61★
৯৮
জামাই নিয়ে শ্বাশুড়ির আহ্লাদের শেষ নেই।সন্ধ্যার পর অপরিমেয় আপ্যায়ন শেষে বাবা,দাদুর সাথে খোশগল্পে মেতে উঠলেন।অন্যদিকে আরেক চাঁদের জন্য মনটা ছটফট করছে,একটা খোঁজ না নিলে সে নীরব অভিমানে গা ভাসায়।
মনের অব্যক্ত কথা,আর হৃদয়ের অপ্রকাশিত অনুভূতি গুলো বুঝার অসীম ক্ষমতা আছে আরহামের।
নারী মানেই এক রহস্যময় চরিত্র!
খিলখিলিয়ে হাসির মাঝেও কিভাবে যে চুপটি করে মন খারাপ লুকিয়ে রাখবে তা তুমি কখনোই বুঝে উঠতে পারবে নাহ!
কিন্তু তাঁর গভীরতম ভালোবাসার ছুঁয়ায় প্রিয়তমার অভিমান বুঝে নেন প্রতিবার।
একটু সুযোগ খুঁজে কল দিতেই ওপাশ থেকে সুন্দর সালাম ভেসে আসে।
আরহাম খানিক চোখ বুজে হৃদয়ে শান্তি আস্বাদন করলেন।সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, ‘কেমন আছেন?’
হাফসা উওর দিয়ে পুনরায় প্রশ্ন করে বসলো,’আজকে থাকবেন তাই না?’
‘মাইমুনা রাগ করবেন না থ্..।’
‘আচ্ছা, থাকুন সমস্যা…’
‘মিস ইউ।’
হাফসা নীরবে হেসে বলে, ‘থ্যাঙ্ক ইউ।’
‘মিস ইউ সো মাচ।’
‘থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ।’
‘এখন কাছে থাকলে…
‘মিস ইউ টু মিস ইউ টু।’
‘উমম..কি খেয়েছেন সন্ধ্যার পর?’
‘এ এ এইতো ওই যে…
‘ওই যে?’
‘মানে আ আমি আসলে….
‘সত্যি বলুন।’
‘ক্ ক কিছু খাইনি।বাট..
‘ওকে।বাই।’
হাফসা ওপাশ থেকে উৎকন্ঠিত কন্ঠে বলে,’শুনুন না আমি….
মাইমুনা ফোন নিয়ে বললেন, ‘কি গো পিচ্চির আম্মু!কেমন আছো?’
হাফসা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।ওর শরীরে যে আরও একটা ছোট্ট অস্তিত্ব আছে, মাঝে মাঝে ভুলেই যায় সে।জড়তা কাটিয়ে বলে,’আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন আপু?আসবেন না?’
‘ইন শা আল্লাহ।আম্মু পাশে?’
‘হ্যাঁ দিচ্ছি…
******
ডিনারে পরিবেশ টা কেমন ছিমছাম লাগলো হাফসার।আব্বু ও বাসায় নেই।উনিও নেই।আম্মু এটা সেটা নিয়ে দিচ্ছেন তাকে।অথচ হাফসা পাশের মানুষটার খুব শূন্যতা অনুভব করলো।যেমন কাটা বেছে মাছ খাইয়ে দেওয়া,নিজের পাত থেকে গোশত তুলে মুখে দেওয়া কিংবা কখনো কম খেলে পরে আবার রুমে নিয়ে খাইয়ে দেওয়া।এই কেয়ারিং গুলো মিস করেছিলো খুব।মাএ কিছু সময় লোকটা সামনে নেই,তবু মনে হচ্ছে, হাফসার একার দূুনিয়া অপূর্ণ।ওর চোখের শান্তি,মনের শান্তি উদাও হয়ে গেছে।হাফসাকে আনমনা দেখতে আম্মু বললেন, ‘কি হলো খাচ্ছো না কেন?অন্য কিছু নিবে?কি দিব?’
