অপেক্ষা – মাহা আরাত | পর্ব – ৩০

14 Min Read

রুদ্র ব্যস্ত হয়ে বলে,’কি হলো?চিৎকার করলে কেন?’

হাফসার উত্তর না পেয়ে রুদ্র বুঝে নিলো এর কারণ।অবাক হয়ে বলল,’তুমার খাওয়া গ্লাস থেকে পানি খেতেও দিলে না।এত ঘৃণা?আরে গ্লাসে পানিই তো খাচ্ছিলাম,তোমার ঠোঁট তো আর খাইনি।’

*****
নির্জন,নিস্তব্ধ জায়গা কিন্তু কোনো এক মসজিদ ফযরের থেকে ধীরসুরে আযান শোনা যাচ্ছে।
হাফসা আযানের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু ক্লিয়ারলি শোনা যাচ্ছে না।চোখ তুলে তাকাতেই সেই চোখে জমানো ঘৃণা রুদ্রের বুকে গিয়ে লাগলো।গালে হাত দিয়ে একনজরে দেখেই যাচ্ছিলো হাফসাকে।

হাফসা নরম সুরে বলল, ‘আমার বাঁধন টা খুলে দিন। আমি নামাজ পড়বো’

‘উঁহু, হবে না।’

‘প্লিজ।আমি কথা দিচ্ছি, নামাজ পড়েই আবার আগের মতো বেঁধে রাখবেন আমি বাঁধা দিব না।’

‘ইসসস এত কিউট করে আবদার করো না।ফেলতে পারবো না।’

‘প্লিজ খুলে দিন। নামাজটা অন্তত পড়তে দিন।’

‘যতই মিনতি করো,খোলা যাবে না বিউটিফুল।’

রাগে চোখে পানি চলে আসলো হাফসার।নামাজ পড়ার জন্য বারবার অনুরোধ করলো,রুদ্র সেই সুযোগ দিলো না।মানুষ এতটা অমানুষ কি করে হয়!

বেশ কিছুক্ষণ পর রুদ্র জিজ্ঞেস করলো, ‘আচ্ছা আরহামকে তুমি ভালোবাসো?’

হাফসার উত্তর না পেয়ে আরও বারকয়েক জিজ্ঞেস করলো,তাও ওর কোনো উত্তর নেই।

‘তুমার কি সম্পর্কের ভাই অহহ আই সী রাদ,ওকে ভালোবাসো?’

‘না।’

‘তাহলে আরহামকে ভালোবাসো।আচ্ছা!আরহামকে ভুলে যাও।’

……

‘আমাকে একটু ভালোবাসার ট্রাই করো না!’

…….

‘জিজ্ঞেস করেছিলে তুমাকে কেন কিডন্যাপ করেছি।বলি তাহলে,তুমাকে আমার পছন্দ।আই মিন আই ফেল ইন লাভ উইথ ইউ।তুমাকে প্রথম দেখেছি ছবিতে।মাইমুনা দিয়েছিলো,বিলিভ মি ছবিতে দেখেই আমি শকড।তখনই খুব ভালো লেগে গিয়েছিল , তারপরে বাস্তবে দেখলাম, ছবি থেকে রিয়েল লাইফে আরো সুন্দর তুমি।এত মায়া তুমার চেহারায়।তুমার যদি বিয়ে না হতো,তাহলে তুমার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে এসে বিয়ে করে নিতাম তুমাকে।বাট আফসোস!কিন্তু এখন বিয়ে করবো তুমাকে।’

শেষোক্ত কথা শুনে হাফসা তড়িৎ চোখ তুলে তাকালো। রুদ্র হেসে বলে, ‘দিল মে চোট লাগে হায়।’

‘আমাকে বিয়ে করতে আপত্তি কোথায়?আমি তো তুমাকে ভালোবাসি।সুখে রাখবো।আমার সাথে ইরান থাকবে তুমি। পরিপূর্ণ পর্দা করতে পারবে।তুমার কোনোকিছুতেই অবজেকশন দিব না আমি।শুধু আমাকে বিয়ে করতে ভালোয় ভালোয় রাজি হয়ে যাও।এত দেরি সহ্য হচ্ছে না বিউটিফুল।’

