সালমা চৌধুরী
সালমা চৌধুরী

প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে | অপেক্ষা এবং প্রাপ্তি

সমাপ্ত

আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে | সিজন ১ | পর্ব - ৭৫

৬৬ ভিউ
০ মন্তব্য
১ মিনিট

তানভির আশেপাশে নজর বুলিয়ে বন্যার দিকে সূক্ষ্ম নেত্রে তাকিয়ে বিলম্বিত কন্ঠে জানতে চাইল, ” আমি কি করেছি?” বন্যা নিজেকে সামলে নিয়ে ধীরগতিতে বলল, ” আপনি কিছু করেন নি, আমারই কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। ” তানভির মনে মনে বিড়বিড় করল, “শখের নারীর শখের থেকেও রাগের মূল্য তিনগুণ বেশি।” তানভির কিছু বলছে না দেখে বন্যা তির্যকভাবে তাকালো। বন্যার কুপিত দৃষ্টি দেখে তানভির ঢোক গিলে সহসা হাসার চেষ্টা করল। বন্যা নজর সরিয়ে ব্যাগ গুছানোতে মনোযোগ দিল। তানভির মৃদু হেসে মোলায়েম কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,

” আমাদের বাসায় থাকতে কোনো সমস্যা হয় নি তো?” বন্যা মুখ ফুলিয়ে ভারী নিঃশ্বাস ছাড়লো। মীম রুমে এসে ধপ করে বিছানার উপর বসে শক্ত কন্ঠে বলল, ” আমার খুব সমস্যা হচ্ছে। কারণ বড় আব্বু তোমাকে ডাকছেন আর তুমি সেদিকে মনোযোগ না দিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে আছো। ” তানভির চমকে উঠে বলল, ” সর্বনাশ! ” “সর্বনাশ এখনও হয় নি কিন্তু তোমাকে এই রুমে পেলে নির্ঘাত কিছু একটা হবে।” তানভির চটজলদি দ্রুত পায়ে দরজা পর্যন্ত গিয়ে আবারও থামলো। বন্যার দিকে না তাকিয়ে স্বাভাবিক কন্ঠে ফের বলল,

” তুমি রেডি হয়ে আসো, আমি নিচে অপেক্ষা করছি। ” বন্যা গম্ভীর গলায় জানাল, ” আমি একায় যেতে পারবো।” তানভির সে কথা শুনেও না শুনার মতো চলে গেছে। নিচে নামতেই আলী আহমদ খান জানতে চাইলেন, ” তুমি কি এখন ফ্রী আছো?” “কোনো কাজ ছিল?” ” আবির রাতে বলেছিলো বিয়ের খরচের ব্যাপারে বাকি কথা যেন তোমার সাথে বলি। তখন তো আর জানতাম না যে তোমার ভাই এভাবে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে। সে যাই হোক, আবির যেহেতু বলে গেছে তাই তোমাকে বিস্তারিত জানানো উচিত।” তানভির হালকা করে কেশে শীতল কন্ঠে বলল,

” শুনলাম বনুর ফ্রেন্ড বাসায় চলে যাবে। আমি কি তাকে বাসা পর্যন্ত দিয়ে আসবো?” আকলিমা খান চাপা স্বরে জিজ্ঞেস করলেন, “বন্যা কি এখনি চলে যাবে?” “তাই তো শুনলাম।” আকলিমা খান সঙ্গে সঙ্গে হালিমা খানের রুমে চলে গেছেন। মেহমানদের জন্য গিফট কেনার দায়িত্ব হালিমা খান আর আকলিমা খানের ছিল। আলী আহমদ খান স্বাভাবিক কন্ঠে বললেন, ” ঠিক আছে। তাকে বাসা পর্যন্ত আগে দিয়ে আসো পরে না হয় আলোচনা করা যাবে। আর হ্যাঁ সাকিবকেও সাথে নিয়ে যেও। ” “জ্বি, আচ্ছা।”

তানভির আর সাকিব বাসার বাহিরে দাঁড়িয়ে নিজেদের মতো কথা বলছে। বন্যা সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে আসছে। বন্যাকে দেখেই সাকিব মৃদুস্বরে বলল, “আসসালামু আলাইকুম” “ওয়ালাইকুম আসসালাম।” সাকিব ঠোঁটে হাসি রেখে প্রশ্ন করল, ” আপনি কি আমাকে চিনেন?” বন্যা আস্তে করে বলল, ” জ্বি, আপনি আবির ভাইয়ার মামাতো ভাই।” “আমার কিন্তু আরও একটা পরিচয় আছে।” বন্যা ভ্রু কুঁচকে জানতে চাইল, ” কি?” “তানভিরের বন্ধু।” “ওহ।” সাকিব তানভিরের দিকে তাকিয়ে উদাসীন কন্ঠে জানতে চাইল, “এটা কি হলো?”

