ভেতর চুরমার হয়ে যাচ্ছিলো!
47★
৭১
ইফতার শেষেই আরহাম চলে গেলেন। তারবীহের টাইম একটু পিছিয়েছেন।স্থানকেন্দ্রিক মসজিদ হওয়ায় মুসল্লি বেশী।ইশার আযানের মধ্যেই উনাকে পৌঁছতে হবে কাঙ্খিত জায়গায়।
*****
তারাবীহের নামাজ শেষে সবাইকে চা দিয়ে আসলো হাফসা।ভেবেছিলো আজ আরহাম যাবেন না।অন্যকেউ একদিন পড়ালেই তো হয়!বাট এতো জার্নি হবে জানলে ইফতাররির আয়োজন টা কেনসেল করিয়ে দিতো সে।
ফোন হাতে নেওয়া মাএই উনার টেক্সট আসে,
‘আফওয়ান।’
‘কেন?’
‘আজকেও আসতে হলো।’
‘আপনার বেশী কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’
‘উহু,মন ভালো হয়েছে?আরও কেঁদেছেন?’
‘কাঁদিনি।’
‘কি করলে আপনার মন ভালো হবে বলুন তো।আমি চেষ্টা করব।’
‘আমার মন ভালো আছে।তাড়াতাড়ি ফিরলেই হবে।’
‘জ্বী প্রিয়তমা।’
হাফসা লজ্জা পেলো।ভাগ্যিস সরাসরি শব্দটা বলেননি।নয়তো লজ্জায় কোথায় মুখ লুকাতো সে!
হাফসার আর টেক্সট না আসায় ঠোঁট কামড়ে হাসলেন আরহাম।লজ্জা পেয়ে কোথায় লুকিয়েছেন কে জানে!
মাইমুনার সাথে তাসফি ছিলো এতক্ষণ।রাদ’এর কথা কথায় কথায় শুনেছিলেন তিনি।আজকে তাসফির কাছ থেকে পুরো কাহিনী শুনে খারাপ লাগলো উনার।এটা জেনে আরও খারাপ লাগলো যে,রাদ এখনো হাফসার অপেক্ষায়!কিন্তু যত যাই হোক পরিস্থিতি, আরহাম হাফসাকে কখনো ছাড়বেন না।
****
আরহাম আসার পর ডিনার শেষে বিছানা গুছিয়ে দিয়ে মায়ের সাথেই শুয়ে পড়েছে হাফসা।মাইমুনা বলল, ‘তুমি শাহ এর কাছে যাও।আমি আম্মুর সাথে ঘুমাবো।’
‘আপনি গিয়ে ঘুমান।আপনাকে না দিয়ে আসলাম পাশের রুমে।উনি নিচে।চলে আসবেন।ভয় পাচ্ছেন আপু?আমি আসব?’
‘শাহ এসেছেন, বলেছেন তুমার সাথে প্রয়োজনীয় কথা আছে।ও রুমে যাও তুমি।আমি এখানে ঘুমাবো।’
মাইমুনার কথা বিনা দ্বিধায় বিশ্বাস করে পাশের রুমে গিয়ে দেখলো আরহাম নেই।হতাশ হয়ে রুমে যেতে চাইলে দেখল, মাইমুনা মাকে জড়িয়ে ধরে হেসে বললেন, ‘আফওয়ান।আমাকে আর উঠতে বলো না প্লিজ।’
মাইমুনার চালাকি বুঝে বোকা হাসি দিয়ে রুমে ফিরে যেতেই দেখলো আরহাম দরজায় দাঁড়িয়ে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন ওর দিকে।
‘কি?’
‘কীভাবে আমার থেকে দূরে থাকা যায়,আলাদা ঘুমানো যায় ওই চিন্তা থাকে সব সময়?’
‘হ্যাঁ ন্ না এরকম কেন….’
‘মানুষ তোতলানোর সময় মিথ্যে টাই বেশী বলে।’
হাফসা চুপচাপ গিয়ে শুয়ে পড়ে।
আরহাম পাশে গিয়ে বললেন, ‘ঘুম পেয়েছে? ‘
‘উহু।’
‘চলুন চাঁদ দেখি আজ।’
আরহামের আবদার রাখতে দূজনে গিয়ে ছাদে উঠলো।
হাফসাকে পেছন থেকে জড়িয়ে চাঁদটার দিকে ইশারা কে বললেন, ‘আকাশের চাঁদ সুন্দর না আমার চাঁদ সুন্দর?’