*******
রুদ্র চলে গিয়েছেন বেশ কিছুক্ষণ হলো।ভেন্টিলেটর থেকে আলো আসছে, সকাল হয়েছে। একটা দিন,একটা রাত সে বেখবর।কেউ-ই এটা ভালো চোখে দেখবে না।

আরহামের কথা ভীষণ রকম মনে হলো।গতদিনও এ সময় উনার বুকের মাঝে ঘুমাচ্ছিলো সে।আমি একটু আড়াল হলেই যে মানুষটা অস্থির হয়ে যায়, আমার একদিনের অনুপস্থিতিতে উনি কী করছেন!আম্মু কি জেনেছেন!কাকামণি নিশ্চয়ই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন!এসব ভাবতেই তাঁর দুচোখ ফেটে কান্নার ফোয়ারা বইলো।রবের কাছে ফরিয়াদে সে এুটি রাখলো না!

আব্বু এসছেন হাফসার বাড়ি।আম্মু জেনেছেন রাতে। সেই থেকে তাঁর কান্না অস্থিরতার শেষ নেই।সেই ফযরের আযানের পর আরহাম বেরিয়েছেন এখন দুইটা বাজতে চললো উনার কোনো খোঁজ নেই।ফোন ও তুলছেন না।

*******
আরহাম একেবারে সন্ধ্যার পর ফিরলেন নিজের বাড়িতে।মাএ একদিনে উনার চেহারার অবস্থা কাহিল।একদিনে যেনো আটাশ বছরের আরহামের বয়স পাঁচ বছর বেড়ে গেছে।আম্মু ড্রয়িংরুমে বসে তাসবীহ পড়ছিলেন।আরহাম আসতেই দ্রুত এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কোথায় ছিলে সারাদিন?ফোন কেন ধরছিলে না?’

নিরুত্তর…

‘ইফতার করেছো?’

‘করেছি।’

অথচ আরহামের মুখটা শুকনো লাগছে।পানির বদলে যে কোনো কিছু তার গলা দিয়ে নামবে না,সেটা অন্তত আম্মুর জানা আছে।আরহামকে সোফায় বসিয়ে নিজের হাতে খাবার তুলে দিলেন, আরহাম দ্বিমত করলেন।

আম্মু এমনিতেই কাঁদো কাঁদো অবস্থা, তাই চুপচাপ খেতে লাগলেন।খাওয়ানোর সময় তিনি কাছ থেকে দেখলেন আরহামের চোখে পানি টলমল করছে।একেবারে অন্তিম সময়ে হুট করে উঠেই রুমে চলে গেলেন।

আর কেউ না জানুক,আম্মু জানেন উনার ছেলে কেমন।
আরহাম এখন ইচ্ছে মতো কাঁদবেন।দরজা লাগানোর শব্দ হলো,দূই দিনের জমানো অপ্রকাশিত কষ্টের ভার এখন একেক ফোঁটা অশ্রু হয়ে ঝরবে।

50★

৮৪
শেষ সাহরী টা কষ্টদায়ক ছিলো সবার জন্য।হাফসা যেন ছিলো পরিবারের খুশি।ও নেই,কারো মুখে হাসি নেই।

খাবার টেবিলে আব্বু জিজ্ঞেস করলেন, ‘কোনো খুঁজ ও কি পাওনি?কিছু একটা তো করা দরকার।’

আরহাম জবাব দিলেন না।

আম্মু হঠাৎ করেই কেঁদে উঠলেন। ‘হাফসাকে খুঁজে আনো যেখান থেকে পারো।আমার মেয়ে টা কোথায় হারালো।ওকে ছাড়া দম বন্ধ লাগছে।’

আরহাম গিয়ে আম্মুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘খুঁজে আনবো।দোয়া করুন।কাঁদবেন না আম্মু প্লিজ।’