‘জ্ জ্বী না আম্মু।কিছু লাগবে না।’
নীরব পরিবেশে আবার ভাঙ্গলো হাফসার প্রশ্নে, ‘আব্বু কই?’
মা চুপচাপ বললেন,’জানি না।কিছু বলে যান নি।’
‘আব্বু ইদানীং এত চুপচাপ, চিন্তিত কেন থাকেন?’
‘বললে তো বুঝতাম।’
*****
ডিনার শেষে মাএ রুমে ফিরলেন আরহাম।মাইমুনার সাথে বড়জোর মিনিট পাঁচেকের বেশী কথা হয়নি।এবারও রুমে এসে হতাশ হলেন।পিচ্চিবাহিনী ঘিরে রেখেছে তাকে।তাকানোটাও অবধি মেপে মেপে তাকাতে হচ্ছে,না চাইতেও বিকেলের কাহিনী চোখে ভেসে উঠছে।
আরহাম কিরানকে কাছে টেনে বললেন, ‘ঘুমাবে না?’
‘হুম ঘুমাবো তো।’
‘তাহলে ঘরে যাও।তোমার আম্মু তো অপেক্ষা করছে।’
‘কিন্তু আমি তো আম্মুকে বলে এসছি,আজকে আন্টিমণির পাশে ঘুমাবো আমরা।’
আরহাম হতাশ চোখে চেয়ে রইলেন মাইমুনার দিকে।তাকে যখন ভালোবাসার এতই মানুষ আছে,তাহলে আমার কেন এখানে আসা!
‘আচ্ছা ঘুমোও।’
বলে সোফাতে গা এলিয়ে দিলেন তিনি।
*****
ফযরের সুমধুর ধ্বনিতে ঘুম ভাঙ্গলো মাইমুনার।চোখ মেলে দেখলো আরহামের বুকের ভাঁজে যত্নে বাঁধা সে।উনার উষ্ণ আলিঙ্গনে নিজেকে আবদ্ধ দেখে অধর প্রসারিত হলো।আরহামের নাক টেনে ধরতেই চোখ কুঁচকে নেন তিনি।পরপর এমন আচরনে আরহাম হেসে ফেললেন।মাইমুনার হাতদূটো উনার হাতে বদ্ধ করে আবারো ঘুমোতে নিলেই মাইমুনা আরহামের বাহু কামড়ে ধরে।আউচ বলে উঠতেই বাঁধন আলগা হয়।লাইট জ্বালিয়ে উঠতে উঠতে বলে,’অযু করে এসে যদি এখনো বিছানায় দেখি,তাহলে….
‘আবার কামড়াবেন?’
‘হু।’
‘উঠে পড়েছি তো’
*****
সূর্য অস্তমিত হতে অল্প দেরি আর।মাইমুনাকে নিয়ে দূপুরেই বাসায় দিয়ে বাইরে গিয়েছিলেন আরহাম।যখন ফিরলেন,তখন কিচেনে উমায়ের এর ভয়েস শুনে একটু রাগ নিয়েই ভেতরে গেলেন। উমায়ের রসুন বাঁটছিলো।কোনোকিছু না বলে পেছন থেকে উমায়েরকে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটা ধরলেন। হাফসা চোখ বড়বড় করে একবার আরহামের দিকে তাকালো তো একবার পাশে থাকা কাজের গার্ল সার্ভেন্টের দিকে।আশ্চর্য! কি লজ্জা!লোকটা কি আশেপাশে মানুষ দেখলেন না হুট করেই কোলে তুলে নিলেন। মানুষ কি ভাববে!
রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে একেবারে হাফসাকে রুমে এনে ছেড়ে দিলেন। হাফসা কিছু বলতে যাবে অমনি শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে হাফসার ঠোঁটে চেপে বললেন, ‘নো মোউর ওয়ার্ডস।আর যদি কিচেনের আশেপাশে আপনাকে দেখি তাহলে পা ভেঙে রেখে দিবো।তখন গিয়ে হেল্প করিয়েন।’
বলেই বেরিয়ে গেলেন তো গেলেন ঠাস করে রুমের দরজা বাহির থেকে লক করে গেলেন।উনার রক্তিম চেহারা দেখে ভয়ের ছোটে হাফসা স্ট্যাচু হয়ে গিয়েছিল।উনার যাওয়ার পানে রাগী দৃষ্টি রেখে বলে, ‘অদ্ভুত লোক তো!কাজের মহিলাদের রান্না খাবেন না!আর আমাকেও রাধতে দিবেন না!তাহলে কে আপনাকে রান্না করে খাওয়াবে শুনি?’