তানভির সহসা ঠোঁট উল্টালো। সাকিব বড় করে নিঃশ্বাস ছেড়ে মৃদু স্বরে বলতে শুরু করল, “দেখুন, আমি ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলতে একদম পছন্দ করি না। আমার স্পেশাল বন্ধুর স্পেশাল মানুষ হিসেবে আপনাকে আমার খুব ভালো লেগেছে। আমার বন্ধুর মন খারাপের কারণ না হয়ে আপনি বরং তার সুখপাখি হয়ে… ” তানভির আচমকা সাকিবের মুখ চেপে ধরে বিড়বিড় করে বলল, “তোকে এত কথা বলতে বলেছি?” সাকিব তানভিরের হাত টেনে আহ্লাদী কন্ঠে বলল, ” ভাবি, আমাকে বাঁচান।” বন্যার হিমশীতল চাহনি দেখে তানভির সাকিবকে ছেড়ে দিয়েছে। বন্যা কিছু না বলেই চলে যাচ্ছে। তানভির দ্রুত এগিয়ে গিয়ে গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,

“কোথায় যাচ্ছো?” “বাসায়।” “কেনো?” বন্যা আড়চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করল, “মানে?” ” ওহ সরি, বলছিলাম তুমি আমার সাথে না গিয়ে একা কেনো যাচ্ছো?” “আমার বাসা আমি চিনি। আমি একায় যেতে পারবো, ধন্যবাদ। ” তানভির মনে মনে বিড়বিড় করতে করতে গাড়ি নিয়ে আসছে। তানভিরের পাশের সিটে সাকিব বসা। বন্যার কাছাকাছি এসে গুরুগম্ভীর কন্ঠে বলল, ” গাড়িতে বসো।”

তানভিরের কৃশ রক্তিম চোখ দেখে বন্যা না করতে গিয়েও কিছু বলতে পারল না। মাথা নিচু করে গাড়িতে উঠে বসল। সাকিব যেতে যেতে গুনগুন করে গান গাইছে কিন্তু তানভির আর বন্যা একদম নিশ্চুপ। অর্ধেক পথ যাওয়ার পর তানভির অকস্মাৎ ব্রেক কষল, সাকিবের দিকে তাকিয়ে চোখে ইশারা দিল। সাকিব কপাল কুঁচকে বলে বসল, ” চোখে ইশারা দিচ্ছিস কোনো? যা বলার মুখে বল।” তানভির ভারী কন্ঠে বলল, ” গাড়ি থেকে নামতে বলছি।” ” গাড়ি থেকে নামবো কেনো? তোরা কি কথা বলবি বল। আমি না হয় কানে আঙুল দিয়ে রাখছি।” ” যাবি? ”

“যাচ্ছি। তুই যে আমাকে মাঝরাস্তায় ফেলে দিচ্ছিস এটা বাসায় গিয়ে ফুপ্পি আর ফুফাকে বলবো সাথে তোর আব্বুকেও বলবো। ” “যা ইচ্ছে বলিস।” সাকিব নামতেই তানভির আবারও গাড়ি স্টার্ট দিল, বন্যা মনোযোগ দিয়ে ফোন চাপছে। তানভিরের দিকে একবারের জন্যও তাকাচ্ছে না। বন্যাদের বাসার গলিতে না ঢুকে তানভির অন্য রাস্তায় গাড়ি নিয়ে যাচ্ছে দেখে বন্যা শক্ত কন্ঠে বলল, ” এদিকে কোথায় যাচ্ছেন?” “তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।”

“আমার এখন কোনো কথা শুনার ইচ্ছে নেই। আমাকে বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দেন, প্লিজ। না হয় এখানেই নামিয়ে দেন আমি একা চলে যেতে পারবো। ” ” তুমি বাসায় গেলে আমার ফোন আর রিসিভ করবে না তাই এখনি শুনতে হবে।” তানভির গম্ভীর মুখ করে গাড়ি চালাচ্ছে। অনেকটা পথ যাওয়ার পর কিছুটা নির্জন রাস্তায় গাড়ি থামালো। গাড়ি থেকে নেমে বন্যাকে উদ্দেশ্য করে বলল, “নেমে আসো।”