উনার আর খাওয়া হলো না।হাত ধুয়ে উঠে রুমে চলে গেলেন।

******
সকালের আলো ফুটেছে,তবে বৃষ্টির ঝুমঝুমানির আওয়াজ স্পষ্ট।রুদ্র তড়িঘড়ি করে রুমে ডুকে মাথা ঝাড়তে লাগলেন। বাইরে থেকে আসছেন।ম্যাড টাওয়াল এগিয়ে দিলে রুদ্র মাথার পানি মুছতে মুছতে হাফসার দিকে তাকিয়ে ম্যাডকে বললেন, ‘যাও এখান থেকে।’

আধভেজা শার্ট খুলে চেয়ারের হাতায় রেখে হাফসার মুখোমুখি বসলেন।টিশার্টের ভাজ ঠিক করতে করতে বললেন, ‘তুমি আমার দিকে তাকাতে দোষ কি?আমি তো খারাপ না দেখতে।’

হাফসা নিরুত্তর।

রুদ্র ঠিকঠাক হয়ে বসে বলেন, ‘আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।আজ।’

হাফসা দাঁতে দাঁত চেপে বলে,’কখনো না।’

রুদ্র রেগে হাফসার গাল চেপে ধরে বলে, ‘এত কিসের তেজ তর?বিবাহিত হওয়ার পরও বিয়ে করতে চাইছি।ওই আরহামের মাঝে কি পেয়েছিস?’

ব্যাথায় চোখমুখ খিঁচে রয়েছে হাফসা।লোকটার স্পর্শে ওর গা ঘিনঘিন করছে।

রুদ্র এবার একটু দম নিয়ে ছেড়ে বলল, ‘যত তাড়াতাড়ি রাজি হবে,এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাবে।এ জায়গাটা আর সেইফ না,বলেই কি ভাবতে ভাবতে অন্যমনষ্ক হয়ে পড়লেন….

কিছুক্ষণ পর হুষ ফিরতে বললেন, ‘ওহ আই সী!কাল ঈদ।খুশির দিন, আমার জন্য সব থেকে বড় খুশি পাওয়া হবে তুমি।কাল তুমাকে বিয়ে করবো।না করতে চাইলে, তুমাকে কীভাবে রাজি করাতে হয় আমার জানা আছে। রাজি আছো বলো?’

‘না।’

রুদ্র ফিচেল হেসে বলে, ‘তুমার কাকামণি মাএ গতকালে হসপিটাল থেকে রিলিজ হয়েছেন।তুমি যদি রাজি না হও,তুমার বাবাসম কাকামনি আর ঈদের দিনের ভোর দেখতে পারবে না।’

রুদ্রর সরাসরি প্রাণঘাতী হুমকির কথা শুনে হাফসার গলা শুকিয়ে এলো।এ মুহুর্তে খুব করে মনে পড়লো আরহামের কথা!যদি আসতেন! আমাকে এইখান থেকে নিয়ে যেতেন!

হাফসার তুলতুলে গালে রুদ্রর চোখ আটকে যায়।হুট করে এগিয়ে এসেই চুমু দিতে চাইলে হাফসা থুথু নিক্ষেপ করে।
রুদ্রর চোখমুখ শক্ত হয়ে যায় মুহুর্তেই।টিস্যু দিয়ে গাল মুছতে মুছতে বলেন, ‘আর মাএ একটা দিন। তারপর দেখো কি করি তুমার!’

*****
ফযরের নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে সোজা মাইমুনার রুমে আসলেন আরহাম।তিলাওয়াত শেষে মাইমুনা তখন ঘুমোনোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
আরহাম রুমে ডুকে বললেন, ‘আপনার ফোন কোথায়? ‘

‘কাবার্ডের ওপর।’

মাইমুনা দেখলেন, আরহাম ফোনে কিছু একটা চেক করে উনার ফোন দিয়ে স্ক্যান করলেন।তারপর বেরিয়ে গেলেন।

