ক্রিসক্রিংগলের মুখাবয়ব ভয়াবহ থমথমে। আশে পাশের সব জায়গায় খুঁজে দেখেছে সবাই। অথচ সিয়া’সহ কিচকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। মাত্রই বাড়ি ফিরে এসেছেন তিনি। রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন ইলহামা অ্যালিয়েভের দিকে। মেয়েকে খুঁজে না পাওয়ার উৎকন্ঠায় মহিলা নিরবে, নিঃশব্দে অশ্রু বিসর্জন দিয়ে যাচ্ছিলেন। ক্রিসক্রিংগল কঠিন গলায় কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলেন। হন্তদন্ত পায়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন পুনরায় সিয়াকে খুঁজ দেখতে। সহসা কিচ দৌড়ে চলে এলো তার সামনে। পায়ের কাছে লেজ নাড়িয়ে উদ্ভট শব্দ করে উঠে।
ক্রিসক্রিংগল থমকালেন। ভয়ংকর ভাবে চমকালেন। পায়ের কাছ থেকে কিচকে কোলে তুলে নিলেন। কিন্তু কিচ ছটফট করতে শুরু করল। মনে হলো ও কিছু বলতে চায়ছে। ক্রিসক্রিংগল উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
– কিচ! সিয়া কোথায়?
ক্রিসক্রিংগল একহাতে কিচকে আগলে রেখে অন্য হাতে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। ওকে শান্ত করার চেষ্টা করলেন। তার হাতের বাঁধন হালকা হয়ে আসতেই কিচ লাফ দিয়ে নিচে নেমে দাড়াল। অকস্মাৎ ছুটতে শুরু করল। ক্রিসক্রিংগল ওর পিছু নিলেন। তার ধারনা কিচ তাকে সিয়ার কাছে পৌঁছে দিতে চাইছে। পথিমধ্যে ইনায়া আর আর্নির সাথে দেখা হয়ে গেলো। কিচকে দেখে ওদের চিত্ত চঞ্চল হয়ে উঠল। ভেবেছিল হয়তো সিয়ার খোঁজ পাওয়া গেছে। কিন্তু ক্রিসক্রিংগলকে দৌড়াতে দেখে ওদের কপালে সূক্ষ্ম দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ল। ইনায়া উচ্চস্বরে জিজ্ঞেস করল,
– বাবা! আপনি এভাবে কিচের পেছনে ছুটছেন কেনো? সিয়া কোথায়?
ক্রিসক্রিংগল উত্তর দিলেন না। ইশারায় তাকে অনুসরণ করতে বললেন। আর্নি আর ইনায়া তাকে অনুসরণ করল। বেশ কিছুটা পথ এগিয়ে যাওয়ার পর হঠাৎই ক্রিস্তিয়ানকে দেখা গেলো। কাউকে কোলে তুলে নিয়ে তাদের দিকেই এগিয়ে আসছিলো। কোনো একটা মেয়ে। পরনে হালকা আকাশী রঙের গাউন। কাঁধ পর্যন্ত লম্বা বাদামী রঙের চুলগুলো এলোমেলো হয়ে ছিলো। ইনায়ার পিলে চমকাল। ক্রিসক্রিংগল দ্রুতপায়ে এগিয়ে গেলেন। সিয়াকে চোখ বন্ধ করে ক্রিস্তিয়ানের কোলে পড়ে থাকতে দেখে তার আত্মা শুকিয়ে গেল। উদ্বিগ্ন কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,
– সিয়াকে কোথায় পেলে? কি হয়ছে ওর?
– রেড উড ট্রি’ থেকে বেশ কিছুটা দূরে অচেতন হয়ে পড়ে ছিলো। আমি পাহাড় থেকে ওকে খুঁজে বাড়ির দিকে ফিরছিলাম। তখনই রাস্তার মাঝখানে ওকে পড়ে থাকতে দেখি।
ক্রিসক্রিংগল সিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। গালে হাত রেখে আদর মিশ্রিত স্বরে ডাকলেন,
– সিয়া!
