ফ্লোরেনসিয়া - এর সকল পর্ব একসাথে

ফ্লোরেনসিয়া – ১

বাদুড়গুলো নিজেদের দাঁত খিচিয়ে সমবেত মানুষগুলোকে হঠাৎই আক্রমন করে বসে। এই দিনটা ছিলো কিয়েভে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেওয়ার সূচনা। ওগুলো কি ছিলো? একদল অতৃপ্ত আত্মা নাকি কতগুলো পিশাচ সত্ত্বা?

ফ্লোরেনসিয়া – ২

আকাশটা মেঘাচ্ছন্ন। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। আজকের এই বৃষ্টিই জানান দিলো বর্ষাকাল এসে গেছে। এতে বেশ ভালোই হয়েছে। শীত আর বর্ষা এই দুই ঋতুতে এদুয়ার্দো বেশ আনন্দ অনুভব করে। ছোট ভাই আব্রাহামকে সাথে নিয়ে নানান রকম এডভেঞ্চারে বেরিয়ে পড়ে। তার ভাইটাও হুবুহু তার মতই। প্রকৃতি প্রেমি। আব্রাহামের অবশ্য আরও একটা নেশা আছে।প্রেমের নেশা। তার জীবনে প্রণয়িনীর অভাব নেই। তবুও সে মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মনের দুঃখ প্রকাশ করে বন্ধুদের কাছে।

ফ্লোরেনসিয়া – ৩

দু’পায়ের ধারালো নখের আঁচড়ে ইনায়াকে ক্ষত-বিক্ষত করে ফেলে। সূঁচালো দাঁতে কামড়ে ধরে ওর গায়ে। ইনায়া ভীত কন্ঠে পরপর দু’বার বীভৎস চিৎকার দিয়ে উঠে ডাকে, – দাদু!

ফ্লোরেনসিয়া – ৪

হঠাৎই একটা কালো ধোঁয়ার কুন্ডলী বাতাসের বেগে ইনায়ার চারপাশে ঘুরতে শুরু করে। বাদুড়গুলো ওকে ছেড়ে দিয়ে দল বেঁধে উড়ে যায় আকাশের দিকে। আবছা আলোয় ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া বাদুড়গুলোকে আরও ভয়ংকর লাগে দেখতে। যেন একঝাঁক মৌমাছি। বরং মৌমাছির থেকেও ভয়াবহ হিংস্র।

ফ্লোরেনসিয়া – ৫

– জ্বিনা। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো রহস্যটা খুঁজে বের করার। – চেষ্টা নয়। আমি দু’দিনের মধ্যে এর রহস্য জানতে চাই। কথাটা বলে ঝড়ের বেগে কোথাও চলে যায় এদুয়ার্দো। নিষ্প্রভ চোখে তাকিয়ে থাকে অ্যাভোগ্রেডো।

ফ্লোরেনসিয়া – ৬

যুবতী দু’জন কামরার বাইরে বেরিয়ে গেল। পামেলা উঠে দাড়াল। পা টিপে টিপে কোমর দুলিয়ে হাঁটতে শুরু করল। পাতলা ফিনফিনে শর্ট গাউনে তাকে আবেদনময়ী লাগছিল। এই দুর্গে এসেছে একমাস হলো। এর মাঝে দু’বার রুলারের কাছাকাছি থাকার সৌভাগ্য হয়েছিলো।

ফ্লোরেনসিয়া – ৭

তাছাড়া গুহায় তো কেউ ছিলো না। তাহলে এই মুহূর্তে ওর হাত ধরে আছে কে? – কোনো র’ক্তচোষা পি’শাচ নয়তো! ভাবতেই সিয়ার পুনরায় পিলে চমকে গেলো। এদুয়ার্দোর পেছন থেকে কিচ শব্দ করে উঠল। এদুয়ার্দো মনে মনে ভাবল

ফ্লোরেনসিয়া – ৮

মুখের উপর তুলতুলে কিছুর স্পর্শ পেয়ে সিয়ার ঘুম ভেঙ্গে গেল। কিচ নিজের লেজ দিয়ে ওর মুখে সুরসুরি দিচ্ছিলো। সিয়া চোখ মেলে তাকাল। মশালের আলোয় আলোকিত গুহার চারদিকে নজর বুলাল।

ফ্লোরেনসিয়া – ৯

ক্রিসক্রিংগল থমকালেন। ভয়ংকর ভাবে চমকালেন। পায়ের কাছ থেকে কিচকে কোলে তুলে নিলেন। কিন্তু কিচ ছটফট করতে শুরু করল। মনে হলো ও কিছু বলতে চায়ছে। ক্রিসক্রিংগল উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, – কিচ! সিয়া কোথায়?