*****
হাফসার বাড়ির উদ্দেশ্যে চলছে গাড়ি।আরহাম গাড়িতে বসে ল্যাপটপে কিছু একটা করছেন মনোযোগ দিয়ে।অনেক খাটাখাটির পর রিকোভার করা কাঙ্ক্ষিত ইনফরমেশন কোনো এক নাম্বারে ইমেইল করে সিটে মাথা লাগিয়ে দিলেন আরহাম।উনার ধারণা যদি সঠিক হয়,তাহলে ওই ব্যক্তির কি করবেন তা ভাবতেই উনার রাগ বাড়তে লাগলো।

গাড়ি তখন হাফসার বাড়ির সংলগ্নে।বাবার অসুস্থতার খোঁজ নিতেই এখানে আসা।কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে ঠুং করে ফোনে একটা আড্রেস আসতে আরহাম ড্রাইভারকে বললেন, ‘আপনি ভেতরে যান।উনার খেয়াল রাখবেন’ বলে গাড়ি ঘুরাতে নিলে ড্রাইভার জিজ্ঞেস করলো,

‘আপনে একা..।যদি কোনো বিপদ হয়।’

‘হবে না ইনশা আল্লাহ।’

‘বাড়ি যাচ্ছেন? ‘

‘জ্বী না, ঢাকার বাইরে।’

আরহাম সিট বেল্ট বেঁধে দ্রুত গাড়ি ঘুরিয়ে নিলেন। ইতিমধ্যেই উনার কপালে ঘাম ঝরছে।নিকটস্থ থানার পুলিশকে ইনফর্ম করে একটা আননোউন নাম্বারে ফোন করে বললেন, ‘ওই লোকটাকে বেঁধে রাখুন।নাহলে ইনজেকশন দিন।আর যে গার্ল হেল্পার ছিলো,উনাকে ভেতরে পাঠিয়ে দিন।উমায়ের যেখানে, ওই রুমে যেনো কেউ না ডুকে।’

*****
হাফসাকে দেখামাএই থমকে গেলেন আরহাম।এই বুঝি উনার হৃৎপিন্ড পুনরায় সচল হয়েছে।এ কয়দিনে মনে হয়েছিলো,উনার অক্সিজেন কেউ শুষে নিয়েছে, এখন পুনরায় পরিপূর্ণ লাগছে।

পুলিশ তদন্তের জন্য এ রুমে ডুকতে চাইলে আরহাম কঠোরভাবে নাকোচ করেন তাদের।রুদ্রকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে পুলিশের হেফাজতে।

আরহাম কিছুই বললেন না।হাফসার দৃষ্টি বরাবরই নিচু।চেহারা মলিন।হাতে পায়ে কয়েকটা ব্যান্ডেজ দেখে অনুভব করলেন, হৃদয়ে কেউ যেনো বেয়নেট খুৃঁচাচ্ছে।কোনোমতে হাফসার আঘাতের চিন্হগুলো সহ্য করলেন। অতপর হাফসার হাত ধরে গাড়িতে নিয়ে গেলেন।

গাড়ি চলছে থানার উদ্দেশ্যে।ড্রাইভ করছেন আরহাম নিজেই।পেছনের সিট থেকে হাফসা বারবার আড়চোখে দেখছে, আরহামের চোখে পানি, কোনোমতে আটকে রেখেছেন।বারবার পলক ফেলে আড়াল করতে চাইলেও আবার ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে চোখ।

একজন গার্ড একটা শপিং ব্যাগ দিয়ে গেলেন থানার আগের রোডে।
আরহাম ব্যাগটা এগিয়ে দিয়ে বললেন, ‘ভেতরে যেতে হবে।বোরকা পড়ে নিন।’

থানায় ঢুকতেই আম্মুর ফোন।
আম্মু ব্যস্তসুরে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হাফসা তোমার সাথে তো?’