সিয়ার ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা গেল। কিন্তু সাড়া দিলো না ও।
– ঘুমিয়ে আছে। একবার চোখ মেলে তাকিয়েছিলো। তারপর আবার ঘুমিয়ে গেছে। ঠান্ডা আবহাওয়াতেও ওর শরীর বেশ উষ্ণ।
ক্রিস্তিয়ান বললো। ক্রিসক্রিংগল তার কোল থেকে সিয়াকে কোলে তুলে নিলেন। ইনায়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। আনির মুখে মৃদু হাসির রেখা ফুটে উঠল। কিচ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটতে শুরু করলো।
★★
বেলা গড়াল। দুপুর হলো। বাড়ির পরিবেশ অদ্ভুত রকম নিস্তব্ধ ছিলো। বিছানায় শুয়ে আছে সিয়া। কামরায় সবার উপস্থিতি, যাদের প্রত্যেকের চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। চাপাস্বরে সিয়ার গাল চাপড়ে ডাকছিলেন ইলহামা অ্যালিয়েভ,
– সিয়া।
বার কয়েক ডাকার পর সিয়া চোখ পিটপিট করে তাকাল। অস্পষ্ট স্বরে ডাকল,
– মা।
ইলহামা অ্যালিয়েভের চোখ থেকে আনন্দের অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। সিয়া ক্ষীণস্বরে জিজ্ঞেস করল,
– বাবা?
ক্রিসক্রিংগল সিয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। সিয়া মৃদু হাসল। ধীরে ধীরে উঠে বসল। নিজের বাবাকে দেখে যেন শরীরে পুনরায় শক্তি ফিরে পেল।
– কোথায় গিয়েছিলে? তোমার এই অবস্থা কি করে হলো?_____থমথমে কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন ক্রিসক্রিংগল।
সিয়ার গতকাল রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ঘটা সম্পূর্ণ ঘটনা মনে পড়ে গেল। মলিন মুখে নিজের বাবাকে সবটা খুলে বলল। মেয়ের কথা শুনে ক্রিসক্রিংগল ভড়কে গেলেন। উইজার্ড ডিয়েটস সাথে সাথে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। ব্যতিব্যস্ত পায়ে কামরা থেকে বাইরে বেরিয়ে গেলেন। উরসুলা ভনডারলেন কিছু একটা আঁচ করে নিলেন। ইনায়া সিয়ার সাথে ঘটা ঘটনার কথা শুনে ওর দিকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। সিয়ার শরীরে শয়তান বাদুড়গুলোর আঁচড়ের দাগ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিলো। ইলহামা অ্যালিয়েভের গলা শুকিয়ে গেলো। ভীষন ভয় পেলেন। মনে মনে ভাবলেন,
– আমার এই হাস্যোজ্জ্বল পরিবারে কারো কুনজর না লেগে যায়।
সিয়া ক্রিসক্রিংগলের দিকে তাকাল। ওর মস্তিষ্কে কতগুলো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল। অকপটে জিজ্ঞেস করল,
– ছেলেটা উইজার্ড পরিবার সম্পর্কে কি করে জানে বাবা? শুধুমাত্র আমার শরীরেই এই ক্রুশচিহ্ন থাকার রহস্য কি?
– কাউকে না বলে রাতের অন্ধকারে একা একা বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে দু’জনেই অপরাধ করেছো। তোমাদের সাহস বেড়ে গেছে। আমি খুশি হতাম যদি এই সাহস তোমরা কোনো ভালো কাজে দেখাতে। অহেতুক সবার জন্য বিপদ ডেকে আনলে। ভুলটা আমারই ছিল। আমি তোমাদের সঠিকভাবে গড়ে তুলতে পারিনি।
ক্রিসক্রিংগলের কন্ঠে অসামান্য অভিমান প্রকাশ পেল। সাথে সিয়ার করা প্রশ্ন দু’টো তিনি এড়িয়ে গেলেন যেন। পুনরায় সিয়ার চোখজোড়া ছলছল করে উঠল। নিজের পরিবারকে ভীষণ ভালবাসে ও। যেখানে পরিবারের কোনো একজনের প্রাণ বাঁচাতে নিজের প্রাণ উৎসর্গ করে দিতেও দু’বার ভাববে না, সেখানে তাদের বিপদে ফেলার কথা দুঃস্বপ্নেও কল্পনা করতে পারে না। কিন্তু সিয়া বুঝতে পারছে না সবার জন্য ও বিপদ কি করে ডেকে আনলো?