ফ্লোরেনসিয়া – ১০

সিয়া জানালার কাচ ঈষৎ ফাঁক করে উঠোনের দিকে তাকায়। মুহূর্তেই ওর শরীরের সমস্ত রক্তবিন্দু হিম হয়ে যায়। প্রশস্ত কালো কুচকুচে ডানার একটা বিশালাকৃতির প্রাণী আর্নির গলা চেপে ধরে। যার ঠোঁটের ফাঁক গলিয়ে ধারালো দু’টো শদন্ত বেরিয়ে আসে। ভয়ংকর দেখতে প্রাণীটা আর্নির ঘাড়ে নিজের ঠোঁট চেপে ধরে।

ফ্লোরেনসিয়া – ১১

কেউ কিছু বুঝল না। সিয়া মুখ তুলে তাকাল। ডিয়েটসকে উদ্দেশ্য করে বলল, – দাদু আর্নিকে বাঁচান। একমাত্র আপনিই পারবেন ওকে বাঁচাতে। – আর্নি কোথায়?___উদ্বিগ্ন কন্ঠস্বরে জিজ্ঞেস করলেন ডিয়েটস। সিয়া জানালার দিকে দৌড়ে গেল। বাকিরা ওর পিছন পিছন কামরায় প্রবেশ করল।

ফ্লোরেনসিয়া – ১২

ভ্যাম্পায়ার’রা রসুনের সংস্পর্শে আসা তো দূরের কথা, রসুনের গন্ধও সহ্য করতে পারে না। ওরা রসুনের কথা চিন্তা করলেই অস্থির হয়ে উঠে। প্যানিক এ্যাটাকের শিকার হয়।

ফ্লোরেনসিয়া – ১৩

– এতো লম্বা চুল মেয়েটা সামলায় কি করে?___আব্রাহাম মনে মনে ভাবল। তার দেওয়া কামড়ের দাগ এখনো ইনায়ার গলায় স্পষ্ট হয়ে আছে। দাগটার দিকে দৃষ্টি দিতেই আব্রাহামের ভয়ানক রক্তের তৃষ্ণা জাগল। ঘ্রাণেন্দ্রিয় ভেদ করে মস্তিষ্কে পৌঁছে গেল মিষ্টি মধুর রক্তের সুবাস।

ফ্লোরেনসিয়া – ১৪

– মেয়েটা চরম বে’য়া’দব। ওভারলর্ড এদুয়ার্দো স্যাভেরিন শুধুমাত্র তার মায়ের কথা শুনে চলে। তার একমাত্র দূর্বলতা ছোট বোন ইজাবেল। পাথরের থেকেও শক্ত হৃদয়ের এই র’ক্তচোষা পি’শাচের জীবনে আদৌও মায়া-দয়া বলে কিছু আছে কিনা কে জানে! থাকলে কি আর সিয়াকে এভাবে কষ্ট দিতে পারতো?

ফ্লোরেনসিয়া – ১৫

বেশকিছু দিন আগেও গ্রামের মানুষগুলো কত হাসি-খুশি ছিলো। সারাক্ষণ লোকজনের কোলাহলে সম্পূর্ণ গ্রামটা মুখরিত হয়ে থাকতো। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে র’ক্ত’চোষা পি’শাচদের কবলে পড়ে সবাই কেমন আতংকে জর্জরিত। সম্পূর্ণ গ্রামটাই যেন নির্জন, নিস্তব্ধ। মাঝে মাঝে শুধু শোনা যায় শিশুদের কান্নার শব্দ।

ফ্লোরেনসিয়া – ১৬

– এভাবে কি সেদিন আমার হাত পায়ের বাঁধনগুলো খোলা যেত? সিয়ার আফসোস হলো। সাথে অপরাধবোধ হলো এটা ভেবে, প্রয়োজনের সময় কেনো উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগাতে পারেনি ও। কিন্তু সিয়া কি আর জানতো ওকে টোপ হিসাবে ব্যবহার করে শ’য়তানটা ওর দাদুকে তুলে নিয়ে যাবে?