‘জ্বী আম্মু টেনশন করবেন না।’

হাফসাকে আলাদা রুমে রেখে আরহাম পারমিশন নিয়ে রুদ্রর জন্য বরাদ্দকৃত হাজতে ডুকলেন।

রুদ্রর দিকে তাকাতেই মাথার রগ দপদপ করে জ্বলে উঠলো আরহামের।
কিছুক্ষণ সময় নিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলেন।রুদ্রর সামনাসামনি বসে শান্তসুরে বললেন,’আমি তো আপনার কোনো ক্ষতি করিনি।’

রুদ্র রুক্ষ স্বরে বলল, ‘হাফসাকে আমাকে দিয়ে দাও।যা চাইবে…

‘উনি কোনো প্রোডাক্ট না যে আপনাকে হ্যান্ডওভার করব।সি ইজ এ্যা পিস ওফ মাই হার্ট।’

‘ওর সৌন্দর্যে পাগল তুমি।আর আমি ওকে ভালোও বাসি।’

রুদ্রের কথায় আরহামের রাগের সীমা ছাড়ালো।চোখ বন্ধ করতেই হাফসার ক্ষতগুলো আর মলিন চেহারা চোখের সামনে ভেসে উঠতে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,

‘কোন সাহসে আপনি আমার কলিজায় হাত দিলেন!
ছিহ!এত খারাপ নজর আপনার।আমি আপনাকে রেসপেক্ট করতাম,ওইদিন আমার স্ত্রীকে ভুল বুঝে আপনাকে বিশ্বাস করেছিলাম,নিজের প্রতিই ঘৃণা হচ্ছে।আমার জীবনে আর কারো প্রতি এমন কঠোর হইনি বাট আল্লাহ সুয়ার,আদালতে আমি নিজে আ্যাপিল করবো, আপনার সর্বোচ্চ শাস্তির।’

রুদ্রর গালের পাশ দিয়ে রক্ত পরছে,প্রথমে অস্বীকার করছিলো সব।এজন্য তাকে একটু আপ্যায়ন করা হয়েছে।

আরহামের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে রক্তমাখা অধরে অদ্ভুত ভাবে হেসে উঠলো।

বলল, ‘তোমার স্ত্রী দুইদিন আমার কাছে ছিলো।কি করে ভাবলে যে আমি তাঁর কোনো ক্ষতি করি নি।’

আরহাম হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিজের রাগ কমানের চেষ্টা করেই চলেছেন,

‘আই কিস হার লিপ।সো….

তাঁর গালে সপাটে চার আঙ্গুলের দাগ পড়ে।আরহাম হঠাৎ আঘাত করায় কিছুটা হকচকিয়ে গেলো রুদ্র।

‘আমি নীরব বলে, দূর্বল ভাববেন না।আর যদি কোনোদিন উমায়েরর দিকে তাকান পর্যন্ত,আপনার চোখ আমি উপড়ে ফেলবো।’

বলে জিদ্দে আরহাম রুদ্রর কলার টেনে গলায় ফাঁস দিয়ে বললেন, ‘উনাকে কেন স্পর্শ করেছেন?উনার গায়ে কেন হাত তুলেছিস তুই?’

গলা চেপে ধরায় রুদ্র খুকখুক করে কাশছে,মনে হচ্ছে, এখনি দম বন্ধ হয়ে যাবে।ঠিক ওই সময় দূজন জেল কয়েদি এসে আরহামকে পেছন থেকে টেনে সরালেন কোনোমতে।উনার হাত কাঁপছে,চোখ দিয়ে যেন আগুন ঝরছে,আর কিছুসময় এখানে থাকলে নিশ্চিত কোনো দূর্ঘটনা ঘটে যাবে বিধায় আরহাম কে নিয়ে বাইরে বেরোলেন তারা।

আরহাম কে এলোমেলো অবস্থায় দেখে হাফসা পাশে এসে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই কয়েদি বললেন, উনি রুদ্রের গলা চেপে ধরেছিলেন।হাফসা ভয়ে আঁতকে উঠে।আরহামের রাগকে ওর নিজেরও ভীষণ ভয় লাগে।এই ঠান্ডা মস্তিষ্কের মানুষটা হঠাৎ ই একদম এলোমেলো হয়ে যায়।

হাফসা কাঁপা কাঁপা হাতে আরহামের মুষ্টি করা হাতটা ধরতেই আরহাম জোরে জোরে কয়েকটা নি:শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করলেন।

