পরিজান | পর্ব – ৫

14 Min Read

মেঘাবৃত সূর্যটা যেন কিছুতেই বের হওয়ার চেষ্টা করে না। সারাক্ষণ ওই মিশকালো মেঘের আড়ালে থাকে সে। একটু দেখা দিলে কি এমন ক্ষতি হয় তার?উল্টে দেখা না দিয়েই কত মানুষের ক্ষতি করে দিলো। এইসব ভাবনা আপন মনে ভেবে চলছে পরী। জানালার ধারে জলচৌকি পেতে বাইরের দৃশ্য আপন মনে দেখছে পরী। হাতের উপর হাত রেখে তার উপর মাথা দিয়ে স্থিরচিত্তে দেখে যাচ্ছে আজকের মেঘমালা। এই গোমড়া মেঘের উপর একরাশ ঘৃণা এসে জন্মায় পরীর। তখনই মনে পড়লো সোনালীর বলা কথাগুলো। সত্যিই কি পরী সবাইকে শুধু ঘৃণা করে? ভালোবাসে না কাউকে? তাহলে আজকে কেন কানাইকে বাঁচালো সে?সেটা কি ভালোবাসা নয়?তাহলে কি সেটা?মায়া!!হ্যা মায়াই হবে হয়তো। সোনালী এতো কঠোর বলে গেল কেন পরীকে? সোনালী যখন চলে যায় তখন পরীর বয়স তো মাত্র সাত ছিল। অতটুকু বয়সে পরীর মধ্যে কি এমন দেখেছিল সোনালী?সব প্রশ্নের উত্তর ওই খাতাটায় পাবে সে। কিন্তু এখন আর পড়তে ইচ্ছে করছে না পরীর। কানাইয়ের জন্য খুব খারাপ লাগছে। যদিও কানাইকে সাজা দেওয়া হয়নি তবুও ভালো লাগছে না পরীর।
বারবার সোনালীর কথাই মাথায় আসছে।

আফতাবের বড় মেয়ে সোনালী। যেদিন সোনালীর জন্ম হয় সেদিন পুরো জমিদার বাড়ি খুশিতে মেতে উঠেছিল। সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছে সোনাকন্যা। দেখতে যেমন সুন্দরী তেমনি গাঁয়ের গড়ন। তাই এই সোনাকন্যার নাম রাখা হয় সোনালী। প্রথম মেয়ে বলে সবাই আহ্লাদী করে রাখতো সোনালীকে। বাড়ির বড় মেয়ে বলে কোন শখ অপূর্ণ রাখেনি সোনালীর। সবসময় সবার কোলে কোলেই থাকতো। বড় হওয়ার পর সবার প্রিয় পাত্রী হয়ে ওঠে সোনালী। পদ্মআঁখি, প্রিয়ংবদা, প্রাণচঞ্চল যেন এই মেয়েটিকেই বলা যায়। সবসময় হাসিখুশি আর সবার সাথে সুন্দর ব্যবহার করতো সে। গ্রামেরই একটা স্কুলে পড়তো। সব শিক্ষকদের পছন্দের তালিকায় সোনালী সবসময়ের জন্য জায়গা করে নেয়। কিন্তু এই চঞ্চল মেয়েটার মুখে গাম্ভীর্য এনে দেয় সময়। সে যেন সোনালীর এই খুশিকে মানতে পারেনি। হিংসার তাড়নায় সে মেয়েটির মুখ থেকে হাসি কেড়ে নিলো। সোনালীর পাঁচবছর বয়সে মালা জন্ম দেন রুপালীর। তখন থেকেই জমিদার বাড়িতে কেমন গুমোট ভাব নেমে আসে। সবাই ভেবেছিল ছেলে হবে কিন্তু মালা মেয়ের জন্ম দিয়েছেন। আবেরজান এতে ক্ষুব্ধ হলেন সাথে আফতাবও। একটা পুত্র সন্তানের জন্য শেষ করে দিলেন মালার প্রতি তার ভালোবাসা। মায়ের প্রতি অবহেলা দেখে সোনালীর কোমল হৃদয় কেঁদে উঠলো। বাবাকে আস্তে আস্তে ঘৃণা করতে শুরু করলো। তবে সেই ঘৃণা কখনোই আফতাবের সামনে প্রকাশ করতো না সে। নিরবে নিভৃতে চোখের পানি ফেলতো। ভাবতো নিজে অভিশাপ দিতে পারেনি তো কি হয়েছে ওর চোখের পানি তো অভিশাপ হয়ে দাড়াতেই পারে। পরীর জন্ম যেন সবার কাল হয়ে দাঁড়ায়। যেখানে একটা ছেলেই জন্ম দিতে পারেনি মালা যেখানে রূপবতী মেয়ের জন্ম দিয়ে কি হবে?রূপ যেন অভিশাপ এনে দিয়েছে মালা ও তার মেয়েদের জীবনে।