– আমি কথা দিচ্ছি, আজ থেকে আপনি যা বলবেন তাই হবে বাবা। আমি কখনো আপনার কথার অবাধ্য হবো না। বিশ্বাস করুন।_______কাতর কন্ঠে কথাটা বলে উঠল সিয়া।
ক্রিসক্রিংগল কোনো প্রত্যুত্তর করলেন না। শান্ত দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ সিয়ার দিকে তাকিয়ে রইলেন। অতঃপর কামরার বাইরে বেরিয়ে গেলেন। সিয়া বেশ হতাশ হলো। ব্যথাভরা দৃষ্টিতে নিজের বাবার চলে যাওয়া দেখল। ইলহামা অ্যালিয়েভ সিয়ার মাথাটা বুকের মাঝখানে আগলে নিলেন। ইনায়া স্থির দৃষ্টিতে মা-মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইল।
আলমারিতে রাখা পাথরটা হাতে নিলেন উইজার্ড ডিয়েটস। পাশেই দাড়িয়ে ছিলেন উরসুলা ভনডারলেন। পাথরটার দিকে তাকাতেই ডিয়েটসের মুখাবয়বে কালো মেঘের আঁধার ঘনিয়ে এলো। সহসা দরজায় করাঘাতের শব্দ শোনা গেলো। কামরায় প্রবেশ করলেন ক্রিসক্রিংগল। ডিয়েটসকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
– বাবা। আপনি বলেছিলেন সিয়া গড গিফ্টেড চাইল্ড। তাই ও কাঁধে ঈশ্বরের দেওয়া ক্রুশ চিহ্ন নিয়ে জন্মেছে। কিন্তু আমি ওর মাঝে অলৌকিক কিছু দেখিনি। বরং ওর মতো অলস মেয়ে হয়তো আর একটাও খুঁজে পাওয়া যাবে না আমাদের গ্রামে।
– এই পাথরটা দেখতে পাচ্ছো?
ডিয়েটসের করা প্রশ্নে তার হাতের দিকে তাকালেন ক্রিসক্রিংগল। লাল বর্ণ ধারন করা একটি পাথর দেখে তিনি বিস্মিত হলেন। ডিয়েটস জিজ্ঞেস করলেন,
– এটা সাদা থেকে লাল বর্ণ ধারন করেছে। এর মানে বোঝো?
– কোনো রক্তচোষা আমাদের গ্রামে প্রবেশ করেছে।____শঙ্কিত কন্ঠে কথাটা বলে উঠলেন ক্রিসক্রিংগল।
– হ্যাঁ। আমি যদি ভুল না হই, সিয়ার সাথে থাকা ছেলেটা র’ক্তচোষা পি’শাচ ছিলো।
– যাকে গ্রামে প্রবেশ করতে সাহায্য করেছে আমার মেয়ে। এরপরও আপনি বলবেন ও গড গিফ্টেড চাইল্ড?
– গ্রামের সবাইকে বাঁচাতে হবে। নিজের পরিবারকে বাঁচাতে হবে। বাঁচাতে হবে ইনায়া আর সিয়াকে। ওদের লক্ষ্য আমি নই। ওদের লক্ষ্য অন্যকিছু।
বিরবির করে কথাগুলো বলে উঠেন ডিয়েটস। ক্রিসক্রিংগলের করা প্রশ্নগুলো সব এড়িয়ে গেলেন তিনি।
________★★_________
বিকেল বেলা। সিয়াদের বাড়ি থেকে নিজেদের বাড়িতে প্রবেশ করে ক্রিস্তিয়ান আর আর্নি। রান্না-বান্নায় ব্যস্ত ছিলেন সাসোলী কুরী। বৈঠকখানা থেকে আর্নির বাবা স্ট্রিকল্যান্ড কুরীর হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। বেশ অবাক হল আর্নি। রান্নাঘরে একনজর উঁকি দিয়ে দুই ভাইবোন বৈঠকখানায় প্রবেশ করল। দরজার দিকে পিঠ রেখে তাদের বাবার সামনে কেউ একজন বসে ছিল।
স্ট্রিকল্যান্ড কুরী ব্যবসায়ী। ভীষণ হাস্যোজ্জ্বল একজন মানুষ। গ্রামের বাজারে বেশ বড়সড় একটা পণ্যশালা দিয়েছেন। যেখানে রান্না-বান্নার যাবতীয় জিনিস আর বিভিন্ন পণ্য-দ্রব্য বিক্রয় করেন তিনি। সারাদিন এবং রাতের অর্ধেকটা সময় পণ্যশালায় থাকেন। শুধু দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য প্রতিদিন বাড়িতে আসেন। আজ যখন বাড়ি ফিরছিলেন পথিমধ্যে একজন আগন্তুককে দেখতে পেয়েছিলেন। আগন্তুক তার কাছে সাহায্য চেয়ে বলেছিল,
– জনাব। আপনার কাছে একটু পানি হবে? ভীষণ তৃষ্ণার্ত আমি।