******
ডিনারে দূজনকে মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছিলেন আরহাম।তখন বাবা ডুকলেন বাসায়।উনার মাথায় টুপি।ইশার নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়ে এখন রাত এগারোটা প্রায়।
বিগত কয়েক দিন ধরে,বাবার মনখারাপ আর দুশ্চিন্তামাখা চেহারা দৃষ্টি অগোচর হয় না আরহামের।খাবার খেয়ে সোজা বাবার রুমে গেলেন তিনি।স্বাভাবিক আলাপচারিতা শেষে হুটহাট বিহ্যাব চেন্জ হওয়ার কারন জিজ্ঞেস করলে বাবা সুন্দরমতো প্রশ্নটি এড়িয়ে চললেও আরহাম হাল ছাড়লেন না।বেশী জোর করায় বাবা সংক্ষেপে যা বললেন, সেটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না আরহাম।বিষয়টা নিয়ে ভাববেন বলে,বাবাকে কিছুটা দুশ্চিন্তামুক্ত করলেও নিজে চিন্তায় পড়ে গেলেন।চিন্তা জড়োসড়ো অবস্থায় রুমে যেতে দেখলেন, বিছানার এক কোণায় বসে উমায়ের রীতিমতো হাঁপাচ্ছে।আরহাম কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আর ইউ ওকে উমায়ের?কি হয়েছে?অস্বস্তি লাগছে?’
সে মাথা নেড়ে না বুঝালেও তিনি স্বস্তি পেলেন না।বালিশ এগিয়ে তাকে আধশোয়া করে শোয়ালে বেশ কিছুক্ষণ পর ব্রিদেন নরমাল হলে জিজ্ঞেস করলেন,’আর ইউ ফিলিং টায়ার্ড বিকজ অব বমিটিং?’
সে সম্মতি দিলে আরহাম চুপচাপ মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন ঘুম আসার আগ পর্যন্ত।
******
ঘড়িতে তখন আড়াইটা।এত রাতে ফোন কে দিলো বোধগম্য হলো না আরহামের।হাত বাড়িয়ে কাবার্ড থেকে ফোন তুলে নিয়ে সালাম দেওয়ার আগেই ওপাশ থেকে আসা উৎকন্ঠিত কন্ঠের কথা শুনে আরহাম শকড।হসপিটালের নাম জিগ্গেস করে,হাফসাকে সন্তোর্পনে বুক থেকে বালিশে নামিয়ে ড্রয়ার থেকে চাবি নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে গেলেন।
বাইরে বেরিয়ে দেখলেন, আব্বু ড্রয়িং রুমে পায়চারি করছেন।আরহাম বাবার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালেন,এমন কিছু হলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন না তিনি।বাবা ও চুপচাপ গেইটে তালা দিয়ে বাইরে বেরোলেন।
গাড়ি দ্রুত চলছে হসপিটালের উদ্দেশ্যে।আহনাফ তাজওয়ার সিটে মাথা লাগিয়ে রইলেন। বন্ধুত্বের কদরে নিজের ছেলের জীবনটা দাবার গুটি হয়ে গেছে।মেয়েটাও জীবন দিতে বসেছে।
হসপিটালে এসে কাঙ্খিত কেবিনে ডুকার আগে আরহাম বাবার কাছে অনুরোধের সুরে বললেন, ‘আব্বু এমন কিছু আবদার করবেন না,যেটা আমি রাখতে পারবো না।আমি আমার পরিবার ও সুখদের হারাতে চাই না,আমি ছাড়া উনি যা চান,আমি দিব।শুধু আমিটা’ দেওয়া সম্ভব নয়।’