মেঘের গর্জনে পরীর ধ্যান ভেঙ্গে দেয়। ঝড়ো হাওয়া বইছে বাইরে। বাতাসে মেঝেতে লুটানো ঘাগড়াটা দুলছে। সামনের কোড়ানো চুলগুলো ও বাতাসের সাথে মেতে উঠেছে যেন। শীত লাগছে পরীর। জ্বরটা এখনও কমেনি। তবে এই জ্বর কখনোই কাবু করতে পারেনি পরীকে। আজকেও তার ব্যতীক্রম হলো না। তবে জলচৌকি থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সে ঘরের সব জানালাগুলো বন্ধ করতে লাগলো। হঠাৎই তার একটা কথা মনে পড়ল। মালা বলেছিলেন সোনালী নাকি শহরে চলে গেছে। সেখানেই রাখালের সঙ্গে থাকে সে। আর ওই মেয়ে ডাক্তার গুলোও তো শহর থেকেই এসেছে। যদি ওরা সোনালীর কোন খোঁজ দিতে পারে?
এসব ভেবে দ্রুত জানালা বন্ধ করে ঘর থেকে বের হয়ে গেল পরী। এক প্রকার ছুটেই চলে এলো মেহমানদের ঘরের দরজায়। কিন্তু ভেতরে যেতে ওর শরীর কাঁপছে। জ্বরে নয়, একটু অস্বস্তি লাগছে ওর। যদি ওরা সোনালীর খবর দিতে না পারে!পরী আস্তে করে দরজায় হাত রাখতেই ঝণাৎ করে দরজা খুলে গেল।
দরজা খোলার শব্দে পালক পেছনে ঘুরে তাকিয়ে পরীকে দেখে অনেক অবাক হলো। রুমি আর মিষ্টি ঘুমাচ্ছে। পালক ও ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে যাচ্ছিল। বাগান বাড়ি থেকে ওরা তাড়াতাড়ি চলে এসেছে। কারণ আকাশের অবস্থা ভালো না,ঝড় হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই ওরা তাড়াতাড়ি চলে এসেছে। দুপুরের খাবার খেয়ে একটু আগেই ঘরে এসেছে। রুমি মিষ্টি ক্লান্ত থাকায় ঘুমিয়ে পড়েছে।
পরী এগিয়ে এসে পালকের সামনে দাঁড়ালো। ইতিমধ্যে ঘাম ছুটে গেছে পরীর। এমতাবস্থায় পরীকে দেখে পালক জিজ্ঞেস করে,’কোন সমস্যা পরী? মানে তুমি কিছু বলতে চাও?’

প্রশ্নটা ঝংকার তুলে দিলো পরীর সারা শরীরে। কথা বলতে ওর ঠোঁট কাঁপছে। আচ্ছা সোনালীর সম্পর্কে কি কিছু জিজ্ঞেস করা ঠিক হবে? কিন্তু সোনালীর জন্য বুকটা খুব জ্বালা করে পরীর। তাই সে আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করল,’আপনেরা তো শহর থাইকা আইছেন?’

পালক পরীর অবস্থা দেখে এগিয়ে এলো। সামনের জলচৌকিতে বসে ইশারায় পরীকে বসতে বলে। দুহাতে নিজের ঘাগড়া খামচে ধরে এগিয়ে গিয়ে বসে পরী। পালক মুচকি হেসে বলল,’হ্যা আমরা শহর থেকেই এসেছি।’

পালকের সুন্দর আচরণে পরী যেন সাহস পেল। সে চট করেই বলে উঠলো,’আপনেরা কি আমার সোনা আপার খবর আইনা দিতে পারবেন?’