আগুন্তককে দেখে স্ট্রিকল্যান্ড প্রথমে বিস্মিত হয়েছিলেন। একটা প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ। বয়স কত হবে? পঁচিশ অথবা ছাব্বিশ। চেহারায় প্রগাঢ় গুরুগম্ভীর ভাব। চালচলন, কথাবার্তা আর পোশাক আশাকে বেশ আভিজাত্যের প্রকাশ। বিশেষ করে তার ঠোঁটগুলো আর দু’চোখের মনি অত্যন্ত আকর্ষণীয় ছিলো। বিধাতা যেন তার মুখাবয়বে প্রগাঢ় মায়া ঢেলে দিয়েছিলেন। চোখের সামনে কোনো মানুষ দাড়িয়ে আছে নাকি অপার্থিব কোনো প্রাণী? বুঝতে পারেননি স্ট্রিকল্যান্ড কুরী। তার মায়া হয়েছিল। যেন মুহূর্তেই ভীষণ মায়ায় পড়ে যান তিনি। এমনিতেই অথিতি সেবায় বেশ আনন্দ পান স্ট্রিকল্যান্ড কুরী। তন্মধ্যে এতোটা আকুলতা নিয়ে কেউ তৃষ্ণার্ত বলায় বুকের মাঝখানে সূক্ষ্ম ব্যথা অনুভব করেছিলেন। একগাল হাসি উপহার দিয়ে বলেছিলেন,
– আমার কাছেতো পানি নেই। কিন্তু সামনেই আমার বাড়ি। তুমি চলো আমার সাথে।
আগন্তুক অমত প্রকাশ করেনি। স্ট্রিকল্যান্ডকে অনুসরণ করে চলে আসে তার বাড়ি। হঠাৎ করেই চোখের সামনে অদ্ভুত সুদর্শন কোনো পুরুষকে দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে যান সাসোলি কুরী। স্ট্রিকল্যান্ড সহাস্যে বলেন,
– উনি তৃষ্ণার্ত। পথিমধ্যে দেখা হয়ে গেলো তাই বাড়িতে নিয়ে এসেছি।
স্বামীকে কোনো প্রশ্ন করেননি সাসোলি কুরী। অতিথির জন্য নাস্তা-পানির ব্যবস্থা করতে চলে যান তিনি। আগন্তুককে বৈঠক খানায় নিয়ে গিয়ে বসান স্ট্রিকল্যান্ড কুরী। তারপর হেসে হেসে তার সাথে গল্প করতে শুরু করেন। এরই মাঝে কামরায় প্রবেশ করে ক্রিস্টিয়ান এবং আর্নি।
– তোমার নাম জানা হয়নি।______আগন্তুককে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করেন স্ট্রিকল্যান্ড কুরী।
– ক্লীভল্যান্ড এদুয়ার্দো স্যাভেরিন।
_______★★________
ওডেসা, দুভিল কোট।
ধীরে ধীরে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে। রুলার আব্রাহাম স্যাভেরিন তার কামরায় বসে আছে। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলো নিলসোন। আব্রাহামের হাতে রক্তের গ্লাস। লম্বা একটা চুমুক দিয়ে গ্লাসে থাকা সম্পূর্ন রক্তটুকু পান করে নিল সে। নিলসোনের দিকে তাকিয়ে এক আঙ্গুল দেখিয়ে ইশারা করে বলে,
– ওয়ান মোর।
নিলসোন এগিয়ে গেল। টেবিল থেকে রক্তের বোতল তুলে নিয়ে গ্লাস পরিপূর্ণ করে দিল। আব্রাহাম ঢকঢক করে রক্ত পান করল। বিরক্তি সূচক শব্দ করে বলল,
– পাচ্ছি নাহ।
– কি পাচ্ছেন না?______ নিলসোন অকপটে জিজ্ঞেস করল।
– মজা পাচ্ছি না এই রক্তে। অধিক লবনাক্ত মনে হচ্ছে।
নিলসোন থতমত খেল। চোখ ফাটাফাটা দৃষ্টিতে তাকল। আব্রাহাম ম্লান বদনে বলল,
– মা চিঠি পাঠিয়েছেন।
– স্লোভাকিয়ায় ফিরে যাওয়ার জন্য?
– হ্যাঁ। কিন্তু আমি আর কখনো স্লোভাকিয়ায় ফিরে যাবে না। এতে করে যদি ওভারলর্ডের সাথে আমার দ্বন্দ্বযুদ্ধ হয়, তোহ হোক। আমি রুলার হতে চাইনা। এখানে আমার মতো করে স্বাধীন জীবন যাপন করতে চাই।
এরই মাঝে কামরায় পামেলা প্রবেশ করল। আব্রাহামের বিরক্তির মাত্রা বেড়ে গেল। এই একটা মেয়ে, যে কিনা আঠার মতো তার পিছনে লেগে আছে। পামেলার দুঃসাহস দেখে আব্রাহাম ক্রোধিত হলো। ক্রুদ্ধ কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
– অনুমতি ব্যতীত কামরায় প্রবেশ করার দুঃসাহস কি করে পেলে?