বন্যা গাড়ি থেকে নেমে চিবুক নামিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তানভির শান্ত কন্ঠে বলতে শুরু করল, “আমি জানি তুমি আমার উপর রেগে আছো তবুও বলছি মাথা ঠান্ডা করে আমার কথাগুলো একটু শুনো, মন আর মোহনার সম্পর্ক অনেক গভীর। মনের আকস্মিক পরিবর্তন একটা মানুষকে মানসিক আর শারীরিক দু’দিকেই অকেজো করে দিতে সক্ষম। প্রতিনিয়ত রঙ বদলানোর এই পৃথিবীতে আহত মন নিয়ে বেঁচে থাকা বড্ড দায়। তবুও আমাদের নতুন করে স্বপ্ন দেখতে হয়, মনের ভেতর বেঁচে থাকার নতুন উদ্যম জাগাতে হয় কারণ আমরা কোনো না কোনোভাবে কারো না কারো কাছে না চাইতেই বন্দি হয়ে যায়। ভাইয়াকে আমি কেবল একবার মুখ ফস্কে মজা করে বলেছিলাম,

“তোমার বনুর প্রতি এখন যতটা আবেগ আছে সেটা যদি পরবর্তীতে না থাকে! তখন যদি তোমার মনে হয় বনু শুধু তোমার অবুঝ মনের বিবশ বাসনা ছিল।” আমার ছেলেমানুষি কথাগুলো ভাইয়ার কাছে এতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যাবে আমি কোনোদিন কল্পনাও করতে পারি নি। এত রিকুয়েষ্ট করেও ভাইয়াকে থামাতে পারি নি। ঐ পরিস্থিতিতে আমি না পারছিলাম বাসায় কিছু জানাতে আর না পারছিলাম ভাইয়াকে আটকাতে। বাধ্য হয়ে চুপচাপ সবকিছু মেনে নিয়েছিলাম৷ সেই ঘটনার পর থেকে আমার মাথায় সর্বক্ষণ একটা অজ্ঞাত দুশ্চিন্তা ঘুরপাক খেত তবে ভাইয়া বরাবরই নিজের জায়গায় অক্লিষ্ট ছিল।

প্রথমদিকে বনুর ব্যাপারে আমার সাথে কথা বলতে ইতস্ততা বোধ করলেও বিয়ের পর ভাইয়া সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছিল। আমি এমন একটা মানুষ যে ভাইয়ার পাগলামির চরম মাত্রা যেমন দেখেছি তেমনি ভাইয়ার অবাধ ধৈর্যের অন্ত্যও দেখেছি। ১২ হাজার কিলোমিটার দূরে থেকেও একটা মানুষ আরেকটা মানুষকে ঠিক কতটা ভালোবাসতে পারে এটা ভাইয়াকে না দেখলে হয়তো আমি বিশ্বাস ই করতাম না। একটা সময় পর্যন্ত আমি খুব ভয় পেতাম, ভাই হয়ে একমাত্র বোনের ব্যাপারে এত বড় সিদ্ধান্ত একা নিয়েছি বলে নিজেকে নিজে খুব দোষারোপ করতাম।

কিন্তু এখন আমি গর্ব করে বলতে পারি, আমি আমার বোনের জন্য বেস্ট সিদ্ধান্তটায় নিয়েছিলাম। হয়তো ভাইয়ার বিয়ে করার সময় টা ভুল ছিল কিন্তু নিয়তে কোনো ভুল ছিল না। ভাইয়া বনুকে সবসময় বউয়ের মর্যাদায় দিয়ে এসেছে। বন্যা তুমি বিশ্বাস করবে না, ভাইয়া কতরাত নির্ঘুম কাটিয়েছে, কতরাত বনুর জন্য সীমাহীন কেঁদেছে। বাসায় ফিরে প্রথম প্রথম বনুর চোখের দিকে তাকাতে পারতো না, বনুর সাথে দুমিনিট ভালোভাবে কথা পর্যন্ত বলতে পারতো না। ঐ পরিস্থিতি থেকে নিজেকে সামলে স্বাভাবিক জীবনে এসেছে, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অধৃষ্য জেদকে কাজে লাগিয়েছে।

এই সবকিছু তো ভাইয়া করল কিন্তু আমি আমার ভাইয়ের জন্য কি করলাম? উত্তর ছিল, কিছুই না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, আব্বু আর বড় আব্বু দু’জনকে যা বলার আমিই বলবো। রাকিব ভাইয়াকে জানানোর পর রাকিব ভাইয়া বলেছেন ওনারাও আমার সাথে থাকবেন। গেলাম বড় আব্বুর অফিসে কিন্তু ভাগ্যক্রমে শুধু বড় আব্বুকেই পেয়েছিলাম। সাহসের অভাবে প্রথমদিকে বিয়ের বিষয়টা মুখ পর্যন্ত এনেও বলতে পারছিলাম না।

বড় আব্বু বোধহয় কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছিলেন তাই রাকিব ভাইয়াদের পাঠিয়ে আমার সাথে আলাদাভাবে কথা শুরু করেছিলেন। খুব সহজে কৌশলে আমার থেকে সবকিছু জেনেও নিয়েছিলেন, আমিও সেদিন কোনোকিছু বলতে দ্বিধাবোধ করি নি। আমি যা করেছি আমার ভাইয়ের জন্য করেছি, আমার বোনের জন্য করেছি কারণ আমি বরাবরই তাদের মুখে নিখাদ হাসিটা দেখতে চেয়েছি। এই সবকিছু শুনার পর তোমার যদি মনে হয় আমি ভুল করেছি তাহলে তোমার যা ইচ্ছে বলতে পারো আমি কিছুই বলবো না। ”