কথাটা পালক বুঝলো না তাই পরীর প্রশ্নের বিপরীতে সে প্রশ্ন করে,’সোনা আপা কে? চিনলাম না সব গুছিয়ে বলো তাহলে বুঝতে পারবো।’

‘আমার বড় আপা,সোনা আপা। শহরে থাকে, আর আপনেরাও তো শহর থাইকাই আইছেন। আমার সোনা আপার একটু খবর আইনা দিবেন খুব ভালো হয় তাইলে। কতদিন আপারে দেখি না।’

পরীর মায়াবতী মুখখানি দেখে পালকের কষ্ট হলো। এই মুখটা দেখলে বোধহয় পুরুষ কেন কোন নারীও পরীকে ফেরাতে পারবে না। টসটসে জলে ভরা চোখদুটো সবাইকে ঘায়েল করার প্রধান অস্ত্র।

‘তোমার আপা শহরে থাকে বুঝলাম। কিন্তু বাড়িতে আসে না? তোমার বাবাকে বললেই তো পারো। তোমাকে শহরে নিয়ে যাবে তখন তুমি তোমার আপাকে দেখতে পারবে।’

পালকের কথায় পরী ঘনঘন মাথা নেড়ে বলে, ‘নাহ আব্বা আমারে কোনদিনই শহরে নিয়া যাইবো না। আপার কথা কইলে তো নিবোই না।’

‘কেন?কি এমন করেছে তোমার আপা?’

দীর্ঘশ্বাস ফেলল পরী। নিচের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,’আপা আমাগো গেরামের একটা পোলারে ভালোবাসতো অনেক। কিন্তু আমার আব্বা মাইনা নেয় নাই তার লাইগা আমার আপা হ্যারে নিয়া শহরে চইলা গেছে। আর আহে নাই। আব্বায় কইয়া দিছে এই বাড়িতে যেন আমার সোনা আপার নাম কেউ না নেয়। আম্মা অনেক কান্দে আপার লাইগা। তাই আমি একবার আপার লগে দেহা করতে চাই।’
পরীর কথার মাঝে একরাশ কষ্ট দেখতে পেলো পালক। মেয়েটাকে প্রথম দেখে বদমেজাজি ভাবলেও এখন সে বেশ বুঝতে পারছে যে পরীর কঠোরতার পেছনে রয়েছে এক সাগর কোমলতা। ঠিক নারকেলের মতো। উপরের শক্ত খোসা যে ভাঙতে পারবে একমাত্র সেই পারবে কোমলতা স্পর্শ করতে। পালক এবার বুঝতে পারছে যে এই বাড়ির বড় মেয়ের সাথে কারো কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু মেজ মেয়ে??সে কোথায় এখন? উওর জানতে তাই সে জিজ্ঞেস করে, ‘আর তোমার মেজ বোন এখন কোথায়?’

পরী মাথা নিচু রেখেই জবাব দিলো,’রুপা আপার বিয়া হইয়া গেছে।’

‘বুঝলাম কিন্তু পরী শহরটা তো তোমাদের গ্রামের মতো ছোট না যে খুঁজলেই তোমার আপাকে পেয়ে যাবো। তাছাড়া তোমার আপাকে তো আমি কখনো দেখিনি। আর আমি মেয়ে হয়ে কিভাবে তোমার আপাকে খুঁজবো? এভাবে খোঁজা তো সম্ভব নয় তবে চেষ্টা করে দেখবো।’

মনটা খারাপ হয়ে গেল পরীর। এটার ভয়ই পাচ্ছিল সে। হয়তো ওরা কেউই সোনালীর খবর দিতে পারবে না। গোমড়া মুখেই পরী বলল,’তাইলে কি কোনদিন আপার খোঁজ পামু না?’
কথাটা বলেই উঠে দাঁড়ালো পরী। ছোট ছোট পা ফেলে দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল। স্থির নয়নে তা দেখলো পালক। আজকে পরীর আচরণে বেশ অবাক হয়েছে পরী। দু’দিন আগেই তো ওদের থাকা নিয়ে কত কথা শুনালো আর আজকে এভাবে মিশে গেল। তবে পরীর সাথে সাক্ষাৎ হয়ে বেশ ভালই লাগল পালকের। মেয়েটা সুন্দর তবে কথাগুলো যেন আরো বেশি সুন্দর।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে যেন ঝড়টা আরো বাড়লো। আফতাব আজকে বোধহয় বাড়িতে ফিরতে পারবে না। এই ঝড়ের মধ্যে কোন মাঝিই নৌকা চালাবে না। পুরো জমিদার বাড়িতে অচেনা তিন পুরুষ ছাড়া আর কোন পুরুষ নেই। নাঈম বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছে আপন মনে। ঝড়ো হাওয়া গায়ে লাগছে শীতও করছে কিন্তু ঘরে যেতে ইচ্ছে করছে না তার। উল্টে হাত বাড়িয়ে সে বৃষ্টির পানি ছুঁয়ে দেখছে। সকালের কথা ভাবছে নাঈম এখন। অল্প সময়ের ব্যবধানে কত কথাই বলে গেল পরী। অথচ ওই সময়টুকু বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। পরীকে এক পলক দেখার ইচ্ছা যেন বাড়ছে নাঈমের। আজকে রাতে কি তাহলে ও ঘুমাতে পারবে?নাকি পরীকে দেখতে যাবে?নাঈম স্থির করলো আজকে যেভাবেই হোক অন্দরে সে ঢুকবেই। তার উপর আজকে কেউই নেই বাড়িতে।