গাড়িতে উঠে উনি কিছুক্ষণ বসে রইলেন চুপচাপ। মাথা থেকে রাগ কিছুটা কমলে,আচানক হাফসাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন।

*****
মুখোমুখি বসে আছে দূজন।বিকেলের হালকা রোদ্রের তাপ কাঁচ পেরিয়ে আদওয়ার চেহারার একপাশ চিকচিক করছে।ইমানের পলক পড়ে না।সে দেখছে তো দেখছে,তৃষ্ণা মিটে না।

আদওয়ার বাড়ি থেকে আসার পর দূজনের এই প্রথম মিট।বিগত এইদিন গুলোয় ইমান কলেজের গেটে,বাসার নিচে,লান্চটাইমে ক্যান্টিনে, এমনকি বাসায় এসে ড্রয়িং রুমে বসেও অপেক্ষা করে গেছে কিন্তু আদওয়া কোনো প্রকার কথাও বলেনি।শত শত ম্যাসেজ আনসিন হয়ে পড়ে আছে,ইমানের একের অধিক নাম্বারগুলো ব্লকলিস্টে পড়ে আছে,এত অবহেলার মাঝে হুট করে গতরাতে আদওয়ার থেকে পাওয়া ম্যাসেজে যেন ইমানের জমানো সব কষ্টের মুক্তিদান!

সে ছোটবাক্যে শুধু বলেছিলো,’বিকেল চারটা। কেইফ হোমস।’

এতক্ষণে জমে থাকা সব জড়তার রেস কাটিয়ে আদওয়া জোরে শ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করলো,’ইমান আমাকে ক্ষমা করে দিও।আমি তুমাকে বিয়ে করব না।’

ইমান মলিন হাসলো।আদওয়া আশ্চর্যান্বিত হলো।যেখানে এই ছেলেটার কান্না চলে আসার কথা ছিলো,অথচ ইমান একেবারে চুপচাপ।

অধরের মিথ্যে হাসির সমাপ্তি টেনে বলল,’তা ওই সেলিব্রেটি আলেমকে বিয়ে করবে?’

‘ত্ ত তুমি জানলে কী করে?’

‘দিনে ১০০ বার সার্চ করো উনাকে।তাই বললাম।’

‘তুমি কো্ কোথা থেকে….

‘তুমার আইডির পাসওয়ার্ড আমার কাছে। এটাও ভুলে গেলে?’

আদওয়া শুকনো ঢুক গিলে।ইমানকে দেয়া প্রতিশ্রতি এভাবে মাঝপথে ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছে ছিল না ওর।কিন্তু মন কি বারণ বুঝে!

‘আইডির পাসওয়ার্ড টা চেন্জ করে দিও শমপাপড়ি।কষ্ট লাগে তো সার্চ লিস্টের টপে বারবার উনার আইডি দেখতে।গন্তব্য যদি কখনো বদলে, ফিরে এসো আমি অপেক্ষায় থাকবো তুমার।’

ইমান দেড় বছরের পিছুটান ফেলে চলে গেলো।আদওয়া জানে, এখন সে মন মতো কাঁদবে।আদওয়ার কানে কেবল বাজলো,’শমপাপড়ি!ইমান তাকে ভালোবেসে ডাকতো শমপাপড়ি।’

******
মসজিদ থেকে ফিরে রুমে এসে আরহাম চুপচাপ ঘড়ি খুলছেন, টুপি খুলছেন।আয়নায় আড়চোখে উমায়েরকে দেখছেন।সে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আসার পর থেকেই সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত মায়ের কাছে ছিলেন।ইফতার শেষে মাগরিবের নামাজ পড়ে রুমে আসছেন।

একটু পর আরহামের দিকে এগুলো সে।
ওর চোখে পানি ছলছল, আরহাম কথা বলছেন না কেন?উনি কি রেগে আছেন বা ভুল ধারণা নিয়ে বসে আছেন?

উমায়েরকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষন করে বললেন, ‘কান্না করা হচ্ছে কেন? আমি কি কিছু জিজ্ঞেস করেছি?’

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।