A Destination Wedding | পর্ব – ৮

5 Min Read

ইভা কাঁপা কাঁপা গলায় বলতে শুরু করলো…….
ইভা:আমি আজ যে কথাগুলো বলছি তাতে হয়তো তোরা আমার উপর রেগে যাবি।কারণ তোদেরকে এই কথাগুলো আমার আরো অনেক আগেই বলা উচিত ছিলো।হ্যা,আরিয়ান আমাকে বলেছিল যে ওও আয়রাকে ভালোবাসে।কিন্তু এইটা আমি মেনে নিতে পারিনি।আচ্ছা তোরাই বলতো কেউ কি কখনো পারে তার ভালোবাসার মানুষের মুখে অন্য কারো কথা শুনতে।আমিও পারিনি আরিয়ানের মুখে আয়রাকে ভালোবাসার কথা শুনে নিজেকে আটকাতে।তোরা আমাকে গত দুই বছর আগে বলেছিলিস নাহ যে আমি কেন কান্না করেছিলাম?কারণটা এইটায় ছিল।আমি যে আরিয়ানের প্রতি দুর্বল তা আমি অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিলাম।কিন্তু আমি যে ওকে ভালোবাসি সেইটা আমি দুই বছর আগে জানতে পারি।কারণ আমি ওর মুখে অন্য কারো কথা শুনলে সহ্য করতে পারিনা।আমার খুব কান্না পায়।আমার মনে হয় আমার বুকে কেউ ছুড়ি চালাচ্ছে।রক্তক্ষরণ হয় আমার মনে।আর এই জন্য আমি কোনোদিন আয়রাকে দায়ী করিনি।কারণ আমি ওকে অনেকভাবে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে ওও আরিয়ানকে পছন্দ করে কিনা।কিন্তু আয়রার উত্তর সব সময় না ই এসেছে।তাই আমি একদিক থেকে নিশ্চিন্ত ছিলাম।তবে আমার ভয় ছিলো একটায়,আরিয়ান যে আয়রাকে ভালোবাসে।তবে কি আমি ওকে কখনোই নিজের করে পাবো নাহ?আজ আমার সেই ভাবনাটায় সত্যি হলো!(বলেই কান্নায় ভেংয়ে পরলো)
এর মাঝেই একজন নার্স এসে বললো,আরিয়ানের জ্ঞান ফিরেছে।আমি আর কোনোকিছু না বলে ইভার হাত ধরে চলে গেলাম আরিয়ানের কাছে।বাকি সবাই আমার পেছন পেছন আসলো।আমি ইভাকে আরিয়ানের সামনে দাড় করিয়ে সবাইকে চুপ থাকতে বলে আমি বলতে শুরু করলাম…..
আমি:আমি আজ যা যা বলবো সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনবি।আর আজ আমার কথা সবাইকে মানতে হবে।এইটা আমার অনুরোধ,আদেশ সব!
আরিয়ান,প্রথমেই তোকে বলি…
তুই আমাকে ভালোবাসিস তা একবার আমাকে বলতে পারতি।কিন্তু তুই সেইটা করিসনি।আমি মানছি ভালোবাসা অন্যায় না।তবে তা আমাকে একবার বলতে পারতিস।আচ্ছা সেইসব বাদ দিলাম।তবে আমাকে এইটা বল তো,তোর জীবনের কি কোনো মূল্য নাই যে তুই এইভাবে কোনো কিছু না ভেবেই নিজেকে শেষ করার সিদ্ধান্ত নিলি।তোকে কিন্তু আমি এতোটাও নির্বোধ ভাবিনি।আসলেই তুই একটা গাঁধা।
আচ্ছা এখন আসি ইভার কথায়,ইভা আরিয়ানকে ভালোবাসে।এই কথাটা সে আমাদের সবার খেকে এতোগুলো দিন ধরে লুকিয়ে রেখেছে।এই ইভা আমরা নাকি তোর বেস্টফ্রেন্ড।এই তার নমুনা?বাহরে বাহ।আজ তোরা দুইজন আমাকে বুঝিয়ে দিলি আমি তোদের কেউ না।
এখন সেই মহামূল্যবান কথাটা আমি বলবো,যা সবাইকেই মানতে হবে।কথাটা হলো,আরিয়ান ইভাকে বিয়ে করবে তাও সাত দিনের মধ্যে।ওদের ফ্যামিলিকে মানানোর দ্বায়িত্ব আমার।তবে আরিয়ানকে একমাত্র ইভাকেই বিয়ে করতে হবে!