আসিফ এসে নাঈমকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,’এই ঠান্ডায় এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন তুই?চল ভেতরে?’

নাঈম দৃষ্টি বৃষ্টিতে স্থির রেখে বলল,’আজকে পরীকে দেখতে যাব।’
‘এই ঝড়ের মধ্যে?পাগল হয়ে গেছিস তুই। সকালে কি হলো দেখলি না। পরী যেমন মেয়ে তোকে বেঁধে ফেলবে আমি নিশ্চিত। এরকম করিস না। নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারিস না। চল ঘরে।’

কিন্তু নাঈম তা মানলো না। সে পরীকে দেখবেই দেখবে। এ নিয়ে কিছুক্ষণ কথা কাটাকাটি করল আসিফ আর নাঈম। আসিফ ভয় পেতে লাগলো আর নাঈম ওকে সাহস দিতে লাগল। কিন্তু ভাগ্য যেন ওদের সহায় হলো না। তখনই সদর দরজা খোলার শব্দ এলো। অন্ধকারে একটা অবয়ব দেখতে পেলো দু’জনেই। তবে বুঝতে পারলো না সে কে?তাই ওরা পূর্ণ দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো আগন্তুকের দিকে। বারান্দায় হারিকেন জ্বলছিল বিধায় আগন্তুক সেদিকেই আগে গেলো। সাথে সাথে ব্যক্তির মুখটা স্পষ্ট হয়ে উঠলো। অস্ফুটস্বরে নাঈম বলে উঠলো, ‘আপনি!!’
ঠোঁটের কোণে কিঞ্চিৎ হাসি ফুটে উঠল শায়েরের। বৃষ্টিতে ভিজে সে একাকার, হাসি মাখা ঠোঁট দুটো কাঁপছে তার। পরনের সাদা পাঞ্জাবি ভিজে গায়ের সাথে লেপ্টে গেছে। নাঈম অবাক হয়ে বলল,’এই বৃষ্টিতে ভিজে এলেন কেন আপনি?এই সময় ভেজা ভালো না জ্বর আসতে পারে। তাড়াতাড়ি পাঞ্জাবি বদলে ফেলুন।’
শায়ের নাঈমের ঘরের মুখোমুখি ঘরটাতে প্রবেশ করে। পাঞ্জাবি খুলে আরেকটা পাঞ্জাবি পড়ে নেয়। দড়িতে ঝোলানো গামছাটা নিয়ে মাথার চুলগুলো মুছতে লাগলো সে। আফতাব বাড়িতে নেই বলেই শায়েরকে আসতে হলো। নাহলে তার ঠেকা পড়েছে এই ঝড়ের মধ্যে আসতে। কোন মাঝি আসতে চায়নি বিধায় সে নিজে এসেছে নৌকা চালিয়ে। সাথে কাকভেজা ও হয়েছে। আফতাবের সবচেয়ে বিশ্বস্ত লোক হলো সেহরান শায়ের। বলতে গেলে ডান হাত। আঁখিরের থেকে সে শায়েরকে বেশি ভরসা করে। সব কাজের দায়িত্ব একমাত্র শায়েরকে দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারেন সে। কোন কাজে আজ পর্যন্ত দেরি করেনি শায়ের। তাছাড়া ওর কাজের হাত চমৎকার। বলতে গেলে যেখানে হাত দেয় সেখানেই সোনা পায়। এজন্য আফতাব একটু বেশি স্নেহ আর বিশ্বাস করে শায়েরকে। এমনকি শহর থেকে ডাক্তার আনার জন্যও শায়েরের হাত আছে। শায়েরের পরামর্শেই আফতাব ডাক্তার এনেছেন। শায়ের বলেছে এতে নাকি আফতাবের নাম বাড়বে। সবাই আরো বেশি বেশি শ্রদ্ধা করবে তাকে। হয়েছেও তাই,সবার মুখে মুখে এখন আফতাবের গুনগান ছাড়া কিছুই শোনা যায় না। নাঈমের সঙ্গে শায়েরের দেখা শহরেই হয়েছিল তবে তা ক্ষণিকের জন্য। এরপর নাঈম আর শায়েরকে দেখেনি। সে অন্য শহরে গিয়েছিল। আজই গ্রামে ফিরেছে আর এসেই কাজে লেগে পড়েছে।