বন্যা রাশভারি কন্ঠে বলল, “আপনি মেঘের ভাই আর আমি জানি আপনি খুব দায়িত্বশীল একজন মানুষ। আপনি যা করেছেন তা বুঝেই করেছেন তাই এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই। ” “তাহলে তুমি রেগে আছো কেনো?” “এমনি।” “এমনি এমনি বলে কতদিন কত কথা কাটাবে? কি হয়েছে বলো” “আমার কিছু হয় নি, আমি বাসায় যাব।”

তানভির আচমকা বন্যার মুখোমুখি দাঁড়ালো। বন্যার নামানো চিবুক উঠিয়ে গুরুগম্ভীর কন্ঠে বলে উঠল, “তোমার কিছু না হলেও আমার মনে প্রতিনিয়ত তেজস্বীর ঝড় বইছে। অস্ফুট আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে করতে আমি ভয়াবহ অপ্রসন্নতায় জড়িয়ে গেছি। শত-শত নব্য স্বপ্নের ভিড়ে আমার অনুভূতিগুলোকে অবাঞ্ছিতের ন্যায় পড়ে থাকতে দেখতে আর পারছি না। সবার কাছে পরিত্যক্ত হলেও আমার আবেগ আমার নিকট অত্যন্ত অভিনিবিষ্ট। অনেক সহ্য করেছি, আর সম্ভব হচ্ছে না। বন্যা, আমি….” বন্যা অতর্কিতে কয়েক পা পিছিয়ে গেল। তানভিরের কথার মাঝখানে তেজী কন্ঠে বলে উঠল,

” জীবন যতটা সহজ বাস্তবতা ঠিক ততটায় কঠিন। আবেগের তাড়নায় নেয়া সিদ্ধান্তগুলো অগভীর মানুষের মতোই ক্ষণস্থায়ী। হৃদয়ের অপাবৃত আত্ততা কিংবা একরাশ মুগ্ধতা চাই না আমি, মুখোশধারী মানুষদের ভিড়ে নিজের অস্তিত্বকে হারাতেও চাই না। এত উচ্চাকাঙ্ক্ষী জীবন চাই না আমি যেই জীবনে আকাঙ্ক্ষার পরিসমাপ্তি ঘটার সঙ্গে সঙ্গে আমার মনটাও তিক্ততায় ছেয়ে যাবে। আমি বাস্তবতাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাই, অতি সাধারণ একটা জীবন চাই। আপনার আবেগ অনুভূতিকে অবজ্ঞা করার সাধ্য আমার নেই তাই ভালো হয় যদি আপনি আমাকে কোনোকিছু না জানান।”

তানভির নির্বাক চোখে চেয়ে আছে। বন্যার মুখের কাঠখোট্টা কথাতে তানভির বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। হৃদয় অঙ্গনের উথাল-পাতাল ঢেউয়ে শ্বাস এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে, সর্বশক্তি দিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করার চেষ্টা করল। বন্যার দিকে তাকিয়ে কাঠকাঠ গলায় বলল, ” তুমি মেয়ে ভীষণ নির্দয়া৷ যতটা সুকৌশলে আমার অনুভূতিগুলোকে উপেক্ষা করলে ততটা কৌশল আমার নি*পা*তেও প্রয়োজন হতো না।” বন্যা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে ফের বলতে শুরু করল,

” আমাদের মধ্যবিত্ত পরিবার তাই স্বপ্নগুলোও আমাদের মতোই মধ্যবিত্ত। আপনাদের মতো অনাবশ্যক চিন্তা ভাবনা কখনোই করি না আমরা। বিলাসবহুল জীবনযাপন আমাদের নিকট কেবলই দুঃস্বপ্ন, ঘুম ভাঙলে যার অস্তিত্বও মস্তিষ্কে থাকবে না। আমার আব্বু একা চাকরি করে আমাদের তিন ভাই বোনকে অনেক কষ্টে বড় করেছেন। আব্বুর কষ্টের প্রতিদানরূপ আমরা কি দিতে পেরেছি? উত্তরটা আপনারই মতো, কিছুই না। আপু অনেক চেষ্টার পর একটা জব পেয়েছে। আব্বু আপুর জন্য পাত্র খুঁজছে যার বিশেষ কিছু গুণাবলি থাকা আবশ্যক তার মধ্যে মন মানসিকতার সাথে সরকারি চাকরিটাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আপনাদের পরিবারের মতো আমাদের পরিবার কখনো ছিল না আর হবেও না।