আদওয়ার ক্যানেলা ঠিক করছে নার্স।ক্যানেলা ছিড়ে নিয়েছিল,রক্ত পরছে হাত থেকে।আরহাম হাতের দিকে চোখ পড়তে দেখলেন,শিরায় দূটো বড় কাটার দাগ।এর আগেও সুইসাইডাল ওয়ে নিয়েছেন।আরহামের অজান্তে উনাকে নিয়ে ওর পাগলামি আজকে রাতেই বলেছিলেন আব্বু।
আরহাম আর আহনাফ তাজওয়ার কেবিনে ডুকতেই আদওয়ার মা-বাবা একেবারে হামলে পড়লেন। ভদ্রমহিলা একেবারে আরহামের কাছে হাত জোড় করতে নিলে আরহাম উনাকে শান্ত করার চেষ্টা করে চেয়ারে বসালেন।প্রতিশ্রুতি দিলেন, ‘কিছু হবে না উনার।সব ঠিকঠাক হবে আবার।আমি বুঝাবো উনাকে।’
আয়বীর সাহেব বলে উঠলেন, ‘মেয়েটা বুঝবে না বাবা।চার দেয়ালের আড়ালে ও কত পাগলামি করে,আমরা স্ব-সাক্ষী।মরতেও আমাদের কথা ভাবলো ন,ও আর কি বুঝবে?’
‘শান্ত হোন প্লিজ।উনাকে সুস্থ হতে দিন আগে।আমি কথা বলব।’
আয়বীর খান আহনাফ তাজওয়ারের হাত ধরে বললেন, ‘আহনাফ তোর কাছে আমার মেয়ের জীবনটা ভিক্ষা চাইছি।হাতজোড় করছি,মেয়েটাকে বাঁচা আমার।আর কিছু চাইবো না কোনোদিন।একটামাত্র মেয়ে আমাদের।’
আহনাফ তাজওয়ার শান্ত,নিরুত্তর।উনি জানেন,আরহাম তাঁর ওয়াইফদের কত ভালোবাসে।যে বিবাহিত হওয়ার পরও শত কুমারী নারীর প্রস্তাব একবাক্যে রিজেক্ট করে, সে কখনো মনে অন্য কারো জায়গা দিবে না।’
৯৯
আদওয়ার সিটের পাশেই ছিলেন আরহাম।ও হাত দিয়ে অক্সিজেন মাস্ক খুলতেই ব্রিদেনে সমস্যা শুরু হয়। আরহাম তৎক্ষনাৎ সাথে সাথে মাস্ক পরিয়ে দিলেন।
আদওয়ার অস্বস্তি হচ্ছে বুঝা যাচ্ছে, কপালে কয়েকটা কাটা ছেঁড়ার দাগ।হাতে তো অজস্র ব্লেডের দাগ,চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল।
আরহাম তাকালেন না!সরে আসতে নিলে সে আরহামের বাম হাত স্পর্শ করেই অচেতন হয়ে পড়ে।
তখনই রুমে প্রবেশ করলেন ডাক্তার আজমীর।আদওয়াকে এক পলক দেখে বললেন, ‘উনি যা চাইছেন তা দেয়া হোক।কারণ উনার হাতে এক জায়গায় তিন তিনবার সেলাই পড়েছে।এখনকার টা ডেঞ্জারাস ছিল, পরেরবার এমন কিছু হলে নিশ্চয়তা দিতে পারছি না।’
62★
এখনকার টা ডেঞ্জারাস ছিল, পরেরবার এমন কিছু হলে নিশ্চয়তা দিতে পারছি না।’
ডাক্তার চলে যেতেই কান্নার রোল পড়ে।ভদ্রমহিলা মুখে ওরনা গুজে কাঁদছেন।আরহাম নির্বাক, নিশ্চল,নিরুত্তর।
আদওয়ার মা বাবা দূজনেই অনুরোধ করেই চলেছেন, এসবের ফাঁকে আরহাম দেখলেন, বাবার দৃষ্টি নিচু।
আরহাম আশ্চযার্ন্বিত হলেন।বাবার এ নীরবতা আর চোখে অপরাধবোধ কেন?তাহলে বাবা কি চাইছেন আমি তাকে মেনে নেই?’