‘আকাশের চাঁদ।’
‘আমার চাঁদ।’
হাফসা কিছুসময় দৃষ্টি আকাশের দিকে স্থির রেখে
‘মরে গেলে মানুষ তাঁরা হয়ে যায়।এটা কি সত্যি? ‘
আরহামের ব্যথিত দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন হাফসার দিকে।সারাদিনের কান্না দেখার পরও কি এখন মন খারাপ দেখতে হবে!উনি কি বুঝেন?উনার মন খারাপে আমার মস্তিষ্ক এলোমেলো হয়ে যায়!আপনার প্রতি ফোঁটা চোখের পানি আমার হৃদয়ের রক্তক্ষরনের সমপরিমাণ যন্ত্রণা!
হাফসাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘সারাদিন কেঁদেছেন।মন খারাপ করে থেকেছেন।এখন অন্তত মন খারাপ হয়ে থাকবেন না।আমার কষ্ট হয়।’
হাফসা আরহামের শার্টের ভাঁজ থুতনী দিয়ে সরিয়ে উনার মুখশ্রীর দিকে তাকালো।উনাকে মলিন দেখাচ্ছে।হাফসা ভেতরের তুমুল যন্ত্রণাদায়ক অনুভূতিগুলো হাসিতে চাপা দিয়ে বলল, ‘আচ্ছা আপনার কথা রাখলাম।’
আরহাম ফিসফিসয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘স্পেশাল দিনে আল্লাহর কাছে স্পেশাল চাওয়াটা কি ছিলো?’
হাফসা নিজের একান্ত মোনাজাতটা মনে মনে আওড়িয়ে ফিসফিসিয়ে উত্তর দিল, ‘সিক্রেট।বলা যাবে না।’
আরহাম ঠোঁট উল্টে অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন।হাফসা হেসে জিজ্ঞেস করলো, ‘আপনার কি ছিলো?’
‘আপনি।’
‘মানে?’
‘মানে আমার জীবনের সাথে জড়ানো প্রিয় মানুষগুলো যেনো হারিয়ে না যায়।আর,ফিরদাউসে একসাথে থাকতে চাই তাদের সাথে।’
‘এত্ত সুন্দর দোয়া!’
‘আজকে আমার কাছে কিছু একটা চাইতে পারেন,ফিরিয়ে দিবো না।’
‘উমমম….ভেবে বলবো।’
ছাদের দোলনায় গিয়ে বসলেন দু’জনে।চাঁদের পরিপূর্ণ আলোয় চারপাশটা পরিষ্কার।কিছুক্ষণের মধ্যেই হঠাৎ বিনা বার্তায় বৃষ্টির আগমন।ভ্যাপসা গরমে এক পশলা বৃষ্টির জন্য খা খা করা মরুর বুক ভিজছে।হাফসা অন্যমনষ্ক ছিলো, আরহামকে কি বলবে?যে আজ মন খারাপ বা কাঁদার কারণ শুধুই মায়ের মৃত্যু তারিখ বলে নয়,অজানা একটা কারণ যার, কারণে তাঁর হৃদয় ছিঁড়ে ফেড়ে যাচ্ছে যন্ত্রণায়।এমন কেন হচ্ছে সে নিজেও জানে না।
তখুনি আরহাম হাফসার হাত টেনে বলতে লাগলেন, ‘ভেতরে আসুন।ভিজে যাবেন তো!’
‘আজকে ভিজব।’
আরহাম হাফসার মাথার ওপর হাত দিয়ে বৃষ্টি ঢাকতে এদিক ওদিক তাকিয়ে ব্যস্ততার সুরে বললেন, ‘এমন আবদার আমি মানবো না।ঠান্ডা লাগবে আপনার।’
‘আপনি বলেছিলেন আপনার কাছে কিছু একটা চাইতে। ফিরিয়ে দিবেন না।আমি বৃষ্টি চাইলাম?’
আরহাম ভেজামুখে কিছুক্ষন হাফসার দিকে তাকিয়ে চুপ হয়ে গেলেন।মৌণতাই উনার নীরব সম্মতি।