আপনাদের বাসায় আবির ভাইয়ার যোগ্যতার থেকেও ভালোবাসাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আজ আবির ভাইয়া বেকার থাকলেও পরিবার ঠিকই সাপোর্ট করতো কিন্তু আমার পরিবার এমন কিছুই করবে না। কারণ একটায় আমরা মধ্যবিত্ত, আমরা আবেগে গা ভাসাতে চাইলেও বাস্তবতা আমাদের ভুলগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। আমি অপ্রকাশিতভাবে হলেও আব্বুর কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আপনার লাইফস্টাইল আপনাদের কাছে খুব স্বাভাবিক হলেও আমাদের কাছে বিশেষ করে আব্বুর কাছে খুব অস্বাভাবিক। আমি বাস্তবতা ভুলে আবেগের কাছে বন্দী হতে পারবো না। আমি কি বলতে চাচ্ছি আশা করি আপনি বুঝবেন।”

তানভিরের অন্তর সহ বিস্ফোরিত দুচোখ ভেতরে ভেতরে জ্বলছে। মানুষের হৃদয় খুব দূর্বল, প্রিয় মানুষের অতি সামান্য কথাতেও হৃদয় ভেঙে চূ*র্ণবি*চূর্ণ হয়ে যায়। বন্যার কথায় তানভিরের হৃদয় নিঙ্গড়ান ব্যথাগুলো ভেতটাকে বড্ড পোড়াচ্ছে, মনের ভেতর উদ্দীপ্ত প্রেমানুভূতি অচিরেই পুড়ে উধাত্ত ছাই হয়ে গেছে। তানভির চোখ ভরা ব্যগ্রতা আড়াল করে চুপচাপ গাড়ি স্টার্ট দিল। বন্যা ত্রস্ত পায়ে এগিয়ে গাড়িতে বসল। বাকি রাস্তা কেউ কারো সাথে একটা কথাও বলে নি। অন্যান্য দিন বন্যাকে বাসার সামনে নামিয়ে তানভির কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তবে আজ সেটাও করে নি। মোখলেস মিয়ার সাথে দেখা পর্যন্ত করে নি।

১০ থেকে ১১ ঘন্টার জার্নি শেষে আবির আর মেঘ কক্সবাজার পৌঁছেছে। সমুদ্রের কাছাকাছি একটা রিসোর্ট আগে থেকেই বুকিং দেয়া ছিল, সেখানেই উঠেছে। আবির কোনোরকমে ফ্রেশ হয়েই লম্বা ঘুম দিয়েছে। গত এক সপ্তাহের ছুটাছুটি, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, নির্ঘুম রাত কাটাতে কাটাতে আবির ক্লান্ত হয়ে গেছে। মেঘও ঘুমিয়েছিল তবে ঘন্টাখানেক পরেই মেঘের ঘুম ভেঙে গেছে। অর্ধ ঘুমে থেকেই পেটের উপর আবিরের শক্ত হাতের কোমল স্পর্শ অনুভব করতে পারছিলো। মেঘ আড়চোখে আবিরকে এক পলক দেখে আবিরের হাতটা পেটের উপর থেকে সরিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেছে। হাতমুখ ধুয়ে রুমে আসতেই নজর আটকায় আবিরের পরিশ্রান্ত আদলে।

মেঘ অবাক চোখে আবিরের দিকে চেয়ে আছে। পুরুষের কখনো রূপের প্রয়োজন হয় না, শুধু প্রয়োজন হয় মায়ার। মেঘ আবিরের মায়ায় জড়িয়ে গেছে, যে মায়া আমৃত্যু কাটাতে পারবে না। আবির নামক শখের পুরুষ এখন একান্ত মেঘের হয়ে গেছে, যে পুরুষে অন্য কোনো নারীর অস্তিত্ব নেই। আবিরের মায়াবী আদলে স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে আছে, মেঘের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রেমানুভূতি জাগ্রত হচ্ছে। শেষ বিকেলের অনুজ্বল আলোতে আবিরের মায়াময় আদল দেখে মেঘ নতুন করে আবিরের প্রেমে পড়ছে। সমুদ্রের গর্জন কানে বাজতেই মেঘ গুটিগুটি পায়ে বারান্দায় গেল, রিসোর্ট টা খুব বেশি দূরে না হওয়ার সমুদ্রের উত্তাল ঢেউগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।