*******
সকালের পরিবেশ শান্ত।রুমের বাইরে আয়বীর সাহেব বসে আছেন ব্রেন্চে।আদওয়ার বেডের পাশেই আরহাম নিচুমুখ হয়ে বসে আছেন।
উনার চোখজোড়া খানিকটা লাল।মিসেস সেমু আর আয়বীর সাহেবের মানসিক অসুস্থতার সাথে শারীরিকভাবেও দূর্বল হয়ে পড়েছিলেন।বাইরে থেকে খাবার আনিয়ে খাইয়ে আলাদা রুমে তাদের রেস্ট নিতে বলেছেন আরহাম।বাকি রাত আদওয়ার রুমের দরজার সামনেই নির্ঘুম কাটিয়ে দিয়েছেন।
আদওয়া কিছু বলতে চাইলে তিনি অক্সিজেন মাস্ক টা খুলে দিলেন।
‘মা বাবা কোথায়?’
‘পাশের রুমেই।’
আদওয়া আর কিছু বলল না।সে চুপ করে আছে।আর কিছু না হোক,উনি পাশে আছেন তাও একটা শান্তি।সেই শান্তিতে প্রাচীর তুলে আরহাম বললেন, ‘এমন পাগলামি কেন করছেন?এগুলো টু মাচ হয়ে যাচ্ছে না?’
আদওয়া ব্যথিতস্বরে বলল, ‘আমি জীবন দিতে বসেছিলাম আর আপনার কাছে পাগলামি মনে হচ্ছে?’
‘আমার পক্ষে সম্ভব তো না আপনার আবদার রাখা।’
‘আপনি রাজি হলেই তো সম্ভব।’
‘জ্বি না।আমি..
‘আমি কিছু জানি না।’
‘আমার কথাটা বুঝুন ভালো করে।আপনার সাথে আমার এইজের ডিফরেন্ট ইলিভেন ইয়ারস।আপনার এখন আবেগের বয়স,ম্যাচিউর হলে বুঝতে পারতেন এটা আপনার ভুল সিদ্ধান্ত।আপনার একজন পছন্দ আছে, আপনার বাবা বলেছেন।তাকে বিয়ে করে নিন।সম্পর্ক টা হালাল করুন।সেও তো আপনাকে পছন্দ করে।’
‘আমি করতাম পছন্দ, এখন করি না।’
‘ওকে।বাট আমার দিক ভাবুন।সুলাসা নেওয়ার প্রয়োজনই নেই আমার।আর আমার স্ত্রী দের প্রতি পুরোপুরি সন্তুষ্ট আমি।’
‘আমার কি হবে?আমি আপনাকে ছাড়া বিয়ে করবোই না কাউকে।’
‘আমার ওপর ক্ষণিকের মোহ কেটে যাবে।আপনার পরিবারের কথা ভাবুন। উনারা আপনাকে আগের মতো দেখতে চান।’
নিজের অনুভূতি বুঝাতে অপারগ হয়ে আদওয়া এবার কেঁদেই ফেলল।বলল, ‘আমি সত্যি আপনাকে পছন্দ করি।আগে থেকে একটা ভালো লাগা ছিলো।আপনার সব কনসার্ট দেখতাম।কিন্তু প্রথম দিন থেকে দেখা হওয়ার পর শুধু আপনার কথাই ভেবেছি।আপনাকে নিয়ে ভাবতে আমার ভুলগুলো বুঝেছি, নিজেকে চেইন্জ করেছি।আমাকে ইসলামিক কমান্ড দেওয়ার মতো কেউ নেই।অন্তত এজন্য আমাকে বিয়ে করুন।আমি আগের লাইফস্টাইলে যেতে পারবো না।’
আদওয়ার হেঁচকির মাএা সামলাতে আরহাম এরই মধ্যে কথার ইতি টেনে বললেন, ‘ডোন্ট ক্রাই।আপনি সুস্থ হোন।তারপর কথা বলবো।’
*****
সেদিনের মতো বিদায় নিয়ে এসে বাসায় আব্বু ছাড়া কাউকে কিছু জানান নি।সারারাত ছটফট করেছেন চিন্তায়।এই ছোট মেয়েটা বুঝতেই চায় না।আবার যদি তিনি বোকামি করে বসে?সত্যি ই যদি করেন,তাহলে বেঁচে থেকেও নিদারুণ মৃত্যু যন্ত্রণা কুঁড়ে কুঁড়ে খাবে আরহামকে!