আরিয়ান:অসম্ভব!আমি তোকে ভালোবাসি আয়রা তাই আমি তোকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে তো দূর কল্পনাও করতে পারিনা।(কাঠ কাঠ গলায়)
আমি:তুই ইভাকেই বিয়ে করবি।ধরে নে এইটা তোর ভালোবাসার পরিক্ষা।আর তুই তো জানিস ভালোবেসে কাউকে না পেলে কতটা কষ্ট হয়।তাই তুই যে কষ্টটা পেয়েছিস সেইটা ইভাকে পেতে দিসনা প্লিজ(হাত জোর করে)
আরিয়ান:তুই এইসব কি বলছিস আয়রা?আমি তোকে ছাড়া,,,
আমি:ব্যাস।আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল।হয় তুই ইভাকে বিয়ে করবি নয়ত আমার সাথে তোর সব সম্পর্ক এখানেই শেষ।
এই বলে আমি বেরিয়ে আসতে নিবো তখনই আরিয়ান বলে উঠলো,,,
আরিয়ান:বেশ!আমি রাজি।তবে আমি জানিনা যে ওকে আমি স্ত্রীর অধিকার দিতে পারবো কিনা!
এই কথা শুনে সবার মুখেই হাসি ফুটে উঠলো।তবে শেষের কথাটা শুনে সবাই একটু চিন্তিত হয়ে পরলো।
ইভা:বেশ তো।তোকে আমার ভালোবাসতে হবেনা।আমার ভালোবাসা দিয়েই নাহয় তোকে আমি আপন করে নিবো।(লজ্জামাখা মুখ করে)
আমি:এইতো আমার ইভা রাণী একদম ঠিক কথা বলেছে।আচ্ছা এইবার ওদের দুজনকে একটু স্পেস দাও সবাই।চলো আমরা বাইরে যায়।
এই বলেই আমরা সবাই ইভাকে আরিয়ানের কাছে রেখে বেরিয়ে আসলাম।
আদিয়াত:আরেহ আয়রা,তুমি তো জিনিয়াস।মাত্র কিছু মুহূর্তের মধ্যেই এতো বড় একটা প্রবলেম সল্ভ করে ফেললে।ওয়াও!গ্রেট!
আমি:এইটা আমার দ্বায়িত্ব ছিল আদিয়াত।তাই পালন করেছি শুধু।
আরুশ:আসলেই ইউ আর জিনিয়াস।
আমি আরুশের কথায় শুধু হাসলাম।এর মাঝেই ইভা বেরিয়া আসলো।মুখে এক তৃপ্তির হাসি।আবার কিছুটা চিন্তিত ও লাগছে।যাইহোক,এখন আমাকে দুই ফ্যামিলিকে রাজি করাতে হবে।
সাদাফ:আচ্ছা সব তো বুঝলাম।বাট আরিয়ানকে কবে ছাড়া হবে?আর আংকেল,আন্টি এইসব জানে?
আয়মান:মনে হয় না জানে।কারণ জানলে তারা অবশ্যই আসতো।
আমি:এই শোন,এইসব ব্যাপারে ওনাদের আর বলার দরকার নাই।এতে সমস্যা বেড়ে যাবে।
ঝিনুক:হুম,তুই ঠিকই বলেছিস।
ঐশি:ওকে রিলিজ কবে দিবে?
সাদাফ:আমি ডক্টরের সাথে কথা বলে আসছি!(এই বলেই সাদাফ চলে গেলো)
আমরা সবাই করিডোরে বসে সাদাফের আসার অপেক্ষা করতে লাগলাম।কিছুক্ষণ পরে সাদাফ এসে জানালো,আরিয়ানকে আজই নিয়ে যাওয়া যাবে।তবে ওর শরীর খুবই দুর্বল।তাই সাত দিন একদম বেড রেস্ট এ থাকতে হবে।আরিয়ানাকে ওর বাসায় নিয়ে যেয়ে আন্টিদের কিছু একটা বুঝিয়ে আমাদেরকেই ম্যানেজ করতে হবে।
ঐশি:আচ্ছা সে আমরা কিছু একটা বলে ম্যানেজ করে নিবো।এখন চল,ওকে নিয়ে আমরা ওর বাসায় যায়।
আমি:হুম,চল।আর সাদাফ,আয়মান তোরা হসপিটালের বাকি সব ফর্মালিটিগুলো ফিলআপ করে আয়।
আয়মান:ওকে
এরপর আমরা সবাই আরিয়ানাকে নিয়ে গাড়িতে বসালাম।বেচারা মুখ ভার করে বসে আছে।একটু মন খারাপ হলেও ক্ষতি কি তাতে।আমি জানি ইভা ঠিকই আরিয়ানাকে ওর ভালোবাসা দিয়ে ওকে ভালোবাসতে বাধ্য করবে।করবেই!

চলবে…

Share This Article
Leave a comment

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।