মেঘ জীবনে প্রথমবারের মতো কক্সবাজার এসেছে, বাসায় অনেকবার বলেও কখনোই সেভাবে কাউকে রাজি করাতে পারে নি। মেঘ কিছুক্ষণ সমুদ্রের ঢেউ আর গর্জন শুনে পুনরায় রুমে আসছে। আবির তখনও গভীর ঘুমে নিমগ্ন, কি করবে বুঝতে না পেরে মেঘ বিছানার পাশে বসল। আবিরের উন্মুক্ত শরীর, গলার কিছুটা নিচে কালো তিলটা জ্বলজ্বল করছে। মেঘ কিছুক্ষণ মুগ্ধ চোখে চেয়ে থেকে আচমকা সদাশয় হাসলো, হাসির সাথে লজ্জা আড়াল করতে সহসা দু’হাতে মুখ লুকিয়ে ফেলেছে। কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে ধীরগতিতে নিঃশ্বাস ছেড়ে দু আঙুলের ফাঁক দিয়ে আবারও আবিরকে দেখতে লাগল। আবিরের মতো মেঘেরও আজ বলতে ইচ্ছে করছে,

” আমার মনের রাজকুমার আজ আমার হৃদয়ে স্ফুরিত উত্তাপ ছড়াচ্ছে। ” আবির ঘুমের মধ্যেই পাশে হাত রেখে মেঘের উপস্থিতি বুঝার চেষ্টা করছে। দু’তিনবার হাত রেখে মেঘকে না পেয়ে ঘুমের মধ্যেই কপাল কুঁচকে নিভু নিভু চোখে তাকালো। মেঘের ঠোঁটের কুহকী হাসি দেখে আবির আনমনে হেসে উঠল । আবিরের হাসি দেখেই মেঘ থতমত খেয়ে বিছানার পাশ থেকে উঠে যেতে চাইল, আবির আচমকা এক টানে মেঘকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিল। আতঙ্কে মেঘ দু’চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। আবির এক হাতে মেঘের পিঠ বরাবর জড়িয়ে ধরে আছে, অন্য হাতে মেঘের কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো কানের পাশে সরাতে সরাতে নিরূদ্যম কন্ঠে বলল,

” আর কতদিন এভাবে লুকোচুরি করবে? এখন তো আমি তোমার পার্মানেন্ট সম্পত্তি হয়ে গেছি।” আবির ভ্রু নাচাতেই মেঘ লজ্জায় আবিরের প্রশস্ত বুকে মুখ লুকালো৷ আবির দু’হাতে মেঘকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে বিড়বিড় করল, “তুমি এত লজ্জা পেলে আহিয়া আসবে কেমন করে?” মেঘ কর্কশ কন্ঠে বলল, “ইশশ, ছাড়ুন আমাকে।”

” তুমি কি জানো, তোমার হাসিটা ভয়ংকর রকমের সুন্দর আর সেই হাসি দেখলেই আমার মনে শুধু প্রেম প্রেম ফিল হয়। গত দুইটা বছর বিয়ে করা বউয়ের কাছ থেকে কিভাবে নিজেকে দূরে রেখেছি এটা যদি তুমি বুঝতে তাহলে এক সেকেন্ডের জন্যও আমার থেকে দূরে যেতে চাইতে না।” মেঘ আবিরের বুক থেকে উঠার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। মেঘ বাধ্য হয়ে ভীতি কন্ঠে ফের অনুরোধ করল, “ছাড়ুন।” আবির ধীর কন্ঠে শুধালো,

“মনের ভেতর যে আগুন জ্বালিয়েছো সেই আগুন নিভাবে কে শুনি?” মেঘ হতবিহ্বল, আবিরের বলা প্রতিটা বাক্য নির্লজ্জতার পরিচয় দিচ্ছে। মেঘ বলার মতো কোনো কথায় খোঁজে পাচ্ছে না। আবির মোলায়েম কন্ঠে ডাকল, “বউ” মেঘ নিশ্চুপ হয়ে আবিরের বুকের উপর শুয়ে আছে। আবির পুনরায় ডাকল, “ও বউ..” মেঘ মৃদুস্বরে বলল, “হুমমমমমম।”

আবির সহসা মেঘকে বিছানায় শুইয়ে কাত হয়ে মেঘের মুখের উপর ঝুঁকে আলতোভাবে মেঘের কপালে কিস করল। মেঘের চোখে চোখ রেখে নিজের ঠোঁট ইশারা করে আদুরে কন্ঠে বলল, ” I want a deep kiss.” মেঘ বিরস কন্ঠে বলল, ” আমি পারব না।” “কেনো?” ” আমার লজ্জা লাগে। ” আবির উদাস ভঙ্গিতে বলল, “আমার লজ্জা লাগছে না কেনো?” “কারণ আপনি নির্লজ্জ। ” আবির ঠোঁট বেঁকিয়ে হেসে কোমল কন্ঠে বলল,