পামেলা উত্তর দিতে পারল না। আতঙ্কে জড়সড় হয়ে গেল। আব্রাহাম গর্জন ছেড়ে ডাকল,
– দ্বাররক্ষী!
দ্বাররক্ষী দু’জন ভীত-সন্ত্রস্ত মুখে কামরায় প্রবেশ করল। বুকের কাছে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নত মস্তকে বলল,
– এস্টীম রুলার। ক্ষমা করবেন। আমরা উনাকে বাঁধা দিয়েছিলাম। কিন্তু উনি জোরপূর্বক কামরায় প্রবেশ করেন।
ক্রোধের আধিক্যে আব্রাহামের চোখগুলো রক্তবর্ণ হয়ে উঠল। সহসা দু’ঠোটের ফাঁক গলিয়ে শ্বদন্ত বেরিয়ে এলো। সে উল্টো ঘুরে দাড়াল। পামেলার সামনে নিজের পিশাচ সত্ত্বা দেখাতে চাইল না। উচ্চস্বরে বলল,
– এক্ষুণি কামরা থেকে বেরিয়ে যাও সবাই।
একে একে সবাই কামরা থেকে বেরিয়ে গেল। পামেলা প্রস্তর মূর্তির ন্যায় স্থির দাঁড়িয়ে রইল। আব্রাহাম টের পেল। তার ঘ্রাণেন্দ্রিয় ভেদ করে মানুষের রক্তের গন্ধ মস্তিষ্কে পৌঁছে গেল। যেন মুহূর্তেই তার ক্রোধ সীমা ছাড়াল। ভয়ংকর লাল চোখের দৃষ্টিতে ঝড়ের বেগে পামেলার সামনে গিয়ে দাড়াল। অকস্মাৎ বাতাসের দাপটে পামেলা দু’পা পিছিয়ে গেল। আব্রাহাম ওর দিকে হিংস্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে চিৎকার দিয়ে বলল,
– আমার আদেশ অমান্য করায় তোমার মৃ’ত্যু অনিবার্য।
পামেলার আত্মা শুকিয়ে গেল। বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে রইল। নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়াতেও দরদরিয়ে ঘামতে শুরু করল। পামেলার গলা দিয়ে কোনো কথা বেরুল না। যেন কন্ঠনালি চেপে ধরে আছে কেউ। আব্রাহাম চোখের পলকে তার সামনে গিয়ে দাড়াল। দু’হাতে কাঁধ চেপে ধরে ঘাড়ের কাছে সজোরে কামড় বসিয়ে দিলো। চোখ বন্ধ করে ধারালো শ্বদন্তের সাহায্যে চুকচুক করে রক্ত পান করছিল। পামেলা কাতর কন্ঠে মৃদু আর্তনাদ করে উঠল। গভীর ঘুমে বুজে আসা চোখে বেদনার্ত স্বরে বলল,
– আপনি ছিলেন আমার দু’চোখে দুর্বোধ্য রহস্য। কখনো ভাবিনি আপনি একজন র’ক্তচোষা পিশাচ। আজ যখন সেই রহস্য প্রকাশিত হলো, তখন আরো নিবিড়ভাবে আপনার প্রেমে পড়ে গেলাম। ভয়াবহভাবে বিমোহিত হলাম। আপনি সত্যিই ভয়ংকর সুন্দর। আপনার এই দাসী আপনাকে ভীষণ ভালবাসে এস্টীম রুলার।
সহসা চোখ মেলে তাকাল আব্রাহাম। রক্তপান করা থামিয়ে দিল। পামেলাকে ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দিয়ে বলল,
– এর রক্ত আরো বেশি লবনাক্ত।
পামেলা দু’চোখ বুজে নেওয়ার আগে ঠোঁট ছড়িয়ে হাসল।
_________★★________
কাস্ত্রোরুজ থর্প।
রাত প্রায় আট’টা বেজে গেছে। সিয়াকে খাবার খাইয়ে ইলহামা অ্যালিয়েভ ডিয়েটসের কামরায় প্রবেশ করেন। উরসুলা ভনডারলেন ততক্ষণে শুয়ে পড়েছেন। কপালে একহাত রেখে আর্ম চেয়ারে আধশোয়া হয়ে বসে আছেন ডিয়েটস। তাকে উদ্দেশ্য করে ইলহামা অ্যালিয়েভ ম্লান কন্ঠে বলেন,
– বাবা। আমাকে আসতে বলেছিলেন।
– হ্যাঁ। এসো।
চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালেন ডিয়েটস। টেবিলের দেরাজ খুলে তিনটি ক্রুশ লকেটের হার বের করলেন। সেগুলে ইলহামা অ্যালিয়েভের হাতে তুলে দিয়ে বললেন,