ডিনার নিয়ে অপেক্ষা করছে হাফসা।আরহাম আজকে বাসায় ফিরেছেন লেইটে।ইশার নামাজের পর থেকে বাবার রুমে বসে আছেন।ঘন্টা দুয়েকেরও বেশী,বের হোন নি।
ঘুম ঘুম চোখে হেলান দিতে খট শব্দে ধ্যান ভাঙ্গলো হাফসার।আরহাম বেরোলেন।গম্ভীর চেহারা।চেহারার দ্যুতি গত কয়েক দিনে যেন কমে গিয়েছে।হাফসা এগিয়ে গিয়ে বলল,’কি হয়েছে আপনার?কোনো সমস্যা হয়েছে?বলুন আমাকে?এতোটা চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন?গত কয়েকদিন ধরে কি লুকোচ্ছেন বলুন।’
আরহাম উমায়েরকে শান্ত করতে সোফায় বসিয়ে বললেন, ‘কিছু না উমায়ের।শুধু শুধু আপনার এমন মনে হচ্ছে।টেনশন করে কিছু একটা বাঁধিয়ে ফেলবেন আপনি।’
‘বললে তো আর টেনশন করতাম না।কি হয়েছে বলুন আমাকে প্লিজ’।’
‘বলব তো।কিছু লুকাবো না।টেনশন করবেন না প্লিজ।অন্তত আপনার জন্য, আমাদের হ্যাপিনেসের জন্য নিজের ক্ষতি করবেন না উমায়ের প্লিজ।’
‘বলবেন তো?’
‘হুমম।’
‘তাহলে মন খারাপ করে থাকবেন না বলুন।’
আরহাম মুচকি হেসে বললেন, ‘আচ্ছা, মাই লাভ।’
খাবার মুখে তুলে খাইয়ে দিতে আরহাম মুচকি হাসেন।সব দুশ্চিন্তা, ক্লান্তির মধ্যে এই মানুষটা হৃদয়ের এক পশলা শান্তি!
******
কেটেছি সপ্তাহ খানিক প্রায়।মাইমুনাও আরহামের চুপচাপ মন খারাপ থাকার রোগটা ধরে ফেলেছিেেন।একেবারে না পারতে,গত হওয়া সবকিছু তাদেরকে বলেছেন আরহাম।তারা মন খারাপ করলেও আরহাম বলেছেন যে,উনি এমন কিছু করবেন না।
এর মধ্যে আদওয়ার সাথে আরহাম একবারই কথা বলেছিলেন।কথার ধরন ছিলো এমন, আপনার একটা সিদ্ধান্ত,আমার পরিবারের শান্তি।অনুরোধ করছি,এত বড় ক্ষতি করবেন না প্লিজ।’
সে মুহুর্ত আদওয়া চুপ ছিলো।আরহাম ভেবেছেন,উনি হয়তো এখন পজিটিভ ভাববেন।বিষয়টা বুঝবেন।
কিন্তু এমনটা হলো না।সে ওইদিন রাতেই চতুর্থবারের মতো নিজের ক্ষতি করতে বসে।বলছিলো,’উনার অনুরোধ ফেলবো না,উনাকে আর জোর করব না,উনিও তার পরিবার নিয়ে শান্তিতে থাকুক,আমিও শান্তিতে থাকতে চাই!অথচ সে বুঝলো না,তার অল্প পাগলামিতে কতগুলো হৃদয় ছিন্ন ভিন্ন করে দিতে পারতো!