” আমি না হয় নির্লজ্জ, বেহায়া। আপনি তো খুব লজ্জাবতী। তা একটা অসহায় ছেলের অসুস্থতার সু্যোগ নিয়ে তাকে কিস করার সময় আপনার লজ্জা কোথায় জমা দিয়ে আসছিলেন?” “মানে? আমি কাকে কিস করেছি?” ” আমি যখন জ্বরের ঘোরে পড়ে ছিলাম তখন আপনি আমার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়েছিলেন। এখন সবকিছু ভুলেও গেলেন। বাহ! ম্যাডাম, বাহ!” মেঘ প্রশস্ত নেত্রে তাকিয়ে আতঙ্কিত কন্ঠে শুধালো, ” আপনি সেদিন টের পেয়েছিলেন?” আবির মুচকি হেসে বলতে শুরু করল,

” আম্মুর পরে তুমিই একমাত্র নারী যার গায়ের গন্ধ আমি উপলব্ধি করতে পারি। তুমি নিঃশব্দে আমার পাশ ঘেঁষে গেলেও আমি নিগূঢ় ঘুমে থেকে সেটা অনুভব করতে পারি। তুমি দূর থেকে এক পলক তাকালেও আমার হৃদয় আর মস্তিষ্ক সদাজাগ্রত হয়ে উঠে। তোমার স্পর্শে আমার শরীরের প্রতিটা শিরা-উপশিরায় রক্তসঞ্চালন তীব্র থেকে তীব্র হতে শুরু করে। তোমাকে আগেও বলেছি আমি নিঃশ্বাসের শব্দে তোমার অস্তিত্ব উপলব্ধি করতে পারি। তুমি আমাকে কিস করবে আর আমি সেটা বুঝতে পারবো না? কিভাবে ভাবলে তুমি?” মেঘ শুকনো মুখে ঢোক গিলে মোলায়েম কন্ঠে বলল,

” সরি ” “দূর পাগলী, ভালোবাসায় সরি টরি সব মূল্যহীন। ভালোবাসায় কেবল ভালোবাসায় অর্থবহ।” আবির পুনরায় নিজের ঠোঁট ইশারা করল। মেঘ ওষ্ঠ উল্টে অসহায় মুখ করে তাকিয়ে আছে। আবির ভ্রু নাচাতেই মেঘ এক হাতে আবিরের চোখ ঢেকে তড়িৎ বেগে আবিরের ঠোঁটে কিস করল। আবির গলার স্বর উঁচু করে বলল, “এটা কি ছিল? কারেন্টে শক খেলেও বুঝতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে অথচ তুমি এক সেকেন্ড সময়ও নিলে না।” মেঘ কথা কাটাতে অন্যদিকে তাকিয়ে চাপা স্বরে বলল,

” চলুন সমুদ্রে যাই। ” ” আগে আমার ইচ্ছে পূরণ করবে তারপর ঘুরতে নিয়ে যাব৷ নয়তো চাবি ছুঁড়ে ফেলে দিব।” মেঘ আকুল কন্ঠে বলল, “এখন না, প্লিজ।” আবির ঠোঁট কামড়ে হেসে আহ্লাদী কন্ঠে বলে উঠল, “এখনি, প্লিজ।”

আবিরের অনুরাগের সাগ্রহে মেঘের আকুতি অচিরেই ব্যর্থ হলো। মেঘের সর্বাঙ্গে আবিরের উষ্ণ সোহাগের নিশান, অনুভূতির রাজ্যে শাণিত নিষঙ্গের আভাস। আবিরের আবেগপূর্ণ অপ্রতীয়মান আবেশে কেটে গেল আরও কিছুটা মুহুর্ত। আবিরের প্রণয়ের পরিণীতা এখন পূর্ণতা লাভ করেছে। পরিতোষ আর লজ্জায় মেঘের ফর্সা আদল রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। আবিরের তপ্ত ভালোবাসার সমাপ্তি ঘটতে প্রায় সন্ধ্যা হয়েছে।

বন্যা সারাদিন যাবৎ মন খারাপ করে বসে আছে। দুশ্চিন্তায় খায়ও নি কিছু। মেঘের আবদার আর নিজের আবেগের বশবর্তী হয়ে তানভিরের প্রতি না চাইতেও খুব বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিল। মেঘদের বাসার পরিস্থিতি দেখে সেই আবেগ এখন আতঙ্কে রূপ নিয়েছে। ইদানীং মেঘের ব্যস্ততার কারণে তানভিরের বিষয়ে বন্যার সাথে তেমন কথাও হয় নি। তানভিরের রাজনীতি ছাড়া, চাকরির প্রস্তুতি বিষয়ক কোনো কথায় বন্যা জানে না। বন্যা তানভিরকে মুখ ফুটে সরাসরি চাকরির কথা বলতেও পারছে না আবার নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণও করতে পারছে না। তাই বুঝে না বুঝে তানভিরের সাথে রিয়েক্ট করে ফেলেছে। সেসব ভেবেই এখন খারাপ লাগছে। না পারছে তানভিরকে কল দিয়ে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করতে আর না পারছে দুপুরের ঘটনা ভুলতে। হঠাৎ রিদ এসে দরজায় দাঁড়িয়ে আস্তে করে ডাকল,