ফ্লোরেনসিয়া – ১৭

আব্রাহাম আরও বিরক্ত হয়ে উঠল। হলরুমে উপস্থিত থাকা বাকিরা ওদের দিকে বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। এলিমিগ্রিন এসে ওদের দু’জনকে থামানোর চেষ্টা করল। সুযোগ বুঝে আব্রাহাম দ্রুতপায়ে হেঁটে হলরুমের বাইরে বেরিয়ে গেল।

ফ্লোরেনসিয়া – ১৮

ভীষণ মায়া হলো। সে ব্যথাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সিয়ার মলিন মুখখানার দিকে। আর্নির দু’চোখের কোণে জল চিকচিক করে উঠে। ইনায়া ব্যতিব্যস্ত কন্ঠস্বরে বলে, – এখনো দাঁড়িয়ে আছো কেনো? বসো।

ফ্লোরেনসিয়া – ১৯

ওদের ঘোড়া দু’টো কি পক্ষিরাজ ঘোড়া? যেন চোখের পলকে অদৃশ্য হয়ে গেল। ইনায়া একহাতে শক্ত করে ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরল। অন্যহাতে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে নিজের ঘোড়াটাকে অনবরত চাবুক আঘাত করল।

ফ্লোরেনসিয়া – ২০

রক্তশূন্য মুখে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে অপলক তাকিয়ে রইল। সিয়ার ‘মা’ ডাক শুনতে পেয়ে ক্রিসক্রিংগল উরসুলাকে রেখে দৌড়ে এসে সিয়ার পাশে দাঁড়ালেন। মুহূর্তেই যেন তার সমগ্র দুনিয়া দুলে উঠল। বুকের ভেতরে প্রগাঢ় শূন্যতা অনুভব করলেন।

ফ্লোরেনসিয়া – ২১

– ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলের বেশ কিছু গ্রাম থেকে কম বয়সী সুন্দরী যুবতীরা নিরুদ্দেশ হয়ে যাচ্ছে। আপনি কি সে খবর জানেন? পিদর্কা স্যাভেরিন বিস্ময় ভরা দৃষ্টিতে তাকালেন। যেন এরকম অপ্রত্যাশিত খবর শুনে তিনি বেশ আশ্চর্য হয়েছেন।

ফ্লোরেনসিয়া – ২২

তিনটে মৃতদেহের সমাধিস্থ শেষে ক্রিসক্রিংগল ব্যতীত বাকিরা সবাই বাড়িতে ফিরে আসে। বাড়িটা যেন নির্জন খাঁখাঁ করছে। প্রিয় মুখগুলোর শূন্যতা অনুভব করে প্রতিটা নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে বুকের ভেতরটা হাহাকার করে উঠে। সিয়া যন্ত্রমানবীর মতো হাঁটে।

ফ্লোরেনসিয়া – ২৩

আমি ফ্লোরেনসিয়া, জন্মেছিলাম এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। আমার আশৈশব কেটেছে কাস্ত্রোরুজের শান্তিপূর্ণ মনোরম পরিবেশে। গ্রামের মানুষগুলো খুব সহজ-সরল আর মিশুক প্রকৃতির ছিলো। কখনো নিজেদের মধ্যে দাঙ্গা, কলহ বা হাঙ্গামায় জড়াতো না।

ফ্লোরেনসিয়া – ২৪

প্রত্যেকেই সতর্ক দৃষ্টি রেখে একটু একটু করে পিছিয়ে যায়। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কালো কুচকুচে পোশাক পরিধেয় শ’য়তানগুলো একপা দু’পা করে এগিয়ে আসে তাদের দিকে। শুকনো পাতায় পা পড়তেই মরমর শব্দ সৃষ্টি হয়।