– ইনায়া, ক্রিসক্রিংগল আর তুমি। একটা করে গলায় পরে নিও।
– সিয়া?_____কৌতুহলী কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন ইলহামা অ্যালিয়েভ।
উইজার্ড ডিয়েটস মুখ খুললেন কিছু বলার জন্য। তন্মধ্যে বাইরে থেকে কুকুরের ডাক শুনতে পেলেন। কুকুরগুলো কেমন ক্রুদ্ধ কন্ঠে ঘেউ ঘেউ করে উঠল। বাড়ির পেছন দিকে একটা বিশাল আকৃতির কাঠের খোঁয়াড়ে ক্রিসক্রিংগল পোষা কুকুরগুলোকে চেন দিয়ে বেঁধে রেখেছিলেন। দিনের বেলা মাঠে মেষ আর ভেড়াগুলোকে পাহারা দেওয়ার পাশাপাশি ওগুলো রাতের বেলা বাড়ি পাহারা দিত। ডিয়েটস প্রস্তুত হলেন। জানালা খুলে বাইরের দিকে তাকালেন। কুকুরগুলোর ঘেউঘেউ থামল না। বরং দ্বিগুন বেড়ে গেল। মনে হলো ওগুলো অশুভ কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলো। ডিয়েটস দৌড়ে গিয়ে আলমারি খুলে পাথর’টা হাতে নিলেন। পাথরটা কেমন জ্বলজ্বল করে উঠল।
– শয়তান টা এসে গেছে তাহলে।____ডিয়েটস মনে মনে ভাবেন।
– কি হলো বাবা?___উদ্বিগ্ন কন্ঠে জিজ্ঞেস করেন ইলহামা অ্যালিয়েভ।
ডিয়েটস উত্তর দেন না। শব্দ করে মন্ত্র পাঠ করেন।
একটা কালো ধোঁয়ার কুন্ডলী প্রবল বেগে সিয়াদের পশ্চাদ্ভাগের উঠানে এসে দাড়াল। বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করতেই অদৃশ্য কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে অনেকটা দূরে গিয়ে পড়ল। প্রচন্ড ক্রুদ্ধ হলো। ফিরে এলো মানব সত্তায়। ক্রোধিত কন্ঠে উচ্চস্বরে বলল,
– বাড়িতেও মন্ত্রপুত ব্যারিয়ার? তাহলে তো তোমাকেই বাড়ির বাইরে আনতে হবে ডিয়েটস। অথবা আমাকে অন্যকোন উপায় খুঁজে নিতে হবে।
বাইরে থেকে ভেসে আসা ক্রোধিত কন্ঠে বলা কথাগুলো কামরায় দাঁড়িয়ে স্পষ্ট শুনতে পেলেন ডিয়েটস। বজ্রধ্বনির ন্যায় এক ভয়ংকর কন্ঠস্বর শুনতে পেয়ে কেঁপে কেঁপে উঠলেন ইলহামা অ্যালিয়েভ। বাকিদের কি অবস্থা কে জানে। কেউ আবার ভুল করে বাইরে না বেরিয়ে যায়।
_________★★_________
কিয়েভ, স্যাভেরিন ক্যাসল।
একটা কালো ধোঁয়ার কুন্ডলী প্রবল বেগে দুর্গের চারপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিলো। স্বরুপে ফিরে এসে দুর্গের উঁচু টাওয়ারে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে হাসতে শুরু করল। অ্যাভোগ্রেডো ইজাবেলকে সাথে নিয়ে ওয়াভেল কোটে ফিরে গেছে। এবার ক্যারলোয়েনও তাদের সাথে ওভারলর্ডের ব্যক্তিগত দুর্গে গেছে। ভিক্টোরিয়া নিজের কামরায় বসে প্রিয় অর্ধাঙ্গের কাছে চিঠি লিখছিলো। অকস্মাৎ এমন ভয়ংকর হাসির শব্দ শুনে তার গা শিউরে উঠল। ঠিক তখনই বিচলিত ভঙ্গিতে কামরায় প্রবেশ করলেন পিদর্কা স্যাভেরিন। মেয়েকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে আতঙ্কিত কন্ঠে বলে উঠলেন,
– ও মুক্ত হয়ে গেছে?
– কে মুক্ত হয়ে গেছে?___ভীত স্বরে জিজ্ঞেস করল ভিক্টোরিয়া।
– ও, ও মুক্ত হয়ে গেছে।
কথাটা বলতে পিদর্কার গলা কাঁপতে শুরু করে।
– কে মুক্ত হয়ে গেছে মা?