“আপু” “কি?” “তোমার কি মন খারাপ? ” “না। কেনো?” “স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তোমার মন খারাপ।” বন্যা চোখ মুখ মুছে শান্ত কন্ঠে জানতে চাইল, ” কিছু বলবি?” “হ্যাঁ” “বল” “মেঘ আপুকে একটা কল দাও, আপুকে অভিনন্দন জানাতে হবে।” “মেঘ বাসায় নেই। এখন অভিনন্দন জানাতে হবে না।” ” মেঘ আপু কোথায়?” “কক্সবাজার। ” “কি? আপু কক্সবাজার গেছে?” “হ্যাঁ” “চলো আমরাও যায়।” বন্যা রাগী স্বরে বলল, ” যা এখান থেকে। ”

“প্লিজ আপু, চলো না কক্সবাজার যায়। আমার খুব ইচ্ছে। ” বন্যা ধমক দিতে যাবে তার আগেই রিদ উত্তেজিত কন্ঠে বলে উঠল, ” আমি আপুকে রাজি করাতে যাচ্ছি। আমরা সবাই মিলে কক্সবাজার যাব।” রিদ এক ছুটে নিচে চলে গেছে। বন্যা নিরবে নিঃশ্বাস ছেড়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পরেছে।

খান বাড়ির পরিবেশ বেশ নিস্তব্ধ। আত্মীয় স্বজনরা মোটামুটি সবাই চলে গেছেন। আইরিন, ফুপ্পি আর মালা শুধু আছে। সাকিব বিকেলের দিকে তানভিরের সাথে কথাবার্তা বলে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। মাইশা আপুর ডেলিভারির সময় ঘনিয়ে আসছে, মালার আম্মু মাইশা আপুর বাসায়। মালাকেও সাথে নিতে চেয়েছিলেন কিন্তু মালা জোরপূর্বক মেঘদের বাসায় রয়ে গেছে। বলেছে ডেলিভারির আগে আগে চলে যাবে। মালা সোফায় বসে মালিহা খানের সাথে গল্প করছে। মালিহা খান হঠাৎ ই শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,

“তোর বিয়ের বয়স তো হয়েই গেছে। বিয়ে করতে রাজি হচ্ছিস না কেনো?” “এখন বিয়ের কোনো চিন্তাভাবনা নেই, ফুপ্পি।” “কাউকে পছন্দ করিস?” মালা উদাস দৃষ্টিতে মালিহা খানের দিকে তাকিয়ে মনে মনে আওড়াল, ” এই সামান্য কথাটা কি এতগুলো দিনের মধ্যে একবারের জন্যও জিজ্ঞেস করা যেত না?” মালিহা খান ফের বললেন, “কি হলো?” মালা মলিন হেসে উত্তর দিল, “এখন বলে আর কোনো লাভ নেই।” মালিহা খান গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন,

” আবিরের কাহিনী তো শুনলিই, ও যদি এত যন্ত্রণা মাথায় না নিয়ে সরাসরি বলে দিত তাহলে ঘটনা এতদূর পর্যন্ত আসতোই না। অবশ্য আবিরকেও এত দোষ দেয়া যায় না। এই বাড়িতেে থেকে এত বছরে আমিই কোনো অধিকার দেখাতে পারি নি সেখানে আবির তো ছোট থেকেই দূরে ছিল। সেসব বাদ দে, তোর তো এমন কোনো সমস্যা নেই, পছন্দ থাকলে বল আমি তোর আব্বুর সাথে কথা বলে নিব।” “তোমার ছেলের মতো আমার এমন কেউ নেই। বাদ দেও এসব কথা।” এমন সময় তানভির বাসায় আসছে, চোখে মুখে বিষন্নতা। তানভিরের নিষ্প্রভ চেহারা দেখে মালিহা খান উদ্বিগ্ন কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন,

” কি হয়েছে তোর?” ” কিছু হয় নি, বড় আম্মু।” “চোখমুখ এত শুকনো শুকনো লাগছে কেনো?” তানভির মলিন হেসে বলল, “কই? না তো।” মালিহা খান ধীর কন্ঠে বললেন,


” আবির আর মেঘের সাথে কিছুক্ষণ আগেই কথা বললাম। ওরা বার বার তোর কথা জিজ্ঞেস করছিলো। তুই নাকি আবিরের কল রিসিভ করছিস না। কি হয়েছে বাবা?” তানভির স্বাভাবিক কন্ঠে জানতে চাইল, ” ওরা ঠিক আছে? ” ” আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে।” “ঠিক আছে। ”