ফ্লোরেনসিয়া – ২৫

ভয়াল, ভয়ংকর রাত্রি আর দুর্গম পথযাত্রা শেষ করে ফিটন দু’টো প্রাসকোভিয়া জঙ্গলে প্রবেশ করে। শতাব্দী পুরনো অদ্ভূতুরে দানবীয় গাছগুলো দেখে ভয় আর শঙ্কায় গলা শুকিয়ে মরুভূমির মতো হয়। দিনের আলোতেও ভয়াবহ গা ছমছমে ভয়।

ফ্লোরেনসিয়া – ২৬

সিয়া নিশ্চুপ, নির্বাক। ইনায়ার করা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলো না। চেয়েও মুখ থেকে একটা শব্দ বেরুলো না। যেন কথা বলার ইচ্ছেটাও ম’রে গেছে ওর। সহসা ইনায়ার গলার স্বর পরিবর্তন হলো।

ফ্লোরেনসিয়া – ২৭

আমি এই একাডেমিতে ভর্তি হতে চাইনা। বেশ আশ্চর্য হন ক্রিসক্রিংগল।কয়েক পল নিশ্চুপ থেকে রাশভারি কন্ঠে বলেন,,,, -ভর্তির কার্যক্রম শেষ।আগামীকাল থেকে তোমাদের প্রশিক্ষণ শুরু হবে।অনেকটা দেরি হয়ে গেছে।প্রধান ফটক পর্যন্ত এসো।

ফ্লোরেনসিয়া – ২৮

ভুলে যাও।মে’রে ফেলেছি ওকে।____মেকি হেসে উত্তর দেন পিদর্কা স্যাভেরিন। মূহুর্তেই ভয়াবহ রেগে যান মহিলা।ত্বরিত উঠে দাড়িয়ে পড়েন।ক্রোধের আধিক্যে দু’হাতে পিদর্কা স্যাভেরিনের গলা চেপে ধরেন।

ফ্লোরেনসিয়া – ২৯

ফ্লোরেনসিয়া,কতগুলো নি’পীড়িত মানুষ অসামান্য য’ন্ত্র’ণা নিয়ে অধীর আগ্রহে পথ চেয়ে বসে আছে।ওরা অপেক্ষায় আছে,কেউ একজন আসবে,র’ক্ত’পি’পা’সুদের নৃ’শং’সতা থেকে তাদের রক্ষা করবে।

ফ্লোরেনসিয়া – ৩০

প্রাসকোভিয়া জঙ্গল দিনের বেলাতেও ভয়াবহ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে থাকে।জঙ্গলের গাছগুলোকে দেখতে এক একটা ভয়ংকর দানবের মতো লাগে। সহসা তীব্র কলরব করে মাথার উপর দিয়ে একঝাঁক পাখি উড়ে যায়।অজানা আতঙ্কে বুকের ভেতরটাও কেমন হিম হয়ে আসে।

ফ্লোরেনসিয়া – ৩১

সিয়া শান্ত হয়।ধীরে ধীরে ওর মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলা হাত দুটো হালকা হয়ে আসে।শীতল হয়ে আসে দু’চোখের দৃষ্টি।এদুয়ার্দোর ঠোঁটের কোণে খেলে যায় পৈশাচিক মৃদু হাসি।

ফ্লোরেনসিয়া – ৩২

ধীরে ধীরে সময় গড়ায়।রাত গভীর হয়।টেবিলের উপর মৃদু আলোয় মোমবাতি জ্বলে।চেয়ারে পিঠ ঠেকিয়ে চোখ বুজে নেয় সিয়া।হঠাৎ দরজার বাইরে বারান্দার দিকে থেকে কারো কন্ঠস্বর শুনতে পায়

ফ্লোরেনসিয়া – ৩৩

তার দুষ্ট আত্মা উচ্চস্বরে আওয়াজ করে হাসে।ব্যঙ্গ কন্ঠে বলে,,, -এর আগে আমি তোমার চোখে অন্য কোনো মেয়ের জন্য এতোটা সম্মান দেখিনি।যাদের সাথে তুমি রাত্রিবাস করেছিলে।

ফ্লোরেনসিয়া – ৩৪

এদুয়ার্দোর চোয়াল শক্ত হয়ে আসে।নিজের মায়ের ব্যাপারে কোনো ছেলে এরকম খারাপ ধারনা কিভাবে পোষণ করতে পারে?সে হাত দু’টো মুষ্ঠিবদ্ধ করে নেয়।আব্রাহাম পুনরায় বলতে শুরু করে,,,,