– যাকে এতো বছর বন্দি করে রেখেছিলাম। ও মুক্ত হয়ে গেছে। গুস্তাভ ফ্লভেয়ার।
দুর্দমনীয় আতঙ্কে কালো হয়ে উঠল ভিক্টোরিয়ার মুখাবয়ব। অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল পিদর্কা স্যাভেরিনের দিকে।
________★★_______
কাস্ত্রোরুজ থর্প।
আকাশে জ্যোৎস্নার আলো। জনমানবশূন্য একটা জায়গায় এসে হঠাৎই দুই অশ্ব বিশিষ্ট চার চাকার ফিটনটা থেমে গেল। পাহাড়ি মেঠো রাস্তা। দূর-দূরান্তে কোনো বাড়িঘর পর্যন্ত নেই। কোচওয়ান ঘোড়ার পিঠে শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে চাবুক আঘাত করল। ঘোড়া দু’টো উচ্চস্বরে করুন আর্তনাদ করে উঠল। অথচ জায়গাটা ছেড়ে একচুল সরে দাড়াল না। একপাও সামনে এগিয়ে গেল না। খানিকটা দূরেই শতাব্দী প্রাচীন সমাধিক্ষেত্র। তারপর গভীর জঙ্গল। জঙ্গলের বিশালাকৃতির গাছগুলো যেন এক একটা ভয়ংকর দানবের মতো দেখতে লাগছিল। ডালে ডালে অসংখ্য বাদুড় ঝুলে ছিলো।
জায়গাটা এতোটাই নির্জন যে সামান্য কোন শব্দ হলেই বুকের ভেতর টা কেমন হিম হয়ে আসছিলো। ভয়ে জড়সড় হয়ে ছিলো ফিটনে বসে থাকা ছেলে-মেয়ে দু’টো। যত সময় গড়ায় বুকের মাঝে হওয়া হিমেল আতংক ততই তীব্র হতে থাকে। মনে হয় জঙ্গল থেকে কিছু অতৃপ্ত আত্মা এসে ঘোড়া দু’টোর সামনে দাড়িয়ে আছে। হঠাৎই ফিটনটা কেমন নড়তে শুরু করে। যেন অদৃশ্য কিছু দেখে ঘোড়া দু’টো ভয়াল চিৎকার দিয়ে উঠে। ফিটনের বাঁধন মুক্ত হয়ে হিহি শব্দ তুলে উন্মাদের ন্যায় প্রবল বেগে ছুটতে শুরু করে। ফিটনের ভেতর থেকে ছেলেটা উচ্চস্বরে জিজ্ঞেস করে,
– কোচওয়ান! কি হলো?
– ঘোড়াগুলো বাধন মুক্ত হয়ে পালিয়ে গেছে।
– এই জনমানবহীন নির্জন জায়গা থেকে এবার বাড়ি ফিরবো কি করে?____ছেলেটা উদ্বিগ্ন কন্ঠে জিজ্ঞেস করল কোচওয়ানকে।
ফিটনের বাইরে থেকে কোচওয়ানের উত্তর এলো না। সে ছুটতে শুরু করল ঘোড়ার পেছনে। ভেতরে থাকা মেয়েটার গলা শুকিয়ে আসে। ছেলেটা ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে মেয়েটার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
– পানি পান করো আন্দ্রেয়া।
আন্দ্রেয়া ঢকঢক করে পানি পান করল। ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে ভীত ভীত কন্ঠস্বরে বলল,
– আমার ভীষণ ভয় করছে এমিল।
– ভয় পেয়ো না। আমি আছি তো। চলো হাঁটতে শুরু করি। জানিনা কোচওয়ান কতক্ষণে ফিরবে। আদৌও ঘোড়াগুলো খুঁজে পাবে কিনা। তার জন্য অপেক্ষা করা ঠিক হবে না।
ফিটনের বাইরে বেরিয়ে গেল এমিল। তার হাত ধরে ফিটন থেকে নেমে দাড়াল আন্দ্রেয়া। চারপাশ ভীষণ নির্জন নিস্তব্ধ ছিল। যেন সুই পড়ার শব্দটাও স্পষ্ট কর্ণগোচর হবে। আন্দ্রেয়া সমাধিক্ষেত্রের দিকে ভীত ভীত চোখে নিষ্পলক তাকিয়ে রইল। সহসা দৃষ্টির সম্মুখে একটা কালো ছায়া দেখতে পেল। যেন তার সর্বাঙ্গে অসামান্য ভয়ের শীতল স্রোত গড়িয়ে গেল। এমিলের কানের কাছে অনুচ্চস্বরে বলল,
– এমিল। আমি মাত্রই একটা কালো ছায়া দেখতে পেলাম।
এমিল সরু চোখে তাকাল। আন্দ্রেয়ার কথাটা পাত্তা না দেওয়ার ভঙ্গিতে বলল,
– ওটা তোমার মনের ভুল ছিলো।
অথচ কালো ছায়াটা এমিলও দেখেছিলো। কিন্তু সে আন্দ্রেয়ার ভয় বাড়িয়ে দিতে চাইল না। প্রায় দেড় কিলোমিটার হাঁটতে হবে। ভাবতেই এমিলের বুক কাঁপতে শুরু করল। পাশের ঝোপে ঝপাৎ করে কি যেন পড়ে যাওয়ার শব্দ হলো৷ চমকে উঠল আন্দ্রেয়া। তাকে আরও খানিকটা চমকে দিতে ভয়াল রাতের অন্ধকার বিদীর্ণ করে অদূরে একজোড়া অগ্নিবিন্দু জ্বলজ্বল করে উঠল। আন্দ্রেয়া একহাতে এমিলের বাহু খামচে ধরল। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
– ওগুলো কি এমিল?