এই ঘটনা সম্পর্কে যখন অবগত হলেন,আরহাম বাবাসহ সবাই ছিলেন ডিনারে।ফোনে পুরো ঘটনা শুনতে নির্বাক হয়ে রইলো সবাই।
এই ঘটনা সম্পর্কে যখন অবগত হলেন,আরহাম বাবাসহ সবাই ছিলেন ডিনারে।ফোনে পুরো ঘটনা শুনতে নির্বাক হয়ে রইলো সবাই।
হাফসা ভাবলো আরহাম আদওয়াকে কখনো বিয়ে করবেন না তাদের দূজনের জন্যই।অথচ আজ যদি আদওয়া কোনো ক্ষতি করে বসতো,সেই দায়ভার পুরো টাই পড়তো আরহামের ওপর।অথচ আরহামের সব সিদ্ধান্ত দূজনকে ঘিরেই।
খাবার টেবিলে এসব চিন্তায় হাত থেমে গেলো হাফসার।এই মানুষটার আরেকটা ভাগ হবে, ভাবতেই ভেতরটা দূমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।উনার হাসিমাখা চেহারা দেখা যায় না এখন।সবসময় কেমন যেনো চিন্তা থাকে চেহারায়।
‘আপনি যদি আদওয়া কে বিয়ে করতে চান আমার কোনো আপত্তি নেই।উনি আপনাকে পছন্দ করে বলেই আপনাকে না পেয়ে সুইসাইড করতে বসেছিলেন।বোন হিসেবে আমি চাইব না,উনার ক্ষতি হোক।আপনি যদি উনাকে বিয়ে করতে চান আমার আর অনুমতি নিতে হবে না।’
খাওয়ার মধ্যে হাফসার এমন কথায় হাত থেমে গেলো সবার।অন্যদিকে মাইমুনাও সেইম চিন্তা গুলোই করছেন।সবাইকে চমকে তিনিও হাফসার কথা শেষ হতেই বলে দিলেন, ‘আমারও আপত্তি নেই।’
আরহাম এতক্ষণে কপাল কুঁচকে এসব শুনলেও এখন একপ্রকার রাগে বলেই ফেললেন, ‘হুয়াট এ্যা ম্যাস আব্বু।আমি তো বলিনি আমি কাউকে বিয়ে করতে চাই।দূজনে কি শুরু করেছে?’
আব্বু শান্তসুরে বললেন, ‘তারা কী ভেবে বলেছে আমি বুঝতে পেরেছি।তোমার ভালোর জন্যই বলছে তারা।’
‘আব্বু আপনিও?’
‘তুমি এখন ম্যারেড।দুইজনের হাজবেন্ড তুমি।আর আমি তোমার বাবা।আমার থেকে এখন তাদের অধিকার বেশি তোমার ওপর।তাই আমি কিছু বলতে পারছিলাম না।অন্তত পলিটিক্যাল ঝামেলা থেকে বাঁচতে, তোমার খ্যাতি অক্ষুন্ন রাখতে,বলছি তুমি রাজি হয়ে যাও।’
‘নেভার।’
বলে রাগ নিয়েই তিনি খাবার ঢেকে নিজের রুমে চলে গেলেন।
১০০
*****
ঘটনার পেরিয়ে গেছে গোটা দূইদিন।আজ আইরার সাথে কথা বলতে গিয়েও আরহাম যারপরনায়ই আহত হলেন।অসন্তোষ প্রকাশ করে বললেন, ‘আইরা তুমি আমার বোন হও।তুমি বুঝবে,একটা মেয়ের সংসার ভাগ করতে কতটুক কষ্ট হয়।মনে আছে তোমার? মাহদিন ভাই শুধু ফান করে বলেছিল,সে মাসনা নিতে চায়।তুমি কি করেছিলে মনে আছে?আমাকে এসব বুঝাতে আসবে না।’