ফ্লোরেনসিয়া – ৩৫

জনাব, আমাকে বাঁচান। ওর চিৎকার শুনে লোক তিনটে আরও সতর্ক হয়ে যায়। দু’জন উপরের দিকে তাকায়। অকস্মাৎ গাছ থেকে লাফিয়ে পড়েন ক্রিসক্রিংগল। ক্রসবো ধরে রাখা লোকটাকে একটা মারাত্মক আক্রমন করে বসেন।

ফ্লোরেনসিয়া – ৩৬

উয়াসওয়াভার মেয়ের বাবা কে ছিলো জানতো না কেউ। অনেকেই ধরে নিতো ওটা যোসেফ স্যাভেরিনের ঔরসজাত মেয়ে। আবার কেউ বা প্রচন্ড ঘৃণা থেকে বলতো,ওটা জারজ সন্তান।

ফ্লোরেনসিয়া – ৩৭

ইনায়ার চিত্ত পুলকিত হয়। আর্নির ভয় আরও দ্বিগুন বেড়ে যায়। ইনায়ার একহাত খামচে ধরে আতংকিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,,, – কি প্রয়োজন ছিলো এই পি’শাচটার সাথে দ্বন্দ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার? ও ইনায়া, সিয়াকে বারণ করো না। বারণ করো ওকে।

ফ্লোরেনসিয়া – ৩৮

উলের সুয়েটারের নিচে লুকিয়ে রাখা ক্রুশ লকেট’টা ইনায়া বাম হাতে শক্ত করে চেপে ধরে। আব্রাহামের সেদিকে খেয়াল নেই। সে কেবলই ধীরপায়ে হাঁটে। ইনায়া তাকে অদৃশ্য মায়াজালে টানছে। কেনো এতো মায়া এই মেয়েটার মুখশ্রীতে? শুধু কি মায়া? আছে নির্মলতা। আব্রাহামের মনে হয়, পবিত্রতার প্রতীক সে।

ফ্লোরেনসিয়া – ৩৯

আমি কি বেঁচে আছি এখনো? নাকি ম’রে গেছি? এখানে এতো অন্ধকার কেনো? এটা কি কোনো সমাধি? ম’রে গেছে ভেবে মার্কসের দুঃখের শেষ নেই। এতো তাড়াতাড়ি ম’রতে চায়নি সে। তবুও কেনো এরকম হলো? বাঁচার জন্য কতই না চেষ্টা করেছিলো।

ফ্লোরেনসিয়া – ৪০

খোলা জানালা দিয়ে হুড়মুড়িয়ে কামরায় প্রবেশ করা বাতাসের ফলে দোদুল্যমান লন্ঠনের আলো নিভু নিভু হয়ে আসে। ডানদিক থেকে ভেসে আসা অদৃশ্য কন্ঠের কথাগুলো সিয়া উৎকর্ণ কানে শোনে। মেয়েটা বলে,

ফ্লোরেনসিয়া – ৪১

কেউ তার প্রশ্নের প্রত্যুত্তর দেয় না। অধৈর্য হয়ে উঠে মার্কস। বিরক্তবোধ করে। কপট রাগ মেশানো কন্ঠে উচ্চস্বরে বলে,,, – কেউ আমাকে বলছে না কেনো, আর কতটুকু রাস্তা অতিক্রম করতে হবে?

ফ্লোরেনসিয়া – ৪২ (প্রথম অংশ)

উরসুলা বারকয়েক দু’চোখের পল্লব নাড়ান। রমনীকে চেনার চেষ্টা করেন। পরিচিত মনে হয়। হয়তো দেখেছিলেন কোথাও। – তুমিতো আমাকে চেনো। তোমার অর্ধাঙ্গের হস্তে আমার অর্ধাঙ্গের মৃ’ত্যু হয়েছিলো। এতো সহজে ভুলে গেলে?

ফ্লোরেনসিয়া – ৪২ (দ্বিতীয় অংশ)

ক্রিস্তিয়ান তার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগেই সিয়ার হাতের দিকে তাকান স্ট্রিকল্যান্ড কুরী। তৈলচিত্রগুলো একপ্রকার ছিনিয়ে নেন তিনি। রাগমিশ্রিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করেন,,, – এগুলো তোমাদের কাছে কেনো? কে নিয়ে এসেছে এখানে?