বুকের সাথে সাথে এমিলের হাত পা’গুলোও থরথরিয়ে কাঁপতে শুরু করল। সহসা কতগুলো কুকুরের বিক্ষিপ্ত আর্তনাদ ভেসে এলো। ওরা যেন করুণ সুরে কাঁদছিল। কিছু জানাতে চায়ছিল ওদের আশেপাশে থাকা মানুষগুলোকে। এমিল নিশ্চুপ হয়ে হাঁটছিল। আন্দ্রেয়ার প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারল না। আর কিছুটা পথ পেরুলেই কাস্ত্রোরুজ থর্পের সীমানায় পৌঁছে যাবে। জনবসতির দেখা মিললে আর কোনো ভয় থাকবে না।
অদম্য ভয় আর প্রগাঢ় উৎকন্ঠা নিয়ে দু’জনে অনেকটা পথ পেরিয়ে গেল। হঠাৎ’ই ছায়াটা দানবীয় এক রেড উড ট্রি’র আড়াল থেকে এমিলের সামনে এসে দাড়াল। চাঁদের আলোতে স্পষ্ট তার চেহারা দেখা যাচ্ছিলো। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ’টা অত্যন্ত সুদর্শন ছিলো। তার ভারি নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। এমিল ভীত স্বরে জিজ্ঞেস করল,
– কে আপনি?
– এখান থেকে বেশ বেশ কিছুটা দূরে একটা লোকের লাশ পড়ে আছে। আমি জ্বলজ্বলে চোখের একটা ছায়া দেখেছি। হয়তো সেটাই মে’রে ফেলেছে লোকটাকে। আমি ভয় পেয়ে ছুটতে ছুটতে এখানে এই গাছের আড়ালে এসে লুকিয়ে পড়েছি। পায়ে খুব জোর আঘাত পেয়েছি। আমি ভীষণভাবে আহত। একা একা হাঁটতে পারছি না। আমাকে একটু ধরে ধরে কাস্ত্রোরুজ থর্পে পৌঁছে দিবেন? তাহলে বেশ উপকৃত হবো।
মহা বিপদে পড়ে গেল এমিল। যেখানে নিজেদের হেঁটে যেতেই সমস্যা হচ্ছিল। সেখানে সাহায্য চাইতে একজন আহত ব্যক্তি জুটে গেলো। অনিচ্ছা সত্ত্বেও লোকটাকে সাহায্য করতে রাজি হলো। একপাশে আন্দ্রেয়াকে রেখে অন্যপাশে লোকটাকে ধরে হাঁটতে শুরু করল। বেশ কিছুক্ষণ হেঁটে তারা কাস্ত্রোরুজ থর্পের সীমানা পেরিয়ে গেল। এমিল লোকটার উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করল,
– এই গ্রামে আপনি কোন বাড়িতে থাকেন? আগেতো কখনো দেখিনি। তাছাড়া আপনি বলেছিলেন রাস্তায় একটা লাশ পড়েছিলো। কোথায় সেই লাশ?
লোকটা কোনো উত্তর দিল না। তার চোখ দু’টো জ্বলন্ত কয়লার ন্যায় জ্বলজ্বল করে উঠল। ঠোঁট বাঁকিয়ে ক্রুর হাসল। লোকটার মুখের দিকে চোখ পড়তেই আন্দ্রেয়ার রক্ত হিম হয়ে গেলো। সে বীভৎস চিৎকার দিয়ে উঠে ডাকল,
– এমিল!