এখন শায়েরের প্রধান কাজ হলো এই জমিদার বাড়ি রক্ষা করা। যেন বাইরের কেউ এই বাড়িতে ঢুকতে না পারে। কিন্তু এই মুহূর্তে খুদায় পেট জ্বলছে ওর। কিছু না খাওয়া অবধি সে কিছুই করতে পারবে না। তাই সে ছাতা হাতে বের হলো। অন্দরমহলের দরজায় কয়েকবার টোকা দিল কিন্তু কেউই সাড়া দিলো না। অতঃপর শায়ের কুসুমকে কয়েকবার ডাকতেই কেউ একজন দরজা খুলে দিল। মুখোমুখি হলো পালক আর শায়ের। পালককে শায়ের একদমই আশা করেনি। ভেবেছিল বুঝি কুসুম আসবে। শায়ের নিজের বিষ্ময়তা বিনা প্রকাশে বলল, ‘কুসুমকে একটু ডেকে দিবেন?’

হারিকেনটা একটু উঁচু করে ধরে পালক। এতে শায়েরের মুখটা আরেকটু স্পষ্ট হয়। পালক বলে,’কুসুম তো নেই বোধহয় বাড়িতে গেছে।’

‘তাহলে বড় মা??’

পালক একবার পেছনে তাকিয়ে আবার শায়েরের দিকে তাকালো বলল,’ঘরে আছেন। কিছু লাগবে আপনার? আমাকে বলুন।’

শায়ের অনিচ্ছা প্রকাশ করে বলে,’নাহ,বড় মা’কে বলুন শায়ের এসেছে তাহলেই তিনি আসবেন।’
মাথা নেড়ে হারিকেন হাতে নিয়ে চলে গেল পালক। মালার ঘরে যেতেই দেখলো জেসমিন মালার মাথায় জলপট্টি দিচ্ছেন আর থেমে থেমে কেশে উঠছে মালা। পালক এগিয়ে গিয়ে বলে,’কি হয়েছে ওনার?’
মুখ তুলে চকিতে তাকালো জেসমিন বললেন, ‘তুমি এঘরে এসেছো কেন?আর আপার বেশি কিছু হয়নি সামান্য জ্বর। সেরে যাবে তুমি নিজের ঘরে যাও।’

পালক শায়েরের কথা বলতেই জেসমিন ঘর থেকে বের হয়ে গেল। তার সাথে পালককেও নিজের ঘরে যেতে বলে।

ঘরে এসেই পালঙ্কে গা লাগিয়ে শুয়ে পড়ে পালক। রুমি আর মিষ্টি খাতা কলম নিয়ে কিসব হিসাব কষছে। এসব ভালো লাগছিলো না বিধায় পালক নিচতলার বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়েছিল। অন্দেরের দরজা ধাক্কার শব্দে সে দরজা খুলল। কিন্তু চোখের সামনে কঙ্খিত পুরুষটিকে দেখে যেন মুগ্ধতা এসে ভেড়ে দুই নেত্রে। এই নিয়ে তৃতীয় বারের মতো শায়েরের সাথে দেখা তার। প্রথম দেখা হয়েছিল শহরে। অদ্ভুত এই পুরুষটির চোখে আটকে গিয়েছিল পালকের নয়ন জোড়া। অন্যরকমের মাধুর্য আছে শায়েরের চোখে। সুরমা পড়ায় চোখদুটোর সৌন্দর্য বেশিই ছড়াচ্ছে। সেখানেই পালক কিছু পল আটকে গিয়েছিল। তারপর আর দেখা হয়নি। আজকে বাগানবাড়িতে দ্বিতীয়বার দেখা হয়। তবে তা দূর থেকেই,আর এখন যে এইভাবে শায়েরের সাথে পালকের দেখা হবে তা ভাবেই নি পালক।

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।