ফ্লোরেনসিয়া – ৪৩

তুমি উইজার্ড ডিয়েটসের নাতনি তাইনা? আমার নাম জোসেফাইন। তোমার দাদুর বন্ধু ছিলাম একসময়। সুতরাং ভয় পেয়ো না। আমি তোমার কোনো ক্ষতি করবো না।

ফ্লোরেনসিয়া – ৪৪

বেশ কিছুক্ষণ সময় গড়ায়। ক্রিসক্রিংগল স্থির দাঁড়িয়ে থাকেন। প্রশিক্ষণ শেষ হয়। হঠাৎই ক্রিসক্রিংগলের দিকে তাকায় মার্কস। থমথমে পা ফেলে এগিয়ে যায় তার দিকে। ভরাট কন্ঠে বলে,,, – জনাব ক্রিসক্রিংগল। আপনি প্রস্তুত হন। আমি আপনাকে ইম্যুভিলে পৌঁছে দিয়ে আসবো।

ফ্লোরেনসিয়া – ৪৫

অধৈর্য হয়ো না ইনায়া। এদুয়ার্দো তোমাকে দু’দিন সময় দিয়েছিলো। প্রথমে এই দিনলিপিটা পড়ো। তারপর তোমার যা ভালো মনে হয়, তাই করো। আশা করি তুমি কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিবে না।_______কথাটা বলে ক্রিস্তিয়ান।

ফ্লোরেনসিয়া – ৪৬

আমি যা বলছি, তা এই দিনলিপি পড়ে জানতে পেরেছি। সত্যি কিনা মিথ্যা তুমি নিজেই যাচাই করে নিও।___ক্রিস্তিয়ানের ম্লান কন্ঠ। বিশ্বাস হয় না। ক্রিস্তিয়ান যা বলছে, তা কখনো সত্যি হতে পারে না। ইনায়ার ডুকরে কান্না পায়। অশ্রুসিক্ত দু’চোখের কাতর দৃষ্টি মেলে ফ্রাঙ্কলিনের দিকে তাকায়।

ফ্লোরেনসিয়া – ৪৭

আচ্ছা। যাও তাহলে। আজ ক্লাস করার প্রয়োজন নেই। ইজাবেলের সাথে কথা শেষ করে তাড়াতাড়ি ফিরে এসো। আমি এখানেই তোমার দু’জনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকবো।

ফ্লোরেনসিয়া – ৪৮

ইনায়ার গলায় ক্রুশ লকেট ছিলো। তবুও জা’নোয়ারটা ওকে স্পর্শ করার দুঃসাহস কি করে পেলো?____ক্রিস্তিয়ান আর আর্নিকে জিজ্ঞেস করেন স্ট্রিকল্যান্ড কুরী।

ফ্লোরেনসিয়া – ৪৯

কিঞ্চিত মাথা ঘোরায়। অবশ হয়ে আসা শরীরে দ্রুতপায়ে হাঁটে। হাঁটতে হাঁটতে আচমকাই হোঁচট খেয়ে পড়ে যায় সিয়া। ওকে বাম হাতে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে এদুয়ার্দো। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে কপট রাগমিশ্রিত কন্ঠে বলে

ফ্লোরেনসিয়া – ৫০ (প্রথম অংশ)

কি হয়েছে? আব্রাহাম কি করেছে? সেদিনের পর থেকে ও আমাদের সাথে দুর্গে বন্দি আছে। তুমি হঠাৎ ওর খোঁজ করছো কেনো? এদুয়ার্দো প্রত্যুত্তর দেয় না। থমথমে ভরাট কন্ঠে বলে

ফ্লোরেনসিয়া – ৫০ (শেষ অংশ)

অপরাধ ক্ষমা করবেন। আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন, এই মেয়েটার জন্যই সম্পূর্ন বদলে গেছেন এস্টীম রুলার। তিনি এখন কোনো মেয়ের দিকে ফিরেও তাকান না।____হিমানো সহাস্যে কথাটা বলে।

No more posts...